কৃষক আন্দোলন নিয়ে তেমন কিছু লিখিনি, কারণ সে অধিকার আমার নেই। গত দুমাস আমি শুধু নিউজ চ্যানেল আর ফেসবুক দেখে গেছি, দুচারটে পথসভা করেছি "কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে", এদিক ওদিক দুটো মিছিল, ব্যাস। কী লিখতাম আমি? আন্দোলন ভুল? আন্দোলন সঠিক? আমি, আমরা কী জেনেছি আন্দোলনের?
তাহলে আজ কেন লিখছি? কারণ লালকেল্লার ঘটনার পরে আমার বন্ধুরাও কেউ কেউ মনে করছেন কৃষক আন্দোলন শেষ হয়ে গেল - আমি তা মনে করছি না, এটা জানিয়ে রাখা প্রয়োজন মনে হয়েছে। প্রথমতঃ এটা একটা গণ আন্দোলন, এর নানা ধারা থাকবে, কেউ কেউ তথাকথিত "বিপথগামী" হবে, কেউ সরকারের পাতা ফাঁদে পা দেবে, কেউ আপোষ করবে - তারপরেও আন্দোলন টিকে থাকার ক্ষমতা রাখলে তবেই তা সত্যিকারের বিপ্লব আনবে। বিপ্লবের পথে সহস্র কাঁটা না থাকলে সে বিপ্লবের প্রয়োজনই ছিল না ধরতে হবে। ফলে একটা দুটো ঘটনায় আন্দোলন "শেষ" হয়ে যাবে না। আমরা সিঁদুরে মেঘ দেখলে ডরাই কারণ আমরা দীর্ঘদিন সত্যিকারের আন্দোলন, সংগ্রাম করিনি, শুধু কাগুজে বাঘ হয়ে থেকেছি। আমাদের অভ্যেস নেই টিকে থাকার, চরিত্রের জোর নেই।
দ্বিতীয়ত যদি শুধু ওই "বিচ্ছিন্ন" ঘটনাটুকুই ভাবি, লালকেল্লা অভিযান এবং ঝান্ডা ওড়ানো - এটাতেও আমি খুশীই হয়েছি। সম্ভবতঃ এটি সরকারী সাবোতাজ প্ল্যানের অঙ্গ হিসাবেই সাধিত হয়েছে - কিন্তু তা হয়ে থাকলে সেটা এ বিরাট ব্যাকফায়ার করেছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। প্রজাতন্ত্র দিবসে সাধারণ প্রজারা গিয়ে আইন অমান্য করে লালকেল্লায় নিজেদের ঝান্ডা উড়িয়েছে জাতীয় পতাকার নীচে - বিবিধের মাঝে মিলন মহানের এর চেয়ে বড় প্রতীকি বিজ্ঞাপন আর কী হতে পারত সেদিন? ওই বিশেষ দিনটিতে? গোদি মিডিয়া যা ই দেখাক, সরকারও অস্বীকার করতে পারছে না যে সব পতাকা জাতীয় পতাকার নীচেই ছিল, তার মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রেখেই উড়েছে বহুত্বের পতাকা। সে পতাকা "নিশান সাহিব" বলে, "যো বোলে সো নিহাল" স্লোগান উঠেছে বলে অনেকে মনক্ষুণ্ণ হয়েছেন। কেন হয়েছেন বুঝিনি। এই আন্দোলনের মুখ্যভাগে শিখ চাষীরাই রয়েছেন, আমরা অন্য কী আশা করতে পারি? সেদিনের ঘটনা উলটে সরকারকে বুঝিয়ে দিয়েছে, আমরাই শাসক। তোমরা আমাদের সেবক মাত্র। শুধু মুখে বললে হবে?
এই কৃষকেরা সম্পন্ন কৃষক অবশ্যই - এবং তাদের সেই সমৃদ্ধির মূলে আছে দেশীয় কৃষি ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা আত্মধ্বংসী সবুজ বিপ্লবের অবদান - এ কথা ভুলব না। কিন্তু এই মুহুর্তে লড়াইটা শুধুই ওদের নয় - দেশের সর্বস্তরের সব কৃষকের। প্রধান দ্বন্দ্ব কৃষি বনাম কর্পোরেট ও রাষ্ট্র। তাই এই মুহুর্তে ওরা আমাদেরই পক্ষে।
কৃষি আন্দোলনের মূল স্পিরিট অত সহজে ভাঙবে না সেটা ঘটনার দুইদিন পরে স্পষ্ট। সারা দেশ সমর্থন জানাচ্ছে এই কৃষকদের। রাজ্যজুড়ে জাঠা চলছে। আসুন পাশে দাঁড়াই। ওদের জন্য নয়, আমাদের জন্য। লেপের ওম নিয়েই না হয় দাঁড়াই।
কৃষক ছাড়া কৃষি বিল নিয়ে লেখার অধিকার নেই?
লেখাটার সাথে সর্বান্তকরণে একমত।
ধন্যবাদ কল্লোলদা। তোমার লেখাটাও পড়েছি। সম্পূর্ণ একমত।
@প্রতিভা দি, সেকথা মোটেই বলিনি। আমি জানি আমি ব্যক্তিগতভাবে কিছুই তেমন করিনি - তাই শুধু নিজের অনধিকারের কথাটাই বলেছি। বলেও তো সেই লিখেও ফেললাম। শুধু বিচারকের আসনে বসতে চাই না, এই যা
"প্রধান দ্বন্দ্ব কৃষি বনাম কর্পোরেট ও রাষ্ট্র ".
-পুরোপুরি একমত। আন্দোলন মনে হচ্ছে ঘুরে দাঁড়াবে।
রৌহিন, শুধু কৃষক নয়, এই তিনটে আইন যদি কৃষকরা না রিপিল করতে পারেন, কয়েক বছরের মধ্যে দেশজুড়ে ভয়ঙ্কর অপুষ্টি এবং খাদ্যসংকট দেখা দেবে। তার অনছক কারণ, সবথেকে বড় কারণ উষ্ণায়নের ফলে এমনিতেই দানা জাতীয় শস্যের উৎপাদন কমবে, তার সঙ্গে অসম বন্টন এবং বেসিক খাবার দাবার আন্তর্জাতিক রেটে মানুষ কিনতে বাধ্য হবে।
ঠিক বলেছেন অরিন।
খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রেএই প্রস্তাবিত মডেলের জন্যেই ওই দেশে চালু হওয়ার তিনবছরের মাথায় ফিলিপাইনসে খুব বড় খাদ্যসংকট এবং ফুড রায়ট হয়েছিল।
সতর্ক করছেন দু'জন নামজাদা ইকনমিস্ট-- ডঃ কৌশিক বসু ও উৎসা পটনায়েক।
একেবারে সহমত