আমাদের এলাকায় একটা পীরের দরগা আছে। পীরের বাড়ির নানা গল্প আমরা শুনছি ছোট থেকেই। শরিয়ত পন্থিদের এগুলা পছন্দ না। আমরাও পছন্দ করতাম না। মনে হত ধুর, এমন হয় না কি! বিশ্বাস করতাম না, করলেও গর্হিত কাজ বলে মনে করতাম। এখন বুঝি সব আমার মতের সাথে মিলবে এমন না, আমার বিশ্বাসের সাথে সবার বিশ্বাস মিলবে না। এইটাই ঠিক, এইটাই সৌন্দর্য জীবনের। ওরা তো কাওকে জোর করছে না, থাকুক না ওরা ওদের মতো করে। কিন্তু আমার মতো ভাবার লোক দেশে এখন কম। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নানা জনে নানা কাজ করেছে আর একটা পক্ষ তৈরি হইছে দেশ থেকে ভিন্নমতকে শেকড় শুদ্ধ উপড়ে ফেলে দিতে। এই কাজ করতে গিয়ে তারা ভিন্ন ধর্মের লোকজনকে যেমন টার্গেট করেছে তেমনই দেশের পীর ফকির, মাজার দরগাকেও টার্গেট করেছে। সেই সূত্র অনুযায়ী আমাদের এখানে একদিন আল্টিমেটাম দেওয়া হল, দিনক্ষণ ঠিক করে বলা হল অমুক দিন আক্রমণ করা হবে দরগায়। সেইবার নানা কৌশলে বেঁচে যায় দরগা। কৌশল কিছু না, টাকা পয়সা দেওয়া হইছে জেলার বিএনপি নেতাদের। কোটি টাকা করে দেওয়া হইছে সভাপতি সাধারণ সম্পাদককে, এমন শোনা গেছে কথা। তো তখন কিছু না হলেও গত পরশুদিন ভোর বেলা, ফজর নামাজ পড়ে আল্লার বান্দারা চড়াও হলেন দরগায়! দরগায় যারা ছিল তারা তাদের সাধ্যমত চেষ্টা করেছে, চেষ্টা মানে মারামারি! তুমুল মারামারি হয়েছে, দুইজনের অবস্থা কাহিল! সেনাবাহিনী যতক্ষণে গিয়েছে ততক্ষণে কাজ করা শেষ। দরগা আগুনে পুড়ে ফিনিশ! দুইজনের একজন গতকাল মারা গেছে! শহরে এখন মাইক দিয়ে আগামীকাল জানাজার খবর প্রচার করছে। মারামারি করতে গিয়ে, আরেকজনের ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে মারতে গিয়ে কেউ মারা গেলেও তাকে শহীদ বলা হবে? এখানে তাই বলা হচ্ছে।
মানুষের জীবনের কোন মূল্য নাই এই দেশে। সবচেয়ে সস্তা সম্ভবত মানুষের জীবন। এইটা যার জীবন যাচ্ছে সেও বিশ্বাস করে যে তার জীবন দরগা ভাঙার কাজে গেলেও সমস্যা না! অভিজিত রায় লিখেছেন বিশ্বাসের ভাইরাস, কিচ্ছু করার নাই সম্ভবত। এই জীবন দিয়ে দেওয়ার লোক দেশ পূর্ণ। আরেকটা গল্প শুনেন, বাংলাদেশ কই দাঁড়ায় আছে বুঝতে পারবেন না পরিষ্কার ভাবে।
আমার এক হিন্দু বন্ধু বাড়ির পিছনের সীমানা বরাবর দেওয়াল তুলছে। আগেও দেওয়াল ছিল, ভেঙ্গে পড়ে ছিল, আবার ওই বরাবরই দেওয়াল তুলছে ও। এখন দেওয়াল অনেকদিন পড়ে থাকায় ওইপাশের লোকজন এদিকে জানলা দিয়ে বসে আছে, ও বলছে যে এইটা তো দেওয়াল উঠবে, জানলা কেন? থাকুক এখন, তখন বলছে এই গল্প। এরপরে এখন ওরা যখন দেখল দেওয়াল উঠছে তখন মন খারাপ করে। দেওয়াল যখন উঠেই পড়ল, জানলা যখন আড়ালে পড়ে গেল তখন শুরু হল গালিগালাজ, মালাউনটাকে কইলাম কয়েকটা ইঞ্চি জায়গা ছাড়ার জন্য, ছাড়ল না! ভাইঙ্গা দে দেওয়াল! এমন নানা শ্রুতিমধুর কথাবার্তা!
গল্প এইটা না, গল্প হচ্ছে এই দেওয়াল তোলার যে কাজ করছে তাকে নিয়ে। রাজমিস্ত্রির হেলপার কিশোর একটা ছেলে। আমার বন্ধু যখন ওর দোকানের কাজ করিয়েছে তখনও ও কাজ করেছে। এবার যখন ওকে দেখা গেল না তখন ও জিজ্ঞাস করেছে অমুক কই? উত্তর আসল ও রাজনীতি করে, রাজনীতির কাজে ঢাকা গেছে! ও আশ্চর্য হলেও কিছু মনে করে নাই। কয়েকদিন পরে রাজনীতি করে তিনি কাজে আসছেন। ও এমনেই জিজ্ঞাস করেছে কই গেছিলা? কিসের রাজনীতি কর? ওকে আগেই একজন বলেছিল ইসলামিক কোন দল করে। সেই অনুযায়ী ও বলছে জামাত কর? ছেলের জবাব হচ্ছে না, জামাত তো গণতন্ত্রের কথা বলে আমরা এগুলা বলি না! আমরা খেলাফতের জন্য রাজনীতি করি! এই পর্যন্ত শুনে আমাকে ধরে নিয়ে গেছে আমার বন্ধু, বুঝার জন্য ও কী বলতে চাচ্ছে তা। আমি জীবনে আর যাই করি না কেন কই চুপ করে থাকতে হয় তা ভালো করেই জানি। আমি জানি এই ছেলের সামনে আমার একটা কথাও বলা যাবে না। আমি অবাক হয়ে শুনলাম ,এই প্রথম প্রথম হস্ত এমন জিনিস দেখলাম! বাচ্চা একটা ছেলে, কী বলতেছে ওর কোন ধারণা নাই। খেলাফতের অর্থ কী? খেলাফত কায়েম হলে ওর অবস্থান কই হবে তাও জানে না। অদ্ভুত ঘোর লাগা একটা ছেলে। এদেরকে ঢাকা নিয়ে যাচ্ছে কারা? কেন নিয়ে যায়? আগে তো রাখঢাক ছিল, এখন তো আর নাই। এই ছেলে কোনদিন জীবন দিয়ে দেওয়ার জন্য বুক পেতে দাঁড়ালে কে বাঁচাবে? আমি তো ভিতু মানুষ, সাহস হল না ওকে দুইটা কথা বলি! এমন কতজন আছে কে জানে! দেশ কোথায় দাঁড়িয়ে আছে বুঝা যাচ্ছে একটু?
কোন কিছুই বিচ্ছিন্ন ঘটনা না। মাজার দরগা ভাঙা, হিন্দুদের ওপরে আক্রমণ, প্রথম আলোকে হিন্দুত্ববাদের ট্যাগ দিয়ে আক্রমণ সবই একই জিনিস। এরাই নানা জায়গায় ছড়িয়ে আছে। এরাই চট্টগ্রামে তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে।
চিন্ময় দাস প্রভুকে জামিন দেওয়া হয় নাই, রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দেওয়া হয়েছে। মামলা আগেই হয়েছিল, ধরা হয়েছে সেদিন। জামিন না দেওয়া যথারীতি আগুনে ঘি ঢালা হয়েছে। চট্টগ্রাম রনক্ষত্রে পরিণত হয়েছে। চট্টগ্রাম আদালতে হিন্দুরা প্রতিবাদ জানিয়েছে, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ইট পাটকেল ছোড়াছুড়ি, ভক্তরা প্রিজন ভ্যানের সামনে শুয়ে পড়েছে, প্রিজন ভ্যানের চাকার হাওয়া ছেড়ে দিয়েছে, পুলিশের গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে চিন্ময় দাস প্রভুকে। গণ্ডগোলের পরে দেখা গেল একজন মৃত! এই লাশকে ফেলল? লাশের গায়ে কোপের দাগ।
যারাই এই কাজ করে থাকুক এইটাকে কাজে লাগাবে কারা? জি, তারা কাজে লাগিয়েছে ভালো ভাবেই। ইশকন নিষিদ্ধ করতেয়ে হবে দাবিতে বিশাল মিছিল হয়েছে। স্লোগান গুলো চমৎকার, একটা একটা ইশকন ধর, ধরে ধরে জবাই কর! দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা! ইশকনের দোষটা কই আমি অনেক ভেবেও বুঝতে পারি নাই। গতকাল রাত ছিল ২৫ মার্চের মতো কালো রাত। আমি আমার পরিচিত হিন্দুদের সবাইকে সতর্ক করে দিছিলাম যে যেন সতর্ক থাকে। সারা দেশে কিছু হয় নাই, শুধু চট্টগ্রামে একটা মন্দিরে হামলা হয়েছে, হরিজন পল্লীতে আগুন দেওয়া হয়েছে। কেউ মারা গেছে এমন শুনি নাই। চট্টগ্রামের এক হিন্দু বন্ধুকে ফোন দিয়ে শুনলাম ওর বাবা মা সারা রাত জেগে ছিল। ওর কাকা, কাকাত ভাইয়েরা সবাই কম বেশি পিটুনি খেয়ে এসেছে! বললাম তাঁদেরকে ঢাকায় তোর কাছে এনে ফেল। বলল তো আনবে। কী হয় কে জানে!
আশ্চর্য হচ্ছে এই যে আর কোথাও কিছু হয় নাই এটাকেই বিশাল প্রাপ্তি বলে মনে হচ্ছে আমার। মনে হচ্ছে বড় একটা ধন্যবাদ দেই বাঙাল মুসলিমকে! চট্টগ্রামে একটু করছেন, বাকি কোথাও কিছু করেন নাই তাই ধন্যবাদ! আমাদের অবস্থা এখন এমনই, এইটাকেই মনে হচ্ছে বলার মতো একটা কাণ্ড। দেখছ কত ভালো একটা কাজ হয়েছে? চট্টগ্রামের কিছু এলাকা বাদে আর কোথাও কেউ হিন্দুদের বাড়িতে আগুন দেয় নাই, ভাংচুর করে নাই মন্দির! কত দারুণ না আমরা?
আমাদের এলাকায় যেখানে দরগা ছিল সেই এলাকার অনেক হিন্দু পরিবার ঘরে তালা দিয়ে, জরুরি কাগজপত্র শুধু সাথে নিয়ে শহরে চলে আসছে! দরগা থাকবে না যাবে, মুসলিমদের দুই পক্ষের ডলায় তারা শুধু জীবন দিতে রাজি না। দেখা গেল সব রাগ বাইপাস হয়ে তাঁদের ওপরে গিয়ে পড়ল! এমনেই ইশকনের নামের আড়ালে হিন্দু নিধনের ডাকও দিচ্ছে তৌহিদি জনতা! তারা ঝুঁকি নিতে চায় নাই। আমি শুনে বললাম খুব একটা খারাপ হয় নাই বুদ্ধি। কয়দিন এমন জায়গায় আসলেই থাকার দরকার নাই।
সবাই বলছে চিন্ময় দাস প্রভুকে ধরেছে তার জন্য এমন করতে হবে কেন? হিন্দুরা বেশি বেশি করছে! সরকারের অধিকার আছে মামলা থাকলে কাওকে ধরার। আইন আদালত আছে, বিচারে কী হয় তা বিচারকের ব্যাপার! মানে একশ ভাগ সুশীল ভদ্রলোকের মতো কথা! হিন্দুরা কেন আদালত প্রাঙ্গণে গণ্ডগোল করল এইটা হচ্ছে তাদের দৃষ্টিতে অপরাধ। কেউ বলছে না আরে লোকটাকে ধরল কেন? কী করছেন তিনি যে ধরে জেলে দিতে হচ্ছে তাঁকে? যখন এইটা জানাই ছিল এই লোককে ধরলে মানুষ খারাপ ভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে তখন আমি কেন এই মুহূর্তে দেশকে অস্থিতিশীল করতে যাব? রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা! বাপরে! অবশ্য আশ্চর্য আর কী? এই দেশে জাহানারা ইমামের নামেও রাষ্ট্রদ্রোহি মামলা হয়েছে তো!
ইউনুস ভক্তকুল যথারীতি ওয়াও ওয়াও বলা যাচ্ছে! কেন করছে তাও জানে না, কিন্তু বলে যাচ্ছে। বিএনপির মহাসচিব বরং বেশ বুদ্ধিদীপ্ত কথা বলেছেন। প্রথম আলো থেকে তুলে দিচ্ছি,
"বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য দীর্ঘ ১৫ বছর লড়াই করেছে, প্রাণ দিয়েছে, কারাগারে গেছে, নির্যাতিত হয়েছে। সেই মানুষগুলো ২০২৪-এর ৫ আগস্ট আরেকটি বিজয় অর্জন করেছে। সেই বিজয় অর্জন হয়েছে রাজপথে অনেক রক্তের মধ্য দিয়ে, অনেক প্রাণের ভেতর দিয়ে। কিন্তু তার ফল কি এই বাংলাদেশ? তিন মাস হয়নি, এখনই রাস্তায় রাস্তায় লড়াই শুরু হয়েছে। একজন আরেকজনের বুকের রক্ত ঝরাচ্ছি। এখন পত্রিকা অফিস পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, আক্রমণ করছে।’
এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘এই কয়টা দিনে আমরা খুব চিন্তিত, উদ্বিগ্ন, ভয়াবহভাবে উদ্বিগ্ন। আপনি চিন্তা করতে পারেন, ধর্মকে কেন্দ্র করে কী উন্মাদনা শুরু হয়েছে বাংলাদেশে! আপনি চিন্তা করতে পারেন, যে মুক্ত স্বাধীন মিডিয়ার জন্য আমরা এত দিন লড়াই করলাম, তার অফিস পুড়িয়ে দিচ্ছে! এই বাংলাদেশ তো আমরা দেখতে চাই না, আমি অন্তত চাই না।’'
মির্জা ফখরুল ইসলামের ভদ্রলোক বলে সুনাম আছে। তিনি তার মতো করেই বলেছেন। বাকিদের হুশ হবে? হুশ ফিরবে এইটা আশা করাও দুরাশা না? রন্ধ্রে রন্ধ্রে জামাতের বিষ ঢুকিয়ে যদি কেউ আশা করে এইখান থেকে ভালো কিছু বের হবে তাহলে গালি দিয়ে চুপ করে যাওয়া ছাড়া আর কিছু করার নাই।
পুরো দেশ একটা বারুদের পিপায় বসে আছে। সলতেতে আগুনও দেওয়া হয়ে গেছে। আগুন বারুদ পর্যন্ত যেতে যতক্ষণ আর কী! এই দুনিয়ায় ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করে কেউ উঠতে পারে নাই। আমরা পারব এমন কোন কারণ নাই। চোখের সামনে নানা উদাহরণ আছে কিন্তু আমরা আছি আত্মহত্যার নেশায় মত্ত। বারুদে আগুন দেওয়ার জন্য উম্মুখ হয়ে আছি আমরাই। আমাদের বাঁচাবে কে? নানা দিক দিয়ে নষ্ট হয়ে যাওয়া দলটাকে শুধু এই কারণেই সমর্থন করে গেছি। বিশ্বাস করা না করা আপনাদের ব্যাপার। ধর্মান্ধতাকে গলা টিপে রাখা যেত। বধ্য গ্রামে আমার এক বন্ধু আওয়ামীলীগের রাজনীতি করত। যেখানে হুজুরদের কথাই হচ্ছে আইন সেখানে ও সবার সামনে বলেছিল ওয়াজ করবেন কিন্তু এমন বক্তা যদি আনেন যে ধর্মের কথা না বলে আরেক ধর্মকে গালি দিবে, উল্টা পাল্টা মিথ্যা কথা বলবে, এমন কাওকে যদি আনেন তাহলে ওই বক্তাকে সহ সবাইকে গণপিটুনি দেওয়ার ব্যবস্থা করব! এইটা যখন আমি শুনছি তখন আমি ওকে বলছিলাম তুই করছস কী এইটা? ডরাস নাই? ওর কথা হচ্ছে ভয় পাওয়ার প্রশ্নই আসে না! আমি সঠিক ছিলাম কি না এইটাই হচ্ছে আসল কথা। আমি জানি আমি যদি সত্য বলে থাকি তাহলে আমার সাথেই মানুষ থাকবে। তখন ওকে বলি নাই কিন্তু জানতাম এগুলা কিছু না, ও আওয়ামীলীগের রাজনীতি করে, উচ্চ শিক্ষিত ছেলে এইটাই ওর বড় শক্তি। এই বিষয়টাই এখন নাই। কেউ কিছু বলতে পারছে না। ধর্মের নামে যত বড় অধর্মই হোক না কেন কেউ বলার নাই, কেউ থামানোর নাই। ওই বন্ধু এখন ফেসবুকে ফুল পাখি পোস্ট করে!
যাই হোক, সত্য হচ্ছে এইটাই যে বিস্ফোরণ ঘটবেই, শুধু সময়ের অপেক্ষা।
ভালো লাগে না, দম বন্ধ লাগে। এলাকায় কোপাকুপি হয়ে গেছে বিএনপির দুই গ্রুপের ভিতরে! আমার বড় ভাইয়ের শ্বশুরকে ধরে নিয়ে গেছে পুলিশ। ওঁর শাশুড়িকেও ধরার কথা ছিল, তিনিই মূলত রাজনীতি করতেন আওয়ামীলীগের। জেলা কমিটিতে ছিলেন। তিনি কোনমতে রক্ষা পেলেও ওঁর শ্বশুর আর রক্ষা পান নাই। ব্যবসাপাতি চাঙে উঠছে! এখন শতভাগ আমার মেজভাইয়ের ওপরে নির্ভরশীল আমি। ওঁ নিজেও বিপদে আছে। করত ছাত্রলীগ এক সময়। আওয়ামীলীগের দুর্দান্ত সময়ে কিছুই করতে পারে নাই। কিন্তু ওঁ ছাত্রলীগ করত, আওয়ামীলীগ সমর্থক এইটা মনে হয় আমাদের এলাকার জানে না এমন কেউ নাই। এই জন্য ওঁ নিজেও স্বস্তিতে নাই এইটাও বুঝি। ওঁ বাড়ির বাহিরেই বেশি থাকছে, ওঁর অফিসের কাজেই যেতে হচ্ছে, এইটাই রক্ষা।
শেষ করি একটা আশার কথা বলে। আমি আজকে যখন বাড়ি ফিরছি বাহির থেকে তখন আমার রিকশাওয়ালা, যে আমাকে আমার ছোটবেলা থেকেই রিকশা করে নিয়ে যায় নিয়ে আসে, সে আমাকে ভালো করেই চিনে, সম্ভবত তাই নিজের কথা বলার সাহস পেয়ে বলল যে মাইক শুনছ? আমি বললাম কোন মাইক? বলল কালকে জানাজার জন্য মাইক মারতেছে! আমি কিছু বলার আগেই ওঁ বলল তুমরা তো শিক্ষিত মানুষ, কউ দেখি পীরের বাড়ির দুষটা কই? ওরা গেছিল কারো কাছে? ওরা কাওকে ধরে মারছে? ওরা উজায় গিয়া মারছে? তোরাই গেলই ওগোরে মারতে, মারবার গিয়া মরলি, দুষ কার এনু? আমি কইলাম তুমি বুঝ না এখনকার অবস্থা? ওঁ হাসল, কয় অইডাই, জুর থাকলে যা ইচ্ছা তাই করুন যায়!
অনেক শিক্ষিত মানুষের চেয়ে সম্ভবত ওঁর বিচার বিবেচনা ভালো আছে। এরা থাকলে ভরসা পাই। দেখা যাক সামনে কী আছে।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।