গল্প তো জানাই, অভিনয়, সিনেমাটোগ্রাফি, আবহসঙ্গীত সব মিলিয়ে আরেকটা ক্লাসিক জিনিস তৈরি হয়েছে। এডওয়ার্ড বার্গারের অন্য কোন সিনেমা দেখার সুযোগ হয়নি। এই ছবিতে তিনি দুর্দান্ত কাজ করেছেন। ক্লাসিক একটা উপন্যাস অবলম্বনে সিনেমা তৈরি সব সময়ই কঠিন। তিনি কঠিন কাজটা সফল ভাবেই করেছেন। 
উপন্যাসের সাথে অনেকটাই মিল রেখে তৈরি করা হয়েছে। পরিচালক যা দেখাতে চেয়েছে তা ভাল ভাবেই দেখিয়েছে। যুদ্ধের বীভৎসতা, যুদ্ধের হিংস্রতা, নিষ্ঠুরতা একদম নগ্ন ভাবে দেখিয়েছেন। যুদ্ধ বিরোধী উপন্যাস হিসেবে অল কোয়ায়েট অন দা ওয়েস্টার্ন ফ্রন্টও একই জিনিস দেখিয়েছে। তবে উপন্যাসের সুর একটু আলাদা ছিল। চরিত্র গুলা উপন্যাসে আরও বিস্তারিত ছিল, যার কারণে প্রতিটা মৃত্যু পাঠকের কলিজায় গিয়ে লাগত। এখানে লেগেছে বীভৎসতার জন্য, যুদ্ধের কুৎসিত চেহারার জন্য। গল্পটা অনেকেরই জানা। তবু একটু বলি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলছে। জার্মান অল্প বয়সই কয়েকজন ছেলে যুদ্ধের রোমান্টিকতায় মুশগুল হয়ে সৈনিক পদে যোগ দেয়। যুদ্ধে যাবে, প্যারিস জয় করবে, এমন নানা গরম গরম বক্তব্য দিয়ে তাদেরকে যুদ্ধের ময়দানে পাঠানো হয়। যুদ্ধ ক্ষেত্রে পা দিয়েই তারা বুঝে যুদ্ধ আসলে কত নিষ্ঠুর, কত জান্তব, কত কুৎসিত! পল বোমার যুদ্ধের ময়দানে নেমেই বুঝতে পারে এখানে হয় মারো না হয় মরো, দ্বিতীয় কোন রাস্তা নেই! প্রথম দিনেই পল দেখে যুদ্ধ আসলে ক্যামন! পঙ্গুত্ব, মৃত্যু, গুলি, বোমা, গ্রেনেড, বিষাক্ত গ্যাস! কোথায় ফরাসী দেশ, যাদের জীবনে দেখেনি তাদেরকেই মারতে তৈরি সবাই। আবার রাশান ইংরেজ মিলে মারছে জার্মানদের!  বন্ধুত্ব, বন্ধুর মৃত্যু সব মিলে মিশে একাকার পুরো বই জুড়ে। যা ভাবতে বাধ্য করবে যুদ্ধের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে। পল বোমারের জবানীতে পুরো উপন্যাস। যা আসলে এরিক মারিয়া রেমার্কেরই কথা, তিনি নিজের কথাই লিখেছেন। বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি লিখেছেন যুদ্ধের ভয়াবহতার কথা। কালজয়ী এই উপন্যাস যে পড়েছে সে বাধ্য যুদ্ধ বিরোধী চিন্তা মাথায় আনতে। এবার এই উপন্যাসকেই বেশ দারুণ ভাবে আনা হয়েছে পর্দায়। প্রতি মুহূর্ত যেন মনে করিয়ে দিচ্ছিল আমাকে যে এমন সভ্য আধুনিক একটা দুনিয়ায় এখনও মানুষ যুদ্ধ নামক একটা কুৎসিত জিনিস কাঁধে করে নিয়ে বেড়াচ্ছে! নানা নামে, নানা বর্ণে, নানা ভাবে যুদ্ধকে জায়েজ করা হয়েছে। মানব সভ্যতার এত বছরের শিক্ষার পরেও, এত এত রক্তপাতের পরেও আমরা আজও এই বিষয়ে শিক্ষিত হতে পারিনি। রক্ত এখনও ঝরছে কোথাও না কোথাও! বর্তমান সময়ের জন্যও যেন আদর্শ একটা সিনেমা এইটা।