কেন দক্ষিণ ভারতে বিজেপি ব্যর্থ?
হয়তো অন্য কারণও থাকতে পারে। রাজ্য নির্বাচন আর জাতীয় নির্বাচন এক জিনিস নয়। অনেক স্থানীয় ইস্যু কাজ করে।
কিন্তু সাধারণভাবে দেখতে গেলে ব্যাপারটা হলো এই।
বিজেপির মিডিয়া প্রোপাগাণ্ডা মেশিন দক্ষিণ ভারতে ব্যর্থ। কেন ব্যর্থ? কারণ, বিজেপি আরএসএস ও কর্পোরেট শক্তিচালিত মিডিয়া হিন্দীভাষা-ভিত্তিক মিডিয়া। দক্ষিণ ভারতে হিন্দী মিডিয়া কাজ করেনা।
আর একটা কারণ, দক্ষিণ ভারতে শিক্ষার হার বেশি। সচেতনতা বেশি। ধর্মান্ধতা অপেক্ষাকৃত তাই কম। ধর্ম আছে। কিন্তু ধর্মান্ধতা অনেক কম। এক সময়ের বাংলার মতোই।
মিজোরাম, মণিপুর ইত্যাদি রাজ্যেও তাই। মণিপুরে যে বর্বরতা ঘটেছে, বিজেপি ওখানে সুবিধে করতে পারবেনা। মেনল্যান্ড ইন্ডিয়া থেকে অনেক দূরে থাকা এসব রাজ্যকে হিন্দুত্ববাদ এবং পুরুষতান্ত্রিক সমাজ কখনো গ্রাস করতে পারেনি। দক্ষিণ ভারতেও তাই।
ঠিক আমেরিকার শাসকদের মতোই, হাঙ্গেরি, নেদারল্যান্ডস, এমন কি ফ্রান্সের মতোই অবিশ্বাস্য ধনী ও শক্তিধর শাসকশ্রেণী বুঝে গেছে যে এই তথাকথিত বিশ্বায়িত অর্থনৈতিক সিস্টেমে লুটেপুটে খাওয়ার জন্যে হিটলারের মডেলই সর্বশ্রেষ্ঠ। এই মডেলের প্রধান স্তম্ভ হলো (১) সংখ্যাগরিষ্ঠকে একটা সফলতার ও সুখের স্বপ্ন দেখাও, (২) সংখ্যালঘুকে শত্রু চিহ্নিত করো, এবং (৩) স্থায়ী সরকার ও এক ভাষা এক দেশ এক নেতা (অথবা নেত্রী) তত্ত্ব মজবুত করো। এবং জার্নালিজম অফ এক্সক্লুশন। অর্থাৎ অপ্রিয় সত্য জাস্ট দেখাবেনা। ট্রাম্প মডেলে মোদী কখনো প্রেস কনফারেন্স করবেনই না।
গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, বহুত্ববাদ, সমানাধিকার, বাকস্বাধীনতা এবং সহনশীলতা এর কোনোটাই এই মডেলের প্রায়োরিটি নয়। ঠিক হিটলার মুসোলিনির জমানার মতোই গ্রাসরুট এক বিশাল সংগঠন রাজনৈতিক দলগুলোর পিছনে প্রধান শক্তি। ভারতে বিজেপির পিছনে আরএসএস।
এক ভাষা এক নেতা এক ধর্মের তত্ত্ব আমেরিকার বাইবেল বেল্টের মতোই গোবলয়ে প্রবল শক্তিধর এখন।
দক্ষিণ ভারত সেই স্বৈরতান্ত্রিক হিন্দিভাষাভিত্তিক আগ্রাসন থেকে এখনো মুক্ত। ইন্দিরা গান্ধীর বিপর্যয়ের সময়েও দক্ষিণ ভারত কিন্তু গোবলয়ের বিপরীত মেরুতে ছিল।
আরএসএস বিজেপির শক্তিশালী ফ্যাসিস্ট মডেল বুঝে গেছে লোকসভা নির্বাচনে জেতার জন্যেও দক্ষিণ ভারত অথবা বাংলা ও নর্থইস্টের কোনো প্রয়োজন তাদের নেই। বাংলা থাকলে ভালো। না থাকলেও ক্যালকুলেশন এই নতুন তিন রাজ্য থেকে চলে আসবে।
তাদের মিডিয়া আজকের এই জয়কে সেমিফাইনাল বলে প্রচার করবে।
কিন্তু আসলে এ কোনো ছেলেখেলা নয়। লোকসভা নির্বাচন কোনো ক্রিকেট ফাইনাল "খেলা" নয়। মানুষের জীবন, সম্মান, বাঁচার অধিকার, কথা বলার অধিকার আদৌ আর ভারতে থাকবে কিনা, আজ আমরা সেই প্রশ্নের সম্মুখীন।
ইন্দিরা গান্ধীর কংগ্রেসের আমলে এই শেষ প্রশ্নটা কখনো আমরা করিনি। এখন করছি।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।