মঙ্গলবার, পঁচিশে বৈশাখে পরস্পরকে রাখি পরিয়ে আপন করে নিয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতি শ্রদ্ধা জানালেন প্রায় ২০০-২৫০ হিন্দু মুসলমান। এই অভিনব রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী পালনের উদ্যোক্তা ছিল Right to Life নামের একটি সংস্থা, যারা বিভিন্ন রকম সামাজিক কাজকর্মের সঙ্গে সক্রিয় ভাবে যুক্ত। বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চ থেকে আয়োজিত এই অভূতপূর্ব মিলন উৎসবে যোগ দিতে কলকাতা থেকেও কিছু মরমি মানুষ পৌঁছে গেছিলেন ধূলাগড়। সকাল ১১ টা নাগাদ স্থানীয় অধিবাসীরা সমাজকর্মীদের সঙ্গে মিলে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। তারপর একে অপরকে রাখি বেঁধে শুরু হয় পদযাত্রা আর তার সাথে মৈত্রীর বার্তা হাতে নিয়ে হাতে হাতে সোনালি সুতো বেঁধে দেওয়ার পালা। হাওড়া জেলার এই অঞ্চল, যেখানে বিগত ডিসেম্বর মাসে ইদ মিলাদ উন নাবি উপলক্ষে সাম্প্রদায়িক সংঘাত দেখা গিয়েছিল, সেই অঞ্চলের বহু সাধারণ মানুষ অভাবনীয় স্বতঃস্ফূর্ততার সাথে যোগ দিলেন এই উৎসবে। এই মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর মিরাতুন নাহার, সাংবাদিক মিলিন্দ দত্ত ও বিশ্বজিৎ রায়, মানবাধিকার কর্মী অসীম গিরি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংস্কৃতিক সক্রিয় কর্মী শ্রী দিলিপ চক্রবর্তী সহ বেশ কিছু স্বনামধন্য সমাজকর্মী ও সাহিত্যিক। দর্শনের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা, লেখিকা ও কলকাতার নাগরিক সমাজের সম্মাননীয় মুখ শ্রী মিরাতুন নাহার এই অনুষ্ঠানটি সম্পর্কে বলেন “এই ধরনের অনুষ্ঠান যা মানুষের মধ্যে শান্তি ও ঐক্যের বার্তা বয়ে আনে, বর্তমান পরিস্থিতিতে তা আরও বেশি করে দরকার।“ তিনি আরও বলেন যে গ্রামের লোকেরা মিলেমিশেই ছিলেন, কিন্তু কিছু রাজনৈতিক শক্তি নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্য তাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে চাইছে। Right to Life সংগঠনের সামিরুল ইসলাম, মহম্মদ নাজিম, তন্ময় ঘোষ, অজয় রাই বলেন, পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান সাম্প্রদায়িক সংঘাতের আবহাওয়ায় শান্তি, মৈত্রী ও একতার বার্তা প্রচার করার জন্য তারা এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। ১১২ বছর আগে ব্রিটিশ সরকারের বঙ্গ ভঙ্গের প্রয়াস ব্যথ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সাল ১৯০৫। রাখিবন্ধন উৎসবের গানে মৈত্রীর আহ্বানে উদ্বেল হয়ে উঠেছিল বাংলার আকাশ বাতাস। ব্যর্থ হয়েছিল বিভেদকামীদের সব প্রচেষ্টা। বাংলা ভাগ হয়নি। সেই উদযাপনের কথা মাথায় রেখে ধুলাগড়ে অনুষ্ঠিত হল এক ছোট অনুষ্ঠান, যা বাংলার বর্তমান পরিস্থিতিতে বিভাজন সৃষ্টিকারী সকল অপপ্রচেষ্টার সামনে রাখবে শান্তি ও ভালবাসার এক সদর্থক মানবশৃঙ্খল।