আমি আমার লেখায় বেশ কয়েকবার উল্লেখ করেছি যে কেউ যদি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, স্বাধীনতাকে আঘাত করে তাহলে তা ঘুরেফিরে আওয়ামীলীগেরই লাভ বয়ে আনে। বর্তমান সরকারের সামনে সুযোগ ছিল মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বঙ্গবন্ধুকে আওয়ামীলীগের কবল থেকে বের করে আনার। কিন্তু আমি শুরু থেকেই দেখলাম কেন জানি তারা সেই রাস্তায় গেল না। গেল ভয়ংকর এক পথে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বাদ দিয়ে, পাশ কাটিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস লেখার চেষ্টা দেখা গেল। যেহেতু মুক্তিযুদ্ধের আলাপ করতে হলে আওয়ামীলীগকে বাদ দিয়ে করা যাবে না তাই মুক্তিযুদ্ধকেই পাশ কাটানোর চেষ্টা। আমার মতো অনেকেই ভাবছে এটা করলে আওয়ামীলীগের জন্যই ভালো। কারণ এতে আওয়ামীলীগ আরও ভালো করে বলতে পারবে আমরাই একমাত্র মুক্তিযুদ্ধকে মনেপ্রাণে ধারণ করি, লালন করি। বাকিরা, এমন কি নোবেল বিজয়ী মানুষও দেশের ইতিহাস নিয়ে ফুটবল খেলতে দ্বিধা করে না। এইটাই ছিল আমার এবং অনেকেরই ধারণা। কিন্তু আমি এখন এইটা এত সহজ, সরল ভাবে দেখতে রাজি না, দেখতে পারছি না।
কেন পারছি না? কারণ আমি এখন প্রকৃত চিত্র অনেকটাই দেখতে পারছি না। অন্তত আমার ধারণা আমি দেখতে পারছি। এবং যা দেখছি তা এক ভয়ংকর এক চিত্র। মেটিকুলাসলি ডিজাইন যে কতদূর পর্যন্ত করা হয়েছিল তা যারা ডিজাইন করছিল তারাই ভালো জানে, আমরা তো শুধু দেখছি, দেখে তব্দা মারছি, ভাবছি আর মুষড়ে পড়ছি। অত কঠিন কথা, সূক্ষ্ম প্যাঁচের কতদূর আমরা জানি? কিন্তু এইটুকু ঘিলুতে আছে যে এক অবিশ্বাস্য সাহস দেখিয়ে এই ভূমি থেকে মুক্তিযুদ্ধকে, বঙ্গবন্ধুকে মিটিয়ে ফেলা হচ্ছে। আমার ভয় হচ্ছে যেটাকে আমি, আমরা অনেকেই শক্তি বলে আসছি আওয়ামীলীগের জন্য তা এরাও জানে। জেনে বুঝেই তারা আঘাত করছে এইখানে। কেন? এইটার উত্তরেই আমি বুঝতে পারছি তাদের চিন্তার দৌড়। ওরা জানে এগুলা আওয়ামীলীগের শক্তি, শক্তিতেই আঘাত করছে। এই শক্তিই মিটিয়ে দিবে, মিশিয়ে দিবে, গুড়িয়ে দিবে! এইটাই হচ্ছে পরিকল্পনা। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বড়াই? আমরা বঙ্গবন্ধুকেই স্বীকার করব না। মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে গর্ব কর? আমরা মুক্তিযুদ্ধের সংজ্ঞাই বদলে দিব! মুক্তিযোদ্ধাদের আলাদা করে আর দেখা হবে না। মুক্তিযুদ্ধের সাথে জরিয়ে যা আছে সবকে এমন ভাবে সামনে আনা হবে যেন তা আর আলাদা করে কোন মূল্যায়ন না হয়। আমরা এমন ভাবে করব, এমন কথা বলব যে মানুষ দ্বিধায় পড়ে যাবে। আমরা ভাশানিকে, শেরে বাংলাকে সামনে আনব। মানুষ বলবে আরে তাই তো, এতদিন এদেরকে তো কেউ মূল্যায়ন করে নাই। এরা সবার কথা বলছে, ভালোই বলছে হয়ত!
এখন আমার কাছে পরিষ্কার মনে হচ্ছে সব। জেনে বুঝেই সব ভাস্কর্য ভাঙা হয়েছে, ৩২ নাম্বারকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হয়েছে শেখ হাসিনার প্রতি বিদ্বেষ থেকে না, করা হয়েছে বৃহৎ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে। আবাল জনগণ আছেই সমর্থন দেওয়ার জন্য। এই জন্যই ১৫ আগস্টে ইতিহাসের এমন ন্যাকারজনক কাণ্ড হলেও কোথাও খুব একটা হেলদোল দেখি নাই আমরা। এখন ধীরে ধীরে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দিকে যাচ্ছে এরা। মুজিবনগরে সমস্ত ভাস্কর্য এরাই ভেঙ্গেছে। শুরু থেকেই এইটা তাদের পরকল্পনা ছিল।
তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ, যিনি ছাত্রদের প্রতিনিধি হিসেবে সরকারে আছেন। তিনি সাংবাদিকদের সামনে, ক্যামেরার সামনে বললেন শেখ মুজিবকে জাতির জনক কে বানিয়েছে? আওয়ামীলীগ নিজেই বানিয়েছে, এগুলা সব বাদ। বিশ্বাস করেন, বমি আসছে দেখে! বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা বিএনপিও মানতে চায় নাই। নানা সময় উল্টাপাল্টা বলছে। কিন্তু তারা যে রাজনৈতিক কারণে বলছে এইটা বুঝা যায়। জিয়াউর রহমান জীবিত অবস্থায় কোনদিন বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কখনও উল্টাপাল্টা কিছু বলে নাই। বরং নিজের অনেক লেখায় জাতির পিতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তো ওইটা বুঝা যায়। কিন্তু এই দুই দিনের ছেলে, আজকে এসে কয় শেখ মুজিব ক্যাডা! ওর কথায় যে তাচ্ছিল্য ছিল তা আমার ঠিক হজম হয় নাই, বমি আসছিল শুনে।
ও যে কম বয়স, বলে ফেলছে একটা কথা তেমন ভাবার কিছু নাই। মাস্টার মাইন্ড মাহফুজ আলম এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে সরাসরি হুমকি দিয়েছে কোন আওয়ামীলীগের কর্মীকে ছাড়া হবে না। সবাইকে শেষ করা হবে! স্ক্রিনশট দেওয়ার চেষ্টা করব। তিনি লিখেছেন দুই হাজার বা তদূর্ধ্ব শহীদের আত্মার শপথ কোন সুশীল বা গুন্ডা মুজিববাদিদের এই স্বদেশে এক ইঞ্চি জমিও ছেড়ে দেওয়া হবে না। শেখ হাসিনার দালাল, আওয়ামীলীগের কর্মী, ছাত্রলীগের কর্মী এইসব না। ওর আক্রমণ হচ্ছে মুজিববাদিদের! আমি এইটাই বলতে চাচ্ছি শুরু থেকে। ওরা ইচ্ছা করেই মুজিবের ওপরে আঘাত করছে। শেকড় ধরে টান দিয়ে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা!
তিনি খালেদ মহিউদ্দিনের কাছে বিশাল এক সাক্ষাতকার দিয়েছেন। নানা কথার মধ্যে তিনি সংবিধান নিয়ে কথা বলেছেন। সেখানেও সোজা শেকড়ে আক্রমণ! ৭২ সংবিধান বাতিল করতে চান তিনি! সেই সংবিধানের জন্যই না কি বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে পারে নাই! সব সমস্যা শেখ মুজিবের তৈরি সংবিধানেই। যে সংবিধান নিয়ে আমরা গর্ব করি। ইহুদিদের প্রমিজল্যান্ডের মতো অধীর হয়ে অপেক্ষা করি একদিন আমরা ৭২ সালের সংবিধানে ফিরে যাব। একদিন আবার বাংলাদেশে অমন স্মার্ট একটা সংবিধান আসবে। এরা তাচ্ছিল্য ভরে বলছে ওইটা বাতিল করে দিতে হবে। বলছে সংস্কার কমিটি আছে। তারা যা করবে তাই। তবে তারা চান ৭২ সংবিধান বাতিল হয়ে যাক। মানে বর্তমান সংবিধান পুরোটা বাতিল করে নতুন করে সংবিধান লেখা হোক! ইদানীং ঘন ঘন বমি পায় আমার!
বমি শুধু মাহফুজ আলমের কথায় পায় না। মাহফুজ আলম যখন এগুলা বলে তখন জামাতের আমির আরেক সাক্ষাৎকারে বলে এই সংবিধান বাতিল করতে হবে কারণ এই সংবিধান ভারতের মাটিতে বসে লেখা হয়েছে! তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধান ভারতের মাটিতে বসে রচনা করা হয়েছিল। তাই আমাদের সংবিধান জন্মভূমি হিসেবে বাংলাদেশকে পায়নি।’ যাহ! এইটা কোন কথা? সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদ্যসদ্যের পরিবার এই বক্তব্যের প্রতিবাদ করেছেন। সব এক সূত্রে গাঁথা, এ একদিক দিয়ে এক কথা বলে, আরেকজন আরেক দিক দিয়ে সেই সুরে টান দেয়! নিপুণ টিউনিং!
সংবিধান সংস্কার কমিটির প্রধান করা হয়েছে আলি রিয়াজকে। ভদ্রলোককে তেমন করে চিনি না। প্রথম আলোয় কলাম লেখেন। থাকেন আমেরিকায়। সম্ভবত আমেরিকার নাগরিক তিনি। সেই ভিনদেশি এসে সংবিধান রচনা করবে। এখন এত বড় বিষয় নিয়ে আমার মন্তব্য করার ক্ষমতা নাই। তিনি কতখানি যোগ্য আমি জানি না। কামাল হোসেন, যিনি আমাদের ৭২ সংবিধানের রচনার প্রধান ছিলেন তিনি এখনও জীবিত। তাকে কমিটিতেও রাখা হয়নি। বয়স হয়েছে, না রাখতেই পারেন। কিন্তু বড় প্রশ্ন হচ্ছে সংবিধানের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কাজ করতে যোগ্যতা কী থাকা লাগে? আলি রিয়াজ একজন সাংবাদিক, তিনি সংবিধান লেখার যোগ্যতা রাখেন? তিনি বড়জোর কমিটিতে থাকতেন পারেন। কিন্তু প্রধান? এইটুকু তো বলার মতো ঘিলু আছে আমাদের। কিন্তু বলব কাকে? বলার উপায় আছে দেশে? ব্লগে লেখি ছদ্মনামে, ফেসবুক আইডি ডিএক্টিভেট করে বসে আছি বাংলাদেশে!
প্রায়ই ভাবি এগুলা লেখা বন্ধ করব, আর লেখব না কিন্তু এমন সব কাণ্ড ঘটা শুরু করে না লিখে থাকা যায় না। যেহেতু ফেসবুক নাই আমার তাই ব্লগই ভরসা। নতুন কাণ্ডটা দেখেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে ১৫ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত যা হয়েছে তার জন্য আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে কোন মামলা হয়রানি করা যাবে না। এ ভালো হল না? সব বৈধ হয়ে গেল। এত লুটতরাজ হল, পুলিশ মারা গেল হাজারের ওপরে, সাধারণ মানুষ মরল সব শেষ, কিছু করা যাবে না। এর একটা ভিন্ন দিকও আছে। কী? তা হচ্ছে মামলা করা যাবে তবে তা আমাদের পছন্দ অনুযায়ী। আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে কিছু করা যাবে না। এখন কে আন্দোলনকারী আর কে আওয়ামীলীগ কর্মী এইটা নির্ধারণ করবে কে? তারাই করবে এবং মামলা দিবে। তাই আওয়ামীলীগ নেতার বাড়িতে আগুন দেওয়ার মামলাও আওয়ামীলীগকেই দিবে! এইটা ভালো ফন্দি না?
এখানেই শেষ না। সার্কাস চলছেই। গতকাল হুট করেই আওয়ামীলীগ আমলের তৈরি আট জাতীয় দিবস বাতিল করেছে সরকার। এর মধ্যে কিছু বাতিল নিয়ে কেউ কোন আপত্তি করবে না। কিন্তু ওই যে বললাম এদের মূল লক্ষ হচ্ছে আওয়ামীলীগের শেকড় ধরে টান দেওয়া। তাই ঐতিহাসিক ৭ মার্চকে জাতীয় দিবস থেকে বাতিল করা হয়েছে! আশ্চর্য লাগে না আর। ৭ মার্চের ভাষণকে ইউনেস্কো স্বীকৃতি দিয়েছে। আর এদের কাছে মনে হল এইটা গুরুত্বপূর্ণ কোন বিষয় না। ১৫ আগস্ট বাতিল করা হয়েছিল আগেই, সেটাও এই লিস্টে আছে।
মতিয়া চৌধুরী মারা গেল। বাংলার অগ্নিকন্যা বলা হত তাঁকে। কিংবদন্তি মতিয়া চৌধুরী বললে হয়ত ঠিকঠাক বলা হয় উনার সম্পর্কে। ছাত্র ইউনিয়ন ভেঙ্গে দুই ভাগ হয়ে। একটা ভাগের নাম হয় মতিয়া গ্রুপ আরেকটা মেনন। তিনি বাংলাদেশের রাজনীতির মহীরুহ ছিল। আমাদের শেরপুরের বউ ছিলেন। শেরপুর দুই আসন থেকে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য হয়েছেন। নিজেদের এলাকার বলেই আমরা ঠিক তাঁকে পছন্দ করতাম না। এর একটা বড় কারণ অসুস্থ রকমের সততা! তিনি নিজের নির্বাচনী এলাকার জন্যও কিছুই করেন নাই। চেয়ে কিছু আনবেন এইটা হয়ত উনার নীতি বিরুদ্ধ ছিল। এত বড় একজন নেতা আওয়ামীলীগের স্বর্ণ যুগে আমাদের শেরপুরে ছিলেন। অথচ শেরপুরে কিছুই নাই। কিন্তু সারা বাংলাদেশ এক বাক্যে তাঁকে সেরা বলে মেনে নেয়। তার সততার উদাহরণ দেয়। তিনি মুক্তিযোদ্ধাও ছিলেন। আবার আমার আগের কথায় ফিরে যাই। এই সরকার মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত সকল কিছুতেই তাদের এলার্জি। সংবিধান অনুযায়ী যে কোন মুক্তিযোদ্ধা মারা গেলে গার্ড অফ অনার দেওয়া হয়। মতিয়া চৌধুরীকে দেওয়া হল না কোন গার্ড অফ অনার। এখানেই শেষ না। পরিবারের পক্ষ থেকে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরে জায়গা চাওয়া হয়েছিল। ডক্টর ইউনুস কর্নপাত করে নাই এই আবেদনে। পরে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানেই দফন করা হয়েছে তাঁকে তবে আলাদা কবর জুটে নাই। তাঁর স্বামীর কবরেই দাফন করা হয়েছে! এমন দিনও দেখতে হল। অসহায়ের মতো বলতে হচ্ছে মনে রাখলাম, সব হিসাব করে রাখলাম।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কাজ শুরু করেছে। এই ট্রাইব্যুনালেই বিচার হবে জুলাই আগস্টের হত্যাকাণ্ডের। ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। শেখ হাসিনা তো আছেনই, তাঁর মন্ত্রী সভার নেতাকর্মীরাও আছেন। এইটা খবর না। এইটা তো হিসাবেই ছিল। খবর হচ্ছে এদের মধ্যে ডক্টর মুহম্মদ জাফর ইকবালের নামও আছে! দেশপ্রেমের দায় চুকাতে হবে না? লোকটার জন্য এখন খুব দুশ্চিন্তা হচ্ছে। যারা শাহরিয়ার কবিরকে রিমান্ডে নিতে পারে তারা জাফর ইকবালকে কেন খাতির করবে? সামনে শুধুই অন্ধকার।
শেরপুরের বন্যার অবস্থা ভয়াবহ। পাহাড়ি ঢল এমন ভাবে আসছে যে এখন মনে হয় বন্যা হইছে না যেন টর্নেডো হয়ে গেছে। সব বাড়িঘর ভেঙ্গেচুরে শেষ। সরকারি সাহায্য নাই। ইউনুস সাহেব ফেনি কুমিল্লার সময় এক হাজার কোটি টাকার ত্রাণ তহবিলের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তার ঘোষণাতেই মোসাহেবিরা বাহ বাহ! কি দারুণ কাজ বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলছিল। কিন্তু দেখা গেল সেই তহবিলের কোন খবর নাই। আমরা বাংলাদেশী না অন্য কোন দেশের অংশ তাও ঠিক মতো ঠাওর করতে পারছি না। মানুষের কোন বিকার নাই। সরকার তো দায়িত্ব পালন করবে? তারও কোন হুশ নাই। এইটা বলার জন্য এই প্রসঙ্গ আনি নাই। পূজার ছুটিতে জেলার সকল এবং সফল ছেলেমেয়েরা সব বাড়ি ফিরেছিল। বন্যার জন্য সবাই ঝাঁপিয়ে পরে কাজ করেছে। এক সাথে কাজ করেছি আমরা। এদের মধ্যে একজন সচিবালয়ে আছেন। মানে হচ্ছে প্রশাসনের একদম টপ লেবেলেই কাজ করেন তিনি।শেষ দিন, ছুটি শেষ, পরেরদিন চলে যাবেন। আমি সুযোগ পেলাম কথা বলার। বললাম ভাই, অবস্থা কী? ভিতরে কী চলছে? তিনি যা বললেন তা হচ্ছে কিছুই ঠিক নাই। সব অগোছালো। আগা থেকে পাতা পর্যন্ত বিশৃঙ্খলা চলছে। কোন নিয়ম নীতি নাই। আর? আর শিবির আর জামাতের কর্মীরা সমানে ঢুকছে প্রশাসনে! উনার বক্তব্য হচ্ছে শোন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি, শিবির দেখলেই চিনি। এরা সব মিছিল করে নানা পোস্টে ঢুকছে। বিএনপির পুলাপান তো তৈরিই না যে ঢুকবে। আর এরা সব তৈরি হয়েই বসে ছিল। ইউনুস কী প্লান করছে জানি না। যা দেখলাম তাই কইলাম।
আমার আর জানার কিছু ছিল না। এবং আমার জন্য এই সব তথ্য নতুনও ছিল না। কিন্তু একদম সরাসরি সরকারের কারো কাছ থেকে এগুলা শোনা একটু ধাক্কার মতোই। কই যাচ্ছি আমরা?
তাপসী তাবাসসুম উর্মির কথা আগে লিখেছি কি না মনে পড়ছে না। তাপসী তাবাসসুম উর্মি হচ্ছে আশার গল্প। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উর্মি ইউনুস সাহেবের রিসেট বাটনকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করে ফেসবুক পোস্ট দেয়। এবং সকল চাপেও তার বক্তব্য থেকে সরে আসে না। ফলাফল চাকরি থেকে প্রথমে ওএসডি, পরে বরখাস্ত। এরপরে দেওয়া হচ্ছে মামলা, দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা! বাক স্বাধীনতা!
শেষ করি। বাংলাদেশে এখন পল্টি নেওয়ার পালা চলছে। পল্টিবাজ শিরোমণি পিনাকী রাস্তা দেখিয়ে গেছেন। সেই রাস্তায় হাঁটছেন অনেকেই। দুইটা পল্টি আমাকে অবাক করেছে। একজন হচ্ছেন মহিউদ্দিন আহমদ। আমি উনার ইতিহাসের বই গুলাকে সবাইকে পড়তে বলছি। বলছি বেশি কিছু না পড়তে চাইলে উনার ইতিহাস নিয়ে সিরিজটা পড়লেই বাংলাদেশের জন্ম ইতিহাস সম্পর্কে পরিষ্কার জানা যাবে। এই লোক এক সময় জাসদ করত। অনেকেই আমাকে সতর্ক করেছিল যে এই লোক সুবিধার না। আমি এগুলা কানে দেই নাই। কারণ বই গুলা পড়ে বারবারই আমার মনে হয়েছে এমন কাজ আরও বেশি করে করা উচিত, আরও আগেই করা উচিত ছিল। এই লোক প্রথম আলোয় একটা কলাম লিখেছে। আমি পড়ে তব্দা মেরে ছিলাম বেশ কিছুক্ষণ। তিনি নিজের বইয়ে যা লিখেছেন তা তিনি নিজেই এই কলামে অস্বীকার করে বসে আছেন! যথারীতি বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ! সেই একই কথা। এইটাকেই ধরতে হবে, এই শক্তিই শেষ করতে হবে বলে উঠেপড়ে লেগেছে সবাই।
দ্বিতীয়জন হচ্ছেন আরিফ রহমান। অল্প বয়স। তিনি একটা দুর্দান্ত কাজ করেছেন। ত্রিশ লক্ষ শহীদ নিয়ে গবেষণা করে একটা বই লিখে ফেলেছেন। যারা ত্রিশ লক্ষ শহীদ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে তাদের মুখের ওপরে মারার জন্য এইটা হচ্ছে মোক্ষম একটা বই। বই নাম হচ্ছে ত্রিশ লক্ষ শহীদ, বাহুল্য না বাস্তবতা। এই ছেলে এতদিন বঙ্গবন্ধু বলতে অজ্ঞান। আন্দোলনের শুরুতে একদিন কে বা কারা বঙ্গবন্ধুকে হেয় করে কিছু বলেছিল তিনি প্রতিবাদ করে পোস্ট দিলেন। বললেন শেখ হাসিনার অন্যায়, দুর্নীতি এক জিনিস বঙ্গবন্ধু আরেক জিনিস। ওইটা নিয়ে ঘাটাঘাটি করা যাবে না। ওই শেষ! এরপরে এই লোক যে চুপ মারল, এখন পর্যন্ত চুপ। ৩২ নাম্বার শেষ হয়ে গেল, তিনি নীরব। এখন ইতিহাস থেকে মুজিবকে বাদ দিয়ে দেওয়া হচ্ছে তিনি নানান প্যাঁচাল পারেন! নীরব থাকলেও বুঝা যেত যে তিনি কোন চাপে আছেন। তেমন না। তিনি এখন নানান যুক্তি দিয়ে বলার চেষ্টা করেন ভাসানি কেন বেশি গুরুত্বপূর্ণ! যে ভসানি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ইন্দিরা গান্ধীকে চিঠি লিখেছিলেন বাংলাদেশকে নিয়ে কনফেডারেশন গঠন করে ফেলার জন্য! কই স্বাধীনতা আর কই কনফেডারেশন! মানুষ মরে সাফ হয়ে যাচ্ছে মাওলানা আছেন ক্ষমতা নেওয়ার চিন্তায়। এগুলা কথা আরিফ রহমান এখন সমানে বলে যাচ্ছেন। মাহফুজ আলম চার পাঁচজন নেতার ছবি দিয়েছে ফেসবুকে। তিনি কী দারুণ কী দারুণ বলে অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন! এখন যখন জাতির পিতাকে সরাসরি অস্বীকার করা হচ্ছে, ৭ মার্চকে জাতীয় দিবস থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে তখন তিনি শেয়ার করছেন এমন এক পোস্ট যেখানে লেখা সাত মার্চ বিশেষ কিছু না। বরং ২৩ নভেম্বর ১৯৭০ সালে দেওয়া ভাসানির ভাষণ বেশি গুরুত্বপূর্ণ!
এখন এদের দেখলে হড়হড় করে বমি আসলে তা কী দোষের হবে? জাফর ইকবাল তো ভুল কিছু বলেন নাই! বমি তো আসেই দেখা যাচ্ছে। ওহ! এই লোক আবার এক সময় জাফর ইকবালকে পীর মানতেন! এখন আজকে যখন তাঁর নামে পরোয়ানা জারি হচ্ছে তখন তিনি মতিয়া চৌধুরীকে কেন গার্ড অফ অনার না দেওয়া ঠিক আছে সেই ব্যাখ্যা লিখে চলছেন! বমি না করলে শান্তি পাব না মনে হয়...!
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।