এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • এবার আবহাওয়ার খবর

    Syed Azan Ahmed লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৬ জুন ২০২৩ | ৯৬৫ বার পঠিত
  • হাওয়া কর্মীদের সহ্য অনেক, তেমনি তাদের ধৈর্য‍্য। লোকজন তেরিয়া মেজাজে ডাঁটিয়ে ওঠে, আবহাওয়া আবার দপ্তর হল কবে! ওটা তো আড্ডাবাজির অবাধ চত্বর! রাতদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় আময়দা ট্রোল হয় ব্যাটারা, ট্রেনে বাসে খ্যাকখ্যাক হাসির খোরাক। পূর্বাভাসে দেদার গলতি করেও, আজ অব্দি ওরা না তো করেছে মাথা হেঁট, আর না তো জনগণের কাঁচা টিটকিরিতে ফিরে পেয়েছে খুইয়ে বসা হুঁশ! সামান্য বর্ষার দিনক্ষণ নির্ণয়ে একেবারে শিশুসুলভ ব্লান্ডার - এই এগুচ্ছে তো ওই পিছচ্ছে, যেন টাগ অফ ওয়ার চলছে। বলল বৃষ্টি, ওমা! চতুর্দিক শুকিয়ে ফেটে চৌচির, শুকনো বলল তো গেল উল্টে - দিল দুদিক ভাসিয়ে। ইয়ার্কি নাকি!

    অবশ্য আবহাওয়া দপ্তরে বৈপ্লবিক বদল আসতে পারে যে কোনো দিন। করিতকর্মা জগজ্জন এক পা বাড়িয়েই রেখেছে নির্বোধ হাওয়া কর্মীদের পূর্বাভাসের অ-আ-ক-খ শেখাতে, কেবল একটু সময় আর একটা বেমক্কা সুযোগের অপেক্ষা। ওয়াকিবহাল আমজনতা তলায় তলায় সব খবরই রাখে, ঝড়ের হিড়িক তুলে দিয়ে মাছি মারা কেরানীরা কেমন মেজাজসে পিকনিক করে, কিংবা শীতের পূর্বাভাস দিয়েও সুতির হাফহাতা শার্ট পরে স্রেফ গুলতানি দিতে অফিস ছোটে কিরকম। এমনকি 'ঝেঁপে বৃষ্টি' বলে নিজের ছাতাটাকেই যে কড়িবর্গায় তুলে দেয় -সে কথা কি আর কারোর জানতে বাকি! আস্ত বদের ধারি এক একটা! ব্যাটারা শুধু-মুদুই এসব করে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়াতে। চূড়ান্ত স্যাডিস্ট।

    আমজনতা মনে করে আবহাওয়া দপ্তরের লোক মানেই গোঁফে তেল দিয়ে ঘুমানোটা তার এক এবং একমাত্র কাজ, অন্তিম লক্ষ্যও। বিশ্বস্ত সূত্রে তারা এও জেনে ফেলে, এদের অভ্যাসই হল অফিস টাইমে দপ্তরী ছেড়ে গোল হয়ে বসে তাস পেটানো, তারপর মাসান্তে এক্কেরে অন্যায্য মোটা টাকা মাইনে হাতে ঘরে ছোটা। এর সবটাই তারা করে চলে সরকারকে বেবাক উল্লুক বানিয়ে, সচেতন জনতাকে টুপি পড়িয়ে, এবং নিজের ছেঁড়াখোঁড়া বিবেকটিকে সটান ঝেড়ে ফেলে। সাধারণ মানুষ এই বদভ্যাসের এবার একটা কড়া বিহিত চান।

    অভিযোগের ফিরিস্তি সবাই শোনান, তবে বাঙালিদের ফর্দ আবার বেকায়দা গোছের লম্বা। ঠিকই তো! বড়াই করার মত আবহাওয়া দপ্তরের আছে টাই বা কী! বছর শেষে মার্জনা ভিক্ষা, আর 'বাংলাদেশের দিকে ঘুরে গেছে' এই অজুহাতি আপ্তবাক্যটিকে বাড়িয়ে চড়িয়ে খাড়া করা ছাড়া। সাইক্লোনের কাঙ্ক্ষিত রাস্তা বেঁকেটেরে গেলে কর্মীবৃন্দের কাঁচুমাচু মুখ ছাড়া সমাজের আর কোন কন্ট্রিবিউশনে লেগেছে ওরা! পাবলিকের খুব গা কসকসানি। এদের কোনো ভাবে শায়েস্তা করা যায় না! হাওয়া আপিসের ক্রনিক ব্যর্থতা নিয়ে লোকসভায় হুজ্জত চলে না কেন! একটা বিল এলেই তো চলে যায় ব্যাটারা মায়ের ভোগে। শীত বর্ষা এমনকি ভাদ্র দুপুরেও চায়ের দোকানে সালিশি বসে আবহাওয়া দপ্তরের মুণ্ডপাত করতে। মূলত তাদের রোষ, দপ্তর টাকে তুলে দেওয়া হচ্ছে না কেন! কিংবা কোনো প্রাইভেট ফার্মের কাছে বিক্রি করে। খামোকা সরকারের বরাদ্দ অর্থ ধ্বংস করা। সব মানুষ অবিশ্যি একপেশে কাঠগোঁয়ার নন, দরাজ সহমর্মীরা প্রায়শই কংস মামার আদর ছোঁড়েন। হাপুসনয়নে তাদের কাতরোক্তি - সরকারি দপ্তর, বেচারিরা যায় কোথায়, ফুটপাথিয়া দোকানদারের পুনর্বাসন হলে হাওয়া দপ্তরই বা বঞ্চিত হবে কেন! দিলেই তো হয় অন্য কোথাও চালান করে। রেলের পাথর ভাঙতে কিংবা ব্যাংকের অঢেল ক্যাশ গুনতে, আর নয়তো ডান্ডা হাতে পুলিশেরই কোনো সাবেকি ভাঁজ মারতে। তাদের ধারণা সরকারি দপ্তরের কর্মীদের এখান থেকে ওখানে চালান করাটা হল এক কৌটো থেকে আরেক কৌটোয় ছাতা ধরা মুসুরডাল সরিয়ে ফেলার মত - জাস্ট বাঁ হাতের খেল।
    আমফুনের নিখুঁত পূর্বাভাসের পর অন্য দপ্তরের সরকারীরাও জ্বলে গেলেন তেলে-বেগুনে। কী একটা আগডুম বাগডুম পুঁচকে দপ্তর। ভূগোলের ম্যাপ পয়েন্টিং করে কাঁড়ি কাঁড়ি মানপত্র পেয়ে গেল আন্তর্জাতিক সংগঠন থেকে। কোনো মানেই হয় না!

    হাওয়া কর্মীদেরও কসুর রয়েছে বিলকুল। পুজো ঈদ নববর্ষ বড়দিন গুলি মেরে, কোনো ট্যা-ফুঁ ছাড়াই তারা ঘাড় মাথা গুঁজে কাজ করে যাবেন, আর তাদের পরিশ্রমের খতিয়ান চেয়ে সাধারণ মানুষ উষ্মা প্রকাশ করবে না! গাদা গাদা মার্কস নিয়ে ডিপার্টমেন্টে ঢুকে ভুলেও ইউনিয়নের ছায়াবাজিতে যাবেন না, টেবিল চাপড়ে হুঁ কথায় আট দশটা স্ট্রাইক ঠুকবেন না, আর তাদের শিরদাঁড়ার এনাটমি নিয়ে সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুললেই যত দোষ! ঝঞ্ঝা মেঘের তর্জন উপেক্ষা করে অবিচল চিত্তে পাইলটদের খুঁটিনাটি তথ্য দিয়ে যাবে সে। ঠিক এত এত উচ্চতায় এই এই মেঘ রয়েছে, রানওয়ের সেই দিকটার ভিসিবিলিটি কমতে পারে, আকাশের ওই খানটা ঠিক সুবিধাজনক ঠেকছে না - সাবধান। পাইলটের বিস্ময় ছানাবড়া হতে হতে ফ্লাইট শুদ্ধু সেফ ল্যান্ড করবে। নীচে নামতেই ক্যাপ্টেনের বিহ্বল স্বগতোক্তি - যন্ত্র ছাড়াই এই লোকগুলো বলে বলে মেলায় কী করে, এরা মানুষ নাকি দৈত্যি দানো!
    হ্যাঁ, তারপরেও ওই লোকগুলোর যোগ্যতা নিয়ে অনর্থক তদন্ত চলবে।

    বলে রাখা ভালো, আবহাওয়া এমনই একটি দপ্তর যার দ্বার অবারিত নয়, কোনোকালেই ছিল না। অন্তত এখানে চাকরি বাকরি করে খেতে হলে সবার আগে মার্কশিটের প্রত্যেক খেপে মুক্তহস্তে সর্বোচ্চ নম্বর লাগে। তারপর বহুস্তরীয় ছাঁকনি দিয়ে সেরাদের বেছে নিতে চলবে সর্বভারতীয় ঝাড়াইবাছাই। একমাত্র দপ্তর যার এ টেবিলে গণিতে নব্বইয়ের ফার্স্টক্লাস বসেন তো, উল্টোদিকে হাল আমলের কম্পিউটার-সায়েন্স টপার। তবে নম্বর তো যোগ্যতার নির্ভুল মাপকাঠি নয়, আর না তো দক্ষতার সঠিক মানদন্ড। তাই আবহাওয়া দপ্তরে মাথা গলিয়ে দিলেও আপনার চাকরি নিয়ে টানাপোড়েন হতেই পারে, যদি না কঠোর নিনজা ট্রেনিং এ প্রত্যেকবার আপনি সমান দক্ষতায় উতরে যান। চাকরির বউনি হবে পেল্লায় ট্রেনিং দিয়ে, কেরিয়ারের মধ্যগগনে আরও একবার, প্রাজ্ঞ হয়ে উঠতে পক্ককেশে শেষবার।

    তাতেও অপবাদ ঘোচে নি। আবহাওয়া দপ্তরের পারফরম্যান্স নিয়ে আদ্দি জোকগুলো 'ফরওয়ার্ডেড মেনি টাইমস' হয়ে হোয়াটসঅ্যাপে ফিরে ফিরে আসে। ইমোজিরা হুল্লোড় তুলে লুটিয়ে পড়ে এ ওর গায়ে। রেডিওর চ্যাংড়া RJ টেলিফোনে সদালাপী আবহাওয়া কর্মীকে অকারণে নাস্তানাবুদ করলে তা ইউটিউবে ভাইরাল হয় একবেলায়। তাতে হাওয়া কর্মীর কী আর করা,বাসে ঘাপটি মেরে থাকতে হয় আরেকটু। ট্রেনের কামরার কোরাস আক্রমণে সংকুচিত হয়ে সিটের কোনায় সিঁধতে হবে আরো কিছুটা পথ। পাছে আরও লোকে জেনে ফেলে আর এক গাল হেসে বলে - ও! আপনিই আবহাওয়া দপ্তর। তারপর তাচ্ছিল্যের সুরে, শীতের খবর মিলল না যে!

    "শীত কবে আসবে" করে করে হেদিয়ে মরল বাঙালি। আর সময়ে এলো না তো চট করে ধরতে ছুটল আবহাওয়া দপ্তরের কলার। উত্তুরে বাতাস যেন হাওয়া আপিসের দপ্তরী সম্পত্তি, পারদ কমানোর সব দায় বর্তিয়েছে তারই কর্মীদের পেতে রাখা গর্দানে। মানুষের কাছে হাওয়ার খবরাখবর একটা বেড়ে মনোরঞ্জন, খোরাকে হাতটানের আপদকালীন হাতের পাঁচ। এক ফোঁটা সহানুভূতি আর আসমুদ্র তাচ্ছিল্য নিয়ে কখনও শেষ না হওয়া একটা মেগা এপিসোড। গুরুতর অভিযোগ খন্ডন করা যায়, আমরা দেখেছি। ফোঁপরা অভাবের ষোলআনা প্রকোপও মোচন করা যায়, এও শোনা। কিন্তু মিথ্যে অপবাদকে ঘোচানোর কোন অব্যর্থ দাওয়াই জানা আছে কি, নেই কারণ তার নির্মম উদ্দেশ্যই তো খামোকা নাস্তানাবুদ করার নির্ভেজাল উত্তেজনাতে, কেমন জব্দ বলে চতুর্ভুজ হওয়ার নির্দয় উপভোগে । ভবিষ্যৎ দর্শানোর মাপ জোকে সামান্য হেরফের হলেও তার কৈফিয়ত চাওয়ার নৈতিক অধিকার সকলেরই থাকবে। কথার নড়চড় হবে অথচ বিশেষ দ্রষ্টব্য বলে পাদটীকা আসবে না তা কি হয়! কিন্তু ভবিষ্যতের ওজন কতখানি সে ব্যাপারে আমরা আদৌ ওয়াকিবহাল তো! কিংবা এটুকু সচেতনতা আছে তো যে, হাওয়া আপিস যেটা বলে সেটা অদেখা- অজানা ভবিষ্যৎ ঝলক, বর্তমানের ধারাভাষ্য বা কিংবা সুদূর অতীতের নস্টালজিয়া নয়। যে গদগদ ভঙ্গিতে নত মস্তকে একজন জ্যোতিষের কাছে হাত পাতি, শেয়ার গুরুর কাছে নাড়া বাঁধতে হুমড়ি খাই, তার কণামাত্র সম্মান কি এঁদের প্রাপ্য ছিল না। যেহেতু দপ্তরটা সরকারী তাই তার যাবতীয় প্রোডাক্ট আমার গণতান্ত্রিক হকের ধন, এবং তার কর্মীরা আমারই পারিবারিক চাকর, কাজেই তার শ্রমের ফসলে এধার-ওধার হলেই অকম্মার ঢেঁকি লিখে তার গায়ে ছাপ্পা মেরে দিতে হয় - এই হল সহজাত ত্রৈরাশিক বিশ্লেষণ। 'বাড়ির কাজের লোক' ভাবার সামন্ততান্ত্রিক মানসিকতা রয়েছে বলেই সাইক্লোনের নিখুঁত পূর্বাভাসে নিজেকে ঘরবন্দি করার মাসখানেকের মাথায় বর্ষার সামান্য তরবেতরে দাঁত কিড়মিড়িয়ে ওঠে, অপদার্থ সব!

    পূর্বাভাসের দিনপঞ্জিতে বর্ষা যদি উপন্যাস হয় তবে মরসুমী শীতকে বলতে হয় ছোট গল্প, আর তাতে কালবোশেখির ঝড় নির্ঘাত কোনো একাঙ্ক নাটক - এক দৃশ্যেই ফুড়ুৎ। প্রবন্ধ হোক কি কবিতা সাহিত্যের ক্ষেত্রে এসবের সার্থক রূপায়ণে যেমন বিশেষ আঙ্গিক রয়েছে, তেমনি পূর্বাভাসের বেলায় আবহাওয়াবিদের রয়েছে প্রয়োজন অনুযায়ী যথাযথ আয়োজন। পূর্বাভাস স্বল্প মেয়াদী হতে পারে কিংবা দীর্ঘও, আবার এও হতে পারে তার আয়ুষ্কাল মাত্র কয়েক ঘন্টা। সুদীর্ঘ গবেষণায় মিলেছে বাহারি গাণিতিক নকশা।

    স্ট্যাটিসটিক্যাল মডেলকে টেক্কা দিয়ে পূর্বাভাসের বুনিয়াদি ভিত্তি আপাতত ন‍্যুমেরিকাল মডেল। প্রবাবিলিটি যার নখের ডগায়, ক্যালকুলাস যার শিরায় শিরায়। বায়ুমণ্ডলের জটিল সমীকরণগুলোকে যে তুড়ি মেরে সমাধান করে। তাপমাত্রার পূর্বাভাস দিতে এই হয়তো থার্মোডাইনামিক্সের কোনো বেয়াড়া সমীকরণের বিহিত মুহূর্তে করে দিলে তো পরক্ষনেই হয়তো স্ক্রিনে ফুটলো আপেক্ষিক আর্দ্রতার চালচলন সংক্রান্ত জরুরি কোনো উপপাদ্য।

    তবে কর্মীদের তাতেও দম ফেলার জো কোথায়। যন্ত্র তো বলেই খালাস,তার বক্তব্যকে চুলচেরা বিশ্লেষণ করবে কোন মাথা! তার উত্তরকে যাচাই করতে, বাজিয়ে দেখে নিতে ডাক পড়বে তো সেই সাদা চুলের পোড় খাওয়া অভিজ্ঞতারই।

    weather is a science we haven't fully understood … এ শুধু কথার কথা নয়। যন্ত্র অঙ্কে ওস্তাদ, কিন্তু তার ইনটুইসন কোথায়! কে তাকে ধার দেবে দুঁদে আবহাওয়াবিদের একখানি ষষ্ঠইন্দ্রিয়। মানব অভিজ্ঞতার তিলতিল সঞ্চিত নির্যাস সফটওয়্যারে সঞ্চার করবে কোন ল্যাঙ্গুয়েজ! কাজেই রক্তমাংসের সদাসতর্ক আবহাওয়াবিদরা অপরিহার্যই রয়ে যান নির্ভেদ্য পর্দার অনেকটা অন্তরালে। কম্পিউটার নিদ্রা গেলে তাদের টেবিলে নিত্য জ্বলে ওঠে রাত্রি-আলো। গমগম করতে থাকে 24x7 অফিস চত্বর - শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা। আবহাওয়া উপাদানের নিক্তি মেপেই তাদের কাগজে কলমে অঙ্ক কষতে হয়। শিয়রে শমন জ্ঞান করে রাখতে হয় চরম প্রস্তুতি। যে কোন মুহূর্তে বদলে ফেলতে হবে ভবিষ্যৎ সন্ধানের সুচারু ফন্দিফিকির। প্রয়োজনে ফিরে যেতে হবে একদম ওল্ড-স্কুল পদ্ধতিতে। সামান্য একটা ডায়াগ্রাম হয়তো সেদিনের মতো জানিয়ে দিল সান্ধ্য ঝড়ের অশনি সংকেত।

    পূর্বাভাসের পথ বড়ই কণ্টকময় মান্যবর। সুদূর এল-নিনো এবং লা-নিনার মৃদু টুসকিতে শুকোতে পারে বন্যাপ্রবণ অঞ্চল। মুলুক পাড়ের সুমদ্রস্রোতের গতিবিধির আচমকা উলটপুরানে দেশজ পূর্বাভাসের মোড় ঘুরে যায়, কাজেই হাজার কারণে রজ্জুতে সর্পভ্রম এক্কেবারে স্বাভাবিক। আবহাওয়া তো আক্ষরিকই হাওয়ার খেলা। এক হাওয়া টক্কর দেয় আরেকটাকে। যার ক্ষমতা বেশি তারই জবরদখল চলবে কিছুদিন।

    পূর্বাভাসে যে বিষম ল্যাঠা তার হাতে নাতে প্রমাণ তো ভুরিভুরি। দুয়ারে শীত আসতে যা দেরি, সাগর পাড়ের নিম্নচাপ দিল ভ্রুকুটি করে। পশ্চিমী ঝঞ্ঝা লম্বা গুঁতো হাতে ম্যাপের মাথা ছুঁয়ে প্রায়ই টহল দিচ্ছে শীত-বর্ষার পথ আগলাতে। মৌসুমি বায়ুর বাড়া ভাতে ছাই দিতে নিম্নচাপের উটকো হ্যাপা তো হত্তা দিয়ে পড়ে থাকে বঙ্গোপসাগরের বিস্তীর্ণ প্রান্তরে। এদিকে আমুদে মানুষের পিকনিক ভণ্ডুল হতেই ঝাল হয়ে যায়। নন্দঘোষ আবহাওয়া দপ্তরের ডাক পড়ে। আবাল-বৃদ্ধ-বণিতার অব্যর্থ ফোরকাস্ট চাই অক্ষাংশ দ্রাঘিমাংশের অবিকল চক মিলিয়ে। বঙ্গোপসাগর থেকে বাংলাদেশের বর্ডার অব্দি মাটিতে কঞ্চির ঢেঁড়া কেটে কেটে বিজ্ঞাপনী রিলে দিতে হবে - এই যে, ঠিক এইখান দিয়ে ঘূর্ণি ছুটবে সাঁইসাঁই। সামান্য টলেছে কি মাথা গরম!

    হাজার অবজ্ঞা নিয়েও আবহাওয়ার পেটেন্ট নেওয়া দপ্তর পূর্ণ উদ্যমে কাজ চালিয়ে যায় বলেই জনমত আঁচ অব্দি করতে পারে না ফি-বছর ঠিক কত মানুষ দুর্যোগ কাটিয়ে ঘরে ফেরেন। শুধু কি তাই, এই দপ্তরটিকে পাঁচ মিনিটের জন্য মুছে দিয়ে দেখুন, দেশের যাবতীয় বিমান পরিষেবা একলহমায় স্তব্ধ হয়ে গেছে। সাধে কি আর জরুরি বিভাগ! জনসাধারণ কেবল এই আবছা ধারণা মগজে পুষে রাখেন - কাজ নেই বড়, ওরা সুখে আছে ভালো। সেখানেও মস্ত বড় ফাঁক। সাধারণ মানুষের দিনাতিপাত যদিও লক্ষ ফাঁকফোকর নিয়েই , তাই আবহাওয়া দপ্তরে ৩৬৫ দিনই ডিউটি - এই তথ্য কেমন জিওল মাছের মতই পিছলে পালিয়ে গেছে। তাপমাত্রার কি আর বিরতি হয়, নাকি বায়ুচাপের ছুটি।

    হে মান্যবর, শীতের কুয়াশা গাঢ় হলে আপনি যখন আপাদমস্তক মুড়ি দিচ্ছেন হাওয়া কর্মী ততক্ষণে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা লিখেজুখে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠিয়ে দিয়েছে। শিলাবৃষ্টিতে আপনার বিপন্ন অনুভূতিরা বল্গাহীন দৌড় লাগাল কি সেই একই লোক হয়তো দেখলেন শিলার চাঙ্গর হাতের চেটোয় ফেলে তার ব্যাসার্ধ নিচ্ছে। বজ্রবিদ্যুৎ এ আপনার কবিতা পায় বুঝি! হাওয়া কর্মীর তখন বাড়া কাজ, ঘন্টায় দুবার জরুরী বার্তা যাবে, পদ্যের আলগা ছন্দে নয় অঙ্কের কঠোর শাসনে, কোনো ভাববিলাসী ভুলচুক সেখানে দস্তুরমতো হারাম। আপনার নাজুক ঘুমের ওপারে দুর্যোগের কোনো রাত্তিরে ছা পোষা এক হাওয়া কর্মী প্রতিবন্ধকতার দেয়াল ভাঙছে দেখুন। এ দপ্তরের কর্মীদের কোনো অসহায় আত্মসমর্পণ নেই, আবদার নেই করতালির জোরালো উচ্ছ্বাসেরও। সুমদ্রগর্ভ প্রসূতি হলে তার ধ্বংস-পাগল ঘূর্ণি সন্তানকে চোখে চোখে রাখতে গিয়ে হিমশিম সকলে, শিরা ধমনী দিয়ে কেবল সাঁত সাঁত ছুটে চলল অ্যাড্রিনালিনের রক্তচ্ছাস। এ জিনিস শার্লকের রহস্য সমাধানের চেয়েও মারকাটারি, ঢের দুঃসাহসিক, সাংঘাতিক। তবে এসব গল্প জনসমক্ষে বলবে কে! এরম ওয়াটসন আজ অব্দি পয়দা হয়েছে নাকি।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৬ জুন ২০২৩ | ৯৬৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • দপ্তরের ক্ষোভ   | 165.225.***.*** | ১৬ জুন ২০২৩ ২২:৪৯520451
  • বুঝলাম!  
     
    তবে কিনা ​​​​​​​দপ্তর ​​​​​​​কিভাবে ​​​​​​​কাজ ​​​​​​​করে, ​​​​​​​মানে ​​​​​​​ঐ ​​​​​​​আগের স্ট্যাটিসটিকাল ​​​​​​​মডেল ​​​​​​​থেকে ​​​​​​​কিভাবে ​​​​​​​আজ্কের ন্যুমারিক ​​​​​​​মডেলে ​​​​​​​এল, আগের মডেলের থেকে এখনকার মডেলের অ্যাকুরেসি কত বাড়ল, ​​​​​​​মডেলে কত প্যারামিটার, দেশে ​​​​​​​দেশে ​​​​​​​একই ​​​​​​​মেশিন ​​​​​​​লার্নিং ​​​​​​​মডেল ​​​​​​​কেবল ​​​​​​​প্যারামিটার ​​​​​​​পাল্টে ​​​​​​​পাল্টে ​​​​​​​চলে ​​​​​​​কিনা - এইসব আলোচনা ​​​​​​​একটু হলে ভাল লাগবে। ​​​
     
  • Syed Tousif Ahmed | ১৯ জুন ২০২৩ ১০:৩৭520505
  • সেসব আলোচনাও না হয় হবে একদিন। 
  • ইন্দ্রাণী | ০৭ জুলাই ২০২৩ ০৩:০৯521058
  • চমৎকার গদ্য আপনার।
  • Kuntala | ০৮ জুলাই ২০২৩ ০৪:২৪521080
  • পূর্বাভাস যেমনই হোক না কেন, আপনার লেখাটি চমৎকার! 
  • পলিটিশিয়ান | 76.174.***.*** | ০৮ জুলাই ২০২৩ ০৫:০৫521081
  • আবহাওয়া বিভাগে চাকরি বিক্রি হয় না!!! 
     
    লোকে তো রাগ করবেই।
  • Amit | 203.22.***.*** | ০৮ জুলাই ২০২৩ ০৬:৩৬521082
  • এইরে। এই খবর টা পিসি ভাইপোর কানে পৌছলে এটাও ভোগে যাবে। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় প্রতিক্রিয়া দিন