১০০ দিন পার করে দিলাম আমরা নোবেল রাজত্বে! ১০০ দিন পার করা উপলক্ষে নোবেল ম্যান জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন। এ এক আশ্চর্য ভাষণ, না শুনলে বিশ্বাস করা কঠিন। যখন মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে বেঁচে থাকতেই, যখন দেশের ইতিহাসে সম্ভবত সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় আছে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, তখন তিনি নিজের শাসনের একশ দিনের প্রশংসায় নিজেকে ভাসালেন। সব না কি দুর্দান্ত চলছে। আইন শৃঙ্খলা ঠিক আছে, সংখ্যালঘুদের ওপরে যে অত্যাচারের গল্প আপনারা শুনেছেন, পড়েছেন তা অতিরঞ্জিত বলে তিনি জানিয়েছেন। অর্থনীতিও ঘুরে দাঁড়িয়েছে! পতিত সরকার অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়ে গেছিল। যদিও তার উপদেষ্টা ক্ষমতা নেওয়ার পরে বলেছিল যত খারাপ ভাবা হয়েছিল তত খারাপ না দেশের অর্থনীতি। তবে তিনি অর্থনীতি নিয়ে কিছু বললে আমাদের মতো ফালতু লোকজনের কিছু বলার উপায় নাই আসলে। তিনি নিজে অর্থনীতিবিদ, শান্তিতে পেয়েছেন নোবেল। তার অর্থনীতি জ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ আছে? কিন্তু তিনি যে বললেন রিজার্ভে হাত না দিয়েই ঋণ শোধ করেছেন, এই জিনিস কীভাবে সম্ভব তা বুঝে আসল না! এইটা কোন ফর্মুলা? নিজের পকেট থেকে শোধ করেছেন? উনার বান্ধবীরা কেউ শোধ করে দিয়েছে বাংলাদেশের ঋণ? টাকাটা যদি আমাদের পকেট থেকেই যায় তাহলে রিজার্ভে হাত না দিয়ে ঋণ শোধ করেছেন বলার অর্থ কী? একটু বেশিই ছাগল মনে করে আমাদেরকে?
১০০ দিনে বলার মতো একটা কাজ করা হয় নাই। অথচ আধা ঘণ্টা ধরে নানান কাজের ফিরিস্তি দিয়ে গেলেন।অবশ্য তার মধ্যে বেশিরভাগ সময় গেছে আওয়ামীলীগের বন্দনা করে! যেখানে যা একটু সাফল্য তা তার সাফল্য আর যেখানে ব্যর্থ সেটা গত সরকারের দোষ! সহজ সরল ফর্মুলা দেশ চালানোর। এই ফর্মুলায় অনন্তকাল দেশ চালানো যাবে, কোন সমস্যা নাই।
যে বন্যা নিয়ে লেজেগোবরে করে ফেলেছে ইউনুস প্রশাসন সেই বন্যা নিয়েই কৃতিত্ব নিয়ে নিলেন তিনি! আরে ভাই আমাদের এলাকায় মানুষের ঘর বাড়ি আমরা তুলে দিচ্ছি, আমাদের বন্ধুদের একটা ফাউন্ডেশন আছে তার মাধ্যমে। আমি একেবারে মাঠের খবর জানি যে কিছু করেন নাই আপনেরা! একের পর এক বাড়ি নাই হয়ে গেছে। তীব্র স্রোতে এমন ভাবে বাড়িঘর নিয়ে চলে গেছে যে দেখলে মনে হয় টর্নেডো হয়ে গেছে! আমরা আমাদের সাধ্যমত করছি। সরকারের তরফ থেকে আশ্বাস ছাড়া আর কিছুই পাই নাই। কিছু বাড়ি আছে দ্রুত দাঁড়া করানো দরকার, বাড়িতে মেয়ে আছে, কলেজে পড়ে, অনার্সে পড়ে এমন মেয়ে আছে বাড়িতে। এরা এখন কই যায়? সচ্ছল পরিবার না, এদের আত্মীয় স্বজনও সব গরিবই, কে জায়গা দিবে? এরা থাকেই কই, বাথরুম করে কই? আমি চোখের সামনে দেখে হতবাক হয়ে গেছি। কিচ্ছু করার নাই যেন! মানুষ কত অসহায় যে হয়ে পড়ে প্রকৃতির হাতে তার এক অন্য রকম নজরানা দেখলাম আমরা। আর তিনি বলছেন বন্যা পরিস্থিতি দারুণ ভাবে সামলিয়েছেন! মিথ্যুক।
অবিশ্বাস্য কাণ্ড হয়ে গেছে এর মধ্যে। তিনজন নতুন উপদেষ্টা নিয়োগ দিয়েছে সরকার। অবিশ্বাস্য কাণ্ড হচ্ছে এর একজন হচ্ছে মোস্তফা সারোয়ার ফারুকি! পা থেকে মাথা পর্যন্ত ভণ্ড একজন মানুষ, উপদেষ্টা হয়ে গেলেন! পুরো আওয়ামী আমলে তিনি টুকটাক নানা সমালোচনা করে গেলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আওয়ামীলীগকে তেল দিয়েই চলেছেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদকে নিজের নেতা বলে ফেসবুকে লিখেছেন। পলকের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে ছিলেন, এমন নানা সময় নানা ভঙ্গিতে তেল দিয়ে গেছেন আওয়ামীলীগের নেতাদের। ৫ আগস্টের পরে ৩২ নাম্বার নিয়েও তিনি পোস্ট দিয়েছেন। বলেছেন সরকারের উচিত এইটাকে দ্রুত ঠিক করা। এই লোক এখন নিজেই উপদেষ্টা, শেখ মুজিবকে যখন সকাল বিকাল অপমান করা হচ্ছে, করছে এই সরকার তখন তার বক্তব্য কী? কিচ্ছু না। কারণ তিনি আপদমস্তক ভণ্ড!
তাকে মোল্লারা এবং সমন্বয়করাও পছন্দ করে নাই। তারা রীতিমত ক্ষুব্ধ হয়ে ফেসবুকে নানা পোস্ট দিয়েছে। এর জবাবে ফারুকি নিজের সাফাই গেয়েছেন। সেখানেও ভণ্ডামি! তিনি না কি বহু আগে থেকেই সরকার পতনের কাজ করে চলছিলেন! কত আগে? ২০১২ সালেই তিনি গোপন মিটিং করেছেন! এখন আমাকে কেউ বুঝান ২০১২ সালেই কেন কেউ আওয়ামীলীগ সরকারের পতন চাইবে? ২০০৯ ক্ষমতায় আসা দলটা তখন তো বৈধ ভাবেই ক্ষমতায়। দেশের নির্বাচনের ইতিহাসে সবচেয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের একটায় জিতে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এসেছিল, তাহলে ওই সরকারকে সময়ের আগেই কেন ফেলে দিতে ফারুকি মিটিং করবে? কাঁচা মিথ্যা কথা না এগুলা?
কিন্তু এই রকম কথা এই সরকার, সরকারের প্রধান, সমন্বয়করা সবাই বলে যাচ্ছে এখন। জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণেও বলেছেন । প্রথম পাঁচ বছরও এই হিসাবে আসবে? ওইটা বৈধ ভাবে আসা সরকার ছিল না? প্রথম পাঁচ বছর নিয়ে যারাই আপত্তি তুলছেন তাদের কথা শুনলেই আমার মনে হয় যে এইটা আর আর কিছু না, রাজাকারদের ফাঁসির জন্য কান্নাকাটি! এ ছাড়া আর কোন কারণ নাই। ২০১৪ সালের নির্বাচনের জন্য অনেকেই দ্বিতীয় ধাপের আওয়ামীলীগ সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে। কিন্তু সত্য হচ্ছে দ্বিতীয় ধাপেও আওয়ামীলীগ লাইনেই ছিল। আওয়ামীলীগের পতন শুরু হয় মূলত তৃতীয় ধাপে এসে। যাই হোক, আপনি কখনই এক দাগে সব ভুল বলে বাতিল করে দিতে পারবেন না। আওয়ামীলীগ আমলে যা হয়েছে সব অন্যায়, সব ভুল, সব দুর্নীতি এই ধারণা থেকে বের হতে না পারলে যা হবে তা হচ্ছে আওয়ামীলীগ যাকে শাস্তি দিয়েছে, প্রাপ্য শাস্তিও যদি পেয়ে থাকে তাহলেও আপনি যেহেতু সব অন্যায় বলে রায় দিচ্ছেন তখন সেও গলা বাজি করছে যে তাকেও অন্যায় করেই শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এমন সব ক্ষেত্রেই হবে। যে জরুরি উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হাতে নেওয়া হয়েছিল তা যদি এখন আপনি সব ভুল, টাকা খাওয়ার ধান্দা বলে বাদ করে দেন তাহলে আসলে ক্ষতিগ্রস্থ হবে দেশ, আর কেউ না। ঠিক তাই হচ্ছে এখন কর্ণফুলী টানেল নিয়ে। বলা হচ্ছে এইটা একটা লস প্রজেক্ট। আওয়ামীলীগ সরকার শুধু শুধু তৈরি করেছে এইটা। এখন এর রক্ষণাবেক্ষণ খরচ দিতে গিয়ে লসে চলে যাচ্ছে এই প্রকল্প। এখন এইটা এমন মনে হওয়াই স্বাভাবিক। কর্ণফুলী টানেলের যে পরিকল্পনা ছিল তাতে প্রথম দিকে লসে চললেও পরে তা লাভে যাওয়ার কথা। যেখানে এই টানেল করা হয়েছে তার বিপরীত পাশে অর্থনীতি অঞ্চল করার কথা। বিদেশি বিনিয়োগ আনার জন্য সব তৈরি করা হচ্ছিল। ওই পরিকল্পনার অংশ ছিল কর্ণফুলী টানেল। এখন যে অবস্থা, বিদেশিরা পাগলা হইছে আসবে বিনিয়োগ নিয়ে? অলরেডি ঠিক আমাদের ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। তখন আমাদের অর্থমন্ত্রীরা নানান দাতা গোষ্ঠীর কাছে হাত পাততে বিদেশ সফর করত। ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে ঘুরতে হত আমাদের। অমুক অমুকের কাছে এত বিলিয়ন ডলার চাওয়া হয়েছে এইটা আসলে ওইটাই, হাত পেতে চলার অবস্থা।
ভিন্ন কথা কই এখন। দেশে হুট করেই মব সংস্কৃতির ভিন্ন রূপ দেখা যাচ্ছে। কোনমতেই মডেল, অভিনেত্রীদেরকে কোন দোকান বা প্রতিষ্ঠান উদ্বোধন করতে দেওয়া হচ্ছে। প্রথম সারির তিনজন হেনস্তার শিকার হয়েছে এর মধ্যে। মানে একদম জীবন নিয়ে কোনমতে পালিয়ে আসা আর কী! একটার ক্ষেত্রে হুজুর দিয়ে উদ্বোধন করানো হয়েছে। সবাই বলেন আলহামদুলিল্লাহ!
এগুলাই হচ্ছে যে শক্তির উত্থান নিয়ে ভয় পাচ্ছি সেই শক্তির কাজ কারবার। এরাই হুট করে ইস্কনের বিরুদ্ধে কথা বলা শুরু করে দিয়েছিল। এদের তো কোন হুজুগ তুলতে কোন চিন্তা ভাবনা লাগে না। তুললেই হল! ইস্কনের বিরুদ্ধে আন্দোলন বেশি জমতে পারল না অবশ্য। কারণ ট্রাম্প মহাজন তুলসী গ্যাবার্ডকে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক হিসেবে নিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে! তুলসী গ্যাবার্ড নাম আগে বাংলার বুকে কয়জন জানত জানি না। কিন্তু ঘটনা কী জানার আগেই যে ভিডিও চোখের সামনে আসছে তা হচ্ছে ইস্কন মন্দিরে তিনি গান গাইছেন! অটোম্যাটিক ইস্কন নিয়ে দেশের তৌহিদি জনতার আগ্রহ নাই হয়ে গেল! এইটা ভালো না?
আমাদের এলাকার কথা বলি। এখানে বিএনপি নেতারা নিজেদের এমপি হিসেবে ভাবা শুরু করে দিয়েছে। এসপি, ডিসি, পুলিশ, প্রশাসন সবাই নতজানু হয়ে গেছ তাদের প্রতি! দেশের রাজনীতি একদিকে, কই থেকে কই যাচ্ছে তার কোন হিসাব নাই আর আমাদের এলাকার বিএনপি আছে আরেক তালে! এ টু জেড ক্ষমতা নিয়ে নিয়েছে তারা। চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে ক্ষমতার ভাগাভাগি সব নিজেদের মতো করে নিয়েছে। তামশা না?
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।