দেশ জোড়া লকডাউন ও তার পরবর্তী আমফানে যখন বাংলার বহু মানুষ ধুঁকছেন, সে সময়ে বেশ কিছু অভূতপূর্ব উদ্যোগ দেখা গিয়েছে। তেমন উদ্যোগ ঘটেছে প্রচুর। এখানে তার মধ্যে থেকে সামান্য কয়েকটি উদ্যোগের কথা লেখা থাকল। সামগ্রিক ছবিটা যে অতি ইতিবাচক, তা বুঝতে অসুবিধা হবার কথা নয়।
সেতু নামের একটি সংস্থার তরফে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ক্যানিংয়ের গৌড়দহ কারখানার চকে ৮ সপ্তাহ ধরে ২৫০ জনের বেশি পরিবারকে খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হয়েছে। রাজারহাট নিউটাউনের শহুরে বসতি এলাকায় মে মাসের মাঝামাঝি থেকে এক মাসের বেশি সময় ধরে বেশ কিছু পরিবারকে খাদ্যসামগ্রী ও কিছু ত্রিপল দেওয়া হয়েছেএরকম কাজ এই সংস্থার তরফ থেকে করা হয়েছে বাসন্তী, গোসাবা এলাকাতেও। পাথরপ্রতিমায় আমফান পরবর্তীতে শুকনো খাবার বিলি করা হয়েছে। মেটিয়াবুরুজ এলাকায় যৌথ রান্নাঘরও আয়োজন করা হয়েছিল।
পাশে আছে যারা-র কর্মকাণ্ড শুরু এপ্রিলে। প্রথমে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ও তারপর ফেসবুকে। প্রাথমিক ভাবে যাঁরা উদ্যোগী ছিলেন, তাঁরা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলেন, লকডাউনে যাতায়াত অসম্ভব। এই পরিস্থিতিতে যাঁরা মাঠে ময়দানে কাজ করছেন, তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর কথাই ভাবলেন ওঁরা। যাঁরা ত্রাণ দিচ্ছেন, তাঁদের প্রয়োজনীয় অর্থসাহায্য করাই হয়ে উঠল এঁদের পাখির চোখ।
এঁদের তরফ থেকে জানানো হয়েছিল, “আমাদের মূল লক্ষ্য মানুষ যাতে এই করোনা লকডাউন পিরিয়ডে অভুক্ত না থাকে তার ব্যবস্থা করা। সরকারী খাদ্যব্যবস্থা ছাড়া কখনোই নিরবচ্ছিন্নভাবে খাদ্য জোগানো ব্যক্তি বা সংগঠনের পক্ষে সম্ভব নয়, কারণ মূল সমস্যা অর্থের জোগান বা কিছুদিন পর খাদ্যের জোগানও অপর্যাপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনকে খাদ্যের ব্যবস্থা করার আবেদন জানানোও এই জরুরিকালীন খাদ্য জোগানের কর্মসূচীর মধ্যে পড়া আবশ্যক (এই গ্রুপেই বেশ কিছু উদাহরণ রয়েছে)। তাই শুধু অর্থ দিয়ে সাহায্য করাই আমাদের মূল লক্ষ্য নয়, যাদের সাহায্য করা হচ্ছে তাঁদের অনুরোধ, স্থানীয় থানা, ব্লক, পৌরসভা বা পঞ্চায়েতকেও আবেদন করা হোক। গ্রুপের তরফে একবার সাহায্য করার পর দ্বিতীয়বার সাহায্য চাইতে গেলে সেই প্রশাসনিক আবেদন করা হয়েছে কিনা তা জানতে চাওয়া হবে, তবেই দ্বিতীয়বার সাহায্য অনুমোদন করা হবে, যদি সেক্ষেত্রে জটিলতা থাকে, তবে তার গুরুত্ব বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। মনে রাখতে হবে আমরা সকলে সাময়িকভাবে পাশে দাঁড়াতে পারি, কিন্তু সরকারি খাদ্য ব্যবস্থার রিপ্লেসমেন্ট হতে পারি না।” প্রথম অর্থসাহায্য পাঠানো হয় সুন্দরবনের নফরগঞ্জে। এরপর জলপাইগুড়ির লাটাগুড়ি, মালদার হরিশচন্দ্রপুর, সোনারপুর-বজবজ অঞ্চলে কর্মরতদের অর্থসাহায্য পাঠান হয়। আমফানের পর অর্থসাহায্য পাঠান হয় লক্ষ্মীকান্তপুরে। বর্ধমান, ঘুটিয়ারি শরিফ প্রভৃতি জায়গাতেও টাকা পাঠান হয়। এই গোটা পরিকল্পনা কার্যকর হতে পেরেছে অনেক, অনেক মানুষের অর্থসাহায্যের জন্য, জানিয়েছেন অন্যতম উদ্যোক্তা মিতুল দত্ত।
কলেজ স্ট্রিট বইপাড়ায় লকডাউন চলাকালীন স্থানীয় মুটিয়া-ভ্যানচালকদের জন্য খাবারের আয়োজন করা হয়েছিল। ওই উদ্যোগ চলাকালীনই আমফানের প্রবল দুর্বিপাক। সে সময়ে ঘরে বসে কেবল হাত কামড়াতে চাননি ইন্দ্রাণী রায়। মিত্র ঘোষ পাবলিশিংয়ের কর্ণধার সবিতেন্দ্রনাথ রায়ের কন্যা ইন্দ্রাণী বন্ধুবান্ধবের কাছে কী করা যায়, কী করা সম্ভব, সে নিয়ে যখন আলোচনা করছেন, তখনই কেউ একজন তাঁকে বলেছিলেন মিলাপের কথা। ফান্ড রেইজিং সংস্থা মিলাপ ইন্দ্রাণীর আবেদনে সাড়া দেয়। সংগৃহীত অর্থের মধ্যে ১৭০টি আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত প্রকাশন সংস্থাকে ১০ হাজার টাকা করে সাহায্য দেওয়া হয়েছে।
বইপাড়াতেই আরেকটা উদ্যোগের নাম ছিল বেঁচে উঠুক বইপাড়া। প্রাথমিক কাজ শুরুর পরে উদ্যোক্তারা বুঝতে পারেন যাঁদের সবচেয়ে বেশি সহায়তা প্রয়োজন, সেই প্রান্তিক মানুষদের কাছে সাহায্য অধরা থেকে যাচ্ছে। এরপর শুরু হয় দুতরফা কাজ, অর্থাৎ কলেজপাড়ার কারিগরদের একটা বিজ্ঞানসম্মত ডেটাবেস তৈরি করা। অন্য দিকে এই মানুষগুলির হাতে টাকা পৌঁছে দেওয়া। উদ্যোক্তাদের তরফে অর্ক দেব জানিয়েছেন, মোট সংগৃহীত অর্থের পরিমাণ ৬৭২২৯০ টাকা।
কলেজ স্ট্রিটের বিভিন্ন দোকানের অস্থায়ী দৈনিক ভাতার কর্মী, ফুটপাথ, লোকাল ট্রেন, নন্দন চত্বরের বই বিক্রেতা, ছোট ও মাঝারি বই দোকানের মালিক, ছোট প্রকাশনা সংস্থা, প্রুফ রিডার, ডিটিপি অপারেটর, কম্পোজিটর, টাইপসেটার, বাঁধাইকর্মী, বই সাপ্লায়ার, বইমেলাকর্মী, প্রেসকর্মী সহ মোট ২২২ জনকে ৩০০০ টাকা করে এককালীন অর্থসাহায্য করা হয় এই উদ্যোগের তরফ থেকে।
বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে কাজ করেছে বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চও। এই সংস্থা ও আরও বেশ কিছু সংগঠন মিলে তৈরি হয় আমফান রিলিফ নেটওয়ার্ক। বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চের তরফে দাবি করা হয়েছে, তাঁরাই প্রথম পৌঁছে গিয়েছিলেন সুন্দরবনের বেশ কিছু প্লাবিত অঞ্চলে ত্রাণ হিসেবে খাবার নিয়ে।শুকনো খাবারের সঙ্গেই আসতে থাকে জল, ওষুধ, ত্রিপল। অনাবাসী ভারতীয়দের অনেকেই হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন এই প্রকল্পে। প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা উঠেছিল, যার বড় অংশ ব্যয় হয় মোট ৫টি কম্যুনিটি কিচেন চালাতে।
আমফান বিপর্যয়ের পরে গোটা পরিস্থিতি বুঝতে পেরে সক্রিয় হয়ে ওঠে থিয়েটার গ্রুপ সহজ। শুরুতে অর্থ সংগ্রহ করে তাঁরা গিয়েছিলেন সুন্দরবন এলাকায়। সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন প্যাকেট, যাতে ছিল বিস্কুট, ওষুধ, সাবান ইত্যাদি প্রয়োজনীয় সামগ্রী। পরের পর্যায়ে ২০০ স্কুলগামী শিশু-কিশোর-কিশোরীদের জন্য পোশাক দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছিল, যারা জামাকাপড়ের অভাবে স্কুল যেতে পারছিল না। তার পরের পর্যায়ে ছিল আরেকটু বড় ধরনের কাজ। ২৭টি পুকুর সেচ করা হয় সহজের উদ্যোগে। এঁদের কাজ কেবল সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকাতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। নিজেদের পেশা-নেশার মানুষদের পাশেও দাঁড়িয়েছেন এঁরা। সহজ-এর তরফে আভেরী সিংহরায় জানিয়েছেন, গত অগাস্ট মাস থেকে মাসে ১৫ জন অভাবী থিয়েটার কর্মীকে মাসিক ২৫ কিলোগ্রাম চাল দিচ্ছেন তাঁরা। এ ধরনের কাজে পরবর্তী কালেও তাঁরা থেকে যেতে চান, সাধ্যানুসারে।
এই লেখার সময়েও এ ধরনের উদ্যোগ থেমে যায়নি। কাজ চলছে দুর্গাপুজোর উৎসব ঘিরে। বিভিন্ন অংশের দরিদ্র মানুষের মধ্যে পুজোর উপহার বিতরণের কাজে এগিয়ে এসেছেন একাধিক প্রগতিশিবিরের মানুষেরাও। চলছে অর্থ সংগ্রহ ও উপহার সংগ্রহ এবং সেসব বিতরণের কাজ। এসব কাজে বিভিন্ন বামপন্থী শিবিরের আগ্রহ চোখে পড়বার মতই। অন্যরা তো রয়েইছেন।
আমি কর্কট রোগাক্রান্ত গত ১৭ বছর ধরে, উপার্জন হীন, বেঁচে থাকার রসদ হীন, চিকিৎসা হীন, গত ১০ ই মার্চ থেকে, সন্তানসম্ভবা পুত্রবধূ'র পরিচর্যা করতে পুত্রের সদ্য বদলী হওয়া কর্মস্থল , জামশেদপুরে আসতে বাধ্য হই, কারণ মালিকপক্ষ স্ত্রী সন্তান প্রসব করলেও ছুটি দিতে রাজি না হওয়ায়। লকডাউন এর কারনে আজ সাত মাস অধিক আর নিজের বাসস্থান হুগলীর রিষড়া তে
ফিরে যেতে পারিনি, আর্থিক কারণে চিকিৎসা হীন , কোনো সংগঠন এগিয়ে আসে নি এই বান্ধব হীন প্রবাসে। মুখ্যমন্ত্রী থেকে, অধীর চৌধুরী, দিলীপ ঘোষ, লকেট চ্যাটার্জি , সোনু সুদ, সালমান খান, রতন টাটা, গৌতম গম্ভীর, রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন সকলের কাছে, ই মেল , টুইট সত্বেও কেউ এগিয়ে আসে নি, নিরন্ন দিনযাপনের কারণ পুত্রের কর্মক্ষেত্রের বেতন সম্পূর্ন না দেওয়ায় একটি সদ্যজাতিকা কে নিয়ে আমাদের অবস্থা ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব, তবু লিখে গেছি। পড়ে গেছি, এখনও আত্মহননের পথ গ্রহণ করি নি।