এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • হেদুয়ার ধারে - ৭০ 

    Anjan Banerjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩ | ৪৭১ বার পঠিত
  • | | | | | ৬  | ৭  | ৮  | ৯  | ১০  | ১১  | ১২  | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬  | ১৭  | ১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২  | ২৩  | ২৪  | ২৫  | ২৬ | ২৭ | ২৮  | ২৯  | ৩০ | ৩১  | ৩২  | ৩৩  | ৩৪ | ৩৫ | ৩৬  | ৩৭  | ৩৮  | ৩৯  | ৪০  | ৪২  | ৪৩  | ৪৪  | ৪৫  | ৪৬ | ৪৭  | ৪৮  | ৪৯  | ৫০  | ৫১  | ৫২ | ৫৩ | ৫৪ | ৫৫ | ৫৬ | ৫৭ | ৫৮ | ৫৯ | ৬০ | ৬১ | ৬২ | ৬৩ | ৬৪ | ৬৫ | ৬৬ | ৬৭ | ৬৮ | ৬৯ | ৭০ | ৭১ | ৭২ | ৭৩ | ৭৪ | ৭৫ | ৭৬ | ৭৭ | ৭৮ | ৭৯ | ৮০ | ৮১ | ৮২ | ৮৩ | ৮৪ | ৮৫ | ৮৬ | ৮৭ | ৮৮ | ৮৯ | ৯০ | ৯১ | ৯২ | ৯৩ | ৯৪ | ৯৫ | ৯৬ | ৯৭ | ৯৮ | ৯৯ | ১০০ | ১০১ | ১০২ | ১০৩ | ১০৫ | ১০৬ | ১০৭ | ১০৮ | ১০৯ | ১১০ | ১১২ | ১১৩ | ১১৪ | ১১৫ | ১১৬ | ১১৭ | ১১৮ | ১১৯ | ১২০ | ১২১ | ১২২ | ১২৩ | ১২৪ | ১২৫ | ১২৬ | ১২৭ | ১২৮ | ১২৯ | ১৩০ | ১৩১ | ১৩২ | ১৩৩ | ১৩৪ | ১৩৫ | ১৩৬ | ১৩৭ | ১৩৮ | ১৩৯ | ১৪০ | ১৪১ | ১৪২ | ১৪৩ | ১৪৪ | ১৪৫ | ১৪৬ | ১৪৭ | ১৪৮ | ১৫০ | ১৫১ | ১৫২ | ১৫৩ | ১৫৪ | ১৫৫ | ১৫৬ | ১৫৭ | ১৫৮ | ১৫৯ | ১৬০ | ১৬২ | ১৬৩ | ১৬৪ | ১৬৫ | ১৬৬ | ১৬৭
    মাণিকলাল ঘুম থেকে ওঠেন সকাল সাড়ে ছটা নাগাদ। তিনি ঘুম থেকে উঠে প্রথমে বসার ঘরের মধ্যে দিয়ে সৌদামিনীর ঘরের দিকে যান মা ঠিকঠাক আছেন কিনা দেখে নেবার জন্য। বহু বছর ধরে এই নির্ঘন্ট বজায় আছে। আজও তিনি নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে বসার ঘরে ঢুকলেন এবং কাঁচের আলমারির সামনে চোখ পড়তে চমকে উঠলেন। তার হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেল। মাণিকলালবাবু দেখলেন কাঁচের আলমারিটার সামনে আড়াআড়ি চোখ বুজে শুয়ে আছেন তার মা সৌদামিনী দেবী।
    মাণিকলাল রীতিমতো ঘাবড়ে গেলেন। তিনি হতবুদ্ধি হয়ে খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইলেন সৌদামিনীর দিকে। তারপর ভিতরের বারান্দার ধারে গিয়ে ডাকতে লাগলেন , ' কাঞ্চন... কাঞ্চন... শিগ্গীর আয় ... '
    মাণিকলালের সোরগোল শুনে বাড়ির কাজের লোকেরাও ছুটে এল। গ্র্যান্ডফাদার ক্লক নিশ্চল নিস্পন্দ হয়ে নীরব ঔদাসীন্যে দাঁড়িয়ে আছে কাঁচের আলমারির ভিতরে।

    সৌদামিনী জেগে উঠেছেন অনেকক্ষণ আগেই। কালীময় ডাক্তার এসে তাকে অনেকক্ষণ ধরে নানাভাবে পরীক্ষা করলেন। কিন্তু এইসব প্রাথমিক অনুসন্ধানে তেমন কিছু পাওয়া গেল না।
    সৌদামিনী রাত্তিরবেলা কি করতে ও ঘরে গিয়েছিলেন এবং তিনি আলমারির সামনে শুয়েই বা রইলেন কেন সে ব্যাপারে তিনি বিন্দুমাত্র আলোকপাত করতে পারলেন না। আদৌ কি ঘটেছিল গত রাত্রে সেটাই তিনি মনে করতে পারলেন না। তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায় কথাবার্তা বলতে লাগলেন। অত্যন্ত আশ্চর্য হয়ে বললেন, ' আমি ওঘরে কাঁচের আলমারির সামনে শুয়েছিলাম ? কি আশ্চর্য ! আমি ওখানে গেলাম কখন ... আমি তো এই এখানেই ... ঘুম আসছিল না কিছুতেই , তারপর তো ঘুমিয়ে পড়লাম ... তোমরা কি সব বলছ বুঝতে পারছি না .... '
    ডাক্তার কালীময় ভটচাজ মাণিকবাবুকে বললেন, ' একটা সাইকোলজিক্যাল ডিসঅর্ডার বলে মনে হচ্ছে। অ্যাংজাইটি অ্যান্ড ডিপ্রেসান থেকে এরকম হয় অনেকের। একটা অ্যান্টি ডিপ্রেস্যান্ট ট্যাবলেট লিখে দিয়ে গেলাম। এটা দশদিন খাওয়ান। আশা করি কাজ হবে এতে। নাহলে গোবিন্দ সেনকে দেখান। শ্যামবাজারে ভূপেন বোস এভিনিউয়ে চেম্বার। খুব ভাল সাইকিয়াট্রিস্ট। ঠিক আছে ... চলি আমি ... রাত্রে দু এক দিন ওয়াচে রাখুন ... জানাবেন ... '
    কালীময় ডাক্তার বিদায় নিলেন।

    সারা দিন গেল। সন্ধে হল। রাত দশটা বেজে গেল। মাণিকবাবু , সৌদামিনীদেবী খাওয়া দাওয়া সেরে যে যার ঘরে গেলেন বসবার ঘরে বসে খানিকক্ষণ কথাবার্তা বলার পর। মাণিকবাবু কাঁচের আলমারির দিকে তাকিয়ে দেখলেন আলমারির দ্বিতীয় তাকে সেরামিকের একটা অপরূপ নটরাজ মূর্তির পাশে গ্র্যান্ডফাদার ক্লক দাঁড়িয়ে আছে নীরব প্রজ্ঞাবানের মতো।
    মাণিকবাবু বললেন, ' মা , আমি তোমার ঘরে শোব ?'
    ------ ' নারে খোকা ... কোন দরকার নেই। আমি ঠিক আছি ... কোন চিন্তা করিস না ... আমি ঠিক আছি ... '
    ----- ' ঠিক আছে ... কোন অসুবিধে হলে তোমার খাটের সঙ্গে লাগানো কলিং সুইচটা টিপে দিও। আমি উঠে পড়ব। ডিম লাইট জ্বালিয়ে শুয়ো ... '
    ----- ' আচ্ছা ... ঠিক আছে। তুই যা ... শুয়ে পড়...'

    মানিকবাবু আধঘন্টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়লেন। বেশ গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলেন তিনি। মাঝরাতে এক সময়ে ঘুমের মেঘ পাতলা হতে লাগল ক্রমশ।
    তিনি শুনলেন , পাশের ঘর থেকে ঘড়ির দুটো ঘন্টা পড়ল। গ্র্যান্ডফাদার ক্লকের সুরেলা গম্ভীর আওয়াজ ... টং টং ... '
    মাণিকবাবু চোখ মেললেন ধীরে ধীরে। উঠে বসলেন। ভাবলেন , কি হল ... এটা তো হওয়ার কথা না ... ঘড়িটা তো অবসর নিয়েছে।
    তিনি বিছানায় উঠে বসে মেঝেতে পা রাখলেন। তারপর এগোতে লাগলেন বসবার ঘরের দিকে। সেখানে নিষ্প্রভ নীলাভ আলো জ্বলছে।

    কানাই সিকদার মল্লিকবাজারে ওই ডাক্তার ছেলেটার বাড়িতে কথাবার্তা বলে এসেছে। তারা মেয়ের গুণাগুণ এবং বংশমর্যাদা সম্পর্কে শুনে টুনে যথেষ্ট আগ্রহ প্রকাশ করেছে এবং মেয়ে দেখার ব্যাপারে কিছুদিন অপেক্ষা করতে রাজি আছে। আজও কানাই একদিন এসে বাসন্তীদেবীকে খবরটা দিল। ঘটনাক্রমে অলোকেন্দুবাবু সেদিন বাড়ি ছিলেন। সেদিন রবিবার। অলোকেন্দুবাবু বললেন, ' তা বেশ তো ... চন্দার পরীক্ষা শেষ হতে তো আর দিন পনের বাকি আছে। তখনই না হয় .... '
    চন্দনা এবং সুমনাও তখন সে ঘরে ছিল। অলোকেন্দুবাবু চন্দনার দিকে তাকিয়ে বললেন, ' কিরে চন্দা ... তাই তো ? '
    চন্দনা কাউচে বসে ছিল। মাথা নীচু করে খবরের কাগজে চোখ বোলাচ্ছিল।
    অস্ফূটস্বরে কাগজের দিকে চোখ রেখে বলল, ' হুঁ ... '
    অলোকেন্দুবাবু মেয়ের অনুমতি পেয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে বাসন্তী এবং কানাইয়ের উদ্দেশ্যে বললেন , ' ব্যাসস্ ... হয়ে গেল তালে ... '
    বাসন্তীদেবী শ্লেষাত্মক স্বরে বললেন, ' ওঃ ... যেন বিরাট কান্ড হয়ে গেল একেবারে ... মেয়ে দেখা দিতে রাজি হয়ে হয়েছে , তাতেই আহ্লাদে গলে জল ... তোমার আস্কারাতেই মেয়েরা সাপের পাঁচ পা দেখেছে ... কি আর বলব ...'
    হঠাৎ বলে বসলেন, ' আর ছোট মেয়ের কথা কি আর বলব ... হুঁ ... '
    অলোকেন্দুবাবু আর সুমনা চোখ চাওয়া চাওয়ি করল। অলোকেন্দুবাবু চোখ এবং হাতের ইশারায় তাকে শান্ত থাকতে বললেন।
    ------ ' কেন ফুচার আবার কি হল ? ' অলোকেন্দু বিস্ময় প্রকাশ করেন।
    ----- ' হবে আবার কি ! আর হলেই বা আমি কি করে জানব ? তুমি আর তোমার মেয়েই জান ... '
    ----- ' এ আবার কি কথা ! আমার মেয়ে , তোমার মেয়ে নয় ? '
    ----- ' সে আর বলতে ... পেটে ধরিচি বলেই তো এত জ্বালা ... নইলে আর কি ... '
    অলোকেন্দুবাবু এবার কথার মোড় ঘুরিয়ে দিলেন।
    বললেন, ' একটু পরে আমার এক ক্লায়েন্ট আসবে। খুব ঘরোয়া ধরণের একজন। বয়েস খুব কম ... কলেজে পড়ে ... '
    ----- ' তা এখানে কেন ? চেম্বার আছে তো। মামলাটা কি ? '
    ----- ' মামলা তেমন ভারি কিছু না ... এই ঘরোয়া মামলা আর কি ... '
    বাসন্তীদেবী ঠিক বুঝতে পারলেন না অলোকেন্দুবাবুর কথাগুলো। উনি অবশ্য এটা নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামালেন না , কারণ অলোকেন্দুবাবুর এরকম হেঁয়ালিমার্কা কথাবার্তা শুনতে বাসন্তীদেবী অভ্যস্ত। তিনি চায়ের পেয়ালায় চুমুক দিলেন।
    অলোকেন্দুবাবু বলতে লাগলেন, ' ছেলেটা ভাল জ্যোতিষী। জ্যোতিষী ঠিক না ... ফেস রিডার ... মানে , মুখ দেখে বলতে পারে ... যা বলে তাই মেলে। এই তো ... সেদিন আমার মুখ দেখে বলল, ' আপনার তিন মেয়ে। তারা অত্যন্ত সুলক্ষণযুক্তা। আপনার স্ত্রী অত্যন্ত বুদ্ধিমতী এবং বিচক্ষণ। পুরো সংসার আসলে তিনিই সামলান। আমি তো শুনে থ। বলে কি ! '
    নিজের প্রশংসা শুনে বিগলিত হয় না এমন মানুষ কমই আছে। বাসন্তীদেবী খুশি গোপন করে সলজ্জভাবে বললেন , ' তুমি থাম তো ... ' , তারপর বললেন , ' কিন্তু ... আমাদের তিনটে মেয়ে আছে, এটা বলতে পারল তোমার মুখ দেখে ? আশ্চর্যের ব্যাপার ! '
    ------ ' তবে আর বলছি কি ? দেখতেই পাবে ... আসবে তো এক্ষুণি ... ও আবার ব্রিলিয়ান্ট ছাত্র ... ফিজিক্সে অনার্স পড়ে স্কটিশ চার্চ কলেজে ... '
    বাসন্তীদেবী অলোকেন্দুবাবুর মুখের দিকে কৌতূহলভরে তাকিয়ে রইলেন।
    এই সময়ে দিবাকর এসে বলল, ' একজন এসেছে স্যার... বসাব ? '
    ----- ' এসেছে ? না না ... বসাতে হবে না ... এখানে নিয়ে আয় ... ' অলোকেন্দুবাবু বললেন।

    প্রতিবিম্ব দরজায় এসে দাঁড়াল। ওখান থেকে বলল, ' আসব স্যার ? '
    বাসন্তীদেবী দেখলেন ঢোলা প্যান্ট আর ফুলহাতা শার্ট পরে একটা কুড়ি বাইশ বছরের শ্যামবর্ণ যুবক দাঁড়িয়ে রয়েছে। চোখে কালো রঙের মোটা ফ্রেমের চশমা। বাসন্তী ভাবলেন , এই কি ওই জ্যোতিষী নাকি ? বাঃ চেহারাটা বেশ ছিমছাম সাত্ত্বিক গোছের। মুখটা বেশ নিষ্পাপ ধরণের। ভবিষ্য দ্রষ্টা হিসেবে প্রথম দর্শনে প্রতিবিম্বকে বেশ মনে ধরল বাসন্তীর এবং তিনি একদৃষ্টে তাকিয়ে প্রতিবিম্বকে জরিপ করতে লাগলেন তার স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গীতে। সুমনা হাত দিয়ে মুখ আড়াল করে মুখ টিপে হাসল একবার।
    অলোকেন্দুবাবু বললেন, ' আরে এস এস .... আজ আর চেম্বার খুলিনি। এখানেই কথা বলি ... বস। তোমার মামলার ব্যাপারটা আমি গুছিয়ে এনেছি প্রায়। চিন্তা কোর না। '
    ----- ' না স্যার ... আপনি থাকতে আমার আর চিন্তা কি ? '
    বাসন্তীদেবী ভুরু নামিয়ে ইশারায় অলোকেন্দুকে বললেন , এই কি সেই নাকি ?
    অলোকেন্দুবাবু মৃদু হেসে ঘাড় নেড়ে বাসন্তীদেবীকে নিশ্চিত করলেন। তারপর প্রতিবিম্বকে বললেন, ' আজকে কিছু বলবে নাকি? তুমি তো পার ... '
    ----- ' না স্যার ... ওসব করা ঠিক না ... মানুষের মন দুর্বল হয়ে যায় এতে ... আর ওগুলো করা তো আমার কাজ না। আমি কোন সাইকিক না। কেউ কেউ ছাড়তে চায় না, তাই বাধ্য হয়ে ... যেটা হবার সেটা হবেই, আগে থেকে জেনে লাভ কি ? মনের জোরটাই আসল , তাই না ? '
    প্রতিবিম্ব বেশ বিজ্ঞের মতো তৈরি করে আনা কথাগুলো আউড়ে গেল।
    অলোকেন্দুবাবু ঘাড় নেড়ে বললেন , ' বটেই তো ... বটেই তো ... '
    সুমনা সকলের অলক্ষ্যে আর একবার হেসে নিল।
    বাসন্তীদেবী কিন্তু উসখুস করছিলেন। তিনি এমন সুযোগ হারাতে রাজি না।
    তিনি বললেন, ' সে তো ঠিকই বাবা। কিন্তু মনের জোর দিয়ে কি সব কিছু হয় ? কিছু কিছু জিনিস আগে থেকে জেনে রাখলে , সাবধান হওয়ার সুযোগ পাওয়া যায় ... '
    ------ ' মাসীমা, আপনি আমার কথা বিশ্বাস করতে পারেন, নাও করতে পারেন ...ঘটনা হল, সাবধান হওয়ার সুযোগ কেউ পায় না। যেটা হবার সেটা হবেই। নিয়তির বিধান বদলে দেওয়া যায় না ... '
    এইটুকু ছেলের মুখে এরকম জ্ঞানগর্ভ কথা শুনে বাসন্তীদেবীর বেশ লাগছিল। তিনি এই বয়সী ছেলের মুখে এ ধরণের কথা কখনও শোনেননি। কিন্তু তিনি হাল ছাড়তে চাইলেন না।
    বললেন, ' তুমি যেটা বললে সেটা ঠিকই ... আমার শুধু একটা জিনিসই জানার ছিল ... সেটা যদি একটু ভাল করে বিচার করে বলে দাও... '
    প্রতিবিম্ব গলায় যতটা সম্ভব শ্রদ্ধা ও আন্তরিকতা আনা সম্ভব, এনে বলল, ' আপনি যখন বলছেন ... আপনার কথা অমান্য করার ধৃষ্টতা আমার নেই .... আপনি আমার মায়ের মতো ... আমার দ্বারা যদি কোন উপকার হয় অবশ্যই করব ... '
    প্রতিবিম্বর বাকচাতুর্য দেখে অলোকেন্দুবাবু মুগ্ধ হলেন। সুমনা ভাবল, ' বাবা রে ... ছেলের পেটে পেটে এত ! '
    বাসন্তীদেবী ক্রমশ প্রতিবিম্বর মায়াজালে জড়াতে লাগলেন। প্রতিবিম্ব বাসন্তীদেবীর চোখে দুটো নির্মল মায়াবী চোখ ফেলে বসে রইল।
    বাসন্তীদেবী বললেন, ' এই ফুচা একবার এদিকে আয় ... '
    সুমনা গিয়ে মা-র পাশে বসল।
    বাসন্তী বললেন, ' আমার এই মেয়েকে দেখে বল তো বাবা ... এর বিয়েটা কিরকম ছেলের সঙ্গে হবে। বড্ড চিন্তায় আছি ... '
    বর্তমানে বাসন্তীদেবীর যাবতীয় চিন্তাভাবনা আবর্তিত হয় মেয়েদের বিবাহ সংক্রান্ত ব্যাপারকে কেন্দ্র করে।
    প্রতিবিম্ব স্থির দৃষ্টিতে সুমনার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। সুমনা কোনরকমে হাসি চেপে রেখেছে।
    ----- ' এর বিয়ের এখনও অন্তত তিনবছর দেরি আছে। ' প্রতিবিম্ব গম্ভীর মুখে ভবিষ্যদ্বাণী করল।
    কানাই সিকদার নড়েচড়ে বসল।
    ----- ' তা ... ঠিক আছে। দিদিদের বিয়ে হোক আগে ... তারপরে তো ... তা পাত্র কেমন হবে বাবা ? সেটাই তো আসল ... ' বাসন্তী বললেন।
    ----- ' সেটা এক্ষুণি বলা যাচ্ছে না ... এই মুহুর্তে ঠিক বুঝতে পারছি না। আর একদিন দেখতে হবে। '
    ----- ' অ ... তা'লে আবার কবে আসতে পারবে ? '
    ----- ' এই দু একদিনের মধ্যেই চেষ্টা করব ... চিন্তা করবেন না ... দেরি হবে না ... হাজার হোক আপনি আমার মায়ের মতো ... '
    চন্দনা এতক্ষণ চুপ করে দেখছিল। সে হঠাৎ বলে উঠল, ' হ্যাঁ ... এখন থেকে যাওয়া আসা করতে থাকাই ভাল। ব্যাপারটা সহজ হয়ে যায়। আচমকা ঝুলি থেকে বেড়াল বেরোলে সামলানো মুশ্কিল হয়ে যায় ... '
    সুমনা বিস্মিত চোখে তাকিয়ে রইল দিদির দিকে।
    অলোকেন্দুবাবু কোন কথা বললেন না। তার বড় মেয়েকে তিনি চেনেন।
    বাসন্তীদেবী কিছুই বুঝলেন না। তিনি এখন অন্য চিন্তায় ব্যস্ত আছেন।
    বললেন, ' তা তো বটেই ... তা তো বটেই ... '
    তিনি বোধহয় কথাটা একই সঙ্গে প্রতিবিম্ব এবং চন্দনা দুজনের কথার পিঠেই বললেন। মানে, কথার কথা বললেন আর কি।
    আবার বললেন, ' আবার এস কিন্তু বাবা সময় করে ... আসল কথাটাই জানা হল না ... '
    অলোকেন্দুবাবু বললেন, ' আরে হ্যাঁ হ্যাঁ ... আসবে আসবে ... ওর মামলার কাজ রয়েছে না ... '
    তিনি দাঁড়িয়ে উঠে বললেন, ' নাও এবার চল ওদিকে ... তোমার অরিজিনাল ডিডটা তোমায় দিয়ে দিই। চল ... '
    প্রতিবিম্ব বলল, ' হ্যাঁ চলুন স্যার ... আজ তাহলে আসি মাসীমা ... আবার দেখা হবে ... '
    বাসন্তীদেবী স্মিত হেসে ঘাড় কাত করলেন।

    সিঁড়ির মুখে পৌঁছে অলোকেন্দুবাবু বললেন , ' তুমি যে এত ভাল অভিনেতা তা তো জানতাম না ... দারুণ ... '
    ----- ' আপনার স্ক্রিপ্টটাও যে দারুণ ছিল স্যার ... সেটা তো অস্বীকার করা যাবে না ... হাঃ হাঃ ... '

    পরদিন ভোরে সৌদামিনী দেবীর মতোই মাণিকলালকেও কাঁচের আলমারির সামনে চোখ বুজে শুয়ে থাকতে দেখা গেল।
    ওই কালীময় ডাক্তার আবার এসে উপস্থিত হলেন। মাণিকবাবুকে পরীক্ষা নীরিক্ষা করলেন। অবশেষে বললেন, ' দূর ছাই , কি হচ্ছে এসব ! আপনারা বরং ডাক্তার গোবিন্দ সেনের সঙ্গে কনসাল্ট করুন। আর ... আমার মনে হয় ওই অচল ঘড়িটা বাড়ি থেকে সরিয়ে দেওয়াই ভাল ... '

    ( চলবে )
    ********************************************
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    | | | | | ৬  | ৭  | ৮  | ৯  | ১০  | ১১  | ১২  | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬  | ১৭  | ১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২  | ২৩  | ২৪  | ২৫  | ২৬ | ২৭ | ২৮  | ২৯  | ৩০ | ৩১  | ৩২  | ৩৩  | ৩৪ | ৩৫ | ৩৬  | ৩৭  | ৩৮  | ৩৯  | ৪০  | ৪২  | ৪৩  | ৪৪  | ৪৫  | ৪৬ | ৪৭  | ৪৮  | ৪৯  | ৫০  | ৫১  | ৫২ | ৫৩ | ৫৪ | ৫৫ | ৫৬ | ৫৭ | ৫৮ | ৫৯ | ৬০ | ৬১ | ৬২ | ৬৩ | ৬৪ | ৬৫ | ৬৬ | ৬৭ | ৬৮ | ৬৯ | ৭০ | ৭১ | ৭২ | ৭৩ | ৭৪ | ৭৫ | ৭৬ | ৭৭ | ৭৮ | ৭৯ | ৮০ | ৮১ | ৮২ | ৮৩ | ৮৪ | ৮৫ | ৮৬ | ৮৭ | ৮৮ | ৮৯ | ৯০ | ৯১ | ৯২ | ৯৩ | ৯৪ | ৯৫ | ৯৬ | ৯৭ | ৯৮ | ৯৯ | ১০০ | ১০১ | ১০২ | ১০৩ | ১০৫ | ১০৬ | ১০৭ | ১০৮ | ১০৯ | ১১০ | ১১২ | ১১৩ | ১১৪ | ১১৫ | ১১৬ | ১১৭ | ১১৮ | ১১৯ | ১২০ | ১২১ | ১২২ | ১২৩ | ১২৪ | ১২৫ | ১২৬ | ১২৭ | ১২৮ | ১২৯ | ১৩০ | ১৩১ | ১৩২ | ১৩৩ | ১৩৪ | ১৩৫ | ১৩৬ | ১৩৭ | ১৩৮ | ১৩৯ | ১৪০ | ১৪১ | ১৪২ | ১৪৩ | ১৪৪ | ১৪৫ | ১৪৬ | ১৪৭ | ১৪৮ | ১৫০ | ১৫১ | ১৫২ | ১৫৩ | ১৫৪ | ১৫৫ | ১৫৬ | ১৫৭ | ১৫৮ | ১৫৯ | ১৬০ | ১৬২ | ১৬৩ | ১৬৪ | ১৬৫ | ১৬৬ | ১৬৭
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • যোষিতা | ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৪:০৯527146
  • ঘড়িভূত?!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু মতামত দিন