ভয়েজ অফ আমেরিকাকে ইউনুস সাহেব একটা সাক্ষাতকার দিয়েছেন। তিনি বরাবরই সুন্দর করে কথা বলেন। এবারও তিনি তাই বলেছেন। তিনি সুন্দর করে কিছু কুৎসিত কথা বলেছেন। আমি সরাসরি প্রথম আলো থেকে তুলে দিচ্ছি কিছু কুৎসিত অংশ-
প্রশ্ন: বর্তমানে লক্ষ করছি পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কে দৃশ্যমান উন্নতি হয়েছে। আপনি ইতিমধ্যে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। কিন্তু একটা বিষয় হলো, ১৯৭১ সালের গণহত্যার জন্য পাকিস্তান এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চায়নি। আপনারা কী কূটনৈতিকভাবে এ ব্যাপারে পাকিস্তানের কাছে কিছু জানাতে চান?
ড. ইউনূস: আমি নেপালের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছি। ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছি। মালদ্বীপের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছি। শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী আসেননি বলে দেখা করতে পারিনি। এটা হলো সার্কভুক্ত যত দেশ আছে, আমরা চাই যে সে দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হোক। এ জন্য সবার সঙ্গে কথা বলি, আলোচনা করি। তার মানে এই নয় যে সবকিছু পাল্টে গেছে। সার্কের একটা কাঠোমো আছে, সেই কাঠামোর মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও আমরা ফোনে কথা বলেছি। ওনাকে এখানে এসে পাইনি। উনি আগেই চলে গেছেন। তাঁর সঙ্গে দেখা হয়নি।
তিনি পরিষ্কার এড়িয়ে গেলেন ১৯৭১ সালের গণহত্যার বিষয়টি। ভয়েজ অফ আমেরিকা আবার তাকে ধরিয়ে দেয় প্রশ্নটা। -
প্রশ্ন: কিন্তু ১৯৭১ সালের গণহত্যার বিষয়ে যেটা বললাম…
ড. ইউনূস: সেটা পৃথক বিষয়। সেটা পাকিস্তানের সঙ্গে কিভাবে হবে...কিন্তু সার্ক প্রতিষ্ঠিত সত্য। সেই সত্যকে আমরা মেনে...আমরা চাই যে সার্ক শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হোক। সবাই একসঙ্গে কাজ করুক। সেখানে ভারত থাক, পাকিস্তান থাক। যত দেশ আছি, সবাই সমানভাবে থাকি। আমরা চাচ্ছিলাম তেমন সুযোগ যদি আসে, আমরা সার্কভুক্ত সরকারপ্রধানেরা একসঙ্গে একটা ছবি তুললাম। এটাও একটা সুন্দর বার্তা সবার কাছে যেত। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। হয়তো ভবিষ্যতে যাতে সম্ভব হয়, সে চেষ্টা আমি করে যাব।
নাই! উত্তর নাই। তিনি হাবিজাবি বলে গেছেন। ১৯৭১ নিয়ে তার বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা নাই। এবার দেখুন মোক্ষম প্রশ্নের মোক্ষম জবাব। তিনি যে তীব্র ঘৃণা মনে নিয়ে দেশ শাসন করতে বসেছেন তা এইখানে পরিষ্কার করেছেন।
প্রশ্ন: ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু জাদুঘর হিসেবে যেটা পরিচিত ছিল, সেই জাদুঘর ৫ আগস্টের পর বিনষ্ট করা হলো। ১৫ আগস্টে সরকারি যে ছুটি ছিল, সেটাও আপনার সরকার বাতিল করেছে। বঙ্গবন্ধুর বহু ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা হয়েছে। এ নিয়ে বেশ খানিকটা সমালোচনাও হচ্ছে। আবার অনেকেই বলছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তাঁরা ফ্যাসিবাদের আইকন হিসেবে দেখছেন। তাঁরা বলছেন, এ কারণেই এটা ঘটেছে। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের জাতির জনক হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বীকৃত। এ ব্যাপারে আপনার সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি কী?
ড. ইউনূস: আপনি পুরানো দিনের কথাবার্তা বলছিলেন। এর মধ্যে একটি গণ–অভ্যুত্থান ঘটে গেছে, এটা বোধ হয় আপনার স্মরণে নেই। আপনি এমনভাবে কথা বলছেন যেন এসব ঘটনা ঘটেইনি। কাজেই নতুন ভঙ্গিতে যা হচ্ছে, সেটাকে দেখতে হবে তো। কত ছেলে প্রাণ দিল, সেটা নিয়ে আপনার প্রশ্ন নেই। কেন প্রাণ দিল। সেগুলো আসুক। কাজেই প্রথমে স্বীকার করতে হবে যে, ছাত্ররা বলেছে, আমরা রিসেট বাটন পুশ করেছি। এভরিথিং ইজ গন। অতীত নিশ্চিতভাবে চলে গেছে। এখন নতুন ভঙ্গিতে আমরা গড়ে তুলব। দেশের মানুষও তা চায়। নতুন ভঙ্গিতে চলার জন্য যেটা আছে, সেটা আমাদের সংস্কার করতে হবে।
রিসেট বাটন পুশ করে সব অতীত মুছে ফেলা যায়? এ কোন দানবের পাল্লায় পড়লাম আমরা? সব শেষ? এভ্রিথিং ইজ গন? এত্ত সহজ? সেই অতীতের ভিত্তি ঠিক থাকবে এমন দানবের হাতে? সংস্কার সংস্কার বলে যে জিকির তুলেছেন সেই সংস্কার কোন দিকে যাচ্ছে বা যাবে বলে মনে হয়? আমাদের সংবিধানের চেহারা কেমন হবে এর তত্ত্বাবধানে? কি মিশনে আসছেন উনি? জেড আই খান পান্না আজকে একটা ভিডিও সাক্ষাৎকারে বলছেন ইউনুস সাহেবের সমস্যা কি? পাকিস্তান পিরিতি এত কেন? তিনি ষড়যন্ত্র করে, পরিকল্পনা করে লাশ ফেলে আন্দোলন করে ক্ষমতায় যাওয়ায়, প্রতিশোধ পরায়ণ হিসেবে ইউনুস তইমুর লঙকেও হার মানিয়েছেন, হালাকু খানকেও হার মানিয়েছেন বলেছেন। জেড আই খান পান্না বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট আইনজীবী, এই আন্দোলন চলাকালীন সময়ে তিনি তীব্র ভাষায় সরকারের সমালোচনা করেছেন। তিনি এখন বলছেন যে এই ষড়যন্ত্র ইউনুস সাহেব চার পাঁচ বছর ধরে করেছেন!
আমার আগের লেখা গুলোতেও দেখলে দেখা যাবে যে আমি ঠিক মন থেকে ইউনুস সাহেবকে সমালোচনা করতে চাইনি। মনে হয়েছে লোকটা তো ভালো মানুষ, বয়সের কারণে, অন্যান্য চাপে হয়ত ভুল করছে, ভুল বকছে। কিন্তু বিশ্বাস করেন আমার এখন আর বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধাবোধ নাই এই লোকের প্রতি। ভয়েজ অফ আমেরিকার মতো জায়গায় তিনি, সরকারের উচ্চ পর্যায়ে থেকে তিনি অবলীলায় অতীত ভুলে যেতে বললেন! আচ্ছা, তিনি শপথ পাঠের পরে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে কেন গিয়েছিলেন ফুল নিয়ে? রিসেট বাটন তখনও কাজ করেনি?
আমাদের শেরপুরে তেমন বুঝা না গেলেও ঢাকায় অবিশ্বাস্য কাণ্ড হয়ে যাচ্ছে। দৈনিক নিয়ম করে দুই একটা করে পোস্ট দেখছি যেখানে নারীকে হেনস্থা করা হচ্ছে শুধু মাত্র পোশাকের জন্য! একজনের ছোট্ট একটা ভিডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়েছে যেখানে তিনি তর্ক না করে গাড়ির কাঁচ তুলে দিচ্ছেন। আর কাঁচ তোলা মাত্র ওই লোক থুতু দিলেন কাঁচে! তিনিও লাল সৈনিক মানে আন্দোলনের পক্ষের লোক ছিলেন। আওয়ামীলীগের অনলাইন এক্টিভিস্ট অনেকেই এখন এই নিয়ে মজা নিচ্ছেন। বলছেন এখন কেমন লাগে? কিন্তু মূল বিষয় হচ্ছে এই ভয়ংকর কাণ্ড গুলো হচ্ছে আর নারীর অবস্থা শেষ! এই মহিলা এই ট্রমা থেকে কবে বের হতে পারবেন? এমন অনেক শোনা যাচ্ছে।
দুর্গা পূজা এসে গেছে। নিয়ম করে মূর্তি ভাঙা হচ্ছে। ডক্টর নোবেল এই বিষয়ে নীরব। সব কিছুকেই বিচ্ছিন্ন ঘটনা প্রমাণ করে দেওয়া হচ্ছে। উত্তরা ১৩ নাম্বার সেক্টরে বেশ কয়েক বছর ধরে পূজা হয়। এবার হতে দিবে না! কেন? কারণ এই মাঠে ঈদের নামাজ হয়! মাঠ কী মসজিদের? না। এখানে নিয়মিত কন্সার্ট হয়। কিন্তু এবার পূজা হতে দিবে না বলে মিছিল করেছে কাঠ মোল্লারা। এই যে শক্তিটার উত্থান এইটা নিয়ে নোবেল বিজয়ীর অবস্থান হচ্ছে সবার বাক স্বাধীনতা আছে। তাই জামাত একটিভ হচ্ছে, তিনি তো তা বাধা দিতে পারেন না!
আহমাদুল্লাহ নামের এক সেলিব্রেটি হুজুর ধমক দিয়ে পাঠ্য পুস্তক সংস্কার কমিটি থেকে দুজনকে সরায় দিতে বলেছেন। নতজানু সরকার শুধু ওই দুজনকে কীভাবে সরায়? তাই কমিটিই বিলুপ্ত করে দিয়েছে। কামরুল হাসান মামুন, যিনি সরকার পতন, ইউনুসের ক্ষমতা নেওয়া নিয়ে খুব উচ্ছ্বাসিত ছিলেন। যিনি এবার দেশে গুণের কদর হবে, ইউনুস সাহেব কত চমৎকার আমেরিকা গিয়েই বাইডেনের সাথে দেখা করে ফেললেন এইটা দেখে খুব খুশি হয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন। তাকে আহমাদুল্লায় বাদ দিতে বলেছে। শুধু তাই না তিনি এমন বুলিঙের শিকার হওয়া শুরু করলেন যে এখন ফেসবুক ওয়াল লক করে বসে আছেন!
এগুলা শুভ দিক ইঙ্গিত করে না। কলেমা লেখা পতাকা নিয়ে মিছিল মানে ইসলামের জয় তেমন না, বরং এইটা বিপদের কথা মনে করিয়ে দেয়। নারীর চলাচলে বাধা ভালো কথা না। পাহাড়ে রক্ত ঝরছে এইটা ভালো লক্ষণ না। গার্মেন্টস শ্রমিক বেতনের দাবিতে রাস্তায় নেমে গুলি খেয়ে মারা গেছে, এইটা কিসের লক্ষণ?
কোন পথে আমরা চলছি হায় পরওয়ারদিগার?
এতদিন লেখা যেন এক পেশে না হয় তার একটা চেষ্টা থাকত আমার তরফ থেকে। কিন্তু এখন আর আসলে কিছু বলার নাই। এখন পাশ একটাই, অন্য পাশ আসলে পাশ না, খাদ!
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।