পহেলে দর্শনধারী, পিছে গুণবিচারী—এ প্রাচীন প্রবচন আর যাঁদের কাছেই শিরোধার্য হোক, রসনারসিকদের কাছে যাকে বলে এক্কেবারে ‘হারাম’। ওই তত্ত্ব শিরোধার্য করলে, বাঁকুড়ায় গোবিন্দনগর বাসস্ট্যান্ডের পেছনদিকে লোহালক্কর-গাড়ি সারাইয়ের দোকানের মাঝে একখানা ঘুপচি হোটেলে সন্ধের দিকে দেবভোগ্য মালাই-টোস্ট আপনার বরাতে জুটবে না।
ঠিক তেমনটাই হওয়ার সম্ভাবনা—না কি বলব আশঙ্কা—প্রবল অওধি বিরিয়ানির খোঁজে লখনউ-এ হরেক রেস্তোরাঁয় খেয়ে বেড়িয়ে পাটনালা থানার উলটো পারে গিয়েও আপনি ইদ্রিস বিরিয়ানি নামক আধা-ঝুপড়ি দোকানটি দেখেও ঢুকতে সাহস না পেলে। কারণ সেক্ষেত্রে ভারতের অন্যতম সেরা বিরিয়ানির স্বাদ আপনার কাছে অধরাই রয়ে যাবে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বাড়তি পাঁচ নম্বর নিয়ে সকলেই ব্যতিব্যস্ত হন, এমন কিন্তু নয়—থাকলে ভালো, কিন্তু না থাকলেও কন্টেন্ট ভালো হলে বাকি পঁচানব্বইয়েই সে মেরে দিয়ে বেরোবে। কাঁচামাটির উনুনে চাপানো ডেকচিতে ফুটতে থাকা কোর্মার গন্ধ এবং দোকানের চেহারার সাথে সামঞ্জস্যহীন সুবেশ ‘পশ’-টাইপের প্রতীক্ষারত মানুষের দীর্ঘ লাইন দেখেই আপনার জহুরির চোখ (এবং নাক) ঠিক ধরে নেবে, ইদ্রিস-এর জোরের জায়গাটা কোথায়। লাইনে দাঁড়ানোটা তখন একপ্রকার প্রিভিলেজ, কেননা ঘ্রাণেণ অর্ধভোজনম, অতএব যত বেশিক্ষণ অপেক্ষা করছেন, আপনি বিনেপয়সাতেই পেয়ে যাচ্ছেন আধাবিরিয়ানি, কোর্মা, যাকে অ্যাপেটাইজার বা টিজার হিসেবে ধরে নিয়ে আপনি আরও বেপরোয়া হয়ে ডুব দিতে পারবেন আপনার হস্তগত বিরিয়ানির প্যাকেটে।
ইদ্রিস বিরিয়ানির মাটন বিরিয়ানি, মাটন কোর্মা আর শিরমাল
গবেষকদের কথা বাদ দিলে, আম বিরিয়ানিখোরদের কাছে বিরিয়ানি দুইপ্রকার—লখনউ-এর বিরিয়ানি, যাকে সকলে সাজিয়ে গুছিয়ে অওধি বিরিয়ানি বলে আর হায়দরাবাদি বিরিয়ানি। কলকাতার বিরিয়ানি প্রথমটির ভেরিয়েশন—মূল সুর একই, আলু অ্যাডেড—আরও সূক্ষ্ম কিছু বদল আছে কি না জানা নেই অবশ্য—অনেকেই বলেন, ওই আলুখানাই জাস্ট গেমচেঞ্জার, কিন্তু আমার আবার বিরিয়ানিতে আলুর উপস্থিতি অবাঞ্ছিত বলে মনে হয়। সেদিক থেকে অবশ্য আমাকে ব্যতিক্রম হিসেবেই ধরতে পারেন, কেননা বিরিয়ানির আলু ভালোবাসেন না, এমন মানুষ বিরল। সে যা-ই হোক, আমার মতো আম পাবলিকের চোখে বিরিয়ানির মুখ্য ভাগ এই দুই-ই। এ ছাড়া যে-কোনো বাঙালির মতো আমিও জানি, দেশের দক্ষিণদিকে অনেক লোকজন থাকেন, যাঁদের এককথায় সাউথ ইন্ডিয়ান বলা হয়—আগে ম্যাড্রাসি বলা হত— তাঁরাও নিশ্চয়ই বিরিয়ানি খান।
একবার কোচি শহরের এক বিখ্যাত হোটেলে ইদের পরে পরেই পৌঁছানোর সুবাদে বিবিধপ্রকার বিরিয়ানি চেখে দেখার সুযোগ হয়েছিল—যাকে বলে বিরিয়ানি ফেস্টিভাল—মোটা চালের ধ্যাবড়া ভাত আর ঝাঁঝালো মশলার মিশ্রণে সে ‘দক্ষিণ ভারতীয়’ বিরিয়ানি অতিবিরক্তিকর। বিরিয়ানি খেতে গিয়ে এর সাথে তুলনীয় বিরক্তিকর অভিজ্ঞতা বলতে গেলে, দিল্লির কনট প্লেসের ওদিকে দিল্লিদরবার নামে বহুল প্রচলিত ও জনপ্রিয় দোকানে বিরিয়ানি বলে চালানো গোটা জিরে টম্যাটোবহুল ডিশ গলাধঃকরণ করার ভয়াবহ এক সন্ধে। কাজেই, দেশের নর্থ এবং সাউথ, দুইপ্রান্তেই বিরিয়ানি খেতে গিয়ে হেনস্থা হওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে। কিন্তু, এসবই যাকে বলে গিয়ে বিসাইড দ্য পয়েন্ট। মোদ্দা কথাটা হচ্ছে, বিরিয়ানি পেলে ছাড়ার প্রশ্ন নেই—এবং ওই যে, যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখ তাই, পাইলেও পাইতে পারো বিরিয়ানি হাইফাই—মানে, আর কিছু করুন বা না করুন, সর্বত্রই আপনি বিরিয়ানি খেয়ে দেখুন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মুরগি হবেন, কিন্তু বলা তো যায় না, কোথাও না কোথাও…
বিরিয়ানির ইতিহাস-ভূগোল উৎপত্তি-বিস্তার বিষয়ে তেমন কিছু আইডিয়া আমার নেই। খাওয়ার স্বার্থে জানি, রান্নার পদ্ধতি দিয়ে ভাগ করতে চাইলে বিরিয়ানি দুইপ্রকার—কাচ্চি বিরিয়ানি ও পাক্কি বিরিয়ানি। অর্থাৎ, কাঁচা মাংস আর চাল একই সাথে রান্না হয়ে বিরিয়ানি রাঁধা হচ্ছে, না কি ভাত আর রান্নামাংস একসাথে দমে বসে বিরিয়ানিতে উত্তীর্ণ হচ্ছে। আমার ভোট দ্বিতীয়প্রকার বিরিয়ানির দিকে, কেননা কাঁচা মাংসের সাথে একসাথে রান্না হতে গেলে চালের যে সুগন্ধ, তা রক্ষা করা মুশকিল। ইনফ্যাক্ট, হায়দরাবাদি বিরিয়ানির রগরগে স্বাদের বিপরীতে অওধি বিরিয়ানির সূক্ষ্ম বহুস্তরীয় স্বাদের খেলার রহস্য ওইখানেই।
কলকাতার বিরিয়ানির কথা যদি বলেন, একটু ঝুঁকি নিয়েই বলি, ইদানীং ডিস্যাপয়েন্টিং। বিরিয়ানিতে গুঁড়ো লঙ্কা মারার আইডিয়াটা ঠিক কোত্থেকে এল, বলা মুশকিল—কিন্তু, এই ব্যাপারটা বছর কুড়ি আগে তেমনভাবে চোখে, নাকি জিভে, পড়েনি। জিশানই বলুন, বা আমিনিয়া কিংবা সিরাজ—বিরিয়ানি বলতে সাদা আর হলুদ রঙের ঝরঝরে ভাত, হালকা, মস্ত একখানা আলু, যার গভীরে পৌঁছে গেছে বিরিয়ানির রস (সে সুদিনও, হায়, বিগত—এখন বিরিয়ানির আলু বলতেই একখানা ধুমসো সেদ্ধ আলু, বাইরেটা হলদেটে হলেও, কামড় দিলে সেদ্ধ গন্ধের অতিরিক্ত কিছুই মেলে না) আর-একখানা নরম তুলতুলে মাংসের টুকরো। হ্যাঁ, বিরিয়ানি বলতে মাটন বিরিয়ানির কথাই হচ্ছে—বেসিক জায়গায় কম্প্রোমাইজ করতে শুরু করলে, চিকেন থেকে পনীরের লেভেলে অধঃপতনে আর কতটুকুই বা ফারাক!! কিন্তু, ইদানীং বিরিয়ানি বলতে দাঁড়িয়েছে রীতিমতো ঝাল ঝাল মশালাদার একটা ব্যাপার—খেতে খেতে মাঝপথে মুখ মেরে গিয়ে পুরোটা শেষ করাই চ্যালেঞ্জিং। অবশ্য, এই সাদা-কালো বিভাজনের বাইরে রাখতে হবে এই শহরেই ফতিমা মনজিলাত-এর অনবদ্য বিরিয়ানি, যাকে এককথায় শিল্পকর্ম হিসেবেও দেখা যেতে পারে।
এত গৌরচন্দ্রিকার শেষে মূল কথায় আসি--অর্থাৎ লখনউ-এ। সেবার যখন লখনউ বেড়াতে যাওয়ার কথা উঠল, বিশেষত শীতের মুখে, মন চনমনে হয়ে উঠেছে শাম্মি, গলৌটি আর বিরিয়ানির আশায়। মনে মনে ফর্দ করে ফেলেছি, কবে কোন্বেলায় কোথায় কোথায় কী কী খাব। কিন্তু, ওই যে যাকে বলে, ম্যান প্রোপোজেস, গড ডিসপোজেস। বউয়ের তরফে বেশ কিছু আত্মীয়স্বজনের বাস লখনউ-এ, স্বাধীনতার বেশ আগে থেকেই পরিবারের একটা আস্ত শাখার বসবাস সেখানে। স্বাধীনতা-আন্দোলনে তাঁদের অংশগ্রহণও বেশ সক্রিয়—এক পূর্বপুরুষ আন্দামান সেলুলার জেলে বন্দি ছিলেন অনেক বছর, দেশ স্বাধীনতা লাভ করলে তিনি মুক্তি পান—অন্ধকার কুঠুরিতে বছরের পর বছর বন্দি থেকে তখন তিনি অন্ধ, জেলের সেকুঠুরিতে তাঁর নামটি এখনও রক্ষিত রয়েছে—তাঁর পরবর্তী প্রজন্ম রয়েছেন লখনউ-এই। লখনউ যাচ্ছি শুনেই তাঁরা যে এমন আক্রমণাত্মক ধরনের আন্তরিক হয়ে উঠবেন, এমনটা আশঙ্কা করিনি। অতএব, রোজই অন্তত সন্ধেবেলা তাঁদের কারও না কারও বাড়িতে খাওয়া স্থির হল। একেবারে মর্মাহত হয়ে গেলাম। আমি আবার সূর্যাস্তের আগে বিরিয়ানির প্রতি জাস্টিস করতে পারি না। কিন্তু, এমন করে সন্ধেগুলোই যদি ছিনতাই হয়ে যায়!
কপাল ভালো। এরই মাঝে হঠাৎ করে একটা শনিবার পড়ে গেল। সবার নিরামিষ। সুযোগ বুঝে আমি বিদ্রোহ করে বসলাম—লখনউ এসে নিরামিষ খাওয়ার তুল্য মহাপাপ করতে পারব না। দুপুরে সোজা হজরতগঞ্জের দস্তরখওয়ান। একটু আপ-মার্কেট টাইপের খাবারদাবার। খারাপ লাগল না। পরোটা চমৎকার—গলৌটিও দিব্যি। কিন্তু, বিরিয়ানির দিকে গেলাম না, কেননা অন্য প্ল্যান করা আছে।
দস্তরখওয়ান, লখনও। ছবি: নীলাঞ্জন হাজরা
সন্ধে পার হয়ে রাত্তির ঘনিয়ে আসছে। হোটেল থেকে বেরিয়ে রিক্সার দিকে এগোলাম। বউকে সাথে নিইনি—ভদ্রমহিলা কলকাত্তাই, তায় ইংলিশ মিডিয়াম। আগেই জেনেছিলাম, ইদ্রিস বিরিয়ানি দোকানের চেহারা তেমন একটা ইয়ে নয়। ঝুঁকি না নেওয়াই ভালো। যে-কোনো শহরের আঁতিপাঁতির খবর রিক্সাওয়ালারাই বেস্ট জানেন, এমন একটা ধারণা ছিল, লখনউ এসে সে ধারণা ভেঙে যাওয়ার জোগাড়—দুজন জানালেন, তাঁরা নাকি ইদ্রিস বিরিয়ানি বলে কিছু চেনেনই না!! তৃতীয় রিক্সাচালক একগাল হেসে আমার দিকে তাকালেন। চেপে বসা গেল। আলো ঝলমলে থেকে প্রায়ান্ধকার, বিভিন্ন ধরনের রাস্তা ধরে এগিয়ে যেখানে নামা গেল, জায়গাটা একনজরে ভালো ঠেকল না। রাস্তাটা অল্প ভাঙা। বাঁদিকে একটু পরিত্যক্ত চেহারার একফালি জমি। বাঁদিকে একখানা ছোটো ঝুপড়ি টাইপের চায়ের দোকান। ডানদিকে পাটনালা থানা—আলোছায়ায় ঢাকা—হিন্দি সিনেমা দেখতে গিয়ে ইউপি-র থানা নিয়ে যেমন আইডিয়া হয়েছে, বাইরে থেকে একেবারেই তেমন দেখতে।
রিক্সাওয়ালা আঙুল দিয়ে ইদ্রিস বিরিয়ানির দোকানটা দেখিয়ে দিয়েছিলেন। বিশ্বাস করতে পারিনি। ভাঙাচোরা চায়ের দোকানে আর-একবার যাচাই করে নিলাম। নজরে এল, সন্দেহজনক এলাকায় আলো-অন্ধকারে বেশ কিছু দামি গাড়ি পার্ক করা আছে। ধুলো পার হয়ে দোকানের সামনে পৌঁছানো গেল। বাইরে একখানা বোর্ড—ইদ্রিস বিরিয়ানি। খবরে প্রকাশ— ১৯৬৮ সালে এ বোর্ড প্রথম ঝুলিয়ে ছিলেন মহম্মদ ইদ্রিস। বর্তমানে চালান তাঁর দুই পুত্র— মহম্মদ আবু বকর এবং মহম্মদ আবু হামজ়া। নিরাভরণ এবং নো-ননসেন্স মেনুবোর্ড ঝুলছে একপাশে। বিরিয়ানি, কোর্মা। রুটি ও শিরমাল। দোকানে দুদিকে দুটো উঁচু দাওয়া, মাঝখানে সরু একফালি ঢোকার রাস্তা। একদিকে কিছু কয়লার কাঁচা উনুন। নিবু নিবু আঁচে বড়ো ডেকচি বসানো আছে, সেখান থেকে স্বর্গীয় সুবাস ভেসে আসছে। আর-একদিকে মস্ত একখানা হাঁড়ি। মস্ত মানে সত্যিই মস্ত। কেননা, একজন মানুষ বেশ উঁচু একখানা টুলে চেপে হাঁড়ির মুখ অবধি নাগাল পেয়েছেন। পাশে অসংখ্য হলুদ রঙের পিচবোর্ডের জুতোর বাক্স—মানে, জুতোর বাক্সের মতো বাক্স। টুলে বসে থাকা মানুষটি কোনো কথা না বলে একের পর এক বাক্সে বিরিয়ানি ভরে চলেছেন।
লখনওয়ের ইদ্রিস বিরিয়ানি। ছবি: নীলাঞ্জন হাজরা
ভেতরে দেখলাম একটা (নাকি দুটো?) সরু টেবিল, সাথে বেঞ্চি। ঠাসাঠাসি করে বসে কয়েকজন বিরিয়ানি খাচ্ছেন। দোকানে ঢোকা সহজ নয়। লম্বা লাইন। আমার আগে যাঁরা, প্রত্যেকেই প্যাকেট ঝুলিয়ে বিরিয়ানি নিয়ে বেরোচ্ছেন—আগের জন ষোলো বাক্স, তার আগের জন একুশ। আশি টাকা প্লেট, যখন আমি খেয়েছিলাম। এখন দেখছি ভীষণ বেড়ে গিয়ে ১২০টাকা হয়ে গেছে!! কলকাতার বড়ো দোকানে বিরিয়ানির দাম যা, তার অর্ধেক। ভেবে দেখলাম, হোটেলের ঘরে বসে কোর্মার ঝোল ঝোল ব্যাপারটা ম্যানেজ করা মুশকিল—বাটি তো নেই কিছু। অতএব শুধু বিরিয়ানিই। দু-প্লেট নেব ভেবেছিলাম। দাম দেখে চার প্লেট নিয়ে ফেললাম।
হোটেলে ফিরে চটপট প্যাকেট খুলে ঝাঁপিয়ে পড়া গেল। বিরিয়ানির ক্ষেত্রে দক্ষ প্লেয়ারের আসল খেলা দেখানোর জায়গা ওই চাল। মাংস তো সকলেই অল্পবিস্তর ভালোই বানান। ইদানীং অবশ্য কলকাতার অনেক নামিদামি দোকানেও মাংস ভালো করে সেদ্ধ হয় না—সম্ভবত, বেশি তুলতুলে মাংস তুলতে গিয়ে ভেঙে যেতে পারে, এই আশঙ্কায়। কাঁটায় কাঁটায় গোনা মাংসের পিস নিয়ে খেলতে গেলে সে দুশ্চিন্তা অনিবার্য। ইদ্রিস বিরিয়ানি তেমন নীচ ভাবনায় বিচলিত নন। তুলতুলে মাংসের টুকরো—ছেলেবেলার আইসক্রিমের বিজ্ঞাপনের মতো, মুখে দিলে গলে যায়, আহা রে কী পুষ্টি—অল্পবিস্তর ভেঙেও গেছে নিশ্চয়ই, কেননা একাধিক ছোটো টুকরোও মুখে পড়ল খেতে গিয়ে।
কিন্তু, যে কথা বলছিলাম, ওই চাল। একদা পূর্বজন্মের কোনো সুকৃতির সুবাদে আইটিসি হোটেল গ্রুপের শেফ, বুখারা ব্র্যান্ডের স্রষ্টা ইমতিয়াজ কুরেশি-র রাঁধা বিরিয়ানি চেখে দেখার সুযোগ হয়েছিল। বিরিয়ানির ভাত তো নয়, যেন মুখের মধ্যে ভেসে বেড়াচ্ছে বীজ-ফাটা শিমুলতুলো। কিন্তু, প্রতিটি দানা সুসিদ্ধ—প্রতিটি দানা থেকে ভেসে আসছে সুবাস—চালের, এবং মশলার—একইসাথে মৃদু, কিন্তু মনমাতানো। না, কোনো মিঠা আতর ঢেলে চালাকির অপপ্রয়াস নেই—যাকে বলতে পারেন, সৎ সৃষ্টিকর্ম। প্রায় একই অনুভূতি ইদ্রিস বিরিয়ানি খেতে খেতে। প্রতিটি চালের প্রতি কোশে যেন ম্যাজিক করে বিঁধিয়ে দেওয়া গিয়েছে মশলার সুঘ্রাণ। এদিকে তেলতেলে তো নয়ই, এমন সুসিদ্ধ অথচ রীতিমতো ঝরঝরে। বিশ্বাস করুন, আড়াইজন মিলে চার প্লেট বিরিয়ানি কখন যে উড়ে গেল…
শেষে বাক্সের পিচবোর্ডে আটকে থাকা ভাত খুঁটে খুঁটে খেতে খেতে… যার মধ্যে চাল ও মশলা বাদ দিয়েও মিশে গিয়েছে অল্পবিস্তর পিচবোর্ডের গুমো গন্ধ… ভাবছিলাম, লখনউ-এ যাঁরা থাকেন, তাঁদের আশ্চর্য সৌভাগ্যের কথা… হাতের নাগালেই ইদ্রিস বিরিয়ানি… অবশ্য, হাতের নাগালে থাকলে যা হয়, সে অন্য প্রবচন—ঘরকি মুর্গি দাল বরাবর!!
পড়ডে পড়তে জিভে জল এসে গেল
না বিষাণ,তুমি পেটুক নও।ভোজনরসিক ই বটে।
একজন চিত্রশিল্পী যখন সুখাদ্যের হদিস দিতে লেখার মাধ্যমে ছবি আঁকেন তখন সুরন্ধনের মতো সেই অনুপম রচনাও মনোগ্রাহী শিল্প-কর্ম হয়ে ওঠে। পারলে এই মুহূর্তে ললখনউয়ে গিয়ে হাজির হতাম।
উলস!
লখনৌ গেলে নিশ্চয় চেখে দেখবো !! ভালো লাগলো পড়ে !! কিছুটা মনের জোরে ।..কিছুটা স্ত্রীর হাত ধরে (হার্ট পেশেন্ট তো ) ।..অনেকটা আশা নিয়ে ।..নোলা টা শান দিয়ে ।.যাবো খন ট্রেনে চড়ে ।..যোগী রাজ্যের লখনৌ গড়ে !!!গলৌটি কাবাব , আহঃ ।..রুমালি রুটি ওহঃ ।..আউধ বিরিয়ানি ।..ইঃইঃ ।..একটু বাখরখানি ।...সঙ্গে মটন রেজালা ।..উহুঁহু ।..জিভে এলো জল ।..চল ।.চল ।.চল !!!লখনৌ চল !!!!!
সুরুৎ করে জিভের জল টানলাম। লেখায় যে এত লোভ বাড়ে, এই লেখাটা পড়ে বুঝলাম। বিরিয়ানি বিলাস একটা স্বর্গীয় ব্যাপার, স্বর্গ থাকুক বা না থাকুক !!
লোভা দেখিয়ে ছেড়ে দিলি বিষাণ! আজ আবার বাড়িতে নিরামিষ। ভগবান(!) তোর বিচার করবেন।
জব্বর! ভোজ কয় যাহারে
এসব লেখাও পাপ। পাঠকের উপর অত্যাচার হয় রীতিমত। সে যাক গে, আঙুলের ফাঁকে লেগে থাকা হলদেটে চালের অন্তিম দানার স্বাদটুকুর মতো চেটেপুটে খেলাম।
এমন করে বিরিয়ানি র শৈল্পিক বর্ণনা
ভারী ঝরঝরে আর সুস্বাদু লেখা!
জিভে জল আনা লেখা। অসাধারণ কাব্যিক বর্ণনা।
কলকাতায় ফতিমা মনজিলাতের ঠিকানা জানান, আপাতত সেটা চেখে আসি। তারপর লখনৌ এর লক্ষ্য।
Manzilat's
Plot-I, Phase-III Kasba Industrial Estate,
Kolkata 700107
India
Call To Order or Book:
+91 9432913204
Alt. Mobile: +91 9831011766
Landline. 033-24436648
অসম্ভব স্বর্গীয় অনুভূতি আর উপস্থাপনা , যদিও স্বর্গ এর প্রতি অবিশ্বাসী হয়েও। চুপিচুপি বলি, মাত্র ১৩ বছর মুম্বাইয়ের টাটা মেমোরিয়াল ব্যতীত লক্ষ্নৌ যাওয়া হয় নি, আর হবেও না, নিশ্চিত। বড়, উত্তেজক , সুস্বাদু পরিবেশনা।