১৯৭৮ থেকে ২০১৯র - আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যনীতির রূপান্তর, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এবং আমাদের ভারতবর্ষ - দ্বিতীয় পর্ব : ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | ২১৩৯ বার পঠিত
ডেভিড ওয়ার্নার যখন ১৯৬০-৭০-এর পশ্চিম মেক্সিকোতে হতদরিদ্র জনজাতির মাঝে একেবারেই স্থানীয় সম্পদ ও জনতাকে ব্যবহার করে স্বাস্থ্যের বোধ ও এর জন্য আন্দোলন গড়ে তুলছেন তখন তাঁকে সম্মিলিত ল্যান্ড ব্যাংক-ও গড়ে তুলতে হচ্ছে দারিদ্র্যের মাত্রা হ্রাস করার জন্য। সেসময়ে তাঁর স্বাস্থ্য আন্দোলনের বৃহৎ প্রতিবন্ধক হয়ে উঠছে নাফটা বা North American Free Trade Agreement। নাফটা মেক্সিকো সরকারকে চাপ দিচ্ছে যাতে এদের বীজ ও প্রযুক্তি অবাধে ব্যবহার করা যায়। এবং এ ঘটনা ঘটাতে পারলে জমি ব্যাংক উঠে যাবে, কৃষক আবার ঋণের জালে জড়াবে, প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অস্তিত্বও থাকবে না। এরকম সহজবোধ্য কারণে জীবনের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অনুষঙ্গের মাঝে বিভাজন রেখা টানা নয়া অর্থনীতির প্রবক্তাদের জন্য খুব জরুরী হয়ে পড়ে। সাম্প্রতিক সময়ের একটি প্রবন্ধে মন্তব্য করা হয়েছে যে আমেরিকা ইরাকে যুদ্ধের জন্য ১০০ বিলিয়ন ডলার খরচ করতে প্রস্তুত, কিন্তু এইডস, যক্ষা এবং ম্যালেরিয়ার মোকাবিলার জন্য তৈরী Global Fund-এ মাত্র ১০০ মিলিয়ন ডলার দেয়।
১৯৭৮ থেকে ২০১৯র - আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যনীতির রূপান্তর, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এবং আমাদের ভারতবর্ষ - প্রথম পর্ব : ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | ১৪৪৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
১৯৫০-৭০-র দশক জুড়ে বিশ্বরাজনীতিতে দ্বিমেরু বিশ্বের জীবন্ত উপস্থিতি ছিল। প্রবল পরাক্রান্ত, আগ্রাসী ও মুক্ত পুঁজি এবং সাম্রাজ্যবাদের মুখোমুখি দাঁড়ানোর মতো ভিন্ন একটি আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার অস্তিত্ব – সমাজতান্ত্রিক বলে যার উপস্থিতি ছিল জনমানসে। দ্বিমেরু বিশ্বের উপস্থিতির জন্য রাজনৈতিক এবং সামাজিক একটি পরিসর তৈরি হয়েছিল যাকে বলতে পারি “তৃতীয় পরিসর”। বিশ্বের মানুষের স্বাভাবিক আশা-আকাঞ্খা এবং দাবী নিয়ে দর কষাকষির ক্ষমতা বেশি ছিল। পরবর্তীতে একমেরু বিশ্বের উদ্ভব এসবকিছুকে পরিপূর্ণভাবে বিনষ্ট করে দেয় – আজকের ভারত এর একটি প্রোজ্জ্বলন্ত উদাহরণ। এ সময়েই পৃথিবী জুড়ে শ্লোগান উঠেছিল – স্বাস্থ্য আমার অধিকার। আবার অন্যদিকে তাকালে প্রান্তিক অশিক্ষিত বুভুক্ষু মানুষের কাছে শিক্ষা এবং বই পৌঁছে দেবার আন্দোলন, শিক্ষার অধিকারের আন্দোলন জনচেতনায় চেহারা নিচ্ছিল। এর উদাহরণ লাতিন আমেরিকায় পাউলো ফ্রেইরে-র আন্দোলন। ব্রেখটের সেই বিখ্যাত ুক্তি যেন নতুনভাবে জন্ম নিল – “ভুখা মানুষ বই ধরো, ওটা তোমার হাতিয়ার”।
ভারত রাষ্ট্রের স্বাস্থ্যনীতি ও সাধারণ নির্বাচন – আমজনতা কোথায় দাঁড়িয়ে : ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২১ এপ্রিল ২০১৯ | ১২৫৭ বার পঠিত
এ ভোটের বর্ণময় উৎসবে কি চাইবো আমি? কিই বা চাইতে পারে আমার মতো এককসত্তাসম্পন্ন, রাজনৈতিক- প্রশাসনিক-সামরিক ক্ষমতাহীন একজন মানুষ? চাইতে পারে “আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে”, নিদেন পক্ষে ফ্যানে-ভাতে। চাইতে পারে নদী-অরণ্য-বৃক্ষ-অরণ্যের সন্তানদের হত্যা বন্ধ হোক। আবার প্রায়-মৃত নদীগুলো বেগবান উঠুক। নদী মরে যাচ্ছে বলে খোদ আমেরিকায় ১৫০০-এর বেশি বাঁধ ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে, ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। কলোরাডোর সহ অনেক ছোট নদী আবার বেগবান হয়ে উঠেছে, হারিয়ে যাওয়া মাছ আর শৈবালেরা ফিরে আসছে ধরিত্রীর বুকে। এই সাধারণ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর বিস্তর ঢালাও প্রতিশ্রুতির বন্যায় আমরাও একটু-আধটু চাইতে পারি। চাইতে পারি জীবন যাত্রার সুস্থ-স্বাভাবিক সমস্ত ধরনকে রাষ্ট্র এবং এর পরিচালকেরা মমতা নিয়ে স্বীকৃতি দিক। কোন একটি name tag-এ যেন তাদের দাগিয়ে দেওয়া না হয়। হাঙ্গর সদৃশ কর্পোরেটরা নয়, ভারতের অর্থনীতি নির্মিত হোক নিজস্ব সম্পদ ব্যবহার করে।
রাষ্ট্র-অতি রাষ্ট্র, নাগরিক-অনাগরিক, ফ্যাতাড়ুরা এবং ‘অপ্রাসঙ্গিক’ বিদ্যাসাগরঃ একটি কষ্টকল্পিত মনোলগ : ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২১ মে ২০১৯ | ১৩৫১ বার পঠিত
বিভিন্ন সময়-চিহ্নের স্থায়ী ছাপ নিয়ে যে রাজনৈতিক স্বাধীনতা এবং একক ব্যক্তির একক ভোটাধিকার চালু হলো সেগুলো মূলত সমাজের উপরের স্তরের ক্ষমতা চিহ্ন। এরকম এক ঐতিহাসিকতায় প্রধানত কৃষিসম্পর্কে আবদ্ধ শতকরা ৮০ ভাগ মানুষকে নিয়ে গড়ে ওঠা নতুন ভারতীয় জাতি-রাষ্ট্রে মডার্নিটি বা আধুনিকতা প্রকৃত অর্থে engrafted হয়ে যায়, ঐতিহাসিকভাবে সামাজিক পরিবর্তন ও গতিশীলতার (social and historical dynamics) নিয়মে জন্ম নেয় না। রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যক্তি-সমাজ-কৌম-রাষ্ট্র-নাগরিকতার যে সম্পর্ক নতুন করে রচিত হয় ১৯৪৭ পরবর্তী ভারতবর্ষে তা প্রায়-সম্পূর্ণ ব্রিটিশ রাজনৈতিক সংবিধানের ধারায় তৈরি হওয়া। বিশেষ করে আমরা যদি দুটি বিষয় একবার স্মরণ করে নিতে পারি – (১) ভারতের উপনিবেশ-বিরোধী আন্দোলনের প্রধান মুখ স্বয়ং গান্ধী তাঁর নিজের জীবনের ক্ষেত্রে একাধিকবার দুটি passion-এর কথা বলেছেন। প্রথমটি হল ব্রিটিশ সংবিধান (Pax Britannica-ও বটে) এবং দ্বিতীয়টি নার্সিং বা শুশ্রুষা। (২) প্রধানত শিল্প বিপ্লবোত্তর ইউরোপে সমাজ এবং কৌমের ধারণা খসে গেছে প্রায় ৩০০ বছর জুড়ে। নাগরিক ও রাষ্ট্রের মাঝে সরাসরি সম্পর্ক – অধিকার এবং কর্তব্যের বাঁধনে, cash nexus-এর প্রবল উপস্থিতিতে। এখানে মধ্যস্থতাকারী কোন সামাজিক পরিসর নেই, যা আছে তা নাগরিক পরিসর বা সিভিল স্পেস। ডেমোক্রাসির স্বর্ণযুগে কিংবা সামাজিক পরিসরের সবল, জোরালো উপস্থিতির সময় আধুনিকতা নির্মিত নাগরিকতার ভাষ্য ছাড়াও আরও অনেক স্বর, কণ্ঠ, আত্মপ্রকাশ করে – indiscernible থেকে discernible হয়ে ওঠে, invisibility থেকে visibility-র স্তরে উঠে আসে।
আমাদের চেনা ভূতদের উৎসব-চতুর্দশী এবং হ্যালোউইন উৎসব : ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২০ নভেম্বর ২০১৯ | ১৬৩৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
লোকায়ত প্রভাবের জন্য অথর্ব বেদে অসুর, প্রেত ইত্যাদির প্রাধান্য ছিল। এজন্য এসময় অব্দি প্রধানত ছিল আয়ুর্বেদ ছিল “দৈব ব্যাপাশ্রয় ভেষজ”। পরবর্তীতে বৌদ্ধধর্মের প্রভাবে এবং আরো অন্যান্য আনুষঙ্গিক কারণে আয়ুর্বেদে ধীরেধীরে ত্রি-দোষ তত্ত্ব এলো – বায়ু, পিত্ত ও শ্লেষ্মা। এ তত্ত্বে রোগের উদ্ভব দেহের অভ্যন্তরে বলে বিবেচিত হল, কোন ভূত-প্রেত বা অজানা শক্তির বাহ্যিক প্রভাবে নয়। উত্তরণ ঘটলো “যুক্তি ব্যাপাশ্রয় ভেষজ”-এ। এখানে বায়ু, পিত্ত ও শ্লেষ্মার প্রকোপ হ্রাস ও বৃদ্ধির সাথে খাদ্য ও অনুপানের নিবিড় সম্পর্ক চিকিৎসকেরা গভীরভাবে অনুধাবন করলেন। উদ্ভিদ জগতের প্রায় সমস্ত ভক্ষ্য বস্তুর মধ্যে এই শাকগুলোও ছিলো। (প্রসঙ্গত উল্লেখ করতে হবে, প্রাণীজ ঔষধির মধ্যে মোষ, গরু, বরাহ, ময়ূর, খরগোশ, বেজি ইত্যাদি সমস্ত প্রাণীর মাংস খাবার নির্দেশ রয়েছে চরক সংহিতায়, বিভিন্ন রোগ সারিয়ে তোলার জন্য।) লৌকিক বিশ্বাসে কিছু উদ্ভিজ খাদ্য দেহের উপকারের জন্য গৃহীত হল। পিতৃপুরুষের মঙ্গলকামনায় এবং খারাপ ভূতদের তাড়ানোর জন্য এরা প্রচলিত হল ১৪ শাক হিসেবে।
ডাক্তারি পড়ুয়াদের বর্তমান আন্দোলন ২০১৯ – দিগন্ত ছাড়িয়ে নতুন ভূমিতে : ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৫ জুন ২০১৯ | ৩৬১১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩৯
সমাজতত্ত্ব, রাজনৈতিক-অর্থনীতি বা পোলিটিক্যাল সায়ান্সের সামান্য পাঠও আমাদের অবহিত করে যে সামাজিক অনিশ্চয়তা, অর্থনৈতিক সুরক্ষা বা চাকরির সম্ভাবনাহীনতা যখন প্রাধান্যকারী জায়গায় থাকে তখন একদিকে জনমোহিনী রাজনীতির সামান্য অনুদানও জনসমাজ খড়কুটোর মতো আঁকড়ে ধরতে চায়, আবার অন্যদিকে শূণ্যদিশা জনসমাজের প্রবল ক্ষোভ এবং অপূর্ণতা mob violence বা গণহিংসার চেহারা নিয়ে আছড়ে পড়ে। স্মরণ করতে পারি সত্যজিতের “জনঅরণ্য”, মৃণালের একাধিক ছবি, শ্যাম বেনেগাল বা গোবিন্দ নিহালনি-র বিভিন্ন চলচ্চিত্রের কথা। আমরা দেখেছি নিস্ফলা ক্রোধ এবং আক্রোশ কিভাবে জনসমাজে প্রতিবিম্বিত হয়। এখানে ডাক্তারকে স্থাপন করলে দেখবো সে একজন সফল, ঈর্ষণীয়ভাবে স্বচ্ছল এবং ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষ। এর বিপরীতে রোগীটি আর্ত, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উপযুক্ত সম্বলহীন এবং ক্ষমতাকেন্দ্র থেকে দূরে থাকা একজন ব্যক্তি মানুষ। একদিক থেকে দেখলে এ দ্বন্দ্ব ক্ষমতা এবং ক্ষমতাহীনতার মধ্যেকার দ্বন্দ্বও বটে। কিন্তু ক্ষমতাসম্পন্ন হলেও একজন আমলা বা পুলিস বা শিল্পপতি বা রাজনৈতিক নেতার সাথে ডাক্তারের পার্থক্য হল একজন আমলা বা পুলিস বা রাজনৈতিক নেতা সরাসরি ক্ষমতাকেন্দ্রের অংশীদার, এর উপাদান। একজন শিল্পপতি বহুলাংশে এদের নিয়ন্ত্রক। কিন্তু একজন ডাক্তার বা স্বাস্থ্যকর্মী ক্ষমতাকেন্দ্রের সাথে যুক্ত নয়। এবং এ অর্থে “ক্ষমতাচ্যূত”, ফলে এরা জনরোষের ক্ষেত্রে একটি soft target যাকে সহজেই আক্রমণ করা যায়, নিজেদের প্রবল ক্ষোভকে সহজে উগড়ে দেওয়া যায় এদের ওপরে।
বিজ্ঞান ও অনুসন্ধান – স্বাধীন নির্মোক, পরাধীন গবেষণা : ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | ১৪ জুন ২০১৯ | ২৮৭৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দিয়ে যুদ্ধ জয় করা যায়, উপনিবেশ গড়া যায়। কিন্তু তা দীর্ঘকালীন হবার সম্ভাবনা কম। বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চোখে আঙ্গুল দিয়ে এ সত্যকে দেখিয়ে দিয়েছে। ফলে মানসিক, বৌদ্ধিক ও চিন্তার উপনিবেশ তৈরি করাও সমধিক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলো। পরিণতিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং চিন্তার ইতিহাস সংক্রান্ত তত্ত্ব নির্মাণেরও কারখানা হয়ে গেলো। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, এডওয়ার্ড সইদ তাঁর সুবিখ্যাত বহু আলোচিত Orientalism গ্রন্থে দেখিয়েছেন কি বিপুল পরিমান অর্থের বিনিয়োগ হয়েছে শুধুমাত্র ওরিয়েন্টালিজম-এর ধারণা নির্মাণের জন্য। আমাদের জন্য এ আলোচনায় এটা খুব প্রাসঙ্গিক নয়। শুধু উল্লেখমাত্র।
আরোগ্য-নিকেতন – নাড়ীবিদ্যা, আধুনিক চিকিৎসা ও জ্ঞানতাত্ত্বিক সংগ্রামের এক আখ্যান : ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ | ২০২৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
মেডিসিনের মানুষমুখী, মানুষের রোগ-মুখী নয়, হয়ে ওঠার জন্য আমরা পুনরায় পাঠ করছি “আরোগ্য-নিকেতন” ২০১৯ সালে! আরোগ্য-নিকেতন উপন্যাসে জনস্বাস্থ্যের কথা নেই, বরঞ্চ রয়েছে ব্যক্তি রোগীর চিকিৎসার কথাই। কিন্তু কেন্দ্রীয় চরিত্র জীবন মশায় এবং তাঁকে ঘিরে থাকা মানুষেরা এমনভাবেই সমাজে নোঙ্গর ফেলে আছে যে সমাজ-স্থিত ব্যক্তির চিকিৎসার মধ্য দিয়ে জনস্বাস্থ্যেরও একটি রেখাচিত্র, ionchoate চেহারা ধরা পড়ে।
“আয়ুষ্মান ভারত” – ভারতীয় জনতা কি আয়ুষ্মান হবে? : ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৪ জুলাই ২০১৯ | ১২৯৪ বার পঠিত
এবারেরে বাজেটে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন স্বাস্থ্য নিয়ে প্রায় কোন উল্লেখই করেননি। কেবলমাত্র ব্যতিক্রম হিসেবে স্বাস্থ্যবান সমাজের কথা উল্লেখ করেছেন, উল্লেখ করেছেন আয়ুষ্মান ভারতের কথা বা যাকে আরও ব্যাখ্যা করে বললে আয়ুষ্মান ভারত–প্রধান মন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা বা AB-PMJAY বলা হচ্ছে (আমরা এরপরে এ প্রবন্ধে আয়ুষ্মান ভারত বা AB-PMJAY বলে উল্লেখ করবো)। উল্লেখ করেছেন সুপুষ্ট শিশু এবং মায়েদের কথা। New England Journal of Medicine (NEJM)-এ ২৩ মে, ২০১৯, সংখ্যায় “Getting Coverage Right for 500 Million Indians” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধের বক্তব্য অনুযায়ী ভারতে স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে যে সংস্কার করা হয়েছে তার দুটি স্তম্ভ – (১) দরিদ্রতম (আগেকার অবস্থা যাই থাকুকনা কেন) ৫০ কোটি ভারতবাসীর জন্য স্বাস্থ্য বীমা যার পরিমাণ প্রতিটি পরিবারের জন্য প্রতিবছর ৭,০০০ ডলার বা ৫০০,০০০ টাকা, (২) যেসব সুযোগ-সুবিধে বর্তমানে রয়েছে সেসবের রূপান্তর ঘটিয়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্যের জন্য পুনর্বিনিয়োগ করা হচ্ছে, যার নতুন পোষাকি নাম হচ্ছে “Health and Wellness Centers” (HWC) তথা স্বাস্থ্য ও সুস্থতার কেন্দ্র। ১,৫০,০০০ HWC খোলা হবে ভারত জুড়ে। স্বাস্থ্যব্যবস্থার জন্য যেসব সাবসেন্টার বা SC ছিলো সেগুলোকে HWC-র স্তরে উন্নীত করা হবে।
নোভেল করোনা ভাইরাস – আন্তর্জাতিক আতঙ্ক ও বাণিজ্যের এক নতুন নাম : ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | খবর : টাটকা খবর | ১৯ মার্চ ২০২০ | ১১৬৯২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৬
১৬ মার্চ হু-র ডিরেক্টর জেনারেল এখনও আমরা যে জায়গায় উপযুক্ত ফোকাস করতে পারছিনা সেদিকে দৃঢ়ভাবে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন –
(১) টেস্টের সংখ্যা আরও অনেক বাড়ানো,
(২) আক্রান্ত এবং সন্দেহভাজন আক্রান্তকে আলাদা/বিচ্ছিন্ন করে রাখা, এবং
(৩) যারা আক্রান্তের সংস্পর্শে এসেছে তাদের খুঁজে বের করা। তাঁর ভাষায় - Social distancing measures can help to reduce transmission and enable health systems to cope... But the most effective way to prevent infections and save lives is breaking the chains of transmission. And to do that, you must test and isolate. তাঁর সর্বশেষ আহ্বান - Once again, our key message is: test, test, test. হু-র তরফে ১২০টি দেশে দেড় কোটি টেস্ট কিট পাঠানো হয়েছে। ডিরেক্টর জেনারেল স্মরণ করিয়েছেন, এরকম সংকটের সময়েই মানুষের মহত্তম এবং কুৎসিৎতম দুটি চেহারাই ধরা পড়ে।
ক্রম-উন্মোচিত করোনা – বায়োলজি, নিওলিবারাল অর্থনীতি এবং আমরা : ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০২ এপ্রিল ২০২০ | ৭৩৮৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
আইএমএফ এবং ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের চাপে প্রতিটি দেশের, বিশেষ করে গরীব দুর্বল ও ছোট দেশগুলোতে, জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙ্গে গেছে। এর জায়গা নিয়েছে কর্পোরেট হেলথ সেক্টর যেখানে স্বাস্থ্য নেই, রয়েছে বহুমূল্যে কেনা স্বাস্থ্য পরিষেবা। এ কারণে আফ্রিকার দেশগুলোতে এবোলা মহামারির চেহারা নিয়েছিলো যখন তখন স্বাস্থাকর্মীদের বেশিরভাগের কাছে একটি গ্লাভস কিংবা মাস্কও ছিলো না। এখনো ইতালি, স্পেন, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, আমেরিকার মতো দেশে জনস্বাস্থ্য উপেক্ষিত হবার বিষময় ফল ২০২০-র পৃথিবী দেখছে।
সার্স-কোভ-২ তথা করোনার ভ্যাক্সিন এবং আনুষঙ্গিকতা : ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৮ এপ্রিল ২০২০ | ৪২৬৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
এখনো অবধি করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কোন ধাপেই কোন নির্দিষ্ট চিকিৎসা আবিষ্কৃত হয়নি। অতি মারাত্মক ক্ষেত্রে কিছু ক্ষেত্রে শোনা যাচ্ছে সার্স, এইচআইভি-তে ব্যবহৃত অ্যান্টি-ভাইরাল ড্রাগ এবং ক্লোরোকুইন বা ক্লোরামফেনিকলের মতো অ্যান্টিবায়োটিকের সম্মিলিত প্রয়োগ ফল দিচ্ছে। কিন্তু ১৮ মার্চ, ২০২০-তে নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন-এ প্রকাশিত ট্রায়াল রিপোর্ট (র্যান্ডমাইজড, কন্ট্রোলড, ওপেন লেবেল ট্রায়াল) “A Trial of Lopinavir-Ritonavir in Adults Hospitalized with Severe Covid-19” জানাচ্ছে - In hospitalized adult patients with severe Covid-19, no benefit was observed with lopinavir–ritonavir treatment beyond standard care. ... কিন্তু যতক্ষণ না একটি ওষুধ র্যান্ডমাইজড, কন্ট্রোলড, ওপেন লেবেল ট্রায়ালের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তাকে মান্যতা দেওয়া মুশকিল। যদিও চরম আতঙ্কের সময়, পরম আর্ততার মুহূর্তে মানুষ যেকোন অবলম্বনকে আঁকড়ে ধরে – এমনকি গোমূত্রও!
মন্বন্তরে মরি নি আমরা মারী নিয়ে ঘর করি : ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১১ এপ্রিল ২০২০ | ৬৫৭৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১২
স্মল পক্সের টিকা দেবার একটি দেশজ পদ্ধতি যাকে চিকিৎসার পরিভাষায় ভ্যারিওলেশন বলা হত তা ভারতের মূলত গ্রামীণ অঞ্চলে এবং শহরাঞ্চলেও চালু ছিল। এমনকি উপনিবেশিক রাষ্ট্রের তরফেও এ পদ্ধতিকে একটি সময় পর্যন্ত উৎসাহিত করা হয়েছে। জেনারের আবিষ্কৃত টিকা (ভ্যাক্সিনেশন) ভারতে আসার পরে এ চিত্র আমূল বদলে যায়। ১৮০২ থেকে ১৮০৪ সালের মধ্যে ১৪৫,০০০ মানুষকে ভ্যাক্সিন দেওয়া হয়। ১৮০০ থেকে ১৮০২ সালের মধ্যে ভ্যারিওলেশনের সংখ্যা ২৬,০০০, অর্থাৎ ভ্যাক্সিনেশনের এক-চতুর্থাংশ। ভ্যারিওলেশন বনাম ভ্যাক্সিনেশনের লড়াই একাধিক বিষয়কে সামাজিক এবং রাষ্ট্র পরিচালনার স্তরে প্রতিষ্ঠিত করল – প্রথম, ইউরোপীয় শ্রেষ্ঠত্ব এবং ঔকর্ষ এতদিন সীমাবদ্ধ ছিল সার্জারিতে, এবার সেটা প্রসারিত হল মেডিসিনের জগতে; দ্বিতীয়, সবাইকে সার্বজনীন ভ্যাক্সিনেশনের আওতায় আনার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র ভারতীয় দেহের ওপরে এর অধিকার প্রতিষ্ঠা শুরু করল; তৃতীয়, রাষ্ট্রের নজরদারির বাইরে কেউ থাকতে পারবেনা এই দার্শনিক অবস্থান রাষ্ট্রিক নীতির চেহারা নিল; চতুর্থ; রাজা এবং প্রজার সম্পর্ক ধীর অথচ অমোঘ গতিতে রাষ্ট্র এবং নাগরিকের সম্পর্কে রূপান্তরিত হতে শুরু করল।
অতিমারির করোনা - আমাদের অস্তিত্ব, মেডিসিন এবং পুঁজির এক দিকবদল? : ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১১ মে ২০২০ | ৬৬০৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
দ্বিমেরু বিশ্বে যে ধারণা জনমানসে প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছিলো একটা সময়ে তা হল আমেরিকা-ইংল্যান্ড-ফ্রান্স-জাপান এতদিন ধরে (প্রায় ২০০ বছর) সার্বজনীন শিক্ষা-স্বাস্থ্য-জনস্বাস্থ্য-কাজের অধিকার-খাদ্যের অধিকার-বাসস্থানের অধিকার নিয়ে যে পথে চলে এসেছে তার বিকল্প আরেকটা রাস্তা আছে। এ রাস্তায় কার্টেলের (কর্পোরেটদের পিতৃপুরুষ) বদলে সমবায়ের ভাবনা আছে। এ রাস্তায় ব্যক্তির লাভালাভ একমাত্র বিষয় না হয়ে সমাজ ও সমষ্টির প্রাধান্য আছে। রবীন্দ্রনাথের বলা (যদিও একুশ শতকের পৃথিবীতে তার কার্যকারিতা নিয়ে বিতর্ক এবং মতদ্বৈধ প্রত্যাশিত) গ্রামসভার কথা, গ্রামের সমূহকে ব্যবহার করে গ্রামে পুকুর খোঁড়া, গ্রামকে পরিচ্ছন্ন রাখা, গ্রামের সিদ্ধান্ত প্রাথমিকভাবে গ্রামে নেওয়া (প্রসঙ্গত সমধর্মী ধারণা গান্ধীজিরও ছিলো) এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো মানুষের বোধে জারিত হতে শুরু করেছিলো।
স্বাস্থ্যবৈষম্যের প্রকটতা, মানুষী অস্তিত্বের আতঙ্ক ও সংকট এবং করোনা : ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৯ মে ২০২০ | ৩৯১৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
তবে ভাইরাসকে নিয়ে সহবাস করা আমাদের ভবিষ্যৎ পরিণতি হতে যাচ্ছে একথা বলার জন্য পণ্ডিত হবার প্রয়োজন নেই। প্রসঙ্গত মনে পড়বে কাম্যুর প্লেগ উপন্যাসের কথা। সে উপন্যাসের মূল চরিত্র ডঃ রু (Rieux) ফ্রান্সের কাল্পনিক ওরান শহরের মহামারি প্লেগের চিকিৎসা করতে গিয়ে বলছেন – “I have no idea what’s awaiting me, or what will happen when this all ends ... For the moment I know this: there are sick people and they need curing.”
মানুষ যত্ন চায়, মমতা চায়, সহমর্মিতা চায়। তাই “what will happen” জানা না থাকলেও আমাদের কাজ করে যেতে হবে। এমনকি ভারত সরকারের করোনা অতিমারির জন্য ২০ লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজের মাত্র ০.৭৫% (১৫,০০০ কোটি টাকা) স্বাস্থ্যের জন্য বরাদ্দ হওয়া সত্ত্বেও।
রাজনীতির গ্রাসে ওষুধ, কোভিড অতিমারির বিজ্ঞান এবং আর্ত মানুষ : ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : স্বাস্থ্য | ০৭ জুন ২০২০ | ৫৩৯৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
আমেরিকায় মোট আক্রান্ত ১,৯৮৮,৫৪৪ জন; মৃত্যু ঘটেছে ১১২,০৯৬ জনের; সুস্থ হয়েছে ৭৫১,৮৯৪ জন। সমগ্র পৃথিবীতে মৃত্যু হয়েছে ৩৯৩,০০০ জনের। আমাদের ভারতবর্ষে কনফার্মড করোনা পজিটিভ কেস ২৪৬,৬২২টি, মৃত্যু হয়েছে ৬,৯৪৬ জনের, সুস্থ হয়ে উঠেছে ১১৯,২৯৩ জন। এ যেন এক মৃত্যুমিছিল দেখছি আমরা। আর এখানেই অভাবনীয় গতিতে বিজ্ঞানী, চিকিৎসক এবং গবেষকেরা অক্লান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছেন কোন একটি নিরাময়ের সন্ধান পেতে, কোন একটি অমৃতকুম্ভের সন্ধানে পথ হাঁটছেন। দুর্ভাগ্যের হল “জাহান্নামের আগুনে বসিয়া হাসি পুষ্পের হাসি”-র মতো একইসাথে পথ হাঁটছে কর্পোরেট পুঁজি – কতটা মুনাফা করা যায় মানুষের জন্য জীবনদায়ী ওষুধ আবিষ্কার করে এরকম এক অভ্রান্ত লক্ষ্য নিয়ে। এরকম এক আবিষ্কার-মুনাফা, জীবনের সন্ধান-লাভের সন্ধান দ্বৈততার মাঝে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বাজি হিসেবে উঠে এসেছে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন।
করোনা – ভ্যাক্সিন, গোষ্ঠী (herd) ইমিউনিটি, এবং ইমিউনিটির অসম্পূর্ণ ইতিবৃত্ত : ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৮ জুন ২০২০ | ৫৫৪১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১
এ যেন এক মৃত্যুমিছিল চলছে – করোনার মৃত্যুমিছিল। ১৩.০৬.২০২০-তে worldometer-এর তথ্য অনুযায়ী পৃথিবীতে আক্রান্তের সংখ্যা ৭,৭৬৫,৮৭৮ জন, মৃত্যু হয়েছে ৪২৮,৭৫৩ জনের, সেরে উঠেছে ৩,৯৯৮,৭৫১ জন। এর মধ্যে খোদ আমেরিকাতেই মৃত ১,১৬,৮৩১ জন। সংক্রমণের হারে ভারত এখন ৪র্থ স্থানে – সংক্রমিতের সংখ্যা ৩১০,১৩১, মৃত্যু ঘটেছে ৮,৮৯৫ জনের, সেরে উঠেছে ১৫৪,৬৯৬। কিন্তু ভারতে করোনা সংক্রমণের গ্রাফ এখনো ঊর্ধমুখী বা এক্সপোনেনশিয়াল। তাহলে আমাদের মুক্তির উপায় কি? এখানেই আসবে আমাদের ইমিউন সিস্টেম নিয়ে প্রাথমিক কিছু কথাবার্তার প্রসঙ্গ।
অতিমারির আয়নায় দুটি ওষুধ – রেমডেসিভির এবং ডেক্সামেথাসন : ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ৩০ জুন ২০২০ | ৫৮৬৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৭
রেমডেসিভির নিয়ে প্রথম ট্রায়াল রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল নিউ ইংল্যান্ড জার্নালে (১০.০৪.২০২০) “Compassionate Use of Remdesivir for Patients with Severe Covid-19” শিরোনামে। এরপরে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাপত্র বেরোয় ল্যান্সেটে (২৯.০৪.২০২০) “Remdesivir in adults with severe COVID-19: a randomized, double-blind, placebo-controlled, multicentre trial” শিরোনামে। লক্ষ্য করার বিষয় এ ট্রায়ালটি “randomized, double-blind, placebo-controlled, multicentre” চরিত্রের – যেমনটা সঠিক বৈজ্ঞানিক ট্রায়ালের ক্ষেত্রে হবার কথা। রেমডেসিভির-এর বর্তমান আবিষ্কর্তা Gilead Sciences কোম্পানি এবং NIH স্বাভাবিকভাবেই এই ওষুধের ট্রায়াল দিয়েছে। কিন্তু এদের ট্রায়ালগুলো open-label, double-blind নয়। ফলে বিজ্ঞানের বিচারে বিশ্বাসযোগ্যতা কম।
করোনাকে ঘিরে পুনরায় ভেবে দেখা – প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা : ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : স্বাস্থ্য | ১১ আগস্ট ২০২০ | ৩৯৯১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৪
করোনা অতিমারির সময়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার অসামান্য গুরুত্ব আমাদের সবার দৃষ্টিপথ, শ্রুতি এবং ভাবনার ক্ষেত্রপথের একেবারে বাইরে চলে যাচ্ছে। অতি উচ্চ মুল্যের আইসিইউ পরিষেবা, উচ্চচাপের অক্সিজেনের ব্যবস্থা, ECMO ইত্যাদি জন মানসিকতায় ক্রমশ গ্রাহ্য হয়ে উঠছে, মান্যতা পাচ্ছে। মনে ক্ষোভ পুষে রেখেও সাধারণভাবে মানুষ চাইছে বেশি দামের রেমডেসিভিরের চিকিৎসা – নিতান্ত কমদামের এবং একমাত্র “improved survival” ঘটাতে পারে ডেক্সোমেথাসোনের চিকিৎসা নয়। চিকিৎসকেরাও এই সোশ্যাল সাইকি বা গণমানসিকতার বশে থাকছেন বেশিরভাগ সময়েই। বাজারের, মিডিয়ার এবং বিজ্ঞাপনের দুর্মর শক্তি উভয়কেই নিয়ন্ত্রিত এবং প্রভাবিত করছে। ফলে চিকিৎসা আরও বেশি করে হাই-টেক হয়ে উঠছে, ভার্টিকাল প্রোগ্রামের দিকে ঝুঁকছে। এবং ক্রমাগত ঝুঁকবে।
অসমান করোনা সংক্রমণ - ভারতের অভিজ্ঞতায় ভেবে দেখা : ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : স্বাস্থ্য | ২১ আগস্ট ২০২০ | ১০৫৩৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫০
ভারতের ক্ষেত্রে আমরা দেখছি বস্তি অঞ্চলের চাইতে অপেক্ষকৃত স্বচ্ছল এবং সম্ভ্রান্ত অঞ্চলে সংক্রমণের মাত্রা বেশি। তাছাড়াও দেখা যাচ্ছে সংক্রমণের ক্ষেত্রেও দুটি মানুষের মাঝে পার্থক্য ঘটছে, সংক্রমণ হবার পরে কেউ মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়ছে, আবার কেউবা প্রায় কোন সমস্যা ছাড়া সুস্থ হয়ে উঠছে। জনসমষ্টির বিশেষ অংশ বেশি সংক্রমিত হচ্ছে, অন্য অংশ কম। কেন এরকম ঘটে? এ প্রশ্ন কি বিজ্ঞানীদের কি সাধারণ মানুষ ও চিকিৎসকদের গভীরভাবে ভাবাচ্ছে। এর কোন সরল একমাত্রিক উত্তর নেই।
মৃত্যুর মূল্য, কোভিড-১৯ - ভিন্নতর পথের সন্ধান : ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : স্বাস্থ্য | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ৪১৩১ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৪
রিপোর্ট অনুযায়ী ৬৫টি পেমেন্টের ক্ষেত্রে রোগীদের ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা দিতে হয়েছিল। অডিট করার পরে ৩৮ লাখ টাকা কমে যায়। আরেকটি ক্ষেত্রে ৩১টি ক্ষেত্রে ৫১ লাখ ৮৪ হাজার টাকার থেকে অডিটের পরে ১২ লাখ ৬ হাজার টাকা কম দিতে হয়। দুটো মিলে ৫০ লাখ টাকা। ব্যাঙ্গালোরের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় জানা যায় ৭ দিন হাসপাতালে থাকার বিল হয়েছিল ৯৩ লাখ টাকা। বিদেশে, একমাত্র আমেরিকা ছাড়া, ইউরোপের দেশগুলোতে এরকম বিলের কথা ভাবা যায়না। নিউজিল্যান্ড সহ অধিকাংশ দেশেই স্বাস্থ্যব্যবস্থা সরকারের পরিচালনায়। ফলে এ্ররকম ঘটনা ঘটেনা বললেই চলে। পুণেতে তাও সরকারি একটা অডিট হয়েছে, বিলের পরিমাণ কিছুটা কমেছে। পশ্চিমবঙ্গে ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের মতো সংগঠনের তরফে বারংবার চিঠি দেওয়া এবং হস্তক্ষেপের পরেও অবস্থার খুব কিছু ইতরবিশেষ হয়নি।
করোনার ভ্যাক্সিন – কবে ঘটাবে মৃত্যুভয়ের অবসান? : ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : স্বাস্থ্য | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ৪৭৪৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৮
বৈজ্ঞানিকদের পুর্ব-লব্ধ জ্ঞান এক্ষেত্রে বিশেষ কাজে লেগেছে। সেগুলো হল – (১) করোনা ভাইরাসের দেহের স্পাইক প্রোটিনের ভূমিকা সম্বন্ধে আগাম ধারণা থাকা, (২) ইমিউনিটির ক্ষেত্রে স্পাইক প্রোটিন প্রতিরোধের ক্ষেত্রে “নিউট্রালাইজিং অ্যান্টিবডি”-র ভূমিকা, (৩) নিউক্লিক অ্যাসিড (যেমন আরএনএ বা ডিএনএ) ভ্যাক্সিন প্ল্যাটফর্মের উন্নত চেহারায় বিবর্তন এবং (৪) ভ্যাক্সিন তৈরির প্রক্রিয়াকে ধাপে ধাপে (sequentially) করার পরিবর্তে সমান্তরাল ভাবে (parallel) করা, কিন্তু যারা ভ্যাক্সিন স্টাডিতে অংশগ্রহণ করেছে তাদের ক্ষেত্রে কোন ঝুঁকি না নিয়ে। পূর্বোল্লেখিত সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে – “কার্যকারিতা কেবলমাত্র তখনই নির্ধারণ করা যাবে যখন যাদেরকে ভ্যাক্সিন দেওয়া হয়েছে এবং অতিমারির হটস্পটের মধ্যে তুল্যমূল্য বিচার (match) করা যায় ... এজন্য প্রাথমিক এন্ড পয়েন্টগুলোকে সতর্কতার সাথে নির্বাচন করতে হবে (এ বিষয়ে এর আগে বিস্তারিত আলোচনা করেছি), নির্বাচন করতে হবে স্টাডি-ডিজাইন এবং স্যাম্পেল সাইজের (অর্থাৎ কতজনের ওপরে ট্রায়াল দেওয়া হবে) সম্ভাব্যতার পুনর্মূল্যায়ন বিবেচনায় রাখতে হবে।”
‘সোভিয়েত মেডিসিন’ – বিশ্ব স্বাস্থ্যব্যবস্থার এক নতুন দিগন্তের উন্মেষ (১৯১৭-১৯৩৭) : ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : স্বাস্থ্য | ১১ অক্টোবর ২০২০ | ৯২৮১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫৯
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে (এখানে ইউরোপ ধরে নিতে হবে) ১৮৪৮-এর রাজনৈতিক অস্থিরতা, মানুষের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ আন্দোলন (বিশেষ করে ফ্রান্স, ইংল্যান্ড ও জার্মানিতে) স্বাস্থ্যের জন্য একটি জাতীয় আন্দোলনের জন্ম দিয়েছিল। নতুনভাবে জনস্বাস্থ্যের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং আইন-কানুন, সোশ্যাল মেডিসিন এবং এপিডেমিওলজির মতো স্বাস্থ্যের নতুন শাখা তৈরি হল। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হল মেডিসিনের দর্শনের জগতে – নতুন করে বিশিষ্টতা পেলো প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বা আগাম রোগ-প্রতিরোধের বিষয়। টমাস কুনের অনুসরণে বলা যায় মানুষের গণ আন্দোলন এবং স্বাস্থ্যের দাবীতে সোচ্চার হওয়া মেডিসিনের দর্শন ও ভাবনার জগতে একটি “প্যারাডাইম শিফট” ঘটালো – বেড সাইড মেডিসিনকে অতিক্রম মেডিসিন এলো জনসমাজে এবং জনস্বাস্থ্য একটি আলাদাভাবে চিহ্নিত অবস্থান হল।
“বিপদে মোরে রক্ষা কর” – ভারতের নয়া শিক্ষানীতি (NEP 2020), আমাদের সুদূর যাত্রা : জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : শিক্ষা | ২৬ অক্টোবর ২০২০ | ৭৪৩৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫৪
স্বাস্থ্যের জগতে দু’ধরনের নাগরিকত্ব (health citizenship) তৈরি হল। একটি পূর্ণ রাশি ১, আরেকটি ০। আধুনিক জাতিরাষ্ট্রের নাগরিকত্বও এরকম integer দেখা হয় – হয় ০ কিংবা ১। এখানে ভগ্নাংশের কোন জায়গা নেই। যেমনটা আজকের ভারতে এবং বিশ্বে দেখছি আমরা। লক্ষ্যণীয় বিষয় হল যে স্বাস্থ্যের পরিবর্তে শিক্ষার চোখ দিয়ে দেখলেও আমরা একইরকম অবস্থান দেখতে পাবো। ১৯শ শতাব্দিতে আধুনিক রাষ্ট্র তৈরির শুরু থেকেই রাষ্ট্রের প্রয়োজন ছিল মানুষ যাতে “স্বাভাবিক (normal)” এবং “অস্বাভাবিক (pathological)” এই দ্বৈত বিভাজনের গবাক্ষ দিয়ে দেখতে শেখে, সড়গড় হয়ে ওঠে। কিন্ডারগার্টেন, নার্সারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়োত্তর গবেষণা সবকিছুর মধ্য দিয়ে এ শিক্ষা চারিয়ে যায় প্রতিদিন, প্রতিটি মুহূর্তে আমাদের বোধের মধ্যে।
ঊনিশ শতকের বীর চিকিৎসক-নারী – আনন্দবাই ও অন্যান্যরা : জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সমাজ | ২১ জানুয়ারি ২০২১ | ৩৫০৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৫
আনন্দবাই-এর জীবন বড়ো সুখের ছিলনা। মহারাষ্ট্রের কল্যাণে এক ক্ষয়িষ্ণু জমিদার পরিবারে জন্ম ৩১ মার্চ, ১৮৬৫। পরিবারের ১০ সন্তানের মাঝে ৬ নম্বর সন্তান তিনি। তাঁর আরও পাঁচ বোন এবং চার ভাই ছিল (অবশ্য দুজন পুত্র সন্তানের অকালমৃত্যু হয়)। মাত্র ৯ বছর বয়সে ৩১ মার্চ, ১৮৭৪ সালে বিয়ে হল তাঁর চেয়ে ২০ বছরের বড়ো গোপালরাও যোশীর সাথে। আনন্দবাই স্বামীর রাখা নাম – “হৃদয়ের আনন্দ”, বাবার বাড়িতে নাম ছিল যমুনা। আনন্দবাই-এর ১৪ বচর বয়সে অর্থাৎ ১৮৭৮ সালে এক সন্তানের জন্ম হয়। ১০ দিনের মাথায় সে সন্তান মারা যায়। তাঁর গভীর উপলব্ধি হল যে উপযুক্ত চিকিৎসক না থাকার জন্য শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনা তাঁকে চিকিৎসক হবার ব্রতের দিকে যেতে উজ্জীবিত করে তুললো। সন্তানের মৃত্যুর পরে তাঁর উপলব্ধি আমাদের গভীরভাবে নাড়া দিয়ে যায় – “একটি শিশুর মৃত্যু তার পিতার কোন ক্ষতি করেনা, কিন্তু মা চায় না তার সন্তান তাকে ছেড়ে চলে যাক।”
উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী – কালাজ্বর, ইউরিয়া স্টিবামিন এবং আমাদের সামাজিক বিস্মৃতি : ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | ২৭ আগস্ট ২০২১ | ৬৩০৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৭
যাঁরা ব্রহ্মচারীর মতো জীবন যাপন করেন, তাঁদের উপাধি হয় ব্রহ্মচারী। একটি কম সমর্থিত মত হল, যে কেশবচন্দ্র ভারতী শ্রীচৈতন্যদেবকে বৈষ্ণবধর্মে দীক্ষা দেন। তাঁর বড়দাদা গোপালচন্দ্র ভারতী দীক্ষার পরে নিজেদের মুখোপাধ্যায় উপাধি ত্যাগ করে ব্রহ্মচারী উপাধি গ্রহণ করেন। এদের নবম বা দশম বংশধর হচ্ছেন উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী।
এক অনন্যসাধারণ মেধার অধিকারী এই মানুষটির গ্র্যাজুয়েশন ১৮৯৩ সালে হুগলি মহসিন কলেজ থেকে – অংক এবং কেমিস্ট্রি নিয়ে ডাবল অনার্স, Thysetes মেডেল পান। এরপরে ১৮৯৪ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে কেমিস্ট্রিতে এমএ পাশ, সাথে গ্রিফিথ মেমোরিয়াল প্রাইজ। একই সময়ে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। এলএমএস ডিগ্রি পান ১৮৯৯ সালে। ১৯০০ সালে এমবি ডিগ্রি – মেডিসিন এবং সার্জারি দু’টিতেই প্রথম হয়ে গুডিভ এবং ম্যাকলিওডস মেডেল পান। ১৯০২ সালে এমডি পাশ করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এরপরে ১৯০৪ সালে পিএইচডি অর্জন। বিষয় ছিল “Studies on Haemolysis”। তাঁর পিএইচডির থিসিসের সংক্ষিপ্ত এবং উন্নত চেহারার নতুন গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয় বায়োকেমিক্যাল জার্নাল-এ ১৯০৯ সালে “Some Observations on the Haemolysis of Blood by Hyposmotic and Hyperosmotic Solutions of Sodium Chloride” শিরোনামে। এছাড়াও ক্যালকাটা স্কুল অফ ট্রপিকাল মেডিসিন অ্যান্ড হাইজিন থেকে Mente মেডেল এবং এশিয়াটিক সোসাইটির উইলিয়াম জোন্স মেডেল লাভ করেন।
পরবর্তী সময়ে প্রায় সম্পূর্ণ জীবন কেটেছে গবেষণার নির্ভুল লক্ষ্যে। প্রায় ১৫০টি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে নেচার, ল্যান্সেট, ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল, বায়োকেমিক্যাল জার্নাল, ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ বা ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল গেজেট-এর মতো জার্নালগুলোতে।
উইলিয়াম ব্রুক ও’শনেসি – সামাজিক বিস্মৃতিতে বিলীন এক অবিস্মরণীয় প্রতিভা : জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | ০৬ অক্টোবর ২০২১ | ৩০৭০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৩
স্থান – ইংল্যান্ডের সান্ডারল্যান্ড, ২৬ অক্টোবর, ১৮৩১। তথাকথিত “ভারতীয়” কলেরায় আক্রান্ত প্রথম রোগী চিহ্নিত হল। মারাও গেল। এক বছরের মধ্যে ২৩,০০০ মানুষের মৃত্যু হল কলেরায়। যদিও ল্যান্সেট-এর সাম্প্রতিক হিসেব অনুযায়ী, এ সংখ্যা ৫০,০০০। এ সময়ে এখানে এলেন এডিনবার থেকে সদ্য পাস করে বেরনো ২২ বছরের এক উজ্জ্বল মেডিক্যাল গ্র্যাজুয়েট। স্নাতক হন ডাবলিনের বিখ্যাত ট্রিনিটি কলেজ থেকে। ইতিহাস ঘেঁটে আমরা এই যুবকের তিনটি নাম পাচ্ছি – প্রথমে উইলিয়াম স্যান্ডস, পরে উইলিয়াম ব্রুক ও’শনেসি, এবং সবশেষে উইলিয়াম ও’শনেসি ব্রুক। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের প্রতিষ্ঠার যুগের শিক্ষক হিসেবে এবং দ্বিতীয় নামটিতে সবচেয়ে বেশি গবেষণাপত্র লেখার সুবাদে আমরা তাঁকে জানবো উইলিয়াম ব্রুক ও’শনেসি বা শুধু ও’শনেসি বলে।
ওমিক্রন – সার্স-কোভ-২-এর নতুন মিউটেশন – পরিণতি? : জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : স্বাস্থ্য | ৩০ নভেম্বর ২০২১ | ৩১১৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ২০
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার Technical Advisory Group on SARS-CoV-2 Virus Evolution (TAG-VE) গত ২৬ নভেম্বর সার্স-কোভ-২-এর যে নতুন প্রজাতি “ওমিক্রন” (গ্রিক অ্যালফাবেট অনুযায়ী নামকরণে ইংরেজির O) আফ্রিকায় উদ্বেগ বাড়িয়েছে তাকে VOC (Variant of Concern) বলে অভিহিত করেছে। আমরা, ভারতের পৃথিবীর সমস্ত সাধারণ মানুষ, ঘরপোড়া গরু। তাই সিঁদুরে মেঘে ডরাই। আমরা এখনো স্বাভাবিক জীবনের ছন্দে ফিরতে পারিনি। যতই “নিউ নর্ম্যাল”-এর মতো আদুরে নামে ডেকে একে স্বাভাবিক বানানোর চেষ্টা হোক না কেন, আমাদের এ জীবন পূর্নত অ-স্বাভাবিক। এজন্য এই মারণান্তক ভাইরাসের (২০১৯-এর নভেম্বরের শেষ থেকে যার নমুনা মিলছিল চিনের য়ুহান প্রদেশে) দাপট ২ বছর পার করলেও নতুন নতুন চেহারায়, নব নব অবতার রূপে হাজির হচ্ছে এই ভাইরাস। আমরা চাপা আতঙ্কে বাস করছি – আবার কোন প্রিয়জনকে হারাতে যেন না হয়।
“অন্ধ বিশ্বাসের উপনিবেশ” – কয়েকটি পর্যবেক্ষণ : ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : স্বাস্থ্য | ১৯ জুলাই ২০২২ | ১১১৭৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৪৩
লেখাটির মাঝে কিছু সত্য আছে। আবার সত্যকে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে লেখকের নিজের মর্জিমাফিক বিজ্ঞান ও জনস্বাস্থ্যের ব্যাপারে অনেক কিছুই বলা হয়নি, দুয়েকটি বিষয় এবং প্রধানত ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালের অ্যাসোসিয়েট এডিটর (“বরিষ্ঠ সম্পাদক” নন, সত্যের খাতিরে বললে) পিটার দোশীর একটি বা দুটি প্রবন্ধকে হাতিয়ার করা হয়েছে। এর বাইরে অসংখ্য গবেষণাপত্র আছে ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল, ল্যান্সেট, নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন-এর মতো আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে মান্য জার্নালগুলোতে। এবং এ জার্নালগুলো কর্পোরেটদের টাকায় নিয়ন্ত্রিত হয়না। এসব জার্নালে স্বাধীন গবেষণাপত্র ছাপা কর্পোরেট ফান্ডিংয়ের বদান্যতা ছাড়া। যদি বিজ্ঞানের এই স্বাধীন পরিসর না থাকে তাহলে বলা ভালো – প্রপঞ্চময় এ কর্পোরেট বিশ্বে কেউ স্বাধীন নয়। স্বাধীন হওয়া সম্ভবও নয়, “জ্ঞানাঞ্জন শলাকয়া” ফুটিয়ে না দিলে।
এখানে একবার স্মরণ করে নেওয়া ভালো – যখন বিভিন্ন রকম সাক্ষ্যপ্রমাণ, উপাত্ত বা সম্ভাবনা থেকে শুধুমাত্র নিজের অনুকূলে বা পক্ষে যায় এরকম উপাত্ত, প্রমাণ বা সম্ভাবনাকেই বাছাই বা নির্বাচন করা হয় তখন যে হেত্বাভাস বা অনুপপত্তি (অর্থাৎ ভ্রান্ত যুক্তি) সংঘটিত হয়, তাকে যুক্তিবিদ্যায় পক্ষপাতদুষ্ট বাছাই বা ইংরেজি ভাষায় চেরি পিকিং (Cherry picking) বলা হয়। পক্ষপাতদুষ্ট বাছাই ইচ্ছাকৃতভাবে বা অজান্তেই হতে পারে। তবে জনবিতর্কে এই ভ্রান্তি একটি বড় সমস্যা।
রাষ্ট্র-অতি রাষ্ট্র, নাগরিক-অনাগরিক এবং হাড়-হাভাতে ফ্যাতাড়ুরা : জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ৩০ জুলাই ২০২২ | ২০৯৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৩
আরো একধাপ এগিয়ে আবার আমার আপনার মতো কোন অর্বাচীন, অকালপক্ক, অর্ধশিক্ষিত দেখে এর মাঝে hegemony তথা মান্যতা নিয়ে টিঁকে থাকবার নানা রকমের কৃৎ-কৌশল রয়েছে। কৃৎ-কৌশল রয়েছে রাষ্ট্রের অতিরাষ্ট্রের হয়ে ওঠার চারিত্র্যলক্ষণের মধ্যে আছে ক্রমশ ঘৃণাকে সামাজিক-সাংস্কৃতিকভাবে ছড়িয়ে দেওয়া – শব্দে, চিত্রকল্পে, প্রাত্যহিক সংলাপে। হিংসাকে আকর্ষণীয় প্রদর্শনী করে তুলতে হবে (spectacularized violence)। ধীরে ধীরে এগুলোকে সহনীয় করে তোলা। নিজের নিয়মেই সহনীয় হয়েও যায়। যাকে পছন্দ করিনা তাকে ‘দানব’ বানিয়ে দাও (demonization), শিক্ষা থেকে থেকে সরিয়ে দাও প্রশ্ন করার সাহস, উৎসাহ এবং পরিসর। শিক্ষকেরা হয়ে যাক educational managers, ছাত্রের মাঝে “কেন?”-র প্রবাহ তৈরি করার কোন জ্ঞানভিক্ষু নয়। একটি সংস্কৃতির জন্ম হবে যার ভিত্তি হবে কেবল তাৎক্ষণিকতা-নির্ভর, শুধুমাত্র বর্তমানকে চিনি বুঝি যাপন করি, অন্য কিছু নয়। অতীতের এবং ইতিহাসের পুনর্নিমাণ হবে। সমাজের অন্ধকার জগৎ, যাদেরকে চালু ভাষায় লুম্পেন বলা হয়) আলোয় আসার, রাজপথের দখল নেবার, ক্ষমতার বৃত্তের সাথে সংস্থাপিত থাকার গৌরব অর্জন করবে।
চিকিৎসা, সমাজ, দাসব্যবসা, ছিয়াত্তরের মন্বন্তর – টুকরো চিত্রে কলকাতা ও বাংলা : জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ০৮ অক্টোবর ২০২২ | ৪৬৬২ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৭
কলকাতার বিকাশ এবং বাংলার বিকাশ এক ধারায় হয়নি। আজকের দুনিয়ার মতো সেদিনের দুনিয়া “গ্লোবালাইজড” হয়ে যায়নি। এজন্য উপনিবেশের অর্থনৈতিক, সামরিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক কেন্দ্র কলকাতা যেভাবে পরতে পরতে রূপান্তরিত হয়েছে, সেভাবে সমগ্র বাংলার রূপান্তর ঘটেনি। উনবিংশ শতাব্দীর ৩য় দশকের আগে কলকাতার সাথে বৃহত্তর গ্রামীণ বাংলার উভয়মুখী যাত্রাও দুর্বল ছিল। ফলত কলকাতার খণ্ডচিত্র ভিন্নধর্মী – বাংলার অন্য অংশের চেয়ে।
সমাচার দর্পণ পত্রিকায় ১০ কার্তিক ১২৪১ তথা ২৫ অক্টোবর ১৮৩৪-এ প্রকাশিত একটি সংবাদে বলা হয়েছিল – “বঙ্গ দেশে যে ৩ কোটি লোক আছে তাহারদিগকে ইঙ্গলণ্ডীয়রা ৯০০ সামান্য গোরা সিপাহী ও ১০০ ফিরিঙ্গি ও ২১০০ সামান্য সিপাহী অর্থাৎ বরকন্দাজ লইয়া জয় করিলেন এবং মুষ্টি পরিমিত সৈন্যের অধ্যক্ষ ৩১ বৎসর বয়সের মধ্যে এক জন অর্বাচীন অর্থাৎ লার্ড ক্লাইব ছিলেন ... দেখুন বঙ্গদেশীয় জমিদারদের মধ্যে ঘোড়ায় চড়িতে পারেন এমত ৫০ জন পাওয়া ভার অতএব বঙ্গদেশীয় লোকেরদের দ্বারা কি প্রকারে ভয় সম্ভাবনা।” (ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, সম্পাদিত, সংবাদপত্রে সেকালের কথা, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃঃ ১৯৩)
এ লেখার মাঝে চরম আত্মগ্লানি আছে। কিন্তু কলকাতার জনসমাজকে এ কথাগুলো সেভাবে স্পর্শ করেছিল কি?
আমার স্বদেশ লুঠ হয়ে যায় প্রতিদিন প্রতিরাতে – আমাদের “হিন্দু” হয়ে ওঠা : জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ২৮৯৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
প্রসঙ্গান্তরে, প্রতিবছর আমরা ১৫-ই আগস্ট তথা স্বাধীনতা দিবসের দিনটিতে যথেষ্ট পরিমাণ বেলপাতা-ফুল-পাঁজি-বাতাসা নিয়ে স্বাধীনতার গল্প শুনি। ২০১৭ সালে দুই দিনাজপুর এবং মালদার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ভয়ঙ্কর বন্যা শুরু হয়েছিল ১৫ আগস্ট। এক হাঁটু জলের মধ্যে দাঁড়িয়ে গ্রামের এক স্কুলের প্রধান শিক্ষক আমাদের জাতীয় পতাকা তুলেছিলেন, সাথে কয়েকজন বাচ্চা শিক্ষার্থী ছিল। পরের দিন সংবাদপত্রের খবর হয়েছিল এ ঘটনা। সমস্ত বঞ্চনা, অনাদর, অবহেলা, অবান্তর মৃত্যু, বুভুক্ষা, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের হাজারো ঝড়ঝাপটা সত্ত্বেও মানুষের স্মৃতিতে নির্মিত হয় স্বাধীনতা দিবসের বর্ণময় চিত্রকাব্য – এমনকি জীবনে কোন বর্ণ না থাকা সত্ত্বেও। এখানে এসে বিভিন্ন তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা – হবসবম, হানা আরেন্ট, নর্বার্ট এলিয়াস, স্পিভাক, লাকাঁ আদি সমস্ত বিশ্ব তত্ত্বসাম্রাজ্যের শাসক সম্রাটেরা – ভেঙ্গে পড়তে থাকে মানুষের শরীরী অভিজ্ঞতা বা emobodied experience-এর কাছে। অদ্ভুতভাবে অনেকেরই সেদিন মনটাও হয়তো বা একটু উড়ুক্কু থাকে।
রক্তাক্ত পঞ্চায়েত : জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ১১ জুলাই ২০২৩ | ২০১৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ২০
গোড়াতেই নিজেদেরকে প্রশ্ন করা যায় – এরকম হিংস্রতা, রক্তপাত, অবান্তর মৃত্যু, সরকারি সম্পত্তির ধ্বংস আমাদের কাছে খুব অজানা বা অপ্রত্যাশিত ছিল কী? ওপরে যে ছবিটি আছে সেরকম ছবি তো আমরা যখন তখন দেখে থাকি। আমাদের স্নায়ু বা চিন্তার ওপরে আদৌ কোন ছাপ ফেলে কি? আমরা তো সইয়ে নিয়েছি। আমাদের স্নায়ুতন্ত্র, মনন, অনুভূতি বা, একটু বাড়িয়ে বললে, আমাদের সুকুমার প্রবৃত্তি এগুলোর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। Numbing of our collective consciousness – আমাদের সামগ্রিক চেতনার বিবশতা। কিন্তু এগুলো তো একদিনে হয়নি। ধাপে ধাপে, প্রতি মুহূর্তে সমস্ত রকমের মিডিয়ার অপার মহিমায়, ছাপার অক্ষরে এবং নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনায় (যদি কখনো কিছু হয়ে থাকে) আমরা একটি অসংবেদনশীল পিণ্ডে পরিণত হচ্ছি? যদি সমাজতত্ত্ব এবং আমাদের পারিবারিক জীবনের প্রেক্ষিতে দেখি তাহলে সবচেয়ে ক্ষতিকারক যে ফলাফল জন্ম নিচ্ছে তার চরিত্র হল শিশু থেকে কিশোর এবং সদ্য যৌবনে পা-রাখা (বাংলা শুধু নয়, সমগ্র ভারত জুড়েই) প্রজন্ম একে স্বাভাবিক হিসেবে ধরে নিচ্ছে। এমনকি হিংস্রতার মাঝে আমোদও পাচ্ছে।
মেডিক্যাল এডুকেশনের ভবিষ্যৎ দিশা NExT? : জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | বিতর্ক | ২৫ জুলাই ২০২৩ | ১৬৬৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
ভারতে একবিংশ শতকের গোড়ার দিকেও মেডিক্যাল শিক্ষা এবং সাধারণ শিক্ষায় প্রধানত ব্রিটিশ/ইউরোপীয় মডেলকে অনুসরণ করা হত। ২০১৪ সালের পরে এটা প্রায় সম্পূর্ণত আমেরিকার মডেলের অনুসারী হয়ে ওঠে – ‘নতুন শিক্ষানীতি’ এবং ৪ বছরের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট কোর্স চালু করা যার ভালো উদাহরণ। ব্রিটিশ মডেলে ক্লিনিকাল শিক্ষার ওপরে জোর দেওয়া হত। হাউসস্টাফশিপ ছিল বাধ্যতামূলক যাতে একজন ডাক্তার স্পেশালিস্ট না হলেও যেকোন ধরনের রোগীর সাধারণ চিকিৎসায় দক্ষ একজন ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান বা প্রাইভেট প্র্যাক্টিশনার হয়ে উঠতে পারত। এখনো ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে, গ্রামেগঞ্জে এধরনের চিকিৎসকেরাই রোগীদের প্রধান ভরসা। আরেকটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথা রাখতে হবে। চিকিৎসক এবং চিকিৎসার এ ধারার মধ্য দিয়ে ডাক্তার-রোগী সম্পর্কের একটি দীর্ঘকালীন বনিয়াদ জন্মায়। রোগীরা পারিবারিক, ব্যক্তিগত এবং সামজিক সমস্যা সম্পর্কে মন খুলে কথা বলতে পারে। এখানে একজন রোগী চিকিৎসার বাজারের (কর্পোরেট জগতের থাবায় যা ক্রমাগত সমস্ত অঞ্চলে অনুপ্রবেশ করছে) অর্থনৈতিক ‘ভোক্তা’ নয় – একজন মানুষ, যে ঘটনাচক্রে রোগী হয়েছে।
হাসপাতাল থেকে “হসপিটাল ও ল্যাবরেটরি মেডিসিন” – মেডিসিনের নতুন যুগ : জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : স্বাস্থ্য | ০৮ আগস্ট ২০২৩ | ১২৬৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
এসকেলেপিয়াস, আমরা বোধ করি সবাই জানি, প্রাচীন গ্রিসের মেডিসিনের পৌরাণিক দেবতা। তাঁর মন্দিরে যাবার জন্য, অবশ্যই রোগমুক্তির উদ্দেশ্যে, এই আকুলতা। মন্দির, মঠ, চার্চগুলোতে আর্ত মানুষের নিরাময় করার জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকত সে আদিম কাল থেকে।
ইউরোপের উদাহরণে আবার ফিরে আসব। তার আগে ভারতের প্রথম আয়ুর্বেদ গ্রন্থ তথা শাস্ত্র বলে স্বীকৃত চরক-সংহিতারও সংকলনকালের সময়কালের কিছু আগে পরে (আয়ুর্বেদের সবচেয়ে মান্য গবেষক মিউলেনবেল্ডের মতে এ সময়কাল খুব বেশি হলে ১৫০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ২০০ খ্রিস্টাব্দের আগে হতে পারেনা, বা খুব বেশি হলে ১০০ খ্রিস্টাব্দ – মিউলেবেল্ড, A History of Indian Medical Literature, IA, পৃঃ ১১৪) বৌদ্ধযুগে কিছু হাসপাতালের হদিশ পাওয়া যায়।
দেশ ভাগ এবং ভারতবর্ষ – এক উলঙ্গ ইতিহাস-১ : জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ২৫৩৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
আমাদের ভারতবর্ষ যখন ‘আজাদির অমৃত মহোৎসব’-এ বুঁদ হয়ে আছে সেসময়ও কি ভারতের টুকরো হয়ে যাওয়াকে বাদ দিয়ে কোনভাবে লেখা যায় এ দেশের টুকরো হয়ে যাবার কোন কাহিনী?
জ্ঞানেন্দ্র পাণ্ডে তাঁর Remembering Partition: Violence, Nationalism and History in India (২০০৩) গ্রন্থের গোড়াতেই দু’টি প্রশ্ন তুলেছেন – (১) সরকারি সহস্র-অযুত বয়ানের মধ্য থেকে ‘ইতিহাস’ কিভাবে ‘সত্য’-কে (১৯৪৭-এর হিংসার সত্যকে) জন্ম দেবে, (২) সেদিনের সেই চরম মুহূর্তগুলোকে আজকের ইতিহাসে কিভাবে “struggle back into history” ঘটাবে? (পৃঃ ৪) এ গ্রন্থেরই অন্তিমে লেখক এক জরুরী প্রশ্ন রেখেছেন – “What would it mean to imagine India as a society in which the Muslim does not figure as a ‘minority’, but as Bengali or Malayali, labourer or professional, literate or non-literate, young or old, man or woman?” (পৃঃ ২০৫)
দেশ ভাগ এবং ভারতবর্ষ – এক উলঙ্গ ইতিহাস-২ : জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৫৩৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
বাইরে থেকে রোপণ করা বা এনগ্র্যাফটেড আধুনিকতার যে যাত্রা ১৯৪৭ পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রিক উদ্যোগে শুরু হয়েছিল সেখানে সমস্ত ভারতবাসী হয়ে উঠলো নাগরিক, খানিকটা হঠাৎ করেই। লক্ষণীয় যে যেখানে ইউরোপের একটি বড়ো অংশ প্রায় ৩০০ বছর ধরে ধীরে ধীরে জাতি-রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে উঠেছে, ভারতে তা অর্জিত হয়েছে মাত্র কয়েকটি দশকে। ইউরোপীয় দেশগুলোতে যেভাবে ব্যক্তির অভ্যুদয়, রাষ্ট্রের সাথে ব্যক্তি-নাগরিকের সহাবস্থান, সমাজ বা কৌমের অবস্থান বিলুপ্ত হওয়া এবং সমাজ জীবনে ধর্ম-নির্লিপ্ততার (সেক্যুলারিজম) পরিসর তৈরি হয়েছে ভারতে তা হয়নি।
স্বাস্থ্য, দেহ, মেডিসিন, জনস্বাস্থ্য এবং গান্ধী – পুনর্বিবেচনা : জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : স্বাস্থ্য | ০২ অক্টোবর ২০২৩ | ১৩৮৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
মহাত্মা গান্ধীর রাজনৈতিক, দার্শনিক এবং জীবনবোধের বিশিষ্টতা এমন সর্বব্যাপী যে তাঁর এ দিকগুলোকে নিয়ে চর্চা অনেক উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক, সমাজতাত্ত্বিক এবং দার্শনিকেরা করেছেন। এদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে দুটি বিষয় সহজেই চোখে পড়ে – প্রথম, তাঁর ধারণায় ও বীক্ষণে অহিংসার স্থান এবং দ্বিতীয়, তাঁর লেখা “হিন্দ-স্বরাজ” পুস্তিকাটি ও এ পুস্তিকায় নিহিত ধারণার ব্যাপ্তি। তুলনায় গান্ধীর বোধে মেডিসিনের দৃষ্টিকোণ থেকে চিকিৎসা, দেহ, দেশজ চিকিৎসা, জনস্বাস্থ্য ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা কম।
ভারতের সমাজজীবনে জাতের অবস্থান – মার্ক্স, গান্ধী এবং আম্বেদকর - ২ : জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সমাজ | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ১০৩০ বার পঠিত
আমরা এবারে দেখতে চাইব, সমাজ গঠনের এই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান নিয়ে মার্ক্সের কি ধারণা ছিল। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বয়ানে এসবের সংক্ষিপ্ত এবং প্রায়-পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা আমরা জেনে নেব। পার্থ বলছেন – “ভারতবর্ষ নিয়ে পড়াশোনা কিংবা লেখার সময় মার্কস-এর চিন্তায় একটাই মূল প্রশ্ন ছিলঃ ভারতীয় সমাজের ঐতিহাসিক অগ্রগতির সম্ভাবনা কী, কোন পথে সে অগ্রগতি সম্ভব, সে পথে বাধা কোথায়? বিশ্ব-ইতিহাসের ক্রমবিকাশের যে ছক তিনি ইউরোপের সমাজবিবর্তনের ধারা থেকে আবিষ্কার করতে চাইছিলেন, বলা বাহুল্য সেই ছকের সঙ্গে মিলিয়েই ভারতবর্ষ নিয়ে এই প্রশ্ন জেগেছিল তাঁর মনে।
ইলেকটোরাল বন্ড, ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি এবং আমাদের সহনশীলতার পরীক্ষা : জয়ন্ত ভট্টাচার্য
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ১৩৬৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
ভোটের ঠিক আগে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি কত টাকার ইলেকটোরাল বন্ড কিনেছে এ নিয়ে কয়েকদিন আগেও সর্বস্তরের (প্রিন্ট এবং ইলেকট্রোনিক) সংবাদমাধ্যমে বেশ কিছুদিন ধরে খবর হচ্ছিল। ইলেকটোরাল বন্ড এবং ওষুধ কোম্পানির নিবিড় যোগ নিয়ে অনেক লেখা হয়েছে। শিক্ষিত জনতার একটি বড় অংশই, আশা করা যায়, এ বিষয়ে অবহিত। শুধু কিছু তথ্য প্রাসঙ্গিক হবার কারণে যোগ করা যায়। এবং, ভেবে দেখতে হবে, এর সাথে আমাদের দেশের ওষুধনীতি, নির্বাচনী রাজনীতি ও জনস্বাস্থ্যের সংযোগ আছে। ... ... হেটেরো গ্রুপসের মতো একই পরম্পরায় ইন্টাস, লুপিন, ম্যানকাইন্ড, মাইক্রোল্যাবস, টরেন্ট ফার্মা, জাইডাস ফার্মা, গ্লেনমার্ক, সিপলা ইত্যাদি কোম্পানির অফিসে প্রথমে দুর্নীতি ও আর্থিক অনিয়মের জন্য হানা দেওয়া হয় এবং এরপরে সবাই ইলেকটোরাল বন্ড কেনে কোটি কোটি টাকার। ওষুধের দামের ওপরে এর প্রভাব সহজেই অনুময়ে। দান-খয়রাতি করার জন্য এরা টাকা খরচ করেনা। ওষুধের মার্কেটিং (যার মধ্যে ডাক্তারকে দেওয়া উপঢৌকনও আছে) ইত্যাদির জন্য কোটি কোটি খরচ করে। না করলে হয়তো ওষুধের দাম সাধারণ মানুষের আরেকটু নাগালের মধ্যে থাকতে পারত।