এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  স্মৃতিকথা

  • হারিয়ে যাওয়া কোলকাতার গল্প (১৯৫০-৬০) : ১৩শ পর্ব

    Ranjan Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | স্মৃতিকথা | ২৯ জুলাই ২০২১ | ৩১৪৫ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  • | | | | | | | | | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬
    (১০) কমিউনিস্ট পার্টি, মণিমেলা ইত্যাদি

    ছাদের পাঁচিল টপকে পাশের ছাদে গিয়ে খেলার সময় কখনও টের পাই নি যে দু’একটা কুচোকে বাদ দিলে বেশিরভাগই আমাদের দু’ভাইয়ের থেকে বয়সে বড়। ক্রমশঃ ওদের মুখের ভাষা বদলাতে লাগল। আমরা নতুন নতুন শব্দ শুনে ভোকাবুলারি বাড়াতে লাগলাম। যেমন, তিনক্লাস উঁচুতে পড়া নন্টে হয়ত ঝগড়া হলে ফন্টেকে বলল — যা না , এখানে টাইম পাস না করে নিজের মালের পেছনে ছোট্ !

    এখানে ‘মাল’ বলতে শুধু একজন মানুষই নয় কোন বিশেষ মেয়েকে বোঝানো হচ্ছে সেটা মাথায় ঢুকতে একটু সময় লাগল। সেকন্ড জেন্ডারের অবজেক্টিফিকেশন! তার পাঠ ওই বয়সেই পেয়ে গেলাম। আরও অনেক নতুন শেখা প্রাকৃত শব্দ আমাদের জিভের ডগায় উসখুস করছে, মুখগহ্বর থেকে বেরিয়ে আসতে ঠেলাঠেলি করছে।

    এক সন্ধ্যেয় আমরা ছাত থেকে নেমে বাথরুমে হাত পা ধুচ্ছি, মেজকা এসে দুজনের কান ধরে রান্নাঘরে মা-কাকিমার পার্লামেন্টে হাজির করল।

    -- বৌদি, এই আপনার দুই শ্রীমান। বড়জন ছূটরে কয় — হারামজাদা! আর ছুট বড়রে কয় শালা!

    পারিবারিক পার্লামেন্টে গুরুগম্ভীর আলোচনার পর ঠিক হল এদের ছাদের খেলা বন্ধ, কিন্তু এই বয়সে খেলাধূলো দরকার; যাবে কোথায়? পিসতুতো দাদা তপন বলল — ট্রামরাস্তার ওপরেই আছে একটা মাঠ, সেখানে বসে জয়ন্তী মণিমেলা, রোজ বিকালে।

    ঘোর আপত্তি। মণিমেলা? ওই আনন্দবাজারের সাপ্তাহিক ছোটদের পাতায় মৌমাছি নামে বিমল ঘোষের যে সংগঠন? হেইডা ত কংগ্রেইচ্ছা কারবার।

    বাড়িতে চারকাকা ও ছোটপিসি কমিউনিস্ট। ওদের বাড়ির বাচ্চারা কংগ্রেসি আড্ডায় যাবে? কী শিখবে? এ তো প্রায় গোহত্যা ব্রহ্মহত্যার মত পাপ!

    অবশ্য কমিউনিস্ট বাচ্চাদের ‘সুশিক্ষা’ দেবার জন্যে আছে ‘কিশোর সভা’। সম্ভবতঃ অকাল প্রয়াত কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য শুরু করেছিলেন। স্বাধীনতা পত্রিকায় তারও একটা সাপ্তাহিক পাতা ছিল। এখন বুঝি, স্ট্যান্ডার্ড বেশ ভাল ছিল। তাতে প্রত্যেক সপ্তাহে ‘বলতে পারো’ নামে একটা কুইজের কলাম ও ছিল। একটু বড় হয়ে জেনেছি ওই নামটা সুকান্ত’র লেখা একটি গানের প্রথম পংক্তি থেকে নেয়া — “বলতে পারো বড়োলোকে মোটর কেন চড়বে? আর গরীব কেন সেই মোটরের তলায় চাপা পড়বে?”

    কিন্তু বাড়ির কাছে কিশোর সভার কোন শাখা নেই। যুগান্তর পত্রিকায় চলত ‘সব পেয়েছির আসর’, পরিচালক স্বপনবুড়ো, আসলে অখিল নিয়োগী। তারও কোন শাখা কাছেপিঠে নেই। শুকতারা পত্রিকায় বেরত ‘দাদুমণির চিঠি’ -- লিখতেন নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়। ছোটদের জন্যে অনেক বই এবং অনুবাদ আর বড়দের জন্যে নাটক এবং সিনেমার রিভিউ লিখে উনি তখন সুখ্যাত। ওঁর ‘রুশ গেরিলার কাহিনী’ পড়ে কয়েকদিন ঠিকমত ঘুমুতে পারি নি। কিন্তু ওঁর কোন সংগঠন ছিল না ।

    তবে মেজদা তপন বাঁচিয়ে দিল। বলল মণিমেলার অফিস এবং লাইব্রেরি বালু হক্কাক লেনে শঙ্খনিধি পরিবারের বাড়িতে। বড় বাড়ি, সেই বাড়ির সামনের দিকেই বড় ঘর ভাড়া করে অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির অফিস, কাছেই কমিউন। এরপর আর কোন কথা চলে! এভাবেই আমাদের শৈশবে মণিমেলা এবং কমিউনিস্ট পার্টি কেমন করে যেন জড়িয়ে গেল।

    শঙ্খনিধি মশায় ঢাকার শাঁখারিপাড়ার আদি নিবাসী। সেখান থেকে এসে এই মুসলিম পাড়ায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলমান পরিবারের সংগে সম্পত্তির অদলবদল করে এই বাড়িটির দখল পান। এর সামনে একটি প্রাচীন মাজার। দুটো বাড়ি পরে ঝাউতলা রোডের কোনায় নাফিসা আলিদের অভিজাত বাড়ি। নাফিসা আলি সাঁতারে চ্যাম্পিয়ন, প্রাক্তন ভারত সুন্দরী এবং শ্যাম বেনেগালের জুনুন সিনেমার অন্যতম নায়িকা। বর্তমানে মানবাধিকার আন্দোলন এবং দিল্লি কংগ্রসের অ্যাক্টিভিস্ট। ঝাউতলা রোড ধরে একটু এগিয়ে নাসিরুদ্দিন রোডে বিখ্যাত জুরিস্ট সৈয়দ আমির আলি সাহেবের নাতি ব্যারিস্টার মামুন সাহেবের বড় বাড়ি। তারই একভাগে থাকতেন শম্ভু মিত্র তৃপ্তি মিত্র আর সেখানেই বহুরূপী দলের রিহার্সাল হত। আর মামুন সাহেবের বাড়ির একাংশে ছিল কমিউনিস্ট পার্টির কমিউন। বাঁদিকে পার্ল রোডে আসাদ মেডিকেল হলের ডাক্তার গণির অভিজাত ঘরানার বিশাল বাড়ি। সেখানেই থাকতেন লেখক সৈয়দ মুজতবা আলি এবং দর্শনের অধ্যাপক এবং রবীন্দ্র-বিশেষজ্ঞ আবু সয়ীদ আয়ুব।

    আমরা বাচ্চারা তখন কি ছাই অতশত বুঝতাম! আমরা আকর্ষণ কেন্দ্র ছিল রাস্তার কোণায় কাজিসাহেবের ডেইলী নীডস (তখনকার ভাষায় মনিহারী) এর দোকান। ঝাঁকড়াচুলো হেঁড়েমাথা চশমাচোখে কাজিসাহেব যেন নজরুলের পিঠোপিঠি ভাই। সেখান থেকে ব্রিটানিয়া কোম্পানির নানান রঙের ক্রিম বিস্কুটের টিন ন’কাকার নামে লিখিয়ে নিয়ে আসতাম। দোকানের পাশেই মর্ডান স্পোর্টিং ক্লাবের ক্লাবঘর, সেক্রেটারি ন’কাকা। হেভি ঘ্যাম। কোলকাতা ইউনিভার্সিটির শতবার্ষিকী উদযাপন কমিটির সেক্রেটারি। এই ক্লাবের জন্যে চ্যারিটি শোতে আনল ঋত্বিক ঘটকের ‘মেঘে ঢাকা তারা’। মা-কাকিমা-পিসিমণি-দিদিভাই গেলেন, কিন্তু টিকিট কেটে।

    পাশেই রয়েছে পার্ক ইউনিয়ন ক্লাব। দুই ক্লাবে অহি-নকুল সম্পর্ক। দুটোই বাঙাল, কিন্তু মডার্ন স্পোর্টিং কমিউনিস্ট, পার্ক ইউনিয়ন কংগ্রেস।

    এছাড়া ছিল পার্ক ইউনাইটেড ক্লাব, তারক দত্ত রোডে শিশুবিদ্যাপীঠ গার্লস স্কুলের কাছে। এই দুটো ‘পার্ক’ ক্লাবের আলাদা করে দুর্গাপূজো, কালীপূজো, সরস্বতী পূজো হত । কিন্তু এদের মধ্যে রেষারেষি মারপিট লেগেই থাকত। এতে আমাদের বয়সের বাচ্চাদের বীরপূজোর মশলার যোগান হত । যেমন কাল ভোরে ইউনাটেডের মনুদা দু’হাতে দুটো বাঁশ ঘোরাচ্ছিল, তাতেই ইউনিয়নের গুন্ডারা পিটটান দিয়েছে। ব্যস, মনুদা বীর।

    কিছুদিন পরে খবর ছড়িয়ে পড়লো যে কালীপূজোর ভাসানের মিছিলে ইউনিয়নের মনাদা ইউনাইটেডের তিনটে গুন্ডাদের একা পিটিয়েছে। ব্যস, মনাদা মহাবীর।

    এসবের বাইরে ছিল পুরনো অভিজাত ক্লাব — পার্ক ইন্সটিট্যুট, নাসিরুদ্দিন রোড ধরে থিয়েটার রোড (আজক্বের শেক্সপীয়র সরণী) যাওয়ার পথে। বড় ক্লাব ঘর, বড় পূজো।

    সবচেয়ে অর্বাচীন ক্লাব মডার্ন স্পোর্টিংয়ের গর্ব ছিল ওর লাইব্রেরি আর কালচারাল ফাংশন।

    তবে পার্ক ইউনিয়নের সঙ্গে তিক্ততার মূল রয়েছে পাঁচ বছর আগের একটি ঘটনায়। মডার্ন স্পোর্টিং ক্লাবের ডাকসাইটে সেক্রেটারি কম্যুনিস্ট ছাত্রনেতা তুষারকান্তি তখন ক্লাস নাইনে পড়েন। ছাদে বসে পরীক্ষার পড়া করার সময় দেখলেন একটা কাটা ঘুড়ি লাট খেতে খেতে ছাদে এসে পড়ল। একটু পরে দুদ্দাড় করে সিঁড়ি ভেঙে একটি অচেনা ছেলে ছাদে এসে ঘুড়িটির দখল নিল। তুষারকান্তি হতবাক। এভাবে বাড়ির ভেতর ঢুকে পড়ে অজ্ঞাতকুলশীল কারও ছাদে চড়া! এ ত ময়মনসিঙের তালুকদারি মূল্যবোধে স্যাক্রিলেজ! পারিবারিক সম্ভ্রমের লক্ষ্মণরেখা অতিক্রমণ।

    ছেলেটি ওঁর এই অভিযোগে পাত্তা না দিয়ে ঘুড়ি নিয়ে নেমে যাচ্ছিল, তুষার তার কলার চেপে ধরে দু’ঘা দিয়ে ঘুড়ি কেড়ে নিয়ে বিদেয় করলেন।

    একঘন্টা কাটল না, ছেলেটি হাজির হল পার্ক ইউনিয়ন ক্লাব থেকে জনাকুড়ি যুবককে সঙ্গে নিয়ে যার নেতা জনৈক স্বদেশবাবু, এ পাড়ার খোকাদা। বাড়ির সামনে গলির মধ্যে দাঁড়িয়ে শুরু হল হুংকার আর গালাগাল।

    -- কার এত সাহস আমাদের ক্লাবের ছেলের গায়ে হাত তোলে! এতগুলো ভাই বলে কি মাথা কিনেছিস? নেমে আয় হারামজাদারা!

    কেউ নামে নি। তবে চতুর্থভাই শৈবালকান্তি দোতলার রেলিং উপর থেকে গলা বাড়িয়ে বললেন — ও মশাই, আমরা সবাই শ্যাকের লাথি খেয়ে ওপার বাংলা থেকে এসেছি। এখন এপারে এসে নিজেদের মধ্যে মারামারি করব? আর ভীড় নিয়ে এসে তড়পাচ্ছেন? ওয়ান বাই ওয়ান চ্যালেঞ্জে যদি রাজি থাকেন তো বলুন, নিচে নেমে আসছি।

    খোকাদা দ্বৈরথে কোন আগ্রহ দেখালেন না। বিকেলে ফোর্ট উইলিয়মের ডিউটি থেকে ফিরে বড়ভাই সলিলকুমার মাথা চাপড়ালেনঃ আমি কেন বাড়ি এসে শুনলাম না আমার সবকটা ভাই হাসপাতালে ভর্তি? তাইলে গর্বিত হইতাম। বাড়ির সামনে অসভ্যের দল নাইচ্যা কুইদ্যা গেল, আর তরা ঘরের কোনে মাইয়ামাইন্সের মত লুকাইয়া রইলি?

    একজন মিনমিন করে বলল — ঘরে একটা লাঠিও নাই!

    তক্ষুণি সলিল দশটা টাকা দিয়ে বললেন — যাও, কলেজ স্ট্রিটের স্টিক হাউস থেইক্যা আধডজন লাঠি কিইন্যা আন। এক্ষণই যাও!

    লাঠি আসিয়া গেল এবং কনিষ্ঠ ভ্রাতাকুল জ্যেষ্ঠ সলিলকুমারকে নিকোলাই গোগলের উপন্যাসের নায়ক কসাকবীর তারাস বুলবার নামে নন্দিত করিলেন। আমরাও ছোটবেলায় লাঠিগুলার গায়ে হাত বুলাইয়া এবং দাদুর মুখে বাবার মেজাজের গল্প শুনিয়া যুগপৎ গর্বিত এবং ভীত হইতাম। কেমন বাপের ব্যাটা রে তুই! আর্শোলা দেইখ্যা ভয় পাস? সিংহের ঘরে শিয়াল! শুইন্যা রাখ, ওই পার্ক ইউনিয়ন ক্লাব আর অগো সেক্রেটারি স্বদেশ নাকি খুকা, আমাদের পরিবারের শত্রু। ওদের ছায়া মাড়াইবি না ।

    আমার কি দায় পড়েছে! দাদুর অভিশাপের কি জোর! আর পাঁচটা বছর কাটল না, পার্ক ইউনিয়ন ক্লাব উঠে গিয়ে ওখানে জয় হেয়ার কাটিং সেলুন খুলে গেল।

    কিন্তু একদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে চোখে পড়ল ডঃ গণির ডিস্পেন্সারির লাগোয়া একটি ঘরে অনেক নারীপুরুষের ভীড়, মাঝে মাঝে উচ্চগ্রামে হুংকার। কাছে গিয়ে বাইরের জানলায় চড়ে উঁকি মেরে দেখি নাটকের রিহার্সাল হচ্ছে — কেদার রায়। সেই বারো ভুইঞার এক ভুইঞা!

    মাটিতে সতরঞ্চি বিছানো, পাশে অনেকগুলো খালি চায়ের কাপ আর তাতে সিগ্রেটের ছাই। একজন ধবধবে পাজামা পাঞ্জাবি পরা গাঁট্টাগোট্টা কুচকুচে কালো বয়স্ক লোক করছেন কার্ভালহো! – হামি আসিয়াছে রাজা!

    আর ইস্তিরি করা বুশশার্ট প্যান্ট চাঁদ রায় হাহাকার করছেন — সোনা ! সোনামা আমার! (তারপর পতন ও মূর্ছা)।

    তন্বী শ্যামা শিখরিদশনা এক নারী বড় বড় ডালিমচেরা চোখ পাকিয়ে কেদার রায়কে আঙুল তুলে বলছেন — ফিরে যাও কাকা!

    উনি চাঁদ রায়ের মেয়ে সোনা! হিন্দুনারী হয়েও মুসলমান ঈশা খাঁর প্রেমে পড়েছেন!

    কিন্তু সবাইকে ছাপিয়ে যাচ্ছেন সিল্কের পাঞ্জাবি ও ধুতি পরা উস্কোখুস্কো চুল একজন, তাঁর বিকৃত মুখ অস্থির চোখ, নিজের মনে ফিসফিস করে কথা বলা — মেয়েহারা আধপাগলা শ্রীমন্ত। ‘বাতাসের সঙ্গে আগুন আসছে, আমিও যাই, আমিও যাই, আমিও যাই!’

    জানলায় উঠে শিক ধরে দাঁড়িয়ে সাতদিন রিহার্সাল দেখার পরে জানতে চাইলাম উনি কে?

    চিনিস না ? উনিই তো পরিচালক স্বদেশরঞ্জন, মানে খোকাদা। এবার পার্কসার্কাস ময়দানে পূজোর সময় ফাটিয়ে দেবে, দেখিস।

    নাটকটা আর দেখা হল না ।

    ফিরে আসি মণিমেলার গল্পে। কমিউনিস্ট পার্টি অফিসের পাশের গলি দিয়ে ঢুকে বাড়িটার একতলায় শংখনিধি পরিবারের গেঞ্জির কারখানা, দোতলায় ওরা থাকেন, তিনতলায় একটা ঘরে জয়ন্তী মণিমেলার অফিস কাম লাইব্রেরি। মাসে এক আনা (চার পয়সা) করে চাঁদা, আমরা দু’ভাই ভর্তি হয়ে বই নিয়ে এলাম। জুলজুল করে তাকাচ্ছিলাম দেব সাহিত্য কুটিরের প্রহেলিকা সিরিজের বইগুলোর দিকে। কিন্তু মায়ের কড়া নির্দেশ — আলতু ফালতু গল্পের বই নয়, খালি জীবনীগ্রন্থ আনবে, মহাপুরুষদের স্বাধীনতাসংগ্রামীদের।

    যাঃ শালা! আমরা কি জন্মেই দেশমাতৃকার জন্যে বলিপ্রদত্ত ছিলাম?

    কিন্তু ছোট ভাই আনল ‘ব্ল্যাক অ্যারো’, আমি প্রভাবতী দেবী সরস্বতীর লেখা চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের নেত্রী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের জীবনী।

    মণিমেলার মাঠটা ছিল ট্রামরাস্তার গায়ে মিঠাই বলে যে মিষ্টির দোকানটা গত ষাট বছর ধরিয়া ‘সগৌরবে চলিতেছে’ তার দুটো বাড়ি আগে। গুটি গুটি পায়ে হাজির হয়ে আমাদের চক্ষুস্থির। অন্ততঃ জনা চল্লিশ ছেলেমেয়ে, নানান বয়সের। সবাই বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে কিছু না কিছু খেলছে। না, আমার চেনা ওই এক্কাদোক্কা, লাট্টু বা ফুটবল ক্রিকেট নয় । কোন গ্রুপ করছে পিটি, কেউ লেজিম ড্যান্স, কেউ পোল ড্যান্স আবার কোন দল ব্রতচারি। কিছুই তো জানি না। আমার ভ্যাবাচাকা মুখ দেখে একজন কাঁধে হাত রাখল।

    ঘাবড়ে যেও না খোকা, আস্তে আস্তে সব শিখে যাবে।

    জানলাম ওনার নাম বিজ্ঞানানন্দ খাসনবীশ, বিজ্ঞানদা বলে ডাকতে হবে। এনাকে তো চিনি, আমার স্কুল যাওয়ার রাস্তায় কর্নেল বিশ্বাস রোডে থাকেন। আরও ছিলেন শুভংকরদা, অরুণদা, অমলদা। ছিলেন মামু ও কওসদারভাই।

    রবিবারে মণিমেলার ছুটি। সেদিন ওই মাঠে দু’বেলাই ক্রিকেট খেলা যেত।

    আমার অনেক স্কুলের বন্ধু এবং তাদের দাদা-দিদিরাও দেখি মণিমেলার সভ্য। আমিও আমাদের বাড়ির ছাদের বন্ধুদের জুটিয়ে এনে মণিমেলার সভ্য করালাম। ওদের ছাড়তে চাই না যে ! তেমনই করে গলি ক্রিকেটের তোতামামু (সাদিক আলি) এবং নবাব আলিকে নিয়ে এলাম। কিন্তু এদের একমাসের বেশি সভ্য রাখা গেল না । আমি কিছু ছেলেকে শিখিয়ে দিয়েছিলাম — ওই ছেলেটাকে বল নবাব আলি, কাঠবেরালি।

    তিনটে বাচ্চা কোরাস জুড়ল। একটু পরে দেখা গেল নবাব আর একটা বাচ্চা জাপ্টাজাপ্টি করে ধূলোয় গড়াচ্ছে। মামু আর বিজ্ঞানদা এসে দুজনকে টেনে তুলে কড়া সুরে জিজ্ঞেস করলেন এসব কী? নবাব বলল ওরা আমার পেছনে লেগেছে। অন্য ছেলেটি বলল – এই নতুন ছেলেটা আমাকে হারামি বলেছে।

    মামুদের চোখ মুখ বদলে গেল। নবাব বলল — না, আমি বলিনি।

    মামু হিসহিস করে বললেন — তুমি বাড়ি যাও; কাল থেকে এখানে এস না। নবাব ধূলো ঝাড়তে ঝাড়তে আমাদের সবার দিকে একবার তাকিয়ে মাঠ থেকে বেরিয়ে গেল। আমি ওর দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারি নি। একটু পরে তোতামামু পায়ে চটি গলিয়ে নিল।

    তুমি কোথায় যাচ্ছ খোকা?

    ও আমার খালার ছেলে। তাই আমিও বাড়ি যাচ্ছি।

    আমাদের চারপাঁচটা গ্রুপে ভাগ করে দেওয়া হল — মণিবন্ধু, মণিকাঞ্চন, মণিপ্রিয়, মণিরত্ন এইসব।

    কোন একটা মাসে এদের মধ্যে কম্পিটিশন হত, চলত সাতদিন ধরে। প্রতিযোগিতা হত অনেক বিষয়েঃ ওপরে বলা পিটি থেকে শুরু করে যা যা শেখানো হয়েছে, এমনকি ব্রতচারী অব্দি। তারপর খো-খো, কবাড্ডি এবং দারিয়াবান্ধা। হত বিতর্ক প্রতিযোগিতা, যেমন গ্রাম বনাম শহর। সব বিষয়ে নম্বর দেওয়ার পরে ফলাফল নোটিস বোর্ডে টাঙিয়ে দেওয়া হত। সেবার জিতল মণিকাঞ্চন। রেজাল্ট বেরোতেই ওই গ্রুপের লিডার বন্দনাদি চেঁচিয়ে উঠলেন – মণিকাঞ্চনের নামে শা-- ; সবাই কোরাসে বলল - বাশ। শিখলাম, ফাউন্ডার মৌমাছি (বিমল ঘোষ) হাততালি দেওয়া পছন্দ করেন না। বলতে হবে শাবাশ! রবি ঠাকুরও নাকি হাততালির বদলে ‘সাধু! সাধু!’ বলার প্রচলন করেছিলেন।

    কিন্তু ওনার হারমোনিয়মের বদলে এস্রাজ যেমন চলে নি, তেমনি ‘সাধু! সাধু! ও শান্তিনিকেতনে বীরগতি প্রাপ্ত হইয়াছে।

    শেষের দিন মার্চ পাস্ট, সবার আগে জয়ন্তী মণিমেলার ঝান্ডা নিয়ে মণিকাঞ্চন দলের লীডার বন্দনাদি। তারপর অন্য গ্রুপের ছেলেমেয়েরা। বিড ড্রাম ও কেটল ড্রাম বাজছে, তালে তালে আমরা। মার্চপাস্টের গান শুরু হলঃ

    “ধর্মপ্রাণ, মণিদল; মণিঝান্ডা লেকে চল।
    চক্র সে , ইশারা সে, তু আগে বড় কে চল ।।
    দেশসেবা মেঁ দিল হমারা উছল গয়ে,
    বাপুজি, নেতাজি, জওহর কী জয়!
    লেফট রাইট, লেফট রাইট, লেফট রাইট লেফট”!!

    এর পরে একদিন সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা, সঙ্গে অল্প জলযোগ। আমি নতুন, তাই শুধু হাঁ করে দেখতে থাকি। সবাই হাজির হলাম শঙ্খনিধি পরিবারের দোতলার একটা বড় ছাদে। পাশে তিনতলার ঘরগুলোর বন্ধ দেয়াল। তার গায়ে একটা বড় সাদা কাপড়ের ফেস্টুন, তাতে সুন্দর করে নীল রঙ দিয়ে বড় বড় অক্ষরে লেখা — জয়ন্তী মণিমেলা,নীচে ছোট অক্ষরে পার্কসার্কাস। দেয়ালের গায়ে পেরেক ঠুকে তার টেনে টাঙানো দুটো একশ’ পাওয়ারের বাল্ব হলদেটে আলো ছড়াচ্ছে। আমি আমার বন্ধুদের সঙ্গে পেছনের সারিতে বসে গুলতানি করছি, এমন সময় গান শুরু হল। অমলদা দরাজ গলায় ধরেছেন ‘দুর্গম-গিরি-কান্তার-মরু-দুস্তর-পারাবার’। সঙ্গে গলা মেলাচ্ছেন অরুণদা। এর পরে কিছু কবিতা আবৃত্তি হল। নাটক শুরু হবে রবি ঠাকুরের ব্যঙ্গকৌতুক থেকে ‘খ্যাতির বিড়ম্বনা’। তাতে আমার বন্ধু মোটা আনন্দ করছে কিপ্টে উকিলের ভূমিকা। আমরা উসখুস করছি, আর কত দেরি? এমন সময় মাইকে ঘোষণাঃ এখানে আমাদের প্রাক্তন সভ্য সুগায়ক শংকরপ্রসাদ মিত্র উপস্থিত আছেন। আমরা তাঁকে মঞ্চে এসে একটি গান গাইতে অনুরোধ করছি, শংকর তুমি চলে এস ।

    কেউ এলো না। সবাই হাসছে। আরও দু’বার অ্যানাউন্স করার পর যিনি মঞ্চে উঠলেন তাঁকে দেখে আমি অবাক। আরে, এ তো লোয়ার রেঞ্জ পাড়ার শংকরমামা! বড়কাকিমার তুতো ভাই। ও মণিমেলার প্রাক্তনী? তার মানে এটা অনেক পুরনো সংগঠন, বেশ তো !

    শংকরমামা একটু নীচু আওয়াজে ধরল হেমন্তকুমারের হিট গান — মৌ বনে আজ, মৌ জমেছে, বৌ কথা কও ডাকে’। আস্তে আস্তে গলা চড়ল; হাততালি!হাততালি! এবার কেউ শাবাশ বলল না। কেউ বকল না। আমি ফিসফিস করে বন্ধুদের বললাম — জানিস, উনি আমার মামা। বিশ্বাস হচ্ছে না?

    ওরা সমস্বরে বলে উঠল — হ্যাঁ, হ্যাঁ। উনি আমাদেরও কাকা!

    কেমন সব বন্ধু! দু'দিন কথা বলব না ।

    মণিমেলায় ছিলাম তিনবছর। শিখেছিলাম ব্রতচারী সঙ্ঘের শ্লোগান — জ সো বা, জয় সোনার বাংলা। জ সো ভা, জয় সোনার ভারতের। তারপর ‘আমরা বাঙালী সবাই বাংলামা’র সন্তান, বাংলাভূমির জল ও হাওয়ায় তৈরি মোদের প্রাণ। আর ‘চল কোদাল চালাই, ভুলে মানের বালাই; ঝেড়ে অলস মেজাজ, হবে শরীর ঝালাই’।

    সারিগান – ‘কাইয়ে ধান খাইল রে, খেদানের মানুষ নাই। খাওয়ার বেলায় আছে মানুষ কামের বেলায় নাই’।

    তারপর ছিল বয়-স্কাঊটের জুলু ফোক সংগ — “ওয়াম্বা ওয়াম্বা, গিং গ্যাং গিলিগুলি গিলিগুলি ওয়াসস্যালা গিং গ্যাং গিং, গিং গ্যাং গং”।

    একবার শীতকালে ঠিক হল চড়ুইভাতি হবে ব্যারাকপুরের গান্ধীঘাটে। চড়ুইভাতি? সেই যেমন অপু-দূর্গা আর বিনি করেছিল নিশ্চিন্দিপুরের জঙ্গলে? ধেৎ, এটা হবে আজকের দিনের পিকনিক।

    আমি ক্লাস ফোরে। তাই যাওয়ার সু্যোগ পেলাম। মাথা পিছু তিন আনা দিতে হয়েছিল। তাতে খাওয়াদাওয়া ট্রেনের ভাড়া সব শামিল।

    হি হি ঠান্ডার মধ্যে এক রোববারে আমার জয়ন্তী মণিমেলার মাঠে একত্র হয়ে লাইন বেঁধে ট্রামডিপোতে গিয়ে শেয়ালদার ট্রামে চড়ে বসলাম। ফাঁকা ট্রাম আমাদের লোকজনে ভরে গেল । ট্রেনের কামরাতেও একই ব্যাপার। জানলার ধারে দুটো ছোট সিটে, আমি আর আমার নতুন বন্ধু প্রকাশ। রোগা কেঠো চেহারার ছেলেটা কোথথেকে কিছু প্যাঁচ পয়জার শিখে এসে আমাদের হ্যান্ড শেক করতে বলে হাত ধরে এক ঝটকায় শূন্যে তুলে আছড়ে ফেলে অবাক করে দিয়েছিল। কেউ কেউ বলল এটা নাকি জাপানি কুস্তি জুজুৎসুর প্যাঁচ। ও আমার সঙ্গে ভাব করায় অন্যেরা একটু আশ্চর্য হয়েছিল।

    জানলা দিয়ে আসা ঠান্ডা হাওয়ায় হাত জমে যাচ্ছে। ও শক্ত হাতে আমার হাত ঘষে ঘষে গরম করে দিল। আমরা নীচু গলায় গাইছিলাম শ্যামল মিত্রের গান — চিনি আমি চিনি, ওগো নন্দিনী!

    ব্যারাকপুর স্টেশনে নেমে লাইন করে হাঁটা, কেউ বলল তিন মাইল, কেউ তিন কিলোমিটার। এক সময় পথ ফুরলো। অনেক নীচে গঙ্গা বয়ে চলেছে। পাড়ের উপর একটা বেশ সমতল মাঠ। সেখানে আগে থেকেই হাঁড়িকুড়ি রেডি। উনুন বানিয়ে রান্না শুরু হচ্ছে। সবাইকে গরম চা আর ফুলুরি দেওয়া হল। আমরা ছোটরাও বাদ পড়লাম না। কেউ কেউ ব্যাডমিন্টন খেলা শুরু করল আর গঙ্গার হাওয়ায় শাটলকক উড়ে গেল অন্যদিকে। প্রকাশ পকেটে করে একটা রবারের বল এনেছিল। আমরা ক্যাচ প্র্যাকটিস করছিলাম, তারপর ক’টা পাথরের টুকরো নিয়ে পাঁচ-ছ’জন মিলে পিট্টু খেলা শুরু হল। একটু পরে খেলাটা একঘেয়ে লাগায় আমি একটু নীচে নেমে গঙ্গার পাড়ে বড়দের খেলা দেখতে গেলাম। ওরা কিটব্যাগে করে ক্রিকেটের সেট নিয়ে এসেছিল। মামু ওদের ফ্রন্ট ফুটে হাফ ভলি খেলার ফুটওয়ার্ক শেখাচ্ছিলেন। আমি কিছুই বুঝি নি ।তারপর খেতে বসা। বেসনের গোলায় চুবিয়ে ফুলকপির বড়া আগে কখনও খাই নি । গঙ্গার পাকা রুইয়ের স্বাদ আলাদা। শেষ পাতে দেশি টমেটোর চাটনি, পাঁপড় ও রসগোল্লা।

    খেয়ে দেয়ে নানারকম খেলা শুরু হল। মামু একটা মজার খেলা শেখালেন - ইংরেজিতে। কিছু একটা চুরি হয়েছে। কারও নাম (নম্বর দিয়ে) উঠে এসেছে। সেই নম্বর কল করলে সে সাড়া দিয়ে বলবে — আই স্যার। ডিড ইয়ু স্যার? নো স্যার। দেন হু স্যার? সে হয়ত বলল নাম্বার টেন স্যার।

    নাম্বার টেন? আই স্যার। এইভাবে চলবে যতক্ষণ না কেউ কোন নাম্বার রিপিট করছে।

    এবার ফেরার পালা। নদী থেকে শীতের হাওয়া হু হু করে এসে কাঁপিয়ে দিচ্ছে। আমার গায়ে একটা হাফ হাতা সোয়েটার। ফেরার সময় তিন মাইল হন্টন তেমন কিছু মনে হল না ।

    ভালই চলছিল। আমি এখন মণিমেলার পুরনো সভ্য। ছাদে গিয়ে লাট্টু, মার্বেল, আর এক্কাদোক্কার দিন ফিকে হয়ে গেছে। আমার একটু একটু নাম হচ্ছে — খেলাধূলোয় নয়,গল্প বলায়। স্বপনকুমার, রবার্ট ব্লেক আর টার্জান।

    এদিকে আমি খো খো, দাড়িয়াবান্ধা, লেজিম ড্যান্স — সব তাতেই ফেল। পিটি করলে আমার হাত পা সমান্তরাল নড়ে না। টিমের নম্বর কাটা যায়, সবাই বকে। সন্ধ্যেবেলা বাড়ি গিয়ে ডায়েরি লিখি। স্কুলের পরীক্ষায় ভাল ফল করায় মেজকা দিয়েছে একটা ক্যারম বোর্ড আর ডায়েরি। কিন্তু দু’দিন পরেই আমার ডায়েরি লেখা বন্ধ হয়ে যায়। কারণ বসে বসে যা ভাবি তা কাগজে কলমে লেখা অসম্ভব। জানতে পারলে বড়রা নির্ঘাৎ পিঠের ছাল তুলে নেবে।

    আসলে আমার মণিমেলায় একজনকে ভাল লাগছে। কিন্তু কাছে গিয়ে কথা বলতে গেলে গলা কাঁপে। একদিন বিজ্ঞানদা কাউকে বললেন ওই মেয়েটিকে ডেকে আনতে। বললাম — আমি যাচ্ছি।

    কিন্তু কাছে গিয়ে এমন বুক ঢিপ ঢিপ করল যে মুখ দিয়ে বেরোল — বিজ্ঞানদা আপনারে ডাকসে।

    মেয়েটি ফ্যাক করে হেসে আমার অনুকরণে বলল – কে ডাকসে?

    ক্লাস ফাইভে উঠেছি। মেয়েটি সিক্সে। শুনলাম ও সরকারি পাঠ্যবই কিশলয় হাফদামে বেচে দিচ্ছে। অন্যগুলো দিয়েছে, ওটাই বেঁচে আছে । আমি বন্ধুদের জানাই – আমি কিনব, আট আনার বই চার আনায়।

    বাড়ির গুরুজনেরা আমার মত ল্যাবেন্ডিসের ব্যবসায়ী মনের পরিচয় পেয়ে চমৎকৃত। আমি বইটা খুলি, সামনের দুটো পাতায় গোটা গোটা অক্ষরে ওর নাম, ক্লাস, সেকশন আর ইয়ার লেখা। আমি দেখতে থাকি, হাত বোলাই; তারপর নিজের নাম লিখি - ঠিক ওর পাশে।

    জানি, মণিমেলায় আমার এটাই শেষ বছর। দুপুরে টো-টো করে ঘোরায় আমাকে আগামী বছর রামকৃষ্ণ মিশনের কোন হোস্টেলে দেয়া হবে। তবু একটা বছর তো ওকে নিয়মিত দেখা যাবে। বয়সে একবছরের বড়, হোক গে!

    কল্যাণদা আর রমাদি। আদর্শ ভাইবোন। এবছর আমাদের ক্যাপ্টেন ওরা দু’জন। পড়াশুনো, খেলাধূলো সব বিষয়েই চৌকস। দাদা পড়ে বালিগঞ্জ গভর্ণমেন্ট হাই স্কুলে, বোন গোখেলে। আর আছে চম্পকদা, মণিমেলার প্রতিষ্ঠাতা মৌমাছির ছেলে, কিন্তু এখানে কোন অ্যাটিচুড দেখায় না ।

    কিন্তু এই নন্দনকাননে সাপ ঢুকেছে। টের পেতে দেরি হচ্ছে। অনেক ঈভ আপেল খেয়ে ফেলে আদমকেও আদ্দেকটা খাইয়ে দিয়েছে। বন্ধুরা ফিসফিস করে । জানিস, অমুক দিদি আর আসছে না কেন? আসলে না জয়াদির সঙ্গে ঝগড়া হয়েছে। কেন? আরে প্রীতীশদা কে নিয়ে। কোন প্রীতীশদা, কোঁকড়ানো চুল, ভালো মিডিয়াম পেস বল করে, গান গায়? তা ঝগড়া কেন? আরে দুজনেই তো প্রীতীশদার লাভার। আমার হাঁ-মুখ খোলাই থাকে। ঘটনা বাড়ে, ঝগড়া শুরু হয়। কমপ্লেইন হয়। অনেক প্রীতীশদা, অনেক জয়াদি। বড়দের মিটিং, বুঝতে পারি মণিমেলা বন্ধ হয়ে যাবে, আজ নয় কাল।

    বর্ষাকাল। সাতদিন ধরে নাগাড়ে বৃষ্টি। আমাদের গলিতে জল জমে গেছে। রিকশা ঢুকছে না। ঘরে আটকে রয়েছি, খেলাধূলো সব বন্ধ। রাত্তিরে আকাশবাণীর একটা গান মাথার মধ্যে নীলমাছি হয়ে ভোঁ ভোঁ করে – “যা হারিয়ে যায়, তা আগলে বসে রইব কত আর”?

    সময় কুড়ি কুড়ি বছরের পার চলে গেলে কখনও সখনও পার্কসার্কাস গেলে মণিমেলার মাঠের পাশ দিয়ে হেঁটে যাই। ওটা এখন চারপাশের বাড়ির পার্কিং প্লেস। এবার দেখলাম ফ্ল্যাটবাড়ি তুলছে কোন প্রোমোটার। গোমেশ পরিবারের বাউন্ডারি ওয়ালে চুণ দিয়ে বড় বড় করে লেখা জয়ন্তী মণিমেলা কবেই মুছে গেছে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    | | | | | | | | | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬
  • ধারাবাহিক | ২৯ জুলাই ২০২১ | ৩১৪৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • যদুবাবু | ২৯ জুলাই ২০২১ ১৭:৫০496188
  • অসাধারণ ! প্রত্যেকটা পর্ব-ই পড়ি ও দারুণ লাগে, বলা হয়ে ওঠে না। 


    মা ছোটোবেলায় ব্রতচারী করতেন, অমিয়বালা ইস্কুলে, জসোবা আর জসোভা-র গল্প শুনেছি, আর গায়ে-গতরে খাটার আগে 'চল কোদাল চালাই'। আর আমাদের বরাকৃমি ইস্কুলের এক হেডমাস্টার ঐ হাততালির বদলে 'সাধু সাধু' শুরু করেছিলেন, সে এক যাতনা, তবে এই ইতিহাস জানতাম না। 


    আচ্ছা, 'দারিয়াবান্ধা' খেলা টা কী? নাম শুনেছি,।খেলেছি মনে হয় না‌। 

  • Ranjan Roy | ২৯ জুলাই ২০২১ ২৩:২১496194
  • যদুবাবু,


    বরাকৃমি? আম্মো; ১৯৬১ থেকে ৬৫। তবে ১৯৭১ এ শুনেছি আমাদের ওয়ার্ডেন নন্দবাবুকে নকশাল আন্দোলনে ছুরি মারা হয়। তারপর থেকে হোস্টেল উঠে গিয়ে ওই ঘর গুলো মডেল স্কুল হয়ে যায়। ২০১২তে আমরা পাঁচজন ১৯৬৭  উচ্চমাধ্যমিক, ওখানে মহারাজদের সঙ্গে দেখা করে প্রেয়ার হলে বসে বিল্ডিং ঘুরে ঘুরে দেখে এসেছি। সরস্বতী পুজোর দিন ছিল।


    দারিয়াবান্ধা খানিকটা কবাডির মত, কিন্তু অনেকগুলো এক্কাদোক্কার স্টাইলে ঘর কাটা থাকে। ডিফেন্সের টিমের ছেলেদের ওই ঘরের মধ্যে দাঁড়িয়েই অ্যাটাকিং টিমের ছেলেদের ছুঁয়ে আউট করতে হয়। অ্যাটাকিং টিমের কাজ বিপক্ষকে বোকা বানিয়ে দ্রুতবেগে ঘর গুলো পেরিয়ে ওপারে পৌঁছে যাওয়া। কেউ যেন টাচ না করতে পারে। 

  • যদুবাবু | ২৯ জুলাই ২০২১ ২৩:৩৫496197
  • আপনি যে বরাকৃমি জানতাম। কোনো একটা পুরোনো টই-তে বোধহয় বলেছিলেন নরেন্দ্রপুরের গবা মহারাজ, অর্থাৎ তরুণকান্তি দে-ও বরাকৃমির ছাত্র। সেই থেকে ইস্কুলের ব্যাপারে গর্ব আর রাখার জায়গা পাই না। :) 

    নকশাল আন্দোলনের সময় ছুরি মারার গল্প আমার বাবা-জেঠাদের মুখেও শুনেছি। সম্ভবতঃ মিথ্যা নয়। ওরা ঐ স্কুলে পড়তেন না, তবে বাবা সক্রিয় রাজনীতি করতেন সেই সময়, আর আমাদের বাড়ি খুব একটা দূরেও নয়। আমি অবশ্য খুব বেশি যাই না আর। ইস্কুলের মাঝে ঐ মাঠ ভরিয়ে দিয়ে বিশাল মূর্তি-টূর্তি করে এমন-ই চেহারা পালটে গেছে যে আর ফিরে গেলে চিনতে পারি না। তবে চেনা স্যারেরা আছেন এখনো। দেখলে চিনতে পারেন, মনে হয় যেন দৃষ্টি একটু উজ্জ্বল হয়ে উঠলো, সেই টানেই মাঝে মাঝে ঢুঁ মেরে আসা। 

    'দারিয়াবান্ধা' বুঝলাম। মনে হচ্ছে না খেললেও দেখেছি। :) 

  • Ranjan Roy | ২৯ জুলাই ২০২১ ২৩:৪২496198
  • অ্যাই, ঠিক বলেছ।অমন সুন্দর খেলার মাঠে বিশালকায় সব মূর্তি! কোন নান্দনিক সেন্স নেই গা!


    ঠিক করেছি আর যাবো না। মিশনের হোস্টেল জীবন বেঁচে থাক আমার স্বপ্নে, আমার ছত্তিশগড়ের গ্রামের জীবনে লেগে থাকার ও তার মধ্যে আনন্দ খোঁজার শিক্ষা ওই জীবনে, এটা স্বীকার করি।

  • শেখরনাথ মুখোপাধ্যায় | 2405:201:8011:a06d:40c9:326c:deea:***:*** | ৩০ জুলাই ২০২১ ২১:৪৩496214
  • অহো, কী লেখা! লেখক-পাঠকে এমন জড়াজড়ি আত্মীয়তার হরিহরতা! আমারও ছেলেবেলার কথা মনে পড়ে গেল।


    আমাদের হাওড়ায় অবিশ্যি অত বড়োসড়ো 'মেলা' ছিল না, আমাদের ছিল বিদ্যার্থী সমাজ সব পেয়েছির আসর। যুগান্তরের। অখিল নিয়োগী -- স্বপনবুড়ো -- পরিচালিত। স্থানীয় অভিভাবক আমার মেজদা, বলা হত সঙ্ঘমিত্র। মেজদাদের নিজেদের ক্লাব ছিল বিদ্যার্থী সমাজ, তারই লেজুড় আমাদের আসর। নিয়ম অনুযায়ী সঙ্ঘমিত্রর অন্তত পঁচিশ বছর বয়েস হওয়া দরকার ছিল, অতগুলো ছেলেমেয়ের স্থানীয় অভিভাবক বলে কথা! মেজদা ছিল বড় জোর আঠের-উনিশ, সদ্য ইন্টারমিডিয়েট দিয়েছে! বয়েস ম্যানেজ করেছিল, এখন আমার মনে হয় স্বপনবুড়ো বুঝতে পেরেও চেপে গিয়েছিলেন, না হলে অতগুলো ছেলেমেয়ের খেলাধুলো মাটি! কী কী খেলা, কী কী মজা, লিষ্টি করছি না, রঞ্জন যা যা লিখেছেন সেরকমই। কিন্তু বছরে একবার বড়োসড়ো সমাবেশ হত, বিরাট ফাংশন হত, নাচ গান আবৃত্তি অভিনয় ইত্যাদি। মনে আছে সবাই মিলে মহাজাতি সদনে গিয়েছিলুম, পাড়ার একজন মেজদার-চেয়েও-বড় দাদা প্রচুর খাইয়েছিলেন।


    আমাদের 'আসর'-এর পাশের মাঠেই ছিল --কিশোর সভা নয় -- কিশোর বাহিনীর মাঠ। আমরা জানতুম ওরা কম্যুনিস্ট ছিল। আমার মেজদার যিনি মেন্টর, বড় হয়ে বুঝেছি তিনি সোশ্যালিস্ট, কিন্তু কট্টর কম্যুনিস্ট বিরোধী। তাই আমরা কিশোর বাহিনী নই। কিন্তু আমাদের আর ওদের একই ব্রতচারীর মাষ্টারমশাই। তিনি আমাদের শিখিয়েছিলেন 


            এই আমাদের কিশোর বাহিনী সর্বজনপ্রিয়


            হে ভগবান ওদের তুমি দীর্ঘজীবন দিও।


    ওদেরও বোধ হয় শিখিয়েছিলেন বিদ্যার্থী সমাজ! 


    অনেক পরে, কল্যাণীতে বাড়ি করেছি। থাকতে এসে শুনলুম  বিমল ঘোষ  -- মৌমাছি -- এই পাড়াতেই থাকেন!

  • অপু | 2409:4060:10f:444a::1936:***:*** | ৩১ জুলাই ২০২১ ০২:০১496219
  • রঞ্জন দা, হুল্লাট হচ্ছে। সেই মজলিশি ঢঙে। যেমন তুমি লেখো। 

  • kk | 68.184.***.*** | ৩১ জুলাই ২০২১ ০২:৪৬496220
  • শান্তিনিকেতনেও তো হাততালি দেবার বদলে 'সাধু, সাধু" বলার নিয়ম।
    গানের এই লাইনটা কী সুন্দর -- “যা হারিয়ে যায়, তা আগলে বসে রইব কত আর”?

  • বিপ্লব রহমান | ৩১ জুলাই ২০২১ ০৮:৩৫496227
  • এপারে আটের দশকে বয় স্কাউট করতে গিয়ে ‘চল কোদাল চালাই, ভুলে মানের বালাই; ঝেড়ে অলস মেজাজ, হবে শরীর ঝালাই’ -- এই গান আমরাও গেয়েছি। 


    মনিমালা শৈশব স্মৃতি অপূর্ব 

  • Ranjan Roy | ৩১ জুলাই ২০২১ ১৬:৫৬496248
  • শেখরনাথ,


       বেশ ক'বছর পরে তখন আমি বরানগর মিশনের হোস্টেলে। সেখানে একবার একজন এলেন ব্রতচারী শেখাতে। উনিও-,  আপনাদের যেমন শেখানো হয়েছিল, তেমনই একটা ভ্যারিয়েশন করলেন--


     " তারাই মোদের সবার প্রিয়,


    সকলের আদরণীয়, সকল গুণে বরণীয়।


    বিভু তোমায় এই মিনতি, দীর্ঘজীবন তারে দিও, সফল জীবন তারে দিও।


    মোদের প্রীতি জড়িয়ে দিও।


    মোদের প্রীতি মোদের স্মৃতি মোদের গীতি জড়িয়ে দিও"।।


    এসব বোধহয় গুরুসদয় দত্তের রচনা। তবে তারাশংকরের স্মৃতিকথায় আইসিএস গুরুসদয় দত্তের সবাইকে রায়বেঁশে নাচানো নিয়ে কিছু তিক্ত-কষায় মন্তব্য আছে।


                                                                                        

  • যদুবাবু | ৩১ জুলাই ২০২১ ১৭:৫৬496251
  • রঞ্জন-দাঃ ব্রতচারী সখা নামিয়ে পড়ছিলাম। দেখলাম ব্রতচারীর সতেরো খানা মানা আছে, কোনোটাই আর এ জীবনে মেনে চলা হলো না - বিশেষ করে "ভুলেও ভুঁড়ি বাড়াইবো না" দেখে রীতিমত বিমর্ষ হয়ে পড়লাম। যা বুঝছি সবকটা ধরে ধরে উলটো করে দিলে তাও আশা আছে। 


  • Ranjan Roy | ৩১ জুলাই ২০২১ ১৮:২৫496257
  • তেরো ও ষোল মেনে চলি। চোদ্দ, ্পনের এবং সতের মানতে চেষ্টা করি।ঃ))))

  • যদুবাবু | ৩১ জুলাই ২০২১ ১৮:৩৫496259
  • হ্যাঁ তা ঠিক। দু-অ-দৈ-ভি-ক মেনে চলাই যায়। ঃ) 

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে মতামত দিন