"আপনি যদি দিনের বেলা আসেন, দেখবেন শ'তিনেক মানুষ রয়েছেন রাস্তা আগলে। যার মধ্যে শ'দুয়েক মহিলা। সংখ্যাটা দু-তিন গুণ হয় সন্ধ্যার পরে যখন পুরুষেরা কাজ সেরে ফেরেন। শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে রবিবার রাত অবধি আবার এই সংখ্যাটা হাজার পাঁচেকে পৌঁছে যাচ্ছে" - কথা হচ্ছিল ফিরোজের (নাম পরিবর্তিত) সঙ্গে।
ফিরোজ আমাদের মতোই মাঝবয়সী, চাকরি করে সংসার ও ইএমআই চালায়। সপরিবার শাহিন বাগেই থাকে। কথা হচ্ছিল শাহিন বাগে চলতে থাকা দিল্লি ও নয়ডার সংযোজকারী রাস্তা অবরোধ নিয়ে। এই লেখা তৈরির সময় পর্যন্ত যা ২১ দিনে পা দিল।
যমুনা নদীর ওখলা ব্যারাজের ওপর সেতুর মাধ্যমে এই রাস্তাটি নয়ডা ও দক্ষিণ দিল্লি (বাংলায় যাকে সাউথ-দিল্লি বলা হয়) তথা ফরিদাবাদকে জুড়ে আছে। যমুনার ওপরে দুই-দুই চার লেনের সেতুর বহর বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে দু-হাজার উনিশেই। সেই আটলেনের রাস্তাও হাঁফ ধরিয়ে দেয় মাঝে মাঝে অফিসের সময়ে আচমকা মাঝখানে গাড়ি ব্রেকডাউন হয়ে গেলে।
সেই ব্যস্ত রাস্তা গত একুশ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। তাও দিল্লির মতো এক কেজো শহরে যেখানে গত কুড়ি বছরে একদিনও ধর্মঘটের জন্য অফিস বন্ধ হতে দেখিনি।
আরও আশ্চর্য লাগে যে এই বছরের ঠিক এই সময়েই ভয়ানক ঠান্ডা পড়েছিল দিল্লিতে। ১৯০১ (যখন থেকে হিসেব রাখা চলছে) থেকে এতদিন পর্যন্ত এটা দ্বিতীয় শীতলতম ডিসেম্বর এই শহরে।
ফিরোজও বলছিল, ওরও মনে নেই এর আগে দিল্লি কখনও এইরকম প্রতিরোধ দেখিয়েছে বলে। জিজ্ঞেস করলাম - কীভাবে শুরু হ'ল এই অবরোধ?
ফিরোজ - জামিয়ায় যেদিন পুলিশ বিনা অনুমতিতে ক্যম্পাসে প্রবেশ করে ছাত্রছাত্রীদের মারধর করে সেইদিনই এই রাস্তা অবরোধ শুরু। অ-সাংবিধানিক ও অমানবিক 'সিএএ' ও 'এনআরসি' আইন যখন রাজ্যসভায় পাশ হ'ল আর তার অবব্যহিত পরেই রাষ্ট্রপতির সই হতে ওই অঞ্চলের মানুষ অসন্তূষ্ট ছিলেন। আর জামিয়াতে পুলিশের ওই অমানুষিক অত্যাচারের ঘটনা সেই ক্ষোভে ঘৃতাহুতি দেয়। ছাত্র-ছাত্রীরা শাহিন বাগে এই রাস্তা অবরোধ করলে তাতে ওই এলাকার মহিলারাই প্রথমে যে যার নিজের মতো বেরিয়ে আসেন বাড়ি থেকে অবরোধে অংশগ্রহণ করতে। এই বেরিয়ে আসাটা ছিল তাদের সম্পূর্ণ তাৎক্ষণিক ও স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিক্রিয়া।
আমি - পুলিশ তো জামিয়াতে ওই কাণ্ড করার পর এইখানে কী করল বা করছে? ঠিক কি ভূমিকা এখন পুলিশের?
ফিরোজ - দেখ, দিল্লিতে সরকারে আছে 'আপ', কিন্তু দিল্লির প্রশাসনিক চরিত্র অনুযায়ী পুলিশ কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন। তা সত্বেও এই অবরোধে পুলিশের সেই মারমুখী রূপ দেখা যায় নি। এর একটা কারণ হতে পারে যে যথেষ্ট পরিমাণ ফোর্স বা প্যারামিলিটারি ফোর্স কে অন্যত্র পাঠিয়ে দেওয়ায় এখানে অত পুলিশ পাঠানো যায় নি।
এখানে পুলিশ যদিও সারাক্ষণই রয়েছে, জল কামানও মজুত রয়েছে। পুলিশ ওই অবরোধের জায়গায় পৌঁছনর আগে রাস্তার দু-দিকেই রাস্তা ব্যারিকেড করে আটকে যান চলাচল সরিয়ে দিচ্ছে অন্য দিকে। দিল্লির দিক থেকে আসার পথে অ্যাপোলো হাসপাতাল থেকে কালিন্দি কুঞ্জের রাস্তা, ওখলা ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়া থেকে কালিন্দি কুঞ্জে আসার আণ্ডারপাস ব্যারিকেড করে বন্ধ রেখেছে পুলিশই। ফরিদাবাদ থেকে কালিন্দি কুঞ্জে যাওয়ার ফ্লাইওভারের কাট কংক্রীট স্ল্যাব দিয়ে আটকানো। একই ভাবে নয়ডা থেকে কালিন্দীকুঞ্জের রাস্তা আটকানো হয়েছে মহামায়া ফ্লাইওভারেই, যাতে এদিকে আসতে চাওয়া গাড়ি সহজে ঘুরে যেতে পারে ডি এন ডি ফ্লাইওভারের দিকে।
এখনও অবধি পুলিশের ভূমিকা অন্তত এখানে সদর্থক।
আমি - কিন্তু এতে তো তোমারও অফিস আসতে অসুবিধা হচ্ছে। কীভাবে যাতায়াত করছ অফিস? কী বলছে তোমার আশেপাশের পাড়া-প্রতিবেশী বা অফিসের অন্যান্য সহকর্মীরা?
ফিরোজ - আমি তো মেট্রোয় যাতায়াত করছি। আর যদি আমাদের এলাকার লোকেদের কথা বল, তাহলে বলব এদিকটা তো মুসলমান প্রধাণ এলাকা। এখানে আমরা বেশিরভাগ লোকই চাইছি এই অমানবিক ও অসাংবিধানিক আইন যাতে বলবত না হয়। এই প্রতিরোধটা খুব দরকার।
আমি - কিন্তু এর বিরুদ্ধে কি কেউ কিছু বলছে না?
ফিরোজ - বলছে। অনেকেই বলছে প্রতিরোধের জায়গাটা যদি রাস্তার ধারে করে গাড়ি যাতায়াতের পথ খুলে রাখা যায়। রাস্তা তো মানুষের আবশ্যিক দরকার। সংকটাপন্ন অসুস্থ মানুষের প্রাণসংশয় অবধি ঘটতে পারে এই অবরোধে।
আমি - কিন্তু "এই প্রতিবাদের দরকার নেই' - এ কথা কেউ বলেছে কি তোমায়?
ফিরোজ - না। কাউকে বলতে শুনিনি।
আমি - কারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন এই অবরোধের? রসদও তো লাগে এতদিন ধরে লাগাতার রাস্তা আগলে থাকতে? কারা সাহায্য করছেন?
ফিরোজ - দেখ, তোমায় তো বললাম জামিয়া আর 'জেএনইউ' এর ছাত্রছাত্রীরা শুরু করেছিল অবরোধের তা ক্রমে মানুষের প্রতিরোধে পৌঁছেছে। এর বেশিরভাগটাই সামলাচ্ছেন মহিলারা। আট থেকে আশি, এমনকি অন্তসত্ত্বা মহিলারাও রয়েছেন এই দলে। পালা করে তারা আসছেন। বাড়ির কাজ সামলে। পুরুষেরাও আছেন, তবে তাদের ভিড় বেশি সন্ধ্যার পর। আর এই জমায়েতে যে শুধু মুসলমানরাই রয়েছেন তা কিন্তু নয়। এতে অনেক হিন্দু শিখ এরাও রয়েছেন একসঙ্গে জোট বেঁধে।
নেতৃত্ব যদি বলো তো এখন কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী রয়েছেনে জামিয়া আর 'জেএনইউ এর। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা বিশেষত 'আপ' এর বর্তমান বিধায়ক, কংগ্রেসের প্রাক্তন বিধায়ক নিয়মিত আসছেন। খবর নিচ্ছেন। আমি নিজে ওখানে যোগেন্দ্র যাদব কে দেখেছি।
রসদ বলতে ফ্লাস্কভরা চা, কিছু খাবার দাবার স্থানীয় লোকজনই যে যেমন পারছেন নিয়ে আসছেন। বললাম না, এটা সম্পূর্ণ ভাবে মানূষের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিরোধ।
আমি - এই প্রতিরোধ কোনদিকে যাচ্ছে বলে মনে করছ? কতদিন চলবে? কী বলছেন নেতারা৷ যারা আসা যাওয়া করছেন?
ফিরোজ - দেখ আমি বলতে পারব না। আমি তো এই রকম কিছু আগে দেখিই নি। তবে একটা সাড়া পড়ে গেছে বুঝতে পারছি। শাহিন বাগের নাম কতজন জানত আগে? এখন সারা দেশের কাগজে আসছে এখানকার কথা। দেশের বাইরেও প্রকাশিত হয়েছে এই প্রতিবাদের খবর।
এদিকে সেই খবর বাইরে আসাতে রাজনৈতিক নেতারা নিজের নিজের মাইলেজ বাড়াতে চাইছেন। এখন এমন অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে যে একদল যদি রাজী হন অবরোধ তুলে নিতে তো অন্যপক্ষ রাজি হবেন না।
দেখা যাক। দেখি। হয়ত ভালোই হবে এতে...
স্যেলুট শাহীনবাগ! ঢাকা থেকে সংহতি
In this place Bd Govt Job Circular 2020 you will find new and latest Govt Job Bd, because here we are published everyday new Government Job Circular. Government Job Bd Hello Everyone In This Categories You Will Find All Type of Government Jobs Circular, Government Bank Jobs Circular, Govt Job Scheduled, Govt Job Seat ... Govt Job In Bangladesh Bd Government Job Circular 2020: Latest Govt Job In Bangladesh, This is our main property of the job finding site in the Bangladesh. Palli Biddut Samity Job Circular here you will find latest and New Government Job Circular & Vacancies in 2020 for Male & Female both gender’s person in Bangladesh. Palli Biddut Samity Job Circular Also see the bangladesh army job circular bd 2020.