এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • শাহবাগের একযুগ

    কিংবদন্তি লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ১৬৪ বার পঠিত
  •  
    এক যুগ হয়ে গেল শাহবাগ আন্দোলন বা গণজাগরণ আন্দোলনের। কী এক অদ্ভুত সময় পার করেছে বাংলাদেশ। যেন একটা ম্যাজিক! দম্ভপূর্ণ ভি চিহ্ন দেখানো আর বারুদের ঘরে স্ফুলিঙ্গ! শুরু হয় সিডাটিভ হিপনোটিক্স নামে একটা আইডি থেকে একটা পোস্টের মাধ্যমে। তিনি লেখেন যে আর কিবোর্ড না এবার রাজপথে নামতে হবে, সবাই শাহবাগে আসেন। তার মত করে আরও অনেকেই ভাবেন এবং নেমে আসেন রাস্তায়। শুরু হয় আন্দোলন। এক যুগ আগে আপামর জনতা এক বাক্যে স্বীকার করেছিল এই দেশে রাজাকারদের ঠাই নাই। একটা জাগরণেই আওয়ামীলীগ দশ বছর পার করে দিয়েছিল। 
     
    শাহবাগ আন্দোলনে লাভবান হয়েছিল আওয়ামীলীগ বা বলা চলে আওয়ামীলীগ ক্যাশ করছিল আন্দোলনকে। এই জন্য গালি খেতে হয় এখনও সবাইকে। প্রশ্ন হচ্ছে আওয়ামীলীগ ক্যাশ করল বাকিরা কী করল? যে বিএনপি এখন গলা ফাটাচ্ছে জামাত রাজাকার বলে তারা তখন কী করেছিল? সেদিন যদি বিএনপি শাহবাগের পাশে দাঁড়াত এই বাংলাদেশের রাজনীতি ভিন্ন রকম হত, গল্পটা অন্য রকম হত। আওয়ামীলীগ এক তরফা ২০১৪ সালের নির্বাচন করার সাহস পেত না। বিএনপি সেদিন পাশে না এসে উল্টো বলে দিল সব নাস্তিক! গোপনে আঁতাত করল মতিঝিল দখল করে হেফাজতের ঘাড়ে ভর দিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের! এই দায় কার? 

    প্রতিনিয়ত তখন শাহবাগকে কটাক্ষ করে বিএনপির নেতারা নানান বিবৃতি দিত। সব মেয়েছেলে এক সাথে রাত করে থাকে, বেল্লাপনা করে, নানান অশ্লীল কাজ করে, কত যে রগ রগে বর্ণনা আসা শুরু হল। আমি একজন আন্দোলনের কর্মী হিসেবে একদিন ঠিক করলাম আজকে পুরো এলাকা ঘুরে দেখব কোথায় কী হচ্ছে দেখব। একদিকে টিএসসি পর্যন্ত এসেছে মানুষের ঢল অন্য দিকে তৎকালীন শেরাটন হোটেল পর্যন্ত। আরেক দিকে মানুষের বসে আছে মৎস্য ভবন পর্যন্ত বিপরীত দিকে চলে গেছে কাঁটাবন পর্যন্ত। এইটাই পুরো অংশ। ঘুরলাম, মানুষ বসে আছে, কেউ ঘুমাচ্ছে, কেউ গান গাচ্ছে, কই অশ্লীল কাণ্ড গুলো হচ্ছে খুঁজে পেলাম না। ভাবলাম এইটা হলে ছবির হাটের দিকেই হতে পারে। গেলাম। নাহ! অথচ দৈনিকই শুনতাম যে এখানে নানান অপকর্ম ঘটে চলছে। আমার দেশ পত্রিকায় ছাপা হল শাহবাগে প্রতি রাতে ধর্ষণের স্বীকার হচ্ছে নারী! কাঁচা মিথ্যা কথা প্রকাশ করায় তখন থেকেই শীর্ষে ছিল তারা! 

    শাহবাগ আন্দোলনের সবচেয়ে বড় গৌরব হচ্ছে এই আন্দোলনটা শত ভাগ অহিংস ছিল। আজকে যে পরিমাণ মানুষ সরকার ফেলে দিল তারচেয়ে কোন অংশে কম ছিল না শাহবাগের দৈনিক হাজিরা। এরা দাবি আদায়ের জন্য যে সহিংস পথ বেছে নিয়েছিল তা শাহবাগের দরকার পড়েনি। অথচ দাবির মান বিচার করলে শাহবাগের দাবি কোটার থেকে ঢের ঢের বিশাল ব্যাপার বলা চলে। আমরা তখন সরাসরি আওয়ামীলীগকে জামাতের সাথে আঁতাতের সন্দেহে রাজপথে নেমেছিলাম। কাদের মোল্লার ভি চিহ্ন, পুলিশের সদস্যরা জামাতের কর্মীদের ফুল দিচ্ছে এমন বেশ কিছু ঘটনা আমাদেরকে ভাবতে বাধ্য করেছিল যে তলে তলে আঁতাত করছে আওয়ামীলীগ। 

    তো সহিংস হওয়ার যুক্তি ছিল আমাদের। কিন্তু আমরা সেই রাস্তায় যাইনি। হেফাজতের পাল্টা কর্মসূচিও শাহবাগকে সহিংস করতে পারেনি। শাহবাগে তখন কয়েক লক্ষ লোক দৈনিক হাজির হচ্ছে, কত মিটার হবে, দুই একশ মিটার দূরে, বিএসএমইউয়ের কেবিনে রাজাকার শিরোমণি গোলাম আজম চিকিৎসা নিচ্ছিল, একটা আঙ্গুলি হেলনে তুলাতুলা হয়ে যেত গোলমাল আজম। অথচ সেই পথে যায়নি। শাহবাগ আন্দোলন করে আইন সংশোধন করে, আইনের পথেই বিচার নিশ্চিত করেছিল কুখ্যাত সব রাজাকারদের। 

    যারা সেদিন শাহবাগে গিয়েছিল তারা আজকে কোথায়? এইটা একটা বড় প্রশ্ন। এই যে এই শক্তিটাকে নষ্ট করে দিয়েছিল আওয়ামীলীগ তার দায় আওয়ামীলীগ নিবে কী? যে নাস্তিক ট্যাগ লাগা শুরু হল তা থামেনি। যে প্রশ্ন কোনদিন এই বাংলায় উঠেনি সেই প্রশ্ন তখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়াল। টপাটপ কল্লা পড়তে লাগল, আওয়ামীলীগ সরকার নীরব হয়ে রইল! রাজীব হায়দার দিয়ে শুরু, শেষ কে জানে কই কাকে দিয়ে! অভিজিত রায়ের মতো নক্ষত্রকে হারিয়ে যেত হলে এখানেই! সরকার অ্যাসাইলামের ব্যবস্থা করে বিদেশ পাঠিয়ে দিতে থাকল। যারা সামনের সারির যোদ্ধা তারা আর প্রায় কেউই রইল না!  

    ফলাফল চোখের সামনে। যে শাহবাগ উত্তাল হত তুমি কে আমি কে বাঙালি বাঙালি বলে সেখানেই স্লোগান উঠল তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার! এই কষ্টের কোন মাপজোক আছে? এমন ভয়ংকর একটা প্রজন্ম তৈরি হয়ে গেল চোখের সামনে অথচ কেউ কিছুই বুঝল না! মেটিকুলাস ডিজাইন বলে আর যাই বলি না কেন, এমন একটা প্রজন্ম তৈরির সমস্ত দায় আওয়ামীলীগের, এতে কোন সন্দেহ নাই। আমরা, আমি জেন জি নিয়ে মশকরা করছি, এরা কিছুই শোনে না, পড়ে না, জানে না, জানতে চায়ও না এগুলা বলে গেছি সব সময়। অথচ বিরোধী শক্তি তা বলে বসে থাকেনি, ওরা যেভাবে শুনতে চায়, যেভাবে জানতে চায় সেভাবেই শুনিয়েছে, জানিয়েছে! আমি জানি খুব স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে লিখছি আমি। সমাজ বিজ্ঞানীরা, নৃ তাত্ত্বিকেরা এই সব নিয়ে ভালো বলতে পারবে যে কেন একটা প্রজন্ম সম্পূর্ণ ভুল দিকে চলে গেল! 

    আওয়ামীলীগ দ্বারা ব্যবহারিত হওয়া, সেই কারণে জামাতের দ্বারা শাহবাগি গালি তৈরি হওয়া এই সবই সত্য। এইটাও সত্য যে এই টাই এখন পর্যন্ত জামাতিদের সবচেয়ে বড় মাথাব্যাথা। ওরাও জানে এখানে হাজিরা দেওয়া লাখ লাখ মানুষ দিকভ্রান্ত হতে পারে, ভুল করতে পারে কিন্তু শেষ পর্যন্ত চেতনার মৃত্যু নাই। শাহবাগের চেতনাকেই তাদের সবচেয়ে বড় ভয়। তাই নানা ভাবে শাহবাগকে অপমান করা হয়, শাহবাগকে নিয়ে নানান কুৎসিত গল্প ফাঁদা হয়, শাহবাগকে গালিতে রূপ দেওয়া হয়। শাহবাগের জ্বালা তারা এখন পর্যন্ত অনুভব করে। তাই শাহবাগকে কেন্দ্র করে তাদের সব আয়োজন করা হয়। শাহবাগেই সমাবেশ করতে হয় হেফাজতের! কারণ আর কিছু না, জ্বালা মেটানোর চেষ্টা! 

    শাহবাগের চেতানাই হয়ত সামনের পথ দেখাবে বাংলাদেশকে। সেই আশায়ই রয়েছি আপাতত।  

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ১৬৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খেলতে খেলতে মতামত দিন