বিএনপি জামাতের আমলের গল্প করি একটু। আমরা কলেজে তখন। আমাদের এক বন্ধুর ক্যান্সার ধরা পড়ল। আমরা ঝাঁপিয়ে পড়ে টাকা জোগাড় শুরু করলাম। সবার কাছে যাই, স্কুলে যাই, কলেজে যাই, যেখানে সুযোগ আছে ওইখানেই যাই। এগুলা ক্ষেত্রে যা হয় আর কি, তেমন করেই চলছে কাজ আমাদের। আমি কীভাবে জানি এইটার মাথা হয়ে গেলাম। টাকা যা উঠত তা ব্যাংকে জমা করে দিন শুরু হত আমাদের। এরপরে ওইদিনের কর্মপন্থা ঠিক করতাম, এরপরে হাঁটা শুরু হত আমাদের। আমরা তখন নিরাশা কী জিনিস জানতাম না। কত লাখ টাকা লাগবে আর আমাদের উঠেছে কত এগুলা কোন হিসাব করতাম না। শুধু জানি আমরা হাল ছাড়লে ওইদিকে ওই ছেলে শেষ।
স্বাভাবিক ভাবেই আমাদের পরিচিত রাজনৈতিক নেতারা সবাই আওয়ামীলীগের। বিএনপির নেতাদের সাথে খুব একটা পরিচয়, খাতির নাই আমাদের। ছাত্রলীগের এক বড় ভাই আমাদের বলল এখন বাছ বিচার করলে চলবে না। ওরা ক্ষমতায়, ওদের কাছে যাইতেই হবে। তোমরা যাও। বলে একজনের নাম বললেন। বললেন, ও কামরুজ্জামানের কাছের লোক। আমরা গেলাম। এরপরে হল ইতিহাস! আমরা অল্প বয়সই ছেলেপেলে হুট করেই অফুরন্ত ক্ষমতার স্বাদ পেয়ে গেলাম।
কামরুজ্জামান রাজাকার। এইটা আমরা সবাই জানতাম। তবুও এই স্বার্থে সবাই মিলে তার সাথে দেখা করার সিদ্ধান্ত নিলাম। ওই বড় ভাই সব ঠিক করে দিলেন। আমরা একদিন গিয়ে হাজির হলাম কামরুজ্জামানের কাছে। জামাতের আফসোস ছিল শহরের পুলাপান কেউ জামাত করে না। গ্রামের, চরের লোকজন সব জামাত করে। কামরুজ্জামান সহ শেরপুর জামাতের সব নেতাকর্মী আমাদের দেখে যেন চাঁদ হাতে পেল। প্রচুর সমাদর পেলাম। কামরুজ্জামান আমাদের সামনেই ঢাকা যে হাসপাতালে ভর্তি সেখানে ফোন দিলেন। ওই প্রান্তে যখন ফোন ধরল তখন তিনি নিজের পরিচয় দিলেন, কামরুজ্জামান বলছি, সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল, জামাত এ ইসলাম! ওই সময় এমন একজনের ফোন মানে বিশাল কিছু। তো, আমরা মুগ্ধ সবাই। কাজের কাজ যা হয়েছে তারচেয়ে প্রচুর আপ্যায়ন হয়েছে। আমরা ঘুরিফিরি আর ওই বড় ভাইয়ের সাথে আড্ডা মারি। তিনি আমাদের আরসি কোলা খাওয়ান, কোক খাওয়ান, আপেল খাওয়ান, কমলা খাওয়ান! আমরা ওই সময় এমন আপ্যায়নে পুরোপুরি ডুবন্ত! এ ছাড়া আছে ক্ষমতার পাওয়ার। শহরে কে আমাদেরকে কী বলবে? ধীরে ধীরে শহর জামাতের আমির, শিবিরের আমিরের সাথে পরিচয় হতে থাকল। যেহেতু এইসবের প্রথম কাতারে আমি ছিলাম তাই আমার চেহারা অতি দ্রুত পরিচিতি পেয়ে গেল। কিন্তু আমি তো জানতাম আমি এই পথের পথিক না। তখন কোথাও ভর্তি হইনি, হব হব করছি। শেরপুরে আছি তাই করে যাচ্ছি যা চোখের সামনে আসছে তাই।
একদিন আসল সেই ক্ষণ। আমাদেরকে ডেকে ওই বড় ভাই বলল একটা প্রোগ্রাম আছে, তোমরা কিছু তোবারক মানে কিছু নাস্তার প্যাকেট একটা জায়গায় দিয়ে আসতে পারবা না? অবশ্যই পারব। আমি আর আমার বন্ধু রনি দুইজন সময় মতো হাজির হলাম। একবার ভাবলাম না তাদের এত এত লোক থাকতে আমাদেরকে কেন বলল এই কাজের জন্য। তখন ভাবি নাই, পরে ভাবছি এই সব। আমরা গেলাম। দেখি শহরের সব জামাতের নেতারা সেখানে। ওই বড় ভাইও আছেন। আমরা দিয়েই চলে আসব, তিনি বললেন একটু দাঁড়াও, আমিও চলে যাব। দাঁড়ালাম। শুনলাম জামাত নেতাদের বক্তব্য! সরাসরি স্বাধীন বাংলাদশ নিয়ে প্রশ্ন তুলছে! ২০০৪/৫ সালের কথা সম্ভবত। এইসময়ে কেউ স্বাধীন বাংলাদেশের ব্যাপারে প্রশ্ন তুলবে এইটা মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ার মতো দশা! একজন বলছেন এখন এত সমস্যা কেন? খুব তো স্বাধীন দেশের জন্য জীবন দিছেন! আমাদের যেন এমন একটা থাপড়ের দরকার ছিল। আমরা দুই বন্ধু একে অন্যের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। আর বুঝলাম আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে আছি।
কিন্তু এখানেই শেষ হল না গল্প। রনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলায় পরীক্ষা দিবে। ওর আত্মবিশ্বাস ছিল ও টিকে যাবে। ও চিন্তিত ছিল ওর গার্ল ফ্রেন্ডকে নিয়ে। রাজশাহী যেহেতু জামাত শিবিরের আখড়া তাই সেই বড় ভাইকে ওর গার্ল ফ্রেন্ডের রোল নাম্বার দেওয়া হল। বলা হল যদি সম্ভব হয় তাইলে যেন একটু দেখেন। ভদ্রলোক যে ভুলটা করলেন তা হচ্ছে তিনি জিজ্ঞাস করলেন না এইটা কার রোল। তিনি রাজশাহীর এক শিবির নেতার ফোন নাম্বার দিলেন। রনিরা রাজশাহী গিয়ে ওই নেতাকে ফোন দিলেন। তিনি খুব বেশি সাহায্য করলেন, এমন না। তিনি কিছু প্রশ্ন দিলেন যেগুলা আসতে পারে। ওইগুলাও ফেল মারল। ওই মেয়ের সুযোগ হল না রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। রনির হয়ে গেল সুযোগ! এবার দেখুন এই বড় ভাইয়ের কারবার। তিনি ধরেই নিয়েছেন ওইটা রনির রোল নাম্বার ছিল। তিনি এইটার পুরো কৃতিত্ব নিতে থাকলেন। আমাদের সাথে যখন আবার দেখা হল তখন তিনি বলতে লাগলেন আরে রনির রাজশাহীতে ভর্তিটা করানোর জন্য আমাদেরকে কত কি যে করতে হয়েছে, জামান ভাইকে গিয়ে ধরছি, জামান ভাইকে দিয়ে ফোন করাইছে না? এমন নানা আগডুম বাগডুম কথাবার্তা! আমরা ততদিনে পাকনা হয়ে গেছি। আমরা হাসি শুধু! কেউ কেউ হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাই শুনে! রনি রাজশাহী চলে গেল, আমি ঢাকায়। ওই ছেলেকে শেষ পর্যন্ত কামরুজ্জামান ৫০০০ টাকা দিয়েছিলেন। আমরা আরও বেশি কিছু আশা করেছিলাম।
যে কারণে এগুলা লিখলাম তা হচ্ছে আমরা জামাতের একেবারে টপ লেবেলের নেতার একটা ফোন কল দূরত্বে ছিলাম। আমি ছিলাম কামরুজ্জামানের শ্বশুর বাড়ির এলাকার মানুষ উনার স্ত্রীকে আমরা ফুফু ডাকতাম। আমাদের বাড়ির কেউই কামরুজ্জামানের কাছে কোন কিছুর জন্য যায় নাই। আমাদের জেঠাত ভাইয়েরা অনেক সুযোগ সুবিধাই নিয়েছিল। তো এই পর্যায়ে থেকেও, ওই সময় আমরা আমাদের পথ চিনে নিতে পারছিলাম। আমাদের অগ্নি পরীক্ষা তখনই হয়ে গেছিল। বয়স কম ছিল, তারা ক্ষমতায় ছিল। আমরা ভেসে যেতে পারতাম। যাই নাই। উল্টো বুঝে গেছিলাম রাস্তা কোনটা আমাদের। কোনটাতে কোনমতেই যাওয়া যাবে না।
ওই সময় এবং পরবর্তীতে যত জায়গায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে আলাপ দেখছি তত ঝাপ দিয়ে পড়ছি। উলটাপালটা ইতিহাস কেউ পড়াবে আমরা পড়ব তেমন ছিল না। আমরা, আমি এরপরে লম্বা সময় মুক্তিযুদ্ধের উপরে যা পাইছি তাই পড়ছি। যখন চাকরি শুরু করলাম, নিজের টাকায় সমানে বই কিনতাম। এখন আমার সংগ্রহে যত বই আছে তার মধ্যে রচনাবলী গুলো বাদ দিলে সবচেয়ে বেশি মুক্তিযুদ্ধের উপরেই।
এখন, কয়দিন যেতেই যেভাবে ইতিহাস নিয়ে ফুটবল খেলা শুরু হয়েছে তাতে আমার বুঝা শেষ সামনে কী দিন আসছে। ছাত্ররা যারা আমাকে চিনে তারা ইনবক্সে নক দিয়ে সমানে এইটা ওইটা জিজ্ঞাস করে। আমার ভাগ্নি, ভাইগ্না আছে, ওরাই সমানে জিজ্ঞাস করে। আলতুফালতু বইয়ের কথা বলে। কে পড়তে বলছে এগুলা? অমুক গ্রুপে বলছে এই বই পড়তে। গিয়ে দেখি সেই গ্রুপ!
সবার আগ্রহ নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি। সরকার নিষিদ্ধ করেছে মানে ওইটাই পড়তে হবে তাইলে।! নিষিদ্ধ করার সবচেয়ে বড় কুফল হচ্ছে এইটা। সবাই ওইটাকেই সঠিক মনে করছে। এমন কিছু বইয়ের নাম আসল সামনে আমি বললাম আরে এই বই যদি সঠিক হত বিএনপি জামাতের নেতারা এইটাকে বাইবেল কোরান বানায়া প্রতি বক্তব্যে এই বইয়ের রেফারেন্স দিত না? ওরাও তো এই বইয়ের কথা বলে না। তাইলে এইটা কেমন বই?
বললাম নিষিদ্ধ না এমন অনেক অনেক ভালো বই আছে, জিয়া সরকারের আমলে প্রকাশ পাওয়া বই আছে, খালেদা জিয়ার আমলে প্রকাশ হওয়া বই আছে। ওগুলা আগে পড়। পড়ে বিতর্কিত যেগুলা সেগুলা পড়বি। তাহলে সত্য মিথ্যা নির্ণয় সহজ হবে। মুশকিল হচ্ছে আমি সবার কাছে যেতে পারছি না। আর তারচেয়ে বড় বিপদ হচ্ছে বই যারা পড়ে জানতে চাচ্ছে তারা তবুও লাইনে আছে। কিন্তু যারা কিছু না পড়েই জানতে চাচ্ছে তাদেরকে বাঁচাবে কে? এখনই যে ফুটবল খেলা শুরু হয়েছে ইতিহাস নিয়ে সামনে যে কী হবে আল্লা মালুম। কয়েকজন বলছে সামনের জন্য প্রস্তুত হতে। মানে ঢাল তলোয়ার নিয়ে তৈরি হতে। এই ইতিহাস বিকৃতি ঠেকাতে তৈরি না থাকলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শেষ হয়ে যাবে।
ছাত্রদের অনেকের মধ্যেই এখন বিতৃষ্ণা এসে যাচ্ছে। সমন্বয়ক নামের এক আজাব সৃষ্টি হয়েছে দেশে। তারা কখন যে কি করছে তার কোন হদিস নাই। উপদেষ্টাদের ধমক দিচ্ছে, মন্ত্রণালয় পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে ধমকে! এক বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে তালা, কেন? সমন্বয়করা না করছে, প্রবেশ করা যাবে না। ওই ছাত্র বলছে আরে আমরা ছাত্র না? ভিসি অফিস থেকে কিছু বলছে? না। সমন্বয়কেরা না করছে! এমনই চলছে।
বিগ্রেডিয়ার সাখাওয়াত হোসেন ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে। তিনি দুইটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলছিলেন। এক, তিনি বলেছিলেন আওয়ামীলীগ নতুন করে শুরু করুক, কোন গণ্ডগোল বাধানোর চেষ্টা না করে দল গুছান। সামনে নির্বাচন, তার জন্য প্রস্তুতি নেন। ভয়েজ অফ আমেরিকা থেকে লাইন তুলে দিচ্ছি, -
"দেশের জন্য আওয়ামী লীগের অবদানের কথা তুলে ধরে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, "এটা অনেক বড় পার্টি। আই হ্যাভ লট অব রেসপেক্ট ফর আওয়ামী লীগ। একসময় বাঙালিদের ভরসার জায়গা ছিল এই পার্টি। বায়ান্ন, ঊনসত্তরের গণআন্দোলন ও স্বাধীনতা আন্দোলনের অবদান ব্যক্তিগত কোনো কারণে নষ্ট করবেন না। এটা জাতীয় সম্পদ। আপনারা আসুন।
আরেক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, "আওয়ামী লীগকে বলব এমন কিছু করবেন না যাতে জীবন বিপন্ন হয়। আপনারা রাজনৈতিক দল হিসেবে দলকে গুছিয়ে নিন। নির্বাচন হলে অংশ নিন। জনগণ ভোট দিলে ভোটে যাবেন। তবে প্রতিবিপ্লবের স্বপ্ন দেখলে হাজার-হাজার মানুষের রক্ত ঝরবে।"সেইসঙ্গে ভারতে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরার পরামর্শ দিয়ে সাখাওয়াত হোসেন আরও বলেছিলেন, 'আপনি ভালো থাকেন, আবার আসেন। আমরা সবাই আপনাকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু গণ্ডগোল পাকানোর মানে হয় না, এতে লাভ হবে না। বরং লোকজন আরও ক্ষেপে উঠবে।"
একজন গণতান্ত্রিক মানসিকতার যে কেউ এমন কথাই বলা তো স্বাভাবিক। কিন্তু এইটা তাদের পছন্দ হয়নি। কেন তিনি আওয়ামীলীগের কথা বললেন! নানা জায়গা থেকে হুমকি আসা শুরু হল। দেশ এখনও এমন কথা শোনার জন্য প্রস্তুত না। তিনি পরেরদিন মাফ চাইলেন আগেরদিনের কথার জন্য। কিন্তু কাজ হল না।
দুই, তিনি আর্মির বিগ্রেডিয়ার ছিলেন। বন্দুক, গুলি কোনটা কেমন এগুলা তার বেশ ভালো করেই জানা। তিনি আহাত আনসার বাহিনী, পুলিশদের দেখে সাংবাদিকদের বলেন অনেকেই ৭.৬২ বুলেটের আঘাতে আহত হয়েছে, নিহত হয়েছে। ৭.৬২ বুলেট কই থেকে আসল? এইটা তো সাধারণ কোন অস্ত্র না। এইটা পুলিশও ব্যবহার করে না। এগুলা তদন্ত করা হবে। এই দুইয়ে মিলে বিগ্রেডিয়ার সাহেব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সোজা পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ে চলে গেছেন! উলটাপালটা ইতিহাস পাঠ, আজগুবি সব কাণ্ড কারখানার ভিড়ে ৭.৬২ বুলেটের হিসাব হারিয়ে গেল। কারও কোন চিন্তাই নাই এই জিনিস দিয়ে কারা গুলি করল। আর এখন বিগ্রেডিয়ার সাহেব নিজেই নাই!
ইউনুস রাজে যে কে রাজ করছে বুঝা মুশকিল আসলে। ৮৪ বছরের ইউনুস সাহেব যে কতখানি কাজের মানুষ হবে তা নিয়ে এখন প্রশ্ন তোলার প্রয়োজন হয়ে পড়ছে। ২০০৬ সালে বিএনপি যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান নিয়ে একটা গণ্ডগোল লাগাল তখন রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন নিজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানের দায়িত্ব নেন। পুতুল একজন হয়ে রইলেন। বিএনপির কথার বাহিরে একটা কথা বলার সাহস তার ছিল না। তার তখন বয়স ছিল ৭৫ বছর। বয়সের ভারে ন্যুব্জ মনে হত তাকে। ইউনুস সাহেবকেও তাই মনে হচ্ছে আমার।
চাঁদাবাজি চলছে রমরমা অবস্থায়। সাধারণ দোকানপাটে ব্যবসা করতে এতদিন কাওকে চাঁদা দেওয়ার দরকার পড়ে নাই। এখন প্রায় সবাই চাঁদা দিচ্ছে। না করার সাহস নাই। শেরপুরের হিন্দুরা ভয়েই হোক, বিএনপি নেতাদের খুশি করার জন্যই হোক, সবাই মিলে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের কাছে যাওয়ার জন্য এক হয়েছেন, বিষয়? এবার কি পূজা করবে তারা? এই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য যাবেন নেতার কাছে! মেজাজ এত খারাপ হইছিল শুনে যে একবার মনে হল ইচ্ছামত গালি দেই, পরে মনে হল আসলে আমি কোনদিনই তাদের মনের অবস্থা বুঝতে পারব না। ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করে দেখলাম এবার দুর্গা পূজা হবে কি না তার সিদ্ধান্ত বিএনপির নেতার কাছ থেকেই নিয়ে আসা বেশ যুক্তিপূর্ণ! শেয়াল যদি মুরগি পাহারার দায়িত্ব নেয় তাহলে হয়ত একটু নিশ্চয়তা পাওয়া যায়। তা আসলে কতখানি কার্যকর পন্থা তা নিয়ে প্রশ্ন অবশ্য তোলা যায়। কিন্তু এখন মনে হয় এইটাই সেরা পন্থা।
অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ-পৃথিবীতে আজ,
যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দেখে তারা;
যাদের হৃদয়ে কোনো প্রেম নেই—প্রীতি নেই—করুণার আলোড়ন নেই
পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া।
যাদের গভীর আস্থা আছে আজো মানুষের প্রতি
এখনো যাদের কাছে স্বাভাবিক ব'লে মনে হয়
মহৎ সত্য বা রীতি, কিংবা শিল্প অথবা সাধনা
শকুন ও শেয়ালের খাদ্য আজ তাদের হৃদয়।
―জীবনানন্দ দাশ
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।