একটি ব্যবসায়িক পরিদর্শনে একদা এক গ্রামীন রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলাম। পিচ ঢালা মিহি-মসৃণ রাস্তা, দু ধারে গাছের প্রাচীর, আর তার ফাঁকে ফাঁকে নয়নাভিরাম জলাশয় ও শস্য ক্ষেত। যাত্রাপথের শহুরে অংশটিতে অসহনীয় জ্যামের কবলে পড়ে প্রাণশক্তি অনেকটাই বের হয়ে গিয়েছিল আমাদের; তারপর গ্রামের এই রাস্তায় এসে তা শুধু ফিরেই এল না, রক্তেও টগবগ বুদবুদ সৃষ্টি করতে লাগল। সেই কারণেই হয়ত, দ্রষ্টব্য ব্যবসাটির খুঁটিনাটি নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠে গিয়েছিল আমাদের মাঝে। কিন্তু একটি দৃশ্য সেই ঝড়কে হঠাৎ করেই থামিয়ে দিল। একটি দিগন্তবিস্তৃত ধান ক্ষেতে অসংখ্য সাইনবোর্ড কাকতাড়ুয়ার মত দাঁড়িয়ে আছে; সবগুলিতে একটাই ছবি, একই লেখা। ড্রিম সিটি।
এতটা প্রত্যন্ত এলাকায় আমাদের চোখ হয়ত প্রস্তুত ছিল না দৃশ্যটি দেখার জন্য। তবে এমন সাইনবোর্ড এখন দেশজুড়েই! বাংলাদেশটা ছোট; আর রোড কানেক্টিভিটি অবিশ্বাস্য রকমের গতিতে বেড়ে চলায় পুরো দেশটা কেউ যদি ইচ্ছে করেন, একদিনেই ঘুরে ফেলতে পারেন। তো চলার পথে সেই পর্যটক এমনি অগণিত সাইনবোর্ড পাবেন রাস্তার দু ধারে - সে ক্ষেত বা জলাশয় হোক, ক্ষেতে ফসল থাকুক, বা না থাকুক, জলাশয়ে মাছ থাকুক, বা না থাকুক। কানেক্টিভিটির গন্ধ শুঁকে শুঁকে রাস্তার পিছু পিছু এই সাইনবোর্ডগুলোও যে চলে আসে আর খুঁটি গেড়ে ফেলে চোখের পলকেই!
বাংলাদেশে এখন একটি শ্লোগান খুব জনপ্রিয়ঃ গ্রাম আর গ্রাম থাকবে না, শহর হয়ে যাবে। কিছুদিন আগে একটি আবাসন প্রজেক্ট চোখে পড়ল যা সাইনবোর্ডে ছেয়ে ফেলেছে একটা আস্ত গ্রাম, আর তার সব জমিজমা! তার আগে অবশ্যই গ্রামের লোকগুলিকে লোভ দেখিয়ে, আর না মেনে নিলে জোর খাঁটিয়ে ঠেলে দেয়া হয়েছে আরো দূরে। যৎসামান্য নগদ টাকা হাতে করে আর ‘ছিন্নমূল’ খেতাব কাঁধে চাপিয়ে ওরা হয়ত সংসার পেতেছে শহরের ফুটপাতে; আর ওদিকে সংশ্লিষ্ট ডেভলপার কোম্পানির নকশা চুড়ান্ত হয়ে গেছে নতুন এক ঢাকা সিটির, যেখানে একটি ব্লকের নামকরণ করা হয়েছে ‘নিউ উত্তরা’, অন্যটির ‘নিউ গুলশান’; এমনি করে ঢাকার অভিজাত এলাকাগুলোর মিষ্টি মিষ্টি নামগুলোকে তারা বেছে নিয়েছে তাদের স্বপ্নের ‘নিউ ঢাকা’ গড়ে তোলার জন্য! সেদিন বেশী দূরে নয় হয়ত যখন এমনি আরো অনেক ‘নিউ ঢাকা’-কে নিয়ে গড়ে উঠতে যাচ্ছে এক ‘নিউ বাংলাদেশ’!
বলতে কী, বাংলাদেশটা সত্যিই বদলে যাচ্ছে! বাংলাদেশে এক শ্রেণীর নাগরিক গড়ে উঠেছে, যারা শহরের সুযোগ-সুবিধা আকাঙ্ক্ষা করছেন বটে; কিন্তু বর্তমানের দূষিত ঢাকা নগরীকে চাইছেন না! এই নতুন ধাঁচের নাগরিকদের জন্যই হয়ত উপরে উল্লেখিত ‘ড্রিম সিটি’ আবিষ্কার। মানে, এদের আর ধূলিধুসরিত শহরে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে না; বরং গ্রামগুলোকেই শহর বানিয়ে দেয়া হবে। চিরকালই অবশ্য এমনি করেই শহরগুলোর জন্ম; কিন্তু, ছায়া ঢাকা সুনিবিড় গ্রামগুলোর ‘মাটির তলায় ছড়ানো রতনের’ জমিগুলোও যে রেহাই পাচ্ছে না ডেভলপার কোম্পানিগুলোর এক্সেভেটরের হাত থেকে! এই কোম্পানিগুলো ঢাকা থেকে উড়ে এলেও গ্রামগুলোতেই পেয়ে যাচ্ছে সব রসদ তাদের উচ্ছেদ ও দখল প্রক্রিয়ার। এ যেন মনে করিয়ে দেয় কোন কয়লা খনির কথা; কোন জায়গায় কয়লা আবিষ্কৃত হল, আর তরতর করে অফিস বসে গেল বিভিন্ন কোম্পানির। তারপরের গল্প সবার জানা।
খবরে প্রকাশ, রাজধানী ঢাকার সৌন্দর্য পরিবর্ধনে বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছে ঢাকা দক্ষিন সিটি কর্পোরেশান। এর মধ্যে একটি প্রজেক্ট ১৯১৯ কোটি টাকার। যার আওতায় রয়েছে খেলার মাঠ, কমিউনিটি সেন্টার, পুকুর আধুনিকায়নের পরিকল্পনা, যার বাস্তবায়ন দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া কালুনগর, জিরানি, মান্দা ও শ্যামপুরে খাল নির্মাণেও অনুষ্ঠিত হচ্ছে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ; সীমানপ্রাচীর, যানবাহন ও পথচারী চলার জন্য সেতু, পায়ে চলার পথ, পাবলিক টয়লেট, প্লাজা, সাইকেল লেন, আর বৈদ্যুতিক বাতির থাম – সব কিছু দাঁড়িয়ে যাচ্ছে ছায়াছবির মত। একই সাথে অনেক কিছু উধাও হচ্ছেও ছায়াছবির মত; যেমনঃ পুকুর বা খালের উন্নয়নে টনকে টন কংক্রিট গেলে দেয়া হচ্ছে পার্শ্ববর্তী সব সবুজকে উচ্ছেদ করে!
ইদানিং রোড ডিভাইডারের গাছ কাটার হিড়িক শুরু হয়ে গেছে সর্বত্র। কর্তৃপক্ষের কাছে সুন্দর একটি যুক্তি রয়েছে এই কর্তনযজ্ঞের পক্ষেঃ বড় গাছ উপড়ে ছোট গাছ পুঁতে দেয়ার কাজটি অবশ্যই একটি পরিবেশ-বান্ধব কর্মকান্ড, যেহেতু বড় গাছগুলি উন্মুক্ত স্থান ভরাট করে ফেলে আর নাগরিকদের চোখ ও চলাচলের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। ভাবগতি দেখে যে কেউ মনে করতেই পারেন যে, স্বল্পবসনা তন্বী-তরুণীর মত ঢাকাও তন্বী-তরুণী হতে চাইছে তার গাছের মেদ ঝরিয়ে, আর ফ্রক টাইপের ক্ষুদ্র গাছ লাগিয়ে!
ইতোমধ্যে ধানমন্ডির সাত মসজিদ সড়কের বিভাজক ভেঙে উপড়ে নেয়া হয়েছে ৫৬৩ টা গাছ। কর্তৃপক্ষের দাবী, তারা যা কেটেছে, তার থেকে বেশী লাগিয়ে দেবে। কথা হচ্ছে, শহরে তো বিরানভূমির অভাব নেই; সেখানে কি নতুন গাছ লাগানো যেতে পারত না? নগরবাসীর চোখকে সবুজ সুধা উপহার দেয়া প্রাচীণ গাছগুলিকে সৌন্দর্য, উন্নয়ন ও নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে মেরে ফেলাটা খুনের আদিম নেশাকেই উচ্চকিত করে, গড়ার নেশাকে নয়। আশ্চর্য হল, নাগরিকের করের টাকায় নাগরিকের অক্সিজেন মাস্ক সরিয়ে নেয়া হচ্ছে; তার ঘরকে অতিবেগুনি রশ্মির টার্গেট করা হচ্ছে তাদের সাথে কথা না বলেই! পাশ্চাত্যে অধিকাংশ শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে নতুন গাছ লাগিয়ে নতুন কারখানার অনুমতি পেতে হচ্ছে, আর এ বাধ্যবাধকতার নাম দেয়া হচ্ছে ‘কার্বন ক্রেডিট’, মানে, কোন প্রতিষ্ঠান যদি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কার্বন উৎপাদনে ভূমিকা রাখে তার শিল্পোদ্যগের মাধ্যমে, তাহলে তাকে ক্ষতিপূরণ করতে হবে নতুন বনভূমি সৃষ্টি করে। অথচ আমাদের এখানে রাষ্ট্রীয় পর্যায়েই ঘটে চলছে বহু ঝড়-ঝাপ্টা সয়ে টিকে থাকা গাছের গণহত্যা!
২০৩০-২০৪০ এর মধ্যে তাপমাত্রার প্রবৃদ্ধিকে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসে ধরে রাখার তোড়জোড় চলছে সারা বিশ্বে। এই যখন পরিস্থিতি, তখন ঢাকার রেকর্ড জানতে পেলে কোন বিদেশী নাগরিক ভাবতেই পারেন যে, ঢাকা এই বিশ্বের কোন শহর নয়, হয়ত প্রাগৈতিহাসিক পম্পেই এর আশাপাশের কোন অঞ্চল হয়ে থাকবে! বিষ্ময়কর হলেও সত্যি যে, গত বিশ বছরে ঢাকার তাপমাত্র কমার পরিবর্তে বেড়ে গিয়েছে তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব প্লানারস এর সমীক্ষা অনুযায়ী, ১৯৯৯ সালে ঢাকা ৬৫ শতাংশ কংক্রিট অবকাঠামোয় আচ্ছাদিত ছিল; ২০১৯ সালে তা বেড়ে ৮২ শতাংশের ঘাড়ে নিঃশ্বস ফেলছে।
একই সময়ে জলাশয় ও খোলা জায়গা ১৪ শতাংশ থেকে কমে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে। অথচ ঢাকা শহরে প্রায় ৬টি নদী ও শত শত খালবিল ছিল। এক সময় ঢাকার বুক চিরে বইত ১০০ ফুট চওরা ধোলাই খাল, যার একটি চ্যানেল শীতলক্ষ্যা নদীতে গিয়ে মিলত, আরেকটি ডেমরায় গিয়ে পড়ত। এখন এটি বেঁচে আছে ৯০০ মিটারের বক্স কালভার্ট হয়ে। খালটি পরিণত হয়েছে ২৫-৩০ ফুট প্রস্থের এক ডোবায়! খালের উন্মুক্ত পাড় দুটি হয়েছে আবর্জনার ঘরবাড়ি। দক্ষিণ ঢাকার বিভিন্ন এলাকার সব ড্রেন এসে মিশেছে খালটিতে। ঢাকার উপকণ্ঠে অবস্থিত আমিনবাজার, সাভার, ও কেরানিগঞ্জে জলাশয়ভিত্তিক মডেল টাউন হচ্ছে; এ এলাকাগুলোকে ঘিরে থাকা নদী-নালা- খালবিলের ভরাট হয়ে যাওয়া অংশ দিয়ে প্লট বানিয়ে তা বরাদ্দ দেয়ার পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে। সেখানে গড়ে উঠবে খেলার মাঠ, বিনোদন কেন্দ্র। তবে উন্নয়নের অবিশ্বাস্য গল্প শুধু ঢাকাতেই সীমাবদ্ধ নয়; সুদূর ভাসানচরেও পাঁচ তারকা হোটেল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার খবর বেরিয়েছে।
আমাদের দালানগুলিতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে, অন্যদিকে, প্রাকৃতিপ্রদত্ত শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাটা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। শুধু ঢাকা নগরী নয়, পুরো বাংলাদেশের চিত্রই এমন। অথচ এমন জলে পূর্ণ দেশ খুব কমই ছিল দুনিয়াতে, আর সেই জল আমরা নষ্ট করে ফেলেছি!!! ঢাকা মহানগরীর ৩০ শতাংশ গত ৩০-৪০ বছরে গড়ে উঠেছে। এ থেকেই থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়ে - নগরায়ন ও পরিবেশ ধ্বংসের সমান্তরাল গল্পটা। জাপান আয়তনে আমাদের তিনগুন হলেও ব্যবহারযোগ্য জমি মাত্র ২০ ভাগ। অথচ লোকসংখ্যা কিছুটা বেশী হওয়ার পরেও আমাদের দেশের ব্যবহারযোগ্য জমি ৭০ ভাগ। অথচ এই প্রকৃতি-প্রদত্ত আশির্বাদকে আমরা কী বিপুল অবহেলাই না করছি!
যেকোন শহরের ২৫ ভাগকে গাছ, আর ১৫ ভাগকে জলাশয়ের জন্য ছেড়ে দিতে হয়। কিন্তু আমাদের ঢাকার ৮০ ভাগই দখলে নিয়ে নিয়েছে এয়ার-টাইট কাঁচ আচ্ছাদিত দালান,যা গড়ে উঠেছে এমন সব উপকরণ দিয়ে যা শুধু তাপমাত্রা বৃদ্ধিকেই উস্কে দেয়। থমাস হফম্যান নামে একজন বিদেশী কয়েক বছর পূর্বে মত প্রকাশ করেন যে, বস্তুত ঢাকায় এমন কোন জায়গা নেই যা নির্মিত হচ্ছে না। জার্নাল অব ইকোনোমিকস এন্ড সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট এর তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯০ সালে নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জে কংক্রিটে আচ্ছাদিত ভূমি ছিল ৫৩ হেক্টর, আর ২০১৭ সালে তার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭৬৬ হেক্টর। বিশেষজ্ঞদের মত, আমরা যদি পরিকল্পিত শহর গড়ে তুলতে পারতাম ঢাকা বা তার উপকণ্ঠে উপরের পরিসংখ্যানকে অনুসরণ করে, তাহলে এগুলোর তাপমাত্রা এমনিতেই ৩-৪ ডিগ্রি কম থাকতো।
তবে শুধু জলাশয় বা বনভূমি নয়, পাহাড়েও আমাদের সাম্রাজ্য অভিযান চলছে বিপুল বিক্রমে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ এর ৬(খ) অনুযায়ী পাহাড় কাটা নিষিদ্ধ হলেও রাঙ্গামাটির লুম্বিনী বিহার এলাকায় পাহাড় কেটে সমান করে ফলের চাষ করা হচ্ছে, এক্সক্যাভেটরের সূচোলো দাঁতের চিহ্ন সর্বত্র। সম্প্রতি আরো খবর বেরিয়েছে, বন্দরনগরী চট্রগ্রামের খুলশি এলাকায় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের ভবন গড়ে তুলতে পাহাড় কাটার মোচ্ছব চলছে, যদিও দুই বছর আগে পরিবেশ অধিদপ্তর, যা সরকারেরই আরেকটি দপ্তর, সমস্ত প্রকার অবৈধ পাহাড় কাটার কার্যক্রমকে বন্ধ করে দিয়েছেন।
বাংলাদেশে এখন চলছে উন্নয়নের এক অভাবনীয় অভিযান, যা মনে করিয়ে দেয় কোলরিজের সেই প্রাচীন নাবিকের সংলাপের কথা যা শুধু সামান্য পাল্টে দিতে হবে বর্তমান সময়ের উপযোগী করে তুলতেঃ
‘উন্নয়ন, উন্নয়ন, উন্নয়ন সর্বত্র
সামান্যই আছে তাও উপভোগের!‘
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিগত অর্থবছরে যদিও আমাদের জিডিপি বেড়েছে ৭.১ শতাংশ হারে, ধনীগরিবের বৈষম্য কমেনি, উল্টো বেড়েছে। এই বৈষম্যের সূচক যা গিনি কোএফিশিয়েন্ট নামে পরিচিত তা ২০১০ সালে ছিল ০.৪৫৮, ২০১৫ সনে হয়েছে ০.৪৮২, আর ২০২২ সনে .০.৪৯৯ এর মাথায় ঠেকেছে। এদিকে, বাংলাদেশের হাউজহোল্ড ইনকাম ও এক্সপেন্ডিচার সার্ভে - ২০২২ বলছে, যদিও দারিদ্র হার ২০১৬ এর ২৪.৩% থেকে কমে ২০২২ এ দাঁড়িয়েছে ১৮.৭% এ, আয় বৈষম্য বেড়ে গিয়েছে। সাধারণত একটি দেশে আয়-বৈষম্য বা অসাম্য প্রকট বলে প্রতীয়মান হয়, যদি এর গিনি কোএফিশিয়েন্ট ০.৫০ এর উপরে চলে যায়। আমাদের উন্নয়ন গল্প কি সেই পথেই কি নিয়ে যাচ্ছে না?
আমাদের প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি বলেছেন, ‘আমাদের কার্যক্রমগুলো আমাদের ভবিষ্যতের জন্য – অধিকতর উৎপাদন, পুষ্টি, শ্রেয়তর পরিবেশ ও জীবনের জন্য।‘ তার কাছ থেকেই দেশের নাগরিকেরা সুসংবাদ পেয়েছে যে, সরকার একটি ভূমি জোনিং সিস্টেম করেছে আমাদের দেশের কৃষিজমিগুলোকে রক্ষা করতে। সেই নাগরিকেরা এখন আরো কিছু সুসংবাদের অপেক্ষা করছে তাদের রাষ্ট্রনেতার কাছ থেকে – কৃষিভূমির পাশাপাশি জলাভূমি, বনভূমি, আর পাহাড়ি-ভূমিকেও রক্ষার জন্য যেন উদ্যোগ নেয়া হয়! আর সেই উদ্যোগের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ানো শক্তিগুলোর জন্য যেন রাষ্ট্রীয় আইনকে কঠোর ও বাস্তবায়নযোগ্য করা হয়! তাহলেই হয়ত সত্যিকার অর্থেই এক ‘নিউ বাংলাদেশ’ হয়ে উঠতে পারবে আমাদের দেশ, যুগ যুগ লালিত ঐতিহ্য ও আদর্শের বেলাভূমিতে হবে যার নিরাপদ আবাস!
বিখ্যাত গ্রন্থ ‘স্মল ইজ বিউটিফুল’- এ ইভো মোরেলসের একটি স্মরনীয় উক্তি রয়েছেঃ “মানবজাতি যা জানে না তা হল - মানুষ নামক প্রাণীটি মা পৃথিবীকে ছাড়া বাঁচতে পারে না, যদিও মা পৃথিবী মানুষ নামক সন্তানটিকে ছাড়া অবলীলায় বেঁচে থাকতে পারে।“ আমরা সবাই মিলে যত দ্রুত এই সত্যিটা অনুধাবন করব, আমাদের বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনাটা ততই বেড়ে যাবে!
(সমাপ্ত)
(লেখাটি 'উন্নয়ন ও উপভোগ' শিরোনামে গত বছর 'যাপন' নামক একটি ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছিল।)