ব্রিজ পার হতেই বাঁদিক দিয়ে সিঁড়ি নেমে গেছে নীচে, সামনে একটা সুন্দর ছোট্টো বাড়ি আর তার সামনে ততোধিক সুন্দর একটা ফুলের বাগান। সেটা পেরিয়ে একটা রাস্তায় পড়লাম, এটাই সোজা চলে গেছে ঐ হাওয়া-কলগুলোর দিকে। জেনে এসেছি, এখানে চীজ ফ্যাক্টরি আর উডেন শ্যু ফ্যাক্টরি - এ-দুটো বেশ ইউনিক ব্যাপার। তবে রাস্তায় এসে চারপাশটা দেখে থ হয়ে গেলাম, কি সুন্দর গ্রাম/মফঃস্বল রে বাপু! ঘরগুলোয় মানুষ থাকে কি করে, ঘরগুলো-কেই তুলে নিয়ে যেন মিউজিয়ামে রাখা যায়! আর তার পাশে ছোটো ছোটো বাগান, সঙ্গে ছোট্টো ছোট্টো ব্রিজ বানিয়ে রাখা সরু নালা-গুলো টপকানোর জন্যে। সেগুলোর কারুকার্য-ও দেখার মত। নালা বলছি বটে, তবে এ-নালা টালি নালা বা কেষ্টপুর খাল নয়, রীতিমত টলটলে জল, ধার দিয়ে দিয়ে ফুলের সারি, কিছু নার্সিশাস, কিছু ড্যাফোডিলস, ঘাসের বন আর গুচ্ছ গুচ্ছ প্রজাপতি! মশার নামগন্ধ নেই বরং খানিক দাঁড়ালে প্রজাপতি গায়ে এসে বসতে পারে, আর দু-চারটে ভ্রমর গুনগুনিয়ে যেতে পারে। আমাদের মাধ্যমিকের ইংরেজির সিলেবাসে ড্যাফোডিলস বলে একটা কবিতা ছিল, ওয়ার্ডসওয়ার্থ সাহেবের। এই নালার ধারে সারি সারি তারা অপেক্ষা করবে, কে-ই বা জানত! আর তাদের রকম-সকম একেবারে যেন কবিতার পাতা থেকেই উঠে আসা - 'Tossing their heads in sprightly dance'! এখান থেকে এগিয়ে রাস্তাটা ধীরে ধীরে একটু উপরে উঠে গিয়েছে, ডানপাশের জমি একটু নীচুতে। জান নদীতে কি বান ডাকে? হতেও পারে, তবে এটা যে একটি বাঁধের কাজ করছে, সেটা বুঝতে বেগ পেতে হয় না। বাঁধের উপর দিয়েই রাস্তা।
নদীর ধারে বৃষ্টি-দিনে হঠাৎ দেখা!
রাস্তা দিয়ে কিছুটা হেঁটেই চোখে পড়ল বাঁদিকে সারি দিয়ে আটটা উইন্ডমিলস। তবে তিনটে কি চারটে চলছে, একটার মাথা থেকে কল খুলে নেওয়া হয়েছে। চারশো-সাড়ে চারশো বছর আগে তৈরী এই হাওয়া-কলগুলো। এগুলো এখনো যে চলছে, সেই এক বিস্ময়! এদের মধ্যে তিনটে স-মিল (কাঠ কাটা বা গুঁড়ো করার কল), তিনটে অয়েল মিল (তেল কল) আর একটা সর্ষে পেষাই কল আর একটা ডাই বা রঙের গুঁড়ো বানানোর কল। দে হুইসম্যান (দ্য হাউজম্যান), দে কাট (দ্য ক্যাট), দে জোকার (দ্য সীকার) এগুলো উল্লেখযোগ্য। এর মধ্যে আমি শুধু দে কাট হাওয়া-কলে ঢুকেছিলাম, কেমন করে কাজ করে দেখতে আর ঠান্ডা হাওয়া সামলাতে একটা হট চকোলেট, নীচের ক্যাফে-তে। আর হুইসম্যান-এর পাশদিয়ে সুন্দর কাঠের প্ল্যাটফর্ম বানিয়ে রাখা একেবারে নদীর ভিতর অবধি, সেখান থেকে প্রায় পাঁচ-ছটা হাওয়া-কল সুন্দর দেখা যায় একসাথে!
"বুনোফুলে ঘুরে ঘুরে প্রজাপতি ক্লান্ত যখন
শুঁয়োপোকা থামে যেই চেনা চেনা গাছের গুঁড়িতে,
তখন বিকেল দেয় সন্ধের আল ধরে হানা,
গোধুলি আঙুল রাখে আলগোছে পথের ধুলিতে।
ব্যস্ত পর্যটক পিঁপড়ের সফর ফুরোয়
বটগাছে গুটিপোকা গুটিসুটি মারে একা একা,
রোদ্দুর ঘেঁটে ঘেঁটে শেষমেষ শরীর জুড়োয়;
গোধুলির আবছায়া ছুঁয়ে ছুঁয়ে সুবর্ণরেখা -
দিনের আওয়াজ যেই ঝিঁঝির কোরাসে মিশে যায়।..."
হ্যাঁ, প্রায়-জনশূন্য রাস্তায় দুদিকে সবুজ, একদিকে শান্ত নদী, মেঘলা দিন, নাম-না-জানা পাখিদের আর ঝিঁঝিঁ-র ডাক - পুরো পরিবেশটুকু এই বিভূতিভূষণ গানটাই মনে করিয়ে দিচ্ছিল। শেষ অবধি হেঁটে গিয়ে মোলেন মিউজিয়ামের দেখা পেলাম, তবে ভেতরে আর যাই নি, হাওয়া-কলের বাকি ইতিহাস পড়ার জন্যে গুগল তো আছেই। ঘন্টা দুই পরে ফেরার পথে কিছুদূর আসার পর বাঁ দিকে বেশ কিছু ঘর-বাড়ি দেখা গেল আবার, গুগল ম্যাপে দেখে নিলাম সেদিকেই চীজ ফ্যাক্টরি আর উডেন শ্যু ফ্যাক্টরি। ততক্ষণে ভিড় বাড়তে শুরু করেছে রাস্তায়, প্রথমেই পড়ল চীজ ফ্যাক্টরি, ভিতরে নানা রকমের, নানা স্বাদের আর রঙের চীজ, নিখরচায় স্বাদ দেখে বুঝে নিয়ে কিনতে চাইলে কেনা যায়, না-ও কেনা যায়। নানা রকমের চীজের স্বাদ নিয়ে মন খুশ করে দু ফালি 'গৌডসে কাস' ওরফে গৌডা চীজ (বস্তুটি গরুর দুধ থেকে তৈরী আর স্বাদ একেবারে গাওয়া ঘি জমিয়ে চীজ বানালে যা হয় তাই, গন্ধ আর স্বাদ প্রায় সেরকম-ই) নিয়ে বেরিয়ে এলাম। পরবর্তী গন্তব্য উডেন শ্যু ফ্যাক্টরি। একেবারে পাক্কা কাঠের জুতো! এখানে ঢুকে প্রথমেই বেশ কিছু শো-কেসের ভিতরে নানা রকমের কারুকাজ আর গঠনের কাঠের জুতো, কিছু নাগরাই ধরণের জুতোর শুঁড় প্রায় শো-কেসের ছাদে গিয়ে ঠেকেছে! এক জায়গায় এমনকি একজোড়া আগাগোড়া হীরক-খচিত জুতো-ও সাজানো রয়েছে। তারপর দেখি সারা দোকান জুড়ে থাকে থাকে, এমনকি গোটা ছাদ জুড়ে নেমে এসেছে কাঠের জুতোর সারি, হরেক মাপের, হরেক রঙের! সার দেওয়া জুতো তো সব জুতোর দোকানেই থাকে, কিন্তু এমন কাঠের জুতো! আর তার এমন বাহার! সামনে এক জায়গায় দর্শকাসন করা রয়েছে, সেখানে একজন কারিগর যন্ত্রপাতি সহযোগে চোখের সামনেই বানিয়ে দেখাচ্ছেন কাঠের জুতো! আমাদের দেশে কাঠের জুতো বলতে খড়ম, পরেওছি বহুযুগ আগে দিন তিনেকের জন্যে একবার, সে অভিজ্ঞতা সুখের নয়, পা আর খড়ম বশে রাখা বিষম কষ্টসাধ্য ব্যাপার, আর এখানে কিনা লোকজন শখ করে কাঠের জুতো পরছে। তবে অভিনব ব্যাপার নি:সন্দেহে।
জুতোর ডগায় এক পিস কোহিনূর থাকলে মন্দ হত না!
বেরিয়ে এসে এবার সেই একই পথে ফিরে চলা জানডাইক স্টেশনের পথে। এবার ব্রিজে উঠে দেখি গেট ফেলে দিয়েছে, চলাচল বন্ধ। কি ব্যাপার, একটু পরেই পরিষ্কার হল, রীতিমতো ঘন্টা দিয়ে একদিকের সেতুর অংশ আলাদা হয়ে উপরে উঠে গেল, আর আমাদের ডানদিক থেকে পেল্লায় এক ট্রলার ভেঁপু বাজিয়ে পার হয়ে গেল। আবার পাঁচ মিনিট পর সেতু জোড়া লেগে গেল, গেট তুলে নিতে চলাচল শুরু! এ-ও দেখা হয়ে গেল এ যাত্রায়! বাকিটুকু হোটেলে ফেরা, পরের দিন সকালে যাবো কিউকেনহফ, হল্যান্ডের বিখ্যাত টিউলিপের বাগানে!
"থাক তব ভুবনের
ধূলিমাখা চরণে
মাথা নত করে রব
বসন্ত এসে গেছে..."
আর কারও না হোক, হল্যান্ডের কিউকেনহফ বাগানে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছিল এই রং-বেরঙের টিউলিপের চরণেই মাথা নত করি! বসন্ত তো বটেই, তবে ফাগুন গিয়ে চৈত্র, কিন্তু হল্যান্ডে তাপমাত্রার ঘোরাফেরা এখনো ঐ ৫ থেকে ১২-১৩ র (সেন্টিগ্রেড) মধ্যে। আর টিউলিপের আনাগোনা শুরু হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই। অ্যামস্টারড্যাম থেকে কিছুটা দক্ষিণ-পশ্চিমে টিউলিপের আড্ডা - কিউকেনহফ। মোটামুটি ১৫ ই মার্চ থেকে ১৫ ই মে পর্যন্ত দু'মাস এই বাগান খুলে দেওয়া হয়। এবার,২০২৩ এ খুলেছে ২৩শে মার্চ। দেশ-বিদেশের পর্যটকের ভিড়ে ভরে যায় চত্বর। তবে এই বাগান সম্পর্কে প্রথম খবর পেলাম আমার হল্যান্ড-বাসী বন্ধু সৌরীশের কাছে। টিকিট-ও কেটে নিলাম, বাগানে প্রবেশের টিকিট এর সঙ্গে এয়ারপোর্ট থেকে এক্সপ্রেস বাসে যাতায়াত। আগের দিন জ্যানসে স্ক্যানস থেকে ফিরেছি, পরের দিন রবিবার, অন্ততঃ দুপুর পর্যন্ত কাজ-কর্ম নেই, সুতরাং সকাল ন'টার টিকিট নিয়ে নিলাম। সকাল সকাল এয়ারপোর্ট চত্বর বেশ ফাঁকাই রয়েছে। একটা খোলা জায়গায় সেই বিখ্যাত 'I Amsterdam' চিহ্নটি রয়েছে, এটি আজকাল অবশ্য দীঘা-পুরী-মন্দারমণি-দার্জিলিং সর্বত্র-ই বিদ্যমান, তবে ইনিই হলেন তাদের সর্বাগ্রগণ্য পূর্বসূরী। এখান থেকে আরও কিছুটা গিয়ে টিকিট স্ক্যান করে বাসে বসে পড়লাম। বাসে বেশ কিছু জার্মান, জাপানী আর আমেরিকান পরিবারের সঙ্গে দুটি ভারতীয় পরিবার-ও চলেছেন। এয়ারপোর্ট থেকে হুফডর্প ছাড়িয়ে একটু এগোতেই বড় বাড়ি-ঘর আর তেমন চোখে পড়ে না, পরিচ্ছন্নতাটুকু বাদ দিলে আশপাশের দৃশ্য আমাদের গ্রাম-বাংলার মতই, মাইলের পর মাইল ক্ষেত, মাঝে মধ্যেই নালা চলে গেছে তার মাঝখান দিয়ে, বড় নালা থেকে সরু নালা কেটে সেচের ব্যাবস্থাও চোখে পড়ল। মিনিট কুড়ি পরেই সারি সারি হলুদ আর লালের সমারোহ যতদূর চোখ যায়, একটু কাছে আসতেই বুঝলাম এ তো টিউলিপ-এর চাষ করা হয়েছে রীতিমত! আর সেই ভাবনা-কে প্রশ্রয় দিয়েই আমাদের বাস ঢুকে পড়ল একটি গেট দিয়ে, সামনে বেশ বড় করে লেখা 'Welcome to Keukenhof'
বাগানের প্রবেশদ্বার
কিউকেনহফের প্রবেশপথের সামনে বেশ ছড়ানো চাতাল, ডানদিকে একটি বেশ চওড়া নালা আর তার ওপাশেই সেই টিউলিপের চাষ করা জমি, যতদূর চোখ যায় শুধু হলুদ অথবা লাল! এখানে আবার টিকিট স্ক্যান করিয়ে ঢুকে পড়লাম ভিতরে। প্রথমেই বাগানের একটি ম্যাপ ঝুড়ি থেকে তুলে নিয়ে, চোখ বুলিয়ে নিলাম। বাঁ-পাশে একটি রাস্তা চলে গেছে আর সামনে একটি। তবে সব রাস্তাই ঘুরে ফিরে এসে একে অন্যের সাথে মিলে যায়। বাঁ-দিক দিয়ে হাঁটা শুরু করলাম, এখানে পুরো বাগানের কিছু কিছু অঞ্চল নাম দিয়ে চিহ্নিতকরণ করা আছে, যেমন আইরিন (এখানে শুধুই স্যুভেনির, খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদির দোকান), তারপর আসে জুলিয়ানা (এখানে টিউলিপ আর অন্য ফুলের চারাদের যত্ন করে বড় করা হয়, নানা রকম টিউলিপ বাল্ব-এর খোঁজ-খবর-ও মেলে) ইত্যাদি। প্রথমেই রাস্তার দুপাশে সারি দিয়ে চেরি ব্লসম একেবারে সাদা আর গোলাপী হয়ে ফুটে আছে। তারপর শুধুই টিউলিপ, তবে টিউলিপ ছাড়া অন্যান্য ফুলের প্রজাতি-ও রয়েছে , রাস্তার ধার ঘেঁষে নানারকম নকশায় তাদের সাজানো, প্রতিটি প্রজাতির নাম-ও দেওয়া রয়েছে ফলকে। তারপর একটা বাগান পার হতেই রাস্তার একপাশে একটা ওভারব্রিজের মত, ওপাশে কি এত লোকজন দেখছে এপাশ থেকে বোঝা গেল না। সুতরাং সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে বাঁদিকে তাকাতেই বুঝলাম, ফুল দিয়ে পুর জায়গাটা সুন্দর করে সাজানো আর তার মাঝে হলুদ টিউলিপ সাজিয়ে ইংরাজী হরফে বড় করে লেখা রয়েছে 'কিউকেনহফ'! ভিড় এখনো তেমন নেই, সুতরাং ভালো-ই ছবি নেওয়া গেল। নেমে এসে এরপর ডানদিক ঘুরে সোজা এগিয়ে 'অরেঞ্জ নাসাউ' প্যাভিলিয়ন। এত অসামান্য পুরো প্যাভিলিয়নের সাজসজ্জা,দেখে অবাক হতে হয়। প্যাভিলিয়নের মোটামুটি ৩০/৪০ বর্গফুট এলাকা এক একটি থীমের জন্য বরাদ্দ। আর প্রতিটি থীম নেদারল্যান্ডসের বৈশিষ্ট্য-গুলি তুলে ধরেছে নিপুণভাবে, তার রঙ, রূপ, সাজানোর কায়দা একটি অন্যের থেকে আলাদা। এ-জায়গা একেবারে যাকে বলে যেখানে 'প্রেমের ফাঁদ পাতা ভুবনে'। অনেক যুগল-ই এখানে ফটো তুলছে, এমনকি প্রফেশন্যাল ফটোশ্যুট-ও চলছে কয়েক জায়গায়। ফুলেদের মাঝে ফুলের দোলনা, রথ, গাড়ি, বাড়ি সব রকম কিছুর সঙ্গেই ছবি তোলার ব্যবস্থা!
অরেঞ্জ নাসাউ থেকে বেরিয়ে একটু এগিয়ে বাঁদিকে ছোটো একটা নালা পার হয়ে একটা বিরাট গ্রীন হাউস। নাম উইলেম-আলেকজান্ডার। হল্যান্ডের রাজার নামে। এখানেই বিভিন্ন প্রজাতির টিউলিপের আড্ডা। এইটিই বলা যেতে পারে এই বাগানের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট জায়গা। ভিতরে ঢুকে রীতিমতো হতভম্ব হয়ে গেলাম। এর আগে কলকাতা বা তার আশেপাশে ফুলের প্রদর্শনী দেখেছি, কিন্তু এ-জিনিস একেবারে অন্য! আর এর বিশেষত্ব টিউলিপ। পৃথিবীর হেন কোনো টিউলিপ নেই যা এ-বাগানে নেই। হরেক প্রজাতির হরেক রঙের হরেক গঠনের টিউলিপ! সার বেঁধে যত্ন করে লাগানো গাছে টিউলিপের শোভা। একটা সারি দেখে শেষ অবধি গিয়ে আশ মিটল না, আবার সেই সারি ধরেই ফেরৎ এলাম। আর তাদের নামকরণ-ও বেশ, ফ্লাইং ড্রাগন, মেমফিস, কুইনস ডে, গো গো রেড, কিসেবল (মানে তেমন-ই জিনিস বটে), কনফুশিয়াস (তেমন-ই জ্ঞান-গম্ভীর টাইপ), ইনভল্ভ, ড্রিম-ক্লাউড স্প্রিং ব্রেক মায় টেকিলা সানরাইজ অবধি! কি যে নেই সেখানে! মন-প্রাণ জুড়িয়ে গেল যেন! এ মানে একেবারে ডি লা গ্র্যান্ডি ব্যাপার-স্যাপার! তবে হোয়াইট ভ্যালি বলে যেটি এখানে রাখা দেখলাম সেটি কিন্তু একেবারে আমাদের হিমালয়ের ব্রহ্ম-কমল। একটার নাম চাইনিজ ফ্ল্যাগ, তাই দেখে আরও দু-চারটি দেশের ফ্ল্যাগ আছে কিনা খুঁজে দেখলাম! আর-একটির নাম ফুলটাইম - হ্যাঁ অমন সুন্দর ফুলের সঙ্গে ফুলটাইম বসে থাকা যায় বৈকি! শেষের দিকে একটার নাম দেখলাম রিটার্ন! অতএব ফেরার পালা। এখানে এক পাশে ফুলের মাঝে একটি বুদ্ধমূর্তিও রাখা দেখলাম। ভেতরে একটা বড় ক্যাফে-ও রয়েছে। এখান থেকে বেরিয়ে ডানদিকে সোজা গেলেই একখানা উইন্ড-মিল। তার সামনে এক জায়গায় একটা পেল্লায় মিউজিক প্লেয়ার, মূলতঃ অর্কেস্ট্রা বাজছে। এর বিশেষত্ব হল, এর ভিতরে এক জায়গায় সিম্ফনি-র বই এর পাতা খুলে রেখে দেওয়া হচ্ছে আর সেইমতো মিউজিক বেজে চলেছে! উইন্ডমিলে বিশেষ কিছু নেই, এর সামনে দিয়ে বয়ে গেছে বেশ চওড়া একটা নালা এখানে একটি বোট-রাইড হয় যার নাম হুইস্পার বোট। নালার ওপারেই দিগন্ত জোড়া টিউলিপের ক্ষেত, এই হুইস্পার বোট ঐ ক্ষেতের পাশ দিয়ে দিয়ে যায়। একপাশে কিউকেনহফের বাগান, অপর পাশে টিউলিপের ক্ষেত।
এছাড়াও আর-ও দুই প্রান্তে দুটো টিউলিপের শো-হাউস সবই রাজা-রাণীর নামে, বিট্রিক্স, উইলহেলমিনা ইত্যাদি। সেসব দেখা শেষ করে ঘড়িতে দেখি বাজে দুটো! প্রায় পাঁচ ঘন্টা কোথা দিয়ে যে কেটে গেল বুঝেই উঠতে পারলাম না। ক্লান্ত পায়ে বাইরে এসে ফিরতি বাসে বসে মনে হচ্ছিল -
'মধুর তোমার শেষ যে না পাই...'