এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • দুটি পাড়া, একটি বাড়ি

    Shuchismita Sarkar লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৩ আগস্ট ২০১৯ | ২২০৫ বার পঠিত
  • পাশাপাশি দুই পাড়া - ভ-পাড়া আর প-পাড়া। জন্মলগ্ন থেকেই তাদের মধ্যে তুমুল টক্কর। দুই পাড়ার সীমানায় একখানি সাতমহলা বাহারী বাড়ি। তাতে ক-পরিবারের বাস। এরা সম্ভ্রান্ত, উচ্চশিক্ষিত। দুই পাড়ার সাথেই এদের মুখ মিষ্টি, কিন্তু নিজেদের এরা কোনো পাড়ারই অংশ মনে করে না। পারিবারিক ব্যবসা, শিল্প-সংস্কৃতির চর্চায় মগ্ন ক-বাড়ি যেন একটি স্বতন্ত্র পাড়া। একবার প-পাড়ার কিছু গুন্ডার চোখ পড়ল ক-বাড়ির দিকে। অভিজাত ক-পরিবারকে নিজেদের পাড়ায় ঢোকাতে পারলে এক লাফে প-পাড়ার প্রতিপত্তি বাড়ে। অনিচ্ছুক ক-বাড়ির দরজা-জানলায় ঢিল পড়তে লাগল। তাদের তাজা ছেলেদের প্রাণ গেল। মেয়েদের কিনা জানের চেয়ে মানের দাম বেশি, তাই বেশ কিছু মেয়ে মারা পড়লেও তাদের সম্ভ্রমহানির কথাই বেশি করে প্রচার হল। ক-বাড়ির আভিজাত্যের গর্ব ছিল বটে, কিন্তু তাদের লাঠি-সোঁটা তেমন ছিল না। অনন্যোপায় ক-প্রধান ভ-পাড়ার সাহায্য চাইলেন। ক-বাড়িতে গিয়ে হাঙ্গামা না বাধালেও ভ-পাড়ারও দিব্যি লোভ ছিল ক-বাড়িকে নিজেদের পাড়ায় অন্তর্ভুক্ত করার। তারা বলল, "প-পাড়ার গুন্ডাদের এক্ষুনি শায়েস্তা করে দিচ্ছি। আমাদের ডিফেন্স পার্টি এমনি এমনি কি আর সকাল-বিকেল মুগুর ভাঁজে! কিন্তু মেসোমশাই, এভাবে তো সারা জীবন চলবে না। ভ-পাড়ার সীমানাটা বাড়িয়ে আপনার বাড়িটাকেও ঢুকিয়ে নিই না কেন?" বৃদ্ধ ক-প্রধান শুকনো মুখে বাড়ি ফিরে পরিবারের লোকেদের কাছে কথাটা পাড়লেন। শত্তুরের মুখে ছাই দিয়ে পরিবারের সদস্যসংখ্যা কিছু কম নয়। কেউ বলল, আমাদের নিজস্বতার কি হবে? কেউ বলল, ঘাড় যদি নোয়াতেই হয় তো প-পাড়াই বা কি দোষ করল? কেউ বলল, প-পাড়া হলে ভ-পাড়াই বা কেন নয়? এই গোলযোগের মধ্যে আরও কটা লাশ পড়ে গেল। ক-প্রধান সময় নষ্ট না করে ভ-পাড়ার প্রতিনিধিকে তলব করলেন। ঠিক হল, আপাতত ভ-পাড়াকে অনুমতি দেওয়া হবে তাদের সীমানা বাড়িয়ে ক-বাড়িকে ঢুকিয়ে নেওয়ার। সুরক্ষা, অন্যপাড়ার সাথে সম্পর্ক আর যোগাযোগ বিষয়ে ভ-পাড়ার মতমত মেনে নিতে ক-প্রধান বাধ্য থাকবেন। কিন্তু ক-বাড়ির আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে ভ-পাড়া নাক গলাতে আসবে না। তাদের পারিবারিক ব্যবসা তাদেরই থাকবে। ভ-পাড়ার কোনো পুরুষ সেই ব্যবসায় যোগ দিতে পারবে না। আর কিছুদিন পরে পরিস্থিতি শান্ত হলে ক-পরিবারের ছোট-বড় সবার মতামত নিয়ে ঠিক হবে ক-বাড়ি ভ-পাড়াতেই থাকবে, নাকি প-পাড়াতে যাবে, নাকি আগের মত স্বতন্ত্র হবে। ভ-পাড়া সব শর্তেই রাজি হয়ে ক-পরিবারকে সুরক্ষা দিতে রাজি হল। তাদের মুগুর ভাঁজা জোয়ানদের কাছে প-পাড়ার গুন্ডারা গোহারান হেরে পালিয়ে গেল।

    এর পর প্রায় তিন প্রজন্ম কেটে গেছে। ক-বাড়িতে মাঝে মাঝেই কথা ওঠে, "আচ্ছা সেই যে বুড়ো কর্তার আমলে কথা হয়েছিল পরিবারের বাচ্চা-বুড়ো সবার মতামত নিয়ে ঠিক হবে আমরা কি ভাবে থাকতে চাই, তার কি হল?" ভ-পাড়ার নতুন সেক্রেটারী সুকৌশলে সে প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়ে বলেন, "এসব কথা কেন তুলছ ভাই? এ পাড়ায় কি তোমাদের কিছুর অভাব আছে?" সে কথা শুনে ভ-পাড়ার অন্য বাড়িগুলোয় জটলা হয়। একজন বলে, "অভাব আছে মানে? পারলে সেক্রেটারী আমাদের মুখের গ্রাস কেড়ে ওদের খাইয়ে আসবে!" আরেকজন সায় দেয়, "যা বলেছ! বুঝি না ওদের এত তোল্লাই দেওয়া হয় কেন! আমাদের খাবে, আমাদের পরবে, আমাদের পাড়ার ছেলেগুলো ওদের বাড়ি পাহারা দেবে, অথচ ওদের ঘরে কি হচ্ছে আমরা জানতেও পারব না! নাকি আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে কথা বলা যাবে না!" তখন একজন মনে করিয়ে দিতে যায় যে এই শর্তেই ক-বাড়ির বুড়ো কর্তা ভ-পাড়ার সীমানা বাড়াতে দিতে রাজি হয়েছিলেন। কিন্তু সে নেহাৎই সংখ্যালঘু বলে তার কথা বাতাসেই মিলিয়ে যায়। নতুন ছেলেমেয়েরা জানেও না সেসব পুরোনো শর্তের কথা। তারা বলে, "বটেই তো! পাড়ার মধ্যে থেকেও এমন আলাদা হয়ে থাকা খুবই অসভ্যতা। এসব চলতে দেওয়া যায় না। আমাদের সেক্রেটারী মশাই বড় মিনমিনে প্রকৃতির। এসব পোস্টে সাচ্চা মরদ চাই।"

    কিছুদিন পরে একজন ছাপ্পান্ন ইঞ্চি ছাতির সাচ্চা মরদ সেক্রেটারী হয়ে এলেন। প-পাড়া তাঁর ভয়ে থরথর করে কাঁপতে লাগল। ক-বাড়িকে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, "ওসব পুরোনো চুক্তির কথা ভুলে যাও। আর সব বাড়ি যেভাবে এই পাড়াতে আছে সেভাবে থাকতে হবে। এক পাড়ায় থেকে নিজেদের স্বাতন্ত্র্যরক্ষার ছিঁচকাদুনী আর সহ্য করা হবে না।" ক-বাড়িকে শায়েস্তা করতে পেরে গোটা ভ-পাড়া উল্লাসে ফেটে পড়ল। সংখ্যালঘু মানুষটি বুড়ো কর্তার আমলের চুক্তিপত্র খুলে অন্তর্ভুক্তির শর্তাবলীর কথা বার কয়েক মনে করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করল বটে। কিন্তু বরাবরের মত তার কথাগুলো এবারেও বাতাসে মিলিয়ে গেল।

    ।।।।।।।

    কারোর যদি মনে হয় ক-বাড়ির সাথে ন্যয্য বিচার হল না তাহলে সে ইনস্ট্রুমেন্ট অফ অ্যাকসেশন ও ৩৭০ ধারার চুক্তিপত্র পড়ে নিতে পারে। গুগল করলেই সব পাওয়া যায়।

    (হোয়াটস্যাপ ইউনিভার্সিটিতে প্রচারের উদ্দেশ্যে লিখিত। লেখকের নাম থাকল কিনা তাতে কিস্যু এসে যায় না।)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৩ আগস্ট ২০১৯ | ২২০৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | ***:*** | ১৩ আগস্ট ২০১৯ ০২:২৫49213
  • হুঁ।

    লেখাটা ভাল হয়েছে, যথারীতি
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক মতামত দিন