এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • মেয়েরা যখন ...

    শ্রাবণী লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ০৮ মার্চ ২০১১ | ৮৯৩ বার পঠিত
  • ( আন্তর্জাতিক নারী দিবস শুরু হয়েছিল মেয়েদের কর্মক্ষেত্রে নানান অসুবিধেকে কেন্দ্র করে, ওয়ার্কিং উইমেনদের সমস্যার মোকাবিলায়। প্রথমে দিনটির উল্লেখও হয়েছিল ইন্টারন্যাশনাল ওয়ার্কিং উইমেন ডে হিসেবে। আজ তাই ওয়ার্কিং উইমেন হিসেবে আমার নিজের কর্মক্ষেত্রের যেসব মেয়েরা এতবছর ধরে লড়াই করেছে বা এখনো যারা করছে তাদের মনে করে, প্ল্যান্টে, শপফ্লোরে, বয়লারে, টারবাইনে যেসব মহিলা ইঞ্জিনিয়াররা পুরুষদের একাধিপত্যে হানা দিয়েছে, তাদের জন্যে ..................)

    "একটা কথা বলুন, আপনারা কি এই সব ছেলেদের সমান মাইনে পান?'
    স্থান : ভারতের মধ্যপ্রদেশে স্থিত একটি সুপার থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট।
    কাল: গত শতকের নব্বই দশকের প্রথম দিক।
    পাত্র: সদ্য চাকরিতে যোগ দিয়ে দলের সঙ্গে ট্রেনিং করতে আসা দুটি মেয়ে ইঞ্জিনিয়ার।
    প্রশ্নকর্তার ওপর ভার পড়েছিল প্রথম দিনে আঠের জনের দলটিকে প্ল্যান্টটি ঘুরিয়ে দেখানোর। প্রথমটায় এরকম প্রশ্ন শুনে দুজনেই হাঁ, কিভাবে কী ভাষায় এর উত্তর দেবে বোঝার আগেই প্রশ্নকর্তা তাদের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বাকীদের বোঝাতে শুরু করেছে টারবাইন ফ্লোরের খুঁটিনাটি। হুঁশ ফিরে পেয়ে লোকটির ভুল ধারণাকে ঠিক করতে গিয়ে বুঝল যে প্রশ্ন টি কোনো অজ্ঞানের ভুল ধারণা বশে করা প্রশ্ন নয়। লোকটি সাধারণ টেকনিশিয়ান হলেও প্রৌঢ়, দীর্ঘদিন আছে এই সংস্থায়। মহিলা ইঞ্জিনিয়ার ঐ প্ল্যান্টে সেইসময় না থাকলেও, ট্রেনিদের মধ্যে দু একজন এর আগে যে আসেনি তা নয়। সবচেয়ে বড় কথা হল লোকটি ওয়ার্কারস অ্যাসোশিয়েশনের একজন কেউকেটা, কম্পানি রুল বিষয়ে অজ্ঞ নয়।
    তাহলে এ প্রশ্ন কেন? এও একধরণের মানসিক পীড়নের মাধ্যমে দমন পদ্ধতি আর তাও পয়লা দিনেই। ভবিষ্যতে পদাধিকার বলে মেয়ে ইঞ্জিনিয়ার দুটি এই লোকটির উপরে থাকবে, তাকে কাজ করার নির্দেশ দেবে, কাজের কৈফিয়ত চাইবে। এই চিন্তা পুরুষটির পক্ষে অসহ্য হওয়াতে সে এইধরণের প্রশ্ন করে মেয়েদুটিকে হেয় করতে চায়, তাদের বুঝিয়ে দিতে চায় যে সে তাদের হীনচোখে দেখে। মেয়েদুটি অপ্রস্তুত হবে, ঘাবড়ে যাবে, ভবিষ্যতে তার সঙ্গে সমঝে কথা বলবে, এটাই উদ্দেশ্য।
    দলের পুরুষ সঙ্গীরা যাদের এই কদিনের চেনাজানা ওঠাবসা, বন্ধুত্বের দোরগোড়ায়, তারাও প্রশ্নটি শুনেছিল। প্রতিবাদ দূরে থাক হতভম্ব মেয়েদুটির অবস্থা দেখে তাদের চোরা ইশারা একে অপরকে, চাপা হাসি, ইঙ্গিত। স্পষ্টতই পুরো ব্যাপারটি তারা প্রায় প্রত্যেকেই তারিয়ে উপভোগ করছে। খাতায় কলমে রেজাল্ট ভালো করে, থিওরি পড়ে ভালো ইন্টারভিউ দিয়ে আমাদের সাথে তাল মিলিয়ে চাকরি বাগালেই হয়না বাবা! সাইটে এসে এইরকম বেয়াড়া ওয়ার্কার ঠেঙিয়ে দেখাও, বুঝবে কত ধানে কত চাল!

    "কিছু মনে কোরোনা, তুমি বাঙালী বলেই বলছি। এসব জায়গা কোনো ভদ্র মেয়েদের কাজের উপযুক্ত নয়। মেয়েদের পক্ষে ঐ ইস্কুল বা কলেজে কাজ করাই ঠিক আছে। তোমার বাড়ির লোকই বা কী ধরণের, মেয়েকে এরকম একটা চাকরি করতে পাঠিয়েছে। তা আজকাল কম্পিউটার টম্পিউটার কম্পানি খুলছে তো কলকাতা দিল্লী বম্বেতে শুনি। তুমি তো সেসব জায়গায় চাকরি খুঁজলেও পারতে।"
    স্থান : পশ্‌চিমবঙ্গে স্থিত একটি সুপার থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট।
    কাল: উপরোক্ত ঘটনার একবছর পর।
    পাত্র: ট্রেনিং শেষে জয়েন করতে আসা উল্লিখিত দুটি মেয়ে ইঞ্জিনিয়ারের একটি।
    যে লোকটি এরকম সুমধুর সম্ভাষণে প্রথম দিন মেয়েটিকে স্বাগত জানাচ্ছিলেন তিনি ঐ প্রজেক্টের মেন্টেনান্স বিভাগের প্রধান। মেয়েটি এরকম অভ্যর্থনায় নির্বাক, প্রথম কাজ শুরু করার আগে বিভাগীয় প্রধানের এধরণের উৎসাহ প্রদানের বহরে মনে একরাশ দ্বিধাদ্বন্দ্ব। তবু মরিয়া হয়ে জানায় যে তার ইচ্ছা এরকম জায়গায় কাজ করা, পড়াতে তার ভালো লাগেনা। প্রচুর বিরক্তিতে ভদ্রলোক খুঁজে পেতে একটি অদরকারী বিভাগে মেয়েটিকে পাঠালেন মুখ দিয়ে অনর্গল বিরক্তিসূচক নানা শব্দ বার করতে করতে। তারপরের কাহিনী, দীর্ঘ লড়াইয়ের, বারে বারে নিজেকে প্রমাণ করার চেষ্টা।

    জরুরী কাজের পারমিট হাতে নিয়ে টেকনিশিয়ান ও মজদুরকে ডাকতে গেছে ফিল্ডে যাবার জন্য, সেখানে তাদের বক্তব্য,
    "আপনার লিখিত অর্ডার টা দেখি এই গ্রুপে পোস্টিংয়ের, নাহলে আপনার সাথে কাজ করতে যাব না। কিছু গণ্ডগোল হলে তো মেয়েছেলেকে কেউ কিছু বলবেনা, আমাদেরই ধরবে।"

    এরকম আরো কত মন্তব্য, কত সমস্যা, কত বাধা রোজ সকাল থেকে রাত্রি। উপর থেকে নীচে সবজায়গায় সবার চোখে শুধু অবিশ্বাস ও সন্দেহ। একটা মেয়েকে কাজ দেব, কাজটা হবে তো? একটা মেয়েছেলে আমাদের কাজ দিচ্ছে,এত সাহস, দিই সব পণ্ড করে। ঐ অবস্থাতেই একটি ছেলে অফিসার শুধু ফোন করে তার নীচের লোকেদের বলে দেয় কী কাজ করতে হবে। তার জন্য আছে উপরে নীচে তারই জাতভাইদের সম্পূর্ণ সহযোগীতা। আর মেয়েটির জন্য মেয়েদেরও সহানুভূতি নেই। কী দরকার ওর পাকামো করে ফিল্ডে গিয়ে কাজ করার!

    ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্যে কম্পানির বিভিন্ন মেগা পাওয়ার প্রজেক্ট, মহিলা ইঞ্জিনিয়ারদের সংখ্যা শতকরা দশেও পৌঁছবেনা, যা আছে তাও বেশীরভাগই হেড অফিসে বা অন্যান্য অফিসে ডেস্কে বসে কাজ। পরিচালক মণ্ডলী একসুরে জানাবে যে এই সংখ্যাটা শূন্য হলেও তাদের কিছু এসে যেতনা। এরকম আদ্যন্ত একটি টেকনিক্যাল প্রতিষ্ঠানে যেখানে মূল কাজটাই সাইটে ধোঁয়াছাই মেখে যন্ত্রদানবদের কাবু করে বেড়ানো সেখানে ঠাণ্ডা অফিসে বসে মেয়ে ইঞ্জিনিয়ারদের ভূমিকা আর কতটুকু! অফিসের শোভাবর্ধনের জন্য টাইপিস্ট ইত্যাদি কাজে মেয়েরা তো আছে। সরকারের ঘরে খাতায় কলমে হিসেব দেখাতে গিয়ে শতকরা মহিলাকর্মীর অংক এদের দিয়েই মেলানো হয়ে যায়, এসব উটকো ঝামেলার কী দরকার। ইন্টারভিউয়ের সময়ই মেয়েদের নানা ভয়াবহ ছবি দেখানো হত প্রজেক্টের জীবন সম্পর্কে, যাতে তারা চাকরি পেলেও জয়েন না করে।
    বছরের পর বছর এইসব প্রজেক্টে মেয়েদের জন্য একটা টয়লেট বানানোর কথাও কেউ ভাবেনি। অথচ শুরু থেকেই কনট্রাক্টরের মজদুর হিসেবে মেয়েরা ঢোকে প্ল্যান্টের মধ্যে কাজ করতে, কারণ তাদের মজদুরী পুরুষ মজদুরের থেকে কম। কিন্তু এদেশে গরীব মজদুর মেয়েদের কথা আবার সমাজ সরকার কে কবে ভেবেছে, যে এরা ভাববে। লেডিজ টয়লেট থাকলেই কী আর মজদুর মেয়েটিকে তা ব্যবহার করতে দেওয়া হত, মেয়েরাই দিতনা!

    ইন্টারভিউয়ে দেখানো জুজুর ভয় তাড়িয়ে চাকরিতে ঢুকলেও ট্রেনিং পিরিয়ডেই মোটামুটি মেয়েদের সঙ্গে ব্যবহারে বুঝিয়ে দেওয়া হত, মানে মানে চেষ্টা চরিত্র করে একটি সুবিধেজনক জায়গায় পোস্টিং নিয়ে থিতু হয়ে যাও যেখানে সেরকম কিছু করতে টরতে হবেনা। কাজ করব, কাজ শিখব বা কাজে লাগব এসব চিন্তা ভুলেও মাথায় নিয়ে এস না। পরে সুযোগ সুবিধে মত পুরুষদের আসরে পার্টিতে সবাই হাসাহাসি করবে কিভাবে প্রযুক্তি বিজ্ঞানের ডিগ্রি নিয়েও অমুক মহিলা ডেস্কে বসে উল বুনে থাকে। এদিকে মাইনে প্রায় তাদের সমান নিয়ে যাচ্ছে, সরকারী ব্যবস্থার গ্যাঁড়াকল, প্রাইভেট হলে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিত। এদের চাকরি দেওয়া একেবারেই উচিৎ নয় সিদ্ধান্ত থেকে আলোচনা গরম হবে এদের ইঞ্জিনিয়া¡রিং পড়তে দেওয়াই উচিৎ নয়। এই মেয়েগুলো সিট নষ্ট করেছে বলে বেচারা যে সব ছেলেরা সুযোগ পেলনা তাদের দু:খে পুরুষশ্রেষ্ঠদের চোখ প্রায় ভিজে আসবে!

    তবু কি দু একজন বিদ্রোহীনি ছিলনা যারা মাটি কামড়ে পড়ে থাকত? না, আমরা এখানেই কাজ করব, আমাদের পুরুষ সহকর্মীদের তালে তাল মিলিয়ে। এই বিশাল কর্মযজ্ঞে আমরাও সমান অংশীদার হতে চাই, আমাদের জ্ঞান বৃথা যেতে দিতে চাইনা।
    ছিল, তবে তাদের কেউ সেদিন নারীদিবসে বা অন্য কোনো দিবসেই ফুল দেয় নি। উল্টে সমালোচনা করেছে সবাই। তাদের কাছে সহজ ফুলে ঢাকা নিশ্‌চিন্তির পথের হাতছানি ছিল তবু তারা চলেছে কাঁটার পথে। প্রতিটি পদক্ষেপে তাদের বলা হয়েছে তারা অবাঞ্ছিত,অনাহূত। যেসময় ভারতবর্ষে ইঞ্জিনিয়া¡রিং কলেজগুলিতে ছেলেদের সাথে তাল মিলিয়ে মেয়েরা ভর্তি হচ্ছে সেসময় কম্পানি প্রতিষ্ঠার কুড়ি বছর পরেও সেফটি শ্যু বলে যা পাওয়া যায় তা হল শুধু পুরুষদের ভারী বুটজুতো। মেয়েদের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেই।
    উপরওয়ালা এক নজর পায়ের কেডস জুতোর দিকে তাকিয়ে প্রথমদিনই দাঁত চেপে ফরমান জারী করে উপযুক্ত জুতো ও হেলমেট ছাড়া সে ফিল্ডে পাঠাবেনা। কিছু হয়ে গেলে তার উপরওয়ালারা তাকে দুষবে। মেয়েদের সেফটি শ্যু কেন নেই সে প্রশ্নের উত্তরে সবাই নিশ্‌চুপ। শহর থেকে অনেক দূরে প্রত্যেকটি প্রজেক্ট, সবেধন জুতোর দোকানও তিরিশ কিলোমিটার দূরে। সেখানে কোনোক্রমে পৌঁছলেই যে মেয়েদের জন্য শক্তপোক্ত জুতো পাওয়া যাবে তারও কোনো স্থিরতা নেই।

    তবু যোগাড় হয় জুতো, সেই জুতো পরে মাথায় হেলমেট চড়িয়ে সেইসব এক্কা দুক্কা মেয়ে এখানে ওখানে কয়লার গুঁড়ো মেখে, ছাইয়ে পা ডুবিয়ে টইটই করে সারা প্ল্যান্ট ঘুরে বেড়ায়, হাতে যন্ত্রপাতি নিয়ে। টয়লেট নেই বলে জল,চা মেপে মেপে খায়। তলপেটে যন্ত্রণা নিয়ে ঘুরে বেড়ায় তবু কাউকে গিয়ে বলতে পারেনা আমাদের একটা টয়লেট বানিয়ে দিন। যদি সেই বাহানায় তাদের অফিসে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। মজদুর কামিন মেয়েদের তবু ঝোপের আড়াল আছে, তারা যে শহরের মেয়ে!

    এখানেই শেষ নয়। একজন পুরুষ সহকর্মীর দ্বিগুণ কাজ করে যায়, কোথাও কোনো ফাঁক পেয়ে কেউ যাতে বলতে না পারে মেয়েদের দিয়ে ঠিকমত কাজ হয়না। আট ঘন্টা শুধু খাতায় কলমে, আসলে বারো চোদ্দ ঘন্টাও কম হয়। এ শুধু তার একার প্রশ্ন নয়, সমস্ত মেয়েদের মর্যাদার প্রশ্ন। সকাল থেকে রাত্রি, ছুটির দিনেও কাজ। তবুও এমন শোনা যায় যে - আমাকে একটা মেয়ে দিয়ে দিয়েছে, খুব অসুবিধে হয়, রাতবিরেতে সমস্যা হলে তো একে ডাকা যাবেনা!
    নিজের দুশ ভাগ দিয়ে কাজ করে কোনোরকমে মেয়েটি যোগ্যতা অর্জন করে উন্নতির সোপানে ছেলেদের সাথে বিবেচিত হবার জন্য। কখনো ধাপ অতিক্রম করে কখনো করেনা। করলে বলা হয় উপরওয়ালা মেয়েদের প্রতি মেহেরবান, মেয়ে বলে হয়েছে। না করলে বলা হয়, মেয়ে তো, একবারে প্রোমোশন নিয়ে হাতিঘোড়া কী করবে। ম্যানেজমেন্ট যুক্তি হিসেবে কখনো বলে ছেলেরাই তো থাকবে শেষ অবধি, মেয়েটা কিছুদিন পরেই বিয়ে হয়ে হয় চলে যাবে নয় বাচ্চাকাচ্চা সংসার নিয়ে আর সাইটে কাজ করবার অবস্থায় থাকবেনা। ছেলেদের না দিয়ে মেয়েদের প্রোমোশন দেব, পাগল নাকি!
    জানি, আজ পনের ষোল বছর পরেও উপরের যুক্তিগুলো কর্মক্ষেত্রে এখনও চলে ভীষণ ভাবে। অনেক পুরুষ পাঠকই মুখে না বললেও মনে মনে সহমত হবেনই। আর শুধু পুরুষরাই বা কেন মেয়েরাও কী ছাড়বে! এখনও যেসব মেয়েরা সংসার, ছেলেমেয়ে স্বামী ইত্যাদিকে প্রাধান্য না দিয়ে নিজের কাজকে গুরুত্ব দেয় তাকে সমাজ ভালো চোখে দেখেনা, উল্টোদিকে পুরুষদের ক্ষেত্রে আবার সেটাই স্বাভাবিক।

    এত কিছুর পরেও শেষ রক্ষা হয়না যখন সময়ের হিসেবে মেয়েটি বিয়ে করে। তখন আর কোনো অবস্থাতেই তাকে প্ল্যান্ট সাইটে রাখা হবেনা। কারণ, বিয়ে হয়েছে মানেই সে অন্ত:সত্ত্বা হবে, সেইসময় সে ঘুরে কাজ করতে পারবেনা। তারপরে বাচ্চা সামলে ঠিকঠাক কাজ করা তো অসম্ভব ব্যাপার। অথচ তারই পুরুষ সহকর্মীর বিয়ের খবরে প্রতিক্রিয়া এক্কেবারে বিপরীত। বিয়ে করে থিতু হচ্ছে মানে ছেলেটির চাকরি ছাড়ার সম্ভাবনা কমে গেল ( সে কতটা কাজের বা অকাজের সে প্রশ্ন এখানে অবান্তর, পুরুষ কর্মী বলে কথা, দাঁড়ালেই সবার মধ্যে একটা বল আসে, হীরের আংটি কেস)।
    এখনও এইস্তরের মহিলাদের কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার পক্ষে বড় বাধা তাদের সংসারকে মনে করা হয়। এই কারণেই এমনকী মহিলা বসেরাও অনেক জায়গায় মেয়েদের নিতে চাননা। মহিলাদের অন্ত:সত্ত্বা অবস্থা যা প্রাকৃতিক ভাবে স্বাভাবিক তা আমাদের দেশে কর্মজীবনে একটি কালো দাগ বলে মানা হয়। এই সময় যদিও সে সরকারী নিয়ম অনুযায়ী পাওনা ছুটিতে থাকে তবু তাকে এই অজুহাতে এখনো পুরুষ সহকর্মীর পরে রাখা হয়। আমাদের সমাজে সন্তানকে আনার দায়িত্ব শুধুমাত্র মায়ের, বাবার নয়। পেটার্নিটি লিভ বলে একধরণের ছুটি আছে মাত্র দুসপ্তাহের যা অনেক সময়ই পুরুষটি পুরো না নিয়ে বসকে অফিসকে দেখান তিনি কী ধরণের কর্মবীর ও অফিসে উৎসর্গ প্রাণ এবং বাহবা পান!

    তবু এখানেও রুখে দাঁড়িয়েছে কেউ কেউ। এত কিছুর পরেও তারা কাজ ভালোবেসে, ভালোবাসার কাজ করে গেছে অনেক প্রতিকূলতার মাঝখানেও। তাদের প্রতি অনেক অন্যায় হয়েছে, আবার অনেকে এদের দৃঢ়তায়, এদের ধৈর্য্যে প্রভাবিত না হয়ে পারেনি শেষ পর্যন্ত। সেই জন্যই হয়ত কিছুটা হলেও অবস্থার ফেরবদল হয়েছে আজ সেইসব মেয়েদের জন্য যারা চার দেওয়ালের বাইরে গিয়ে প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে কাজ করে নিজের যোগ্যতার বলে কর্মক্ষেত্রে সাফল্য পেতে চায়।
    কোন অদৃশ্য শক্তি ঐ মেয়েদের চালিয়ে নিয়ে গেছে সেসময় তা জানা নেই, শুধু জানি এইসব চেষ্টা একেবারে বিফলে যায়নি। একটা সময় ছিল যখন পাওয়ার ইনডাস্ট্রি তে কোনো বিভাগে বিশেষ করে প্রজেক্টে মেয়ে ইঞ্জিনিয়ার আছে শুনলেই তার সেকশন, সে কী কাজ করে বলে দেওয়া যেত। গুটিকয়েক জায়গা বাঁধা ছিল মেয়েদের জন্যে। আজ আর তা যায়না। জিনসের পকেট থেকে উঁকি মারছে স্ক্রুডাইভার ইত্যাদি, মাথায় হেলমেট, টেকনিশিয়ানদের দিয়ে কাজ করাতে ব্যস্ত মেয়ে, বয়লারের সিঁড়ি থেকে টারবাইনের নীচে, দূরে অফসাইটে, এ ছবি আর বিরল নয় প্ল্যান্টের কোনোখানেই। ঘুরতে ঘুরতে চোখে পড়ে "শি" লেখা টয়লেটের দরজা বিভিন্ন জায়গায়। প্রোমোশনের লিস্টে ক্রমেই বাড়ছে মেয়েদের নামের সংখ্যা। এটা সম্ভব হয়েছে সেই অল্পসংখ্যক মেয়ে পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারদের জন্যে যারা প্রথম সাহস করে লড়াইটা শুরু করেছিল।

    জীবনের ও কর্মের প্রতিটি ক্ষেত্রেই, প্রত্যেক স্তরেই এরকম মহিলা পথ প্রদর্শক ছিলেন বা আছেন যারা মেয়েদের পথচলা শুরু করেছে বা করছে। তাদেরকে স্মরণ করার দিন আজ। আন্তর্জাতিক নারী দিবসের একশ বছর, যা শুরু হয়েছিল কর্মজীবি মহিলাদের সমস্যা নিয়ে তা আজকে সমাজের সর্বস্তরের মেয়েদের লড়াই, তাদের সাফল্যকে স্মরণ করার দিন। কিছুকাল পরে হয়ত এই দিনের বিশেষত্ব সভা আর বক্তৃতা ছাড়া আর কিছুতেই কারো মনে থাকবেনা। পণ্য ও বিজ্ঞাপন দুনিয়ার কল্যাণে "হ্যাপি উইমেন্স ডে" হয়ে হরেক সম্ভারের বিশেষ ছাড়ে ও বিউটি পার্লারের মেকওভারের আমন্ত্রণে অচিরেই এটি "ভ্যালেন্টাইন ডে" ইত্যাদির সমগোত্রীয় হয়ে উঠবে বিশেষ করে শহুরে ভারতবাসীর কাছে।
    তবু তাতে কিছুই এসে যায় না। কোথাও কোনো স্তরেই মেয়েদের লড়াই এখনো সম্পূর্ণ শেষ হয়নি। এমনকী কোথাও কোথাও তো এখনও শুরুই হয়নি। যে হারে মেয়েদের প্রতি অপরাধ বাড়ছে এ দেশে তাতে আগামী একশ বছরেও এ লড়াই শেষ হবে কিনা জানিনা। এখনও অনেক ক্ষেত্রে মেয়েদের ঘোষিত মজদুরী ছেলেদের চেয়ে কম যদিও গ্রামীণ কর্মক্ষেত্রে মেয়েদের যোগদান প্রায় তিরিশ শতাংশ। আর আরবান সেক্টরে মেয়েদের যোগদান মাত্র সতেরো শতাংশর কাছাকাছি। রাস্তাঘাটে, কর্মক্ষেত্রে, বাড়িতে, বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন ভাবে দেখা অদেখা অনেক লড়াই লড়ে চলেছে অনেক মেয়েরাই প্রতিনিয়ত। তাদের সম্মানে প্রতিটা দিনই আমাদের মেয়েদের কাছে নারীদিবস হওয়া উচিৎ। তাহলে এই একটা দিন নাহয় অন্যভাবে ভাবা যাক, যেদিন নারীরা তাদের লড়াই, তাদের এগিয়ে যাওয়াকে অন্যদের স্মরণ করাবে।

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ০৮ মার্চ ২০১১ | ৮৯৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • শর্মিলা | ***:*** | ২৪ মে ২০১২ ০৩:৫৫89082
  • এই লেখা-টা এতটাই মনের কাছাকাছি যে এখানে কমেন্ট করার জন্যে এতো কাঠ-খড় পোড়ানো :)
    লেখিকা লিখেছেন plant এর জীবনের কথা, কিন্তু সাধারণ বসে যেসব কাজ (যেমন কম্পিউটার releated ), সেখানেও অনেক ক্ষেত্রেই এইরকম ব্যবহার পেতে হয়, aptitude টেস্ট ক্লিয়ার করে interview পাস করার পর সুনতে হয়েছে যে 'মেয়ে বলে মুখ দেখে চাকরি দিয়েছে', প্রজেক্ট manager এর কাছে এক সাথে ৩ জন মেয়ে trainee পাঠাতে তাঁর মুখ ভার, প্রথম-এই বলেন 'আমাদের কিন্তু অনেক রাত পর্যন্ত কাজ করতে হয়, বাড়িতে অসুবিধে হবেনা তো?' তার পরে উপরোধে ঢেঁকি গেলার মত একটি মেয়েকে বেছে নিয়ে বাকিদের ফেরত পাঠান, সেই মেয়েকে team mate দের কাছে শুনতে হয় প্রজেক্ট manager একটু ঢিলা আছে বলেই মেয়ে নিচ্ছে নইলে কে না জানে 'Girls are inefficient '
    তারপর-এও women's day তে হাসি মুখ এ office এর দরজায় হাতে গোলাপ ফুল তুলে দেয়, অনেকে মুখ বেঁকিয়ে বলে 'ছেলেদের জন্যে কিন্তু এমন একটা দিন নেই', তখন মনে হয়, একটা আলাদা দিন নয়, কোনো বিশেষ আপ্যায়ন নয়, যেটুকু পাওয়া অধিকার, সেইটুকু পেলেই আমরা অনেকেই খুশি।
  • শ্রাবণী | ***:*** | ২৫ মে ২০১২ ০৬:০৮89083
  • শর্মিলা, এতো কাঠ খড় পুড়িয়ে লিখেছ দেখে আমিও না লিখে পারলাম না......এ নিয়ে আমি পাতার পর পাতা লিখে যেতে পারি, তবে লড়াইটা এমন যে অন্য মেয়েদেরও বোঝানো যায়না উল্টে তাদের কথা শুনলে মনে হয় আমরা বোধহয় নিতান্তই অযোগ্যা নির্বোধ মহিলা, কেউই নাকি এরকম কিছু ফেস করেনা......আমি জানি এ শুধু আমাদের মত ইঞ্জিনিয়রিং ইন্ডাস্ট্রী না অন্যান্য জায়গাও আছে, দেশ কাল নির্বিশেষে.....এ নিয়ে আজকাল খুব তথ্য ঘাঁটাঘাঁটি করছি......আমাদের মেয়েদেরই সাহস করে এই বেড়া ভাঙতে হবে অন্তত আগামীর জন্যে......যদি এক দুজনও করে, পারে তাই অনেক....... তোমার লেখা শেষ লাইনের মন্তব্য কিছুদিন আগে শুনলাম, ঐ দিনে.....তাকে বললাম এক ঘর লোকের মাঝে যে "৩৬৪ দিনই তো তোমাদের.....আমরাও চাইনা ঐ এক দিন, ৩৬৫ দিনই যাতে আমাদেরও হয় তাই চেষ্টা করলে হয় না!"
  • শর্মিলা | ***:*** | ২৬ মে ২০১২ ০৬:৩০89084
  • নিশ্চয়, আজ একজন দুজন করলে নিশ্চয় কাল সেই সংখ্যাটা অন্তত তিনজন হবে, এই আশা রাখি
  • kumu | ***:*** | ২৬ মে ২০১২ ০৯:৩৬89085
  • লড়াই,লড়াই,লড়াই-ঘরে,বাইরে,নিজের সঙ্গে।
    শ্রাবণী লিখেছে কাজের জায়গায় লড়াইএর কথা,অন্যগুলোও কম কঠিন নয়।

    আমি যে দেখেছি এমন বহু মেয়েকে-যারা একটা প্রোজেক্টে কাজ করতে করতে হ্ঠাৎ আসা বন্ধ করে দেয়,একটা ফোন পর্যন্ত করে না।খবর নিতে গেলে ডগমগ হয়ে শোনায়-আসলে, বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে তো,এনারাই-,নানা,আর ল্যাবে দশ ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতে যাব কেন,আর ও-ও "এসব" পছন্দ করে না।
    এদের জন্যও এগিয়ে আসা মেয়েদের লড়াই একটু কঠিন হয়ে যায়।

    শ্রাবণী যেমন লিখেছে,মেয়েরা এগিয়ে এসেছে, আসছে-বড় আনন্দ হয় শুনে।
    মেয়েরা নিজেদের মর্যাদা দিক,জয় করুক সব প্রতিবন্ধকতা।
  • পাই | ***:*** | ২৬ মে ২০১২ ১২:৫৪89086
  • কুমুদির বলা কথাগুলো আমিও কোন কোন ক্ষেত্রে শুনেছি। আবার তার কিছুজনের মধ্যে ঠিক ডগমগ ভাব নেই। একটা মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তবে, 'ও' পছন্দ করেনা, আর তাই কাজ ছেড়ে দেওয়াটা বেশ 'স্বাভাবিক', এটা বেশ সুলভ মন্তব্য।
  • শর্মিলা | ***:*** | ২৭ মে ২০১২ ০৩:৪৬89087
  • পাই-দি, কুমু-দি, এই কথাগুলো খুব সত্যি, কিন্তু একটা কথা ভাবো তো, তাদের আসলে ঠিক কি করা উচিত বলে তোমার মনে হয়?
  • kumu | ***:*** | ২৭ মে ২০১২ ০৫:১০89088
  • খুব সংক্ষেপে
    ১।যে কাজটা মেয়েটি করছিল,সেটি এমন হেলাফেলার সঙ্গে না ছেড়ে দিয়ে দায়িত্ববোধের পরিচয় দিক।
    ২।বিয়ে ব্যক্তিগত ব্যাপার ,কোন বক্তব্য নাই।কিন্তু বিয়ে/নো বিয়ে মেয়েরা নিজেকে ও অধীত বিদ্যাকে সম্মান দিক,সম্মান দিক অন্য মেয়েদের চেষ্টাকে।
    পরে আবার লিখছি-
  • পাই | ***:*** | ২৭ মে ২০১২ ০৫:৩২89089
  • শর্মিলা, ও পছন্দ করেনা বলে ছেড়ে দেওয়ার সময় কিছু কি বলার থাকে না ?মেয়েটি নিজে কী পছন্দ করে না করে, সেটা ভাববে না বা সেই ভাবনাকে গুরুত্ব দেবে না কি অন্যেরা গুরুত্ব দিক, সেটা দেখবে না ? পারিপার্শ্বিক থেকে প্রতিকূলতা অবশ্যই আছে, অন্য এক্সপেক্টেশনের চাপ ও আছে, কিন্তু শিক্ষিত, স্বাবলম্বী মেয়েরা এ ব্যাপারে অসহায়, নিরুপায়, এটা মানতে একটু অসুবিধা হয়। কাজটা নিজেরই পছ্ন্দ না হলে, আলাদা কথা। বিয়ে মানে আপিস ঠ্যাঙ্গানো কি ঐ দশ ঘণ্টা ল্যাবে দাঁড়ানো থেকে মুক্তি জাতীয় কুমুদি উল্লিখিত কথা যারা বলে, তারা অবশ্যই সেই কাজের প্রতি কমিটেড হয়ে বা প্যাশন থেকে করছে না। তাই লড়াই করতে গিয়ে যারা এক্সপ্লয়েটেড হচ্ছে, সেই আলোচনায় এরকম মেয়েদের কথা আসার কথাই নয়। কারণ তারা নিজেরা এই লড়াইটা করছেই তো না, বাই চয়েস। ( ডিঃ অন্য কোন লড়াই করতেই পারে )।
  • শর্মিলা | ***:*** | ২৮ মে ২০১২ ০৪:০৭89090
  • দুজনের কথা-ই সমর্থন করি
  • ওয়েস্ট ল্যান্ড | ***:*** | ২৮ মে ২০১২ ১১:৩১89091
  • কাছাকাছি কেস ধরুন এস সি, এস টি নিয়ে জেনারেলদের হয় না? কিম্বা গরীবের বাচ্চা হঠাৎ ডাক্তার বা ইঞ্জিনীয়ার হলে ইংরেজীটা তো ভাল জানে না বলে কাজ না দেওয়া ইত্যাদি? শ্রমিকের খিল্লি, বাকী বাবুদের মুখে শুনে শুনে, তাই র‍্যাগ দেওয়া লোকটাকে, এমন হয় না? কলে-কারখানায়, হাসপাতালে? মানে যারাই কোনো না কোনো কারণে পিছিয়ে আছে তারাই এমন চাপ খাবে এমন হয় না?
  • পাই | ***:*** | ২৮ মে ২০১২ ১১:৪৬89092
  • হয় তো।
  • | ***:*** | ২৯ মে ২০১২ ০২:৪১89093
  • শর্মিলার মন্তব্য দেখে একটা কথা মনে হল। অনেকগুলো মেয়েকে একসাথে পাঠালে ম্যানেজারের মুখ ভার হয় --- ঠিক কথা। এর একটা উল্টো দিকও আছে। আমার দেখা অনেক মেয়ে 'মেয়ে' বলেই সুবিধে নেওয়ার চেষ্টা করে। ক্রিটিক্যাল ডেলিভারি, তার মধ্যে দুম করে কদিন অফ নিয়ে নিল, কি না কোন আত্মীয়ের বিয়ে। তা, বিয়ে তো আর একদিনে হয় নি, আগে থেকে লিভ প্ল্যান জানাতে কি অসুবিধা? তারপরে ধরুন লাইভে কোড ঝাড় খাচ্ছে --- সবাই পালা করে সাপোর্টে আসছে, এর মধ্যে এক কন্যের নাকি বাড়ী থেকে রাত্রে অফিসে থাকতে দেবে না, অথবা মাসে একটা উইকেন্ডে কাজ করতে পারবে না, 'বাড়ীতে পছন্দ করে না' বলে। তা এইসব ক্ষেত্রে টিমের বাকীদের মধ্যে বেশ অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। স্বাভাবিকভাবেই ম্যানেজার পরে মেয়ে দেখলেই কাটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে।

    শর্মিলা যা বলেছেন সেটাও ঠিক আগেই বললাম। কিন্তু আমি যেগুলো বললাম, সেগুলোও মেয়েদের নিজেদের খেয়াল রাখা দরকার। ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে ঐ আমার বলা জিনিষগুলো করলে অ্যাপ্রাইসালে ঝাড় খায়। মেয়েদের ক্ষেত্রে এটা অন্য দক্ষ মেয়েদের অসুবিধে ঘটায়। ওদের ক্ষারটা এদের ওপরে ঝেড়ে দেয়।
  • শর্মিলা | ***:*** | ২৯ মে ২০১২ ০৩:১৮89094
  • দ যেটা বলেছেন সেটা তো হয় বটেই, তবে আমার সামান্য অভিজ্ঞতায় দেখেছি যে এইগুলো ছেলেরাও করে থাকে, ছেলেরা করলে তখন সেটা একটা গালাগাল দিয়ে পরের assignment এ চলে যাওয়া যায়, মেয়েদের ক্ষেত্রে হয়ে যায় 'এই জন্যেই মেয়েদের নিতে নেই'
  • ঝিকি | ***:*** | ২৯ মে ২০১২ ০৩:৫৩89095
  • কুমুদি আর দম-দির কথা খুবই ঠিক।
  • শ্রাবণী | ***:*** | ২৯ মে ২০১২ ০৭:১২89096
  • শর্মিলা, ছেলেরা এ সব কিছুই করে যা যা করার জন্যে মেয়েরা বেশী বদনাম, এবং সংখ্যার দিক দিয়ে দেখতে গেলে হয়ত তাদের সংখ্যাও বেশী কিন্তু মেয়েদের একটু খেয়াল রাখতে হবে, আমাদের সংখ্যাটা যে অনুপাতে কম, একশজন ছেলের দলে দুটো মেয়ে থাকলে, তারা যা করবে তা বেশী চোখে পড়ে, আলোচিত হয়....তাই মেয়েদের একটা দায়িত্ব রয়ে যায়, অন্তত ততদিন যতদিন না ঐ সংখ্যাটা অন্তত ৫০ ৫০ না হলেও, কাছাকাছি যায়!
    কিছুদিন আগে একটা প্যানেলে, এইচ আরের কর্তা বললে, মেয়েরা সাইটে গেলেও কিছুদিন পরেই চেষ্টা করে শহরে, অফিস গুলোতে ফিরতে চায়, তাদের কাছে অ্যাপ্লিকেশন দেয়, নানা অজুহাতে, বিয়ে হয়ে বরের চাকরি, না বিয়ে হলে বাবা মায়ের শরীর খারাপ........আলোচনায় আমরা চেপে ধরতে দেখা গেল এক বছরে দুটি নতুন জুনিয়র মেয়ের এরকম বদলি হয়েছে যেখানে সেখানে এরকম অজুহাতে বদলি নেওয়া ছেলেদের সংখ্যা প্রায় জনা পনের! ওরা মানলেন এরকম ছেলেরাও করে থাকে, বিশেষ করে আজকের দিনে ছেলেরাও চাকুরীওলা, প্রঃ মেয়ে বিয়ে করে থাকছে যারা বিয়ের পরে চাকরী ছাড়েনা......কিন্তু দিনের শেষে আমাদের কম্পানিতে একজিকিউটিভ মেয়ে 3.+..%, ইঞ্জিনিয়র 2.4%....তাই ঐ দুটি মেয়ের কেসই অনেক মনে হয়!
  • শর্মিলা | ***:*** | ২৯ মে ২০১২ ০৭:৪৯89097
  • :)
  • ranjan roy | ***:*** | ২৯ মে ২০১২ ১১:৫৮89098
  • শ্রাবণীর অভিজ্ঞতা গুলো এবং স্ট্যান্ড খুব ঠিক।
    আর কুমু এবং দমু যা বলেছেন সেই মেয়েদেরও চিনি। এঁরা মেয়ে সেগমেন্টের সেই অংশ যাঁরা ছোটবেলা থেকেই ঘর-সংসারই মেয়েদের জীবনের সাফল্যের মাপকাঠি -এই আফিম গিলে বড় হয়েছেন।
    বহু আগে বিশিষ্ট হিন্দি কথাসাহিত্যিক শ্রীমতী মন্নু ভান্ডারী লিখেছিলেন যে মেয়েরা প্রমোশন পেলে পুরুষ সহকর্মীরা তাঁদের সম্পর্কে বলে -- ইয়া তো বড়ে ঘর কী বেটি, নহি তো অফসর-সংগ-লেটি।
    আমার ঘনিষ্ঠ একটি পরিবারের মেয়ে দিল্লির একটি বড় ট্যাক্সেশন ফার্মে কাজ করে। সে যদি পুরুষ সহকর্মী বা অধ্স্তন অফিসারকে সঙ্গে নিয়ে কোন ফ্যাক্টরির সাইটে বা কোম্পানির অফিসে যায়, তখন ক্লায়েন্ট কোম্পানির অফিসাররা তার করা প্রশ্নের উত্তর তাকে না দিয়ে অবধারিত ভাবে পুরুষসঙ্গীটিকে দেয়। বেশ ক'বার হবার পর নিজেদের মধ্যে চোখাচোখি করে পুরুষ যখন ক্লায়েন্টকে বলে ম্যাডামের প্রশ্নের উত্তর ওনাকে দিন, আমাকে নয় তখন ওরা বিস্ময়মেশা চোখে অনিচ্ছার সঙ্গে আদেশ পালন করে। একা মেয়েটি গেলে বয়্সক অফিসাররা খালি -- ইয়েস-ইয়েস বলে, কিন্তু কোন ফাইল বা ডেটা সময়্মত ওর টেবিলে দেয় না। একটা বোভাইন চাউনি দ্যে বলে --নট অ্যাভেলেবল্‌।
    কড়া করে , -- নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এগুলো না পেলে আমি আপনাদের এমডির কাছে গিয়েই চাইব,-- বলার পর ফল পাওয়া যায়। আর এটা ব্যতিক্রম নয়।
    আর ওয়ার্কিং প্লেসে সেক্সুয়াল ইঙ্গিতপূর্ণ ব্যবহার নিয়ে সুপ্রীম কোর্টের " বিশাখা" রুলিং নিয়ে এখনো অনেকেই অজ্ঞ। যদিও আমরা জানি যে এনিয়ে বেশি মুখ খুললে বদলি-চাকরিখোয়ানোর ভয় এসবই ডেটারেন্টের কাজ করে।
  • sharmila | ***:*** | ৩০ মে ২০১২ ০২:৩৬89099
  • bhanwari দেবির ঘটনা জানতাম, বিশাখা রুলিং সম্বন্ধে জানতামনা, রঞ্জনদার পোস্ট তার পরে পড়ে দেখলাম
  • ঝিকি | ***:*** | ৩০ মে ২০১২ ০৪:৩৭89100
  • রঞ্জনদা, ক্লায়েন্ট হ্যান্ডলিং আমার অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ অন্য কথা বলে, আমি সবসময় অতি শিভ্যালরাস ব্যবহার পেয়েছি, মাঝে মাঝে সেটা বেশ অস্বস্তিদায়ক-ও। বেসরকারী কোং গুলো মাইনে ও অনান্য সুযোগসুবিধা নিয়ে মেয়েদের সাথে নানা দর কষাকষি করে, কিন্তু কাজের ফারাক আমি ফিল করি নি।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল মতামত দিন