এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ইস্পেশাল  পুজো ২০১০

  • তিমি, ডায়নোসর থেকেও বিবর্তনের ইতিহাসে বৃহত্তম

    আসিফ
    ইস্পেশাল | পুজো ২০১০ | ০১ অক্টোবর ২০১০ | ৪৮৪ বার পঠিত


  • অসংখ্য গ্রহ হয়তো আছে যেখানে উন্নত বুদ্ধিমান প্রাণী থাকতে পারে। কিন্তু সাগর থাকার কারণে বলা যায় পৃথিবী এমন অনেক জগতের মধ্যেও দুর্লভ একটি গ্রহ। প্রাণের অনুকূল পরিস্থিতির এই জলজ পরিবেশে নানা রকমের বুদ্ধিমান প্রজাতির বাস। তাঁদের অনেকেরই হয়তোবা আঁকড়ে ধরার জন্য আটটি উপাঙ্গ আছে; অন্যরা হয়তো শরীরের কালো ও উজ্জ¦ল দাগের বিভিন্ন জটিল প্যাটার্নের সুবাদে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে, এমনকি এক ধরনের চতুর জীবদের কথাও বলা যায় যারা স্থলভূমি থেকে কাঠের অথবা ধাতুর নৌযানে মহাসাগরে হানা দেয়। কিন্তু আমরা বিশাল, শক্তিশালী, অনুভূতিপ্রবণ এক প্রাণীর কথা বলছি আর তা হলো গ্রেট হোয়েল বা জ্ঞবিশালদেহী তিমিঞ্চ। এই পৃথিবীতে অদ্যাবধি উৎপন্ন সব ধরনের প্রাণীর মধ্যে বৃহত্তম হল তিমি, এমনকি ডায়নোসর থেকেও (কয়েক ধরনের ড়নহয়ষভত গাছ ছাড়া) অনেক বড়। একটি পূর্ণবয়স্ক নীল তিমি ৩০ মিটার (৯০ ফিট) লম্বা ও ১৫০ টন ওজনের হতে পারে।

    শান্ত প্রকৃতির ব্যালিনসহ আরও অনেক তিমি সামুদ্রিক উদ্ভিদ বা আগাছা খায় এবং বিশাল সাগরে সাঁতার কাটতে কাটতে ছোটছোট জলজ প্রাণীকেও গিলে ফেলে; অন্যরা মাছ ও ক্রিল খেয়ে থাকে। তিমিরা নিজ ইতিহাসের হিসেবে খুব বেশি দিন হয়নি যে তারা সাগরে এসেছে। মাত্র ৭ কোটি বছর আগেও তাদের পূর্বপুরুষেরা ছিল মাংসাশী স্তন্যপায়ী। তারপর তারা ধীর পদক্ষেপে স্থলভূমি থেকে চিরকালের জন্য সাগরে চলে যায়। মা তিমিরা তাদের বাচ্চাদের স্তন্য পান করায় লালন-পালন করে। তাদের আছে দীর্ঘ শৈশবকাল, যে সময়ের মধ্যে পূর্ণবয়স্করা তরুণদের শিক্ষা দেয়। খেলাধুলা তাদের একটি সাধারণ অবসর-বিনোদন। এগুলো স্তন্যপায়ীদের স্বাভাবিক ধর্ম এবং বুদ্ধিমান প্রাণীদের বিকাশের জন্য সবগুলো গুরুত্বপূর্ণ। সাগর হল ঝাপসা, প্রায় অন্ধকার একটা জায়গা। স্থলের প্রাণীদের ক্ষেত্রে দৃষ্টিশক্তি ও ঘ্রাণশক্তি যত ভালভাবে কাজ করে মহাসাগরের গভীরে তত ভালভাবে কাজ করবে না। তিমিদের ঐ পূর্বপুরুষেরা যারা ঐ ধরনের অঙ্গপ্রতঙ্গের ওপর ভরসা করে তাদের বাচ্চা, সঙ্গী অথবা শক্রর অবস্থান খুজে বের করতো, তারা খুব বেশি বংশধ্বর রেখে যেত না। সুতরাং বিবর্তনের মাধ্যমে অন্য একটি পদ্ধতির উদ্ভব ঘটেছিল। এই পদ্ধতিটা কাজ করে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে এবং তিমিদের বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে এটাই কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা : শব্দের ইন্দ্রিয় (ড়নশড়ন)।
    এক ধরনের তিমি আছে, তারা যে শব্দ করে তাকে বলা হয় গান। কিন্তু আমরা এখনও ওগুলির সত্যিকারের প্রকৃতি ও অর্থ জানি না। তাদের শব্দ বের করার একটি প্রশস্ত ব্যান্ডের ব্যাপ্তি আছে, তবে মানুষের কান যতটুকু নিম্নসীমা পর্যন্ত শুনতে পারে তার থেকেও তা অনেক নিচে। একটি সাধারণ তিমির গান সাধারণত ১৫ মিনিট ধরে চলে আর দীর্ঘ হলে প্রায় ১ ঘণ্টার মতো হয়। প্রায় এই ধরনের গানগুলোর পুনরাবৃত্তি ঘটে অভিন্নভাবে, প্রতিটি বিট, প্রতিটি পরিমাপ, প্রতিটা স্বর পর্যন্ত। তিমিদের কোন দল কখনো শীতল পানি থেকে উষ্ণ পানিতে সরে গিয়ে ৬ মাস পরে আগের জায়গায় ফিরে এলে ৬ মাস আগে যেখানে গানটি থেমেছিল ঠিক সেখান থেকে শুরু করে, শুনলে মনে হয় যেন সুরের কোনো বিরতি ঘটেনি। তিমিদের স্মরণশক্তি অত্যন্ত প্রখর। ফিরে আসার পর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই গলার স্বর বদলে যায়। তারা নতুন গান বাঁধে মানুষদের জনপ্রিয়তার মতনই তিমিপ্রিয়তার ভিত্তিতে। প্রায় দলের সদস্যরা কোরাসে গান গায়। হাম্পব্যাক তিমির গানগুলো একটি টোনাল ল্যাংগুয়েজ হিসেবে উচ্চারিত হলে এই ধরনের গানের মধ্যে তথ্য বিটের সংখ্যা হবে প্রায় ১০ লক্ষ (১০৬ লক্ষ)। ঠিক এই পরিমাণ তথ্য আছে জ্ঞইলিয়াডেঞ্চ অথবা জ্ঞঅডিসিতেঞ্চ। আমরা জানি না তিমিরা অথবা তাদের নিকট আত্মীয়রা কী সম্পর্কে কথা বলে বা গান গায়।
    হাম্পব্যাক তিমিরা সমুদ্রের একটি নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে চলাফেরা করে না বরং তারা বহুদূরবর্তী অঞ্চলে যেতে পারে। তারা ঘণ্টায় সাড়ে তিন মাইল গতিতে সাঁতার কেটে চলে। কিছু কিছু হাম্পব্যাককে হাওয়াই থেকে কামচাটকা পর্যন্ত দীর্ঘ পাঁচ হাজার মাইল পথ পাড়ি দিতে দেখা গেছে। একটি হাম্পব্যাক ত্রিশ দিনে হাওয়াই থেকে আলাস্কা পর্যন্ত দীর্ঘ ২৬০০ মাইল পথ পাড়ি দেয়ার ব্যাপারটি স্যাটেলাইট মনিটরে ধরা পড়েছে। গান গাওয়ার সময় এরা এদের ফ্লিপার দুটো দুঞ্চদিকে মেলে ধরে, এদের ফ্লিপারগুলো লম্বায় প্রায় ১৫ ফুট পর্যন্ত হতে পারে, এরা ব্যালিন তিমির গোত্রভুক্ত, লম্বায় সর্বেআচ্চ ৫০ ফুট ও ওজনে ৪০ টন পর্যন্ত হতে পারে। গান গাওয়া ছাড়াও তারা নানা ধরনের ধ্বনি সৃষ্টি করে মনের ভাব প্রকাশ করে সঙ্গীদের বিভিন্ন ধরনের বার্তা পাঠায়। এদের শব্দের তীব্রতার মান ১৭০ ডেসিবল যা জেট বিমানের গর্জনের চেয়েও বেশি। হাম্পব্যাককে পৃথিবীর সব সাগরেই দেখা যায়। নিঝুম দ্বীপের চরায় আটকে পড়া তিমিটিও হাম্পব্যাক গোত্রের হতে পারে।

    পৃথিবীর দুই প্রান্তে থেকেও তিমিরা পরস্পরের সাথে যোগাযোগ রাখতে পারে
    তিমিদের স্বীয়কার্য সম্পাদন করার জন্য কোনো অঙ্গসংস্থান নেই। তারা কোনো প্রকৌশলিক কর্মকাণ্ড তৈরি করতে পারে না। কিন্তু তারা সামাজিক জীব। তারা শিকার করে, সাঁতার কাটে, মাছ ধরে, গাছগাছড়া ছিঁড়ে খায়, আনন্দে নাচে, সঙ্গী খেআঁজে, খেলা করে, শিকারির কাছ থেকে পালায়। হতে পারে তারা এগুলো নিয়ে কথা বলে, আলোচনা করে। তিমিদের সবচেয়ে বিপদ হল এক নবাগত, খাঁড়া হয়ে দাঁড়ানো সেই চতুর প্রাণীরা, সম্প্রতি যারা প্রযুক্তির সাহায্যে মহাসাগরে বিচরণ করার উপযুক্ত হয়েছে। এই প্রাণীরা নিজেদেরকে মানুষ বলে। তিমিদের ইতিহাসে ৯৯.৯৯% সময় ধরে মানুষরা ছিল না, সেটা গভীর সমুদ্রের অভ্যন্তরেই হোক আর উপরেই হোক। এই সময়কালে তিমিদের বিশেষ শ্রুতি যোগাযোগ-ব্যবস্থার (তয়ধভষ দষললয়শভদতঢ়ভষশ ড়ঁড়ঢ়নল) বিকাশ ঘটেছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় ফিনব্যাক তিমিদের কথা, তারা নি:সরণ করে ২০ হার্জ ফ্রিকুয়েন্সিতে প্রচণ্ড জোড়ালো শব্দ, যা পিয়ানো কি-বোর্ডের সবচেয়ে নিচের অক্টেভের চেয়েও কিছুটা নিচে। (হার্জ হল শব্দ ফ্রিকুয়েন্সির একটি একক যা প্রকাশ করে প্রতি সেকেন্ডে কতগুলো শব্দতরঙ্গ দৈর্ঘ্য আমাদের কানে ঢুকছে- একটি চূড়া ও একটি পাদকে একটি তরঙ্গ বলে এবং তাদের মধ্যে দূরত্বকে তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বলে)। এই ধরনের অল্প ফ্রিকুয়েন্সি সাগরের পানিতে খুব অল্পই শোষিত হয়।

    জীববিজ্ঞানী রজার পাইন গভীর সাগরের শব্দপথ হিসাব করে দেখেছেন যে, দুটো তিমি পৃথিবীর দুই প্রান্তে অবস্থান করেও পরস্পরের সাথে ২০ হার্জ ফ্রিকুয়েন্সিতে যোগাযোগ করতে পারে। অ্যান্টারটিকার ছষড়ড়-ঐড়ন জবনরপ-এ অবস্থানরত একজন যোগাযোগ করতে পারে অরঢ়নয়ঢ়ভতড়-এ অবস্থানরত অন্যজনের সাথে। তিমিদের ইতিহাসের বেশির ভাগ সময় ধরে তারা হয়তো প্রতিষ্ঠা করে থাকতে পারে এ ধরনের বিশ্বজনীন যোগাযোগের নেটওয়ার্ক। সম্ভবত তারা পরস্পর থেকে ১৫-হাজার কিলোমিটার দূরত্বে থাকলে অতল গভীরতার মধ্য দিয়ে পাঠায় তাদের ভালোবাসার গানে পরিপূর্ণ কণ্ঠস¦র। বিশালদেহী, বুদ্ধিমান ও যোগাযোগের ক্ষমতাসম্পন্ন এই প্রাণী প্রায় ১ কোটি বছর ধরে কোনো প্রাকৃতিক শক্র ছাড়াই বিকশিত হয়েছিল। কিন্তু তারপর ঊনবিংশ শতাব্দিতে বাষ্পচালিত জাহাজের উন্নতির ফলে সাগরের পানিতে যুক্ত হয়েছিল অশুভ শব্দদূষণ। বাণিজ্যিক ও সামরিক জাহাজের সংখ্যাবৃদ্ধির ফলে সাগরের পানিতে থতদযফক্ষষয়শধ শষভড়ন বিশেষত ২০ হার্জ ফ্রিকুয়েন্সি- লক্ষণীয় মাত্রায় ছড়াতে থাকে। এর ফলে তিমিদের যোগাযোগের ব্যবস্থা ক্রমাগত অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছে এবং যোগাযোগের ব্যাপ্তিও একইভাবে কমেছে। দুইশত বছর আগে একটি ফিনব্যাক-তিমি সাধারণভাবে সম্ভবত ১০ হাজার কিলোমিটার যোগাযোগ করতে পারত। আর আজ এই যোগাযোগের বিস্তৃতি অল্প কয়েকশত কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। তিমিরা কি জানে তাদের পরস্পরের নাম? শুধু শব্দের মাধ্যমে তারা কি পরস্পরকে স্বতন্ত্রভাবে চিনতে পারে? আমরা তিমিদের পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন করেছি। যে জীবেরা এক কোটি বছর ধরে যোগাযোগ করে আসছে তারা আজ সত্যি সত্যি নিশ্চুপ।

    ১৯৭৯ সালের জানুয়ারির ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক পত্রিকাতে সাউন্ড শিট
    হাম্পব্যাক হল একমাত্র তিমি যারা পানির তলদিয়ে জ্ঞগানেরঞ্চ অবয়বে শব্দ নি:সরণ করে থাকে- সেগুলো দীর্ঘ, একটানা সুরেলা ধ্বনির অন্তর্গত ক্ষুদ্র ধ্বনিসমষ্টির পুনরাবৃত্তির জটিল ধারা। পাইন দম্পতি তাদের গবেষণাকে হাম্পব্যাকের গান গাওয়ার অঞ্চল বারমুডা ও হাওয়াই-এ পরিচালনা করেছিল। ড. রজার পাইন লক্ষ্য করেন ঞ্ছবারমুডা ও হাওয়াই অঞ্চলে তাদের গানগুলো ভিন্ন নয় বরং প্রত্যেকটি অঞ্চলের সব হাম্পব্যাকই একটি নির্দিষ্ট ধারায় গান গায় বা একই গান গেয়ে থাকে, যাকে স্থানীয় গানও বলা যায়।ঞ্জ এক দশকের অধিক সময় ধরে রজার পাইন ও তাঁর স্ত্রী, কেটির সঙ্গে তিমির গান নিয়ে গবেষণা করেছেন, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি ও নিউইয়র্ক জুলজিক্যাল সোসাইটির সহায়তা নিয়ে। পাইন দম্পতি রেকর্ড করেছিলেন তিমির গানগুলো। এগুলো ১৯৭৯ সালের জানুয়ারির ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক পত্রিকাতে শব্দ শিটের (জষয়শধ জবননঢ়) মাধ্যমে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। এই শিটের একটি গান শুধু রেকর্ড করেছিলেন কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জিওফিজিক্যাল ফিল্ড স্টেশনের একজন অ্যাকোয়াসটিক প্রকৌশলী ফ্রাঙ্ক ওয়ালিংটন। এই উল্লেখযোগ্য গানগুলোকে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি তাঁদের সদস্যদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবার উদ্দেশ্যে, অর্ডার দিয়েছিল দেড় কোটি কপি শব্দ শিটের। যে কোন প্রাণীর সবচেয়ে উচ্চস্বর অপেক্ষাও হাম্পব্যাক তিমির গান বেশি জোরালো। তিমির গানের সাউন্ড শিটটি বাজালেই তা বোঝা যায়। এই সাউন্ড শিটের রেকর্ডটি বিজ্ঞান সংস্থা ডিসকাশন প্রজেক্টের কাছ থেকে সংগ্রহ করা যাবে।

    আমরা আজও মৃত তিমির শরীর নিয়ে ব্যবসা করি
    কার্ল সাগান বলেছেন জ্ঞএকইভাবে বেতার ফ্রিকুয়েন্সি ব্যান্ডে ক্রমশ বিশৃংখল ব্যবসায়িক প্রয়োজন, বেসামরিক, সামরিক হস্তক্ষেপের ফলে আমরা আন্ত:নাক্ষত্রিক চ্যানেলে জ্যাম তৈরি করেছি। ফলে বহির্জাগতিকদের সাথে যোগাযোগের উদ্দেশ্যে বেতার-তরঙ্গ পাঠানো অথবা তাদের কোনো বার্তা আমাদের এখানে পে০ঁছেছে কিনা তা পরীক্ষা করাও ক্রমাগত কঠিন হয়ে উঠছে। কেননা এখনও পর্যন্ত আমাদের জানা মতে অন্যান্য প্রাযুক্তিক সভ্যতার সাথে আন্ত:নাক্ষত্রিক যোগাযোগের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য চ্যানেল হলো হাইড্রোজেন পরমাণুর বেতার বর্ণালী রেখা দ্বারা চিহ্নিত অঞ্চলটি। এটা ১.৪২ শতকোটি হার্জ ফ্রিকুয়েন্সির নিকটবর্তী অঞ্চল। উল্লেখ্য বিশ্বে হাইড্রোজেনই সবচেয়ে বেশি পরিমাণ বিদ্যমান। আমরা কেবল বহির্জাগতিক বেতার সংকেতগুলো শোনার চেষ্টা করছি। পার্থিব বেতার প্রযুক্তির অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি হয়তো দূরবর্তী জগতের বুদ্ধিমান প্রাণীদের কাছ থেকে আগত বেতারবার্তার আহ্বান হতে আমাদের বঞ্চিত করতে পারে। ফলে তাদের সুরধ্বনিগুলো উত্তরবিহীন অবস্থায় ফিরে যাওয়া বিচিত্র নয়।
    আমরা এর থেকে আরো খারাপ কাজ করেছি, আর তা হলো আমরা আজও মৃত তিমির শরীর নিয়ে ব্যবসা করি। মানুষেরা তিমি শিকার করে এবং তা থেকে তৈরি উৎপন্ন লিপস্টিক ও ইন্ডাসট্রিয়াল লুব্রিক্যান্ট বাজারজাত করে। অনেক জাতি এটা বোঝে যে, বুদ্ধিমান প্রাণীদের ক্রমাগত হত্যা হল ভয়ঙ্কর অন্যায় কিন্তু এ ব্যবসা তারপরও চলছে। প্রধানত জাপান, নরওয়ে তারপর সোভিয়েত ইউনিয়ন (বর্তমানে অনেকগুলো ভাগে বিভক্ত) এ ব্যাপারে এগিয়ে আছে। আমরা মানুষেরা বহির্জাগতিক প্রাণীদের সাথে যোগাযোগের ব্যাপারে উৎসাহী। তারা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি উন্নত হলে আমাদের সঙ্গে তাদের আচরণ নিয়ে আমরা আতঙ্কিত। অথচ আমরা এই পৃথিবীতে অপেক্ষাকৃত কম বুদ্ধিমান প্রাণীদের সঙ্গে কী আচরণ করছি? পার্থিব বুদ্ধিমত্তা, ভিন্ন-ভিন্ন সংস্কৃতি ও ভাষার মানুষের সাথে, বৃহ্‌ৎ নরবানরদের সাথে, ডলফিনের সাথে বা সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে অতলের বুদ্ধিমান নায়ক, বিশাল তিমির সাথে শুভ যোগাযোগ কী ঘটবে না, কোনোদিনও!

    ভয়েজার মহাকাশযান তিমির নি:সঙ্গ গানের সুরের রেকর্ড নিয়ে আন্ত:নাক্ষত্রিক সভ্যতার উদ্দেশে ছুটে চলেছে
    আমরা তিমিদের রক্ষার ব্যাপারে ভাবা শুরু করেছি তাদের বিলুপ্তির সন্ধিক্ষণে এসে। আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগেও প্রায় ১ লক্ষ ২৫ হাজার হাম্পব্যাক তিমি ছিল কিন্তু তিমি শিকারিদের হাতে ক্রমাগত নিধন হতে হতে প্রায় ৯৫ শতাংশ কমে আসে। বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যিকভিত্তিতে তিমি শিকার বন্ধ হওয়ায় এদের সংখ্যা বেড়ে ৩০ হাজারে দাঁড়িয়েছে। এটা আশার কথা। কিন্তু সাম্প্রতিক অনেক দেশ এখন বৈজ্ঞানিক কাজের ওজরে এবং গোপনে প্রচুর তিমি নিধন করছে। এছাড়াও যেভাবে আমরা সাগর-মহাসাগর ধ্বংস করে ফেলছি, যেভাবে হারপুনের স্থলে জায়গা নিয়েছে দূষণ, তাতে মনে হয় তিমির অস্তিত্ব রক্ষায় এই পথটা আরও ভয়ঙ্কর হবে। যদি আমরা অবহেলা করি তেলের ট্যাংকার থেকে তেল ছলকিয়ে পড়া, শিল্প-কারখানার মাধ্যমে দূষণ বা সংক্রামিত করার বিপদকে এবং সাধারণ মানুষের মনোযোগহীনতাকে, তাহলে কোনোভাবে তিমিকে রক্ষা করা যাবে না। যদি ঐরকম দিন কখনো আসে, তাহলে এই নিদারুণ সুন্দর গান যা ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের সাউন্ড শিটে শুনছি, সেই কণ্ঠস্বর সাগর থেকে আসবে না, আসবে অতীত থেকে।

    ছবি : সায়ন করভৌমিক
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ইস্পেশাল | ০১ অক্টোবর ২০১০ | ৪৮৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে প্রতিক্রিয়া দিন