পলিটিশিয়ানকে বলেছিলাম-- "মেটেরিয়ালিজম অ্যান্ড এম্পিরিও ক্রিটিসিজম" বইটা নিয়ে কিছু লিখব। তাই লিখছি। আর এই শেষ, কারণ টই মূল জায়গা থেকে সরে শুধু কয়েকজনের কুটকচালিতে পর্যবসিত হয়েছে। -------
হাতের কাছে বইটা নেই, তাই অর্ধশতাব্দী আগে পড়া বইয়ের যতটুকু নির্যাস মনে আছে তার থেকে লিখছি। কিছু ভুল হতে পারে।
ভিয়েনার ফিজিসিস্ট এবং দার্শনিক এর্ন্সট মাখ যিনিটনের বয়সে ভিয়েনার দর্শনের বিশেষ চেয়ার হোল্ড করেছিলেন ১৯০১ সাল পর্য্যন্ত এবং যাঁর প্রভাব বিখ্যাত ভিয়েনা স্কুলের সদস্যদের চিন্তাতেও পড়েছিল।
উনি নিউটনের সরল একমাত্রিক গতিসূত্রের কড়া সমালোচনা করে গতির আপেক্ষিকতার তত্ত্ব প্রচার করলেন। আইনস্টাইন পরে বললেন যে মাখের ওই তত্ত্ব ওনার জেনারেল থিওরি অফ রিলেটিভিটির জন্মদাতা, বা এমনি কিছু।
যদিও মাখের অন্য সব তত্ত্ব আইনস্টাইন মানেন নি এবং মাখও শেষ বয়সে আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার তত্ত্বের সমালোচনা করেছিলেন।
এখন এই মাখ ভদ্রলোক এবং তাঁর গুরু জার্মান দার্শনিক আভেনারিয়াস একধরণের অভিজ্ঞতাবাদী তত্ত্ব দাঁড় করালেন যে আমরা আমাদের সেন্সরি অর্গানের মাধ্যমে কিছু সেন্সেশন বা ইন্দ্রিয়সংবেদনা পেতে পারি, তার বেশি কিছু নয়। অর্থাৎ কোন বস্তু বলতে যা বর্ণনা করি বা সংজ্ঞায়িত করি তা কিছু শব্দ, স্পর্শ, গন্ধ এবং রঙের সমাহার মাত্র। এর পেছনে কোন বস্তু আছে কিনা তা বলা অসম্ভব।
আমরা যদি বলি একটি বেড়ালকে দেখছি, তা আসলে 'বেড়ালত্ব' (ক্যাটনেস) বলে কিছু গুণের সমাহার মাত্র যা আমরা অনুভব করি-- সাদা রঙ, গোঁফ, থাবা, লোম, ম্যাঁও ইত্যাদির। কিন্তু সত্যি বেড়াল বলে কিছু আছে কিনা তা বলা অসম্ভব।
অর্থাৎ এঁরা চ্যালেঞ্জ করলেন যে আমাদের মনের বা স্মৃতির বাইরে কোন বস্তুজগত আদৌ আছে কি?
এঁদের সঙ্গে দাঁড়ালেন এক রুশী মার্ক্সবাদী দার্শনিক--বগদানভ।
লেনিন ওই তিনজনের তত্ত্বকে আক্রমণ করে ১৯০৮ সালে লিখলেন "মেটেরিয়ালিজম অ্যান্ড এম্পিরিও ক্রিটিসিজম"।
লেনিনের আপত্তিগুলো, যতদূর মনে আছে, মোটামুটি এইরকমঃ
১ এগুলো শব্দের খেলা। যদি আমার অস্তিত্বের বাইরে কোন বস্তুর অস্তিত্বই না থাকে তাহলে আমি কার রঙ, শব্দ, গন্ধ, স্পর্শ অনুভব করছি? কার শরীরে আলো প্রতিফলিত হয়ে আমার চোখের রেটিনায় আসছে? আমি কার শরীরের স্পর্শ অনুভব করছি?
২ এমন যুক্তি পরম্পরায় চললে শেষমেশ আমাদের অবস্থান হবে যে শুধু আমিই আছি এইটুকুই নিশ্চিত করে বলা যায়, চারপাশের লোকজন, বিশ্ব প্রকৃতি কিছুই নেই-- এক এক্সট্রিম সলিপসিজম!
৩ এই অবস্থান বিশপ ব্র্যাডলির সাবজেক্টিভ আইডিয়ালিজম থেকে খুব আলাদা কিছু নয়।
৪ বস্তুর গতির ফলে তার ভর কমে শূন্য হতে পারে, তার মানে এই নয় যে বস্তু (ম্যাটার) গায়েব। শুধু তার সূক্ষ্মগতির সঙ্গে আমরা পরিচিত হচ্ছি। আগামী দিনে ইলেক্ট্রন, প্রোটন থেকেও আর মৌলিক কণার আবিষ্কার হবে।
৫ কান্টের প্রশংসা করে লেনিন বললেন যে উনি এর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে জড়জগতের স্বতন্ত্র ব্যক্তিনিরপেক্ষ অস্তিত্ব স্বীকার করছেন।
৬ কিন্তু কান্টের নিন্দা করলেন এই জন্যে যে কান্ট মনে করছেন সেই স্বতন্ত্র বস্তুর (থিং ইন ইটসেলফ) প্রকৃত স্বরূপ কোনদিন জানা যাবে না।
লেনিনের মতে মানবসমাজের জ্ঞান একটি টাইম সিরিজে অনন্ত আপেক্ষিক সত্যের সিরিজ। আজ যা জানা নেই, কাল তা জানা যাবে। মেডিক্যাল সায়েন্সের উন্নতি তার প্রমাণ।
ব্যস, আর কিছুই মনে নেই।