পঞ্চাশের মন্বন্তরের প্রকোপ তখন তুঙ্গে। কমিউনিস্ট পার্টির পি সি যোশীর আহ্বানে দুই তরুণ চষে বেড়াচ্ছেন সারা বাংলা। সুনীল জানার হাতে রয়েছে ক্যামেরা আর শিল্পী চিত্তপ্রসাদ সঙ্গে নিলেন তাঁর স্কেচবুক। উদ্দেশ্য, কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র "পিপল'স ওয়ার" পত্রিকার জন্য দুর্ভিক্ষের ভয়াবহতাকে নথিবদ্ধ করা। ঘুরতে ঘুরতে চিত্তপ্রসাদ এসে পৌঁছলেন হুগলি জেলার জিরাটে, ইচ্ছে ছিল শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের পৈতৃক ভিটে দর্শন করা, আর নিজের চোখে দেখে নেওয়া 'বেঙ্গল রিলিফ কমিটি'র প্রধান নিজের গ্রামে ত্রাণের কী ব্যবস্থা করেছেন।
বলাগড় অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে জিরাটের দিকে হেঁটে যাওয়ার সময় চিত্তপ্রসাদ দেখলেন যে, গত বছরের বিধ্বংসী বন্যার পর পরই এই দুর্ভিক্ষ একেবারে শিরদাঁড়া ভেঙে দিয়েছে এলাকার মানুষের। রাজাপুর গ্রামের ৫২টি পরিবারের মধ্যে ততদিনে কেবলমাত্র আর ৬টি পরিবার রয়ে গেছে। এদিকে আবার অধিকাংশ গ্রামবাসী শ্যামাপ্রসাদের নাম না শুনলেও, প্রত্যেকেই জানালেন যে "আশুতোষের ছেলের" থেকে ছিটেফোঁটা সাহায্যও পাননি গ্রামের মানুষ। বরং সরকারের তরফ থেকে মাস দুয়েক খাবারদাবার পেয়েছেন তাঁরা, আর খাদ্যশস্য এবং সামান্য আর্থিক সাহায্য পেয়েছেন কমিউনিস্ট পার্টি, ছাত্র ফেডারেশন, মুসলিম স্টুডেন্টস লিগের ছাত্রদের উদ্যোগে। শ্যামাপ্রসাদের রিলিফ কমিটি দেশের নানাপ্রান্ত থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা ডোনেশন পেয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেই টাকা যে এই অঞ্চলের মানুষের কাজে লাগেনি তা একনজর দেখেই বুঝে গেলেন চিত্তপ্রসাদ। কিন্তু জিরাটে পৌঁছে যা দেখলেন, তা সত্যি মেনে নিতে পারেননি তিনি। দেখলেন দুর্ভিক্ষ-পীড়িত বাকি গ্রামের মতনই আশুতোষের আদি বাড়ির ভগ্নপ্রায় অবস্থা আর তার মধ্যেই, ওই দুর্ভিক্ষের বাজারে, শ্যামাপ্রসাদ তৈরি করছেন প্রাসাদোপম বাগান বাড়ি। সেখানে আবার মাঝেমাঝেই ছুটির দিনে কলকাতা থেকে বন্ধু-বান্ধব এসে ফুর্তি করে সময় কাটিয়ে যান।
১৯৪৩ সালের এই দুর্ভিক্ষ কিন্তু খরা বা অনাবৃষ্টি বা খারাপ ফসল হওয়ার কারণে হয়নি, হয়েছিল সম্পূর্ণভাবে ব্রিটিশ সরকারের গাফিলতিতে। একেই জাপানের কাছে বার্মার পতনের ফলে সেখান থেকে চালের আমদানি বন্ধ হয়ে গেল। তার ওপর যুদ্ধের সৈন্যদের জন্য জমা করা হয়েছিল প্রচুর খাদ্যশস্য এবং বাকি যা ফসল ছিল তার সুষম বণ্টন করা হল না বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে। কলকাতা শহরের বাসিন্দাদের জন্য এবং কলকারখানার শ্রমিকদের জন্য চালের বন্দোবস্ত হলেও, খাবার পৌঁছল না রাজ্যের অন্যান্য অঞ্চলগুলিতে। এর সঙ্গে শুরু হল মজুতদারদের চালের কালোবাজারি যা খাদ্যদ্রব্যের দাম নিয়ে গেল গরিব মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে। খাবারের অভাবে গ্রামবাংলার মানুষ চলে আসতে লাগলেন শহর কলকাতায়। প্রতিদিন মৃতদেহের সংখ্যা বাড়তে লাগলো শহরের রাস্তাঘাটে। কলকাতা শহরের এই চরম দুরবস্থার ছবি সরকারের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ছাপালেন স্টেটসম্যান সংবাদপত্রের সম্পাদক ইয়ান স্টিফেন্স। সেসব ছবি সাড়া জাগাল গোটা বিশ্বে। এই অবস্থায় সরকারি ত্রাণব্যবস্থা যখন হিমশিম খাচ্ছে, তখন বেসরকারি ত্রাণ শুরু হল শ্যামাপ্রসাদের পরিচালনায়। তিনি 'বেঙ্গল রিলিফ কমিটি' বা বিআরসির রিলিফ কমিশনার নিযুক্ত হলেন এবং এই দুর্ভিক্ষের হাহাকারের মধ্যেও সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করার সুযোগ ছাড়লেন না। ত্রাণকেন্দ্র স্থাপন করলেন কেবলমাত্র সেই সব গ্রাম এবং ওয়ার্ডে যেখানে হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। বিআরসির সঙ্গে সঙ্গে শ্যামাপ্রসাদের তত্ত্বাবধানেই তৈরি হলো হিন্দু মহাসভা রিলিফ কমিটি। বিআরসির উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও আর একটি কমিটির প্রয়োজনীয়তার কারণ হিসেবে বলা হল যে অনেক মানুষ চাইছেন যে তাঁদের দানের অর্থ যেন কেবলমাত্র হিন্দু মহাসভা মারফত খরচ করা হয়। কমিটির বক্তব্য ছিল, যেহেতু সরকারি ত্রাণকেন্দ্রের ক্যান্টিনগুলোতে বেশিরভাগ রাঁধুনি মুসলমান, তাই হিন্দুদের নাকি সেখানে খাবার ব্যাপারে আপত্তি আছে। হিন্দু মহাসভার নিজেদের ক্যান্টিনে কেবলমাত্র হিন্দুদের রান্না করা খাবার পরিবেশন করা হতো । মহাসভার দাবি ছিল যে, রান্না খাবার না দেওয়া হলেও, মুসলমানদের পুরোপুরি বঞ্চিত না করে তাঁদেরকে দেওয়া হয় কাঁচা শস্য। সাংবাদিক টি. জি. নারায়ণ মেদিনীপুরে মহাসভার একটি হাসপাতালে গিয়ে দেখেন যে বাইরে হাজার হাজার মরণাপন্ন মানুষ থাকা সত্বেও, হাসপাতালের চল্লিশটির মধ্যে পনেরোটি শয্যা খালি। তবে গরিব রুগীর চিকিৎসা হোক না হোক, হাসপাতালের প্রত্যেকটি ঘর কিন্তু আলোকিত করে রেখেছে শ্যামাপ্রসাদের ফ্রেমে বাঁধানো পোর্ট্রেট।
যে ভয়ঙ্কর সময়ে প্রায় ৩০ লক্ষ বাঙালি না খেতে পেয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন, সেই সময় শ্যামাপ্রসাদের দুশ্চিন্তার কারণ উচ্চবর্ণের আধপেটা-খাওয়া হিন্দু কী করে মুসলমান রাঁধুনির হাতের রান্না সরকারি ক্যান্টিনে খেতে পারেন। এর সঙ্গে সঙ্গে দুর্ভিক্ষের ত্রাণকার্য নিয়ে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ চলতেই থাকে - হিন্দু মহাসভাও আঙুল তুলতে থাকে মুসলিম লীগ নিয়ন্ত্রিত বাংলার গভর্নমেন্টের দিকে, তাদের বক্তব্য সরকারি ত্রাণকার্য্যে মুসলিম জনগণের প্রতি পক্ষপাতিত্ব স্পষ্ট ।
অথচ মুসলিম লীগের সঙ্গে হিন্দু মহাসভার সম্পর্ক কিন্তু খুব অল্প দিনের ছিল না। ভারতকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জড়িয়ে ফেলার প্রতিবাদে ১৯৩৯ সালে যখন কংগ্রেসের নেতারা মন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করেন, তখন হিন্দু মহাসভা মুসলিম লীগের সঙ্গে হাত মিলিয়ে জোট সরকার বানান সিন্ধ এবং উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে। ১৯৪১ সালে বাংলায় শ্যামাপ্রসাদ ফজলুল হকের মন্ত্রিসভায় অর্থমন্ত্রী হিসেবে যোগদান করেন, সেই ফজলুল হক, যিনি বছরখানেক আগেই লাহোরে মুসলিম লীগের সভায় 'পাকিস্তান প্রস্তাব' গ্রহণ করার দাবি জানান। সাভারকার আর শ্যামাপ্রাসাদের নেতৃত্বে হিন্দু মহাসভা জোর কদমে চালাতে থাকে গান্ধীজির 'ভারত ছাড়ো' আন্দোলনের বিরোধিতা। ১৯৪২-এর ২৬ জুলাই বাংলার গভর্নর জন হার্বার্টকে চিঠি লিখে শ্যামাপ্রসাদ জানিয়েও দেন কংগ্রেসের এই আন্দোলন মোকাবিলা করার জন্য ঠিক কিরকম কড়া ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তারপর ১৯৪৩এর ৩রা মার্চ সিন্ধের মন্ত্রিসভায় ভারতের মুসলমানদের জন্য যখন পৃথক রাষ্ট্রের দাবি পাস করা হয়, হিন্দু মহাসভা কিন্তু সরকার থেকে বেরিয়ে আসেনি এই প্রস্তাবের প্রতিবাদে।
আজ থেকে বছর পাঁচেক আগে দিল্লির নেহেরু মেমোরিয়ালে শ্যামাপ্রসাদের ওপর একটি প্রদর্শনী আয়োজিত হয়। সেখানে অমিত শাহ তাঁর ভাষণে বলেন যে শ্যামাপ্রসাদ নেতৃত্ব দিয়ে থাকলে সমগ্র কাশ্মীর আজ ভারতের দখলে থাকত।
প্রোপাগান্ডা এরকমই হওয়া উচিত - রাজনৈতিক সুবিধা পেতে যদি মিথ্যের আশ্রয় নিতেই হয়, তাহলে সেই মিথ্যাকে সুকৌশলে এমনভাবে পেশ করতে হবে কতকগুলো আংশিক সত্যকে পাশে রেখে, যাতে সত্যি-মিথ্যের ফারাকটুকুও আর করা না যায়। আসলে, কাশ্মীরের যতটুকুও আজ ভারতের দখলে আছে, সেটুকুও রয়েছে কিন্তু নেহেরুর জন্যই। কাশ্মীরকে স্বাধীন ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার কোনও তাগিদ হিন্দুত্ববাদীদের কোনকালেই ছিল না। বলরাজ মাধকের প্রচেষ্টায় আর এস এস-এর জম্মু শাখা স্থাপিত হয় ১৯৩৯ সালে আর কাশ্মীর শাখা ১৯৪৪এ। কাশ্মীরের ডোগরা পরিবার শুরু থেকেই এই প্রচেষ্টায় শরিক। প্রেমনাথ ডোগরা ছিলেন জম্মু আর এস এস-এর সঙ্ঘচালক, যিনি আবার ছিলেন জম্মু কাশ্মীর হিন্দু সভার একজন প্রধান সদস্যও। লোকসভাতে দাঁড়িয়ে সমগ্র কাশ্মীর ভারতের অধীনে না থাকার জন্য অমিত শাহের নেহেরুকে দোষারোপ করা যাঁরা শুনেছেন তাঁরা অবাক হবেন শুনে যে, দেশভাগ যখন একপ্রকার নিশ্চিত হয়ে গেল ১৯৪৭-এর মে মাসে, তখন এই হিন্দু সভা কিন্তু মহারাজের পাশে থেকে ভারতে যোগদান না করে কাশ্মীরকে স্বাধীন রাখার জন্য সোচ্চার হয়েছিল।
স্বাধীন ভারতের প্রথম শিল্পমন্ত্রী হিসেবে শ্যামাপ্রসাদের যে 'বিশাল অবদান' রয়েছে সে কথা নেহেরু মেমোরিয়ালের ওই প্রদর্শনীতে বেশ ফলাও করেই বলা হয়েছিল। এও দাবি করা হয়েছিল যে ভিলাই ইস্পাত কেন্দ্র গড়ে ওঠার পেছনেও নাকি তাঁরই হাতযশ। বস্তুত ভিলাই ইস্পাত কেন্দ্র স্থাপিত হয় ১৯৫৫ সালে আর শ্যামাপ্রসাদ মারা যান তার দু'বছর আগেই। সদ্য স্বাধীন ভারতের শিল্পায়ন শ্যামাপ্রসাদের হাত ধরে হয়েছে, এই ন্যারেটিভ বর্তমান সরকারের 'মেক ইন ইন্ডিয়া'র ছবি কিছুটা হলেও শক্তিশালী করবে ঠিকই, কিন্তু এই প্রদর্শনীর আগে পর্যন্ত নেহেরু-মহলানবীশ প্রকল্পের ধারেকাছে কোথাও যে শ্যামাপ্রসাদের আনাগোণাও ছিল, সে কথা কেউ বোধহয় ঘুণাক্ষরেও টের পাননি ।
এখানেই শেষ নয়। আর এক চমকপ্রদ ন্যারেটিভ তৈরি করা হয়েছে শ্যামাপ্রসাদকে ঘিরে - তিনি নাকি কলকাতা শহরকে বাঁচিয়েছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের অংশ হওয়ার থেকে। বস্তুত এরকম কোনো প্রস্তাব কখনোই আসেনি। বরং বাংলার প্রধানমন্ত্রী সুহরাবর্দি আর শরৎ বোস, কিরণ শংকর রায়ের মতন কংগ্রেস নেতারা আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন বাংলাকে অবিভক্ত এবং স্বাধীন রাখার। অন্যদিকে আশুতোষপুত্র চেয়েছিলেন বাংলাকে দুটুকরো করতে - আর তাই মাউন্টব্যাটেনকে গোপন পত্র মারফত আর্জি জানিয়েছিলেন যে দেশভাগ না হলেও যেন অন্তত বাংলাকে ধর্মের ভিত্তিতে দুভাগ করা হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে কি একবার প্রশ্ন করা যায় না, যে হিন্দু মহাসভার যদি প্রকৃতপক্ষেই আপত্তি ছিল দেশভাগ করা নিয়ে, তাহলে স্বাধীনতার পর শ্যামাপ্রসাদ নেহরুর মন্ত্রিসভায় যোগদান করলেন কেন? তাঁর রাজনৈতিক জীবনের এইসব অপ্রীতিকর সত্যিগুলো ধামাচাপা দিয়ে হিন্দু মহাসভার তখনকার কাণ্ডকারখানা বাঙালির কাছে গ্রহণযোগ্য করে শ্যামাপ্রসাদকে বাংলায় বিজেপির আইকন করে তোলার কাজটা খুব একটা সহজ হবে না। তবে পয়সার জোরে ব্যাপক প্রচার চালিয়ে ডাহা মিথ্যেকে সত্যির রূপ দেওয়ার কঠিন কাজটা এই জাতীয় ফ্যাসিস্ট দলগুলি আগেও করে দেখিয়েছে। দেখা যাক, এক্ষেত্রে জল কতদূর গড়ায়।
ইতিহাস নির্ভর এই লেখার জন্য ধন্যবাদ।
লেখাটির জন্য ধন্যবাদ।
পয়ত্রিশ বছর বয়সে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর - বোধহয় বিশ্বরেকর্ড।
কাশ্মীরকে নিয়ে ঠিক কি রাজীনীতি চলেছিলো সেই সময় দয়া করে আরো বিস্তারিত ভাবে জেনে তারপর পোস্ট করুন . কাশ্মীরকে ভারতের অংশ হিসেবে রাখার জন্যে যে কয়েকজন ইন্ডিয়ান আর্মী এবং এডমিনিস্ট্রেশণ র কিছু মানুষ বিশেষ ভাবে চেষ্টা করে গেছেন দয়া করে সেই তথ্য তুলে ধরুন .
যে তথ্য ঢেরা পিটিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হবে সেটাই প্রতিষ্ঠিত হবে। কাল যদি চীন বলতে শুরু করে ওরাই প্রথম চাঁদে গিয়েছিল, কিছু মানুষ 5 বছরের মধ্যে সেটা বিশ্বাস করতে শুরু ও করবে। এমনিতেই মুন ল্যান্ডিং নিয়ে কিছু কনসপিরেসি থিওরি চালু আছে, এটা লোক কে খাওয়াতে সুবিধা হবে, বেশ অর্ধসত্য টাইপের ব্যাপার হবে।
কিছু ঘটনা জানা ছিলো, আরো কিছু আজ জানলাম। অভিরূপবাবু এবং গুরুকে ধন্যবাদ। এরকম লেখা আরো পাওয়া দরকার।
লেখাটা ভীষণ ভালো এবং তথ্যপূর্ণ।
জরুরী লেখা
রানা আলম,
আপনার লেখা অনেকদিন পড়ি নি।
ফ্যাসিস্ট দর্শনের মূলে থাকে গড়ে তোলা কিংবদন্তির ইঁটপাথর। ইতিহাসের শ্যামাপ্রসাদ স্বভাবতই কিংবদন্তির শ্যামাপ্রসাদের থেকে আলাদা হবেন। ইতিহাসের শ্যামাপ্রসাদের স্বরূপ উদ্ঘাটন হয়ে গেছে দীর্ঘকাল আগে। মেধাবী মস্তিষ্কের ঘোর আকালগ্রস্ত একটি গোষ্ঠীতে প্রয়োজন ছিলো একটি স্বীকারযোগ্য, সুবিধেজনক মানুষের। সেকালের সর্বতো স্বীকৃত সারস্বত প্রতিষ্ঠান কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীনতম উপাচার্য শ্যামাপ্রসাদ ছিলেন আদর্শ ও সেরা উমেদার। গ্রহণযোগ্য নায়কবিহীন একটি রাজনীতির প্রয়োজন ছিলো নেহরুর বিপরীতে একটি নাম। নামের পিছনে কে আছেন সে ব্যাপারটা গুরুত্বহীন। কিংবদন্তির শ্যামাপ্রসাদকে দিয়ে সেই ফাঁকটা ভরা হয়েছিলো। মৃত্যুর পর বাস্তব শ্যামাপ্রসাদকে নিয়ে আর কোন সমস্যা রইলো না। ষাট-সত্তর বছর ধরে, বহু মানুষের মনের মাধুরী মিলে মিশে একটি ভাবমূর্তি নির্মিত হলো। শ্যামাপ্রসাদের কিংবদন্তি এবং ব্রিটিশ-উত্তর ভারতবর্ষে বেড়ে ওঠা হিংস্র জাতিহিংসার ন্যারেটিভ পরস্পর নির্ভরশীল।
বাস্তব শ্যামাপ্রসাদ কোনও বিবেচ্য চরিত্র নন। আমাদের উদ্বেগের কারণ কিংবদন্তির শ্যামাপ্রসাদ। তাঁকে যেমন ইচ্ছে তেমনভাবে গড়ে তোলা যায়। জন্মসূত্রে তিনি বঙ্গীয় হবার সুবাদে সেই বিপর্যয়ের সিংহভাগ আজকের বাংলার কাছে অভিশাপ হয়ে নামতে পারে।
গুরুত্বপূর্ণ লেখা
নামে কি আসে যায় কে বলি সেই তথ্য দিয়ে আপনি একটা কাউন্টার নামান না। না লিখলে আমরা ঋদ্ধ হব কি করে
NET পরীক্ষার সবচেয়ে ভালো ফল করা ছাত্রছাত্রীরা এখনো এস পি এম ফেলোশিপ পান ।...সেটা কি ওনার নামেই? নিজেই শুরু করেছিলেন? নাকি বিজেপি সরকার শুরু করে? একটু জানাবেন কেউ ?
সঠিক মুল্যায়ন শ্যামাাপ্রসাদ একটা আদ্যপাান্ত ভন্ড লোক কোন অবদাানই তাাার নেই
Valo
শ্যামাপ্রসাদ সত্যিই এত ভয়ানক লোক ছিলেন যে তার জন্যই আজো দুই বাংলা মিলে ত্রিশ শতাংশ নর-নারীর নাম এখনো আরবি-ফার্সি হতে পারেনি। নোয়াখালির দাঙ্গার পরই বাংলার সব নারীর শরীরে বোরখা ওঠার কথা ছিল। শ্যামাপ্রসাদের মত কুত্তাদের জন্য সেটা সম্ভব হয়নি। শ্যামাপ্রসাদ অতি বড় কুত্তা ছিলেন বলেই পূর্ব বাংলা থেকে রাতারাতি পথে বসা, আহত-ধর্ষিত নর-নারী পশ্চিম বাংলায় এসে মাথা গোঁজার জায়গা একটু হলেও পেয়েছিল। হোয়াটস এ্যাপ ইউনিভার্সিটির জন্যই ১৯৪৭ ঘটেছিল।
ও শ্যামাদাস ! আয়তো দেখি, বোস তো দেখি এখেনে,
সেই কথাটা বুঝিয়ে দেব পাঁচ মিনিটে, দেখে নে।
শ্যামা নিজে নিজেকে ডিলিট দিয়েছিল
শ্যামাপ্রসাদ না থাকলে হিন্দুদের উপর প্রচুর অত্যাচার হত,এই বক্তব্য চাড্ডীকুল বিরাট ছড়ায়। দাঙ্গা নিবারণে হিন্দুমহাসভার ভূমিকা ঠিক কী ছিল?
নেহেরু লাহোরের এক বক্তৃতা প্রসঙ্গে বলেন যে, যদি সুভাষ বসু জাপানীদের সাহায্যে সৈন্যদল নিয়ে ভারতবর্ষ আক্রমণ করতে আসেন, তিনি একা তরবারি হাতে ডাকে বাধা দিতে এগিয়ে যাবেন। যখন কংগ্রেস নেতারা দেখলেন যে সুভাষ ও আজাদ হিন্দ ফৌজের কাহিনী সারা দেশকে আলোড়িত করছে তারা এই ব্যাপারকেই সব চেয়ে বড় চোখে দেখতে লাগলেন। নেহেরু চট্ করে সুর বদলে ফেললেন। আজাদ হিন্দ ফৌজের সৃষ্টি সুভাষ করেন নি। তিনি যাবার পূর্বে ভারতীয় সৈনোরা নিজেদের সংঘবদ্ধ করে জাপানীদের সাহায্য নিয়ে ভারত জয় করার স্বপ্ন দেখছিল। তবে তেমন বিরাট নেতৃত্ব তখন তাদের মধ্যে ছিল না। সুভাষ সেই অভাব মোচন করেন-তার বিশেষ সহায়তা নিশ্চয় করেছিলেন বিপ্লবী রাসবিহারী বসু। সুভাষের পরিকল্পনা যে মহান ছিল তার কোন সন্দেহ নেই। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে ভারতীয় সৈন্যদের তিনি একসূত্রে বাঁধতে পেরেছিলেন খুব অল্প সময়ের মধ্যে- এবং অস্ত্রবিদ্যায় পারদর্শী হয়ে, শৃঙ্খলাবন্ধ হয়ে উঠে ভারতীয় সৈন্যরা ভারতকে স্বাধীন করবে এই আশায়.ও উদ্দীপনায় তিনি সকলকে মাতিয়ে তুলেছিলেন। জয় হিন্দ ডাক দিয়ে দেশমাতৃকার বেদীর তলায় আত্মাহুতি দেবার জন্য এত বড় আহ্বান ইতিহাসে খুব বেশী দেখা যায় না। তাদের প্রচেষ্টা সফল হল না- এটা দুঃখের কথা। কিন্তু পথ তারা দেখিয়ে গেলেন এবং যদি কখনও ভারত স্বাধীন হয়, এই পথেই হবে। যদি স্বাধীন ভারত তার স্বাধীনতা রাখতে চায়, এই পথই তার অবলম্বন করতে হবে- এই ধ্রুব সত্য। চরকা ঘুরিয়ে কাপড় দেওয়া যেতে পারে, আর্থিক দুঃখ কিছু মোচন করা সন্তব হতে পারে- কিন্তু চরকা ও non-violence দ্বারা এ যুগে রাষ্ট্রীয় স্বতন্ত্রতা পাওয়া বা রাখা সম্ভব নয়।
কংগ্রেস গান্ধীজির নেতৃত্বে military revolt - সামরিক বিদ্রোহে বিশ্বাস করে না। তারা সামরিক শিক্ষার পক্ষপাতী ছিল না যুদ্ধের সময়। তারা দেশকে যে আহ্বান দিয়েছিল, দেশবাসী তা শুনলে কেউ ভারতীয় ফৌজএ যোগদান করত না। হিন্দুসভা ঠিক এর বিপরীত কথা প্রচার করে। তারা স্বীকার করে নেয় যে এ যুদ্ধে জোর করে ভারতকে নামানো হয়েছে- এবং সভায় বার বার এই কথাই বলেছিলাম যে ইংরাজ দায়ে পড়ে এই শিক্ষা আজ দিচ্ছে- হয়ত ইংরাজের হয়ে এই বিদ্যা অনুযায়ী আমাদের ছেলে-মেয়েরা লড়াই করবে। তবে এমন দিন আসবেই আসবে, যখন এই সব লক্ষ লক্ষ ভারতের সন্তান যারা সমরবিদ্যায় আধুনিক শিক্ষালাভ করেছে- এই শিক্ষার সাহায্য নিয়ে এই বিদ্যার দ্বারাই ইংরেজকে ভারত থেকে বিতাড়িত করতে পারবে ও দেশমাতৃকার পরাধীনতার গ্লানি চিরদিনের মত দূর করতে পারবে। ঘটনাচক্রে সুভাষ আমাদেরই জীবদ্দশায় এই সত্য প্রমাণিত করে দিলেন। তবে যদি কংগ্রেসনীতি যুদ্ধের সময় দেশবাসীরা গ্রহণ করত, তাহলে তারা ভারতীয় ফৌজে যোগদান করত না এবং সুভাষ মানুষ ও মালমস্লা পেতেন না, যার সাহায্যে তিনি তার এই অপূর্ব আজাদ হিন্দ ফৌজ গড়ে তুলতেন।
তবু কংগ্রেস আই-এন্-এ বিচার নিয়ে, তাদের কথা ও কাহিনী নিয়ে কি প্রবল বন্যাই না আনল দেশময়! লোকে ভাবল না, বুঝল না যে একসঙ্গে তারা গান্ধীর জয় ও সুভাষের জয় বলতে পারে না- দুইজনের নীতির মধ্যে আকাশ-পাতাল প্রভেদ। কংগ্রেস নেতারা ধাপ্পা দিয়ে লোকের চোখে ধুলা দিয়ে এই সুযোগ নিয়ে নির্বাচনের তরী সহজে ভাসিয়ে দিলেন ও তীরে নিয়ে হাজির করলেন।
"যদি স্বাধীন ভারত তার স্বাধীনতা রাখতে চায়, এই পথই তার অবলম্বন করতে হবে- এই ধ্রুব সত্য।"
নেতাজি এই কথা কস্মিনকালে বলেন নি।
শ্যামাপ্রসাদের বংশধরদের মিথ্যাচার নিয়ে খুব ভাল লেখা।
খুবই উপকৃত হলাম, শুধু তাই নয় - অনেক না জানা ঘটনা, তথ্য জানলাম ।
ডিসি দাদা- মানছি তোমায়,
পানিপথ থেকে দেগঙ্গা,
হোয়াটস এ্যাপই ঘটালো সব...
উড়িয়ে সাধের তেরঙ্গা,
মা-বোনকে পাঠাস না হয়
পাকি জঙ্গীর আস্তানায়,
নগ্ন দেহ মুড়িয়ে দিস
তোদের ঘৃণার তেরঙ্গায়।
এত হাস্যকর লেখা জীবনেও পড়িনি। শ্যামাপ্রসাদকে বন্যা ত্রাণে সাহায্য করতেই বা হবে কেন (যদি ধরেও নিই যে এই অপপ্রচারগুলো সত্য)? সবার ত‘ সব কাজ করার প্রয়োজন নেই। যদি বন্যার সময় বাগানবাড়িতে বন্ধুদের সাথে পানাহারও করেন, তাতেও ক্ষতি নেই। এই শ্যামাপ্রসাদ নামে কুত্তাটা ছিল বলে ওপারের সব লুট হওয়া, ধর্ষিতা-জখম হওয়া নারী-পুরুষেরা এপাশে এসে প্রাণে বেঁচেছে।
ব্যাস, মা বোনের যাত্রাপালা নেমে গেছে :d
আইটি সেলের 70 পয়সার ছড়া তো, ঠিক ঠাক মেলাতেও পারেনি।
কি করা যাবে বাবু! হামাদের তোদের মত আরট ফিল্মো নাই। যাত্রা-পালাই সম্বল!
ওগো কবিগুরু- লিখে দাও মোরে তোমার অমর সনেটখানি!
তেরঙ্গা
আপুনাদের ভালোবাসার কবে থেকে হলো?