দেশ এবার মুজিব জন্মশত বর্ষ পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। পুরো দেশ এই প্রস্তুতিতে অংশ নিয়েছে। ক্ষণ গণনা শুরু হয়েছে ১০ জানুয়ারি থেকে। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস থেকে। ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে বিশেষ আয়োজন থাকবে এবার। ওই বিশেষ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঢাকায় আসবেন বিশ্বের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব৷ কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ, সংযুক্ত আরব আমিরাতের যুবরাজ জায়েদ আল নাহিয়ান, ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, ভারতের কংগ্রেস দলের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন-সহ অনেকেই থাকবেন সেদিনের অনুষ্ঠানে৷ এত এত বিশেষ ব্যক্তিত্বের ভিতরেও বাংলাদেশ সরকার ওই অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা হিসেবে রেখেছেন নরেন্দ্র মোদীকে। ভারতেরে প্রধানমন্ত্রীকে এই বিশেষ সম্মান সরকার দিচ্ছে।
প্রশ্ন হচ্ছে নরেন্দ্র মোদী এই সম্মানের যোগ্য কী? নরেন্দ্র মোদীর মুখে বঙ্গবন্ধুর প্রশংসা সূচক বক্তব্য কি বঙ্গবন্ধুর সম্মান বৃদ্ধি করবে? গত কয়েকদিনের ঘটনা প্রবাহের পরেও তা বলা যায়? আমি তা মনে করি না। ভারত যতই বলুক এগুলো তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়, তা মেনে বসে থাকার উপায় অন্তত বাংলাদেশের আছে বলে মনে হয় না। সিএএ কার্যকর হলে বাংলাদেশের ওপরে এর প্রভাব পরবে না, এই কথা পাগলেও বিশ্বাস করবে না। কিন্তু সরকার তাই বিশ্বাস করতে চায়। তাই প্রধান বক্তা হিসেবে মোদীকে বেছে নেওয়া হয়েছে। এর পিছনে বন্ধুত্ব, রাজনীতি অনেক কিছুই থাকতে পারে। কিন্তু সাধারণ দৃষ্টিতে কেন এখনো মনে হচ্ছে না এবার একটু শক্ত হওয়া উচিত সকলের?
মোদী সরকার এই কয়েকদিনে যা করেছে তাতে এখন সময় হয়েছে তাকে একটা বার্তা দেওয়া যে একক ভাবে তিনি যা ইচ্ছা তা করতে পারেন না। যে নেতার শততম জন্মদিনের জন্য অনুষ্ঠান আয়োজন করা হচ্ছে তিনি এই পরিস্থিতিতে কী করতেন? সদ্য রক্তে রাঙান হাত নিয়ে কেউ মিষ্টি মিষ্টি কথা বলবে তা তিনি মেনে নিতেন? আমার মনে হয় না। দিল্লী জ্বলছে, মানুষ মারা যাচ্ছে। হয়ত এখনকার মত ঠাণ্ডা হবে দিল্লী, হয়ত আগুণ নিভবে এবারের মত। কিন্তু বিজেপি যে পথে চলা শুরু করেছে তার কি পরিবর্তন হবে? বিজেপি সিএএ কার্যকর করবে যে কোন মূলে। যেমন এক রাতের মধ্যে কাশ্মীরকে পকেটে নিয়ে নিয়েছে তারা। অঘোষিত কারফিউ চলছে এখনো কাশ্মীরে। কবে বা আদ্যও কাশ্মীর শান্ত হবে কী না তা বড় প্রশ্ন এখন। এই সকলের মূল হোতা মোদীকে এই মুহূর্তে এমন একটা আয়োজনের প্রধান বক্তা করলে পুরো বিশ্বের কাছে একটা ভুল বার্তা যাবে। প্রকারন্তরে মোদীকে সাহায্য করা হবে, তার হাতকে করা হবে শক্তিশালী। এখন আন্তর্জাতিক চাপ দেওয়ার সময় এসেছে। আমাদের অবস্থান থেকে অবশ্যই এই প্রচেষ্টা করা দরকার। গত ১২ ডিসেম্বর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারত সফর বাতিল করে একটা প্রচ্ছন্ন একটা চাপ দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিল সরকার। যদিও দিল্লী আমলে নেয়নি এই প্রচেষ্টাকে। বাংলাদেশও মুখে বলেনি যে এই কারণেই বাতিল করা হয়েছে সফর। কিন্তু তখন তা পরিষ্কার ভাবেই বুঝা গিয়েছিল কেন সফর বাতিল করেছিল এ কে আব্দুল মোমেন।
এনআরসি বা সিএএ বাস্তবায়ন হলে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় থাকবে না আর। এই সত্যটা সবার আগে বুঝতে হবে। যদি এই সত্য পরিষ্কার ভাবে বুঝা যায় তাহলে এখন মোদীকে না করলে কী হবে? ভারতের প্রধানমন্ত্রী না থাকলে অকৃতজ্ঞ হয়ে যাব আমরা, ব্লা ব্লা ব্লা বকার কথা ভাববে না কেউ। সমস্যা হচ্ছে বেশ কয়েক বছর ধরে ভারতের প্রতি আমাদের এত নির্ভরশীলতা জন্ম নিয়েছে যে মোদীকে না করবে এমন সৎ সাহস সম্ভবত আমাদের আর নাই। কোমরের জোর যাদের ছিল তাদের আমরা বহু আগেই গুলি করে মেরে ফেলেছি। এরপর আর চোখে চোখ রেখে কথা বলার মত নেতৃত্ব আমাদের আর নেই। এক পক্ষ কারণে অকারণে ভারত বিরোধী কার্ড খেলে, আরেক পক্ষ কারণে অকারণে ভারতকে তেল মেরে চলে।
তবুও শেখ হাসিনার প্রতি পূর্ণ আস্থা রেখে আশা করছি যে মোদীর আমন্ত্রণ যদি বাতিল না করা যায় তবে অন্তত প্রধান বক্তার সম্মানটুকু কেড়ে নেওয়া হবে। বঙ্গবন্ধুর নামে সাথে এই জল্লদের নাম কোন মতেই যায় না। বঙ্গন্ধুর নামের প্রতি সম্মান রেখেই এই কাজ করা উচিত। আরব রাষ্ট্র গুলোর প্রবল চাপের মুখেও বঙ্গবন্ধু দেশকে ধর্মনিরপেক্ষ থেকে ইসলামিক প্রজাতন্ত্র বানায় নাই। আর এই মোদী একটা হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন পণ করে নেমেছে। কাজেই মোদী কোনমতেই জন্মশত বার্ষিকীর অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা হতে পারে না। মোদী ২০০০ সাল গুজরাটে সকল মানুষের মুখ্য মন্ত্রী হতে পারেনি, তিনি ২০২০ সালে এসে ভারতের সকল জনগণের প্রধানমন্ত্রীও হতে পারেনি।এই মোদী বাংলাদেশে স্বাগত না। মুজিব জন্মশত বার্ষিকীতে নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদীকে আমরা চাই না
"তবুও শেখ হাসিনার প্রতি পূর্ণ আস্থা রেখে আশা করছি যে মোদীর আমন্ত্রণ যদি বাতিল না করা যায় তবে অন্তত প্রধান বক্তার সম্মানটুকু কেড়ে নেওয়া হবে।"৷
কাঁঠালের আমসত্ত্ব নাকি? হাসিনা সরকারের সবচেয়ে বড় বন্ধু মোদি।
"কিন্তু শেষ পর্যন্ত চাইতে হবে শেখ হাসিনার কাছেই। যদি কিছু করার থাকে তা শেখ হাসিনাই করতে পারে বা করবে।"
মাফ করবেন। এই ভক্তিবাদে আমি অন্ততঃ বিশ্বাসী নই। এই সরকারের কাছে উন্নয়নের ফিরিস্তি ছাড়া আর প্রাপ্তি কী?