এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ! 

    কিংবদন্তি লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০১ আগস্ট ২০২৪ | ৪১৯ বার পঠিত
  • ভোরবেলা ঘন
    কুয়াশার তাঁবুতে আচ্ছন্ন চোখ কিছুটা আটকে গেলে তার
    মনে হয় যেন উঠেছে জেগে সুদূর বিদেশে
    যেখানে এখন কেউ কারো চেনা নয়, কেউ কারো
    ভাষা ব্যবহার আদৌ বোঝে না; দেখে সে
    উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ বিরানায়; মুক্তিযুদ্ধ,
    হায়, বৃথা যায়, বৃথা যায় বৃথা যায়।
     
    পরিস্থিতি বেশ জমাট আকার ধারণ করেছে। বেশ কিছু পোস্ট দেখলাম যা পরিস্থিতি সম্পর্কে বেশ ভালো ধারণা তৈরি করে দিচ্ছে। একটা পোস্ট দেখলাম আগস্ট মাসেই বাপের মতো করে শেষ হোক এই স্বৈরাচারী শাসন! এই সরকারের পতন চাওয়ার সাথে ৭৫ কেন মিলাচ্ছেন? কারা ৭৫ নিয়ে এমন কথা বলে? চিন্তা করা উচিত না?

    মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে কিছু লোক। খুব স্মার্ট একটা পোস্ট ঘুরছে, সিমু নাসেরের ইয়ার্কি ওইটাকে আবার প্রচারের দায়িত্বও নিয়েছে। সেখানে লেখা হচ্ছে চোখের সামনের ইতিহাসের যে অবস্থা, আর যা দেখি নাই না জানি তার কী অবস্থা! দুনিয়ার মানুষ শেয়ার করে খুশিতে বাগবাকুম করছে। দারুণ দারুণ বলে চিৎকার করছে! আচ্ছা, কোন ইতিহাস নিয়ে চিন্তিত তারা বলে মনে হয়? ইতিহাসের ধর্মই তো এই। আপনের না দেখা, অতীতের জিনিসই তো ইতিহাসের অংশ। আমি দেখি নাই বলে যদি সন্দেহ করি তাহলে ধর্ম কর্ম করতে পারবেন? না দুনিয়ার কোন ইতিহাসকে বিশ্বাস করতে পারবেন?
    এক দল মুক্তিযুদ্ধকে নিজেদের সম্পত্তি বানায় ফেলছে আর এইটার প্রতি উত্তরে আরেকদল মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করে চলছে! যখন এই তামশা চলে তখন রাস্তা পরিষ্কার হয়ে যায়।

    অনেকেই লিখছে বিকল্প তৈরি হয়ে যাবে! কেউ লিখছে ক্যান্সারের জন্য আগে অপারেশন জরুরি, পরে আস্তে ধীরে কেমো দেওয়া হবে না কি হবে তা দেখা যাবে! একটা আরও দুর্দান্ত, স্বামীর সাথে বনিবনা হচ্ছে না, তাই আগে তালাক নিতে হবে পরে ঘর করার জন্য স্বামী খুঁজা যাবে! এগুলা যে পাতলা বুদ্ধির কথাবার্তা তা সহজেই বুঝা যায়। আরে এইটা রাষ্ট্র পরিচালনার কথা হচ্ছে, এইখানে এখন যখন কাওকে নামাবেন ঠিক তখনই আরেকজনকে বসতে হবে চেয়ারে। মাথায় সমস্যা, নতুন আরেকটা মাথা এইটার জায়গায় বসাতে হবে, না হলে সব মৃত!

    জেন জির প্রশংসায় পঞ্চমুখ সবাই। এইটা জেন জির ব্যাপার না। যুগে যুগেই সব সময়ই তরুণরা প্রথা ভাঙার ব্যাপারে অগ্রগামী। রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত লেখছে ওরে নবীন, ওরে আমার কাঁচা, ওরে সবুজ, ওরে অবুঝ, আধমরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা।নবীনরা বরাবরই ঘা মেরে আসছে। মুশকিল হচ্ছে অন্যখানে। এই সময়টাই গড়বড়ে। জেন জি খুব স্মার্ট, কোন সন্দেহ নাই। সব জানে জানে না খালি ইতিহাস। এরা নব্বইয়ে কী হইছে জানে না, নব্বইয়ের আগে কী হইছে জানে না। মাথার উপরে এখন যখন গজবের মতো করে আজাব নেমে আসছে তখন যারাই মিষ্টি কথা বলছে তাদেরকেই এই সময়ের নায়ক বলে রায় দিচ্ছে। বড় প্রমাণ আসিফ নজরুল! এই লোকের গণ আদালতে ভূমিকা কী? জাহানারা ইমামের সাথে সম্পর্ক? এগুলা জানার ইচ্ছাও নাই, জাহানারা ইমাম আবার কিডা! জেন জি শুধু উদাসীন ইতিহাস আর ঐতিহ্যের ব্যাপারে! প্রযুক্তির যুগ, ইতিহাস ধুয়ে পানি খাবে? জেন জি ভীষণ স্মার্ট কিন্তু তাদেরকে বাঙালি সংস্কৃতির উপরে যখন মৌলবাদের ছায়া পড়ল তখন পাওয়া যায়নি। বরং বিপুল সংখ্যক তরুণ পয়লা বৈশাখ হারাম তত্ত্বে ইমান আনছে। শহীদ মিনারে যাওয়া যাবে না, হারাম এই গালগপ্পও এই তরুণরাই বিশ্বাস করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় বোরকায় সয়লাব, এরা কারা? এগুলার বিরুদ্ধে এদেরকে পাওয়া যায়নি, পাওয়া গেল চাকরির নিশ্চয়তার ক্ষেত্রে। তাও ভালো, ঘুম ভাঙছে এদের! এরপরে হয়ত বাকি সব বিষয়েও ঘুম ভাঙবে।

    সরকার নড়বড়ে, ক্ষেত্র প্রস্তুত, কেউ কেন আসল না এখনও? সময়, পরিস্থিতিই বলে নেতা তৈরি করে। এরচেয়ে দুর্বল অবস্থায় সরকারকে আর কবে কে পাইছে? কেন আসছে না? সেই ঘুরেফিরে জামাতের ভূত ঘাড়ে নিয়ে সেই বিএনপি! পুলাপান বিএনপিকে নিয়ে ট্রল করছে, খালেদা জিয়াকে নিয়ে মজা নিচ্ছে। এর জবাবে দুই একটা পোস্ট দেখলাম। কেউ একজন বেশ গুছায়াই লিখছে যে তোমরা যে মজা নিচ্ছ তাহলে কে আসবে বল? আমাদের নিয়ে মজা নিয়ে তো সেই বিকল্প নাই তত্ত্বকেই সত্য বলে প্রতিষ্ঠা করছ! ভালো একটা উদাহরণ দিয়েছে ওই লেখায়, লিখেছে সবাই বৃষ্টির জন্য দোয়া করছ অথচ আশা করছ বৃষ্টি হলে তা বিএনপি জামাতের গায়ে যেন না পড়ে! আমি ভেবে দেখলাম সঠিক কথাই বলেছে। দুইদিকেই মজা নিয়ে কই গিয়ে দাঁড়াতে চাচ্ছে? আকাশ থেকে নেমে আসবে কেউ এমন আশা করছে? জেন জি কি জানে এই দেশে আর্মি শাসন আর আসবে না? এইটা বৃষ্টির মতোই অবধারিত, বিকল্প হচ্ছে বিএনপি! তোমরা ট্রল কর আর যাই কর, এইটাই সত্য।

    সরকার এখন পর্যন্ত আস্থার জায়গায় যেতে পারেনি। বাচ্চা বাচ্চা পুলাপানদের ধরে জেলে পুরে এই সমস্যার সমাধান হবে? একটু নিজের দিকে তাকাবেন না? নিজেদেরও দুই একটা রাঘব বোয়াল ধরা পড়লে, জেলের ভিতরে দেখলে অনেকের মনে আস্থার জায়গা তৈরি হত। এখন সময় দুই চার পাঁচজনের কুরবানির। যে মাখানি মাখাইছেন এখন অল্পে, গায়ে কোন কাদা না লাগিয়েই উদ্ধার পাবেন এই আশা করে লাভ নাই। শুভ বুদ্ধির উদয় হোক।

    জামাত নিষিদ্ধ হল শেষ পর্যন্ত? আপডেট পাইলাম না কিছু। কোথাও কোন সাড়াশব্দও দেখছি না। এইটা যে কত বড় একটা কাজ হল এইটা যারা মুক্তিযুদ্ধকে মনে প্রাণে ধারণ করে একমাত্র তারাই বুঝবে। জামাত নিষিদ্ধ হলে আলাদা করে লিখব হয়ত। আপাতত শুভ সকাল!
     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০১ আগস্ট ২০২৪ | ৪১৯ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    ইতি - Ankan Chakraborty
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Guru | 2409:4060:380:13c:6ec7:b43a:4ee0:***:*** | ০১ আগস্ট ২০২৪ ০৮:৫১535590
  • শরীফ,
    আপনি ভাই এখনো আসল সমস্যাটি বোঝেনই নি l বাংলাদেশে 1 কোটি ৩০ লক্ষ এখন শিক্ষিত বেকার, তাদের দেবার মত কাজ নেই সরকারের কাছে l ইন্টারনেট আর শিক্ষার প্রসারের ফলে তারা দেখছে হাসিনার পিয়নেরও কয়েকশ কোটি টাকার সম্পত্তি অথচ তাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই l এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আর বঙ্গবন্ধুর গুরুত্ব থাকবে কি করে তাদের কাছে? বাংলাদেশের যুবসমাজের কাছে এখন আপনাদের মতো লোক সেটাই, যেরকমটা মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকারদের দেখতেন l
  • পলিটিশিয়ান | 2603:8001:b102:14fa:f98a:fe50:f8ad:***:*** | ০১ আগস্ট ২০২৪ ০৯:৪৭535592
  • জামাত ক্ষমতায় এলে বেকারী কমবে?
  • দীপ | 2401:4900:1223:dff4:f748:4baa:b18e:***:*** | ০২ আগস্ট ২০২৪ ০০:২৬535598
  • লিখলেন তসলিমা নাসরিন।

    জামায়াতে ইসলামিকে নিষিদ্ধ করার কথা এখন ভাবছে সরকার। আগে কেন ভাবেনি? আগে কেন নিষিদ্ধ করেনি? আগে দরকার পড়েনি। এখন তাহলে পড়েছে দরকার! কেউ কেউ তো বলছে, কোটা আন্দোলনের প্রায় ২০০ ছাত্রহত্যা থেকে নজর সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। জানি না, জামায়াতে ইসলামিকে নিষিদ্ধ করার পেছনে আসল কারণ কী। ছাত্র আন্দোলনের ভেতরে ঢুকে গিয়ে তারা সহিংসতা করেছে বলে? সহিংসতা, জ্বালাও পোড়াও কি শুধু জামায়াতে ইসলামিই করেছে? দোষ সবাই করলেও জামায়াতে ইসলামি এবং ছাত্র শিবিরকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছে, কারণ তারা পুরোনো পাপী। কিন্তু এই দলটিকে নিষিদ্ধ করলে কি দলটির সদস্যরা জ্বালাও পোড়াও আন্দোলন করবে না? যা বাকি আছে পোড়াতে, তা পুড়িয়ে ছাই করবে না? আমার প্রশ্ন, জামায়াতে ইসলামির কর্মীরা বা সদস্যরা কজন আর জামায়াতে ইসলামি নামের দলটিতে রয়েছে? অনেকেই তো ঢুকে গেছে অন্যান্য রাজনৈতিক দলে, বিএনপিতে, জাতীয় পার্টিতে, এমনকী আওয়ামী লীগেও। যখন তৃণসম ছিল এই দলটি, উচিত ছিল তখনই নিষিদ্ধ করা, কারণ ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল কোনও দেশের মঙ্গল ডেকে আনে না। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি দেশকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে। গণতন্ত্রকে,বাক স্বাধীনতাকে, ধর্মনিরপেক্ষতাকে আগুনে পুড়িয়ে দেয়। তখন দেশ আর দেশ থাকে না। অঙ্গারে পরিণত হয়।
    জামায়াতে ইসলামি নামের কোনও দলকে নয়, নিষিদ্ধ করতে হবে ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি, তাহলেই নিষিদ্ধ হবে জামায়াতে ইসলামির নিন্দনীয় সব কার্যকলাপ, এবং বন্ধ হবে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের ধর্ম নিয়ে রাজনীতি। জামায়াতে ইসলামি একা নয়, জামায়াতে ইসলামির রাজনীতি অন্যান্য রাজনৈতিক দলও করছে। দীর্ঘদিন থেকেই করছে, নির্বিঘ্নে করছে। জামায়াতে ইসলামির পলিটিক্যাল এজেন্ডা জাতীয় পার্টি সফল করেছে কিছুটা, বিএনপি সফল করেছে কিছুটা, এরপর বাকি যেটুকু ছিল, সফল করেছে আওয়ামি লীগ। মডেল মসজিদ নির্মাণ কোনও সেক্যুলার দলের এজেণ্ডা হতে পারে না, এ শতভাগ জামায়াতে ইসলামির এজেন্ডা। জামায়াতে ইসলামি ক্ষমতায় না থেকেও ক্ষমতায় থেকেছে। জাতীয় পার্টি, বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের শাসনামলে দেশে এমন ভয়ঙ্করভাবে সমস্ত কিছুর ইসলামিকরণ হয়েছে, যে, জামায়াতে ইসলামির কোনও কাজ আর অসম্পূর্ণ থাকেনি। সত্যি বলতে কী, জামায়াতে ইসলামির যে আদর্শ এবং নীতি, তা সব রাজনৈতিক দলেরই আদর্শ এবং নীতি। পার্থক্য শুধু এটুকুই, ৫৩ বছর আগে, ১৯৭১ সালে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিল জামায়াতে ইসলামি, বাকি রাজনৈতিক দলের সদস্যরা, অনুমান করছি, পক্ষে ছিল।
    ৫৩ বছর অর্ধ শতাব্দিরও বেশি সময়। এই দীর্ঘ সময়ে জামায়াতে ইসলামির শক্ত শেকড় বহুদূর বিস্তৃত হয়েছে। এ এখন মহীরুহের আকার ধারণ করেছে। এর সদস্যরা সরকারি আপিসের বড় বড় কর্মকর্তা, বড় বড় ব্যাংক, হাসপাতাল, স্কুল, কলেজ এবং নানা রকম ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক। জামায়াতে ইসলামি মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুডের মতো কাজ করে। অথবা মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুড জামায়াতে ইসলামির মতো কাজ করে। তারা অসংখ্য সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সংগঠন তৈরি করেছে বিভিন্ন নামে। মোটা অংকের অর্থসাহায্য পেয়ে সংগঠনগুলো বেশ হৃষ্টপুষ্ট। জামায়াতে ইসলামি নিষিদ্ধ হলেও এদের সংগঠনগুলো তো টিকে থাকবে, এবং জামায়াতে ইসলামির আদর্শে বিশ্বাস করা লোকেরাও তো বেঁচে থাকবে। তারা যদি তাদের আদর্শকে বাঁচিয়ে রাখে, তাহলে জামায়াতে ইসলামি নামের দলটি থাকলেই কী, আর না থাকলেই কী।
    এইসব সংগঠনের মাধ্যমেই জামায়াতে ইসলামির লোকেরা জনগণকে ধর্মান্ধ হওয়ার জন্য মগজধোলাই করে। দেশকে দেশ নয়, দারুল ইসলাম বানাবার ষড়যন্ত্র করে। জামায়াতে ইসলামি নামের রাজনৈতিক দল থেকে তারা যা করে বা করতে চায়, তা তারা অন্য প্লাটফরম থেকেও করে। যদি নিষিদ্ধ হয় দলটি, অন্য কোনও নামে রাজনৈতিক দল তারা শুরু করতে পারে, যে দল থেকে তারা একই রকম কার্যকলাপ করে যেতে থাকবে। সরকার চাইলে সহিংসতার কারণ দেখিয়ে জামায়াতে ইসলামিকে হয়তো নিষিদ্ধ করবে, কিন্তু আমার মনে হয় না দল নিষিদ্ধ করে সত্যিকার কোনও লাভ হবে।
    জিহোভা’স উইটনেস, বাহাই, আহমদিয়া এই ধর্মগুলোকে নিষিদ্ধ করেছে ৪১টি দেশ।বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের ওপর নির্যাতন চালানো বা ধর্ম পালন করতে বাধা দেওয়ায় এগিয়ে আছে বার্মা, চীন, ইরেত্রিয়া, সৌদি আরব, সুদান, উজবেকিস্তান, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, ইরানের মতো অনেক দেশ। ধর্ম পালনের অধিকার মানবাধিকারের অংশ। কিন্তু নিজের ধর্ম অন্যের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা, অন্যকে ধর্ম পালন করতে বাধ্য করা, ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করা সম্পূর্ণই নিষিদ্ধ হওয়া উচিত। পৃথিবীর সভ্য দেশগুলোতে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ।
    ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি জন্ম দেয় ধর্মীয় মৌলবাদীদের। ধর্মীয় মৌলবাদীরা সমাজকে অন্ধকারে ডুবিয়ে রাখতে চায়, তারা নারীর অধিকারে তো নয়ই,মানবাধিকারেও বিশ্বাস করে না, তাদের মতের সঙ্গে যারা একমত নয়, তারা বিশ্বাস করে না তাদের বাক স্বাধীনতায় । আমি বহুকাল থেকে বলছি, ধর্মীয় মৌলবাদিরা প্রচণ্ড ঘৃণা করে নারীকে। প্রশ্ন জাগতে পারে, তবে কি ধর্মই কায়দা করে শিখিয়েছে নারীকে ঘৃণা করতে? ধর্মীয় আইন নারীকে তার প্রাপ্য সম্মান দেয় না। ধর্ম যদি প্রাপ্য সম্মান দেয়, তাহলে ধর্মীয় আইন দেবে না কেন? ঈশ্বর বা ভগবান বা আল্লাহ কি তাহলে নারী আর পুরুষকে সমান চোখে দেখেন না? যে দেশগুলোয় ধর্মীয় আইন আছে, সে দেশগুলোয়, ধর্মীয় আইন নেই এমন দেশগুলোর তুলনায় মেয়েরা বেশি নির্যাতিত। যদি ধর্ম, ধর্মীয় আইন, ধার্মিক, ধর্মীয় মৌলবাদ সকলে মেয়েদের সমানাধিকারের বিরুদ্ধে সরব হয়, তাহলে সেই ধর্ম নিয়ে যেমন বিতর্কের প্রয়োজন আছে, ধর্মীয় বা শরিয়া আইনকে মানুষের মঙ্গলের জন্য বিদেয় করারও প্রয়োজন আছে। ধার্মিক বা ধর্মীয় মৌলবাদীদের তো বিদেয় করা যাবে না। তবে তাদের মানসিকতা বদলাতে হবে, তাদের সত্যিকার শিক্ষিত করতে হবে, তাদের নারীবিদ্বেষ দূর করতে হবে।
    প্রতিটি পরিবারে, পাড়ায়, প্রতিটি সমাজে, সংগঠনে, বিকট আকারে ঢুকে গেছে ধর্ম । জামায়াতি মানসিকতার লোক বিভিন্ন লেবাস পরে কায়দা করে ঢুকিয়েছে, অথবা ধর্মের জিকির তুলে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো ঢুকিয়েছে। এ থেকে পরিত্রাণের উপায় কী? কোনও উপায় নেই। শরীর কিছুটা পুড়ে গেলে বাঁচানো যায়, কিন্তু অনেকটা পুড়ে গেলে আর বাঁচানো যায় না। বাংলাদেশকেও, আমার আশংকা, ধর্মান্ধতার কবল থেকে সহজে বাঁচানো যাবে না।
    ধর্মভিত্তিক রাজনীতি পৃথিবীর প্রতিটি দেশেই নিষিদ্ধ করা উচিত। যে যুগে ধর্মীয় রাজনীতি চলতো, এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের পুরোহিতরা ধর্মীয় আইনে দেশ শাসন করতো, সেই যুগকে বলা হয় অন্ধকার যুগ (dark ages)। ইউরোপে যখন গির্জার অপশাসনের বিরুদ্ধে মানুষ প্রতিবাদ করেছিল, গির্জার হাত থেকে নিয়ে নিয়েছিল দেশ শাসনের দায়িত্ব, রাষ্ট্রকে আলাদা করেছিল ধর্ম থেকে, তখন থেকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেক্যুলার রাষ্ট্র। সেক্যুলার রাষ্ট্রে মানুষের ধর্ম পালন করার অধিকার আছে, কিন্তু ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করার অধিকার নেই। সেক্যুলার রাষ্ট্রে নারী পুরুষ উভয়ের অধিকার সমান। আধুনিক রাষ্ট্র হতে গেলে রাষ্ট্রকে সেক্যুলার হতেই হয়। কোনও রাষ্ট্রধর্ম বহনকারী রাষ্ট্র আধুনিক রাষ্ট্র বা সভ্য রাষ্ট্র হতেই পারে না।
    ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বাতিল করার সঙ্গে সঙ্গে কিন্তু রাষ্ট্রধর্মও বাতিল করতে হবে। একটি আরেকটির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। যে সমস্যা থেকে বাঁচতে একটিকে বাতিল করা হচ্ছে, সেই সমস্যা তৈরি করতে আরেকটিকে পোষার তো কোনও যুক্তি নেই। রাষ্ট্রধর্মের কারণে সাম্প্রদায়িকতা, বৈষম্যমূলক ধর্মীয় আইন, রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার ইত্যাদি বৈধ হয়ে ওঠে।জামায়াতে ইসলামিকে নিষিদ্ধ না করার আন্দোলনে বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসীরা যোগ দেবে। কিন্তু ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করলে বিশ্বের গণতান্ত্রিক কোনও দেশ আপত্তি তো করবেই না, বরং বাহবা দেবে। এটি নিষিদ্ধ করলে কোনও রাজনৈতিক দলই ভোটের আগে ‘মসজিদ গড়বো, মাদ্রাসা বানাবো, মাদ্রাসার ডিগ্রি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রির সমান করে দেব, পাঠ্যবই থেকে অমুসলিমদের লেখা উড়িয়ে দেব, মদীনা সনদে দেশ চালাবো, দেশ জুড়ে ৫৬০ টি মডেল মসজিদ বানিয়ে দেব’ ইত্যাদি বলতে পারবে না। এগুলো হবে নিতান্তই ভোটে জেতার জন্য ধর্মকে ব্যবহার করা। যা হবে আইনত নিষিদ্ধ। মৌলবাদি তোষণের রাজনীতি বহু যুগ ধরে বাংলাদেশে চলছে, এই তোষণ রাজনীতিকে বড় দুর্গন্ধময় করে তুলছে। জামায়াতে ইসলামিকে যদি টিকে থাকতে হয়, তাহলে ধর্মের রাজনীতি বাদ দিয়ে ধর্মগন্ধহীন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি অর্থনীতি ইত্যাদি উন্নয়নের লক্ষ্যে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করার পরিকল্পনা করতে হবে। শুধু জামায়াতে ইসলামিকে নয়, সব রাজনৈতিক দলকেই করতে হবে। মনে রাখতে হবে, অন্যান্য দল অর্থাৎ আওয়ামী লীগ, কমিউনিস্ট পার্টি, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ইত্যাদি আর জামায়াতে ইসলামির মধ্যে নীতিগত কোনও পার্থক্য নেই।
  • হে হে | 185.24.***.*** | ০২ আগস্ট ২০২৪ ০৯:৫৫535604
  • শুকরশাবক এখেনে এসে কপি মারছে!  কমপালসিভ কপিপেস্টার।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে মতামত দিন