আগে ছিল সচিনবাজি। তারপর ছিল ধোনিবাজি। দাদাবাজি। এখন কোহলিবাজি।
বিরাট কোহলি কাঁদুনে সেন্টিমেন্টের স্বর্গ কলকাতায় তাঁর জন্মদিনে সেঞ্চুরি করেছেন আজ।
বাঙালির মোক্ষলাভ হয়ে গেছে।
তেলের দাম কমে গেছে। এখন আরো বেশি তেল দেওয়া যাবে।
রান্নার সিলিণ্ডার কাল থেকে ২০০ টাকা করে। ইলিশমাছ ভাজা আরো খাওয়া যাবে, কারণ কাল থেকে হাতিবাগান বাজারে ৫০ টাকা কিলো পাওয়া যাবে বলে বিশ্বস্তসূত্রে পাওয়া খবর।
পেনশন নাকি বাড়বে এই আনন্দের বাজারে। ব্যাঙ্কে অমিত শাহর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সামনের মাসেই এক তারিখে ওই পনেরো লাখ জমা পড়বে, ভারতমাতা কি জ্যায় মিডিয়াতে বললো এইমাত্র। এক বন্ধু কলকাতা থেকে ফোন করে জানাবে বলেছে।
ইত্যাদি, ইত্যাদি।
তা, এসব শুনে আমি লিখলাম, ক্রিকেট আর বলিউড হলো সবচেয়ে বড় দুটো মগজধোলাই মেশিন।
আর যায় কোথা, খোলিপ্রেমীরা খুলে খাপ্পা।
বাংলাদেশ থেকে এক ক্রিকেটপ্রেমিক (১ নং) লিখলেন,
"তাহলে মানুষ কি করবে বিনোদন আনন্দও করবে না। সারাদিন রবীন্দ্র নজরুল সঙ্গীত শুনবে আর বিপ্লব করবে।মানসিক ভাবে কেউ খুশি বা সুখি থাকবে না।"
প্রথম কথা, কি করবে ভুল বানান। কী করবে হবে। কিন্তু সেসব আর কে বোঝাতে যাচ্ছে আজকের এই আনন্দের বাজারে?
সুখী আর খুশি এক জিনিস নয়। কিন্তু ব্যাকরণও আজ ফিনিস। বানান এখন ওই হাতিবাগান বাজারে দুপুর বারোটার পচা মাছের মতোই। তার কোনো খদ্দের নেই।
ইত্যাদি, ইত্যাদি।
ক্রিকেটপ্রেমিক নং ২ -- "তাহলে যাত্রাপালায় নাচানাচি সবচেয়ে ভালো কিছু?" (ওয়েল, বলিউড তো তাই। শুধু ওরা পয়সা পায়না বাড়িতে টানাটানি আর এরা কোটিপতি। এই যা তফাৎ।)
আমি -- এই স্টুপিড খেলার থেকে ভালো। বেশির ভাগ মানুষ বোঝে ওগুলো। ক্রিকেট কে বোঝে? বুঝিয়ে দিলেও জল হয়না। তার ওপর আজকের এই জুয়া ক্রিকেট। তার ওপর ফ্রি হিট, পাওয়ার প্লে, ডাকওয়ার্থ লুইস। এর চেয়ে ডিফারেনশিয়াল ক্যালকুলাস অনেক সোজা।
তার ওপর আমরা যাকে বলতাম তাড়ু ক্রিকেট, আজ ঠিক তাই। বোলারগুলোকে দেখলে মায়া হয়।
ক্রিকেটপ্রেমিকা নং ১ -- "ভিরাট কোহলির মত মহান মানুষ দুই বাংলা মিলে খুবই কমই আছে।"
নিশ্চয়ই। বিদ্যাসাগর আর অমর্ত্য সেনের পরেই শ্রেষ্ঠ বাঙালি ভিরাট। কোনো সন্দেহ নেই। তার ওপর আজ জম্মদিন বলে কতা!
শেষ মন্তব্য -- "বাঙালি ক্রিকেট পারে না, সেজন্য ক্রিকেট ভালো না। শুভরাত্রি।"
শুভরাত্রি জানিয়ে দিলে আর বলার কিছু থাকেনা।
তাই এখানে বল্লেম।
কাল ভোরবেলা উঠে হাতিবাগান বাজারে যেতে ভুলবেন না। আর যাবেন আনন্দের বাজারে। ইলিশ পঞ্চাশ।
আর আনন্দ -- অমূল্য। দশে মিলি করি কাজ।
দোষটা কোথায়? ওই দশটা দেশের মধ্যে আমরা তো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন!
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।