এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  স্মৃতিকথা

  • হারিয়ে যাওয়া কোলকাতার গল্পঃ পর্ব ৬

    Ranjan Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | স্মৃতিকথা | ০১ জুন ২০২১ | ২৮৩২ বার পঠিত | রেটিং ৪.৫ (২ জন)
  • | | | | | | | | | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬
    দিল্লি শহর যাবার রাস্তা

    বোম্বা্ই মেলে চড়ে বসেছি। গন্তব্য –– পুণে শহরের কলেজ অফ এগ্রিকালচারাল ব্যাংকিং।
    মাথায় নানান চিন্তা; অচেনা জায়গার অস্বস্তি, ঘরে ছেড়ে আসা বৌ–বাচ্চার ভাবনা, চিন্তার কি আর শেষ আছে? হাতের পেপারব্যাকে মন বসছে না।হঠাৎ চোখ গেল কয় জোড়া বিদেশি দম্পতির দিকে – কটা রং, বেড়ালচোখো, নীলচোখো,তামাটেচুলো, কিন্তু সবাই খুব ফরসা। লালচে, ফ্যাটফেটে, হলদেটে –– নানান কিসিমের।

    আমেরিকান? ইংরেজ? –– না, না, রাশিয়ান। সবাই ভিলাই ইস্পাত কারখানার স্টাফ। বর্ষশেষের ছুটিতে চলেছে গোয়ার সমুদ্রতীর, সপরিবারে। বই মুখে ধরে আড়ে আড়ে ওদের দেখতে থাকি।
    বেশ খেতে পারে ওরা। সন্ধে পেরিয়ে গেলে সবা্ই একজায়গায় গোল হয়ে খেতে বসলো। দু'একজন দাঁড়িয়ে। দু-হাতে ধরে গাঁউ গাঁউ করে চিকেন খেল, পাকা পাকা টম্যাটো গোটা গোটা খেয়ে ফেলল। শেষপাতে দ্ইমিষ্টি খাওয়ার মত ছোট ছোট লালচে প্লাস্টিকের থিম্বলে করে ওয়াইন খেল সবাই। তারপর মেয়েমদ্দ সবাই মিলে গান জুড়ল। সে কি গান!
    ভাষা বুঝিনে, কিন্তু এসি কোচের জানালার বন্ধ কাঁচে ধাক্কা খেয়ে সে গান ফিরে এসে আমার বুকের কোন ঘুমিয়ে থাকা অজানা ব্যথায় হাত রাখল। দু–তিনটে গানের পরে সুর–তাল যেন একটু বদলে গেল। গান যেন একটু চটুল,একটু লচকদার। দুয়েকজনের শরীরে নাচের দোলা।
    ভাব করলাম স্মিতমুখে একপাশে বসে থাকা দলের নেতা রুপোলি চুলের কিরিলেংকোর সঙ্গে।পাশে বসে পেপারব্যাকের পাতা ওলটাতে থাকা শ্রীমতী কিরিলেংকো এগিয়ে দিলেন গরম চায়ের কাপ। গল্প জমে উঠল।
    বললাম –– রুশসাহিত্যে গাঁয়ের বাড়িতে আগুনের পাশে বসে গোটা পরিবারের একসংগে গান গাওয়ার সেই ট্র্যাডিশন দেখছি আজও বেঁচে আছে!
    –– আছে আবার নেইও। সুর ও ভাষা বদলেছে। নতুন প্রজন্ম ডিস্কোয় যায়। ওদের পছন্দ পপ,জ্যাজ, রকব্যানড।
    আগের মত ব্যালাড গাইতে চায় না।
    –– তাহলে রাজকুমারী ভাসিলিসা, আলিউস্কা দিদি ও ইভানুস্কা ভাই, বোকা ইভান, শিসে ডাকাত সলভে্ই –– এরা সব হারিয়ে গেছে বলছেন?
    –– প্রায়; আসলে পাশ্চাত্য জীবনশৈলীর প্রভাব ইদানীং খুব বেড়ে গেছে। আমি জর্জিয়ার লোক, এশিয়ান। স্তালিনের দেশের। আজকের শব্দাবলীতে আমি কনজারভেটিভ। ছাড়ুন ওসব কথা। আপনার কথা বলুন। সবাই মিলে গোল হয়ে গান গাওয়া তো এশিয়াটিক ট্র্যাডিশন। গ্রামজীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। আপনারাও হয়তো বাড়িতে গেয়ে থাকেন?

    বাড়িতে গান গাওয়া? সবাই মিলে? –– ও ভাই কানাই, কারে জানাই?
    আর সবাই মিলে গান? শহর কোলকাতায়? অসম্ভব। পাড়ার লোকে ভিড় করে জানতে চাইবে কী হয়েছে। কোলকাতাকেই বা কেন দোষ দিই? ছত্তিশগড়ের ভিলাই বা বিলাসপুর হলেও একই ব্যাপার। গলা ছেড়ে গান গাইতে চান, তো বাথরুমে যান। বাঙালির মাথায় জল পড়লেই গলা দিয়ে গান বেরয়। যদি সবাইকে শোনাতে চান তো একগাদা গানের ফরমাইশি চ্যানেল আছ, সিডি–এমপিথ্রি প্লেয়ার আছে, নিদেনপক্ষে এফ এম ব্যান্ড আছে। খামোকা বাড়িশুদ্দু মেয়েমর্দ মিলে চেঁচিয়ে গান গাইতে হবে কেন?
    আমরা যে শহুরে! মেপেজুকে বেশ হিসেব করে কথা বলি। কোন ইমোশনকে্ই উঁচু গ্রামে খেলাতে পছন্দ করি না। চেঁচিয়ে গান গাওয়াটা যে নেহাৎ গেঁয়ো ব্যাপার।
    কিন্তু যখন গ্রাম থেকে শহরে এসেছিলাম?
    আমি, মানে আমরা? অর্থাৎ আমাদের বাপদাদারা?
    মনে মনে পুরনো এ্যালবামের পাতা উল্টে যাই।

    পঞ্চাশের দশক।

    কোলকাতার পার্কসার্কাস এলাকায় ধাঙড় বাজারের সামনে দোতলায় তিনকামরার ভাড়া বাড়ি। ঘর, ছাদে চিলেকোঠা আর সিঁড়ির বাঁকে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে থাকা বাইশজনের সংযুক্ত পরিবার।
    দেশভাগের ধাক্কায় পালিয়ে এসেছে বটে কিন্তু ভাগাভাগিটা মন থেকে মেনে নিতে পারেনি। এক চিলতে আশা এখনো মনের কোণায় টিমটিমিয়ে আছে যে রাজনীতির উলটো ঢেউয়ে হয়তো কখনো ফেরা যাবে পূর্ব পাকিস্তানের ময়মনসিংহ জেলার মানিকখালি রেলস্টেশনে নেমে আঠারবাড়িয়া বা বাজিতপুর গাঁয়ে।
    সেখানে আটচালা বাড়ির উঠোনে নাটমন্দিরের সামনে ভোরবেলায় বাবর আলি মুন্সির লালঝুঁটি মোরগের গর্বিত বাং দেওয়া বন্ধ হবে; সন্ধ্যেবেলা আবার শোনা যাবে গোবিন্দদাসের পদ -- ভজহুঁ রে মন, শ্রীনন্দনন্দন অভয়্চরণারবিন্দ রে।
    ঠাকুমার চোখে ঘোর লেগেছে, মনে মনে পৌঁছে গেছেন গোবিন্দজীউয়ের সন্ধ্যারতির সময়ে। ত্রিপুরার পত্তনের গোস্বামীদের বংশপরম্পরায় দীক্ষিত যজমানবাড়ির বৌ। কারা যেন খোল-করতাল বাজিয়ে গান ধরেছে -- 'কেন হে মুরারি, এ মায়া বিস্তারি, জীবের সুখের তরি, কর নিমগন?'

    গলাটা যেন চেনা চেনা লাগে! মেজজামাই যতীন দত্তের গলা কি? ঘোমটা দিয়ে সরে যাবার চেষ্টা করতেই সম্বিত ফিরল।
    পার্কসার্কাসের বাড়িতে সন্ধ্যে নেমেছে। বড়ছেলে ফৌজি আদমি, ফোর্ট উইলিয়াম থেকে ডিউটি করে ফিরেছে। আছে খোশমেজাজে, কারণ আজই মাসপয়লা। মাইনে পেয়ে বাবার হাতে তুলে দিতে পেরেছে মাসের সংসার খরচের লেভি। ফলে গলায় খেলছে -- 'কেন হে মুরারি---' সঙ্গে মেজজামাইয়ের দোয়ারকি-- 'দিলে অনল জল, রসাল ধরাতল, দিলে না মোক্ষফল বিপুল ধরায়!'
    সরযূবালা অফিসফেরতা বড়ছেলে ও জামাইয়ের জন্যে চা নিয়ে এলেন। মনটা খুশি খুশি। কালকে মাসের বাজার হবে, ফর্দ বানাতে হবে। দু'মাস পরেই দুর্গাপূজো। বাকি ছেলেরা বোনাস পেলে পূজোর কাপড় কেনার কথা ভাবা যাবে।
    সরযূবালার আটছেলে, চারমেয়ে।
    ছোটছেলে এ বছর কলেজে গেছে। পাঁচছেলে চাকরি করছে, দু'জন বাংলার বাইরে। পূজোতে ঘরে ফিরবে। কিন্তু গানটি ওনার পছন্দ নয়।
    উনি গুনগুনিয়ে ধরলেন অতুলপ্রসাদ -- 'চোখ বেঁধে ভবের খেলায় বলছ হরি আমায় ধর'। বড়লোক মামাতো ভাইয়ের বাড়িতে শোনা কলের গান।
    ওনার গলায় সুর আছে, কিন্তু একটু নাকী নাকী, একটু চাপামত। তবু রেণুকা দাশগুপ্তের নকল মন্দ হয় নি।
    হঠাৎ গান থেমে গেল।দরজা ঠেলে হাসিমুখে ভেতরে ঢুকছেন মেজছেলে বিজন, হাতে ঝোলানো মস্ত এক ইলিশমাছ।ব্যারাকপুর থেকে সপ্তাহ শেষে বাড়ি ফেরার সময় শেয়ালদা’ স্টেশনের পাশ থেকে কেনা। অতবড় মাছ দেখে বাঙালবাড়িতে এমন হৈচৈ শুরু হল যেন ইস্টবেঙ্গল জিতেছে।
    স্কটিশে বাংলার ছাত্র ছোটছেলের কবি কবি ভাব। সে আওড়াতে লাগল বুদ্ধদেব বসু–‘ইলিশ, ইলিশ! আজ ইলিশ উৎসব’।
    কিন্তু এ’ধরনের ‘এই গরু সরোনা’ ঢংয়ে ইলিশবন্দনা বাঙালবাড়িতে একেবারে বেমানান। কাজেই চতুর্থভাই শৈবাল দরাজ মেঠো গলায় গেয়ে উঠলেন –– ‘আরে ইলশা রে, ছাওয়াল কান্দাইলা মাছ, অতিথ খাওয়াইলা মাছ, শাশুড়ি ভুলাইলা মাছ, ইলশা রে’!
    চা’ দিতে এসে বড়বৌদি ঘোমটার ফাঁক দিয়ে ফরমাশ করে গেলেন –– সেজঠাকুরপো’ যেন সদ্য মুক্তিপাওয়া ছবিটিতে আব্বাসউদ্দিন সায়েবের গাওয়া পূববাংলার লোকগীতিটি শোনাতে না ভোলেন! ওই যে ‘কচুর শাক উইঠ্যা বলে আমার চিরা পাতা, আমারে খাইতে লাইগে ইলশামাছের মাথা’।
    ইতিমধ্যে সেজছেলে বিনয়কুমার উষা সেলাইমেশিনের কারখানার থেকে ডিউটি করে ফিরেছেন। সদ্য যাদবপুর থেকে পাশ করে চাকরি পেয়েছেন, কিন্তু এখনও কোলকাতার রং পুরোপুরি ধরেনি; দোমাটির কাজ চলছে।
    জুলাই মাসের গুমোট।একটা সেকেন্ডহ্যান্ড ডিসি পাখা বাড়ির বিশ্বস্ত বুড়ো চাকরের মত ধীরে ধীরে চলছে।
    ফলে উনি এসেই ধড়াচুড়ো ছেড়ে লুঙ্গি পরে ঘরের মেজেতে, বাঙালভাষায় যাকে বলে ‘ল্যাডা মাইরা’, বসে পড়েছেন।চেহারায় ফুটে উঠছে ঘামের বিন্দু। হাতে হাতে ঘুরছে তালপাতার পাখা। এবার বিনয়ের চোখ পড়ল দুধের গেলাস নিয়ে ‘কুয়ারা’ করতে থাকা আদরের ভাইপোর দিকে। কোলে টেনে নিয়ে বললেন –– ‘ই’ কে দেখ ইলিশমাছের পাশে, ইলিশমাছের গন্ধ পেলে ––?
    –‘জিভেতে জল আসে’; প্রত্যাশিত পাদপূরণ করল আদরে–বাঁদর–হওয়া চারবছুরে ভাইপোটি।
    ঠাকুরপো’র ইশারা ধরতে বৌদির দেরি হয় নি। তাই চায়ের সঙ্গে একপ্লেট মাছভাজা এল। বাইরে গুমোট থাক, ঘরের গুমোট কেটে গেছে। বিনয় মুডে এসে গেলেন। সকলের অনুরোধে গেয়ে দেখাতে লাগলেন যে একবার আকাশবাণীর স্টাফের ভুলে পংকজ মল্লিক মশাইকে পল্লীগীতি গাইতে বাধ্য হওয়ায় কিভাবে ‘নিশীথে জাইও ফুলবনে ও ভ্রমরা’ কে ‘নিশীথৈ যেও ফুলবোনে ও ভোমরা’ করে গেয়েছিলেন।
    হঠাৎ রসভংগ হল। খুদে ভাইপোটি বেগ সামলাতে পারেনি, ভিজিয়ে দিয়েছে মেজকাকার লুঙ্গি; অপ্রস্তুত কাঁদো কাঁদো চেহারা। কিন্তু ওকে বকাঝকা চলবে না। বদলে ছোটকাকা হাসিমুখে গেয়ে উঠল আব্বাসউদ্দিনের ভাটিয়ালি –– ‘ আমায় ডুবাইলি রে, আমায় ভাসাইলি রে; অকূলদরিয়ায় বুঝি কূল নাই রে!’

    ভাটিয়ালির নদীপথ ধরে ওরা ফিরে গেলেন ধনু আর মেঘনা নদীর নৌকোবাইচের দিনগুলিতে – বাইচের জন্যে বিশেষ ভাবে তৈরি নৌকো, গাবের আঠা আর গলুইয়ের নকশা এবং পরিবারের ম্যানফ্রাইডে মোম আলি ওরফে লাউয়া মিঞার কথায়। বাড়ির পুরনো চাকর লাউয়া আবার সরযূবালার ছেলেদের কানমলে দেওয়া সেল্ফস্টাইলড্ অভিভাবকও ছিলেন।
    নিরক্ষর মিঞার রসবোধ অসাধারণ। কোলকাতায় ইঞ্জিনিয়ারিং পাঠরত বিনয় ছুটিতে দ্যাশের বাড়ি গেলে মিঞা ওঁকে একটি চিঠি পড়ে দিতে বললে বিনয় লম্প নিয়ে আসতে বলেছিলেন, সাঁঝের সময়।
    মিঞার চোখ কপালে –– এইডা কি কইল্যা? লম্প ছাড়া চিঠি পড়তে পার না? কইলকাতায় গিয়া পয়সা দিয়া পড়, নাকি ধান দিয়া?
    পুরনো স্মূতি মনে করে বিনয়কুমারের চোখ ভিজে যায়। অন্যভাইয়েরা শুরু করে।
    নৌকোর গলুইয়ে চড়ে কূষ্ঞলীলার গানের সঙ্গে মিঞার দু’হাতে করতাল বাজিয়ে কোমর দুলিয়ে নাচ ছিল দেখার মতন।
    বাইচের শুরুতে গান লীড করতেন মিঞা:
    ‘যাত্রা করিয়া মোরে বিদায় দে!
    ও মা যশোদা, মাগো যশোদারাণী,
    কালীদহে যাব আমি’।
    ‘কালীদহে’ শব্দে সমে আসার সাথে সাথে দশজোড়া বৈঠা একসাথে উঠতো আর পড়ত।
    (কাকাদের সম্মিলিত বর্ণনায় খুদে ভাইপোটির চোখে ঘোর লাগে। সে শুনতে থাকে গান, দেখতে পায় উত্তাল মেঘনার বুকে নৌকোদৌড়ের চলচিত্র। বহুবছর পরে টিভির পর্দায় মৈমনসিংহের দিনেন্দ্র চৌধুরির গানের দলের সাজগোজ করা গুডবয় গায়কদের কোরাসে ওই গান শুনে সে উদ্দীপনা হল কই?)
    পা’ টিপে টিপে বাড়িতে ঢুকেছে ভাগ্নে তপন; সসংকোচে পেরিয়ে যাচ্ছে সরু বারান্দা। সংকোচের যথেষ্ট কারণ আছে, ক্লাস এইটের ছেলের বাড়ি ফেরার পক্ষে রাত একটু বেশি বটে। সামলে দিলেন চতুর্থ ভাই, তপনের মামামণি। উঁচু গলায় হাঁক পাড়লেন –– বৌদি, তপন আইছে, আর একবার মাছভাজা!
    তারপর বড়দের তর্জন–গর্জন শুরু হওয়ার আগেই গান ধরলেন:
    ‘আইবা নি গো, বইবা নি?
    দাওয়াত কবুল করবা নি?
    আমার বিবি রাইন্ধা থইছে
    মস্ত খাসির বিরিয়ানি’।

    গরম বড্ড বেশি, সবার গায়ে প্যাচপেচে ঘাম; হাতপাখাদের দ্রুত হাতবদল হছে। খুদেটা ঘ্যানঘ্যান শুরু করেছে, ওর চাই ‘পত্রিকা বাতাস’। সবাই একমত হলেন যে তাড়াতাড়ি বূষ্টি না নামলে রক্ষে নেই। এই সম্মতি প্রকাশ পেল সরু মোটা নানান গলার কোরাসে ––

    ‘চাচি গো,আমি মৈলাম গো,
    বড় দায়ে ঠেকাইছে আল্লা!
    ম্যাঘে দেয় না পানি, কি করি গো নানি,
    ক্ষ্যাত হইলো ফুটিফাটা গো,
    বড় দায়ে ঠেকাইছে আল্লা’!

    বড়ছেলে শংকরের খিদে আর বাগ মানছে না। ইলিশমাছ বলে কথা, তায় রান্নাঘর থেকে সিগন্যাল এসে গেছে।
    – সভাভংগ হোক, সবাই খেতে চল।
    বাদ সাধলেন বড়দি – না, না। আগে বাচ্চারা খাবে, তারপর বড়রা।সবার একসংগে বসে খাবার মত জায়গা কই? একি দ্যাশের বাড়ি যে ঢালা পাত পড়ব?
    ফলে খিদে ভুলতে মোক্ষম দাওয়াই –– আবার একদফা গান, গাজনের সন্ন্যাসীদেরম মত।
    আজকের শেষ গান, একটু আধ্যাত্মিক। এবার লীড করবেন সরযূবালা ও বকুল, মা ও মেয়ে একসংগে; ছেলেরা দোহার ধরবে।

    ‘সে কি তোমার মত, আমার মত, রামার মত, শ্যামার মত?
    ডালাকুলো ধামার মত পথে ঘাটে দেখতে পাবে!
    হাটবাজারে বিকোয় না সে,
    থাকে নাকো গাছে ফলে,
    সে যে দিল্লিশহর নয় যে রাস্তা
    করিমচাচা দেবে বলে!’

    গান চলতে থাকে, সরযুবালার খুদে নাতিটি তন্ময় হয়ে শোনে। তার মগ্নচৈতন্যে ঢুকে যায় –– এক যে আছে দিল্লি শহর যার রাস্তা শুধু করিমচাচাই জানে।

    এতদিনেও দিল্লিশহর পৌঁছুতে পারিনি, করিমচাচার ঠিকানাই যে পাইনি। আজও খুঁজে চলেছি।

    ট্রেন মুম্বাইয়ের ছত্রপতি শিবাজি টার্মিনাসে ঢুকছে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    | | | | | | | | | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬
  • ধারাবাহিক | ০১ জুন ২০২১ | ২৮৩২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • প্রকাশ | 2405:8100:8000:5ca1::69:***:*** | ০২ জুন ২০২১ ১১:৩৫494455
  • বৃন্দা ফন্ট নিপাত যাক!

  • আচ্ছা | 2405:8100:8000:5ca1::45:***:*** | ০২ জুন ২০২১ ১২:১৫494456
  • এই পর্বগুলো এরম খাপছাড়া কেন? ১,... ৬অব্ধি সুতোয় গেঁথে দিলে ভাল হয়। খুঁজে পড়তে খুব অসুবিধে। এখন যেমন ৪ খুঁজে পেলাম না।

  • বিপ্লব রহমান | ০২ জুন ২০২১ ১৬:২৯494469
  • সত্যিই বাঙালি জীবনে গান এখন মোবাইল ফোনে বন্দী। ফনটটি খুব দৃষ্টি বান্ধব নয়। তবে লেখা ভাজা ইলিশের মতোই মুচমুচে ও সোয়াদে ভরপুর । ~ এই খোপে এপারের সিলেটের একটি জনপ্রিয় গান রেখে যাই। শুভ 
  • ডা. মো. রুমী আলম, ঢাকা। | 37.***.*** | ০২ জুন ২০২১ ১৬:৪৫494471
  • ঝগড়াঝাটি শুরু হবার আগে আমাদের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট কেমন ছিল তা নিয়ে আরো বিস্তারিত লেখা প্রয়োজন। কারণ এই প্রজন্ম চলে গেলে সবাই ইতিহাস হাতড়াবে, স্মৃতি-কথা বলার কেউ থাকবেনা। 

  • Indranil | 202.78.***.*** | ০২ জুন ২০২১ ১৭:১২494472
  • এগুলো পরবাস এ আগেই  পড়েছি 

  • Ranjan Roy | ০২ জুন ২০২১ ২২:৪৭494492
  • কোন ফন্ট পছন্দ? আগে সোলায়মান লিপিতে লিখতাম, চলবে?

  • বিপ্লব রহমান | ০৪ জুন ২০২১ ০৯:১৭494536
  • সোলায়মান লিপি বেশ ভাল। তবে আমার সব লেখালেখি কালপুরুষে। এটি অতি চমৎকার


    ধন্যবাদ

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন