জ্যোতিষ বিষয়টি নিয়ে কিছু তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করবো বিস্তৃতভাবে। এরা ঠিক কেন সফল আর কীভাবেই বা এতদিন ধরে সফলভাবে মানুষকে ভুল বুঝিয়ে রোজগার করে আসতে পারছে তা নিয়েই এই লেখা।
যে কোনো তত্ত্বের জন্য প্রাথমিকভাবে দরকার কিছু স্বীকার্য। সেদিক থেকে জ্যোতিষশাস্ত্র একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ বিষয়। রাহু কেতুকে গ্রহ বলা নিয়ে যে আপত্তি আছে তাও জ্যোতিষের স্বীকার্যসমূহের ভিত্তিতে দেখলে ভিত্তিহীন। চন্দ্র ও সূর্যের কক্ষপথ নিয়ে একটা অবস্থানকে জ্যোতিষীরা রাহু ও কেতু নাম দিয়েছে। জ্যোতিষের স্বীকার্য অনুযায়ী এই অবস্থানগুলি মানুষের জীবনে প্রভাব বিস্তার করে, তাই এগুলোকেও গ্রহ বলা হয়। এটা নেহাত ই 'কথার কথা'।
যথা-
মঙ্গল রাগ, রক্তপাত, যুদ্ধ, মানসিক দৃঢ়তা ইত্যাদির কারক গ্রহ।
শুক্র প্রেম, প্রীতি, যৌনতা, শৌখিনতা ইত্যাদির কারক গ্রহ।
এভাবেই,
শনি দুঃখ, জরা; বৃহস্পতি অর্থ, প্রজ্ঞা; রবি নেতৃত্বদানের সহজাত দক্ষতা, আত্মসম্মানবোধ; বুধ উপস্থিত বুদ্ধি... এভাবে বিভিন্ন গ্রহ আমাদের বিভিন্ন বেশিষ্ট্য তথা জীবনের বিভিন্ন দিকের কারক।
জন্মছকে চন্দ্র যে রাশিতে অবস্থান করে তাকে ঐ ব্যক্তির রাশি বলা হয়। সাথে আছে লগ্ন। এই লগ্ন থেকে পরপর বারোটা রাশির ঘরকে প্রথমভাব থেকে দ্বাদশভাব বলা হয়। এদের কার্যকারিতা নিম্নরূপ:
প্রথমভাব হল তনুভাব, অর্থাৎ শরীর। শারীরিক সুস্থতা ইত্যাদি লগ্ন থেকে বিচার করা হয়।
দ্বিতীয়ভাব ধনভাব, অর্থাৎ একজন কতটা আর্থিক দিক থেকে স্বচ্ছল হবে তা এখান থেকে বিচার করা হয়।
এর বিস্তৃত বিবরণে যাবো না, এভাবেই পরপর বারোটা ভাবের কার্যকারিতার বিবরণ দেওয়া হয়।
এরপর আছে বিভিন্ন রাশির অধিপতি গ্রহ। ধরা হয় অধিপতি গ্রহ নিজ রাশিতে অবস্থান করলে সুফল দিয়ে থাকে। যথা মঙ্গলের স্বগৃহ মেষ ও বৃশ্চিক, বুধের কন্যা ও মিথুন ইত্যাদি। তাছাড়া গ্রহের জন্য তুঙ্গ বা নীচস্থ রাশি ও এভাবে চিহ্নিত করা হয়।
আরো এ ধরনের অনেক স্বীকার্য আছে। তাদের বিশদ বিবরণ অপ্রয়োজনীয় বলে বর্ণনা করলাম না।
ধরা যাক একজনের লগ্ন মিথুন, দ্বিতীয়ভাবে তুঙ্গস্থ বৃহস্পতি। তো জ্যোতিষী তাকে বলবেন যে আপনার জীবনে অর্থভাগ্য বেশ ভালো। সত্যিই তার অর্থভাগ্য ভালো। পঁচিশ বছর বয়সে সে বেশ ভালো চাকরি পেয়ে গেলো।
দ্বিতীয়ত ধরুন কারো দাম্পত্য জীবন প্রবল অশান্তি চলছে। জ্যোতিষী বললেন অষ্টমে মঙ্গল থাকায় প্রবল মাঙ্গলিক দোষের কারণে বিবাহিত জীবনে সমস্যা হচ্ছে। একটা প্রবাল পড়ুন। পড়ার দু মাসের মধ্যে তাদের সাংসারিক অশান্তি মিটে গেলো।
এরকম ভুরি ভুরি উদাহরণ পাওয়া যাবে যেখানে জ্যোতিষশাস্ত্রের ভবিষ্যৎবাণী অব্যর্থ। এবং এটা বাস্তব ও, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে বেশ কিছু মিলে যায়। এবার কেন মিলে যায় তা বুঝতে গেলে আরেকটু তলিয়ে ভাবতে হবে।
প্রথমে জ্যোতিষের অন্তর্গত কারণ গুলি নিয়ে আলোচনা করবো।
জ্যোতিষে এক ই বিষয়ের ওপর বিভিন্ন কারকতা আরোপ করা হয়। যথা,
বৃহস্পতি জন্মছকে জ্যোতিষের স্বীকার্য অনুযায়ী শক্তিশালী হলে তার জীবনে অর্থকষ্টের সম্মুখীন হবার সম্ভাবনা কম।
আবার, তার ই জন্মছকে দ্বিতীয়ভাবে কোনো শুভ গ্রহ শক্তিশালী হয়ে অবস্থান করলে বলা হয়ে থাকে যে তার অর্থকষ্ট সচরাচর হবে না।
দ্বিতীয় ভাবের অধিপতি শুভ হলেও বলা হয় সে আর্থিক দিক থেকে সবল হবে।
কিন্তু, যে কোনো একটা হয়ে অপরটা না হলে কী হবে তা জ্যোতিষশাস্ত্র স্পষ্টভাবে বলেনা। বৃহস্পতি খুব শক্তিশালী, কিন্তু দ্বিতীয়ভাবে নীচস্থ রাহু, তখন জ্যোতিষীরা চলে যায় অভিজ্ঞতার প্রসঙ্গে। তখন তাদের দাবি হয় যে, এরকম সময়ে কী হয় সেটা অভিজ্ঞতা থেকে আস্তে আস্তে বুঝতে হবে। এখানে প্রথম সুসংজ্ঞায়িত স্বীকার্যের থেকে বেড়িয়ে, সুন্দর পিচরাস্তা থেকে বেড়িয়ে খানাখন্দওয়ালা পথে প্রবেশ। এখানে জ্যোতিষীকে তার বুদ্ধি(?) খাটাতে হয়।
এছাড়া, আরো একটি বিষয়; এখানে এই যে দ্বিতীয়ে শুভ গ্রহ থাকলে অর্থযোগ ভালো, বৃহস্পতি শুভ হলে অর্থযোগ ভালো এগুলি mutually exclusive event নয়, অর্থাৎ একটা হলে যে আরেকটা হবে না, তা নয়। তাই যে কোনো ঘটনার পূর্বাভাষের ক্ষেত্রে ঘটনাটা ঘটার সম্ভাবনা বাড়তেই থাকে, ঘটনাটা অর্থপ্রাপ্তিযোগ হোক, বা অর্থনাশযোগ। কারণ জ্যোতিষে প্রত্যেক বিষয়ের জন্যই একাধিক কারক থাকে। এখানে যুক্তিগত দিক থেকে খুব বড় ছিদ্র লুকিয়ে আছে যা নিয়ে পরে আলোচনায় আসবো।
এবারে আসবো অ-জ্যোতিষীয় ব্যাখ্যায়।
একজন ব্যক্তির বয়স ও মুখাবয়ব দেখেই অনেকাংশেই অনেকটাই ধারণা করে ফেলা যেতে পারে। যেমন, তিরিশ বছর বয়সী কোনো ভদ্রমহিলা জ্যোতিষীর কাছে গেলে চোখ কান বুজেই প্রায় বলে ফেলা যায় যে দাম্পত্য সমস্যার জন্য তিনি গিয়েছেন। পনের বছরের ছেলেকে নিয়ে মা গেলে তা যে পড়াশোনার জন্য তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। এভাবে বহু সম্ভাব্য ফ্যাক্টর কাজ করে যা জনমানসে জ্যোতিষকে অভ্রান্ত হিসেবে প্রতিপন্ন করতে সহায়তা করে ।
এক দম্পতির বিবাহিত জীবন সুখের না। জ্যোতিষী বললেন ছক দেখে অমুক পাথর পরতে, পরে তাদের সমস্যা ও মিটে গেলো। এখানে সবথেকে বড় ফ্যাক্টর হল দাম্পত্য সমস্যা এমনিতেও একদিন না একদিন মেটার সম্ভাবনা প্রবল। দ্বিতীয়ত, মানসিক অশান্তি মেটানোর ক্ষেত্রে একটা পাথরের placebo effect এর কথা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। অথচ দিনের শেষে দাঁড়াবে অমুক পাথর পরে তাদের অশান্তি মিটেছে। মানসিকভাবে ভেঙে পড়া একজন ঐ পাথর পরার পরে যদি ভালো হয়, তবে তার মনে ঐ পাথরের উপকারিতা গেঁথে যাবেই। এভাবেই তা সংক্রামিত হবে তার মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মে।
জ্যোতিষী মাত্রেই প্রতারক, শঠ, ভন্ড - এটা ভেবে নেওয়ার থেকে বড় ভুল আর হয় না। তাকে যা পাঠ্যবইতে শেখানো হয়েছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যাবে তিনি মনোযোগ দিয়ে তাই করছেন। হতেই পারে তিনি সরল বিশ্বাসে তার ক্লায়েন্টের ভালো চিন্তা করেই রত্ন ধারণ করার উপদেশ দিচ্ছেন, কারণ রোজ হাজার হাজার জন্মছক দেখে জ্যোতিষ কীভাবে অভ্রান্ত ভবিষ্যৎবাণী করে সে বিষয়ে তার দৃঢ় প্রত্যয় জন্মেছে। এবারে এটা কেন হয় সে বিষয়ে আলোচনা করবো।
আগে বলেছিলাম যে জ্যোতিষে এক ই ঘটনার জন্য জন্মছকে থাকা একাধিক কারক সর্বদা mutually exclusive নয়(যথা দ্বিতীয়ভাবে শুভ গ্রহ থাকলেই যে বৃহস্পতি শুভ হবে না তা নয়, যেক্ষেত্রে দুটোই আলাদাভাবে স্বচ্ছল জীবনযাত্রাকে নির্দেশ করে)। তাই যে কোনো ঘটনার পূর্বাভাষ সঠিক প্রতিপন্ন হবার সম্ভাবনা বাড়তেই থাকে। এতে যুক্তির দিক থেকে বড়মাপের ছিদ্র রয়েছে। কেন?
প্রথমত, human bias যেভাবে কাজ করে, তা হল, ধরুন দুজনের জ্বর হয়েছে। একজন হোমিওপ্যাথি বেশি বিশ্বাস করেন। আর একজন অ্যালোপ্যাথি। দুজনেই জ্বর সারাতে এক ই সাথে হোমিওপ্যাথি আর অ্যালোপ্যাথি ওষুধ খেলেন। জ্বর সেরে গেলো। হোমিওপ্যাথি বিশ্বাসী ভাবলেন, ভাগ্যিস হোমিওপ্যাথি ওষুধ টা খেয়েছিলাম, ওটার জন্যই কমেছে। অ্যালোপ্যাথি বিশ্বাসী ও অ্যালোপ্যাথি নিয়ে অনুরূপ ভাবলেন।
এক ই ভাবে, ধরুন একজনের বৃহস্পতি তুঙ্গস্থ, কিন্তু দ্বিতীয়ভাবে নীচস্থ রাহু। জ্যোতিষী দেখলেন যে তার অর্থাবস্থা বেশ ভালো। তিনি বলবেন, ঐ তো, দেখেছেন, এই তুঙ্গী বৃহস্পতির জন্যই আপনার আজ এত সুনাম, অর্থ। আপনাকে তো আগেই ভবিষ্যৎবাণী করেছিলাম। এতে যেমন জ্যোতিষীর আত্মপ্রত্যয় জন্মাবে যে তিনি ঠিক ই বলেছিলেন, ক্লায়েন্টের মনেও জ্যোতিষের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জন্মাবে। কিন্তু ঐ bias এর কারণে উনি লক্ষ্যই করবেন না যে দ্বিতীয়ে নীচস্থ রাহু আছে, যাতে অর্থনাশ হবার কথা। কারণ আমাদের মস্তিষ্ক আমাদের সেভাবেই interpret করায় যেভাবে আমরা করতে চাই, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই।
এক ই ব্যক্তি ধরুন আরো কদিন পর কিছু টাকা চুরি যাবার পর জ্যোতিষীর কাছে এলেন। জ্যোতিষীই আবার বলবেন, দেখেছেন, এই দ্বিতীয়ে রাহু কত ক্ষতিকর। আপনার অর্থনাশ করিয়ে ছাড়লো। আবার কদিন পর লটারি জিতলেই তা হবে বৃহস্পতির কল্যাণ। এভাবে একটা never ending loop চলতেই থাকবে যা প্রতিটি step এ জ্যোতিষকে অভ্রান্ত প্রতিপন্ন করবে, ক্লায়েন্টের কাছেও, জ্যোতিষীর কাছেও। এর কারণ?
জ্যোতিষে ঘটনাগুলি পরস্পর বিচ্ছিন্ন নয়। জন্মছক দেখলে প্রায় সবরকম ঘটনার ই সংকেত পাওয়া যাবে। আমরা যেভাবে যখন সেটার অর্থোদ্ধার করতে চাইবো তখন সেটাকে সেভাবে বেছে নেবো।
বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে আবশ্যক শর্তাবলী (neccesary condition) আর পর্যাপ্ত শর্তাবলী (sufficient condition)। জ্যোতিষ আবশ্যক শর্তাবলী বলে, পর্যাপ্ত শর্তাবলী বলেনা। অন্যভাবে বলতে গেলে, জ্যোতিষ বলে যে আর্থিক দিক থেকে সবল হতে গেলে শুভ বৃহস্পতি ও শুভ দ্বিতীয়ভাব চাই। কিন্তু বৃহস্পতি শুভ আর দ্বিতীয়ভাব অশুভ হলে ব্যক্তি অর্থবান হবে কিনা তা জ্যোতিষ সরাসরি বলে না। তাই ই জ্যোতিষশাস্ত্রকে সরাসরি falsify করা অসম্ভব। সাধারণ সম্ভাবনা তত্ত্বই বলে যে এরকম contradictory indication একটা জন্মছকে থাকার সম্ভাবনা প্রবল, কারণ এক ই বিষয়ের জ্যোতিষে একাধিক কারক থাকে।
এক ই কারণে জ্যোতিষীদের যে বলতে বলা হয় একশো টা জন্মছক দেখে বলুন কজন মেধাবী, কজন নয়, যদি বলতে পারেন তবেই বুঝবো জ্যোতিষ ঠিক - এ ধরণের পরীক্ষার কোনো ভিত্তিই নেই, কারণ জ্যোতিষ সে ব্যাপারে যথেষ্ট ধারণা দিতে পারেনা। জ্যোতিষী দশ রকম সংকেত দেখবেন, হয়তো পাঁচটা বলবে এ পড়াশোনায় ভালো, পাঁচটা বলবে পড়াশোনাতে খারাপ। এরপর জ্যোতিষী তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা(?সেই এক ই loophole) থেকে যা মনে হবে বলে দেবেন। কিন্তু তা স্বাভাবিক কারণেই সঠিক হবেনা।
দিনের পর দিন ক্লায়েন্ট দেখতে দেখতে মোটামুটিভাবে জ্যোতিষীদের একটা অভিজ্ঞতা হয়েই যায় যাতে সে দেখেই বলে দিতে পারে কে কেন এসেছে। এই ক্ষেত্রে কাকে কী বলে সহজে চট করে মন জয় করতে হয় তারা সহজেই বুঝে ফেলে। এ জন্যই জ্যোতিষী হতে গেলে উপস্থিত বুদ্ধির প্রভূত প্রয়োজন।
মধ্যবয়সী ভদ্রমহিলা : আপনি সবার জন্য করবেন কিন্তু কারো থেকে তার দাম পাবেন না।
চল্লিশোর্ধ্ব ভদ্রলোক : আপনার বস আপনাকে অঢেল খাটিয়ে নেবে, কিন্তু তার ফল হিসেবে আপনি কিছুই পাবেন না।
পনের বছরের ছেলের মা : আপনার ছেলে পড়াশোনা করেনা তা না, ব্রেন ভালো, কিন্তু পড়া মনে রাখতে পারেনা, চট করে ভুলে যায়। এটা গ্রহের দোষ, ওর কোনো দোষ নেই।
এরকম আরো অনেক রয়েছে।
শেষে আসা যেতে পারে কিছু চূড়ান্ত ধূর্ত ব্যবসায়ীর কথায়। জ্যোতিষকে কাজে লাগিয়ে মানুষকে লুটে নেবার জন্য এরা আবিষ্কার করেছে নিত্যনতুন পন্থা।
প্রথমত, ভয় দেখিয়ে - (সত্য ঘটনা) একজন সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধাকে এক জ্যোতিষী বলে যে তাঁর বৈধব্যযোগ আছে নিকটে। ওনার স্বামী তা শুনে প্রায় শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। পরবর্তীকালে জ্যোতিষী সেজে তার কাছে গিয়ে আয়ুরেখা এত লম্বা এই সেই বলে ভুলভাল বুঝিয়ে রক্ষা করা হয়।
দ্বিতীয়ত, একটি ছেলে জ্যোতিষের কবচ কিছুতেই পড়বেনা। ব্যাবসা যাতে মার না খায় তার জন্য জ্যোতিষী বানালো এক অভিনব পন্থা। কী না, ছেলে না করে ছেলের মা কিছু নিয়ম আচার যজ্ঞ পালন করলেও ছেলের উপকার হবে। ব্যাস, জ্যোতিষীর আয়ের পথ সুগম।
তৃতীয়ত, ধরি মাছ না ছুঁই পানি। সরকারি চাকরির বিষয়ে কিছু দূরদর্শনে বলা যাবে না। তার জন্য চেম্বারে আসুন। এতে কোনো অনলাইন রেকর্ড থাকলোনা যে তিনি ভুল বলেছেন। আর বাকি যা অনলাইন প্রেডিকশন, তা ঐ নষ্ট্রাদামুসের ভবিষ্যৎবাণীর অনুরূপ। আপনি সবার জন্য করেন দাম পান না ইত্যাদি ইত্যাদি। আর বেসরকারী চাকরির ক্ষেত্রে প্রেডিকশনের এই রিস্ক নেই, কারণ একজন কাজ খুঁজলে মাইনে ভালো হোক বা খারাপ, কিছু না কিছু পেয়েই যাবে।
বর্তমানে ছদ্মবিজ্ঞানের প্রচারে জ্যোতিষীদের ভূমিকা অতি উল্লেখযোগ্য। রাত ন'টায় ন'মিনিট প্রদীপ জ্বালানো কেন শুভ তার বিস্তৃত ব্যাখ্যা নিয়ে এনারা সেদিন ই এক বিখ্যাত সংবাদমাধ্যমে উপস্থিত হয়েছিলেন। এদের থামানোর কোনো উপায় নেই সরকারি হস্তক্ষেপ ছাড়া।
আসল ব্যপারটাই বুঝলাম না। ধরা যাক বৃহস্পতি আর রাহু, দুইই দেখা গেল জন্মলগ্নে শুভ - অর্থাৎ আপনার ভাষায় "দুটি কারকই" শুভ। তাহলে জ্যোতিষীর গণনা নিশ্চিতভাবেই ধনলাভ। এবার এই গণনা অভ্রান্ত হবেই? কেন? প্রকৃত জীবনে এই বেস্পতি বা রাহুর সাথে ধনলাভের সম্পর্কটা কি?
গণনা তাই বলবে, কিন্তু তা অভ্রান্ত অবশ্যই হবে না। বাস্তবে একটি বিষয়ের ওপর এত রকমের কারকতা আরোপ করা হয় যে, সাধারণ সম্ভাবনা তত্ত্ব অনুযায়ী, একটা না একটা বিপক্ষে যাবেই। আর যদি কোনোভাবে তা নাও হয়, তবে সরাসরিই বলা যাবে যে তত্ত্বটি ভুল, directly falsified। আমি সেই আঙ্গিকগুলি তুলে ধরতে চেয়েছি যেখানে জিনিসটা by construction ই directly falsifiable নয়। খুব বিরল কোনো ক্ষেত্রে যদি অমন কিছু পাওয়া যায় তবে সেখানে সরাসরিই চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো যাবে যে এটা ভুল। আর যেখানে এটা সত্যি নয়, সেখানে ঠিক কী কী কুযুক্তির মাধ্যমে একে সঠিক প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়, তাই লিখেছি।
আর এখানে যা যা লেখা, মানে স্বীকার্যের মধ্যে, তার বাইরেও আরো হাজারো স্বীকার্য আছে। তার কোনোটাই বিপক্ষে নয়, এটার সম্ভাবনা একদম ই কম। তবুও, যদি পাওয়া যায় তবে সেক্ষেত্রে directly falsify করা যাবে।
-সুকল্প
আর বাস্তব জীবনে অবশ্যই কোনো সম্পর্ক ই নেই। এগুলি বলা হয় কিছু পুরাণের গল্পগাথাকে কেন্দ্র করে। আমি কেন এই বিষয়টি তত্ত্ব হিসেবেই invalid সেটা দেখানোর চেষ্টা করেছি।
জ্যোতিষশাস্ত্রচর্চার মতোই লেখাটিও ধোঁয়াশায় ভরা। এই সংজ্ঞা ও মূল ধারণাগুলি বোঝানো হয় নি, যেমন, লগ্ন, অধিপতি গ্রহ ইত্যাদি। তেমনি তুঙ্গ বা নীচস্থ বললে এ দুটিকে interchangeable মনে হয়। আদতে এ দুটি বিপরীত অবস্থানের সাথে যুক্ত। এই প্রাথমিক ধারণাগুলি পরিষ্কার না হলে পাঠক কেবল শঠতার গল্পই পড়বেন, যা মোটামুটি জানা আছে।
কেবল শঠতার কথা একেবারেই লিখতে চাইনি, কেন এরকম মনে হচ্ছে বুঝতে পারলাম না। এই বস্তুটি শঠতা বাদ দিলেও তত্ত্ব হিসেবেও যে অসম্পূর্ণ, সেটাই লিখতে চেয়েছি। আপনি যেটা বললেন যে ওগুলি আরো বিস্তৃতভাবে ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন ছিল, হয়তো আপনি সঠিক। কিন্তু সেক্ষেত্রে মূল পয়েন্ট থেকে অনেকটাই সরে আসতে হত। সেজন্যেই ওর ওপরে বিস্তারিতভাবে বিস্তারিতভাবে লিখিনি।