এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  অন্যান্য  মোচ্ছব

  • গুরু শিষ‍্য সংবাদ - জীবনানন্দের বিপন্নতা

    সমরেশ মুখার্জী লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | মোচ্ছব | ১৫ অক্টোবর ২০২৩ | ৯৬৭ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • সূচনা: 
     
    শিষ্য - এই অধম লেখক। 

    গুরু - শিষ‍্যের চেয়ে ১৬ বছরের কনিষ্ঠ শ‍্যালক। সে কবি‌তা ভালো‌বাসে, ঋদ্ধ সিনেমা দেখতে পছন্দ করে। বিভিন্ন বিষয়ে তার পড়াশোনা বিস্তারিত। মনেও থাকে অনেক, তা‌ই হুড়হুড় করে কখনো স্মৃতি থেকে কোট ক‍রতে পারে। লেখ‍্য মাধ‍্যমে‌ও সে সূচারু‌ভাবে বক্তব্য‌ পেশ করতে পারে। এই সব কারণে ইঁট, বালি, সিমেন্ট ঘাঁটা গদ‍্যময় বাস্তুবিদ শিষ‍্য তাকে কবিতা, সাহিত্য, চিত্রকলা, সিনেমা জাতীয় সুক্ষ্ম অনুভূতি‌র ক্ষেত্রে গুরু বলে মানে।
    দুজনের মধ‍্যে কখনো ফোনে দীর্ঘ আলোচনা হয়। কখনো হয় কোনো বিষয়ভিত্তিক দীর্ঘ লিখিত চ‍্যাট। যেমন এই প্রসঙ্গে।

    = = = = = = = = = =

    শিষ‍্য - জীবনানন্দের কবিতা আমি পড়িনি। বস্তুত কবিতা ব‍্যাপারটি‌ আমার বোধবুদ্ধির অতীত। তবে বিভিন্ন সূত্রে ভাসাভাসা ভাবে জেনেছি -  জীবনানন্দের কবিতায় নিসর্গের সৌন্দর্য (বিশেষতঃ গ্ৰামবাংলা‌র) ছাড়াও, নির্জ্জনতা, একাকীত্ববোধ, বিপন্ন‌তাবোধ, মৃত্যু‌ভাবনা এহেন সব বিষয়‌ও চিত্ররূপময় ভাবে শব্দের আখরে ধরা পড়েছে। আমার জানা, বোঝায় ভুল হতে পারে। দূর্ঘটনায় মারা যাওয়ার আগে অবধি কিছু অপ্রকাশিত কবিতা নিয়ে এক কাব‍্যগ্ৰন্থের নাম তিনি ভেবেছিলেন - "বাংলার ত্রস্ত নীলিমা"। জীবনানন্দের মৃত্যুর পর তার ভাই অশোকানন্দ ও সুচরিতা মারফৎ সেই পান্ডুলিপি সিগনেট প্রেসে যেতে ডিকের হাতে পড়ে ঐ কাব‍্যগ্ৰন্থের নাম হোলো - "রূপসী বাংলা"। আমার জিজ্ঞাসা, ত্রস্ত মানে তো ভীত, সন্ত্রস্ত, বিচলিত - তা কীভাবে ঐ কাব‍্যগ্ৰন্থের কবিতা‌র সাথে যায়? এ বিষয়ে আমি আপনার সুচিন্তিত মতামত প্রার্থী।
     
    গুরু - ঠিক জানিনা; তবে বুদ্ধদেব বসুর একটা যুক্তি আছে শুনেছি, এবং তদনুসারে কবি কর্তৃক নির্বাচিত নামটিই হয়তো অধিকতর মানানসই হোতো, ভেবেছিলেন বুদ্ধদেব। রূপসী বাংলা নামক চটি বই টি পড়তে গেলে এক আবিল মুগ্ধতা দেখা যায় কবির: তাকে নাম করে বাংলাদেশের পরিচয় দিয়েছেন স্বয়ং কবি। এ অব্দি কোনো গোল নেই। কিন্তু প্রথম পাঠে যদি নাও ধরা পড়ে, ঘুরে পড়তে গেলেই চোখে পড়ে এক গভীর বিপন্নতা। 
    এ বিপন্নতা কবির অন্তর্লীন বিপন্নতা নয় এ বিপন্নতার শরিক পেঁচা, শালিখ, খঞ্জনা, শুক, চাঁদা, সরপুঁটি, হিজল, জারুল, কাঁঠাল, আম, কলমি, ধান এমনকি নদী, নক্ষত্রের ও নিষ্কৃতি নেই এক সুদুরগামী মৃত্যুবোধে আক্রান্ত কবির দুই চোখে। মৃত্যুবোধ মানুষের স্বাভাবিক এবং সৃষ্টিশীল সত্তার ক্ষেত্রে আরো স্বাভাবিক। কিন্তু উল্লেখযোগ্য বিষয় হোলো, এরকম তুচ্ছ মৃত্যুবোধ জীবনানন্দে দেখা যায়নি আগে। কোনো দূরবাসনা নেই, কোনো প্রেম নেই হৃদয়ে, এমনকি অমরত্বের আশাও নেই মরণে। নেহাৎই তুচ্ছ মৃত‍্যু, ঘুমের মতো নিরাভরণ, স্রেফ এক জীবনের সমাপ্তি। এই মৃত্যু বড় অকিঞ্চিৎকর, বেদনার, ভয়ের। 
     
    মানুষ মৃত্যুকে ভয় পায় যদি জীবনে কোনো দাগ না কাটতে পারে। এক তুচ্ছতাবোধ ঘিরে ধরে তাকে। পূর্বাভাস ছাড়াই অমোঘ মৃত্যু এসে দাঁড়ালে সে ভীত হয়, ত্রস্ত হয় তার আকাশ। ১৯৩৩-৩৪ সালে লেখা এইসব অপ্রকাশিত লেখাগুলি, সংখ্যায় প্রায় গোটা ষাটেক, এই বিপন্নতা বোধ, মৃত্যুচিন্তা নয় আসলে এক ভীত সন্ত্রস্ত নিরাপত্তাহীনতা থেকে লেখা। সেই রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে রবীন্দ্রনাথ যখন য়োরোপের বাতাসে বারুদের গন্ধ পাচ্ছিলেন, জীবনানন্দ তাঁর ত্রস্ত, চকিত, শশকগমনে বারবার মেপে নিচ্ছিলেন বারাসাত থেকে কলকাতার দূরত্ব। আসলে মাপতে চাইছিলেন গ্রাম থেকে নগর। আর এক অপ্রতিরোধ্য নষ্টালজিয়ায় ফিরতে চাইছিলেন গ্রামে, শৈশবের কাছে, নিরাপত্তার কাছে। 
     
    কিন্তু আকাশ তখন অপ্রতিরোধ্য ধোঁয়াটে, কোনোখানে এতটুকু নির্ভরতা নেই। এ এক অসুখের সময়, এক ব্যাপ্ত বিষাদের সময়। মানুষ, মানুষকে আড়চোখে দেখছে। আমাদের মনে রাখতে হবে জীবনানন্দ দাশ তখন পরিণত কবি।  ঝরাপালকের যুগ তিনি পেরিয়ে এসেছেন ঢের আগে। ধূসর পাণ্ডুলিপি এবং বনলতা সেন প্রকাশিত হয়ে গেছে। অর্থাৎ আমরা নির্ভূলভাবে চিনে নিয়েছি তাঁর কাব্যলক্ষণ। আন্তর্জাতিকতা তাঁর অভিজ্ঞান, প্রগাঢ় এক সচেতন ইতিহাস বোধ তাঁর লেখনীর চালিকা শক্তি। বাংলাদেশে, রবীন্দ্রনাথের সৃষ্ট লিরিক কবিতার মঞ্চে তিনি,  খানিকটা অন্ততঃ জ্ঞানমার্গী (সুধীন্দ্রনাথ, বিষ্ণু দে অথবা পরিচয় গোষ্ঠীর কারোর মতন অতোটা নন অবশ্যই)। 
     
    রবীন্দ্রনাথ যেমন যেখানেই থাকুন, বোলপুর কি বেলজিয়াম, এঁড়েদা কি আর্জেন্টিনা - তাঁর কবিতায় অবধারিতভাবে উঠে আসে বাংলাদেশের প্রকৃতি, তার অন্তর্নিহিত গূঢ়তাকে এক হৃদয়রসে জারিত করেন কবি, ঔপনিষদিক এক প্রজ্ঞায়; ব্রাহ্ম পরিবারের সন্তান হয়েও জীবনানন্দ সেই ঔপনিষদিক প্রজ্ঞায় আস্থা না রেখে খোঁজ নিলেন জ্ঞানের বিবিধ শাখায়। ইতিহাস, রাজনীতি, সমাজনীতি আর ভূগোল। রবীন্দ্রনাথ বিশ্বপথিক, কিন্তু তাঁর লেখায় ছেয়ে থাকে এই বাংলাদেশ; আর জীবনানন্দ এই দেশ ছেড়ে নড়লেন না কোত্থাও তবু তাঁর লেখায় আসে সিংহল, মালয়, গ্রীস, চীন, বেবিলন, মেসোপটেমিয়া, লিবিয়ার অরণ্য। 
     
    এহেন কবি যখন নিরবিচ্ছিন্নভাবে গোটা ষাটেক কবিতা জুড়ে এই বাংলায় আটকে থাকেন, তখন বোঝা যায় বহির্বিশ্ব বুঝি আর বাসযোগ্য নেই তাঁর কাছে। আর চিনে নেয়া যায় সেই বিপন্নতা, যার জেরে তাঁর মনের আকাশ সন্ত্রস্ত। তবে কিনা এ সমস্ত লক্ষণ বহু চর্চায় শনাক্ত করা যাচ্ছে। ঐ গ্রন্থ প্রকাশকালে ঐ নষ্টালজিয়াটিকেই দেখা গিয়েছিল স্পষ্টভাবে। কবির এই বাংলায় ফিরে আসার তীব্র বাসনা, পৃথিবীর মুখ দেখতে না চাওয়ার অভিমান (আসলে নিরাপত্তার সন্ধান), বাংলার নদী-মাঠ-ক্ষেত ভালোবাসা, এই বাংলায় কড়ি খেলবার ঘর ম'জে গিয়ে গোখুরার ফাটলে হারাবার মতো উদগ্র সন্ধানটিকেই লক্ষ্য করা হয়েছিলো। সত্যজিৎ রায়ের করা প্রচ্ছদটিও সেই ইঙ্গিতই দেয়। যদিও পরে সত্যজিৎ ও ডি-কে (দিলীপ কুমার গুপ্ত) দুজনেই ভিন্নমত পোষন করেছিলেন এ ব্যাপারে। তবে, রূপসী বাংলা নামটির মধ্যে এক মধুর সারল্য আছে আর আছে একটা ফোনেটিক তাৎপর্য, যা এমনকি উচ্চারণেই এক আরাম দেয় বাকযন্ত্রে, পরম একটি নিশ্চিন্ততার যেন আশ্বাস।
     
    শিষ‍্য - প্রতিবেদনটি পড়ে ভালো লাগলো। অর্থাৎ ডিকে আপাত দৃশ‍্য‌ময়তা কে গুরুত্ব দিয়ে‌ছিলেন। তবে মনে হয় আপনার প্রতিবেদনে একটা factual error রয়ে গেছে। বনলতা সেন প্রথম প্রকাশ হয় ১৯৩৫ এবং ধূসর পান্ডুলিপি ১৯৩৬ সালে। তাই ১৯৩৩-৩৪ সালে লেখা সেই অপ্রকাশিত কবিতা‌র "ঢের আগে" প্রকাশিত হয়ে গেছে বনলতা সেন ও ধূসর পান্ডুলিপি - এই বক্তব্যটা কি ঠিক হোলো? সে যাই হোক - আপনার প্রতিবেদনে এই লাইনটায় শব্দটা আবিল হবে - না অনাবিল?  "রূপসী বাংলা নামক চটি বই টি পডলে এক আবিল মুগ্ধতা দেখা যায় কবির: তাকে নাম করে বাংলাদেশের পরিচয় দিয়েছেন স্বয়ং কবি।"
     
    গুরু -  না ওটা আবিল-ই হবে।

    শিষ্য - কলুষিত মুগ্ধতা?

    গুরু - ঠিক কলুষিত অর্থে নয়। অবিশুদ্ধ অর্থে। জীবনানন্দের যে মুগ্ধতা তা অনেকখানিই নিরাপত্তাহীনতাপ্রসূত।(#)  গ্রাম বাংলার প্রতি জসীমউদ্দীনের বা যতীন্দ্রমোহন বাগচীর (সেনগুপ্ত নয়) যে আকর্ষণ তাকে অনাবিল মুগ্ধতা বলা যেতে পারে কিন্তু জীবনানন্দের রক্তে নেই বিশুদ্ধ গ্রাম্য সারল্য প্রীতি।(&) তাঁর প্রগাঢ় প্রজ্ঞাঋদ্ধ বিশ্বনাগরিক মননে একটি গ্রামের প্রতি, গ্রাম বাংলার প্রতি একমাত্রিক প্রেম অসম্ভব।($) তা হবে স্বভাবতঃই বহুস্তর। আর যত বাড়বে স্তরভেদ আসবে অন্য অন্য অনুভূতি, প্রভাবিত করবে, মূল অনুভূতির বিশুদ্ধতা যাবে কমে। এই ভাবেই আবিল হবে মুগ্ধতা।
     

    শিষ্য - আপনার ব‍্যাখ‍্যা ঠিক হজম হোলো না। যেন হাতে সাবান মাখিয়ে ছোট সাইজের চুড়ি জোর করে পরিয়ে দেওয়া। আবিল মুগ্ধতা - আমার মতে ভয়ংকর সুন্দর গোছের একটা oxymoron যা সচেতন ভাবে ব‍্যবহার করা হয় Gimmick বা চমক সৃষ্টিতে। যদি আপনি বলতে চান যে জীদা‌র প্রকৃতি‌প্রেম বিভূতিভূষণের মতো রোমান্টিক আপ্লুতায় মাখামাখি ছিল‌না, তাতে ছিল ধারালো বৌদ্ধিক উপাদান‌ও, তাহলে যুৎস‌ই শব্দবন্ধ হতে পারতো - আপাত মুগ্ধতা। অর্থাৎ আপাত ভাবে লেখায় কবির যে মুগ্ধতা চোখে পড়ছে তা ছাড়াও বা তার প্রেক্ষাপটে আরো কিছু অদৃশ‍্য উপাদান আছে।
     
    গুরু - সাবান মাখিয়ে ছোট চুড়ি পরিয়ে দেবার উপমাটি অনবদ‌্য এবং উপভোগ্য। (শিষ‍্যের টীকা - অর্থাৎ গুরু তাঁর সিদ্ধান্তে অবিচল)
     
    শিষ‍্য - গুরুদেব যদি আমার আর একটা খটকার নিরসন করেন তাহলে ভালো হয়। আপনার আগের প্রতিবেদনের একটু অংশ তুলে দিচ্ছি:
    "১৯৩৩-৩৪ সালে লেখা এইসব অপ্রকাশিত লেখাগুলি, সংখ্যায় প্রায় গোটা ষাটেক এই বিপন্নতা বোধ, মৃত্যুচিন্তা নয় আসলে এক ভীত সন্ত্রস্ত নিরাপত্তা হীনতা থেকে লেখা। সেই রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে রবীন্দ্রনাথ যখন য়োরোপের বাতাসে বারুদের গন্ধ পাচ্ছিলেন জীবনানন্দ তাঁর ত্রস্ত, চকিত, শশকগমনে বারবার মেপে নিচ্ছিলেন বরিশাল থেকে কলকাতার দূরত্ব।"
    প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়কাল ছিল ২৮.৭.১৪  থেকে ২৮.১১.১৮  আবার ১.৯.৩৯এ হিটলার কর্তৃক জার্মানির পোল‍্যান্ড আক্রমণ দিয়ে যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরু হয় তা মিত্র শক্তি‌র কাছে ২.৯.৪৫এ জার্মানির পতনে শেষ হয়। জীদা ঐ কবিতা‌গুলি লিখেছিলেন ১৯৩৩-৩৪ সালে। তাহলে এই দুই মহাযুদ্ধের মাঝে সাময়িক শান্ত সময়ে এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর ৫ থেকে ৬ বছর আগে রবীন্দ্রনাথ "য়োরোপের বাতাসে বারূদের গন্ধ" কী ভাবে পেলেন? তাহলে কী জীদা‌র তখনকার বিপন্নতা আসলে ছিল সংসারে নিদারুণ অভাব ও নিজের অনিশ্চিত পেশাগত ভবিষ্যৎ নিয়ে? আলোকপাত প্রার্থী। 
     
    গুরু - জীবনানন্দের পেশা সংক্রান্ত বিপন্নতা সবসময়েই তাঁকে বিপন্ন করেছে, বিব্রত রেখেছে। সে তাঁর কবিস্বভাবের কবচ-কুণ্ডল, তাঁকে দাম্পত্য অশান্তিও আন্দোলিত করেছে অনুরূপ। সাধারণ্যে প্রেমেন্দ্র মিত্র, যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত ইত্যাদি কবির প্রতিষ্ঠা ও বুদ্ধির বৈঠকখানায় সুধীন্দ্রনাথ, বিষ্ণু দে প্রমুখ কবির জাঁকালো পসার, কিন্তু জীবনানন্দ দাশ বলে কাউকে লোক চেনেই না। এমনকি যে রবীন্দ্রনাথ, যিনি টাকের চুল গজানোর তেলেও ঢালাও সার্টিফিকেট দিয়েছেন, তাঁর মতে‌ও জীবনানন্দের লেখা নিছক চিত্ররূপময়। জীদাকে লেখা চিঠিতে মৃদু অনুযোগ‌ও করেছেন তিনি "উপমা প্রভৃতি নিয়ে এতো জবরদস্তি করো কেন বুঝতে পারিনে।" তাঁর কবিতার সমালোচনা প্রসঙ্গে একটি কবিতায় ৪২টি "মতো"-র উল্লেখ করে সজনীকান্ত দাস লেখেন "কেবল হাঁদার মতন কথাটি কোথাও নাই"। এ থেকে জীবনানন্দের প্রতি শনিবারের চিঠির মানসিকতা বোঝা যায়। 
     
    পরিচয় পত্রিকার আড্ডায় কখনো সখনো যোগ দিলেও জীবনানন্দ পরিচয়ের উচ্চবিদগ্ধ, উচ্চবিত্ত, জ্ঞানময় কাব্যপরিমণ্ডলে কখনোই খাপ খাওয়াতে পারেননি। এমনকি তাঁর কবিতা যখন প্রকাশিত হোলো তখনো জীবনানন্দ বুদ্ধদেবের ২০২, রাসবিহারী আভেন্যুর সমগোত্রীয় ও প্রায় সমমানসিকতার সহজীবি কবিবন্ধুদের সঙ্গেও অন্তরঙ্গ হতে পারেননি। এক-দুবার অত্যন্ত জরুরী প্রয়োজনে শশকগমনে পদার্পন ভিন্ন কবিতা ভবনের পরিমণ্ডল থেকে তিনি তফাতেই থেকেছেন।
     
     কল্লোল ও কালিওকলম পত্রিকায় তাঁর প্রথম দিকের লেখা প্রকাশিত হলেও এই পত্রিকাগুলির মেজাজ তাঁর কবিতার মেজাজের থেকে স্বতন্ত্র ছিলো। গোকুল নাগের কল্লোল ও শৈলজার (সম্ভবতঃ) কালিওকলম পত্রিকার প্রধান কবি ছিলেন যথাক্রমে প্রেমেন্দ্র মিত্র ও নজরুল। এঁদের মধ্যে নজরুলের প্রভাব তাঁর মধ্যে প্রথমদিকে (ঝরাপালকের যুগে) স্পষ্ট ছিলো। প্রেমেন্দ্র মিত্রের প্রতি তাঁর সম্ভ্রমও হয়তো কিঞ্চিৎ হীনম্মন্যতাবোধ থেকে‌ও হতে পারে। তাঁর আচরণ কখনো কখনো এরকম ঈঙ্গিত দিয়েছে। 
     
    কিন্তু এসকল বিপন্নতা কবির সহজাত এবং যেমন আগে বলা হয়েছে, কবচ-কুণ্ডল স্বরূপ, কেননা এইসব বিপন্নতা অনেকাংশে তাঁকে রক্ষা করেছে নির্জনতায়। কোনো গোষ্ঠীভুক্ত হয়ে পড়েননি। নির্জন একাকীত্বে এ্যাকাডেমিক অর্থে য়োরোপীয় কাব্য পাঠে অধিকার, বিশেষতঃ ইংরেজী কাব্যে অধিকার থাকার দরুণ, দেশী ও বিদেশী মিশ্র পরিমণ্ডলে গড়ে উঠেছে তাঁর নিজস্ব অভিজ্ঞান। কিন্তু কেবল এসবই নয়, রূপসী বাংলার কবিতা গুলির নির্মান প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক তাৎপর্য্য এইপ্রকার:

    ১. সেই সময় বিশ্বজোড়া মন্দা

    ২. আমেরিকায় বেসরকারী ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার পতন

    ৩. জানুয়ারী, ১৯৩৩ এ হিটলারের চ্যান্সেলার পদে মনোনয়ন ও থার্ড রাইখের দিগ্বিজয় (শিষ‍্যের টীকা - দিগ্বিজয়?? 39 এ পোল‍্যান্ড আক্রমণের ছ বছর আগেই)

    ৪. হিটলারের ইহুদী বিদ্বষ ও বেতারে গ্যোয়েবেলসের গুজব বিস্তার (শিষ‍্যের টীকা - তাতে গ্ৰাম বাংলার কবির  নিরাপত্তা‌হীনতার কী কারণ হোলো? কেবল ভুগোল পড়ে বিশ্বনাগরিক হয়ে কোনো‌দিন বিদেশে না গিয়ে‌ও এমন চিত্তবিকলনের সম্ভাবনার ধারণা আমার কাছে দূষ্পাচ‍্য)

    ৫. অক্টোবর, ১৯৩২ এর পর থেকে মুসোলিনি ও ফ্যাসিস্তদের বাড়বাড়ন্ত। (শিষ‍্য - ইতালি তো বহুদুরে!! এখনকার মতো যোগাযোগ‌ও তখন এত উন্নত ছিল না, তাই তাতে ব‍্যাক্তিগত‌ভাবে বিপন্ন বোধ করা‌র কী হোলো? প্রতিবাদে জ্বালাময়ী কবিতা লেখা যেতে পারতো)

    ৬. ভ্যাটিকানে নজরবন্দী পোপ ও দুনিয়াজুড়ে ধর্মভীরু খ্রীষ্টানদের সংকট। 

    ৭. ১৯৩২ - ৩৩ এর কুখ্যাত সোভিয়েত ফেমাইন ফলে গণহত্যা ও গণমৃত্যু। যোসেফ স্তালিনের এই নারকীয়তায় প্রায় ৭.৫ লক্ষ্য মৃত্যু ফলে কম্যুনিজ্মের বিপন্নতা ও অস্তিত্বের সংকট।

    ৮. ইংল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রী পদে বল্ডুইনের ব্যর্থতা।

    ৯. ভারতবর্ষে আইন অমান্য আন্দোলনের ব্যার্থতা। (শিষ্য - এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ হতে পারে)

    ১০. গোলটেবিল থেকে গান্ধীজীর শূন্যহাতে প্রত্যাবর্তন।

    ১১. গান্ধী-আরউইন চুক্তির ব্যর্থতা।

    ১২. বিহারের সাঙ্ঘাতিক ভুমিকম্প এবং সেই প্রাকৃতিক দুর্ঘটনাকে গান্ধীজীর হরিজনদের প্রতি পাপের কর্মফল বলে আখ্যা দেওয়া ও রবীন্দ্রনাথ কর্তৃক তার ভর্ৎসনা। (শিষ্য - তাতে জীদা‌র বিপন্ন বোধ করা‌র কী হোলো?)

    ১৩. জাভা যাত্রার প্রাক্কালে য়োরোপীয় সভ্যতাপ্রসঙ্গে শ্রী দীলিপ কুমার রায় ও শ্রীযুক্ত অমিয় চক্রবর্তী সন্নিধানে রবীন্দ্রনাথের বিষোদগার। (শিষ্য - তাতে জীদা‌র বিপন্ন বোধ করা‌র কী হোলো?)

    ১৪. রোমাঁ রল্যাঁর কাছে জবাবী চিঠিতে রবীন্দ্রনাথের আশঙ্কিত মন্তব্য "য়োরোপের বাতাসে আজ বারুদের আগাম গন্ধ"। (শিষ‍্যের টীকা - তাতে জীদা‌র বিপন্ন বোধ করা‌র কী হোলো? এই "আগাম" বিশেষণ‌টা আপনার বক্তব্যে আগে ছিলনা বলে খটকা‌টা লেগেছিল)

    ১৫. অক্টোবর, ১৯৩৩ হিটলারের জর্ম্মনির লীগ অব নেশন্স  থেকে ইস্তফা এবং ইটালী, জাপান সহ অক্ষশক্তির জোটসঙ্গীদের পদানুসরণ। (শিষ্য - তাতে জীদা‌র বিপন্ন বোধ করা‌র কী হোলো?)
    আমার ধারণা এই আন্তর্জাতিক ও জাতীয় সংকট গুলিও জীবনানন্দের কবিমানসে বিপন্নতার বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সাময়িক কিন্তু প্রবল অনুঘটক রূপে ক্রিয়াশীল ছিলো।
     
    শিষ‍্য -  কাফকা একবার হৃদয় উজাড় করে এক চিঠি লিখেছিলেন তাঁর রাশভারী দোর্দণ্ড‌প্রতাপ পিতাকে। অবশ‍্য তিনি নিজে তা পিতাকে দিতে পারেন নি। দিয়েছিলেন মাকে। মা তা পড়ে কাফকে‌ই ফেরৎ দিয়ে বলেছিলেন, এমন চিঠি দিসনে খোকা, অনর্থ হয়ে যাবে। কাফকা সেই চিঠি ও আরো কিছু লেখালেখির পান্ডুলিপি তাঁর নিকট বন্ধু‌ ম‍্যাক্স ব্রডের জিম্মায় রেখে বলেছিলেন, তাঁর মৃত্যুর পর সেসব জ্বালিয়ে দিতে। বন্ধু সেই কথা রাখেনি বলেই বিশ্বসাহিত্য কাফকা‌র অনেক লেখা পেয়েছে including, "Letter to my Father". তাতে জানা যায় কাফকা‌র বিপন্ন‌তাবোধের পশ্চাৎপটে তাঁর পিতার বিরাট ভূমিকা ছিল।
     
    জীবনানন্দর ক্ষেত্রে‌ও তাঁর বিপন্নতাবোধের সঠিক কারণ সম্পর্কে প্রামাণ্য দলিল হতে পারতো যদি তাঁর নিজের লেখা কোনো ডায়েরী পাওয়া যেতো যাতে তিনি আত্মকথনের মতো নিভৃতে লিখে গেছেন তাঁর ভাবনা। যদি তেমন কিছু পাওয়া গিয়ে থাকে জানতে ইচ্ছুক। আপনার প্রথম মন্তব্য থেকে কয়েকটি লাইন উল্লেখ করছি:

    ১. জীবনানন্দের যে মুগ্ধতা তা অনেকখানিই নিরাপত্তাহীনতাপ্রসূত (#)

    ২. জীবনানন্দের রক্তে নেই বিশুদ্ধ গ্রাম্য সারল্য প্রীতি (&)

    ৩. তাঁর প্রগাঢ় প্রজ্ঞাঋদ্ধ বিশ্বনাগরিক মননে একটি গ্রামের প্রতি, গ্রাম বাংলার প্রতি একমাত্রিক প্রেম অসম্ভব (&) 

    উপরোক্ত লাইনগুলো‌তে "হয়তো" বা  "বোধহয়" গোত্রের কোনো‌রকম ক্রিয়া-বিশেষণ ব‍্যবহৃত হয়নি। অর্থাৎ বাক‍্যগুলি গভীর প্রত‍্যয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষকের মতো কয়েকটি Firm Statements. উপরোক্ত মন্তব্য‌গুলি "হয়তো" জীবনানন্দ‌র জীবনসংকট সম্পর্কে আপনার পাঠাভিজ্ঞতালব্ধ অভিজ্ঞান বা সমসাময়িক ও পরবর্তীকালের জীবনানন্দ বিশেষজ্ঞ‌দের অভিমতজাত।
    কোনো কবি, বিশেষ করে জীদা‌র মতো একান্তচারী, নির্জনতা প্রিয় অন্তর্মূখী মানুষের একান্ত ব‍্যক্তিগত কোনো অনুভূতি সম্পর্কে এহেন দৃঢ়তার সাথে এমন সংশয়হীন অভিমত দেওয়া যায় কিনা জানি না। জীদা‌র লেখা ও ব‍্যক্তি জীদা সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ‌দের মতামত আমার পড়া না থাকায় এ প্রসঙ্গে‌ আমার তরফ থেকে আলোচনা‌য় এখানেই ইতি টানছি।
     
    আপনার শেষ মন্তব্যে নানা তথ‍্য সহকারে আপনি প্রতিপন্ন করতে চেয়েছেন যে জীদা‌র বিপন্ন‌তা ও নিরাপত্তা‌হীনতা অনেকাংশে‌ই তৎকালীন কিছু আন্তর্জাতিক ও দেশীয় ঘটনা‌প্রবাহের কারণে। হতে পারে। তবে কেন জানি না, আপনার বিশদ ব‍্যাখ‍্যা পড়েও আমার মনে হয় - জীদা‌র বিপন্ন‌তা, হীনমন্যতা, নিরাপত্তা‌হীনতা এসবের জন‍্য আপনার উল্লিখিত বাহ‍্যিক কারণসমূহ ছিল গৌণ। তাঁর নড়বড়ে আর্থিক অবস্থাজনিত দারিদ্র্যের কারণে সংসারে অবহেলা প্রাপ্তি এবং লেখালেখি সম্পর্কে সমসাময়িক‌ বিদ্বজনদের কাছ থেকে  স্বীকৃতি না পাওয়া‌ (বরং কখনো বিদ্রুপ পাওয়া) - এ দুটি‌ই হতে পারে প্রধান কারণ। 
     
    ব‍্যাঙ্কে মোটা ব‍্যালান্স, পেটে উপাদেয় খাদ‍্য পানীয়ের যোগান অব‍্যাহত থাকলে, দেশে বা বিদেশে শীততাপ‌নিয়ন্ত্রিত বিলাসবহুল কক্ষে বসে গরীব, ক্ষূধার্তদের নিয়ে ক্ষুরধার গদ‍্য, পদ‍্য লেখায় মাথা ভালো কাজ করে। অতীতেও যেমন লিখতেন ত‍ৎকালীন কিছু বিচারক, জমিদার, বিশ্বপথিক বা ICS. নিজে দূর্দশাগ্ৰস্ত হয়েও বঞ্চিত‌দের নিয়ে দরদী সাহিত্য, সিনেমা করা যায় (মাণিক, ঋত্বিক)। তাঁরা ব‍্যতিক্রম। কিন্তু  আমার মনে হয় -  সেক্ষেত্রে বিপন্ন‌তা বোধের শিকড় অনেকটাই তাড়া খাওয়া কুকুরের মতো নিজের গভীরে ছড়িয়ে থাকে - যা সাহিত্যে প্রতিফলিত হয়।
     
    Some opinions are debatable when those are  based on  individual perspectives. Anyway, even if I am not fully convinced with your all arguments due to my own limitations and some inexplicable realisations and surely not having detailed factual information about JD, however I appreciate your meticulous presentation. Such discussions are indeed food for thought and quite engaging as well.     

    Wish to engage into such discussions in future dispassionatelyely without bias, prejudice. We can exchange openly about some topics in our zone of common interest. We should not indulge in thursting upon our views on others rather we should present it in a matter of fact manner. We should not spoil the mood of such discussion using unwanted sarcasm. Well done and keep alive your habit of healthy discussion with an academic flavour.
     
    (যেহেতু শিষ‍্য গুরুর থেকে বয়সে এবং সম্পর্কে‌ প্রবীণ তাই শিষ্য এই concluding statement দিয়ে সেদিন উপরোক্ত আলোচনার যবনিকা টেনেছিল। 
     
    তবে গুরুচণ্ডা৯তে ঋদ্ধজনের অভাব নেই। তাদের কেউ যদি এই গুরু-শিষ‍্য সংবাদ পড়ে নৈর্ব্যক্তিক আঙ্গিকে কিছু আলোকপাত করতে চায় - স্বাগতম)

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • অন্যান্য | ১৫ অক্টোবর ২০২৩ | ৯৬৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • হীরেন সিংহরায় | ১৫ অক্টোবর ২০২৩ ১৩:৩৬524564
  • সারা রাত হিম পড়েছে । বাইরে জীবন স্তব্ধ । তাই দু চারটে কথা বলার অবসর।

    গুরু শিষ সংবাদে লেখার পরিসর বিশাল,  বেশির ভাগ বিষয়ে আমার জ্ঞান শূন্য । দুয়েকটা  কথা মনে হল অসংলগ্ন ভাবে বলি)-

    ১৯৩৩/৩৪/৩৫ ইউরোপের বাতাসে বারুদের গন্ধ কথাটা মেনে নিতে অসুবিধে নেই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আচমকা শুক্কুরবার পয়লা সেপ্টেম্বর ১৯৩৯ শুরু হয় নি । এর রিহার্সাল চলছিল স্পেনের গৃহযুদ্ধে যেখানে লুফতভাফের প্লেন প্রথম লড়াইয়ের মহড়া দিল, মুসলিনি আলবানিয়া, ডালমাশিয়ান সীমান্তে তরবারি ঘোরালেন,  ইথিওপিয়া ( মতান্তরে আবিসিনিয়া ) দখল করলেন, চেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলছে, হিটলার রাইনল্যান্ডের পুনর্দখল নিলেন, ফরাসি মাজিনো লাইন বানাতে বিপুল অর্থব্যয় ইত্যাদি ইত্যাদি

    লিগ অফ নেশন্স ছাড়ার ব্যাপারে জার্মানির পদানুসরন করেনি জাপান- তারা আট মাস আগেই (মার্চ ১৯৩৩)  লিগ অফ নেশন্স  থেকে বেরিয়ে যায় – মাঞ্চুরিয়াতে তাদের আগ্রাসনের প্রতিবাদ হয়েছিল বলে । ইতালি ছাড়ে ডিসেম্বর ১৯৩৭ ( ইথিওপিয়া আলবানিয়াতে তাদের কাণ্ড কারখানার জবাবদিহি করতে চায় নি ইতালি )

    তুমুল প্রতিবাদের সম্ভাবনা মনে রেখেই বলি – জীবনানন্দ বরিশাল বারাসাত বালিগঞ্জে বাস করে ব্যাবিলন সিংহল সমুদ্রের মালয় সাগরের ঘ্রাণ পেয়েছেন  ( লিবিয়ার অরণ্য একটু খটমট লাগে- লিবিয়াতে অরণ্য আছে বলে জানি না ) রবীন্দ্রনাথ চল্লিশের বেশি দেশ ঘুরেছেন – আল্পস দেখেছেন মরুভূমি দেখেছেন রাশিয়ান স্টেপ ভূমিতে ঝড় দেখেছেন - কবিতায় তার কোন দৃশ্যের উল্লেখ কম।
     
  • সমরেশ মুখার্জী | ১৫ অক্টোবর ২০২৩ ১৫:১৬524578
  • @ হীরেনদা:
    লিবিয়ার অরণ‍্য - এই শিষ‍্য ঐ গুরুর কাছে কাব‍্যক্ষেত্রে স্বঘোষিত অর্বাচীন। তবু  'লিবিয়ার অরণ‍্য' দেখে শিষ‍্যর‌ও একটু খটকা লেগেছিল। তবে গুরুর বিস্তারিত মন্তব্যের প্রেক্ষিতে এমন সামান্য অসামঞ্জস্য অনায়াসে উপেক্ষণীয়। 

    ১৯৩৩-৩৪এ ইওরোপে বারুদের গন্ধ - বিশ্বযুদ্ধ হঠাৎ একদিনে শুরু হতে পারে না - প্রস্তুতি অনেক আগে থেকে‌ই থাকে - সেটা অনুমেয়। তবে বিশ্ব জুড়ে তো কিছু না কিছু লোকালাইজড্ বারুদীয় খুজলি চিরকাল‌ই হয়ে‌ থাকে (যেমন এখন হচ্ছে ইজরায়েল-গাজা)। তাই উপমার খোঁজে জীবনানন্দ বিশ্ব জুড়ে মানসভ্রমণ করতেই পারে‌ন কিন্তু ত্রস্ত হতেও যে তাঁর য়োরোপের বারুদের গন্ধে‌র প্রয়োজন হয় - এটা মানতে একটু অসুবিধা হচ্ছি‌ল। বিশেষত পরাধীন ভারতে যখন ইংরেজ প্রভূদের কারণে ঘরের কাছেই তখন ত্রস্ত হ‌ওয়ার মতো নানা কারণ মজুদ ছিল। যাকগে গুরুবাণী শিরোধার্য - বিশেষতঃ যে বিষয়ে জ্ঞান‌গম‍্যি কম।
  • Kishore Ghosal | ১৫ অক্টোবর ২০২৩ ১৮:২৮524581
  • এমন একটি আলোচনার সূত্রপাত আমার ভাবনা-চিন্তার পরিসর  নিঃসন্দেহে বাড়িয়ে তুলল। 
     
    এই  সূত্রে কিছু মন্তব্য রাখতে চাই, - 
     
    "বনলতা সেন প্রথম প্রকাশ হয় ১৯৩৫ এবং ধূসর পান্ডুলিপি ১৯৩৬ সালে"। এবং  "১৯৩৩-৩৪ সালে লেখা এইসব অপ্রকাশিত লেখাগুলি, সংখ্যায় প্রায় গোটা ষাটেক" কবিতা নিয়ে বাংলার ত্রস্ত নীলিমা নামের কাব্যগ্রন্থটি "রূপসীবাংলা" নামে প্রকাশিত হয় জীবনানন্দের মৃত্যুর পর। 
     
    অর্থাৎ মোটামুটি একই সময় কালে জীদা তিনখানি কাব্যগ্রন্থই  লিখে চলেছিলেন। কিন্তু তার থেকে বাংলার ত্রস্ত নীলিমার কবিতাগুলি আলাদা সরিয়ে রেখেছিলেন - তিনি প্রকাশককে দেননি। কেন? এই কবিতাগুলিতে কী তাঁর ব্যক্তিগত বোধ বড় বেশি স্পষ্ট ধরা দিয়েছে? তিনি কি নিজেকে সর্বসমক্ষে এভাবে উন্মোচিত করতে সঙ্কোচ বোধ করেছিলেন? এ কথা জানার কোন উপায় আর নেই। কিন্তু আমার ধারণা সেরকমই।   
     
    ধূসর পাণ্ডুলিপির কিছু কিছু উল্লেখ আমার মনে হয় এই প্রসঙ্গে অবান্তর হবে না, - 
     
    "আমার নিকট থেকে, 
    তোমারে নিয়েছে কেটে কখন সময়।
    চাঁদ জেগে রয়
    তার-ভরা আকাশের তলে 
    জীবন সবুজ হয়ে ফলে,
    শিশিরের শব্দে গান গায় 
    অন্ধকার, - আবেগ জানায়
    রাতের বাতাস!
    মাটি ধূলো কাজ করে - মাঠে-মাঠে ঘাস 
    নিবিড় - গভীর হয়ে ফলে!
    তারা-ভরা আকাশের তলে
    চাঁদ তার আকাঙ্ক্ষার স্থল খুঁজে লয়, -
    আমার নিকট থেকে তোমারে নিয়েছে কেটে যদিও সময়"। (কয়েকটি লাইন) 
     
    অথবা 
     
    "সহজ লোকের মত কে চলিতে পারে! 
    কে থামিতে পারে এই আলোয় আঁধারে 
    সহজ লোকের মত! তাদের মতন ভাষা কথা 
    কে বলিতে পারে আর! - কোনো নিশ্চয়তা 
    কে জানিতে পারে আর? - শরীরের স্বাদ 
    কে বুঝিতে চায় আর? - প্রাণের আহ্লাদ 
    সকল লোকের মত কে পাবে আবার! 
    সকল লোকের মত বীজ বুনে আর 
    স্বাদ কই! - ফসলের আকাঙ্ক্ষায় থেকে, 
    শরীরে মাটির গন্ধ মেখে, 
    শরীরে জলের গন্ধ মেখে, 
    উৎসাহে আলোর দিকে চেয়ে 
    চাষার মত প্রাণ পেয়ে 
    কে আর রহিবে জেগে পৃথিবীর পরে? 
    স্বপ্ন নয়, -শান্তি নয়, - কোন, এক বোধ কাজ করে 
    মাথার ভিতরে!"  (বোধ) 
     
    এই বোধই তাঁকে সতত বিপন্ন করে  তুলেছে । এই বোধের ভাগীদার হতে তিনি (হয়তো) কাউকেই পাশে পাননি - নিজের ব্যক্তিগত জীবনেই হোক কিংবা বাইরের কবি-বৃত্তের বলয়েই হোক।  এই বিপন্নতাই তাঁকে করে তুলেছে  অন্তর্মুখী। শহরের উজ্জ্বল পত্রিকার পৃষ্ঠপোষকতায়  গড়ে ওঠা কবিমহলের অবহেলা, কখনো কখনো বিদ্রূপ তাঁকে আরও বিপন্ন করেছে, বিষণ্ণ করেছে, করেছে হতাশ।  ওই কবি-বৃত্তের বলয়ে ঢুকতে গেলে যে  সোচ্চার আত্মবিশ্বাসের প্রয়োজন হয় - তাঁর অন্তর্মুখী বিষণ্ণ মনই হয়েছে তার অন্তরায়। 
     
    কিন্তু  কেন তাঁর এই বিপন্নতা? 
     
    কিছু কিছু বিপন্নতা অথবা নিরাপত্তাহীনতার বীজ মানুষ অকারণেই  বহন করে চলে আজন্ম - মনোবিশেষজ্ঞরা তেমনই বলেন শুনেছি - এর সূত্রপাত নাকি সেই আদিম কাল থেকেই।   
    জীদার বিপন্নতার বোধ হয়তো সেরকমই - তাঁর মন অত্যন্ত সংবেদনশীল বলেই হয়তো বেশিই।
     
    আর সমসাময়িক বাংলার রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি - অর্থাৎ ১৯৩০ থেকে ১৯৪০ পর্যায়ে (তার পরবর্তী পর্যায় তো আরও ভয়াবহ),  একজন সংবেদনশীল অন্তর্মুখী মানুষের পক্ষে যথেষ্ট উদ্বেগজনক।   কংগ্রেসের স্বদেশী আন্দোলন, মহাত্মা গান্ধীর আশ্চর্য দ্বিচারিতা, পাশাপাশি সশস্ত্র বিপ্লবের নানান  নৈতিক-অনৈতিক রূপ। বাংলা জুড়ে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিদ্বেষের দানা বেঁধে ওঠা। অর্থাৎ চিরন্তনী মূল্যবোধ, মানবিকতা, বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচল ।  
     
     অতএব সত্যিই তো - "সহজ লোকের মত কে চলিতে পারে!  কে থামিতে পারে এই আলোয় আঁধারে  সহজ লোকের মত!"
     
    আমি কবি নই, সাহিত্য বা ইতিহাসের ছাত্রও নই - লোহালক্কড়-সিমেণ্ট-বালি গোলা মনের বাস্তুবিদ।  জীবনানন্দ দাশের মতো কবিকে নিয়ে আমার এমন আলোচনা অবশ্যই ধৃষ্টতা। তবু করলাম আমি তাঁর ভক্ত বলেই।   
       
     
  • সমরেশ মুখার্জী | ১৫ অক্টোবর ২০২৩ ২১:৩০524589
  • কিশোরদা,

    আপনার মন্তব্যে শিষ‍্য খুঁজে পেলো তার ভাবনার অনুরণন যা সেদিন‌ও ছিল গুরুর বৌদ্ধিক বিশ্লেষণের বিপরীতে। এমন কিছু আন্তরিক, অনুভূতি‌প্রবণ মন্তব্য পাওয়ার অভিলাষেই বছর আড়াই আগের একটি ব‍্যক্তিগত হোয়া চ‍্যাট একটি শিরোনাম দিয়ে এখানে পোষ্টেছিলাম।

    মনে পড়লো অধ‍্যাপক ডঃ তপন রায়চৌধুরীর স্মৃতি‌চারণের একটা পংক্তি :

    "শুধু একটি মানুষের মূল্য বরিশালবাসী তাঁর জীবৎকালে বুঝতে পারেনি। মানুষটির নাম জীবনানন্দ দাশ। ওঁর কবিতার সমঝদার বরিশাল শহরে বেশি কেউ ছিল না। বরং 'শনিবারের চিঠি'র প্রতিধ্বনি করে ঠাট্টা-বিদ্রূপই বেশি শোনা যেত। মানুষটি নিতান্তই সঙ্গীহীন ছিলেন। রূপহীন কবির চলাফেরাও ছিল গ্রাম্যতা-দোষে দুষ্ট। উনি একা একা নদীর পাড়ে হাঁটতে যেতেন। ওঁর পেছন পেছন কিছু বখাটে ছেলে ওঁকে ভেঙিয়ে ভেঙিয়ে হাঁটত। 

    কলেজেও উনি একা বসে থাকতেন, কারও সঙ্গে বিশেষ কথা বলতে দেখা যেত না। ওঁর স্ত্রী রাজনৈতিক কাজে বিশেষভাবে জড়িত ছিলেন। তাঁকে যেদিন পুলিশে গ্রেফতার করে সেদিন কবি হাউহাউ করে কেঁদেছিলেন। এ নিয়ে হাসাহাসির অন্ত ছিল না। 'বনলতা সেন'-এর কবির ব্যক্তিগত জীবনের গভীর ট্র্যাজেডি ওঁর মৃত্যুর পরে প্রকাশিত গদ্য রচনায় ফুটে উঠেছে। ওঁর কবিতা বুঝতে পারতাম না। কিন্তু মানুষটার জন্য কষ্ট হত।"

    (বাঙালনামা - তপন রায়চৌধুরী - পৃষ্ঠা ৮৪)
  • Kishore Ghosal | ১৬ অক্টোবর ২০২৩ ১১:৪২524617
  • কবির সব কবিতা বুঝি এমত দাবি করব না, তবে যেটুকু বুঝেছি তাতে মানুষ জীবনানন্দকে চিনতে ভুল করিনি। অনেক ধন্যবাদ এমন একটি আলোচনা তুলে ধরার জন্যে। 
  • শিবাংশু | ১৯ অক্টোবর ২০২৩ ২৩:০৯524814
  • এই লেখাটি নজর এড়িয়ে গিয়েছিলো। এক বন্ধু সাত সাগর পার থেকে ফোন করে আদেশ করলেন পড়তে। তাঁকে ধন্যবাদ।

    এক কথায় বলতে গেলে, উপভোগ করলুম। চিন্তা ও শ্রমের চিহ্ন প্রতি পরতে চোখে পড়বে। 

    যুক্তিনিষ্ঠ থেকেও যে এই কবির প্রতি মুগ্ধতা ম্লান হয় না, তার বহুমাত্রিক কারণ রয়েছে।  প্রয়াণের বহুদিন পরেও তাঁর সম্বন্ধে মানুষের (শুধু পাঠকের বললুম না) মূল্যায়ণগুলি অতি সীমাবদ্ধ কয়েকটি মাত্রায় আটকে ছিলো। তাঁর সাহিত্যকৃতি (শুধু কাব্য নয়) প্রসঙ্গে অধিকাংশ আলোচনাই 'ব্যক্তি-সময়-শৈলী'র ত্রিভুজে বাঁধা পড়ে যেতো। 'রূপসী বাংলা' সংকলনটি তাঁর সেরা রচনা নয়। দুর্বলতাগুলি কবি নিজে জানতেন। তাই জীবদ্দশায় ছাপতে দেননি। এই সংকলনটি বড়ো মাত্রায় প্রচারের আলোয় আসে স্বাধীন বাংলার জন্য সংগ্রাম শুরু হবার পরে। 

    তাঁর লেখা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে যে অসুবিধে বোধ করি, তার জন্য কবিই দায়ী বলা যায়। তিনি 'সমারূঢ়' নামের দৈববাণীটি না করলে কাজটি সহজতর হতো।  বাংলার মতো সারা বিশ্বে একটি অন্যতম প্রধান ভাষার একজন 'প্রধানতম' কবি হয়ে উঠতে পারার জন্য যে এলেম লাগে, তাঁর জীবদ্দশায় তার কোনও ইঙ্গিত কেউ পায়নি। বরিশাল কেন, স্বঘোষিত বাংলা মননের রাজধানী কলকাতাতেও কেউ পায়নি। বুদ্ধদেব বসু, প্রেমেন্দ্র মিত্র, অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, মানে যাঁরা সেই সময় বাঙালি মেধার 'হিরো' ছিলেন (অন্তত লাবণ্য দাশের মতে) তাঁদের ছাড়িয়ে জীবনানন্দ রকেটের বেগে কোথায় পৌঁছে গেলেন পঞ্চাশ বছরে, তার রহস্যটি , আমার মতে, বেশ জটিল। 

    বিষয়টি নিয়ে ভেবেছিলুম। কিন্তু তাঁকে নিয়ে এতোজন এতো কিছু লিখেছেন গত তিরিশ বছরে,  মানে ভূমেন্দ্র গুহের কালো তোরঙ্গের তালা খোলার পর, আর উৎসাহ পাইনি। সব 'বড়ো' কবিদের নিয়ে এটা হয়ই। সমরেশবাবুকে ধন্যবাদ, পুরোনো ইচ্ছেটি ট্রিগার করা জন্য। 
  • সমরেশ মুখার্জী | ২০ অক্টোবর ২০২৩ ০৯:১৬524831
  • শিবাংশুবাবু,

    আমি গদ‍্য ভালো‌বাসি, বিশেষতঃ খেলিয়ে লেখা দীর্ঘ উপন্যাস। তাই আপনার দীর্ঘ লেখা - "আমাকে তুই আনলি কেন ফিরিয়ে নে"- দিয়ে ৬/১৯ গুরুচণ্ডা‌৯র সাথে প্রথম আলাপে‌র মোলায়েম ঘোর আজ‌ও কাটেনি। তেমন অভিঘাত হয়েছিল রঞ্জনবাবুর "হারানো কলকাতার গল্প" এবং হীরেনবাবুর "দুরে কোথায়" পড়ে। পরে আপনার লেখা "ক্লোরোফিল গাথা", "অন‍্য মেয়েটা", "বসন্তমুখারি: তোমার আদ্র ওষ্ঠাধর কম্পমান" …মন ছুঁয়ে, মনে রয়ে গেছে। 

    আর "যাঃ…" তো খাসা লেগেছিল, ক্লাইম‍্যাক্স অভাবনীয়! হয়তো "যাঃ" -এর সাথে একাত্মতা অনুভব করেছি‌লাম আর একটি কারণে। ৯১তে মাস ছয়েক তুরামডিহিতে UCIL প্রোজেক্টে কাজ করেছি। তখন ছিলাম সদ‍্যনির্মিত UCIL কোয়ার্টারে। যাদুগোড়া যাওয়া হয়নি কিন্তু কাজের সূত্রে গেছি নর‌ওয়া পাহাড়। বুলেটে নতুন বৌ বসিয়ে কয়েকবার এমনি‌ই হাওয়া খেতে চলে গেছি চাইবাসা রোড ধরে হাতা মোড়, কোনো দোকানে চা খেয়ে ফিরে এসেছি। ঐ রাস্তা‌টা তখন দারুণ সুন্দর ছিল। একবার হাতা মোড় থেকে বাঁদিকে রঙ্কিণী মাতা মন্দির‌ও গেছি বৌ, শ‍্যালিকাকে বুলেটে বসিয়ে। 
     
    ২০০৬এ জামশেদপুর গিয়ে ভায়েরাভাইয়ের স্কুটারে হাতা মোড় অবধি গিয়ে দেখেছি অনেক ঘর বাড়ি হয়ে গেছে, সেই ফাঁকা আর নেই। এখন গেলে তো চিনতে‌ই পারবো না। স্বাধীনতা দিবসে গাড়িতে কয়েকজন মিলে বেড়াতে গেছি বাদাম পাহাড়ের দিকে নেসা ড‍্যাম। সদ‍্য বিবাহের পর সেই ছমাসের পিকনিক মুডে তুরামডিহিবাসের স্মৃতি অবিষ্মরণীয় - তাই আপনার "যাঃ" এর সাথে কিছুটা রিলেট করতে পেরেছি‌লাম। 

    কবিতা‌র রূপ, রস আমার উপলব্ধির অতীত। তবে আপনার লেখায় আপনার বাবার কথা জেনে, আপনার মার্জিত রুচি, পড়াশোনা‌র গভীর‌তা, সরস অথচ সাবলীল লেখ‍্য ভঙ্গি অনুভব করে মনে হয়েছে জীবনানন্দকে নিয়ে আপনার ভাবনা গুছিয়ে লেখার মতো যোগ্য‌তা আপনার আছে।

    কবি জীবনানন্দকে আমি ছুঁতে পারিনি কিন্তু তপনবাবু, বুদ্ধ‌দেব কন‍্যা মীনাক্ষী দত্তর স্মৃতি‌চারণে এবং এখানে ওখানে টুকরো টাকরা কিছু পড়ে নিঃসঙ্গ, মৃদুভাষী মানুষ‌টির প্রতি মনের কোনে জমা আছে গভীর দুঃখবোধ।
  • শিবাংশু | ২০ অক্টোবর ২০২৩ ২১:৪৭524887
  • @সমরেশবাবু ,    
     
    আপনি তো দেখছি খুব অল্প সময়ের জন্য হলেও আমার 'গ্রামতুতো' হয়েই যাচ্ছেন। আমি ঊননব্বই-তে জাদুগোড়া ছাড়ি। তবে প্রথমে তুরামডিহ, তার পর নরওয়া'তে জাদুগোড়ার অনেক বন্ধু চলে আসে। তাই বিরানব্বই পর্যন্ত এই দুই জায়গাই আমার উইকএন্ড আড্ডা'র ঠেক ছিলো। তখন গাড়ি ছিলো না আমার। বাইকেই দারা-কন্যাসহ মেরে দিতুম। উওহ ভি কোঈ দিন থা। 

    আপনি মনে হয় অনেকদিন ধরেই এ পাড়ায় আসেন। হীরেনস্যার, রঞ্জন এবং আমার মধ্যে একটি সুতো আছে। আমরা সবাই ভারতীয় স্টেট ব্যাংকের নুন খেয়েছি। হীরেনস্যার কিছুদিন পর ছেড়ে দিয়ে দেশত্যাগী হয়ে যান। আমি ঊনচল্লিশ বছর লেগে থাকি। রঞ্জন যে ব্যাংকে ছিলেন  তার পরিচালন ছিলো এসবিআই'এর হাতে। 


    এখানে আমি আপাতত পাঠকরূপেই আসি। সম্প্রতি আপনার লেখা পড়ছি। ভালো লাগছে। নানা বিষয়, ভাষা ও শৈলী, সব কিছুর মধ্যেই কুশলতার ছাপ ছড়িয়ে থাকে। অনুরোধ থাকলো, আরও লেখা আর আড্ডার জন্য।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন