এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • নকশার উল্টো পিঠ

    Shuchismita Sarkar লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৭ জুন ২০১৭ | ২৯২৬ বার পঠিত
  • আমার দিদার ছিল গোটা চারেক ভালো শাড়ী। একটা বিয়ের বেনারসী, একটা গরদ, মাঝবয়েসে বেনারস বেড়াতে গিয়ে সেখান থেকে কেনা একটা কড়িয়াল বেনারসী, এছাড়া শেষের দিকে তসরও হয়েছিল। মায়ের প্রথম দামী শাড়ী পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কোন হস্তশিল্প মেলা থেকে কেনা দুধে আলতা রঙের একটা বালুচরী। পঁচিশ বছর পরেও তার জলুষ অম্লান এবং তার তুল্য একটি দ্বিতীয় বালুচরী আজ পর্যন্ত দেখলাম না। সেই শাড়ীটি কেনার সময়ে মায়ের পনেরো বছর চাকরী করা হয়ে গেছে। তারপরে মুক্ত অর্থনীতি এসে লোকজনের হাতে টাকাপয়সা বেড়েছে। এখন মধ্যবিত্তের ঘরেও বিভিন্ন প্রদেশের একাধিক হ্যান্ডলুম শাড়ী। কিন্তু যারা এই শাড়ীগুলো মধ্যবিত্তের হাতে তুলে দিচ্ছেন তাদের অবস্থা কেমন? এবং এককালে যেসব শাড়ী মানুষ একটা দুটোর বেশি কিনে উঠতে পারত না, তা এমন সহজলভ্যই বা হয়ে উঠছে কি উপায়ে?

    প্রশ্নগুলোর উত্তর জানার আগে সংক্ষেপে হ্যান্ডলুম শাড়ীর নির্মাণ প্রক্রিয়া জানা যাক। হ্যান্ডলুম অর্থাৎ কিনা হাতে বোনা। কাপড় যদি খাদির হয় তাহলে সুতোটাও হাতে তৈরী। বেশীর ভাগ সিল্কের ক্ষেত্রেও তাই। ব্যাঙ্গালোর সিল্কের ক্ষেত্রে সুতো তৈরী হচ্ছে মেশিনে। খাদী ছাড়া অন্য কটন সুতোও মেশিনে তৈরী। যে রকম সুতোই হোক না কেন, প্রাথমিক ভাবে সেটা হবে কোরা রঙের (বিস্কুট কালার)। রঙিন কাপড় চাইলে সেই সুতো প্রথমে ব্লিচ করতে হবে। তারপর তাতে রঙ ধরাতে হবে। অর্থাৎ সাদা কাপড়ের ক্ষেত্রেও যে রঙটা আমরা দেখি তা সুতোর আসল রঙ নয়। ইক্কত গোত্রের কাপড়ের ক্ষেত্রে আবার রঙ করার বিশেষ পদ্ধতি আছে। ইক্কতে যে প্যাটার্ণ তোলা হবে সেই হিসেব মত সুতোর এক একটা অংশ এক এক রকম রঙ করা হয়। রঙ করার শেষে সুতোর গুটি বানিয়ে তুলে রাখা হয় শাড়ী বোনার জন্য।

    এবার তাঁত (লুম) প্রস্তুত করতে হবে কাপড় বোনার জন্য। সাধারণ ঢালা শাড়ীর ক্ষেত্রে এটা খুব বড় ব্যাপার নয়। কিন্তু বালুচরী, বোমকাই, সম্বলপুরী, কাঞ্জীভরমের মত জমকালো শাড়ীর বেলায় লুম তৈরী করতেই লেগে যায় দশ-বারো দিন। একটা শাড়ী বুনতে দুইদিক থেকে সুতো আসে। একটা হরাইজন্টাল বা টানা সুতো। অন্য সুতোটা আসছে ভার্টিকালি। একে বলা হয় পোড়েনের সুতো। বোমকাই, সম্বলপুরী, জামদানী জাতীয় শাড়ীর ক্ষেত্রে জমির নকশা তোলা হয় এই পোড়েনের সুতো দিয়ে। লুম তৈরী করার অর্থ হল প্রতিটা টানার সুতোকে সমান্তরাল ভাবে সূচে ভরে দেওয়া। পাড়ের নকশায় যদি আলাদা রঙের সুতো যায় তাহলে নকশা অনুযায়ী সেই সুতোর গতিবিধি ঠিক করা। এর পর তাঁতী পোড়েনের সুতো চালিয়ে নকশা তুলবে শাড়ীতে। বালুচরী, কাঞ্জীভরম, বেনারসী গোত্রের শাড়ীর ক্ষেত্রে জাকার্ড লুমের ব্যবহার বহুল প্রচলিত। সেক্ষেত্রে যে ডিজাইন বোনা হবে সেটা কার্ডে তোলা থাকে। সেই কার্ড এবং কোন অংশে কি রঙের সুতো যাবে সেই হিসেব মত লুম তৈরী করা হয়। একবার লুম তৈরী হয়ে গেলে শাড়ী বুনতে খুব বেশী সময় লাগে না। সাধারণ তাঁতের শাড়ীর ক্ষেত্রে একদিনই যথেষ্ট। কাজের সুক্ষ্মতা অনুযায়ী এক থেকে ছয়দিন লাগে শাড়ী বুনতে। যদি একই ডিজাইনের অনেকগুলো শাড়ীর অর্ডার থাকে, তাঁতী সেক্ষেত্রে একই লুমে সবকটা শাড়ী বুনে ফেলতে পারেন। লুম তৈরী করার সময়টা সেক্ষেত্রে বেঁচে গেল।

    এবার আমাদের প্রশ্নের উত্তর খোঁজা যাক। নিজের হাতে সুতো তৈরী করে, কাপড় বুনে তাঁতীরা মজুরী কেমন পান? সম্পুর্ণ হাতে তৈরী একটা শিল্প যে টাকায় কিনে আমরা ঘরে তুলি সেটা কি যথেষ্ট? যদি না হয়, তাহলে কেমন করে চলছে এই বাজার? শেষের দিক থেকে শুরু করা যাক। হ্যান্ড্লুম শাড়ীর রমরমা শুরু হওয়ার পর থেকে অনেকেই সীমিত অভিজ্ঞতা ও পড়াশোনা নিয়ে বুটিক খুলে বসেছেন। এবং সেখানে অনেক সময়েই দেখা যাচ্ছে আপাতদৃষ্টিতে একই রকম শাড়ী এক্জন বিক্রি করছেন পাঁচ হাজার টাকায়, অন্যজনের কাছে পাওয়া যাচ্ছে তার অর্ধেক দামে। এটা কি ভাবে সম্ভব হচ্ছে? প্রথম যে কথাটা বলা যায় তাহল বেসরকারী শাড়ীর দোকানে কোন কোয়ালিটি চেক হয় না। ২০১৭ সালে, একটা আসল তসরের থানের দাম পড়ে অন্তত ৩৫০০ টাকা। কিন্তু অনেকেই এর ঢের কমে তসর বিক্রি করছেন। এটা সম্ভব হচ্ছে কারন ভারতীয় তসরের সাথে এসে মিশছে কম দামী কোরিয়ান তসর। এই মিশ্রণ অনভিজ্ঞ চোখে ধরা প্রায় অসম্ভব। একটা কোরিয়ান সুতো, একটা ভারতীয় সুতো দিয়ে বোনা হচ্ছে এই মিশ্র তসর। দাম নেমে আসছে ২৩০০ তে। গত সাত-আট বছরে ঘিচা তসরও খুব জনপ্রিয় হয়েছে। ঘিচা অবশ্য নকল তসর নয়। কিন্তু বনেদী মসৃণ উজ্জ্বল তসরের চেয়ে কিছু নিরেশ। ঘিচার যে দাগ এবং অমসৃণতা এর অ্যাপিল বাড়ায় সেটাই ঘিচার তুলনামূলক কম দামের কারন।

    এ তো গেল উপাদানের ভেজাল। পদ্ধতির ভেজালও আছে। অবশ্য তাকে ভেজাল বলতে আমার আপত্তি আছে। যদিও লেখার শুরুতেই বলেছিলাম হ্যান্ডলুম মানেই হাতে তৈরী, আদতে অনেক জায়গায় পাওয়ার লুম ঢুকে গেছে। পাওয়ার লুমের শাড়ীতেও হ্যান্ডলুম এফেক্ট দেওয়া সম্ভব, যদিও অভিজ্ঞ চোখে ধরা পড়বেই। পাওয়ার লুমের শাড়ী অনেক নিখুঁত হবে। হ্যান্ডলুমের যে ছোটখাটো ত্রুটিগুলো প্রতিটা শাড়ীকে অনন্য করে তোলে সেটা পাওয়ার লুমে অনুপস্থিত। নামেই বোঝা যাচ্ছে, পাওয়ার লুমে অনেক তাড়াতাড়ি শাড়ী তৈরী সম্ভব। একটা শাড়ী হাতে বুনতে যেখানে এক বা একাধিক দিন লেগে যায়, পাওয়ার লুমে সেখানে একদিনে অনেকগুলো শাড়ী তৈরী করে ফেলা যাচ্ছে। ফলে সেই শাড়ী কম দামে বিক্রি করাও সম্ভব হচ্ছে। পাওয়ার লুমে তৈরী শাড়ী যদি সেই ট্যাগ সহ বিক্রি হয় আমি তাতে অন্যায় দেখি না, যদিও এই প্রবন্ধ লেখায় আমি যার সাহায্য নিচ্ছি তার মতে পাওয়ার লুমের বহুল প্রচলনের ফলে হ্যান্ডলুম শিল্প একদিন মরে যাবে যেটা একটা অপূরণীয় ক্ষতি। এই যুক্তিটা অনস্বীকার্য। এগুলো যেহেতু বংশপরম্পরায় বাহিত জ্ঞান, হ্যান্ডলুমের মৃত্যুর সাথে সাথে এই জ্ঞানভান্ডারও হারিয়ে যাবে।

    এর পর আসি মজুরীর প্রসঙ্গে। মজুরীর ব্যাপারে দক্ষতা অনুযায়ী ভেদাভেদ নেই। যিনি সুতো বানাচ্ছেন, যিনি রঙ করছেন, যিনি বুনছেন, প্রিন্টের ক্ষেত্রে যিনি ব্লক বসাচ্ছেন সবার এক মজুরী। দিনে তিনশো থেকে সাড়ে তিনশো। যে তাঁতী স্বাধীন ভাবে নিজের ঘরে থেকে কাপড় বিক্রি করছেন তিনিও এর বেশী ধরেন না। বরং অনেকসময় তাঁর মজুরী আরোই কম। বহুক্ষেত্রেই এঁদের নিজেদেরই ভালো ধারনা নেই কত মজুরী হওয়া উচিত। ফুলিয়ায় তাঁতীর ঘর থেকে যে শাড়ী চারশো টাকা বা তারও কমে পাইকারী রেটে তুলে আনা হল, তার জন্য একজন তাঁতীর কাঁচামালের খরচই অন্তত সত্তর টাকা। তাহলে মজুরী বাদ দিয়ে লাভ বলতে গেলে নেই। কিন্তু যাঁরা স্বাধীন ভাবে ব্যবসা করেন তাঁরা কাঁচামালের খরচ উঠে গেলেই খুশি। নিজেদের পরিশ্রমের কতটা মূল্য তা তাঁরা নিজেই জানেন না। আরো একটা কথা এ প্রসঙ্গে বলা যায়। ধরা যাক তাঁতী কোন বড় ব্যবাসায়ীর থেকে অর্ডার পেলেন। তখন অর্ডারের শাড়ী হয়ে যাওয়ার পরেও যে কাঁচামাল বাঁচে তাতে তিনি আরো কয়েকটা শাড়ী বুনে ফেলতে পারেন। সেই শাড়ী তখন খুব কম দামে বিক্রি হয়ে গেলেও তাঁতীর লোকসান থাকে না।

    অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে মধ্যবিত্তের ঘরে সুলভে হ্যান্ডলুম উঠলেও তাঁতীর ঘরের অবস্থা বিশেষ বদলাচ্ছে না। এবং সুলভ হ্যান্ডলুমের যোগান দিতে গিয়ে ভেজাল শিল্পও লক্ষ্যনীয় ভাবে পুষ্ট হয়ে উঠছে। দুটোই তাঁতশিল্পের জন্য খারাপ খবর। এর থেকে বেরোনোর এক্ষুনি কোন উপায় নেই যদি না তাঁত শিল্পের প্রতি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গী বদলানো সম্ভব হয়। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের হাতে বোনা শাড়ী আমরা যে আগ্রহ ও ভালোবাসার সাথে সংগ্রহ করি, সেই উৎসাহের কিছুটা সংশ্লিষ্ট শিল্প এবং তার ধারক-বাহকদের জানার জন্য খরচ না করলে নিজেকে শাড়ীপ্রেমিক বলে দাবী করার মানে হয় না। এটা আমাদের বুঝতে হবে প্রতিটা হাতে বোনা শাড়ীই অমূল্য। হস্তশিল্প মেলায় গিয়ে দরদাম করে কেনার জন্য এ জিনিস নয়। নিজে তাঁতীর ঘরে গিয়ে সম্মান দিয়ে একে নিয়ে আসতে হবে। এটা ঠিক, এই আশঙ্কা মনে থাকবেই যে এত দাম দিয়ে যে জিনিস কেনা হচ্ছে তা আসল কিনা। সে জন্য কোয়ালিটি চেকের ব্যবস্থা সরকারের তরফ থেকেই থাকতে হবে। কিন্তু কোয়ালিটি চেকের পর তার দাম দিতে গিয়ে কৃপণতা করলে সেই শিল্পের সাথে জড়িত মানুষদের প্রতি অবিচার করা হবে। আর তাতে মরে যাবে শিল্পটাই। যে তাঁতী দিনে সাড়ে তিনশো টাকা মজুরী পান, তিনি কি চাইবেন তাঁর সন্তানও এই পেশায় আসুক? হয়ত সর্বত্র পাওয়ার লুম এসে গেলে তাঁতীর মজুরী নিয়ে ভাবারই প্রয়োজন ফুরোবে। তাঁতশিল্প মিউজিয়ামে আশ্রয় নেবে। তাঁতীরা চলে যাবেন অন্য পেশায়। তেমনটা হলে খুব খুশি হব বলতে পারি না। তার চেয়ে বরং খুশি থাকতে পারি যদি আমার দিদার মত আমারও সারা জীবনে মোটে গোটা চারেক বলার মত শাড়ী থাকে। দিদার যুগে সম্ভব ছিল না, কিন্তু এযুগে তো সম্ভব আমাদের জীবনের ঐ গুটিকয় শাড়ী যাঁরা বানাবেন তাঁদের খুঁজে বার করা, তাঁদের থেকে শাড়ী তৈরীর গল্পটা জেনে নেওয়া, অমূল্য শিল্পের জন্য যতখানি বেশি সম্ভব পার্থিব মূল্য দিয়ে শাড়ীটি সংগ্রহ করা। আলমারীতে একশোটা শাড়ীর বদলে এই গুটি চার শাড়ীর গল্প জেনে তাকে আপন করে নেওয়া অনেক রোমাঞ্চকর নয় কি?

    (এই লেখাটি লিখতে আমায় সাহায্য করেছেন আমার পিসতুতো ভাই ছন্দক জানা। তিনি ন্যাশনাল ইন্সটিটিঊট অফ ফ্যাশন টেকনোলজির স্নাতক ও শাড়ীশিল্পী)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৭ জুন ২০১৭ | ২৯২৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • a | ***:*** | ২৭ জুন ২০১৭ ০১:২৯60513
  • টানা পোড়েন তাহলে এখান থেকেই এসেছে
  • Shuchismita | ***:*** | ২৭ জুন ২০১৭ ০৬:২৩60514
  • তাঁতী এবং তাঁতশিল্পের অবস্থা এই মুহুর্তে বেশ খারাপ। তার কিছু কারন আমি এই লেখায় উল্লেখ করেছি। আরও কিছু কারন নিশ্চয়ই আছে যেগুলো বাদ পড়ে গেছে। আমি যেটুকু জানতে পেরেছি তাতে আমার মূল সমস্যা মনে হয়েছে কোয়ালিটি চেকের অভাব। এর ফলে নকল বা অপেক্ষাকৃত নিকৃষ্ট মানের জিনিস আসল বলে বিক্রি হচ্ছে। যিনি কিনছেন তাঁর বোঝার ক্ষমতা নেই অনেকসময়েই। আবার পাওয়ারলুমের শাড়ীও হ্যান্ডলুম বলে বাজারে চলছে। এগুলো দেখার কেউ নেই বলে যে তাঁতী সত্যি করেই হ্যান্ডলুম করছেন বা আসল উচ্চমানের উপাদান ব্যবহার করছেন তাঁর কাপড় প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছে না। কারন সেই কাপড়ের যা দাম হবে তার চেয়ে অনেক কম দামে প্রায় একই রকম দেখতে শাড়ী পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। ইতিহাসে পড়েছি, প্রথম যখন কাপড়ের কল এসেছিল, তখন সস্তায় মিলের শাড়ীর সাথে প্রতিযোগিতায় হাতে বোনা তাঁতীদের নাভিশ্বাস উঠেছিল। আমার মনে হচ্ছে, এই অবস্থায় সবচেয়ে আগে প্রয়োজন কোয়ালিটি চেকের। পাওয়ার লুমে হ্যান্ডলুম এফেক্টের শাড়ী তৈরী হলে এবং সেটা সুলভে বাজারে এলে ক্ষতি নেই যদি সেটা পাওয়ার লুম হিসেবেই বিক্রি হয়। নইলে যে তাঁতী সত্যিকারের হ্যান্ডলুম বানাবেন তিনি কি করে ক্রেতাকে বিশ্বাস করাবেন কেন তাঁর শাড়ীর দাম বেশি। একই কথা প্রযোজ্য সুতোর কোয়ালিটি নিয়ে। যে কোরিয়ান মিক্সড তসরের কথা আমি লেখায় উল্লেখ করেছি সেটাও দেখতে যথেষ্ট ভালো। কিন্তু কেউ সেটা আসল ভারতীয় তসর ভেবে কিনলে ভারতীয় তসরের প্রতি অবিচার হবে।

    একটা হ্যান্ডলুম শাড়ী বানাতে কতটা পরিশ্রম হয় তার কিছুটা আন্দাজ আমি এই লেখায় দিতে চেষ্টা করেছি। অনেক কিছু এখানে বাদও পড়েছে। যেমন ধরা যাক খাদি বা তসরের সুতো বানাতে কেমন সময় লাগে সেই তথ্য আমার এখনও সংগ্রহ করা হয়নি। এই তথ্যগুলো দিতে চাই কারন এগুলো সামনে এলে সচেতন মানুষ নিজেই হিসেব করতে পারবেন একটা সম্পূর্ন হাতে বোনা শাড়ীতে কত ঘন্টার পরিশ্রম লাগছে। তারপর শাড়ীর দাম থেকে তিনি বুঝতে পারবেন এই হাতের কাজের জন্য ঘন্টাপ্রতি একজন তাঁতী কত টাকা মজুরী পান। আমার নিজের হিসেবে মনে হয়েছে তাঁতীদের উপযুক্ত মজুরী দিতে গেলে আমার পক্ষে প্রতি বছর একটা করে হ্যান্ডলুম শাড়ী কেনা সম্ভব হবে না। আমি এটা বলতে চাইনি যে শাড়ী সংগ্রাহকের সারা জীবনে চারটির বেশি শাড়ী কেনা চলবে না। আমার বক্তব্য হল, যত খুশী শাড়ী কিনুন, কিন্তু হাতের কাজের উপযুক্ত মূল্য দিন। মেশিনে বানানো শাড়ী আর হাতে বানানো শাড়ীর এক মূল্য হতে পারে না।

    হ্যান্ডলুমের দাম অতিরিক্ত বেড়ে গেলে তাঁতীদের পেশা বিপন্ন হবে বলে মনে হচ্ছে? আমার তো ধারনা পেশাটি ইতিমধ্যেই বিপন্ন। যেসব গ্রামে পাওয়ার লুম এসে গেছে সেখানে হাতে বোনার লোকের প্রয়োজন ফুরিয়েছে। যাঁরা এখনও হাতে বুনছেন, তাঁরা তাঁতের পাশাপাশি চাষের কাজও করছেন। নইলে সংসার চলে না। এই অবস্থায় হ্যান্ডলুম সংরক্ষণ করতে গেলে এই পেশার মানুষকে নিয়ে আলাদা করে ভাবতেই হবে। একটা পেন্টিং-এর যখন দাম নির্ধারণ হয় তখন তো আমরা ভাবি না সেটা সুলভ হল কিনা। তাঁতীও একজন শিল্পী। সেই শিল্পের উপযুক্ত মূল্যায়ন এবং যথাযথ পারিশ্রমিক দিতে হবে বইকি।

    আমি তাঁতশিল্পের সমস্যার সমাধান করে ফেলেছি এমন দাবী করছি না। আমি শুধু হ্যান্ডলুম বিষয়ে সচেতনতা এবং আলোচনা চাইছি। হ্যান্ডলুমের প্রধান ক্রেতা উচ্চশিক্ষিত এবং আর্থিক ভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ মেয়েরা। তারা এ নিয়ে ভাবনাচিন্তা করলে কিছু সমাধান বেরিয়ে আসবে বলেই আমার ধারনা।
  • d | ***:*** | ২৭ জুন ২০১৭ ১২:১৮60512
  • চমৎকার তথ্যসংগ্রহ হুচি।
    এই জায়গাটায় আমার খটকা এই যে চারটে কি পাঁচটা শাড়ি যদি আমি তুমি সংগ্রহ করি, তাতে কি তাঁতীর খুব উপকার হবে? মানে প্রচুর দাম দিয়ে অল্পসংখ্যক শাড়ি কিনলাম, তার গল্প জানলাম এটা একজন ইউজারের দিক থেকে ঠিকই আছে হয়ত। শাড়ির বদলে অন্য আরো পাঁচরকম পরিধেয় যেখানে আরো সস্তা, সহজলভ্য ও সুবিধেজনকও বটে।
    কিন্তু তাতে কি তাঁতীদের সত্যি উপকার হবে?
  • পাই | ***:*** | ২৮ জুন ২০১৭ ০২:০৩60515
  • হুচি খুব ভাল করেছে এই কথাগুলো তুলে এনে। এসব নিয়ে তো এতকিছু জানতামও না, ভাবিওনি।
    এখানে একটা ভাল আলোচনা হচ্ছে। রেখে গেলাম।
    https://m.facebook.com/groups/175129282505026?view=permalink&id=1749858978365374
  • Shuchismita | ***:*** | ২৮ জুন ২০১৭ ০৩:০৩60516
  • ফেসবুক থেকে একটা গুরুত্বপূর্ন তথ্য এখানে তুলে রাখছি।

    ছন্দক জানা লিখেছেনঃ

    গোল্ড-এর যে রকম Hallmark হয় সেরকম টেক্সটাইলের ক্ষেত্রে Silk mark, wool mark, cotton mark, organic cotton mark ও handloom mark আছে। এগুলো রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে নেওয়া যায়। কিন্তু এই মার্ক লাগালে শাড়ীর দাম একটু বেশি হয়। তখন অনেকেই বেশি দাম বলে সেই শাড়ী কিনতে চান না। তাই কেউ এই মার্ক নিয়ে বেশি মাথা ঘামায় না।
  • SS | ***:*** | ২৮ জুন ২০১৭ ০৪:১৬60517
  • ফ্রি মার্কেট সিস্টেমে যে জিনিসের দাম বেশি সেটার ক্রেতা কম হবেই, কিছু করার নেই। যে কারণে উবার এসে রেজিস্টার্ড ট্যাক্সি বিজনেস অলমোস্ট বন্ধ করে দিচ্ছে, সেই কারণেই ট্রেডমার্ক ওলা শাড়ি বেশি দাম দিয়ে লোকে কিনবে না। আর সোনার গয়নার সাথে ঠিক শাড়ির তুলনা করা যায়না, কারন গয়না এখনো সিকিওরিটি। গয়না বন্ধক রেখে দরকারে লোন নেওয়া যায়। তাই ক্রেতার কাছে কোয়ালিটি একটা গুরূত্বপূর্ন ব্যাপার, কোয়ালিটি খারাপ হলে সিকিওরিটি হিসেবে ব্যাবহার করা যাবে না। এছাড়া, গয়না এক জেনেরেশন থেকে আর এক জেনেরেশনে ট্রান্সফার হয়। একটা শাড়ির আয়ু বড়জোর এক থেকে দুই জেনেরেশন। আর শাড়ি সিকিওরিটি হিসেবে ব্যবহার করা যায় না। তাই শাড়ির কোয়ালিটি নিয়ে খুব বেশি কেউ মাথা ঘামাবে না।আমি জানিনা শাড়ির দাম ইত্যাদই নিয়ে কোনো কম্প্রিহেন্সিভ মার্কেট স্টাডি কোথাও হয়েছে কিনা। মানে কি ধরণের শাড়ির চাহিদা সবথেকে বেশি, কোন শাড়ির জন্যে লোকে কত টাকা খরচ করতে রাজি আছে, বছরের কোন সময় শাড়ির চাহিদা বাড়ে, বিয়ের মরশুম নাকি পুজোর সময় এইসব। সকারের বয়ন শিল্প বিভাগ থেকে এইরকম একটা উদ্যোগ নেওয়া যায়। যদি দেখা যায় পুজোর সময় লোকে একটু বেশি দাম দিয়ে শাড়ি কিনতে রাজি, তাহলে হ্যান্ড্লুম একটা সিজনাল শিল্প হতে পারে। সারা বছর ধরে তাঁতিদের তাহলে হ্যান্ড্লুমের উপর নির্ভর করতে হবে না।
    ইন্ডস্ট্রিয়ালাইজেশনের প্রভাব তো অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু কোনো শিল্প যদি টিঁকে থাকতে চায় তাহলে ফর্ম চেন্ঞ্জ করেই থাকতে হবে। আর প্রধানত সরকারকেই এই উদ্যোগ নিতে হবে বলে মনে হয়।
  • pi | ***:*** | ৩০ আগস্ট ২০১৭ ০৩:৪৬60520
  • গ্রুপের আলোচনা থেকে কয়েকটা মন্তব্য রাখলাম এখানেঃ

    বিশ্বেন্দু নন্দ ঃ গত তিন বছর ধরে সাঙ্গঠনিকভাবে আমরা বাংলার শাড়ির উতপাদন ব্যবস্থা পাল্টানোর বিষয়ে কিছুটা নিজেদের মত করে কাজ করেছি। এখন যে সব শাড়ি তৈরি হয় ভারতে তা সব ক'টাই বিটি কটনে চাষ হয়, আমরাই বাংলায় কয়েকটি জায়গায় তুলো চাষ করিয়েছি - হাতে সুতো কাটিয়েছি - প্রাকৃতিক রঙ্গে ছুপিয়েছি আর জ্যাকার্ড যন্ত্র বাদ দিয়ে ঠকঠকি তাঁতে সারি বুনিয়েছি। এই পয়লা বৈশাখে নতুন তুলোর সাড়ি বুনিয়েছি।
    এটা একটা অভিজ্ঞতা।
    এই ছোট জায়গায় সেই লেখাটা করা যাবে না।
    ইপসিতা বলেছেন একটা লেখা তৈরি করতে।
    হাতে কয়েকটা কাজ আছে - সেগুলো সেরে নিয়ে একটা বড় লেখা করব।
    আদতে শাড়ি বেচা নয়, উৎপাদন ব্যবস্থায় বদল আনতে হবে - আমরা বলি আমরা ১৭৫৭র আগে ফিরে যেতে চাই - অন্তত শাড়ির উৎপাদন ব্যবস্থায় সেই অবস্থা তৈরি করতে চাইছি।
    চাষীর মত তাঁতির হাতে সব উপাদান তুলে না দিলে তাঁতি স্ববলম্বী হবে না, বর্তমানে ভদ্রদের ব্যবসা বাড়ছে কিন্তু তাঁতির কোন লাভ হচ্ছে না।

    হ্হন্দক যন আপ্নর লেখর অপেক্খই রৈলম। ঐতো অম্র কাজ এ কিচু পোরিবোর্তোন অন্তে পর্বো
    লাইকআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন · প্রত্যুত্তর · ২৮ জুন, ০১ঃ৩৪ আ-এ
    পরিচালনা করুন
    ইস্বেন্দু ণন্দ
    ইস্বেন্দু ণন্দ এখানে আপনাদের অংশগ্রহণ জরুরি। তাঁত একটা বাংলার জ্ঞানচর্চার অংশ। তাঁত রক্ষা আমাদের সকলের দায়। আসলে আমরা পরিকাঠামোতা গড়তে চাইছি।, যেখানে তাঁতির কাছে সুতো কাটা রং করা সব আড়ঙ্গের নত থাকবে - তাকে আর বাজারে যেতে হবে না - তার কাঁচামালের দাম কমবে - সেখানে প্রয়ো)জন নতুন ভাবনা - সেটা আপনাদের দিয়েই হবে। কোন দিন দেখা হলে কথা হবে। ধন্যবাদ।
    লাইকআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন · প্রত্যুত্তর · ২ · ২৮ জুন, ০১ঃ৩৭ আ-এ
    পরিচালনা করুন
    ঈপ্সিত অল

    উত্তর লিখুন।।।

    হূসে ইলে
    ণিন অঙ্গুলী
    ণিন অঙ্গুলী এই যে লিনেন বাইলুম বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে , কিনছেও লোকে -- বুটিক যতটা লাভ করছে আসল তাঁতির কি কিছু সুবিধে হচ্ছে ? এগুলোও কি পাওয়ার লুমে?
    লাইকআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন · প্রত্যুত্তর · ২৮ জুন, ১২ঃ০৫ আ-এ
    পরিচালনা করুন
    ইস্বেন্দু ণন্দ
    ইস্বেন্দু ণন্দ এখন কিছু না মন্তব্য করাই ভাল। আমরা সঙ্গঠন করি তো গায়ে গতরে খেটে - কোন সঙ্গঠিত দান ছাড়াই - ফলে আমরা জানি সুতা কাটনিদের কোথায় কোথায় অবস্থান, তাদের কাজের সময়, মূল্য মোটামুটি জানা হয়ে গিয়েছে। কলকাতার নামি বুটিকগুলো নিয়ে কোন মন্তব্য না করাই ভাল।
    তাঁতির লাভ কে দেখে? বুটিক ওয়ালা কেন দেখবে? তারই পরিমাঠামো ব্যয়ে এত বিনিয়োগ করতে হয় শেষ পর্যন্ত তাঁতিকেই সেই বলিদানটা দিতে হয়।
    লাইকআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন · প্রত্যুত্তর · ২ · ২৮ জুন, ১২ঃ১০ আ-এ

    ণিন অঙ্গুলী আজকাল একটা জিনিষ চালু হয়েছে -- কিছু তাঁতি নিজেরা আসছেন কলকাতায় বাড়ী তে -- এবং আমরা কিনছি ।
    লাইকআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন · প্রত্যুত্তর · ২৮ জুন, ১২ঃ১৫ আ-এ

    ইস্বেন্দু ণন্দ
    ইস্বেন্দু ণন্দ একটা জিনস পরিষ্কার করে বলা দরকার, শাড়ি কিন্তু একটা বোনা হয় না - একটা টানার জন্য অন্তত ১৫-২০টা সাড়ি বুনতে হয় - নাহলে শাড়ির পড়তা পড়ে না - তবে বানার সুতোর হাল্কা রং পালটে পরের শাড়ির কিছুটা শেডের পরিবর্তন আনা যায় - নাহলে একটা শাড়ির দাম পড়ে যায় ৩০-৪০ হাজারে। যে বুটিকওয়ালা দাবি করছেন তিনি হাজারটা শাড়ি বিক্রি করেন তৈরি করিয়ে, তিনি কি প্রত্যেকটা শাড়ির ১৫-২০টাই তাঁতির থেকে কেনেন? এটা সম্ভব?
    ঈপ্সিত আসলে আমি একটা অনুবাদ করছি, মাথাটা ওটাতেই আটকে রয়েছে। শুধু কিছু মন্তব্য নজরে আসছে বলে মন্তব্য করতে বাধ্য হচ্ছি।
    আর তাঁতিরা যদি নিজের বিক্রি করেন এর থেকে ভাল কিছুই হয় না।
    পরে বিস্তৃতভাবে একটা লিখব। মূলত তাঁতির সমস্যা নিয়েই।

    Rুখ্সন Kঅজোল শাড়ির আলোচনা হচ্ছে না এসে কি পারা যায় ! আমার শাড়ি সম্পর্কে প্রথম ধারণা এরকম, বড় একটা টিনের গামলা। তার ভেতরে ভয়ংকর নীল রঙের একটা ঝরঝরে সুন্দর কাজ করা শাড়ি। মা বসে বসে তার পাড়ের সূতো খুলছে আর খুব যত্ন করে একটা কৌটায় তুলে রাখছে। শুনেছি অই সূতোগুলো শম্ভু পোদ্দারের দোকানে বিক্রি করা হয়েছিলো। দামি শাড়ি, আমার বাপ দাদার সাধ্য ছিলো না । মার বাবা দিয়েছিলো । শুনেছি বেটা চশমখোর নায়েব ছিল।
    মা দিদিরা মহা শৌখিন ছিল। মা নেই। দিদিরা এখনো বেছে খুঁটে দেশী বিদেশি শাড়ি কেনে। দেশি শাড়িতে টাংগাইলের তাঁতের শাড়ি এক নম্বরে। রঙ এবং ডিজাইন নিয়ে গবেষণা করা হয়। তাতের গামছা, চাদর ,লুংগিও আছে। গামছা দিয়ে আমরা ব্লাউজ, ফতুয়া, কামিজ বানিয়ে নিই।
    গেলো কয়েক বছর মসলিন শাড়ি খুব চলেছে । হেব্বি পাতলা। এক্কেরে ফকফকা। দামও সেরম। ইয়া আলি বলে একখানা কিনে ফেলেছি। আর আছে রাজশাহী সিল্ক তুঁত , এন্ডি আর তসর সিল্কের রাজশাহী শাড়ি সারা বছর চলে।
    জামদানির কথা বলি। নকল সূতোর জামদানী দেদার চলছে। সূতি আর হাফ সিল্ক জামদানির দাম তিন হাজার থেকে লাখ টাকার উপর। ঢাকার কাছে ডেমরা নামের একটা জায়গায় পাইকারী জামদানি শাড়ি কেনা যায়। টাংগাইলের হাটেও অনেকে গিয়ে কিনে । যাই নি কখনো। আমরা বুটিক নির্ভর। আড়ং, রঙ, বিশাল রঙ, দেশী দশ ছাড়াও হাজার বুটিক ঘুরে কিনে নিই।
    মিরপুরের কাতান, বেনারসি , সিল্ক শাড়িও খুব নাম করেছে। দেবদাস ফিল্মে মাধুরী আর ঐশ্বরিয়া নাকি ডোলে রে ডোলে গানে মিরপুরের শাড়ি পরেছিল। আমি সিওর নই।
    আর একটা কথা, সারা ইন্ডিয়ার সব অঞ্চলের ভালো শাড়িগুলো আমরা পেয়ে যাই। বাংলাদেশের মহিলারা ইন্ডিয়ান শাড়ি খুব পছন্দ করে।
    মাই গড। আমিও শাড়ি বৃত্তান্ত লিখে ফেললাম। এবার সুচিস্মিতা সরকারের লেখা নিয়ে বলি, খুব ভালো লেখা। শাড়ির পাশে তাঁতিদের মজুরির প্রসংগ এনে লেখাটা মানবিক হয়ে উঠেছে । ধন্যবাদ লেখককে।
    আমি ভাই শাড়ি চিনিনা। কিনি। বেশি কিনি ঝগড়া করলে, মন খারাপ হলে, হঠাত অনুষ্ঠান হলে।
  • পৃথা | ***:*** | ৩০ আগস্ট ২০১৭ ০৫:০০60521
  • অত‍্যন্ত জরুরী লেখা। সত্যি এত যত্ন করে যারা শাড়ি বুনছেন তারা কিছুই পান না।বালুচরীর ক্ষেত্রেও এরকম শুনেছি।আবার কম শাড়ি কিনলে ও কিন্তু তাতীদের লোকসান।
  • | ***:*** | ৩০ আগস্ট ২০১৭ ০৮:০৮60518
  • এটা এখানে থাক

  • de | ***:*** | ৩০ আগস্ট ২০১৭ ১০:৩৫60519
  • লেখাটা খুব ভালো - আমি যদিও শাড়ি দূর থেকে দেখতেই বেশী পছন্দ করি! জামাকাপড়ের পিছনে আমি বেশী খরচ করতে পছন্দ করি না -

    কিন্তু ৬০০০০ টাকা দিয়ে জামদানি!!! লোকে কিনে পরে না মিউজিয়ামে দেয়!
  • pi | ***:*** | ০২ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:০৯60523
  • যে শাড়ি কোলকাতায় বিকোচ্ছ্হে ৮-৯০০০ এ , তার মজুরি ৭৫০ টাকা !!
  • hu | ***:*** | ০২ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:১৫60524
  • সে তো বটেই। তবে শুধুই বুটিক মালিকরা লাভ করছে বলে আমরা হাত ঝেড়ে ফেলতে পারি না। পাঁচ-ছশো টাকার যে তাঁতের শাড়ী এখনও বাজারে কিনতে পাওয়া যায় সেগুলোও হাতে বোনা। হাতে বোনা কোন জিনিসের দাম এত অল্প হওয়া উচিত নয়।
  • hu | ***:*** | ০২ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:১০60533
  • সাধারণ পোষাক বলতে কি মাস প্রোডাকশন হয় এমন পোষাকের কথা বলছেন? ফ্যাশন ডিজাইনাররা সাধারনত এক কপি করেই বানান। সে ডিজাইন সাধারণ না অসাধারণ সে বোঝার দায় রসিকজনের।

    ইদানিং ডিজাইনার ব্লাউজ ইত্যাদি হুলিয়ে বিক্রি হচ্ছে দেখতে পাই। সেগুলো একাধিক কপিই তৈরী হয়। আমার ব্যক্তিগত ভাবে পোষাকের পেছনে অত খরচ করা হয়ে ওঠে না। তবে যারা কেনেন, তাঁরা ডিজাইনের স্বতন্ত্রতার জন্যই দামটা দেন।
  • hu | ***:*** | ০২ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:১২60534
  • গুরু-র ফেবু সাইটে এটা লিখে এলাম। এখানেও রেখে দিই।

    এবিষয়ে আমার মত হল, মেশিনে তৈরী কাপড় যতখানি সম্ভব সহজলভ্য করা হোক, সবার আয়ত্ত্বের মধ্যে আনা হোক, কিন্তু হাতে তৈরী জিনিসের দাম বাড়াতে হবে। মিডলম্যান নেই এমন জায়গাতেও, ডায়রেক্ট তাঁতীর ঘর থেকেই যদি আপনি কেনেন, হাতে বোনা ফাইন সুতির শাড়ী আপনি পেয়ে যাবেন চারশো-সাড়ে চারশোর মধ্যে। আমি যতটুকু ঘুরেছি, হাতে তৈরী জিনিসের এত কম দাম অন্য দেশে চোখে পড়েনি। প্রতিটি হাতে তৈরী জিনিস ইউনিক এবং তার যথার্থ মূল্য দেওয়া উচিত বলে মনে করি। এতে আশঙ্কা থাকতে পারে যে বেশি দাম হলে মানুষ হয়তো কিনবেন না। হস্তশিল্পকে যথযোগ্য মূল্য দিয়েও কিভাবে একটা সাস্টেনেবল বিজনেস মডেল তৈরী করা যায় সেবিষয়ে আমি বিশেষজ্ঞ নই। কিন্তু এটা অসম্ভব বলে মনে করিনা। সবার প্রথমে এটা স্বীকার করতে হবে আমরা হস্তশিল্পকে যথাযোগ্য সম্মানদক্ষিণা দিচ্ছি না। এই "আমরা"র মধ্যে শুধু মিডলম্যান, বড় বাজারের ব্যবসায়ী বা বুটিক মালিকেরা নেই, যারাই কম দামে হ্যান্ডক্রাফটেড আইটেম / হ্যান্ডলুম প্রোডাক্ট কিনছি তারা সবাই আছি। এটা এখনই সংশোধন করতে না পারলে এই শিল্পীদের পরের জেনারেশন এই পেশায় আসবেন না। ফলত শিল্পটা হারিয়ে যাবে।
  • pi | ***:*** | ০২ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৪:৫৮60525
  • মানে তাঁতের যা শাড়ি দেখি, ৫০০-৬০০ র রেন্জে, সেগুলো হাতে বোনা ? তাহলে তো সত্যিই খুব কম। আর ৭০০০ এর শাড়ির জন্য ৭৫০ পেলে এই ৬০০ র শাড়িতে কর পান ? ১০০-২০০ ? ঃ(
    মারাত্মক এক্স্প্লয়েটেশন তাহলে।

    সেদিন ত্রিপুরায় এক শিল্প মেলায় গেলাম। মুর্শিদাবাদ থেকে স্টল ছিল, তাঁতিদের নিজেদের। তাই তো বললেন, নিজেরাই বোনেন আর মেলায় মেলায় বেচেন। খুব সুন্দর শাড়ি ছিল, দামও রিজনেবল। কিন্তু আশা করব, অন্যান্য খরচ উঠিয়ে বাকিটা নিজেরাই পাচ্ছেন। কথা বলে মহাজন মনে হল না, শাড়ি বোনা নিয়ে অনেক ফাণ্ডা দিচ্ছিলেন।
  • hu | ***:*** | ০২ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৬:০৪60526
  • এই শাড়ীগুলোতে মনে হয় অত মার্জিন থাকে না। চারশো-সাড়ে চারশো এইরকম পাইকারী রেটে তাঁতীর ঘর থেকে তোলা হয়। সুতোর কোয়ালিটি, বুটি ইত্যাদির ওপর দাম নির্ভর করছে। তো আমি হিসেব পেয়েছিলাম, কাঁচামালের খরচ মিনিমাম সত্তর টাকা পার শাড়ী। তাহলে তাঁতীর হাতে তিনশো-সাড়ে তিনশো থাকছে। সেটা একটা হস্তশিল্পের ক্ষেত্রে খুবই কম আমার মতে। জানি না তৃতীয় বিশ্বের বাইরে এত সস্তায় হ্যান্ডলুম প্রোডাক্ট কেনা যায় কিনা। ফুলিয়ায় কিছুঘরে পাওয়ার লুম বসেছে শুনেছি। কিন্তু বেশিরভাগই এখনও হ্যান্ডলুম।
  • Rabaahuta | ***:*** | ০২ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৬:১০60527
  • আমার বেঙ্গালুরুর ফ্ল্যাটের কেয়ারটেকার শাড়িতে ব্লক প্রিন্টের কাজ করতেন। বললেন গত বছর কুড়িতে নাকি ঐ কাজে দৈনিক মজুরী ৩৫টাকা থেকে নেমে ১২/১৪ টাকা হয়েছে।
  • Rabaahuta | ***:*** | ০২ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৬:১১60528
  • স্যরি, দৈনিক না, শাড়ি পিছু।
  • hu | ***:*** | ০২ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৬:৩৬60529
  • যা শুনেছিলামঃ "মজুরীর ব্যাপারে দক্ষতা অনুযায়ী ভেদাভেদ নেই। যিনি সুতো বানাচ্ছেন, যিনি রঙ করছেন, যিনি বুনছেন, প্রিন্টের ক্ষেত্রে যিনি ব্লক বসাচ্ছেন সবার এক মজুরী। দিনে তিনশো থেকে সাড়ে তিনশো। "
  • S | ***:*** | ০২ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৬:৪২60530
  • অথ্চ ডিজাইনার শাড়ির তো শুনেছি মারাত্মক দাম। সাউথ সিটি মলে একজন নামকরা ডিজাইনার পোষাকের দোকান আছে, সেখানে মুলত মহিলাদের পোষাক পাওয়া যায়। একবার গেছিলাম। দাম দেখে তো চক্ষু চরকগাছ, কিন্তু পোষাকগুলো দেখে তো খুবই সাধারণ মনে হলো।
  • hu | ***:*** | ০২ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৮:০৭60531
  • দেখুন ডিজাইনার পোষাক তো শিল্প। একটা ছবি কিনতে গেলে কি আপনি ক্যানভাস আর রনতুলির দাম দেখে মূল্য ধার্য করবেন? ডিজাইনার শাড়ীর দোকানে আমি কখনও ঢুকিনি, কিন্তু আমার এমনই মনে হয়।
  • S | ***:*** | ০২ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৮:১৪60532
  • আমি সাধারণ পোষাক বলতে সাধারণ ডিজাইনের কথাই বলেছি।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক মতামত দিন