এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  অপর বাংলা

  • নারী ও নারীর পোশাক 

    কিংবদন্তি লেখকের গ্রাহক হোন
    অপর বাংলা | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ১৬৫০ বার পঠিত | রেটিং ৪.৫ (২ জন)
  • পুরুষের নিজের পোশাক নিয়ে যত না চিন্তা করে তারচেয়ে বেশি চিন্তা করে নারীর পোশাক নিয়ে। প্রত্যেকের মগজে বিল্ট ইন দর্জির লম্বা ফিতা দেওয়া আছে। সকাল বিকাল, হাটে ঘাটে মাঠে যেখানে নারীকে দেখবে সেখানেই ওই ফিতা দিয়ে মেপে দেখবে পোশাক ঠিক আছে কি না। পোশাক বেশি আঁটসাঁট? লম্বা কতখানি, পায়ের গোড়ালি দেখা গেল? চুল খোলা, দেখা যাচ্ছে? মুখ দেখা যাচ্ছে? লিপস্টিক দিয়েছে? লিপস্টিকের রঙ কি বেশি গাঢ়? গাঢ় কেন? প্রেম করে? ফষ্টিনষ্টি? এই মেয়েকে তো ভাল জানতাম, তলে তলে নৌকা, স্টিমার, সাবমেরিন চালচ্ছে? আরে! ওই মেয়ে করে কী! সিগারেট খাচ্ছে? সমাজ তো রসাতলে গেল? আচ্ছা, ওই পোশাক পরলে ধর্ষণ হবে না? দেশে ধর্ষণ বেড়েছে এমনেই? ধর্ষণের জন্য তো নারীরই দায়ী, এইটা কী আবার আলদা করে বলতে হবে? 

    ধর্ষণের জন্য নারীর পোশাক দায়ী। এইটা কে বলছে? যে বলছে সে কোনদিন ধর্ষণ করেছে? না, সে শুধু বলেছেই, কোনদিন ধর্ষণ করে নাই। সে কোনদিন করে নাই অথচ বলছে এই পোশাক পরলে ধর্ষণ হবেই! মিনি স্কার্ট দেখে তো আপনি ধর্ষণ করেন নাই, স্লিভলেস ব্লাউজ দেখে তো আপনি ঝাঁপিয়ে পড়েন নাই, টিশার্ট পরা দেখে তো আপনি হাত বাড়ান নাই। তাহলে কেন বলছেন এই সব পোশাক পরলে ধর্ষণ হবেই? মানতে পারছেন না আমার কথা? আচ্ছা বলেন তো আজ পর্যন্ত যত ধর্ষক ধরা পড়েছে, স্বীকারোক্তি দিয়েছে কৃত কর্মের তাদের মধ্যে কয়জন বলেছে যে সে যাকে ধর্ষণ করছে তার পোশাক দেখে উত্তেজিত হয়ে তাকে ধর্ষণ করেছে? কয়জন বলেছে বলে মনে হয়? না, একজনও আজ পর্যন্ত বলে নাই এমন কথা। ধর্ষক কোনদিন বলল না যে সে পোশাক দেখে ধর্ষণ করেছে আপনি বলছেন কেন? 
    অন্য যে কোন পরিসংখ্যান ঘেঁটেও দেখতে পারেন। যদি সম্ভব হয় একটু ঘেঁটে দেখেন যত গুলা ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে কয়জনের পোশাক আপনার তথাকথিত খোলামেলা ছিল? পাবেন না। বরং উল্টা পাবেন। শিশুর পাবেন, বয়স্ক মহিলা পাবেন, বোরকা হিজাব পরা পাবেন, ছেলে শিশু পাবেন অনেক যাদেরকে কোনমতেই পোশাকের কারণে দোষী করতে পারবেন না। তাহলে ধর্ষণের জন্য পোশাক দায়ী এই যুক্তিকে ফালতু যুক্তি বলতে পারব না? আমি পারব, আপনাদের যাদের প্রচুর সার সমৃদ্ধ মগজ তাদের একটু সমস্যা হতে পারে। 
    যারা নারীর পোশাক নিয়ে চিন্তায় ঘুমাতে পারে না। সর্বক্ষণ চিন্তা করেন সমাজের অধঃপতন হয়ে গেল কি না, তাদের যুক্তি গুলো অসাধারণ হয়। ধরেন আপনি কথা বলছেন ব্যক্তিস্বাধীনতা নিয়ে। যখন নারীর ব্যক্তিস্বাধীনতার প্রসঙ্গ আসবে তখন স্বাভাবিক ভাবেই নারীর পোশাকের প্রসঙ্গ আসবে। আলোচনা এই পর্যায়ে আসলেই  পোশাক দায়ী যুক্তিবাদীদের মধ্য থেকে একশতে একশ জন আপনাকে বলবে ও যা ইচ্ছা তাই পরার স্বাধীনতা? তাইলে আপনার মা বোনকে বিকিনি পরে ঘুরান! যুক্তি শেষ! নিজের মা বোনকে বিকিনি পরার কথা কে কল্পনা করবে? আলোচনা শেষ। এইটাই হচ্ছে সমস্যা। ওই শ্রেণীটা এই জাতীয় কুৎসিত যুক্তি দিয়ে আরাম পায়। সম্ভবত বলেও আরাম পায়, মুখের খাওজানি মিটায়, লালা পরে সব গুলার। 
    যুক্তিটা চিন্তা করেন। আলোচনা হচ্ছিল ব্যক্তিস্বাধীনতার। কে কী পরবে না পরবে সম্পূর্ণ ব্যক্তির, তার নিজের ইচ্ছার ব্যাপার। আলোচনা শেষ বিকিনি দিয়ে। মানে বোরকা হিজাবের বাহিরে সরাসরি বিকিনি! এর মাঝে আর কিছু নাই। আরে কেউ বিকিনি পরে ঘুরছে ঢাকার রাস্তায়? তাহলে এই রকম অসম্ভব উদাহরণের মানে কী? 
    নারীর অধিকার, নারীর স্বাধীনতা ইত্যাদি নিয়ে যা কাজকর্ম হয় তার সিংহভাগ হয় ঢাকায়। আর নারীর পোশাক, নারীর স্বাধীনতা, নারীর অধিকার সবচেয়ে বেশি খর্ব হয় মফস্বলে, গ্রাম গঞ্জে। আমাদের প্রগতিশীল মানুষেরা মনে করে ঢাকায় কিছু একটা করলেই করা হল। আসলে এই সব নারীবাদী, প্রগতিশীল, মুক্তমনারা সাধারণের ভাষাই জানে না। তারা জানেই না ঢাকার বাহিরে যে একটা দেশ আছে সেইখানে কী হচ্ছে, সেখানে কে কোন ভাষায় কথা বলে। 
    ছোট্ট একটা উদাহরণ দেই, বুঝতে সুবিধা হবে।   
    পাকিস্তান আমলে বামপন্থি একটা সাংস্কৃতিক সংগঠন ছিল, নাম ক্রান্তি। ক্রান্তি দল একবার টাঙ্গাইলে গান গাইতে যায়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে সবাই মিলে হায়দার আকবর খান রনোকে বলে যে তারা মাওলানা ভাসানির সাথে দেখা করতে চায়। রনো সাহেব তাদের নিয়ে চলে যান সন্তোষে মাওলানা ভাসানির সাথে দেখা করতে। মাওলানাকে ঘিরে সবাই বসে আবার গান গাওয়া শুরু করে। মাওলানা মনোযোগ দিয়ে শুনে সব গুলা গান। পরে তিনি সবাইকে চা নাস্তা দিয়ে আপ্যায়ন করেন। গান নিয়েই আলোচনা চলতেছিল। আলোচনার এক পর্যায়ে ভাসানি তাদের বলেন, গান তো ভালই, মুশকিল হচ্ছে এই গান বুঝতে হলে তো কৃষকের বিএ পাস করতে হবে আর না হয় রনোকে যেতে সব জায়গায় এই গানের অর্থ বুঝিয়ে দিতে! 
    এই উদাহরণটা দিলাম কারণ আমাদের প্রায় সব ক্ষেত্রেই এখনও একই অবস্থা। বিপ্লব করব কী। আমরা তো ভাষাই জানি না কৃষকের!  প্রচুর প্রগতিশীল মানুষ, সৎ মানুষ, আক্ষরিক অর্থেই ভাল মানুষ, মানুষের ভাল চায় এমন মানুষ জানেই না সাধারণ মানুষের ভাষা! ঢাকা কেন্দ্রিক সব, এখন আরও বিপদ হচ্ছে অনলাইন বা ফেসবুক কেন্দ্রিক কাজকাম! মানুষ ভুলেই গেছে ফেসবুক বাংলাদেশ না। ফেসবুকের বাহিরে পুরো বাংলাদেশই পরে আছে, যাদের নিয়ে কারও কোন মাথা ব্যথা নাই। যারা এর বাহিরে কাজ করতে চায় তারা সাধারণ মানুষের ভাষাই বুঝে না, কাজ কী করবে? এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে কুসংস্কারে খাচ্ছে, ধর্মান্ধতা খাচ্ছে, অশিক্ষায় খাচ্ছে, অপসংস্কৃতি খাচ্ছে। আমাদের ঢাকা কেন্দ্রিক নেতৃত্ব শাহবাগে মানব বন্ধন করে কর্তব্য পালন করছে। আমরা এদিকে হারিয়ে যাচ্ছি অতলে। 
    দেখতে দেখতে আমার প্রিয় শহর শেরপুরে স্কুল কলেজের পোশাক হারিয়ে গেছে বোরকার আড়ালে! ঝাঁক বেঁধে মেয়েরা স্কুল থেকে বেড় হচ্ছে, কোচিং থেকে ফিরছে যার আশি ভাগ বোরকার আড়ালে! আমাকে খুব খারাপ মনে হচ্ছে? আমি বোরকার আড়ালে কী আছে দেখতে পারছি না বলে আফসোস করছি? আমি তাহলে ভুল বলছি? আমি ভুল হলে আর আপনি যদি এইটাকে সঠিক বলে মেনে নেন তাহলে এত বছর যারা পড়াশোনা করল তারা প্রত্যেকেই প্রচণ্ড রকম পাপ করে গেছে এইটা মেনে নিতে হবে? তাই কী? আমাদের গ্রাম বাংলার নারী সমাজ, আমাদের মা খালারা যারা পড়াশোনা করেছে তারা সবাই এই পাপের পাপী? আজকে থেকে দশ বিশ বছর আগেও তো এমন ছিল না। আজকে থেকে চল্লিশ পঞ্চাশ বছর আগে? হিসাবে আগে আমরা পশ্চাৎপদ ছিলাম, তখনই তো এমন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তেমন তো দেখি না। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ের ছবি, তার আগে ছবি, কোথাও ঝাঁক বেঁধে বোরকা পরা নারীর মিছিল দেখেছি বলে তো মনে পড়ে না। আমরা অগ্রসর হলাম আর আমাদের নারীদেরকে ঠেলে দিলাম পিছনে? এই রহস্যের মানে কী? আচ্ছা, আমরা অগ্রসর হয়েছি তো? 
    আমার কাছে মাঝে মধ্যেই অসহায় লাগে এই দেশের নারীদের কথা চিন্তা করে। এরা কই যাবে? পুরুষ আসলে এদের কই দেখতে চায়? কর্পূরের মত উবে যেতে বলে? এৎচ্যাত, ট্যাফু কিচ্ছু করতে পারবি না তুই। তুই মিশে না কোথাও। রাঁধবি, বাড়বি, কাপড় ধুবি, আর খাট গরম করবি,  এর বাহিরে ছায়াও যেন না দেখা যায়! এমন যদি হয় চাওয়া তাহলে নারীর কর্পূর হওয়া ছাড়া আর কোন গতি আছে?   
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • অপর বাংলা | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ১৬৫০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • যোষিতা | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০১:৪৭511943
  • পুরুষ তার নিজের পোশাক নিয়ে আরও বেশি রক্ষণশীল। শাড়ি পরতে লজ্জা পায় পুরুষ। ভয়ও পায়।
  • যোষিতা | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০১:৫৪511944
  • সামনে পুজো আসছে। আমার এক বান্ধবী শাড়ির ব্যবসা করে। সব মহিলারা (বিধবা বাদ দিয়ে) লাল রং থাকবে এমন শাড়ি চাইছে। বিধবা হবার ভয়ে। এই ভয় আগে এতটা ছিল না। ইদানীং খুব বেড়েছে।
  • যোষিতা | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০২:০১511945
  • আজকেই শুনলাম কয়েকদিন আগে কোলকাতার বিজয়গড় এলাকায় বিজয়শ্রী মন্দিরের চাতালে বসবাসকারী বছর ষাটেকের অল্প পাগলাটে মহিলাকে ভোর রাতে ধর্ষণ করছিল এক যুবক। জনৈক সব্জি বিক্রেতা বাজারে যাবার পথে দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ আসে। যুবক তার বৌকে নিয়ে পলাতক। বুঝুন। বৌ কিন্তু ধর্ষক স্বামীর সঙ্গে পালালো। কী ভয়ানক অবস্থান মেয়েদের সমাজে। মেয়েটা কেন এরকম করল?
  • kk | 2601:448:c400:9fe0:ac27:615b:f7d4:***:*** | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০২:০৯511946
  • খুবই সত্যি কথা গুলো। ভালো লাগলো এই লেখাটা।
  • কিংবদন্তি | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০২:৩৮511947
  • যোষিতা, আপনাদের প্রধান শহর মানে কলকাতা আমি ঘুরে এসেছি। আমার স্বল্পকালীন কলকাতা অবস্থানের জ্ঞান দিয়ে আমি বলতেই পারি আমি যে ধরণের সমস্যার কথা বলছি বা বলতে চাচ্ছি তা থেকে আপনারা মুক্ত। আমাদের পিছনে হাঁটার প্রতিযোগিতা চলছে। আর তাতে সমাজ, রাষ্ট্র, ধর্ম সব কিছু রসদ হিসেবে কাজ করছে। এই কিছুদিন আগে নারীর পোশাকের দৈর্ঘ্য কতখানি হবে তা নির্ধারণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে প্ল্যাকার্ড হাতে মানব বন্ধন করেছে কিছু মানুষ! অন্তত তাদের অবয়ব মানুষের মতোই ছিল। 
     
    নারীর প্রধান শত্রু যে নারী নিজেই এইটা অনেক পুরানা সত্য। কয়েকদিন আগে বগুড়ায় এক দাঁড়ি টুপি পরা অমানুষ ধর্ষণের দায়ে ধরা পড়েছে। পরিষ্কার প্রমাণ পাওয়া গেছে। অসভ্যটা ব্লাকমেইল করার জন্য ভিডিও করে রেখেছিল নিজের মোবাইলে। ওইটাই বড় প্রমাণ হিসেবে কাজে দিয়েছে। এই খবরটার নিচে বাংলার সমস্ত মানুষ মেয়েকেই গালি দিচ্ছে। কারণ পুরুষের মুখে দাঁড়ি মাথায় টুপি! তো এই শ্রেণীকে আমি চিনি, জানি যে এরা ধর্মের নামে যা ইচ্ছা তাই করতে পারে। আমি অবাক হলাম বিপুল সংখ্যক নারী ওই মেয়েকে গালিগালাজ করছে! কেন করছে এইটা আমার কাছে রহস্য! 
     
    ধন্যবাদ kk.  
  • যোষিতা | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৩:০২511949
  • সাদেকভাই
     
    বাংলাদেশের কথা আসলে অন্যরকম নয়। কোলকাতায় যে মেয়েটির পোশাক দেখে ভাবলেন সে খুব স্বাধীন, আসলে হয়ত সে স্বাধীন নয়।
    অনেক আগে যখন ছোট ছিলাম সরল ছিলাম, তখন ভাবতাম লেখাপড়া শিখলেই স্বাধীন হওয়া যায়, বা রোজগার করতে পারলেই মেয়েরা স্বাধীন। জিনিসটা হয়ত আংশিক সত্য, এবং আংশিক বলতে কতটুকু অংশ, তা মেপে দেখলে তবেই জানা যাবে। অসংখ্য শিক্ষিত উচ্চশিক্ষিত রোজগেরে মহিলাকে দেখে চলেছি মানসিক পরাধীনতার মধ্যে তৃপ্তিতে বাস করে। শেকল যে পরতে ভালোবাসে তার শেকল সে খুলতে চাইবে কেন? শেকলই তার গয়না, খাঁচাতেই সে নিরাপদ বোধ করে। বরং অন্য কোনও শেকলহীন মেয়েকে দেখলে তার রাগ ঘৃণা উগরে দেবে সে। পুরুষ কিচ্ছু পারে না করতে। নারী নিজে থেকে স্বাধীন হতে না চাইলে কিচ্ছুটি হবে না। এ জিনিস জোর করে দেওয়া যায় না। অর্জন করতে হয়। বাধা তো আসবেই, ব্যাথাও লাগবে। দাম চোকাতে হবে। সব জিনিস কি সস্তায় মেলে? বিশেষ করে স্বাধীনতা। খুব দামি জিনিস। তার সঠিক মূল্য কড়ায় গণ্ডায় না চোকালে ধার বাকী কি ভিক্ষায় মেলে না। নারীকে নিজ হক নিজেই বুঝে নিতে হবে। সেটা না পারলে স্বাধীন হবে না। এমনি করেই ভিক্ষার অন্নের মত অল্প অল্প স্বাধীনতা নিয়ে বাঁচবে।
  • কিংবদন্তি | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০০:১৯511965
  • যোষিতাদি, হয়ত মুল বিষয়টা এক কিন্তু ওইখানে তো তবুও কে কোন পোশাক পরবে তার স্বাধীনতাটা আছে। এখানে তো তাও নাই। আমার চোখের সামনে আমার বোনেরা প্রায় সবাই বোরকার নিচে ঢুকে গেল। এখন এমন হয়েছে যারা বোরকা পরছে না তারা হীনমন্যতায় ভুগে। বোরকা না পরে কত পাপ না জানি করে ফেলল। মফস্বলের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে, ধীরে ধীরে চেপে যেতে থাকবে ঢাকার দিকে। আগে বোরকা যার যার পছন্দ পরবে, ওইটাও তার ব্যক্তি স্বাধীনতা বলে মনে করতাম। এখন মনে করে না। কারণ কেউ প্রচণ্ড গরমে জোব্বার মত বোরকা ইচ্ছা করে পরে ঘুরছে এইটা বিশ্বাস যোগ্য না। 
     
    পোশাকের স্বাধীনতাই নেই অন্য স্বাধীনতা তো আকাশ কুসুম স্বপ্ন। আপনি জানেন কি না জানি না। আমি গুরুতে এর আগে লিখেছি, আপনি হয়ত পড়ে থাকবেন যে আমার কাজিন হচ্ছে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের বর্তমান অধিনায়ক। ওদের বাড়ি আমাদের বাড়ি একই বাড়ি। আমাদের দেখেই ওর খেলা শুরু। আমাদের ব্যাট বল দিয়েই ওর হাতেখড়ি। আমি আমার জীবনে যে কয়েকজন নারীকে নিজের অধিকার নিয়ে যুদ্ধ করে এগিয়ে যেতে দেখেছি তার মধ্যে ও একজন। মেয়েদের খেলতে দিবে না, ও খেলবে! আমাদের স্টেডিয়ামে তালা লাগায় দিয়েছিল ওর জন্য যেন ও প্র্যাকটিসে না যেতে পারে। ও বিশাল বড় গেট টপকে মাঠে ঢুকেছে! এই যে ওর লড়াকু মনোভাব, এইটাই দেখা যায় না। আপনি যেটা লিখলেন অর্জন করে নিতে হয়। ওই অর্জনটা করে নিতে সবাই পারে না। আমি জ্যোতিকেই দেখছি কেড়ে নেওয়ার মত মনোভাব। যখন প্রতি নিয়ত সমাজ আপনাকে ভয় দেখাবে তখন সবার পক্ষে সম্ভবই না আসলে যুদ্ধ করে এগিয়ে যাওয়া। সবার দ্বারা হয় না। নানা প্রতিকূলতা এসে হাজির হয়। তাই কত জ্যোতি ঝরে যাচ্ছে তার কোন হদিস নাই। 
    আপনি আমি যে মনোভাবের খোঁজ করছি এই পরিবেশে হরদম পাওয়া যাবে না। আবার ওই রকম মনোভাবের নারীরা না তৈরি হলে ওই পরিবেশও পাওয়া সম্ভব না। এই চলছে চক্র। কবে হবে উদ্ধার কে জানে! 
  • যোষিতা | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০০:৩০511966
  • সত্যি দুঃখজনক। আমি কিবরিয়া সরকারের আপন ঠিকানা নিয়মিত দেখি। অনেকেই মুখ দেখাতে চান না।  তাদের কেও জোর করছে না, এটাও সত্য।
    এরশাদের আমলে শাড়ি পরলে কোমর দেখা গেলে আলকাতরা লাগানোর নিদান দেওয়া হয়েছিল, সেটা সাতাশি সাল টাল হবে। মৌলবাদীরা ধীরে ধীরে গ্রাস করে নিচ্ছিল বাংলাদেশকে। কিন্তু এখন তো আওয়ামি লীগের সরকার, নেত্রীর হাতে কি ক্ষমতা কম? বুঝতে পারি না।
  • কিংবদন্তি | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০১:৩৫512015
  • যে বীজ রোপণ করা হয়ে ছিল তা এখন মহীরুহতে রূপান্তর হয়েছে। এর শেকড় এত গভীরে যে নেত্রীর হাতের ক্ষমতা কম পড়ে যাচ্ছে। অন্য যারাই আছে তারা এমন হতশ্রী হয়ে আছে যে আমরা বাধ্য হয়েই বলতেছি যে আমরা আউট অফ অপশন। অনেকেই এই কথাটা নিয়ে মজা নেয়। কিন্তু আমি আসলেই জানি না অপশন না থাকলে আসলে কি করা উচিত। তাই মাঝে মধ্যেই হাল ছেড়ে দিতে ইচ্ছা করে। জানি না আসলে দেশের ভবিষ্যৎ। 
  • aranya | 2601:84:4600:5410:a8ef:829d:b485:***:*** | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২০:৫৮512112
  • 'বোরকা না পরে কত পাপ না জানি করে ফেলল' - মানুষ যদি নিজের মস্তিস্ক ব্যবহার না করে, তবে খুবই সমস্যা। মধ্য প্রাচ্যের টেলের টাকা, সৌদী ওয়াহাবি ইসলামের প্রচার - এসব কারণ তো আছে, মৌলবাদের ঢাক উচ্চরবে বাজছে, বহু দিন ধরেই। 
  • aranya | 2601:84:4600:5410:a8ef:829d:b485:***:*** | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২১:০০512113
  • সাদেক- এর এই লেখাগুলো পড়লে একটু আশাও জাগে, কিছু মানুষ তো অন্যরকম ভাবছে .
    জাফর ইকবাল রা এখনও  আছেন 
  • কিংবদন্তি | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০০:১১512187
  • অরণ্য দা, জাফর ইকবালরা আছে বলেই হয়ত এখনও হুড়মুড় করে ভেঙে পড়েনি। আমরা তো কেউ না। আমরা ভিতু সৈনিক। যাই হোক, আজকে কিন্তু একটা কাণ্ড হয়ে গেছে ঢাকা শহরে। সাফ চ্যাম্পিয়ন নারী দলকে ছাদ খোলা বাসে করে পুরো শহর ঘুরিয়েছে। ওইটা নিয়েই লেখছি। পোস্ট করব এখন। 
  • যোষিতা | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০২:৫১512188
  • লেখেন
  • যোষিতা | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৩:৩৮512191
  • ফোটোর তরুণী মেয়েদুটির পোশাক দেখুন। আজকের ফোটো। এটি একটি সম্পূর্ণ ইসলামিক দেশ, রাজতন্ত্র, অধিকাংশই সুন্নি গোষ্ঠির আরব জাতির মানুষ। মরক্কো। স্প্যাগেটি স্ট্র্যাপ এবং শর্টস পরা মেয়েদেরো দেখছি, আবার কিছু কিছু মাথায় রুমাল বাঁধা মহিলাও দেখছি। এখানে ক্রীড়াপ্রেমী ও ফুটবলপ্রেমী মানুষ প্রায় সকলেই। এটা আফ্রিকা। এরা পারলে বাংলাদেশ কেন পারবে না?
  • aranya | 2601:84:4600:5410:8947:b2d6:77d7:***:*** | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০২:০৯512224
  • সাদেক, তুমি বাংলাদেশে থেকে এসব রিপোর্টিং করছ । কিছু রিস্ক তো আছে। 
    আমি তোমাকে সাহসী সৈনিক- ই বলব :-)
  • aranya | 2601:84:4600:5410:8947:b2d6:77d7:***:*** | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০২:০৯512225
  • সে, মরক্কো-র ছবিটা ভাল লাগল 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু মতামত দিন