এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • শবে বরাত! 

    কিংবদন্তি লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০৭ মার্চ ২০২৩ | ৭৭৩ বার পঠিত
  • শবে বরাতের জৌলুস হারিয়েছে। আগে একটা সময় শবে বরাতে উৎসব শুরু হয়ে যেত। এখন ওই উৎসবের ছিটেফোঁটাও নাই কোথাও। নানা ফতোয়া এসে গেছে। শবে বরাত পালন করা যাবে না। বেদাত, ঘোর অন্যায়! শবে বরাত পালন করলে এমন ভাবে ভয় দেখায় যে মনে হয় কেউ সারা রাত নামাজ পড়ে, নফল ইবাদত করে সরাসরি জাহান্নামে চলে যাবে! অথচ দশ বছর আগেও এমন চিত্র ছিল না। আমরা এখন বেশি করে ধার্মিক হয়ে গেলাম না ধর্মের আবরণে ভিন্ন কিছু নিয়ে মেতে উঠলাম তার দিশা পাওয়া যাচ্ছে না।

    শবে বরাতে রাতে তো বটেই, শাবান মাসের চাঁদ উঠার পর থেকেই রুটি হালুয়া দিয়ে মিলাদ পড়ানোর একটা চল ছিল। আমরা এইটা বন্ধ করেছি সাফল্যের সাথে। শবে বরাতের রাতে প্রচুর দান খয়রাত হত, খাওয়া দাওয়া হত, ধর্মীয় উৎসব গুলোর মধ্যে ঈদের পরেই শবে বরাত ছিল এই অঞ্চলের মুসলিমদের মধ্যে প্রধান উৎসব। কেন এমন হল? বলা হল এর পক্ষের হাদিস শক্তিশালী না! কেউ যখন হাদিস নিয়ে যুক্তি দেয় তখন আসলে কিছু বলার থাকে না। তাকে আমি কীভাবে বুঝাই শক্তিশালী হাদিসই আসলে কিছু নাই। চারটা প্রধান হাদিসের বইয়ের একটার সাথে আরেকটার মিল নাই! যে একটা হাদিস শুদ্ধ বলছে তো আরেকজন ওইটা বাতিল করে দিছে। সবার সম্মিলিত মতে যে কয়টা হাদিস শুদ্ধ বা অনেক অনেক সাহাবি বর্ণনা করেছে, সাক্ষী দিয়েছে এমন হাদিস যা আছে তা অল্প কয়েকটা মাত্র! নবীর মৃত্যুর দুইশ বছর পরে হাদিস সংকলন শুরু! তার শুদ্ধতা অশুদ্ধতা নিয়ে দাবী করছেন এই অঞ্চলে শত শত বছর ধরে চলে আসা একটা সংস্কৃতিকে? হাদিস আর কোরান এক জিনিস না এইটা বললে কেউ মারতে আসবে আমাকে? কোরানের শুদ্ধতা নিয়ে যেভাবে নিঃসংশয়ে থাকা যায় হাদিসের ব্যাপারেও তাই থাকা যাবে? আল্লাহ তো কোরানের শুদ্ধতার দায়িত্ব নিয়েছেন, হাদিসের দায়িত্বও নিয়েছেন? যাই হোক, আমার জ্ঞান কম, তাই না বুঝেই প্রশ্ন করছি। এর সাথে আমার ঘাড়ের কোন সম্পর্ক নাই!
     
    আমরা ছোটবেলায় পাড়ায় পাড়ায় ঘুরতাম শবে বরাতে। আমাদের দুপুরের মধ্যেই খোঁজ খবর নেওয়া হয়ে যেত কোন মসজিদে কখন মিলাদ হবে, তবারক হিসেবে কী থাকছে ইত্যাদি! সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা সাজাতাম। একই সময় দুই মসজিদে মিলাদ হলে প্রাধান্য পেত তবারকের উপরে। সারারাত বাহিরে থাকার লাইসেন্স পেয়ে আমরা সেদিন উড়ছি। এমন একদিন উড়তে উড়তে রাত পার করে আমি আর আমার বন্ধু রনি বাড়ির পথ ধরেছিলাম। ফজরের আজান হল। আমি বললাম, ফজর নামাজ পড়ে পরে বাড়ি যাব। রনি আমাকে বলল, ধুর, সারারাত নামাজের খবর নাই এখন ফজর পড়বে, বাড়িত যাও মিয়া! আমি শুনলাম না। রনি বাড়ি চলে গেল আর আমি মসজিদে। নামাজ শেষে বের হয়ে দেখি আমার নতুন কেনা জুতাটা নাই! শবে বরাতের রাত শেষ করে কেউ ওই ভোরে আমার জুতা চুরি করল? মানতেই পারছিলাম না। কিন্তু মেনে নিতে হল, খালি পায়ে বাড়ি ফিরে ছিলাম। এবং এরপরে আমার শবে বরাতে প্রতি দুর্বলতাও চলে গেল! ঘরে বসেও ইবাদত করা যায় ফর্মুলায় চলে আসলাম! যাই হোক, উৎসবটা খারাপ ছিল না, বিশেষ করে পারিবারিক ভাবে যে আয়োজন হত তা আজীবন মিস করব। 

    তবে আমি কিন্তু শবে বরাতের রাতে উৎসবের নামে যে অত্যাচার হয় তার বিপক্ষে। দ্রিম দ্রিম করে বোমা ফোটান, উচ্চ শব্দে মাইক দিয়ে ধর্ম প্রচার এগুলার কোনটার পক্ষেই আমি না। ঢাকায় এই শবে বরাতের রাতে নানা অঘটন ঘটেছে। দুইটা ঘটনা তো অত্যন্ত মর্মান্তিক। আমিন বাজারে ছয়টা ছাত্রকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছিল এই শবে বরাতের রাতে। ধারনা করা হয় শবে বরাতের উৎসবেই তারা সেদিকে গিয়েছিল। দ্বিতীয় ঘটনা ঘটে মিরপুরে। সেদিন আমিও মিরপুর ছিলাম, বন্ধুদের মেসে। সারারাত এমন উচ্চ শব্দে মাইক বেজেছে আর বিকট শব্দে বোম আতসবাজি ফুটানো হয়েছে যে আমি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম। সকাল হলে শুনেছি এই আতসবাজি নিয়ে বিহারীদের মধ্যে ঝগড়া, পুলিশের আগমন, স্থানীয়দের যোগ দেওয়া, ফলাফল একই পরিবারের নয়জনসহ মোট দশজন নিহত! দুইটা ঘটনারই শেষ পর্যন্ত বিচার হয়েছে বলে আমি শুনিনি। উৎসবের নামে এমন কিছু নিশ্চয়ই কোন বিবেচক মানুষ চাইবে না? 

    যাই হোক, উৎসবটাকে আমাদের সংস্কৃতির অংশ মনে করলেই কিন্তু সব ঠিক হয়ে যায়। দুর্বল হাদিসই যদি মেনে নেই তবুও তো সমস্যা নাই। নফল নামাজ পড়ে কেউ তো আর অন্যায় করছে না! তাহলে কিসের ভয়? না কি আসল প্রশ্নটা অন্য জায়গায়? ভয় সংস্কৃতিকেই?

    জানি না। এই সব আগে খুব লিখতাম, আগে ভয় করত না। এখন করে। ম্যালা ডরাই এখন। উগ্র চিন্তার লোকজনকে আগে বহুদূরে মনে হত। মনে হত ওই ওই অঞ্চলের মানুষজন সব এমন, আমাদের এলাকার মানুষ সব দুধে ধোয়া তুলসী পাতা! এখন এমন ভাবতে পারি না, এখন মনে হয় তারা কেউ ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে! তাই লেখাটা ফেসবুকের জন্য লিখেও কাট করে গুরুতে চলে আসলাম প্রকাশ করার জন্য। শেষ পর্যন্ত সাহসে কুলাল না ফেসবুকে পোস্ট করার জন্য! 
     
    জ্ঞান দাও প্রভু, ক্ষমা কর, শবে বরাতে এই চাওয়া। 

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০৭ মার্চ ২০২৩ | ৭৭৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • aranya | 2601:84:4600:5410:7061:89c9:4ca4:***:*** | ০৮ মার্চ ২০২৩ ০৮:৫৩517107
  • শবে বরাত- এর কথা ​​​​​​​শুনেছি, ​​​​​​​বই ​​​​​​​য়ে পড়েছি কত। 
     
    ফেসবুকে পোস্ট করা যাচ্ছে না, অবস্থা এতই খারাপ :-(
     
    আমরা হেরে যাচ্ছি মনে হয় 
  • কিংবদন্তি | ০৮ মার্চ ২০২৩ ১১:৪৫517113
  • দাদা, শবে বরাত নিয়ে লেখলেও ঠিক ছিল। আমি হাদিস নিয়ে লেখছি, এইটা দেখা গেল আমার কাছের মানুষেরাই মানতে চাইবে না। উল্টাপাল্টা বুঝবে, তাই আর ফেসবুকে পোস্ট করি নাই। হাদিসের বিরুদ্ধে কিছু বললে মানুষ ধর্মের বিরুদ্ধে বলছি বলে মনে করে। অথচ সবচেয়ে প্রসিদ্ধ হাদিস সংকলনও করা হয়েছে নবীর মৃত্যুর দুইশ বছর পরে! অযথা বিতর্ক তৈরি করতে চাই নাই আর। এছাড়া আসলেই আগে মনে হত যে উগ্রবাদীরা দূরের কেউ। এখন কাছের অনেকেই চিনতে পারি না। কথাবার্তা শুনে অবাক হয়ে যাই। দোয়া করবেন, কামলা ভিসা পাইলেও দেশ ছাড়ব আমি।  
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত প্রতিক্রিয়া দিন