এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  কাব্য   তর্জমা

  • বিষধরীকথা (সংস্কৃত কাব্য)

    আদিত্যস্বামী
    কাব্য | তর্জমা | ০৫ অক্টোবর ২০২৫ | ১৬ বার পঠিত
  • **প্রথমঃ সর্গঃ**
    **বিষবল্লরী-প্রবোধনম্**
     
    স্মৃত্যাঃ পটেঽন্তিমলবে বিললাস চিত্রং
    দীপোৎসবা কুলসভাজনহর্ষসান্দ্রং।
    গান্ধর্বসত্রপরমোচ্চিততাননিদ্রা-
    মগ্নাঽভবং কথমহং ন তদভ্যজানম্॥ ১॥
     
    নিস্তন্দ্রতা ক্ষণমবাপ্য চ যত্র চেতঃ
    প্রাবর্তত স্মৃতিপথান্বেষণে মদীয়ম্।
    তত্রানুভূতচরবস্তু ন কিঞ্চিদাীদ্
    গম্ভীরশান্তিপরিখাপরিরুদ্ধমাসম্॥ ২॥
     
    চৈতন্যমাপ্য শনকৈর্মম নাসিকান্তং
    কস্তূরিকাঘনসরুপ্রচুরঃ সুগন্ধঃ।
    কশ্চিদ্ বিচিত্রকটু ভৈষজমূলগন্ধ-
    সম্মিশ্রিতঃ প্রবিশতি স্ম বিমোহকারী॥ ৩॥
     
    শয্যা ন তূলমৃদুলাঽপি তু চিক্কণং তৎ
    কাষ্ঠং যদুপরি দুকূলবিতানমাত্রম্।
    শুষ্কৈশ্চ পুষ্পপটলৈঃ কৃতমুপধানং
    প্রাচীনতামিহ সমগ্রতয়া ব্যনক্তি॥ ৪॥
     
    নেত্রে নিমীল্য শনকৈরঽমুন্মিষামি
    স্নিগ্ধপ্রভং শিখয়ৈকয়া জ্বলৎপ্রদীপম্।
    ভিত্তিষ্বলঙ্করণবল্লিচয়ং প্রপশ্যন্
    প্রাসাদকক্ষমিতি চেতসি নিশ্চিনোমি॥ ৫॥
     
    দূরস্থিতা মলিনতাম্রদর্পণেঽহং
    স্বং দ্রষ্টুকামতয়া তল্পতলাদুদস্থাম্।
    গাত্রেষু মে কিমপি লাঘবমপ্রমেয়ম্
    অঙ্গেষু নর্তনকলাজনিতা বিলাসাঃ॥ ৬॥
     
    যদ্ বিম্বিতং প্রতিকৃতৌ মম রূপমাসীৎ
    তৎপ্রেক্ষ্য মে হৃদয়মাবিরভূৎ প্রকম্পঃ।
    ন শ্রেয়সাভিধকলাবিদুষাঃ স্বরূপং
    তৎ কাপি সপ্তদশবর্ষবয়াস্তরুণী॥ ৭॥
     
    তপ্তোজ্জ্বলৎকনককান্তিমনোহরং তদ্
    গাত্রং দধৌ তনুরুহাং নলিনাভনীলাম্।
    পীনস্তনং কৃশবিলগ্নমতী রম্যং
    সৃষ্টং স্মরেণ ভুবনত্রয়মোহনার্থম্॥ ৮॥
     
    নেত্রে বিশালকমনীয়দলায়তে দ্বে
    দ্রোণ্যৌ দ্রুবর্ণরসপূরিতচারুশোভে।
    নাসীৎ তয়োর্নবয়সঃ সরলাঽভিব্যক্তিঃ
    প্রজ্ঞা তু গূঢ়বিষমা হি তথা চ হিংস্রা॥ ৯॥
     
    সাঽহং তদেব বপুরিত্যবধার্য চিত্তে
    ভীত্যা জডীকৃততনুর্বচসা বিহীনা।
    তাবৎ স্মৃতিপ্রলয়বেগজলাপ্লুতা মে
    মূর্চ্ছাময়ী ব্যথিতমানসতাং জগাম॥ ১০॥
     
    গৌডস্য শান্ততপসঃ স্থলচিত্রমৈকং
    বাৎস্যদ্বিজস্য পরিবারসুখং চ বাল্যে।
    দৃষ্ট্বাঽহমার্তপিতরৌ হৃতকন্যকৌ তৌ
    দস্যোর্হয়ে দ্রুতগতে বিলয়ং গতৌ চ॥ ১১॥
     
    সা বালিকাঽহমথ চালুক্যদুর্গগূঢ়ে
    নীতাঽভবং ক্রূরমুখৈরধিকারিভির্যৈঃ।
    বিশাখদত্ত ইতি নাম্না সচিবেন সা হি
    কাব্যেতি সান্ত্বনবচোভিরভাষ্যতাদৌ॥ ১২॥
     
    তস্যাস্ততঃ প্রতিদিনং গরদানদীক্ষা
    প্রারব্ধবান্ স সচিবো নিজকার্যসিদ্ধয়ে।
    পারদাদ্যৈর্বিষবরৈঃ পরিপাচিতং যদ্
    অন্নং তদেব খলু ভোজনমাবভূব॥ ১৩॥
     
    দেহোঽভ্যনন্দত শনৈরপি কালকূটং
    রক্তং সিরাসু সকলং গরলীবভূব।
    স্বেদঃ পয়োঽশ্রু কণিকাঽপি বিষাত্মিকাঽভূদ্
    বিষদ্রুমাঙ্কুর ইবাবর্ধত সা কুমারী॥ ১৪॥
     
    প্রাপ্তে নবযৌবনভারভরে তু তস্যাঃ
    শিক্ষারসাঃ প্রবিষয়ুর্বিষয়ান্তরাণি।
    বেশ্যাঙ্গনাভিরুপদিষ্টরহস্যবিদ্যা
    সা কামশাস্ত্রনিপুণা প্রমদা কৃতাঽসীৎ॥ ১৫॥
     
    আলিঙ্গনং কথমুরোজযুগেন কার্যং
    যোষিদ্ভিরেব পরিরম্ভণচুম্বনানি।
    দন্তচ্ছদেষু দশনাঙ্কনলাস্যলীলা
    শ্রোণীতটেষু নখরাগ্রবিলেখনানি॥ ১৬॥
     
    মূলে ভুজস্য গলকূপতলে চ গুহ্যে
    জিহ্বাপ্রবেশনবিধিক্রমচাতুরী চ।
    যোনৌ যথা পুরুষলিঙ্গনিপীডনাদ্ বৈ
    বীর্যচ্যুতিঃ ত্বরিতমেব ভবেৎ প্রিয়স্য॥ ১৭॥
     
    এবং রতেঃ পরমসৌখ্যপদে নিমগ্নং
    কান্তং কথং নু শনকৈর্বিষযোগঘাতৈঃ।
    হন্যাদিতি প্রথিতকৌশলমপ্যবাপ
    মৃত্যোঃ কলাসু সকলাসু চ সা প্রবীণা॥ ১৮॥
     
    তস্যাঃ স্মৃতির্মম মতিং সহসা বিবেশ
    তস্যা ব্যথা মম বভূব শরীরনিষ্ঠা।
    একাত্মতাং গতবতোঃ খলু চেতসোর্নোঃ
    গায়ন্ত্রিকাঽহমধুনা গরকন্যকাঽস্মি॥ ১৯॥
     
    আত্মানমেবমতিভীষণরূপধারং
    জ্ঞাত্বা বিষাদবিবশা শয়নে ন্যষীদम्।
    যা মেঽঙ্গুলিঃ সুরবিভূষণবীণাতন্ত্র্যাং
    নৃত্যত্যসৌ নখমুখেঽদ্য বিষং বিভর্তি॥ ২০॥
     
    তাবদ্ বহিঃ পদরবো মৃদুরভ্যুপৈতি
    দ্বারং চ চীৎকৃতিলয়ান্বিতমুদ্বভূব।
    প্রৌঢাঽবিশৎ সিতদুকূলধরা চ নারী
    বৎসেতি কাব্যহৃদয়ং নিজগাদ সা স্মৃতিঃ॥ ২১॥
     
    সা মামুপেত্য নিপুণং পরিদৃষ্টগাত্রী
    প্রোবাচ তীক্ষ্ণনয়না স্মিতলেশযুক্তা।
    “কাব্যে! প্রবুদ্ধাসি? তবাদ্য হি রত্রিয়োগে
    শিক্ষার্পণে প্রথমপর্ব ভবিষ্যতীহ॥ ২২॥
     
    “স্নানাদিকং তব কৃতে পরিকল্পিতং বৈ
    স্নিগ্ধৈঃ সুগন্ধিভিরলঙ্করণৈঃ সমেতম্।
    অমাত্যদেব ইত আগমিষ্যতি স্বয়ং তে
    কৌশল্যমদ্য নিপুণং পরিমাতুকামঃ॥” ২৩॥
     
    তস্যা বচো নিশময়ন্নপি মেঽন্তরাত্মা
    নৈবাকরোৎ কিমপি ভাষিতুমুদ্যমং হি।
    কিং ব্রূমি? কোঽহমিতি? সত্যবচঃ কথং মে
    বিশ্বাসমেষ্যতি? ভবেয়মহং ন চোন্মাদিনী?॥ ২৪॥
     
    কিং ত্বাত্মনোঽনিয়ন্ত্রিতং মম বাগ্যন্ত্রং
    প্রোবাচ সংস্কৃতবচঃ কনডাভিযুক্তম্।
    “আর্যে! প্রতীক্ষিতবতী তব শাসনানি
    সজ্জাঽস্মি কার্যকরণায় গুরোর্নিদেশাৎ॥” ২৫॥
     
    তুষ্টা বভূব বচসা মম তেন সা স্ত্রী
    ভূয়ো জগাদ শনকৈরপসৃত্য পার্শ্বম্।
    “সত্যং ত্বমস্ত্রমসি চালুক্যরাজলক্ষ্ম্যাঃ
    গৌডদ্বিজস্য তনয়াঽপি সুসংস্কৃতাসি॥ ২৬॥
     
    “আগচ্ছতি স্ম মগধাগ্ গূঢ়পুরুষো যঃ
    তস্মৈ ত্বয়াঽদ্য নিশি দেয়মরণ্যদানম্।
    মোহেন তেন সহ সঙ্গম্য কামলীলাং
    কৃত্বা বিষেণ বিনিপাতয় তং ক্ষণেন॥” ২৭॥
     
    হত্যা! চরাচরণম্! প্রেমবিপর্যযশ্চ!
    চিত্তং মমেদমকথোৎ- নহি, ন ক্বচিৎ তৎ।
    কিন্তূত্তরং মম মুখাৎ স্বয়মেব জাতং
    “রাজ্যাজ্ঞয়া মম শিরোঽবনতং সদৈব॥” ২৮॥
     
    সা মাং করগ্রহপুরঃসরমানিনায়
    স্নানালায়ং যদভবৎ সুমনোহরং চ।
    উষ্ণোদকপ্রপতনৈঃ পরিপূরিতায়াং
    দ্রোণ্যাং জজৃম্ভিরিরে পারিজাতপুষ্পাঃ॥ ২৯॥
     
    নগ্নাং বিধায় মম দেহলতিকাং মনোজ্ঞাং
    দস্যো লিলেপুরগুরুপ্রভৃতৈশ্চ তৈলৈঃ।
    মজ্জন্তি পীনকুচমণ্ডলনাভিদেশে
    তাসাং করাঃ, মম তু নো হৃদি বিক্রিয়াঽভূৎ॥ ৩০॥
     
    ভূষাম্বরাণি পরিধায় ততঃ প্রকৃষ্টা
    কক্ষেঽন্যস্মিন্ নিবিশিতাঽহমভূবমেকা।
    কণ্ঠে মদীয়গরলস্ফটিকাত্তহারং
    সা বৎসলাবদদসৌ তব গুহ্যমস্ত্রম্॥ ৩১॥
     
    বীণারবঃ শ্রবণরন্ধ্রমুপৈতি মন্দং
    তল্পে স্থিতাঽহমথ পশ্যতি শূন্যমেব।
    কণ্ঠো মদীয়মধুরস্বরজন্মভূমিঃ
    সোঽয়ং কথং গরলতাবিষজন্মভূমিঃ॥ ৩২॥
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • আদিত্যস্বামী | 2a02:6ea0:5601:6474::***:*** | ০৫ অক্টোবর ২০২৫ ০৪:৪২745900
  • **বিষবল্লরী-প্রবোধনম্** (বিষকন্যার জাগরণ)
     
    **ভাবানুবাদ:**
     
    আমার স্মৃতির পটে শেষ মুহূর্তে একটি চিত্র ভেসে উঠল - দীপোৎসবের আলোকমালা, পারিবারিক সভার আনন্দে মুখরিত পরিবেশ। গান্ধর্ব সংগীতের উচ্চমার্গীয় সুরের মূর্ছনায় আমি গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলাম। কীভাবে এসব ঘটল, আমি তা বুঝতে পারলাম না।
     
    যখন ক্ষণিকের জন্য তন্দ্রাহীনতা অনুভব করে আমার চেতনা স্মৃতির পথে অনুসন্ধান করতে লাগল, তখন সেখানে পূর্বে অনুভূত কোনো কিছুই খুঁজে পেলাম না। আমি যেন গভীর শান্তির এক অদৃশ্য পরিখা দ্বারা চারদিক থেকে ঘেরা ছিলাম।
     
    ধীরে ধীরে চৈতন্য ফিরে পেতেই আমার নাসিকায় কস্তুরীর ঘন সুগন্ধ প্রবেশ করল। সাথে ছিল কোনো এক বিচিত্র কটু ঔষধি মূলের গন্ধ, যা মিশ্রিত হয়ে এক মোহনীয় সুবাস সৃষ্টি করছিল, কিন্তু তা ছিল বিভ্রান্তিকর।
     
    আমার শয্যা তুলার মতো কোমল ছিল না, বরং তা ছিল মসৃণ কাঠের তক্তপোষ, যার উপর শুধু একটি রেশমী চাদর বিছানো। শুকনো ফুলের স্তূপ দিয়ে তৈরি বালিশ এই স্থানের প্রাচীনত্বের সাক্ষ্য বহন করছিল।
     
    আমি ধীরে ধীরে চোখ খুললাম এবং দেখলাম একটি মাত্র শিখায় জ্বলছে স্নিগ্ধ আলোর প্রদীপ। দেয়ালে শোভা পাচ্ছে অলংকরণের লতাপাতার নকশা। এসব দেখে আমার মনে দৃঢ় বিশ্বাস জন্মাল যে এটি কোনো প্রাসাদের কক্ষ।
     
    দূরে রাখা একটি মলিন তাম্রদর্পণে নিজেকে দেখার তীব্র ইচ্ছায় আমি শয্যা থেকে উঠে দাঁড়ালাম। আমার শরীরে অনুভব করলাম এক অবর্ণনীয় লাঘব, আমার অঙ্গপ্রত্যঙ্গে যেন নৃত্যকলা থেকে উদ্ভূত সহজাত লাস্য।
     
    দর্পণে আমার যে প্রতিবিম্ব দেখলাম, তা দেখে আমার হৃদয় কেঁপে উঠল। এ তো আমার পরিচিত শ্রেয়সী গায়িকার রূপ নয়, এ যেন কোনো সতেরো বছর বয়সী এক অপরূপা তরুণীর দেহ।
     
    সেই দেহ ছিল তপ্ত স্বর্ণের মতো উজ্জ্বল কান্তিময়, পদ্মের পাপড়ির মতো নীলাভ কেশে আবৃত। পীন উন্নত স্তন, ক্ষীণ কটিদেশ - যেন স্বয়ং কামদেব ত্রিভুবন মোহনের জন্য এই রূপ সৃষ্টি করেছেন।
     
    দুটি বিশাল আয়ত চোখ যেন পদ্মদলের মতো, মদিরার রসে পূর্ণ মাদকতাময় শোভায় ভরা। কিন্তু সেই চোখে নবযৌবনের সরল অভিব্যক্তি ছিল না, বরং ছিল গূঢ়, বিষম এবং হিংস্র এক প্রজ্ঞা।
     
    আমি যে এই দেহেরই অধিকারিণী - এই উপলব্ধি আমাকে ভয়ে পাথর করে দিল। আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। তখন স্মৃতির প্রবল বন্যা আমাকে গ্রাস করল এবং আমি মূর্ছিত হয়ে পড়লাম, মন ব্যথায় ভরে উঠল।
     
    স্মৃতিতে ভেসে উঠল গৌড়দেশের এক শান্ত তপস্বীর আশ্রমের দৃশ্য, বাৎস্য ব্রাহ্মণ পরিবারের সুখী বাল্যকাল। দেখলাম আমার শোকার্ত পিতামাতা, তাদের কন্যা হরণ করে দস্যুরা দ্রুতগামী অশ্বে করে নিয়ে গেল এবং সব কিছু বিলীন হয়ে গেল।
     
    সেই বালিকা ছিলাম আমিই। চালুক্য দুর্গের গোপন অন্দরে ক্রূরমুখ রক্ষীরা আমাকে নিয়ে গেল। বিশাখদত্ত নামক মন্ত্রী প্রথমে আমাকে 'কাব্য' নামে সম্বোধন করে সান্ত্বনা দিতে লাগল।
     
    তারপর শুরু হল প্রতিদিনের বিষপান প্রশিক্ষণ। সেই মন্ত্রী তার নিজের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য এই পরিকল্পনা করেছিল। পারদ এবং অন্যান্য বিষ দিয়ে প্রস্তুত খাদ্যই হয়ে উঠল আমার নিত্যদিনের আহার।
     
    আমার দেহ ধীরে ধীরে সেই ভয়ঙ্কর কালকূট বিষকেও স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে শিখল। আমার শিরায় শিরায় রক্তের বদলে বইতে লাগল বিষ। আমার ঘাম, অশ্রু, এমনকি দুগ্ধও হয়ে উঠল বিষাক্ত। আমি বেড়ে উঠলাম যেন এক বিষবৃক্ষের চারা।
     
    যখন আমার নবযৌবনের পূর্ণতা এল, তখন আমার শিক্ষা অন্য দিকে মোড় নিল। বেশ্যাঙ্গনারা আমাকে গোপন বিদ্যায় পারদর্শী করে তুলল। আমি হয়ে উঠলাম কামশাস্ত্রে নিপুণ এক রমণী।
     
    আমাকে শেখানো হল কীভাবে স্তনযুগল দিয়ে আলিঙ্গন করতে হয়, নারীসুলভ পরিরম্ভণ ও চুম্বনের কৌশল। দন্তরেখায় দংশনচিহ্ন অঙ্কনের লীলা, নিতম্বে নখাঘাতের রেখা অঙ্কনের পদ্ধতি।
     
    বাহুমূলে, গলকূপে এবং গুহ্যস্থানে জিহ্বা প্রয়োগের সূক্ষ্ম কৌশল শিখলাম। যোনিতে কীভাবে পুরুষাঙ্গকে এমনভাবে পীড়ন করতে হয় যাতে প্রিয়তমের দ্রুত বীর্যপাত ঘটে।
     
    এভাবে রতিসুখের চরম মুহূর্তে নিমগ্ন প্রেমিককে কীভাবে ধীরে ধীরে বিষপ্রয়োগে হত্যা করতে হয় - এই ভয়ঙ্কর কৌশল আমি আয়ত্ত করলাম। মৃত্যুর সকল কলায় আমি হয়ে উঠলাম পারদর্শিনী।
     
    তার সেই স্মৃতি হঠাৎ আমার চেতনায় প্রবেশ করল, তার যন্ত্রণা আমার শরীরে স্থায়ী হয়ে গেল। আমাদের দুটি সত্তা যেন একাত্ম হয়ে গেছে - আমি যে ছিলাম গায়িকা, এখন হয়ে উঠেছি বিষকন্যা।
     
    নিজেকে এই ভয়ঙ্কর রূপে আবিষ্কার করে আমি বিষাদে আচ্ছন্ন হয়ে শয্যায় বসে পড়লাম। যে আঙুলগুলি একদিন বীণার তারে মধুর সুর সৃষ্টি করত, সেই আঙুলের নখাগ্রে আজ মরণ বিষ লুকিয়ে আছে।
     
    তখন বাইরে মৃদু পদশব্দ শুনলাম। দরজা চিৎকার শব্দ করে খুলে গেল। একজন প্রৌঢ়া শ্বেতবস্ত্রধারিণী নারী প্রবেশ করল এবং আমাকে 'বৎস কাব্য' বলে সম্বোধন করল, যেন তার হৃদয়ে এই নামই স্থায়ী।
     
    সেই নারী আমার কাছে এসে সতর্কভাবে আমার দেহ পরীক্ষা করল। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মৃদু হাসি মিশিয়ে বলল, "কাব্য! জেগে উঠেছ? আজ রাতে তোমার শিক্ষার প্রথম পর্ব সম্পন্ন হবে।"
     
    "তোমার জন্য স্নান এবং অন্যান্য প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে, সুগন্ধি তেল এবং অলংকার সহ সব কিছু প্রস্তুত। মন্ত্রী মহোদয় স্বয়ং আসবেন আজ তোমার দক্ষতা পরীক্ষা করতে।"
     
    তার কথা শুনেও আমার অন্তরাত্মা কোনো প্রতিবাদ করতে পারল না। আমি কী বলব? আমি কে? সত্য বললে কে বিশ্বাস করবে? তারা কি আমাকে উন্মাদ ভাববে না?
     
    কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে আমার অনিয়ন্ত্রিত কণ্ঠ থেকে কন্নড় মিশ্রিত সংস্কৃতে উত্তর বেরিয়ে এল, "মাননীয়া! আমি আপনার আদেশের অপেক্ষায় ছিলাম। গুরুদেবের নির্দেশ পালনে আমি সর্বদা প্রস্তুত।"
     
    আমার উত্তরে সন্তুষ্ট হয়ে সেই নারী একটু সরে গিয়ে মৃদুস্বরে বলল, "সত্যিই তুমি চালুক্য রাজবংশের রাজলক্ষ্মীর জীবন্ত অস্ত্র। তুমি গৌড় ব্রাহ্মণের সুসংস্কৃত কন্যা।"
     
    "মগধ থেকে একজন গুপ্তচর আসছে। আজ রাতে তুমি তাকে মৃত্যুর উপহার দেবে। তাকে মোহিত করে, তার সাথে প্রেমলীলায় মত্ত হয়ে, তারপর বিষপ্রয়োগে ক্ষণমাত্রে তার জীবনলীলা সাঙ্গ করবে।"
     
    হত্যা! গুপ্তচরবৃত্তি! প্রেমের এই বিকৃত রূপ! আমার মন চিৎকার করে উঠল - না, কখনোই না! কিন্তু আমার মুখ থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বেরিয়ে এল, "রাজাজ্ঞা শিরোধার্য। আমার মস্তক সর্বদা তাঁর আদেশে নত।"
     
    সেই নারী আমার হাত ধরে স্নানাগারে নিয়ে গেল, যা ছিল অপূর্ব সুন্দর। উষ্ণ জলের ধারা ঝরে পড়ছিল স্নানকুণ্ডে, যেখানে পারিজাত ফুল ভাসছিল।
     
    আমার সুন্দর দেহলতাকে বিবস্ত্র করে দাসীরা অগুরু এবং অন্যান্য সুগন্ধি তেল মাখাতে লাগল। তাদের হাত আমার পীন স্তন এবং নাভিদেশ স্পর্শ করছিল, কিন্তু আমার মনে কোনো বিকার জাগল না।
     
    অলংকার এবং বস্ত্র পরিধান করিয়ে আমাকে অন্য একটি কক্ষে একা রেখে গেল। আমার গলায় বিষস্ফটিকের হার পরিয়ে সেই নারী স্নেহভরে বলল, "এই তোমার গোপন অস্ত্র।"
     
    দূর থেকে বীণার মৃদু ঝংকার কানে আসছে। শয্যায় শুয়ে আমি শূন্যতার দিকে তাকিয়ে আছি। আমার কণ্ঠ যা একদিন মধুর সংগীতের উৎস ছিল, সেই কণ্ঠ আজ কীভাবে মরণ বিষের আধার হয়ে উঠল?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে মতামত দিন