বাঙালির দার্জিলিং প্রীতি সর্বজনবিদিত। এর মধ্যে একটা বিরাট ঔপনিবেশিক হ্যাং ওভার আছে নিঃসন্দেহে। ইংরেজদের প্রিয় জায়গা, কারণ এখানে নাকি তারা "লন্ডন ওয়েদার" পেত। সিমলা, দার্জিলিং, এসব জায়গার খ্যাতি সেই কারণেই। দার্জিলিং এর প্রায় সব হেরিটেজ বিল্ডিংগুলিই বৃটিশ আমলের। বাংলা লুটের টাকায় সাজানো তাদের সেকেন্ড হোম - যার ট্র্যাডিশন প্রায় সবটাই ইংলিশ। দোজ হু কল দেমসেলভস কালচার্ড অ্যান্ড ইয়েট হু ওয়ার মেয়ারলি রবারস - অ্যান্ড হার্ডলি কনফেসড, হার্ডলি রিগ্রীটেড।
ব্যাপার হচ্ছে এসব জানা বোঝা সত্ত্বেও আমার একটা দার্জিলিং প্রীতি জোরদার রয়ে গেছে। তার কারণ, ছোটবেলায় দুই বছর বাবার কর্মসূত্রে ছিলাম এই শহরে। গভর্নমেন্ট হাই স্কুলে ফাইভ, সিক্স। খাদের ধারের রেলিং টা, টুং সোনাদা ঘুম পেরিয়ে। স্মৃতির শহর - বিস্মৃতিরও শহর - কারণ সেই ১৯৮৩ তে দার্জিলিং ছাড়ার পর ফিরে এসেছিলাম ২০০৫ এ - বাইশ বছর পর। তারপর আবার কেটে গেছে পনেরো বছর। হয়তো আরো যেত। কিন্তু আমার পুত্র বাদ সাধিল।
তার বহুদিনের শখ দার্জিলিং দেখবে - তার ঠাকুর্দা, ঠাকুমার কাছে গল্প শুনেছে। ২০০৫ এ (ওর জন্মের আগের বছর) ঘুরে আসার পর ওর মা ও বলেছে গল্প আর আমিও বলেছি। ২০১৯ এ গেছিলাম ডুয়ার্স - সেবারে খুবই এনজয় করেছিল, কিন্তু দার্জিলিং সে আসবেই। আর আমাদেরও ইচ্ছেটা চাগাড় দিচ্ছিল। অতএব গতমাসে নেট ঘাঁটতে ঘাঁটতে যেই না দেখা, বড়সড় ছাড় পাওয়া যাচ্ছে হোটেলে - মার গুড় দিয়ে রুটি, ফুঁ দিয়ে চা। হোটেল বুকিং করে ফেলে ভাবলাম যাচ্ছিই যখন, আশেপাশেও একটু ঘুরে আসব না কেন? এদিকে আমার এক্সপিরিয়েন্স তো সেই মান্ধাতা আমলের - আউটডেটেড টু দি পাওয়ার ইনগিনিটি। কাজেই ফোন লাগালাম আমার এক পাহাড় বিশেষজ্ঞ ভাই কাম বন্ধু, দেবা (সঞ্জয় ভট্টাচার্য) কে। সে সাজেস্ট করল বড়া মাঙ্গওয়া আর তিনচুলে। দ্বিতীয়টা নাম শুনেছি, এখন অনেকেই যায়, প্রথমটা একেবারে শুনিনি এমন না - কিন্তু সে না শোনার মতই। যাই হোক তর্কে না গিয়ে তার ঘাড়েই চাপিয়ে দিলাম সমস্যাটা। সে অম্লানবদনে আমাকে দুই জায়গার আস্তানার খবর পাঠিয়ে দিল আর তার পাঠানো নম্বরে ফোন করে বুকিং ও হয়ে গেল। এবার বুকিং টুকিং হয়ে গেলে যাওয়া আসার ব্যবস্থাও করতেই হয় - অতএব টিকিট কাটো। যাওয়া ট্রেনে, ফেরা প্লেনে। মেঘ প্লেনে চড়েছে সেই ছোট্টবেলায় - তার এই অভিজ্ঞতাটুকুও হয়ে থাক।
এসব ফেব্রুয়ারী মাসের ব্যাপার স্যাপার। যাত্রা তখনো একমাস দূরে। মাঝে মেঘের অ্যানুয়াল পরীক্ষা, খুশীর শুটিং, আমার কাজকম্ম। আর এসবের মাঝেই প্রহর গোনা। আসছে - আসছে - আসছে করতে করতে ফেব্রুয়ারী পেরিয়ে মার্চ। টুকিটাকি জিনিষের লিস্ট হল, সেসব প্রোকিওর করা হল, ব্যাগ গোছানো হল, একটা নতুন স্যুটকেসও কিনে ফেলা হল। তিনজনে মিলে এত লম্বা ট্যুরে বহুদিন যাইনি। এবং এইসব করতে করতেই পাঁচ তারীখ এসে গেল।
*(পরের কিস্তি থেকে সঙ্গে ছবি থাকবে)
ভেরি গুড রৌহিন! ওপেনিং ইনিংস ভালোই হইছে। তারপর? লাবিউ ইমো