অসময়ে চাকরি ছেড়ে ২০১৬ সেপ্টেম্বরে বেহালা চৌরাস্তা থেকে মহেশতলার দিকে যেতে শিবরামপুরে গ্ৰীণফিল্ড সিটিতে একটি 3BHK ফ্ল্যাট কিনেছিলাম। অবশ্য ছেলের পড়াশোনার জন্য আমরা মে ২০১৬ থেকে তিনজনে থাকতাম মনিপাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটি বড় সোসাইটিতে ভাড়ার ফ্ল্যাটে। ২০২২এর জুলাইতে ব্যাঙ্গালোর চলে গিয়ে এযাবৎ সেখানেও আছি ভাড়ার ফ্ল্যাটে। গ্ৰীণফিল্ডের ফ্ল্যাটে দু এক বছর অন্তর পরিযায়ী পাখির মতো শীতে আসা হয় মাস দুয়েকের জন্য ছুটির মেজাজে।
GFC বড় আবাসন। তার বহু ফ্ল্যাট তালাবন্ধ পড়ে আছে। তবু নিয়মিত আবাসিক আন্দাজ হাজার চারেক। তাদের বেশ কয়েকটি WA গ্ৰুপ আছে। তবে আমি আছি কেবল GFC Fdn এবং GFC Medical Helpline গ্ৰুপে। ২০২১এর মার্চে এসে করোনার সময় ভ্যাকসিন নিয়ে টানাপোড়েন চলছিল। ওরা তখন অনেক কাজ করেছিল। ভ্যাকসিন ক্যাম্পের আয়োজন করেছিল। তখন আমি ঐ দুটো গ্ৰুপে ঢুকেছিলাম। দুরে থাকি, সোসাইটিতে কী চলছে খবরাখবর পাওয়া যায় GFC Fdn গ্ৰুপে।
সেখানে জনৈক পিকে বাবুর DP নেম নিয়ত পরিবর্তনশীল। যখন ওনার নম্বর সেভ করেছিলাম তখন তা PK ছিল বলে আমার কন্ট্যাক্ট লিস্টে তিনি PK-GFC হিসেবে বিরাজমান। সেদিন একজন জানালেন বর্তমানে গ্ৰুপে তাঁর DP নেম দেখা যাচ্ছে - "Sky is the Limit". আমি PK তে সেভ করার আগে দেখেছি - "Rome was not built in a day" - তারপরে আর "বহুরূপে গ্ৰুপেতে আমি" মোডে পিকেবাবুর ক্রম-রূপান্তরিত DP দেখা সম্ভব হয়নি।
সেটা অবশ্য পুষিয়ে যায় প্রতিদিন প্রাতে ঘুমচোখ খুলে গ্ৰুপে পিকেবাবু পোষ্টিত নানা পুষ্টিকর পোষ্ট দেখে। এ ব্যাপারে পিকেবাবুর প্যাশন এবং স্টক অতুলনীয়। সেই মার্চ ২০২১ থেকে, মানে যবে থেকে আমি এই গ্ৰুপে যোগ দিয়েছি, একদিনের জন্যও ওনার প্রভাতী মোটিভেশনাল মেসেজ করায় ছেদ পড়েনি। কোনো রিপিটেশনও দেখিনি। হয়তো তার আগেও করতেন। এ ব্যাপারে উনি গিনেসে নাম তুলতে পারেন মনে হয়। ওনার কিছু বাণীর রেশ মনে রয়ে যায় বহুদিন যেমন, সেদিন পাওয়া এটা - “Rather fail with honor than succeed by fraud." - SOPHOCLES
একবার ঐ গ্ৰুপে কুকুর প্রসঙ্গে পিকেবাবুর একটি পোষ্টের প্রেক্ষিতে কিছু চ্যাট হয়েছিল নিম্নরূপ।
PK-GFC: Kutta agar kisiko Kate ya darata hai to, usko sabak sikhane ke lie Jo kuch karna hai, karna chahiye. Kuch din pahale jab mai evening walk kar raha tha, koi Karan bina 2-3 kutte humko gher Lia tha ebang katne ka koshish kar raha tha ...
আমি - পিকে বাবু, একদা এই গ্ৰুপে দেখেছি আপনার DP নেম সতত পরিবর্তনশীল। যখন নম্বরটা সেভ করেছিলাম তখন তা PK ছিল বলে আমার কন্ট্যাক্ট লিস্টে আপনি আজও PK-GFC হিসেবে বিরাজমান। তাই লিখলাম পিকে বাবু। বর্তমানে কী নামে এখানে আছেন - জানিনা। কুকুর প্রসঙ্গে গ্ৰুপে আপনার উপরোক্ত পোষ্টের প্রেক্ষিতে কিছু ভাবনা গ্ৰুপেই ব্যক্ত করতে ইচ্ছে করছে যাতে অন্যেরাও তা জানতে পারে। কারণ বিষয়টি অন্যদের ক্ষেত্রেও কখনো প্রযোজ্য হতে পারে। বড় গ্ৰুপে আমি সচরাচর কোনো পোষ্ট করিনা বা অন্যের পোষ্টের ওপর মন্তব্যও করি না। তাই আপনি জানতে আগ্ৰহী জানালে জানাবো। তবে পোষ্টটা একটু বড় হবে, পড়ার ধৈর্য থাকলে তবেই জানাবেন। পড়লে আপনার মন্তব্য জানারও আগ্ৰহ থাকবে। কারণ বিশ্বগুরুর মতো একতরফা মনের কথা শোনাতে ভালো লাগে না। আমার পছন্দ মিথস্ক্রিয়া অর্থাৎ Interaction
গৌরব মজুমদার - আপনার কাছে সম্ভবত ভুল নম্বর সেভ আছে। আপনি যার কথা বলছেন উনি পিকে বাবু নন।
আমি - যে পোষ্টের ওপর ট্যাগ করে - পিকে-বাবু সম্বোধন করে মন্তব্য করেছি - সেটা আমার কাছে PK হিসেবেই সেভ করা আছে। তাই আমার গ্ৰুপ চ্যাটেও ওটা PK-GFC দেখাচ্ছে।
গৌরব মজুমদার - কি জানি, পিকেবাবু সাধারণত হিন্দি ভারসনে পোস্ট করেন না, নতুবা ইনি অন্য পিকেবাবু।
আমি - না, অন্য পিকেবাবুর পোষ্ট আমার চ্যাট স্ক্রিনে PK-GFC হিসেবে ডিসপ্লে হবে না। অর্থাৎ ইনি আগমার্কা পিকেবাবু।
গৌরব মজুমদার -
পিকেবাবু- হিন্দি ভার্সনে লিখেছি কুকুর নিয়ে মনের জ্বালা মেটাতে ও সকলকে অবগত করতে। বিনা কারণে তাড়া করবে, কামড়ে দেবে, তাও দূর থেকে কিছু স্বঘোষিত সারমেয় প্রেমী সুবচন দেবেন, এটা চলতে পারে না। তাই এর ঔষধ ভুক্তভোগীরাই ঠিক করবে। সমরেশবাবু, হোক দীর্ঘ, আপনার পোস্টের অপেক্ষায় রইলাম।
আমি - কিন্তু সেটাও যে একটু সুবচন টাইপের লাগতে পারে, চলবে?
পিকেবাবু - চলবে, সুবচন হোক বাঁচার উপায় জানান। কুকুরের ভয়ে ঘরবন্দি থাকতে চাই না।
আমি - দেখলেন তো গৌরববাবু, ঐ পোষ্ট ছিল ওরিজিনাল পিকেবাবুর। জনশ্রুতি - মানুষ রেগে গেলে মুখ দিয়ে মাতৃভাষা বেরিয়ে যায়। কিন্তু কুকুরের তাড়া খেয়ে রেগে গিয়ে পিকে বাবুর আঙ্গুল দিয়ে হিন্দি বেরিয়ে গেল। পিকেবাবু রাগ করবেন না। একটু মজা করলাম। সবসময় সিরিয়াস থাকলে জীবন বড় শুষ্ক লাগে।
পিকেবাবু - না, না, কিছু মনে করিনি, বলুন না, কী বলবেন।
আমি - তাহলে যাচ্ছে “কুকুর পাঁচালী”
(পিকেবাবুর উৎকণ্ঠার প্রেক্ষিতে)
কুকুরের অনেক প্রজাতির মধ্যে কিছু হয় হাউন্ড গোত্রের শিকারি কুকুর যেমন ডোবারম্যান, গ্ৰেট ডেন বা কর্ণাটকের মুদহল হাউন্ড - যাদের সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় ডগ স্কোয়াডে নেওয়া হয়েছে। কিছু হয় হিংস্র প্রকৃতির গার্ড ডগ যেমন বুল ম্যাস্টিফ, বক্সার, রটভয়েলার। এই দুই প্রজাতির স্বভাবে উগ্ৰতা থাকে। কিছু থাকে রিট্রিভার কাম স্নিফার ডগ - গোল্ডেন রিট্রিভার, ল্যাব্রাডর রিট্রিভার ইত্যাদি। এরা শান্ত প্রকৃতির, খুব বুদ্ধিমান, ভালো ট্রেনিং নিতে পারে, বিমানবন্দরে বম্ব স্কোয়াডে বা ভূমিকম্পে উদ্ধার কাজে অংশ নেয়। কিছু থাকে আদুরে খোদন টাইপের ল্যাপডগ যেমন পুডল, স্পিৎজ, স্প্যানিয়েল ইত্যাদি।
এসবের বাইরে আছে সর্বত্র বিরাজমান Street dogs বা নেড়ি কুকুর। আজন্ম মানুষের কাছাকাছি থাকে বলে ওদের স্বাভাবিক বুদ্ধি প্রখর। একটু ভালো ব্যবহার বা খাবার পেলে এদের আনুগত্য প্রশ্নহীন। এ ব্যাপারে আমাদের এবং আমাদের কুকুরপ্রেমী পুত্রের অনেক সুন্দর, অবিষ্মরণীয় অভিজ্ঞতা আছে। নেড়ি কুত্তা বিদেশী কুকুরের মতো বাড়িতে আদরযত্নের আশ্রয় না পেয়ে রাস্তায় থাকে। তার ওপর কখনো এরা কিছু কঠিন হৃদয়ের, নিষ্ঠুর প্রকৃতির মানুষের কাছ থেকে কারণে অকারণে দুর্ব্যবহার, অত্যাচারও পেয়ে থাকে। তারও বাস্তব অভিজ্ঞতা আছে আমার। মানুষের মতো কুকুরও খুব সংবেদনশীল প্রাণী। এদের স্মৃতিশক্তিও প্রখর। কিছু দুর্ব্যবহার হয়তো এদের মনেও রাগ, ভয়, বিরক্তি, আত্মরক্ষার্থে আক্রমণাত্মক মনোভাব ইত্যকার অনুভূতি জাগায়।
তবে কুকুর মানুষের মতো বুদ্ধিমান প্রাণী নয়। তাই কখনো উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে কেস হয়ে যায়। তাই পুরোনো কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতার প্রতিক্রিয়া কখনো কোনো নিরীহ মানুষের ওপর করে ফেলে। কুকুর তো আর মানুষকে নাম, ধাম, পদ, পদবী দিয়ে চেনে না। ওরা কিছু Attributes এর সাথে Associate করে যার মধ্যে প্রধান হচ্ছে - গন্ধ। এছাড়া আছে শরীরের আকার, কণ্ঠস্বর, চলনভঙ্গি ইত্যাদি।
বিশ্বে রঙের যতো বাহার (Secondary combination) সম্ভব তা তৈরি হয় RYB তিনটি প্রাইমারি রঙ দিয়ে। টিভি, মোবাইল স্ক্রিনেও তাই। মানুষের চোখের দৃষ্টি উন্নত ট্রাইক্রোমাটটিক ভিশন, মানে RYB Primary Colour এর কম্বিনেশনে এক কোটি রঙিন শেড এবং সাদা, কালো ও ধূসরের বিভিন্ন শেড মানুষের চোখ অনুভব করতে সক্ষম।
কিন্তু কুকুরের ভিশন ডাইক্রোমাটিক (YB) ফলে তারা নীল ও হলুদের নানা কম্বিনেশন, সাদা, কালো, ধূসরের নানা ভেদ বুঝতে পারে কিন্তু লাল, সবুজ বুঝতে পারে না। তাই কেউ যদি সবুজ প্যান্ট ও লাল জামা পরে কোনো শুয়ে থাকা কুকুরকে লাথি মারে পরে সে অন্য রঙের পোষাক পরে গেলেও তাকে তাড়া করতে পারে - কারণ রঙ সে চেনেনা - সে মনে রেখেছে সেই দুষ্টু লোকের গন্ধ। কিছু কুকুর কখনো কোনো বাইক বা গাড়ির পিছনে তাড়া করে। হয়তো ঐ জাতীয় বাইক বা গাড়ি নিয়ে কেউ তাকে কখনো ধাক্কা বা চুক্কি মেরেছে। তাই সে অনেক বাইক, গাড়ি ছেড়ে কখনো কোনো বিশেষ গাড়ির পিছনে ধাওয়া করে।
দৃষ্টির মতো মানুষের মনও জটিল। সে সচেতন মনের (conscious mind) নির্দেশ ছাড়াও অবচেতন মনের (subconscious mind) তাড়নায় এমন অনেক কাণ্ড করে যার হদিস সে নিজেও টের পায় না। কুকুরের মগজ মানুষের মতো উন্নত না হলেও অন্যান্য পশুর তুলনায় উন্নত। কুকুর মানুষের সাথে কয়েক সহস্র বছর খুব কাছাকাছি থেকে মানুষের নানা হাবভাব, প্রতিক্রিয়া দেখেছে। ফলে কুকুরেরও আছে অবচেতন মন, সেও ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখে। ফলে কখনো অবচেতন মনের তাড়নায় মানুষের কিছু আপাতদৃষ্টিতে যুক্তিহীন আচরণের মতো কুকুরও করে ফেলতে পারে আপাতদৃষ্টিতে ব্যাখ্যাতীত আচরণ। তবে তার জন্য তাকে শায়েস্তা করতে গেলে হিতে বীপরীত হতে পারে। যেমন ধরা যাক, হয়তো অহেতুক চেঁচানোর জন্য একটি কুকুরকে সুশোভনবাবু লাঠি নিয়ে ঠ্যাঙালেন, পরে সে হয়তো সুশোভনবাবুর মতো চেহারার একই আফটার শেভ লোশন মাখা মধুবাবুকে দেখে তেড়ে যেতে পারে। কারণ কুকুরের স্মৃতি অনেকটাই গন্ধ।নির্ভর।
কুকুর চরিত্র নিয়ে অনেক আলোচনা হোলো, এবার আসি পিকেবাবুর সমস্যা সমাধানে। কারণ তিনি কিছু জনৈক বেয়াদব কুকুরকুলের জন্য হাঁটা বন্ধ করে ঘরবন্দি হয়ে আছেন। আমার একটা টোটকা আইডিয়া আছে। সেটা আমি বাস্তবে প্রয়োগ করে দেখেছি - দারুণ ফল হয়।
পন্থাটি হচ্ছে - "ঘুষ থেরাপি" - শুনতে একটু অনৈতিক মনে হলেও এটি খুব কার্যকরী পন্থা। এই পন্থায় সর্বস্তরের মানুষ - পুলিশ, শিক্ষক, নেতা, মন্ত্রী, খেলোয়াড়, ধর্মগুরু ইত্যাদি, প্রভৃতি এবং ঈশ্বরও বশে থাকেন।
অতএব আমি পিকেবাবুকে শলা দিচ্ছি ভবিষ্যতে পকেটে এক প্যাকেট পার্লে-G নিয়ে প্রাতঃ বা সান্ধ্য ভ্রমণে যাবেন এবং এক বা একাধিক কুকুর সদলবলে তেড়ে এলে - যতোই ভয় লাগুক - প্রথমে সেখানেই স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে যাবেন। দৌড়াদৌড়ি, তাড়তে যাওয়া এসব করলে ওরা ঘাবড়ে গিয়ে কামড়ে দিতে পারে।
অতঃপর ওরা যখন ঘিরে ধরে তারস্বরে চেঁচাবে উনি তখন - "মেরেছো কলসীর কানা, তাই বলে কী প্রেম দেবো না" - মোডে একটি একটি করে বিস্কুট ওদের দিকে মোলায়েম ভঙ্গিতে ছুঁড়ে দেবেন। যে অপেক্ষাকৃত ভদ্র, কম চেঁচাচ্ছে, একটু দুরে আছে - তার দিকে প্রথমে দেবেন। ফলে যে পেলোনা - আপনার দিক থেকে তার মনযোগ যে পেয়েছে তার দিকে সরে যাবে।
এটা হচ্ছে ব্রিটিশ উদ্ভাবিত Time tested DIVIDE & RULE Policy. তাই স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরে অমৃতকালেও নেতৃবৃন্দ আমজনতার মনযোগ বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি এসব থেকে সরাতে মন্দির-মসজিদ, আমরা - ওরা, জাতপাতের জিগির জিইয়ে রেখেছেন। তাতে কাজও হচ্ছে। ফলে মানুষের মতো উন্নত প্রাণীকে যদি এই পদ্ধতিতে বশে রাখা যায় - কুকুরের ক্ষেত্রেও তা কাজ করবে।
পরিশেষে বাস্তব উদাহরণ হিসেবে একটা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বলি। এমন অভিজ্ঞতা একটা নয়, অনেক আছে আমার :
মে জুন ২০১৯ এ পাঁচ সপ্তাহের একাকী ভ্রমণে গেছিলাম উত্তরাখণ্ড। ২৬.৫ ভোর পাঁচটায় পাণ্ডুকেশ্বর থেকে রূদ্রপ্রয়াগের বাস ধরবো। গোবিন্দঘাট গুরুদ্বারা থেকে রাত চারটেয় বেরিয়েছি। প্রায় দু কিমি ভালো চড়াই পথ। বুকে পিঠে মিলিয়ে ১৬ কেজির দুটো স্যাক। অন্ততঃ পৌনে ঘন্টা লাগবে। আগের দিন বিকেলে যোগাধান বদ্রী মন্দির দেখতে গিয়ে পথে বেশ কিছু পেল্লায় সাইজের, লোমশ পাহাড়ি কুকুর দেখেছি। মেষপালকের রক্ষক কুকুর বা Shepherd Dog গোত্রের চেহারা সব। আমরা যাদের এ্যালশেসিয়ান বলি ওরাও আদতে German Shepherd Dogs. নির্জন, অন্ধকার, গভীর রাতে একা গেলে ওরা তাড়া করে আসতে পারে সেটা মাথায় ছিল। তাই সাথে রেখেছিলাম এক প্যাকেট পার্লে-G বিস্কুট।
হেড মাউন্টেড টর্চ লাগিয়ে চলেছি। পাণ্ডুকেশ্বরের কাছে বসতি এলাকায় আসতেই - যা ভেবেছিলাম - পেল্লায় কয়েকটি কুকুর ভয়ংকর আওয়াজ করে তেড়ে এলো। আসবেই জানা ছিল। হেড ল্যাম্পের আলোয় চোখগুলো ওদের সবুজ পান্নার মতো জ্বলছে। দ্রুত এগিয়ে আসছে ওরা। হাতে ট্রেকিং পোল ছিল। ওটা বাগিয়ে ভয় দেখাতে গেলে হিতে বীপরীত হতে পারতো। চারপাশ থেকে ঘিরে ধরে আক্রমণ করতো।
আমি ওখানেই দাঁড়িয়ে পড়লাম। কুকুর যদি নিজে আক্রান্ত বোধ না করে তাহলেই ওদের আগ্ৰাসীভাব একটু কমে যায়। প্যাকেট ছিঁড়ে কিছু লুজ বিস্কুট ট্র্যাকের পকেটে রাখা ছিল। বাকি প্যাকেট ছিল বুক পকেটে। কারণ আপৎকালীন পরিস্থিতিতে ঐটুকু সময়ও নষ্ট করা চলবে না। কাছে আসতেই মুখে চু-চু আওয়াজ করে রাস্তায় কয়েকটি বিস্কুট ফেলে দিলাম। অতো বড় শরীর। পেটে তো খিদে থাকেই। নিমেষে ওদের চিৎকার থেমে গেল। টপাটপ বিস্কুট খেয়ে ল্যাজ নাড়তে লাগলো। এবার চলতে চলতে বিস্কুট দিতে লাগলাম। ওরাও দু পাশে চলতে লাগলো।
কিছুটা এগোতে বসতি থেকে আরো কয়েকটি কুকুর ভৌভৌ করে তেড়ে এলো। ওরা হয়তো ঘুমকাতুরে, আলসে বা লেট লতিফ টাইপ্স। প্রথম খেপে ওদের সাথে ক্ষেপে গিয়ে তেড়ে আসেনি। তখন আমার পাশে চলা কুকুরগুলো ওদের দিকে তাকিয়ে অন্যরকম ভাবে ভৌ দিলো। যার মানে, আমার মনে হোলো, হয়তো ওরা ওদের বলতে চাইছে, ওরে, ঠিক আছে, অতো চেঁচাসনি, লোকটা খারাপ নয়, আমাদের বিস্কুট দিয়েছে। কুকুর তো ঘেউ, ভৌ ছাড়া অন্য কিছু বলতে পারে না। কিন্তু ঐ ঘেউ, ভৌয়ের রকমফের থেকে ওদের মনোভাব চাইলে বোঝা যেতে পারে - তা আক্রমণাত্মক না বন্ধুত্বপূর্ণ। তাই পরে তেড়ে আসা কুকুরগুলোও প্রথমে আসা কুকুরগুলোর সংকেত বুঝে চুপ করে গিয়ে আমার পাশে পাশে চলতে লাগলো। সব মিলিয়ে গোটা ছয়েক হবে। একটু পরে আমি সেই পুলিশ চেকপোষ্টে পৌঁছে গেলাম যেখানে গত বিকেলে বাসের খোঁজ নিতে এসেছিলাম। ওখানে আলো জ্বলছে। দুজন পুলিশ রয়েছেন ডিউটিতে। কুকুরগুলো এবার আমায় ছেড়ে ওদের ঠেকে চলে গেল।
- সাজেশন সমাপ্ত -
পিকেবাবু - সবটা পড়লাম। আপনার দেওয়া টোটকা কাজে লাগিয়ে দেখি। কাজে দিলে ভাল। তবে রাতের বেলা জানলার সামনে, বাড়ির পিছনে, বারান্দায়, সিঁড়ির নিচে সারমেয় কুলের মুহুর্মুহু তারস্বরে চিৎকার মারামারি রক্তারক্তি কাণ্ড - তখন কি পার্লে-জি কাজ করবে? তখন মনে হবে না 'পার্লে মারি' ?
পুনশ্চঃ - নিঃসন্দেহে পিকেবাবুর প্রত্যূত্তর ছিল অত্যন্ত ক্রিয়েটিভ। তাই আমি আর তার কোনো জবাব দিতে পারিনি।
লেখার শুরুতে রাখা মিষ্টি ছবিটি তুলেছিলাম নভী মুম্বাইয়ে এক রবিবার - একটি ডগ শোতে।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।