এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  স্মৃতিকথা

  • হারিয়ে যাওয়া কোলকাতার গল্প (১৯৫০-৬০) : ১২শ পর্ব

    Ranjan Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | স্মৃতিকথা | ২০ জুলাই ২০২১ | ২৬২৯ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • | | | | | | | | | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬
    (৯) বাঙালবাড়ির বিয়ে, নাইয়র, বরযাত্রী ইত্যাদি

    আমরা বাচ্চারা ফুটপাথ আর গলির মুখে চার আনার রবারের বল নিয়ে ক্রিকেট খেলায় মশুগুল। ব্যাট করছে নীচের তলার আখতারদা -- নিলোফারের ছোড়দা -- ক্লাস এইটে পড়ে। বল করছি আমি, ক্লাস টু। লোপ্পা বলটায় আখতারদা এমন মারলো যে রাস্তা পেরিয়ে সার্কাস হোটেলের বারান্দায় শিককাবাব তৈরির উনুনের পাশে গিয়ে পড়লো। ওরা গেল খেপে, বল আটকে রেখে দিল। আখতারদা গিয়ে কীসব বলে নিয়ে এল বটে, কিন্তু তারপর ব্যাটটা অভিজিতের হাতে দিয়ে নিজে বল তুলে নিল। শুনলাম আরেকবার ওদের রান্নার কাছে বল গেলে সেটাকে উনুনে ঠুসে দেওয়া হবে। হৃদয়হীন কসাই কোথাকার! খেলার উৎসাহ কমে গেল।

    খেলায় বাধা পড়ল আরেকদিক থেকে। আমি যেখানে ফুটপাথ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বোলিং করছিলাম সেখানে এসে থেমেছে দুটো ট্যাক্সি, একটা বড়, আর একটা বেবি ট্যাক্সি। সেগুলো থেকে হাসিমুখে নামছেন ধুতি শাড়িতে সুসজ্জিত কয়েকজন পুরুষ ও মহিলা। একজন কিশোরীর হাত ধরে ভ্যাবাচাকা মুখে দু’টি বাচ্চা। দলটির হাতে দুটো মাটির ভাঁড় – মুখে কাগজ চাপিয়ে নীল-সবুজ সুতো দিয়ে বাঁধা। ওতে নিঘঘাৎ রসগোল্লা ও লালচে মিষ্টি দই ! কাদের বাড়ি যাবেন এরা? এবার দলবেঁধে আমাদের সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে যাচ্ছেন দেখি!

    হঠাৎ চারদিক কাঁপিয়ে বেজে উঠলো তিনটে শংখ। একটাকে ছাপিয়ে আর একটা। একটার দম ফুরোয় তো আরেকটা শুরু করে । বাজছে দোতলায় আমাদের ফ্ল্যাটের দোরগোড়ায়। আমি এঁদের পেছন পেছন উপরে যাব ভাবছি, দেখি ঠাকুমা, মা ও ভেলিপিসি হুড়মুড়িয়ে নেমে আসছে আর এদের মুখ থেকে বেরিয়ে আসছে এক আশ্চর্য আদিম রণধ্বনির মত আওয়াজ—উ-লু-লু-লু-লু-লু! উ-উ-লু-লু-লু-লু-লু!

    অবাক হয়ে দেখি এদের হাঁ-মুখের ভেতর জিভ নড়ছে অবিশ্বাস্য দ্রুততায়। সেই কম্পন থেকে হাওয়ায় ছড়িয়ে পড়ছে ওই শব্দের ঢেউ -- উ-লু-লু-লু-লু-লু!

    আগন্তুক দলটির সদস্যরা দোরগোড়াতেই ঢিপ ঢিপ করে ঠাকুমা সরযূবালাকে পেন্নাম ঠুকতে লাগল। আমাদের বাড়ির বারান্দা থেকে একটা বাক্য হাওয়ায় ঘুরে বেড়াতে লাগল - নাইয়র আইছে, নাইয়র!

    নাইয়র কারে কয়? জানি না, কিন্তু আমি ঠিকই আন্দাজ করলাম যে এবার ওই দইমিষ্টির হাঁড়িগুলো রান্নাঘরে খোলা হবে আর আমরা - বাড়ির ছোটরা — সবার আগে ভাগ পাব। এরপর কে আর গলির খেলায় খাটান দেয় !

    এইভাবে বিয়েবাড়িতে কয়েকদিন আগে থেকেই একের পর এক ‘নাইয়র’ আসতে থাকেন বুড়োবুড়ি আন্ডাকাচ্চা সমেত। আর ঘরে ঘরে ছাদে পাতা হয় ঢালা বিছানা — অনেক তোষক ও লেপ জোড়া দিয়ে। তাঁরা থাকেন বেশ কয়েকদিন। আমরা বাচ্চার পাল হঠাৎ আবিষ্কার করি যে আমাদের ছ’সাতজন ভাইবোন আছে পাতিপুকুরের তেঁতুলতলায়, আরও কিছু নিমতায়, হরিণঘাটায়, হাওড়ার শিবপুরে। এ’কদিন কেউ আর পড়তে বসার কথা বলে না। বড়রা নিজেদের গুলতানিতে মগ্ন, ছোটরা নতুন নতুন খেলায়; একেবারে ‘খাও দাও নৃত্য কর মনের আনন্দে’ কেস!

    কিন্তু আত্মীয়স্বজনদের ‘নাইয়র’ বলা কেন? জিজ্ঞেস করলে বড়রা খেদিয়ে দেয়, যা যা, ছাতে খেল গে’ যা! অগত্যা দাদুকে ধরি। উনি ‘আহ্লাইদ্যা’ নাতিকে নিরাশ করেন না।

    -- দেশের বাড়িতে উৎসবে বিয়াশাদিতে আত্মীয়স্বজন আইতো নৌকায় চইড়্যা, তাই তারা ‘নাইয়র’। মানে যারা নাওয়ে সওয়ার হইয়া আসে।

    -- ক্যারে? তোমাদের গাঁয়ে রাস্তা ছিল না? গরুর গাড়ি, বাস ছিল না?

    -- আরে বেশির ভাগ সময় খেত থাকত জলে ডোবা, আর বাড়িগুলি উঁচা উঁচা দ্বীপের মত মাথা তুইল্যা জাইগ্যা থাকত; কাজেই নৌকাই ছিল আমাদের যাতায়াতের প্রধান অবলম্বন। সম্পন্ন ভদ্রলোকের বাড়ি নৌকা থাকত একাধিক, আইজকাইল যেমন মোটরগাড়ি থাকে আর কি!

    হঠাৎ মাথায় টিউবলাইট জ্বলে।

    ‘কে যাস রে, ভাটিগাঙ বাইয়া,
    আমার ভাইধনরে কইও নাইয়র নিত বইল্যা’।

    ‘অনুরোধের আসরে’ শচীনকত্তার এই গান বেজে উঠলেই মায়ের মুখে আষাঢ়ের মেঘ ঘনিয়ে আসত।

    জানতাম, দেশভাগের পর মামারা দিদিমাকে নিয়ে নিজেদের গ্রাম ছেড়ে আসামের শিলচরে আছে। সেখানে যেতে হলে প্লেনে যেতে হয়। বিয়ের পর মা একবারই যেতে পেরেছিল। ছোট ডাকোটা প্লেন, অনেক ভাড়া যে। ছোটমামাই বা কীকরে এত ভাড়া গুনবে? নতুন জায়গায় মাথা তোলার চেষ্টা করছে।

    তাহলে এই গানটা আসলে মায়ের গান? যেমন আমার গান ‘প্রেম একবারই এসেছিল নীরবে’।

    ছাতে ম্যারাপ বাঁধা হয়, কী সুন্দর লাগে। কত ছায়া। একপাশে একটা কাপড়ের আড়াল দিয়ে ভিয়েন। উঁকি মেরে দেখতে থাকি ফুটন্ত কড়াইয়ে পান্তুয়াগুলো কেমন সাদা থেকে ক্রমশঃ জুতোর পালিশের মত গাঢ় রঙ নিচ্ছে।

    কাকামণির বিয়ে। আমরা বরযাত্রী যাবো। বেহালার রবীন্দ্র পল্লী বলে পাড়ায়। কনের বাড়ি থেকে দু’জন প্রতিনিধি এসেছেন দুটো পেরাইভেট গাড়ি নিয়ে। এ দিয়ে কী হবে? এতজন বরযাত্রী? ওঁরা কাঁচুমাচু মুখে বলেন – এতগুলো ট্যাক্সি কোথায় পাব?

    বাচ্চারা প্রায় কেঁদে ফেলি, তা’লে যাওয়া হবে না? আমরা বাচ্চারা বাদ?

    আমার ছোট দুইকাকা তাচ্ছিল্যের সুরে বলেন — ক’টা চাই ? তারপর ওদের ইশারায় মডার্ন স্পোর্টিং ক্লাবের ছেলেরা দশটা ট্যাক্সির লাইন লাগিয়ে দেয়। ন’কাকা ক্লাবের সেক্রেটারি যে ! আমরা হৈচৈ করে ঠেসেঠুসে বসে পড়ি, যদি বাদ দিয়ে দেয় ! তিনটে ট্যাক্সি ফেরত করে দেওয়া হয়।

    বেহালা কত দূর? আমরা কখনও যাইনি তো! শীতের সন্ধ্যেয় চারদিকে হলদেটে বাসি কাপড়ের মত আলো জ্বলে উঠছে। একজায়গায় গঙ্গা পেরোলাম। এবার যেন গাঁয়ের মত। মাটির বাড়ি খড়ের চাল চোখে পড়ছে। বেশির ভাগ বাড়িতে হ্যারিকেনের আলো। সালটা ১৯৫৬ যে। একসময় একজায়গায় ট্যাক্সির বহর থামলো। একটা বড় মাটির বাড়ি , তাতে খড়ের চাল, উঁচু মাটির দাওয়া, পেছনের বট আর তেঁতুলের মাথায় জোনাকি ঝিকমিক করছে। আবার শংখধ্বনি, আবার সেই উলু-লু-লু-লু-লু! আমার মুখ থেকে বেরিয়ে আসে ‘হুলুরব করে অঙ্গনাসবে, মারাঠানগরী কাঁপিল গরবে’; কানে একটা টান পড়ে ।

    -- মুখ বন্ধ রাখ পাকনা পুলা! এইতা কই পড়ছস?

    মুখে কুলুপ লাগা — পাকা ছোঁড়া। কোথায় পড়েছিস এসব?

    --- দাদুর কাছে একটা কালা রঙের বান্ধানো বই আছে, সঞ্চয়িতা না কি যেন, হেইডাতে পড়ছি।

    তিনধাপ মাটির সিঁড়ি বেয়ে উঠে পাতা-আসনে বসে পড়ি। ইতস্ততঃ হ্যারিকেনের নরম আলোয় চারদিক অপরূপ লাগে। আমাদের বাড়িতে কেন হ্যারিকেন জ্বলে না ?

    চুলে বেলফুলের গোড়ে মালা, ঝিকমিকে শাড়ি, গালে ঠোঁটে রক্তাভা – কত সব মেয়ে। এ বাড়িতে সবাই এত সুন্দর কেন? খাবার ডাক পড়ে । লাইন করে সবাই বসে। কলাপাতায় নুন, লেবুর টুকরো। একটা ঠাণ্ডা লম্বালম্বি চেরা ল্যাতলেতে বেগুনভাজা দিয়ে গেল। কেমন মরা ইঁদুরের মত। পাশে মাটির খুরিতে জল। আমার হাত লেগে পাশের জনের পাতে জল পড়ে যায় । কিন্তু মাছ আসে, আলুবোখারার চাটনি ও শেষপাতে রসগোল্লা আসে। এবার বাড়ি ফিরতে হবে, রাত হয়েছে — শীতের রাত। সে কি, বিয়ে দেখব না?

    মাটির উঠোনে হ্যাজাক বাতির আলো, লোকজনের ভীড়। কাকামণি বসে আছে আঁকিবুকি করা কাঠের পিঁড়িতে মাথায় টোপর; ওই শীতের মধ্যে ধুতি আর গায়ে একটা চাদর। উলটো দিকে শোলার চূড়ো পরা এবং মুখ নিচু করে বসে থাকা মহিলা আমার কাকিমা হবেন? মুখ দেখতে পাই না, কিন্তু কনে-চন্দনের শোভা হ্যাজাকের আলোতেও অপরূপ লাগে।

    ব্যস, হল তো? এবার বাড়ি চল। নতুন কাকিমা? কালকে আমাদের বাড়ি আসবে।

    অনিচ্ছায় ট্যাক্সিতে অন্য বাচ্চাদের সংগে বসে পড়ি। শিবপুর থেকে আসা পিসতুতো বোনকে কনুইয়ের খোঁচা মারি। অন্ধকার অজানা পথে গাড়ি চলতে থাকে। আমি ঘুমিয়ে পড়ি।

    পরের দিন সন্ধ্যেবেলা। নীচের থেকে একটা অস্পষ্ট হৈচৈ কানে আসে। দুটো ট্যাক্সি থেমেছে। আবার সেই হুলুধ্বনি ও শুভ্র শংখরবে! ধীরে ধীরে উঠে আসেন দু’জন। গম্ভীর কাকামণি, পেছনে একজন মাথায় প্রায় সমান সমান মহিলা যার মুখ দেখা যাচ্ছে না। আর কি আশ্চর্য, একজনের শাড়ির খুঁট ও অন্যজনের গায়ের উড়ুনি গিঁট দিয়ে বাঁধা!

    বাইরের ঘরে আগে থেকেই মা-ঠাকুমা-বড়পিসি আলপনা দিয়ে রেখেছিলেন। সেখানে ওঁদের বসিয়ে কড়িখেলা ও আরও কি কি খেলা চলতে থাকল। আমাদের ধমক দিয়ে সোজা রান্নাঘরে। শোবার আগে এসে দেখি বাড়ি অসম্ভব শান্ত। নতুন সদস্য মহিলাটি মাঝের ঘরের মেজেয় ওঁর দিদিশাশুড়ির বিছানায় মুখ রেখে উপুড় হয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন। আমি এখনও মুখ দেখতে পাইনি। দেখছি ওঁর বিরাট খোঁপা আর তাতে সোনালি জরির ফিতে।

    এ’বাড়িতে যে লুকিয়ে কাঁদার জায়গাও নেই।

    দ্বিরাগমন

    দুটো দিন যেতে না যেতেই আমার মনখারাপ । নতুন কাকিমা তিনদিনের জন্যে বাপের বাড়ি যাচ্ছেন। কেন যাচ্ছেন? বড়দের কথাবার্তা থেকে কানে এল দুটো খটোমটো শব্দ — অষ্টমঙ্গলা আর দ্বিরাগমন। আমার কান্নাকাটির চোটে কাকা-কাকিমা দুজনেই আমার মায়ের আপত্তির উপরে ভেটো প্রয়োগ করে আমাকেও সঙ্গে নিলেন।

    ষাট বছর আগের বেহালার রবীন্দ্রপল্লী, দিনের বেলায়। চারদিকে আমকাঁঠাল জাম সুপুরি আর নারকোলের গাছ। ফাঁকা ফাঁকা বাড়ি, বিদ্যুৎ নেই। সামনে কাজলা দীঘি। সন্ধ্যেবেলা সামনের তেঁতুল ও বটগাছে অসংখ্য জোনাকির ঝিকিমিকি। রাত্তিরে তক্ষক ডাকে, ঝিঁঝি ডাকে। কখনও সখনও শেয়াল। এ তো বিভুতিভূষণের ‘লবটুলিয়া বইহার’ বা নিদেনপক্ষে নিশ্চিন্দিপুর। তাও কোলকাতার এত কাছে! আমাকে পায় কে! মামাদের সঙ্গে পুকুরে ডুব দিই, ওরা অভয় দেন -- আমরা আছি। দুপুরে খুশির চোটে ঘুম আসে না । একদশক পেরিয়ে আবার আমরা দু’ভাই সেই বাড়িতে যাবার আমন্ত্রণ পেলাম। জামাইষষ্ঠীতে!

    আসলে ওঁদের বড়জামাই আমার কাকামণি অকালপ্রয়াত। ফলে বাকি দুই জামাইয়ের সংগে বড়জনের প্রতিনিধি হিসেবে আমরা দু’ভাই। পরিবর্তন অনেক। মাটির বাড়ি এখন পাকা দালান। চারদিকে আরও বাড়ি উঠেছে। রাস্তা ইঁট বাঁধানো। এলাহি খাবারের আয়োজন — একটু লজ্জা লজ্জা করছিল। কিন্তু দিদিমা এসে বললেন আমাদের একটা নিয়ম আছে। ভাবলাম অক্ষয় তৃতীয়ার পূজো দিয়ে দিদিমার নিজের হাতে তৈরি একশিশি কাসুন্দি ভোজনের পর দক্ষিণা হিসেবে পাব। কিন্তু উনি বললেন — আগে বাটি ভরে কাঁঠাল ও আমের রস দেব। তোমরা হাতে নিয়ে অপেক্ষা করবে। আমি বলব – কী খাও? তোমরা বলবে – ষষ্ঠীচরণের গোদের রস-পোক খাই! তারপরে খাওয়া শুরু করবে। এটাই নিয়ম।

    আমাদের দু’ভাইয়ের খাওয়া মাথায় উঠে গেল।

    বড়কাকিমা

    এরপর এক বছর অন্তর করে এক একটি বিয়ে। সেই নাইয়রদের আগমন, হুলুধ্বনি মঙ্গলশঙ্খ ইত্যাদি। সেই ছাদে ম্যারাপ বাঁধা, ভিয়েন বসা, লম্বা কাঠের বেঞ্চিতে সাদা কাগজের রোল বিছিয়ে দিয়ে তার উপর কলার পাত, মাটির খুরিতে জল, নুন-লংকা-গন্ধলেবু। সেই মরা ইঁদুরের মত লম্বাটে ল্যাতল্যাতে বেগুন ভাজা, মাছের মাথা দিয়ে ডাল, রুইয়ের কালিয়া, মাংস, চাটনি, দই-মিষ্টি।

    কিন্তু প্রদীপ জ্বালানোর আগে সলতে পাকানো। বিয়ের আগে কনে দেখা। কান পেতে থাকি আর ধমক খাই — হাঁ কইরা বড়দের কথাবার্তা গিলতে আছস ক্যারে! যা ছাদে যা।

    আমার দাদুকে নিয়ে সমস্যা! উনি যে বাড়িই যান, গিয়ে ওখানেই পাত্রী পছন্দ করে মেয়ের বাবাকে কথা দিয়ে ফেলেন, এমনকি মেয়েকে না দেখেই। ওনার সোজা কথা – ভদ্রলোকের মেয়ে , তাকে পছন্দ-অপছন্দ করার কথা উঠবে কেন?

    মহিলারা দেখলেন বড় মুশকিল। বাড়ির কর্তা একবার হ্যাঁ করলে পরে কি করে না করা যায় ! ঠিক হল আগে অন্যেরা দেখে ফাইনাল করলে শেষে প্রেসিডেন্টের সাইন করার মত দাদুকে নিয়ে যাওয়া হবে। তাই সই।

    একজন পাত্রীকে রিজেক্ট করা হল কারণ তাঁর দাদা সিনেমাতে নিয়মিত চোরের পার্ট করে । আর একজনের বাড়ি ট্রেন থেকে নেমে খোঁজার সময় পাড়ার ছেলেছোকরারা দাঁত বের করে বলল— অ! আপনারা বুঝি প্যাটলাদাদার বাড়ি যাবেন? শেষে আমার মা একদিন বেঁকে বসলেন — আমায় মাপ করুন, আমি আর কোনদিন কারও জন্যে পাত্রী দেখতে যাব না। আসলে উনি নিমতায় এক বাড়িতে পাত্রী দেখতে গেছলেন। শিক্ষিতা চাকরি করা মেয়ে। জবরদখল করা উদ্বাস্তু কলোনিতে নতুন বাড়ি উঠেছে। দেয়ালের চূণকাম পুরো হয় নি । বাইরের ঘরে বসে এরা অনেক খেজুরে আলাপ করে ফেললেন, চা -মিষ্টি-সিঙারা সাঁটানো হয়ে গেল; মেয়ে আর আসে না। একটু পরে এল হাইহিল পরে ।

    বাড়ি ফিরে স্মৃতিকণা বললেন যে উনি শোয়ার ঘরের দেয়ালে ইঁটের অনেকটা ফাঁক দিয়ে দেখতে পাচ্ছিলেন যে মেয়েটি ভেতরের ঘরে অনেকক্ষণ ধরে মুখে হাতে পায়ে পেইন্ট ঘসছে; আর হাইট বেশ কম বলে ঘরের মধ্যে হাইহিল পরে চলাফেরা করছে। স্মৃতিকণার মনে হল ওই মেয়েটি আমি বা আমার বোন হতে পারে। কী বিড়ম্বনায় আজ নিজেকে মেলে ধরতে ওকে এইসব করতে হচ্ছে। এ যে মেয়েদের অপমান! উনি নিজে মেয়ে হয়ে কেন এর ভাগীদার হবেন?

    সারাজীবন আর কোন পাত্রী দেখতে যান নি। নিজের ছেলেদের জন্যেও না।

    এভাবেই আমাদের দাদুর দস্তানায় একে একে বড়-মেজ-সেজ-কণাকাকিমা এলেন। আর আমরা আদরে বাঁদর হতে হতে বড় হয়ে গেলাম। রাঙা-ন’ এবং ছোটকাকিমারা এলেন অনেক পরে। ততদিনে আমরা ভাড়াবাড়ির আশ্রয় থেকে বেরিয়ে নাকতলায়।

    বিয়ের হৈচৈ একটু থিতিয়ে এসেছে। সবাই নতুন বৌয়ের হাতে খেতে চায়, একসঙ্গে পাত পেড়ে বসতে চায়। সন্ধ্যের দিকে অনুরোধ করা হল গান শোনাতে। কাকিমা উঠে গিয়ে স্যুটকেস খুলে একটি ছাইরঙা রেক্সিনে বাঁধানো খাতা নিয়ে এলেন। উঁকি দিয়ে দেখি মুক্তোর মত হাতের লেখায় অনেকগুলো গান টোকা আছে । খালি গলায় নতুন বৌ গাইলেন—‘আমরা দু’জনা স্বর্গখেলনা গড়িব না ধরণীতে’। জা’ এবং ননদেরা চোখ টেপাটেপি করে হাসলেন, কেন কে জানে। আমাদের মনে হল অপূর্ব।

    তখন তারাশংকরের গল্প নিয়ে তৈরি ‘রাইকমল’ সিনেমা হিট, আর পঞ্চদশী নায়িকা কাবেরী বসু এবং ছবি বন্দ্যোপাধ্যায়ের কীর্তন সুপারহিট। কাজেই ফরমাশ মেনে গাইতে হল ‘যদি আমি যাই পথে, শ্যাম যাবে সাথে সাথে, চরণে চরণ দিয়া পায়’। তারপর আখর দিয়ে ‘সাথে সাথে চলে গো! চরণে চরণ দিয়া সাথে সাথে চলে গো!’

    শ্বশুর শাশুড়ি কয়েক পুরুষের দীক্ষিত বৈষ্ণব। দেশভাগের দাঙ্গায় জান-মাল নিয়ে পালিয়ে আসার সময়েও আমার প্রপিতামহী সুখময়ী রায় শালগ্রাম শিলা সঙ্গে করে আনতে ভোলেন নি। ফলে কীর্তন গেয়ে নতুন বঊয়ের আসর মাত। শেষে শাশুড়ি ও দিদিশাশুড়ি ডুয়েট গাইলেন শুক-সারীর দ্বন্দ্ব —‘শুক বলে আমার কৃষ্ণ মদনমোহন, সারী বলে আমার রাধা বামে যতক্ষণ; নইলে শুধুই মদন’।

    বেশ মজা পেলাম। তাহলে কৃষ্ণও আমাদের মার্বেল খেলার বন্ধু মদনের মত! ঠাকুরকেও মদনা নামে ডাকা যেতে পারে? কিন্তু এই লাইনটার মানে বুঝলাম না – ‘সিন্দুর বিন্দু কে, সারা মুখে দিল এঁকে?’ রাধা কৃষ্ণকে এমন জেরা করছেন যেন চোরের দায়ে ধরা পড়েছে। কে সেই অপরাধী যে কৃষ্ণের মুখে একগাদা সিন্দুরের বিন্দু এঁকে দিয়েছে? কৃষ্ণ আবার লজ্জা লজ্জা মুখ করে রাধাকে কৈফিয়ৎ দিচ্ছেন —‘তাইতে বদন শুকায়ে গেছে, কাল রাতে মোর জ্বর হয়েছে’। এক্কেবারে স্কুলে গরহাজিরির জন্যে আমরা যেমন চোর চোর মুখ করে টিচারকে বলি, কী কান্ড! আর বড়দের প্রশ্ন করে কিছুই জানতে পারলাম না, বরং উপরি পাওনা হল কানে আড়াই পাক। তবে বড়মা, মানে আমার বাবার ঠাকুমা বললেন – এইসব ‘মাথুর’ পালার গান, বড় হইলে বুঝবি।

    কবে যে বড় হব? প্রশ্ন করলে কানমলার হাত থেকে রেহাই তো পাব!

    কিছুদিনের মধ্যেই আমরা কুঁচোরা বড়কাকিমার ভক্ত হয়ে পড়লাম। না হয়ে উপায় আছে? ক্যারম বোর্ডে কাকিমা একা দুহাত খেলে অপজিটে দুই ছোট দেওরের গাঠবন্ধন টিমকে হারিয়ে দেয়। আমাদের লাট্টু নিয়ে হাতলেত্তি করে কায়দাটা শিখিয়ে দেয়। তারপর ইয়ো ইয়ো। কত বড় সূতো! তবু ছুঁড়ে দিয়ে হাতে ফিরিয়ে আনে। আর লুডো? মুখে জর্দা দেয়া পান ঠুঁসে বসে যায় যে হারছে তার পাশে। বলে তুই ছক্কাটা চালা, আমি ঘুঁটি চেলে দেব। তারপর কোথায় ঘুঁটি জোড়া করে কাকে আটকায় আর কোথায় জোড়া ভেঙে কাকে খায়, বিপক্ষ তার খেই পায় না । খানিকক্ষণের মধ্যে বোর্ডের ছবি যায় বদলে। একবছর বাদে দেখা গেল কাকিমা টুয়েন্টিনাইন বলে তাসের খেলাটাও ভালই জানে, ফিশ ও ব্রে তো নস্যি!

    কিন্তু কাকিমা আমাদের জাদু করেছিল ঘুম থেকে তুলে ভাত মেখে সবকটার মুখে গরাস ঠুসে খাইয়ে দিয়ে। একটা বড় কাঁসার থালায় ভাত মাখা হত - ডাল তরকারি মাছের টুকরো, মাথাপিছু আদ্দেকটা হাঁসের ডিম (অতগুলো মুখে গোটা ডিম ছিল সাধ্যের বাইরে), দুধ-ভাত গুড় দিয়ে। মাখা হয়ে গেলে মুখ গুণে কয়লার গুল দেওয়ার মত করে গোল্লা পাকিয়ে রাখা হত। আর তার সংগে নানারকম গল্প। গল্প বলায় অসাধারণ দক্ষতা ছিল ভদ্রমহিলার। প্রাইভেটে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। র‍্যাপিড রীডারে ছিল রবিন হুড ও আরও কি কি বই। অল্পদিনেই ফ্রায়ার টাক, লিটল জন আমাদের বন্ধু হয়ে গেল। আর যখন মঠের শেল্টারে দুষ্টু সন্ন্যাসিনীর গোপনে রক্ত বের করে নেওয়ায় দুর্বল রবিন নিজের বৌকে বলে তিরধনুকটা নিয়ে এস, তির যেখানে গিয়ে পড়বে সেখানে আমায় কবর দিও — আমাদের কান্না থামে না, খাওয়া দাওয়া মাথায় ওঠে। এভাবেই আমরা শুনি সিন্দবাদ নাবিক, রবিনসন ক্রুশো, আর গলায় মরা এলবেট্রস নামের সামুদ্রিক পাখি ঝোলানো এক নাবিকের গল্প।

    শুনি কাকিমার এক ভাই বৈদ্যমামার গল্প। উনি নাকি ঢাকায় ব্যায়ামাগারে যেতেন। দুর্গাপূজোর ফাংশনে দাঁত দিয়ে নারকোল ছুলে দেওয়া, লোহার পাত বেঁকিয়ে দেওয়া, ঘুসি মেরে ডাব পাঠানো এসব দেখাতেন, কিন্তু মুখে রা’টি নেই। কোথাও মারামারি হলে দাঁড়িয়ে দুপক্ষের কথা শুনতে শুনতে যাকে ঠিক মনে হত তার হয়ে ঘুষোঘুষিতে জড়িয়ে পড়তেন। পরে জাহাজের চাকরি নিয়ে বিদেশ ঘুরে বেড়ালেন। কিন্তু স্বভাব যায় না ম’লে। আফ্রিকায় অমনই এক মারামারিতে দুই দশাসই আফ্রিকান জোয়ান এমন ঠ্যাঙালো যে একমাস জোহানেসবার্গের হাসপাতালে থাকতে হল। কিন্তু তাতে ওঁর কোন হেলদোল হয় নি । আমি তখনই বুঝে গেলাম যে উনি আমার রোল মডেল ন’ন।

    সময় গড়িয়ে গেল। কমিউনিস্ট পার্টির সংগে যোগাযোগের অভিযোগে এয়ারফোর্স থেকে বের করে দেওয়া কাকামণি চাকরি পেলেন ইন্ডিয়ান টিউব কোম্পানিতে, পোস্টিং জামসেদপুরে। সেখানে কোয়ার্টার ঠিক করে ফ্যামিলি ওখানে নিয়ে যাবেন। আমরা দুই ট্যাক্সি ভরে হাওড়া স্টেশন গিয়ে কাকা-কাকিমা ও গুল্লু গুল্লু ভাইকে ট্রেনে তুলে দিয়ে এলাম। চোখের জল মুছলেও কাকিমার মুখচোখে এক ধরণের তৃপ্তি । বাড়ি ফিরে আমাদের মনে হল ঘরগুলো খাঁ খাঁ করছে।

    ছ’সাত বছর পরে বিধবা বড়কাকিমা নাকতলায় আমাদের সংযুক্ত পরিবারে সর্বময় কর্ত্রী। আমার হায়ার সেকেন্ডারি পরীক্ষার প্রথম দিন, জোর করে সেদ্ধভাত মেখে গরাস করে খাইয়ে দিলেন। স্মৃতি কি সবসময় সুখের? জানি না। সব সুখেই কি কিছু বেদনার মিশেল থাকে না? জানি না ।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    | | | | | | | | | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬
  • ধারাবাহিক | ২০ জুলাই ২০২১ | ২৬২৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Amit | 121.2.***.*** | ২১ জুলাই ২০২১ ০৬:১৫495970
  • রঞ্জন দার প্রতিটা পর্ব তো ভালো হচ্ছেই। এটা পড়ে রঞ্জনদার মায়ের জন্যেও শ্রদ্ধা রইলো। আমার ছোটবেলায় দু একবার বাড়িতে কনে দেখতে আসার বা যাওয়ার যে অভিজ্ঞতা , তাতে দেখতাম মহিলারাই যেন বেশি করে উৎকট সব প্রশ্ন বা আচরণ করতেন। 

  • হীরেন সিংহরায় | ২৪ জুলাই ২০২১ ০১:৫৯496035
  • অসাধারন মানবিক দলিল। গুন্টার গ্রাসের একটা কথা মনে পড়ে - আমার জন্মভুমি আজ হারিয়ে গেছে । আমার গল্পে যদি তার ছবি সঠিক আঁকতে না পারি  কল্পনার ভেলকি অন্তত দেখাতে পারি ( নোবেল বক্তৃতা)। 


    সেটা ডানজিগের কথা। মিলে যায় কলকাতা পুব বাংলার সংগে । 

  • Amit | 121.2.***.*** | ২৪ জুলাই ২০২১ ০২:২২496036
  • এই দলিল গুলো রাখা থাক আমাদের বা আরো পরের জেনেরেশনের জন্যে। বিশেষ করে আমরা যারা দেশভাগের অনেক পরে জন্মেছি, সেই ভয়াবহ পিরিয়ড আর স্ট্রাগল-অপমান-বঞ্চনা নিজের চোখে দেখিনি। শুধু দাদু স্থানীয় প্রবীণ কয়েকজনের কাছে গল্প শুনেছি  যারা নিজেরা এর মধ্যে দিয়ে গিয়েছিলেন। তাও খুব কম সময়ের জন্যেই। আমার সাত  বছরেই দাদু মারা যান। ওই জেনারেশন র বাকী রা তারও আগে।  এই লেখাগুলো পড়তে পড়তে সেই ছোটবেলার শোনা কিছু কিছু গল্প যেন ভেসে ফিরে ফিরে আসছে। 


    কেঠো ইতিহাসের বইতে এই মানুষের গল্প গুলো কেন আরো উঠে আসেনা ? হয়তো আরো বেশি লোক ইতিহাসচর্চা করতো তাহলে। 

  • হীরেন সিংহরায় | ২৪ জুলাই ২০২১ ০৩:০১496038
  • ঠিক তাই! কেঠো ইতিহাস এই গল্প বলে না। ৭৫ বছর আগে চেক পোল্যানড বাল্টিক থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন প্রায় দু কোটি জার্মান উদ্বাস্তু । তাঁরা এই দলিলটা পরের প্রজন্মকে দিলেন না। দ্বিতীয় প্রজন্মের কাছে তার কোন স্মৃতি নেই। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। তাই গুন্টার গ্রাসের কথা বললাম । রনজন বাবুর কাজ অসাধারন হছছে সকল পরিপ্রক্ষিতে।  

  • বিপ্লব রহমান | ২৪ জুলাই ২০২১ ০৬:২২496043
  • কি মায়াময় শৈশব! এই ধারাবাহিক বই হিসাবে প্রকাশের দাবি রাখে। 


    নিজের ছোট বেলার দিকে তাকিয়ে হঠাৎ খুব হিংসে হলো। আরো লিখুন 

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল মতামত দিন