"আমরা আজ যখন পেছনে ফিরে তাকাই, তখন দেখি আরফান আলীর ভাবনা সঠিক ছিল। দুর্ঘটনার সংখ্যা সত্যি হাতে গোনা"।--সত্যিই তাই।
আমি নিজের কথা ভাবি।
ইন্দিরা গান্ধীর নির্দেশে যে গ্রামীণ ব্যাংক খোলা হয়েছিল তার শাখাগুলো খোলা হত একেবারে পিছিয়ে থাকা গ্রামীণ এলাকায় --যেখানে পাকা বাড়ি নেই বললেই চলে, বিদ্যুৎ আছেও নেইও। ক্যাশ কাউন্টার নেই। শুধু চেয়ার টেবিল, একটা ছোট ভল্ট আর কিছু গাবদা লেজার।
আপনাদের এজেন্ট ব্যাংকের মতনই। অল্প সুদে ঋণ দাও, আর ডিপোজিটে বেশি সুদ, প্রফিটের জায়গায় লস অবধারিত। তাছাড়া ব্যাংকের পরিসেবা সীমিত। আর্থিক বিচারে 'উইকার সেকশন' ছাড়া কাউকে লোন দেওয়া যাবে না।
কিন্তু একটা কাজ হল। অগণিত কৃষকের মনে ব্যাংক বলতেই যে একটা ভয় একটা দূরত্ব ছিল সেটা ধীরে ধীরে উপে গেল। ওরা ভিড় করে দৃপ্ত পদক্ষেপে ব্যাংকের ভেতরে পা রাখল।
আজ দেখি, খুব কম গ্রামীণ ব্যাংক লসে আছে।
তারপর ৪৬ বছর কেটে গেছে।
মনমোহন সিং (রিজার্ভ ব্যাংকের গভর্নর অবতারের দিনে) ক্রমশঃ সব বদলে দিয়েছেন। কিছু কাঠামোগত পরিবর্তনও করেছেন।
এখন আমার গ্রামীণ ব্যাংক (ছত্তিশগড় রাজ্য গ্রামীণ ব্যাংক) এডুকেশন ও কনজিউমার/ পার্সোনাল লোন দিতে পারে-- একজনকে এককোটি, অবশ্য বাড়ি জমি মিলিয়ে ১১০% কোল্যাটারাল দিতে হবে।
শুনে আমার হার্টফেল হওয়ার জোগাড়।
ম্যানেজারের সামনে সিসিটিভি ক্যামেরা। রাজ্যের রাজধানী এবং জেলা সদরগুলোতে পাঁচ ছটা করে শাখা। অন লাইন এবং কোর ব্যাংকিং সগৌরবে চলিতেছে। ইন্ডিস্ট্রিকেও লোন দেওয়া হচ্ছে। এন পি এ অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের চেয়ে কম। আমরা অন্য ব্যাংকের সমান বেতন ও পেনশন পাচ্ছি।
কিন্তু আমার মন কেমন করে সেইসব ফেলে আসা দিনের জন্যে , যখন বৃষ্টিভেজা কাদাভরা পথে আমাকে সাইকেল চালিয়ে আল ধরে গ্রামে ঢুকে খাটিয়া পেতে গ্রামের বুড়ো-জোয়ান সবাইকে ক্যান ব্যাংকে টাকা রাখবা -- বোঝাতে হত।
দরজার আড়াল থেকে কোন কাজলপরা সলজ্জ চোখ এই নবাগত আজব চিড়িয়াকে দেখত।
তারপর কাঁসার গ্লাসে করে ঠোঁট পুড়িয়ে দেওয়া চা আসত, তাতে ঘরের মোষের দুধের সর ভাসছে।
আজ সেট্রালাইজড ব্যাংকিং । বার্ষিক ক্লোজিং এর দিনে ব্যাংক খালি। ভারতের কোন সুদূর প্রান্তের শহরে বসানো মাস্টার কম্পিউটারে অনায়াসে বেরিয়ে আসছে সমস্ত ব্যাংক এবং শাখাগুলোর সালতামামি, ব্যালান্স শীট, লাভ লোকসানের খতিয়ান।
আমাদের সময়ে ওই অ্যানুয়াল ক্লোজিং ছিল উৎসবের মত সাতদিন রাত জেগে তৈরি করতে হত হিসেব নিকেশ। শেষ সময়ের আগে জানা যেত না নাফা হয়েছে নাকি এবারও নুকসান?
ে যেন ফুলশয্যার আগে নববধূর ঘোমটা তুলে চেহারা দেখা যাবে না। দুরু দুরু বক্ষে তার প্রতীক্ষা।
আজকেরটা যেন রেজিস্ট্রি বিয়ে। কোন রহস্য নেই, কোন রোম্যান্স নেই। হয়ত এটাই ভাল। চাঁদের রোম্যান্সও তো উপে গেছে।
কাউকে চাঁদপানা মুখ বলতে গেলে মনে ভেসে উঠবে চাঁদের গালে খানাখন্দের ছবি।