প্রথম পর্ব এখানে - https://www.guruchandali.com/comment.php?topic=17281
দ্বিতীয় পর্ব এখানে- https://www.guruchandali.com/comment.php?topic=17291
তৃতীয় পর্ব এখানে- https://www.guruchandali.com/comment.php?topic=17298
মূল প্রসঙ্গ- কোয়াণ্টাম আধিপত্য (Quantum Supremacy)
সাল ২০১২। মার্কিন পদার্থবিজ্ঞানী জন পারস্কিল (John Perskill) যখন কোয়াণ্টাম সুপ্রিমেসি বা কোয়াণ্টাম আধিপত্য তত্ত্বের অবতারনা করলেন তখন সকলের মধ্যে একটা প্রশ্ন উঠেছিল কোয়াণ্টাম কম্পিউটার গড়ে তোলা আদৌ সম্ভবপর কিনা।
কোয়াণ্টাম আধিপত্য (Quantum Supremacy) হল একটা লক্ষ্যমাত্রা যেখানে যেকোন কোয়াণ্টাম যন্ত্র সুপার কম্পিউটার দ্বারা অমীমাংসীত সমস্যার সমাধানে সক্ষম হবে। পারস্কিলের মত অনুযায়ী যদি এই ধরণের কোয়াণ্টাম যন্ত্র দ্বারা কোয়াণ্টাম আধিপত্য বা সুপ্রিমেসি লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানো সম্ভবপর হয় তবে আমরা কোয়াণ্টাম কম্পিউটার গঠনে সক্ষম।
সে দিক দিয়ে বিচার করলে কোয়াণ্টাম কম্পিউটারের সাহায্যে অতি দ্রুত গণণা কষতে (৩মিনিটে) সক্ষম হয়ে গুগল কোয়াণ্টাম আধিপত্যের লক্ষ্যমাত্রা স্পর্শ করতে পেরেছে। অর্থাৎ, গুগুল এই পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করতে পেরেছে, তত্ত্বজগতের বাইরে এসে ব্যবহারিক ক্ষেত্রেও কোয়াণ্টাম কম্পিউটার গড়ে তোলা সম্ভব। যদিও গুগুলের সিইও সুন্দর পিচাই এই ঘটনাকে রাইটস ভাইদের উড়ো জাহাজ আবিষ্কাররের সাথে তুলনা করে বলেছেন, ব্যবহারিক কম্পিউটার গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এখন অনেক পথ অতিক্রম করা বাকি।
প্রসঙ্গক্রমে এ কথা বলা যায়, কো্যাণ্টাম কম্পিউটার জগতে শুধুমাত্র গুগুল-ই নয়, আরো অনেক কোম্পানি জড়িত। তাদের মধ্যে মাইক্রোসফট (Microsoft), ইন্টেল (Intel), আই বি এম (IBM) এর নাম উল্লেখযোগ্য। এরা সকলেই ব্যবহারিক কোয়াণ্টাম কম্পিউটার গড়ে তোলার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে।
গুগুলের দাবী সম্পর্কে অন্যরা নিশ্চুপ থাকলেও, আই বি এম গবেষকদের মতে, নির্দিষ্ট গণণাটি (যেটি গুগুল কোয়াণ্টাম কম্পিউটার তিন মিনিটে সমাধান করেছে, এবং তাদের দাবী অনুযায়ী সুপার কম্পিউটারের ১০ হাজার বছর সময় লাগতে পারে) অন্য পদ্ধতিতে করলে সুপার কম্পিউটারের আড়াই দিনে সমাধান পাওয়া যেতে পারে। তাদের মতে, গুগুল শুধুমাত্র র্যামের (RAM) উপর নির্ভর করেছে। যদি তারা র্যাম (RAM) ও হার্ডডিক্স (HARD DISC) উভয়ের সহায়তা নিত, তবে সুপার কম্পিউটারের অত সময় লাগত না, ওই গণণায়। যদিও এই পদ্ধতি ল্যাবে আই বি এম পরীক্ষা করে নি।
আই বি এম এর দাবী কম্পিউটার জগতে যথষ্ট গুরুত্বপূর্ন কারণ, কম্পিউটার জগতে আই বি এম যাত্রা শুরু ১৯১১ সাল থেকে। তখন এই কোম্পানি পাঞ্চ কার্ড (Punch Card) তৈরি করত। ১৯৪৪ সালে এই কোম্পানি হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে প্রথম ‘মার্ক ১’ (MARK 1) নামে স্বয়ংক্রিয় লগ গণনার কম্পিউটার (Automatic log Computer) তৈরী করে। ১৯৮১ সালে আই বি এম সর্বপ্রথম ব্যবহারিক কম্পিউটারের (Home PC) জন্ম দেয়। যেটা কম্পিটার জগতের একটা বড় কীর্তি হিসাবে ধরা হয়।
এম আই টি টেকনোলজি রিভিউ এর প্রধান সম্পাদক (MIT Technological Review's editor in Chief) গিডিওন লিচফিল্ডের (Gideon Lichfield) মতে, গুগুল এবং আই বি এম, দুটো বড় কোম্পানি-ই একই প্রকৌশলী ব্যবহার করছে এই কোয়াণ্টাম কম্পিউটার গঠনের ক্ষেত্রে। এবং যখন প্রেস কনফারেন্সে গুগুল কোয়াণ্টাম ল্যাব হেড হার্টমুট নেভেন (Hartmut Neven) এর কাছে আই বি এম এর টিপ্পনীর ব্যাপারে মতামত জানতে চাওয়া হয়, তখন তিনি সেই প্রশ্ন এড়িয়ে যান।
আই বি এম এর দর্শন অনুযায়ী শুধুমাত্র একটি ছোট গণণা সমাধান করে কোয়াণ্টাম আধিপত্য লাভ- এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া অসমীচীন, কারণ এ দিয়ে কোন কিছু প্রমাণিত হয় না। কোয়াণ্টাম কম্পিউটার আক্ষরিক অর্থেই সুপার কম্পিউটার অপেক্ষা অনেক দ্রুতশীল- এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই আই বি এম এর লক্ষ্য এমন কিছু তৈরী করা যা সুপার কম্পিউটার ও কোয়াণ্টাম কম্পিউটারের মধ্যে সীমাহীন পার্থক্য গড়ে তোলে-যাকে কোয়াণ্টামের সুবিধা বা কোয়াণ্টাম অ্যাডভাণ্টেজ নামে অভিহিত করা যেতে পারে।
উদাহরণ দেওয়া যাক। ১৯৯৭ সালে আই বি এম কম্পিউটার ডিপ ব্লু (Deep Blue) দাবা প্রতিযোগিতায় গ্যারি কাস্পারাভকে হারিয়েছিল। এটা সম্ভব হয়েছিল প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা বা কম্পিটিটিভ অ্যডভাণ্টেজের (Competitive Advantage) কারণে। প্রতি সেকেণ্ডে কম্পিউটার ২০ কোটি সম্ভাব্য চাল বিবেচনা করত। সেক্ষেত্রে একটা কোয়াণ্টাম কম্পিউটার এক সেকেণ্ডে ১ লক্ষ কোটি চাল বিবেচনা করতে পারে!!
ইতিমধ্যে গুগুল বলতে শুরু করেছে আগামী ৫ বছরের মধ্যে অর্থনৈতিকভাবে ব্যবহারযোগ্য কোয়াণ্টাম কম্পিউটার বাজারে আনবে এবং সেটা ৫০ কিউবিটস সম্পণ্ণ হবে। ভাল মাণের সুপার কম্পিউটার (Super Computer) ২০ কিউবিটস সম্পন্ন কোয়াণ্টাম কম্পিউটারের (Quantum Computer) সাথে পাল্লা দিতে সক্ষম। সেক্ষেত্রে কম্পিউটার জগতে ৫০ কিউবিটস সম্পন্ন কোয়াণ্টাম কম্পিউটার সেরা হিসাবে ধরা যেতেই পারে। এই ঘোষণার পরমুহুর্তেই আই বি এম জানিয়ে দিয়েছে, আর এক বছরের মধ্যেই ব্যবহারিক কোয়াণ্টাম কম্পিউটার বাজারে আনবে। অর্থাৎ কোয়াণ্টাম জগতে অধিকার স্থাপনের প্রস্তুতি তুঙ্গে।
পরিশেষে এটা বলা যেতে পারে, আই বি এম এর দাবী অনুযায়ী, যদিও গুগুল- এর সঠিক সময়ে পৌঁছাতে দেরী থাকতে পারে, কিন্ত কোয়াণ্টাম জগতের অধিকার লড়াইয়ে আমাদের সভ্যতা আর বেশি পিছিয়ে নেই। অদূর ভবিষ্যতে কোয়াণ্টাম কম্পিউটার গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
তথ্যসূচী
ইউটিউব (Youtube)
https://www.rfwireless-world.com/Terminology/Difference-between-Bit-and-Qubit.html
Elements of chemistry by Maity and Ganguly
https://physicsabout.com/plancks-radiation-law/
https://blog.mukto-mona.com/2010/10/20/11188/
https://www.ias.edu/ideas/2014/ambainis-quantum-computing
https://www.bernardmarr.com/default.asp?contentID=1193
https://www.thoughtco.com/the-ibm-701-1991406
উইকিপিডিয়া (Wikipedia)
https://en.wikipedia.org/wiki/Polarization_(waves)
https://en.wikipedia.org/wiki/Quantum_entanglement
https://en.wikipedia.org/wiki/Quantum_superposition
https://en.wikipedia.org/wiki/Paul_Benioff
https://en.wikipedia.org/wiki/Quantum_computing
https://en.wikipedia.org/wiki/Quantum_information
https://en.wikipedia.org/wiki/Introduction_to_quantum_mechanics
https://www.charpoka.org/2018/09/02/birth-of-quantum-theory/
https://en.wikipedia.org/wiki/Photoelectric_effect
https://en.wikipedia.org/wiki/Heinrich_Hertz
https://en.wikipedia.org/wiki/Turing_machine
https://en.wikipedia.org/wiki/Waveparticle_duality
একলহমা কটা প্রশ্ন- লেখার মাঝে অনেকগুলো সমীকরণ এসেছে। সেগুলো কি মন দিয়ে পড়েছেন? নাকি পড়তে পড়তে বিরক্তি এসেছে? কোনটা?