পৃথিবীর প্রথম ১০০টি জীবাশ্ম জ্বালানি শিল্পগোষ্ঠী বিশ্বের মোট দূষণের ৭০% এর বেশী দূষণ ঘটায়। অপরদিকে সারা পৃথিবীর প্লাস্টিক স্ট্র ব্যবহারের ফলে ঘটা দূষণের পরিমাণ ১% এরও সামান্য কম। তবুও দূষণ রোধে জনপ্রিয় শ্লোগান প্লাস্টিক স্ট্র ব্যবহার বন্ধ করতে বলা।
একইরকম ভাবে দেখা যায়, একজন ব্যক্তি দৈনন্দিন জীবনে সর্বাধিক জীবাশ্ম জ্বালানি খরচ করলেও তার পরিমাণ দাঁড়ায় ৮.১ টনের কাছাকাছি, যেখানে গোটা বিশ্বে একদিনে জ্বালানিজনিত দূষণের পরিমাণ ৩৩০০ কোটি মেট্রিক টন। অর্থাৎ এটা স্পষ্ট যে কোনো ব্যক্তির এসি, ফ্রিজ, গাড়ির ব্যবহারের ফলে হওয়া দূষণ পরিবেশে সামান্যতম প্রভাবটুকুও ফেলে না।
পরিবেশ রক্ষায় সবচেয়ে জনপ্রিয় শ্লোগান, 'গাছ লাগান প্রাণ বাঁচান'। অথচ, স্রেফ আমেরিকাই এখনো অবধি হওয়া জঙ্গল ধ্বংসের ৭৫% এর ভাগিদার। আমাজন জঙ্গলকে গত ৫০ বছরে ১৭% ছাঁটা হয়েছে। প্রতিটাই করেছে রাষ্ট্রের অনুমোদনপ্রাপ্ত কোনো না কোনো বৃহৎ কর্পোরেট। ফলে আমি আপনি আজকে একটি করে গাছ লাগিয়ে পরিবেশের ১% উন্নতিও করতে পারবো না। তাছাড়া একটি পুরনো গাছের সাথে একটি বৃহৎ বাস্তুতন্ত্র জুড়ে থাকে। নতুন গাছ লাগিয়ে সেই পরিবেশ গড়ে তোলা যায় না। বিখ্যাত পরিবেশবিদ জঁ বেলেমি ফস্টার তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, বিশ্বে বর্তমানে যত জীবাশ্ম জ্বালানি আছে, তার প্রায় সাড়ে তিনগুণ গাছ লাগালেও পরিবেশ দূষণ রোধের জন্য যথোপযুক্ত অরণ্য সৃষ্টি সম্ভব না। তিনি অঙ্ক কষে আরও দেখিয়েছেন, একটি প্রযুক্তির দূষণ রোধে আনা আরেকটি প্রযুক্তি গুণোত্তর প্রগতিতে দূষণ বৃদ্ধিই করবে যতক্ষণ না পুঁজির স্বার্থে প্রযুক্তির ব্যবহার বন্ধ হচ্ছে। ফলে গাছ লাগানোর চেয়ে অনেক অনেক বেশী জরুরি গাছ বাঁচানো। আর যেসব রাষ্ট্র এই অরণ্য ধ্বংস করে চলেছে বিশ্ব জুড়ে, তারাই এমন পরিবেশ দিবসের দিন বেছে গাছ লাগানো বা স্ট্র বন্ধের বিজ্ঞাপন দেয়, অথচ পুঁজিপতি সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে অগ্নিবর্ষণ করে না।
আদতে বিষয়টা খুব সহজেই বোধগম্য। বিশ্বে সেসব প্রযুক্তিই ব্যবহৃত হয় যা লাভজনক। বিজ্ঞানী ও প্রাযুক্তিকেরা বাঁধ নির্মাণ বা সবুজ বিপ্লবের মতো প্রযুক্তির বারংবার বিরোধিতা করে গেলেও আর্থিক লাভের স্বার্থে রাষ্ট্র ও তাকে অর্থ যোগান দেওয়া ব্যবসায়ীরা বারবার এসব প্রযুক্তি চালু করতে চেয়েছে। সেই স্বার্থে কেড়ে নিয়েছে প্রকৃতির আসল বন্ধু আদিবাসীদের। গঙ্গা, যমুনা দূষিত করে বেড়েছে মিনারেল ওয়াটারের ব্যবহার। মুনাফা করতে তারা শুষে নিয়েছে মাটির জল। অথচ, প্রাকৃতিক জল খেয়ে বেঁচে থাকা আদিবাসিন্দারারা পড়েছেন সঙ্কটে। জঙ্গলজীবীরা নিজেদের বাঁচার স্বার্থেই জঙ্গল বাঁচায়। সুন্দরবনে বাঘের আক্রমণে স্বামী হারানো স্ত্রীয়েরাও বাঘ নিয়ে জিজ্ঞাসা করলে বলেন, বাঘ আছে তাই তাঁরা আছেন। বাঘ না থাকলে তাঁরাও থাকবেন না। প্রকৃতি নিয়ে এই বোধ যাঁদের আছে, তাঁদের থেকে জঙ্গল কেড়ে নিচ্ছে আদানি-আম্বানিরা। চিপকো আন্দোলনের মতো সশস্ত্র আন্দোলন গড়ে তাও জঙ্গল বাঁচিয়ে চলেছেন তাঁরা। একমাত্র রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তাঁদের শক্তিশালী প্রতিরোধই জঙ্গল ও প্রকৃতি বাঁচাতে পারে। পরিবেশ দিবসে পরিবেশ বাঁচানোর যথার্থ সদিচ্ছা থাকলে তাই পুঁজিবাদীদের বিরুদ্ধে জঙ্গলজীবীদের সাথে গলা মিলিয়ে বলুন,
"গাঁও ছোড়াব নেহি, জঙ্গল ছোড়াব নেহি
মাহে-মাটি ছোড়াব নেহি, লড়াই ছোড়াব নেহি"
আমাদের মতো সুবিধাপ্রাপ্ত শহুরে মানুষদের পক্ষে এগুলো বলা অতি সহজ। সরকার , দেশীয় বা বিদেশী , দায়ী অবশ্যই। বাজার ব্যবস্হাও। তবে সেই ব্যবস্থায় ভোক্তা হিসাবে আমাদের ভূমিকা অস্বীকার করা যায় না। বৃহৎ শিল্প গড়ে ওঠে আমাদের চাহিদার যোগান দিতেই। অতএব জীবনযাত্রা পরিবর্তনের দায় সকলের।
"অর্থাৎ এটা স্পষ্ট যে কোনো ব্যক্তির এসি, ফ্রিজ, গাড়ির ব্যবহারের ফলে হওয়া দূষণ পরিবেশে সামান্যতম প্রভাবটুকুও ফেলে না"
একদম ঠিক কথা। ঠিক এই কারনেই আমি এসি, ফ্রিজ আর গাড়ির ব্যবহার একটুও কমাইনি।
"একইরকমভাবে দেখা যায়, একজন ব্যক্তি দৈনন্দিন জীবনে সর্বাধিক জীবাশ্ম জ্বালানি খরচ করলেও তার পরিমাণ দাঁড়ায় ৮.১ টনের কাছাকাছি, যেখানে গোটা বিশ্বে একদিনে জ্বালানিজনিত দূষণের পরিমাণ ৩৩০০ কোটি মেট্রিক টন। অর্থাৎ এটা স্পষ্ট যে কোনো ব্যক্তির এসি, ফ্রিজ, গাড়ির ব্যবহারের ফলে হওয়া দূষণ পরিবেশে সামান্যতম প্রভাবটুকুও ফেলে না। "
সুন্দরবনে বাঘ আছে, তাই আছেন, বাঘ না থাকলে থাকবেন না - এটা কোন কারণে বলা? পর্যটন?
বেশ ঘাঁটা কনসেপ্টের লেখা।
এই প্ল্যাস্টিক স্ট্রয়ের হিসেব কিসের সাপেক্ষে? একজন মানুষ, গোটা রাজ্য? দেশ?
একজন মানুষ শুধু স্ট্র নয় আরো অনেক কিছু ব্যবহার করেন যেগুলো একবার ব্যবহার করে ফেলে দেওয়া প্ল্যাস্টিক। তো এলাকাভিত্তিক মোট প্ল্যাস্টিকের কনজাম্পশান ও ডিস্পোজাল এবং পরিবেশের উপর তার প্রভাবের কোন ডেটা পয়েন্ট দিতে পারেন? নাহলে এটা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না।
এবার এই একজন সর্বোচ্চ ফসিন ফুয়েল ব্যবহার করে ৮.১ টন এইটা যদি নেড়েচেড়ে দেখি তাহলে দেখতে হবে এরকম ব্যক্তিগত ব্যবহারকারী একটা এলাকায় সে মিউনিসিপাল বা রাজ্য, কতজন? এবং কেন? এর কারণ কি গণপরিবহনের অভাব নাকি নিতান্তই ব্যক্তিগত শো অফের অভ্যাস?
এই জায়গাতে এসেই এটা হয়ে যায় পলিসির ব্যপার। পলিসি হিসেবে রাষ্ট্র যদি গণপরিবহনের প্রাচুর্য্য ও স্বাচ্ছন্দ্যে জোর দেয় তাহলে জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহার অনেক নিয়ন্ত্রিত হয়। ফোর্ড বা টয়োটা চাইবেই গাড়ি চলাচলের রাস্তা বেশী হোকবট্রেনলাইন কম। তাতেই তাদের লাভ এবং এর জন্য তাদের শুধু দোষ দেওয়াটা খানিক সেফ টার্গেটে ঢিল ছোঁড়া। কোন ব্যক্তি তাদের কী বলল তাতে তাদের কিস্যু যায় আসে না।
এখানেই আসে রাষ্ট্রের ভূমিকা। সে টয়োটা ফোর্ডের সুবিধেমত কাজ করবে না দীর্ঘপমেয়াদী পরিকল্পনা মেবে। রাষ্ট্রনেতাদেরকে নির্বাচিত হবার জন্য নির্ভর করতে হয় ব্যক্তিবিশেষের ভোটের উপর। ব্যক্তি এখানে কিছুটা গুরুত্বপূর্ণ তাই এখানেই পলিসি বদলের জন্য চাপ দেওয়া উচিৎ।
এতেও কিন্তু ব্যক্তিবিশেষের দায়িত্ব খুব কমে না। বাড়ি থেকে চট বা কাপড়ের ব্যপগ সঙ্গে না নিয়ে গিয়ে 'আজারে বিক্রেতাকে প্ল্যাস্টিক ব্যাগ দিতে বলা ও বাধ্য করা এরকম একটি দায়িত্বজ্ঞানহীন ও ক্ষতিকর আচরণ।
উফ গুচ্ছ টাইপো। বক্তব্য বোঝা যাচ্ছে আশা করি।
দমদির বক্তব্যে ক। প্লাস্টিক নিয়ে আর আলাদা করে তাই বললাম না।
গাছ কাটা প্রসঙ্গে, সেটা তো আটকানো দরকার বটেই, কিন্তু গাছ লাগানোয় ১% ও লাভ নেই, এটা কোদ্দিয়ে এল? আবারো সেই কতজন লোক কত গাছ লাগাচ্ছেন, কীরকম গাছ সেসব প্রশ্নও আসবে, নইলে এসব কোয়ান্টিটেশন হচ্ছে কীভাবে?
প্রসঙ্গত বলি, আমার কাজ জুমচাষীদের নিয়ে, তো তাঁরা তো প্রতিবছর জুমের জন্য জঙ্গল পোড়ান, কিছু খুব বড় গাছ বাদে সবই পোড়ে। এবার এক বছর সেখানে চাষ হয়ে গেলে ফেলে রাখা হয়, দু'তিন বছর বাদে প্রচুর রোদ বৃষ্টিতে এমন জঙ্গল হয়ে যায়, বোঝার কোন উপায়ই নেই কাটা হয়েছিল। আমার কাছে অনেক ছবি আছে। আমরা এছাড়াও সাটেলাইট ইমেজ দিয়ে কোয়ান্টিটেট করি, তাই হিসেব করেই বলতে পারি। হিসেব অনুযায়ীই এই রাজ্য দেশের কতিপয় অঞ্চলের মধ্যে যেখানে ফরেস্ট কভার বেড়েছে আর ফরেস্ট কভার % দেশের প্রথম তিন রাজ্যের মধ্যে।
শাল সেগুন মেহগনির ও প্রচুর জঙ্গল আছে। খুব বড় হলে বনদপ্তর থেকেই কাটে, জনজাতিদের জন্য কিছু নিয়মকানুন সহ অনুমতির গল্প আছে, তাতে ঢুকছিনা। কিন্তু এখানেও দেখেছি কাটার কিছু বছরের মধ্যে জঙগল হয়ে যেতে। একসঙ্গে সব কাটাও হয়না।
তাই ওই ব্লাংকেট কাটা চলবেনা, বলারও খুব যৌক্তিকতা দেখিনা।
হ্যাঁ,পাহাড়ে রাস্তা চওড়া করার জন্য প্রচুর গাছ কাটা পড়তে দেখলাম, উত্তর পুবে অরুণাচল অব্দি ফোর লেন করার জন্যেও, সেগুলো নিয়ে প্রশ্ন করার দরকার ছিল, সব জায়গাতেই এটা দরকার ছিল কিনা। কোন প্রশ্ন, প্রতিবাদ কিস্যু দেখিনি। আমার যা মনে হয়েছে, বহু জায়গাতেই আদৌ কোন রোড ট্রাফিক দেখিনি, যাতে মনে হয়েছে দরকার।
আবার আমরা যে পাহাড়ের রাস্তা দিয়ে যাই, সেগুলিতে এত বাঁক, এত সময় লাগে, বিপজ্জনকও, বর্ষায় বিশেষ করে, টিলা থেকে লালমাটি ধুয়ে এলে, সেখানে রাস্তার ধারের টিলাই সরিয়ে দিতে দেখছি, এবার এখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা এমনিতেই এত মুশকিলের আর তার জন্য পাহাড়ের জনজাতিদেরই এত সমস্যায় পড়তে হয়, ম্যালেরিয়া মহামারীর সময়েই দেখেছি অসুস্থ ছেলে মেয়ে কাঁধে বাবা মা তিন চার পাঁচ ঘণ্টা জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে ছুটে এসেছেন, এখনো কোন কোন জায়গায় আমাদের মেডিকাল টিম নিয়ে যেতে গেলে তিন চার ঘ্ণটা হাঁটতে হয়, প্রসূতি মায়েদের কী বেজায় সমস্যা, অন্য রোগভোগ তো ছেড়েই দিলাম, বহু কাণ্ড করে এম্বুল্যান্স এর বন্দোবস্ত করলেও যাওয়ার রাস্তা নাই, তো সেখানে জঙ্গল কেটে রাস্তা বানানোতে ব্লাংকেট অন্যায় অপকার দেখিনা।
মানুষ শুধুই নিজেদের মত অরণ্যে থেকে যেতে চান অসুখ বিসুখ অশিক্ষা সব নিয়ে, এমনটাও ঠিক নয়। নিরন্তর ম্যালেরিয়ায় বাচ্চাগুলো ভুগুক, মরুক, এটা ঠিক তাঁ্রাও চাননা, অরণ্যজীবনের সব কিছুই সতইই সুন্দর, রোমান্টিক, বন্যেরা বনেই সুন্দর, অতটাও ঠিক নয়। বালেন্সের দরকার কোথাও। পরিবেশভাবনার এই প্রশ্নগুলোতেও।
পার্সেন্টেজগুলোর তথ্যসূত্র হিসেবে লিঙ্ক দিলাম। https://harvardpolitics.com/climate-change-responsibility/
প্লাস্টিকের তথ্য সারাবিশ্বে প্লাস্টিক ব্যবহারের ফলে। ব্যক্তির সারাজীবন।
বাঘের বিষয় স্রেফ পর্যটন না। বাঘ না থাকলে জঙ্গল থাকবে না, জঙ্গল না থাকলে মধু, চিংড়ি বা যেকোনো জীবিকাই থাকবে না।
আর কর্পোরেট কৃত্রিম চাহিদা তৈরি করে। নিজেরা ব্যবহার কমালে কর্পোরেট উৎপাদন কমাবে - এটা খুবই হাইপোথেটিকাল এবং আদর্শবাদী দাবী। এরবকোনো বস্তুগত ভিত্তি নেই।
এই লেখায় পরিবেশ দূষণের মূল কারণ হিসেবে কর্পোরেটের ভূমিকা নিয়ে কিছু কথা লিখেছিলাম। সেখানে কর্পোরেটের সাপেক্ষে পরিবেশ দূষণে ব্যক্তি মানুষের ভূমিকা কত নগণ্য, তার আলোচনা করায় অনেকেই সম্ভবত ভুল বুঝেছেন যে, ব্যক্তির পরিবেশ দূষণে কোনো ভূমিকাই নেই। আদতে তা না, একেকজন ব্যক্তি মানুষও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করতে পারেন। যেমন,
১. সবার প্রথমে এবং সবচেয়ে জরুরি কাজ হলো শ্রমজীবী, আদিবাসী, জঙ্গলজীবী মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং পরিবেশ বাঁচানো সহ সার্বিকভাবে কর্পোরেটের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে সাহায্য করা। রাষ্ট্রের ইচ্ছে না থাকলে কর্পোরেটকে ঠেকানো সম্ভব না। কিন্তু একজন ব্যক্তি রাষ্ট্রের আচরণের বিরুদ্ধেও সরবটুকু তো হতেই পারে।
২. ফ্রুগাল লাইফস্টাইল নির্বাহ করা জরুরি। অর্থাৎ প্রয়োজনের অধিক ব্যয় যতটা সম্ভব কমাতে হবে। স্রেফ এই করেই একজন ব্যক্তি নিজের চারপাশের দূষণ অনেকটা কমাতে পারে। কোন জিনিসে দূষণ হবে, তা ভেবে লাভ নেই। বরং প্লাস্টিকের ব্যাগ হোক বা পাটের, যেটাই হোক, সেটাকে বারংবার ব্যবহারের চেষ্টা করলে সপ্তাহান্তে বর্জ্যের পরিমাণ কমে। একই কথা প্রযোজ্য ব্যক্তিগত গাড়ি বা এসির ক্ষেত্রে। গ্রীনহাউস গ্যাসের কথা ভেবে লাভ নেই। নিজের জীবন নির্বাহের ক্ষেত্রে যতটা না করলে নয়, ততটুকু ব্যবহার করাই যথেষ্ট। সেটুকু ব্যবহারে এমনকিছু দূষণ হয় না।
৩. গাছ লাগানো নয়, গাছ কাটা আটকানো। যেখানে যতটা সামর্থ্য, তা সম্বল করে প্রাচীন গাছ বাঁচানোর দায়িত্ব নিতে হবে। শুধু জঙ্গল না, রাস্তার পাশের, মাঠের এমনকি নিজের বাড়ির গাছও বাঁচাতে হবে।
৪. ফাঁকা চাতাল, রাস্তার ধার, আল - এসব কংক্রিটে বাঁধানো আটকাতেই হবে। প্রকৃতি নিজের নিয়মেই ফাঁকা জায়গায় বাস্তুতন্ত্র গড়ে তোলে, স্রেফ কংক্রিটে ঢেকে না দিলেই হলো। এছাড়াও পথের ধারের আগাছা মেরে না ফেলা দরকার। মানুষের কাছে যা আগাছা, তাকে ভিত্তি করেও বহু পাখি, পোকামাকড় বেঁচে থাকে।
৫. পরিবেশ মানে শুধু গাছ না। সাপ, বেজি, শেয়াল, বাঘরোল ইত্যাদিকে অযথা ভয় না পেয়ে এদের রক্ষা করুন। এদের বাঁচানো দরকার। আর ফেরাল ডগস অর্থাৎ রাস্তার কুকুরের এবং পারলে বেড়ালেরও লাইগেশন করান। এটুকু একজন ব্যক্তি করতেই পারেন।
মোটামুটি এটুকু করলেই একজন ব্যক্তির পক্ষে পরিবেশ নিয়ে অনেকটা কাজ করা সম্ভব। ১ আর ২ কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্রের মদতে চলা কর্পোরেটের বিরোধিতা করুন ও নিজের ব্যবহারে খরচ কমান, প্রকৃতিকে নিশ্চয়ই ভালো রাখা যাবে।
জয়র্ষিবাবু,
মনে হয় বুঝতে পেরেছি আপনি কি বলতে চেয়েছেন। আমি জানি না আপনি এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কিনা, হয়ত খুব সাধারণ ভাবে বোঝানোর জন্য এই উদাহরণ বা এইভাবে লিখেছেন। তবুও দুইএকটা কথা বলে রাখি, এই ব্যাপারটা আরো একটু বেশী জটিল।
আপনি যে লিখেছেন,
অর্থাৎ এটা স্পষ্ট যে কোনো ব্যক্তির এসি, ফ্রিজ, গাড়ির ব্যবহারের ফলে হওয়া দূষণ পরিবেশে সামান্যতম প্রভাবটুকুও ফেলে না।
এটা ঠিক নয়।
এখানে 'দ'-দি যেটা লিখেছে সবচেয়ে বড় ইমপ্যাক্ট আনতে পারে সরকার দ্বারা এনফোর্স করা নানা পলিসি। এর থেকে বড় কিছু ঔষূধ নেই।
আজকালকার দিনে দূষণ কমানোর জন্য মোটামুটি তিনটে সিনারিও ধরে অ্যানালেসিস করা হয়ঃ
১) স্টেটেড পলিসি সিনারিও - মানে আজকের দিনে যে যে পলিসি এনফোর্স করা আছে সেই মেনে চললে আমরা কোথায় দাঁড়াবো
২) সাষ্টেনেবল ডেভেলপমেন্ট সিনারিও - মানে নতুন নতুন সব গ্রীণ এনার্জি ইত্যাদিতে ইনভেষ্ট করলে আমরা কোথায় দাঁড়াবো
৩) নেট জিরো এমিশন বাই ২০৫০ - আজকাল বেশীর ভাগ বড় বড় কোম্পানীতেই এই টার্গেট আছে, অনেক দেশে পলিসি ইমপ্লিমেন্ট করার চেষ্টা চলছে এটা অ্যাচিভ করার জন্য
এবার যদি "নেট জিরো এমিশন বাই ২০৫০" দ্যাখেন তাহলে এর মূল কম্পোনেন্ট আছে দুটো -
প্রথমত হচ্ছে হচ্ছে সবচেয়ে বেশী এনার্জী কনজিউম করে সেই সব প্রাইমারী জায়গালোকে রেগুলেট করা - এর মধ্যে আছে ট্রান্সপোর্ট, ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই, নানাবিধ ইন্ডাষ্ট্রি, বিল্ডিং ইত্যাদি।
দ্বিতীয়ত হচ্ছে, মানুষের মধ্যে বিহেভেরিয়াল চেঞ্জ আনা।
মানুষের নিজেদের পরিবর্তনশীল ব্যবহার একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে নেট জিরো এমিশন বাই ২০৫০ অ্যাচিভ করতে।
এই নিয়ে অনেক ডিটেলস ক্যালকুলেশন আছে, নীচের গ্রাফটা দেখতে পারেনঃ
দেখতেই পাচ্ছেন শুধুমাত্র গাড়ির ব্যবহার অভ্যাসের পরিবর্তন করে আমরা অনেকটা দূষণ কমাতে পারি। আরো ডিটেলসে ঢুকতে হলে নীচে দেখুনঃ
আমি ফ্রুগাল লাইফস্টাইলের কথা বলেছি ব্যক্তিগত উদ্যোগের ব্যাপারে। এছাড়া স্টেট পলিসির সাথে কর্পোরেট তো জুড়েই আছে। গাড়ির ব্যবহার ব্যক্তিগত উদ্যোগে কমানো সম্ভব না। অটোমোবাইল সেক্টরকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বাজার অনুযায়ী চাহিদা নিয়ন্ত্রণ থামাতে হবে। আর সবচেয়ে জরুরি তো ঐ ১০০ টি কর্পোরেটকে নিয়ন্ত্রণ করা। সেটা করার কথা কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে প্রচার করা হয় না।
"বাঘ না থাকলে জঙ্গল থাকবে না"? জঙ্গল না থাকলে বাঘ থাকবে না সে ঠিক আছে, কিন্তু বাঘ না থাকলে জঙ্গল থাকবে না, এটা কি তৃণভোজী প্রাণী জঙ্গল খেয়ে ফেলবে - এমন কিছু?
তৃণভোজী প্রাণীদের খাওয়ার জন্যে তো মানুষই আছে, বাঘ দিয়ে কী হবে?
আমি বলছি না বাঘ হাপিস হয়ে যাক, তবে বাঘ একটি উপকারী প্রাণী তেমনও বোধয় ঠিক না।
বাঘ না থাকলে জঙ্গল থাকবেনা, আমিও এ জায়গাটা বুঝিনি। বাঘ ছাড়া তো প্রচুর জঙ্গলই আছে।
এছাড়াও সুন্দরবনের প্রাকৃতিক গঠন মনুষ্যবাসের ঠিক কতটা উপযোগী? মানুষ যত যাচ্ছে, থাকছে ততই মানুষ আর প্রকৃতি দুইয়েরই সমস্যা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরাও কিন্তু মাইগ্রেশন রিট্রিটের কথা বলছেন, অন্যত্র পুনর্বাসন।