এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • ধর্ম, মৌলবাদ ও আমাদের ভবিষ্যৎ : কিছু যুক্তিবাদী চর্চা

    Debasis Bhattacharya লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৫ ডিসেম্বর ২০২২ | ৬০৪০৩ বার পঠিত | রেটিং ৪.৫ (২ জন)
  • ইসলাম সম্পর্কে আলাদা করে দু-চার কথা

    মৌলবাদ নিয়ে এই ধরনের একটা লেখায় যদি কেউ ঘোষণা করেন যে, এইবার ইসলাম নিয়ে আলাদা করে কিছু বলা হবে, তখন পাঠকের সে নিয়ে একটা প্রত্যাশা তৈরি হতে পারে। কাজেই, এখানে গোড়াতেই সে ব্যাপারে পরিষ্কারভাবে বলে রাখা দরকার, না হলে পাঠক হয়ত বিভ্রান্ত ও ক্ষুব্ধ হবেন। সম্ভাব্য প্রত্যাশাটি এই রকম যে, মৌলবাদের স্বরূপ নিয়ে যখন চর্চা হচ্ছে, এবং তার মধ্যেই আলাদা করে ইসলাম নিয়ে চর্চার ঘোষণা হচ্ছে, তখন নিশ্চয়ই দেশে দেশে ইসলামীয় মৌলবাদের উৎপত্তি ও বিকাশ নিয়ে ঐতিহাসিক বিবরণ পাওয়া যাবে এখানে, বিভিন্ন স্থান-কালে তার সাধারণ বৈশিষ্ট্য ও বিশেষ বিশেষ বৈচিত্র্যের উল্লেখ পাওয়া যাবে, এবং অন্যান্য ধর্মের মৌলবাদের সঙ্গে তার মিল ও অমিল এবং তার কার্যকারণ ইত্যাদি বিষয়ক অনুসন্ধান ও তার ফলাফলও পাওয়া যাবে। হ্যাঁ, এখানে তা করতে পারলে ভালই হত, কিন্তু তার উপায় নেই। সেটা করতে গেলে আগে বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ধর্মের মৌলবাদের কার্যকলাপ নিয়ে একটা সুনির্দিষ্ট ও বিস্তারিত আলোচনা সেরে রাখতে হত, তবেই তার প্রেক্ষিতে ইসলামীয় মৌলবাদের বৈশিষ্ট্যগুলো স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠতে পারত। দুঃখের বিষয়, সে পরিসর এখানে ছিল না, এখানে তো এতক্ষণ মৌলবাদ নিয়ে শুধু কতকগুলো অতি সাধারণ কথাই বলেছি। বলে রাখা দরকার, এখানে আমি সরাসরি সেইসব নিয়ে আলোচনার চেষ্টা করব না, যদিও যা আসলে বলব তার মধ্যে এ বিষয়ে আমার মতামত ও চিন্তাভাবনারও কিছু ইঙ্গিত হয়ত মিলবে। এখানে আমি মূলত কথা বলব ইসলাম ধর্ম ও সংশ্লিষ্ট মৌলবাদ প্রসঙ্গে আমাদের সমাজের মূলস্রোত ধ্যানধারণা নিয়ে, এবং তার ঠিক-বেঠিক নিয়েও। এ নিয়ে কথা বলব কারণ, আমার ধারণা, ভারতের মাটিতে দাঁড়িয়ে যাঁরা ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে লড়তে চান, তাঁদের এ বিষয়টি এড়িয়ে যাবার কোনও উপায় নেই।
     
    ওপরে বলেছি, যাঁরা ধার্মিক নন বরঞ্চ ‘ধর্ম’ জিনিসটার সমালোচক, তাঁদের মধ্যে ইসলাম নিয়ে দু রকমের ভাবনা বেশ পরিচিত। অনেকে মনে করেন, এই ‘মৌলবাদ’ সংক্রান্ত সমস্যাটা আসলে শুধুই ইসলামের সমস্যা, আর কারুরই নয় --- ধর্মের নামে ফতোয়াবাজি আর মারদাঙ্গা মূলত মুসলমানেরাই করছে। অন্যদের যদি আদৌ কিছু সমস্যা থেকেও থাকে, তো সেটা শুধু ইসলামি জঙ্গিপনার প্রতিক্রিয়া মাত্র। আবার, এ অবস্থানটি অন্য অনেকের দুশ্চিন্তারও কারণ। ইসলামি জঙ্গিপনার বিপদ স্বীকার করেও তাঁরা মনে করেন যে, এই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে নির্দোষ ও নিরীহ আম মুসলমানের ঢালাও খলনায়কীকরণ হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ছড়ানো হচ্ছে ঘৃণা বিদ্বেষ ও হিংস্রতা। প্রথম ভাবনাটি ভুল, কেন তার কিছু ব্যাখ্যা নিচে আছে।
     
    আর ওই দ্বিতীয় প্রকারের যে দুশ্চিন্তা, আমি এবং আমার মত অনেকেই যার শরিক, তার এক প্রতিনিধি-স্থানীয় দৃষ্টান্ত আমার হাতে এসেছে কয়েকদিন আগে, আমার এক তরুণ বন্ধুর সাথে ফেসবুকীয় কথোপকথনে। তিনি কে, সেটা এখানে প্রাসঙ্গিক না, কিন্তু তিনি আমাকে যে সব প্রশ্ন করেছেন তা বোধহয় অতিশয় প্রাসঙ্গিক। এখানে সেগুলো হুবহু উদ্ধৃত করলে হয়ত আমাদের আলোচ্য প্রশ্নগুলোকে সুনির্দিষ্ট আকার দিতে সুবিধে হবে। অবশ্য, এখানে উদ্ধৃত প্রত্যেকটি প্রশ্নগুলোর সুনির্দিষ্ট ও নিষ্পত্তিমূলক উত্তর দেওয়া এ লেখার উদ্দেশ্য ততটা নয়, যতটা হল মূল প্রশ্নগুলোকে চিহ্নিত করার মাধ্যমে সমস্যাটাকে আরেকটু স্পষ্ট করে তোলা। নিচে রইল সেই তরুণ বন্ধুর দুশ্চিন্তা-জারিত প্রশ্নগুলো।
     
    দাদা,

    একটা বিষয় একটু বিস্তারিত জানতে চাই আপনার কাছে। আপনি যদি সময় করে একটু ডিটেইলসে উত্তর দেন, খুব উপকৃত হই। অনেকদিনই এটা আপনাকে জিজ্ঞেস করব করব ভেবেছি, কিন্তু করা হয়নি, কারণ বিষয়টা একটু সেন্সেটিভ, আর প্রশ্নটা একটু বিস্তারে করতে হবে।

    ছোটবেলা থেকেই (ক্লাস ওয়ান থেকে) আমি দেখে এসছি, আমার পরিমণ্ডলে শুধুমাত্র ধর্মে মুসলিম হওয়ার জন্য মানুষকে সন্দেহের চোখে, বিদ্বেষের চোখে দেখা হয়। ক্রিকেটে পাকিস্তান জিতলে "কীরে, খুব আনন্দ বল!" বলে টন্ট কাটা হয়, কেবল নাম দেখে বাড়িভাড়া দিতে অস্বীকার করা হয়, এমনকি মুসলিম ছাত্র ক্লাসে ভাল রেজাল্ট করলেও "আশ্রম থেকে শেষে মুসলিম ফার্স্ট হবে" এরকম কথা খোদ টিচারের মুখেই শুনেছিআমি ঘটনাক্রমে মুসলিম পরিবারে জন্মাইনি, কিন্তু একদম ছোটবেলা থেকেই আমার মুসলিম বন্ধু বা প্রতিবেশীদের এভাবে সামাজিক হেট ক্যাম্পেনিং এর মুখে পড়াটা ভীষণ দুঃখজনক লাগে। এই খারাপ লাগাটা ক্লাস ওয়ান থেকেই শুরু হয়েছিল, তো তখন তো আমি ধর্ম ভাল না খারাপ, যুক্তিবাদ ভাল না খারাপ, এতকিছু তো বুঝতাম না।

    এখন মুসলিমবিদ্বেষকে যারা জাস্টিফাই করে, তাদের থেকে যে যুক্তিগুলো উঠে আসে, সেগুলো -

    ১) আর কোন ধর্মে আইসিস, তালিবান, বোকোহারামের মত সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আছে?

    ২) "ওরা" (মুসলিমরা) সংখ্যায় বাড়লেই ইসলামিক রাষ্ট্র চায়, সংখ্যায় কমলেই ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র চায়।

    ৩) সব ধর্মে সংস্কার হয়েছে, কিন্তু "ওরা" এখনও মধ্যযুগেই পড়ে আছে।

    ৪) সব ধর্মেই বহুবিবাহ বন্ধ হয়েছে, কিন্তু "ওদের ধর্মে" বহুবিবাহ আজও জায়েজ, ওদের ধর্মে নারীর অবস্থা সবচাইতে খারাপ।

    ৫) "ওরা" নিজেদের বাঙালি মনে করে না, মননে চিন্তনে আরব, ওদের কাছে ধর্মই সব।

    ৬) ধর্মের নামে মানুষ হত্যা "ওদের ধর্মের মত কোন ধর্মই করেনি।"

    ৭) "ওদের" বাড়াবাড়ির জন্যই বিজেপির মত দলের সৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ, হিন্দু মৌলবাদ ইসলামিক মৌলবাদের প্রতিক্রিয়ার ফসল।

    ইত্যাদি ইত্যাদি। আপাতত এই কটাই মনে পড়ছে।

    এখন আমার প্রশ্ন

    ১) মুসলিমবিদ্বেষীদের এই দাবিগুলো কি তথ্যগতভাবে সত্যি?

    ২) সত্যিই কি ইসলাম আর পাঁচটা ধর্মের থেকে ব্যতিক্রমী ভায়োলেন্ট? এখন তো যুক্তি, তথ্য, পরিসংখ্যানের বিভিন্ন মেথডলজি দিয়ে অনেক বিষয় কম্পারেটিভ স্টাডি করা যায়। "ইসলাম অন্য পাঁচটা ধর্মের থেকে ভায়োলেন্ট" - এই বিষয়টা কি যুক্তি, তথ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা করা যায়? মানে আমার প্রশ্ন, দাবিটার গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু?

    ৩) ধরে নিলাম, ইসলাম সবচাইতে ভায়োলেন্ট ধর্ম। কিন্তু তাতে করেই কি মুসলিমবিদ্বেষ জায়েজ হয়ে যায়?

    ৪) একজন নাস্তিক হিসাবে মুসলিম সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার হরণ করা হলে তার প্রতিবাদ করা কি অন্যায়?

    ৫) হিন্দু মৌলবাদ কি সত্যিই ইসলামিক মৌলবাদের প্রতিক্রিয়ার ফসল? ইসলামিক মৌলবাদ না থাকলে সত্যিই কি হিন্দু মৌলবাদ বলে কিছু থাকত না?

    ৬) আইসিস বা তালিবানের মত মুসলিম লিগ বা বর্তমানে মিমকে কি মৌলবাদী বলা যায়? নাকি "সাম্প্রদায়িক, কিন্তু মৌলবাদী নয়"-এমনটা বলা উচিত?

    আমার প্রশ্ন করার মূল কারণটা কিন্তু কোনভাবেই ইসলামকে ডিফেন্ড করা বা তার ভয়াবহতাকে লঘু করা নয়। আমিও ধর্মহীন সমাজের স্বপ্ন দেখি, সব ধর্মের মত ইসলামের অবসানও আশা করি।

    কিন্তু মধ্যবিত্ত শিক্ষিত স্তরে ইসলামের সমালোচনাটা যেভাবে হয়, তার টোনটা ঠিক যুক্তিবাদের নয়, টোনটা বিদ্বেষের। এখন রিলিজিয়াস ক্রিটিসিজমকে ঢাল করে বুঝে বা না বুঝে অনেক প্রগতিশীল মানুষও বিদ্বেষের টোন ব্যবহার করছেন। এটা খুব আশঙ্কার।

    এখন, এই প্রশ্নগুলোর প্রত্যেকটাকে আলাদা করে উত্তর দেবার চেষ্টা না করে বরং এ প্রসঙ্গে কতকগুলো সাধারণ কথা ভেবেচিন্তে দেখি। তাতে করে সমাধান না আসুক, অন্তত সমস্যাটার চেহারাটা আরেকটু স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠতে পারে কিনা, দেখা যাক। হতে পারে, ভাবতে গিয়ে হয়ত ওপরের দু-একটা প্রশ্ন শেষতক বাদই পড়ে গেল, বা উল্টোভাবে, যে প্রশ্ন এখানে নেই তেমন কিছু এসে কথার মধ্যে ঢুকে পড়ল।

    প্রথমেই বলা দরকার, অনেকে আধুনিক মৌলবাদী উত্থানকে মুসলমান জঙ্গি উত্থানের সঙ্গে এক করে দেখেন, যা মোটেই সঠিক নয়। বর্তমান পৃথিবীর প্রধান ধর্মীয় ধারাগুলোর সবকটির মধ্যেই মৌলবাদী উত্থান ঘটেছে, বিভিন্ন মাত্রা, ভঙ্গী ও ধরনে। আমেরিকায় খ্রিস্টান মৌলবাদীদের কথা আমরা জানি, জানি ইসরায়েলের ইহুদী মৌলবাদীদের কথা, জানি ভারতের হিন্দু মৌলবাদীদের কথা, এবং জানি এই ভারতেই আশির দশকে তেড়েফুঁড়ে ওঠা শিখ মৌলবাদীদের কথাও --- যাদের হাতে ভারতের এক প্রধানমন্ত্রী নিহত হয়েছিলেন। ‘অহিংসার ধর্ম’ বলে কথিত বৌদ্ধধর্মও এ প্রবণতার বাইরে নয় মোটেই। থাইল্যান্ড, বর্মা ও শ্রীলঙ্কায় বৌদ্ধ ধর্মের তরফেও জঙ্গি প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। আজ অনেকেরই হয়ত আর মনে নেই, দুহাজার এক সালের কুখ্যাত ‘নাইন ইলেভেন’-এর ঘটনার আগে পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ধর্মীয় নাশকতার ঘটনা বলে ধরা হত উনিশশো পঁচানব্বই সালের দুটি ঘটনাকে। তার একটি ঘটেছিল আমেরিকার ওকলাহোমা সিটি-র ‘ট্রেড সেন্টার’-এ, যাতে বিস্ফোরক-ভর্তি ট্রাক দিয়ে ওই ভবনটিতে ধাক্কা মেরে প্রায় দেড়শো লোকের প্রাণনাশ করা হয়েছিল, এবং সেটা ঘটিয়েছিল কতিপয় খ্রিস্টান মৌলবাদী। অন্যটি ঘটেছিল জাপানে, যেখানে পাতাল রেলের সুড়ঙ্গে বিষাক্ত সারিন গ্যাসের কৌটো ফাটিয়ে দেওয়া হয়, তাতে বিষাক্ত গ্যাসে সরাসরি যত না মারা যায় তার চেয়ে অনেক বেশি লোক মারা যায় এবং গুরুতরভাবে জখম হয় সুড়ঙ্গের ভেতরে আতঙ্কগ্রস্তদের দৌড়োদৌড়িতে পদপিষ্ট হয়ে --- এবং সেটা ঘটিয়েছিল কট্টরপন্থী বৌদ্ধদের একটি ক্ষুদ্র উপগোষ্ঠী। আমরা বৌদ্ধধর্মটা অন্তত অহিংস বলে জানতাম, তাই না? তার দু বছর আগে উনিশশো তিরানব্বই সালে ভারতে সংঘটিত কুখ্যাত ‘বম্বে বিস্ফোরণ’ অবশ্যই একটি বৃহৎ নাশকতা, এবং সেটা ঘটিয়েছিল মুসলমান জঙ্গিরাই। কিন্তু, মুসলমান মৌলবাদীদের বক্তব্য অনুযায়ী, সেটা ছিল তার এক বছর আগে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের প্রতিক্রিয়া। বলা বাহুল্য, এই বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনাটিকেও আবার মুসলমানদের অত্যাচারের প্রতিক্রিয়া বলেই দেখানো হয়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, সেটা কোনও সাম্প্রতিক ‘অত্যাচার’-এর প্রতিক্রিয়া ছিল না। হিন্দু মৌলবাদীদের নিজেদের দাবি অনুযায়ীই, এটা নাকি মোগল সম্রাট বাবরের তরফে ঘটে যাওয়া পাঁচশ বছরের পুরোনো এক অন্যায়ের প্রতিকার মাত্র! এবং, এই বাবরি মসজিদের ধ্বংসও আবার এ দেশে ধর্মীয় নাশকতার প্রথম ঘটনা নয়, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাও নয়। এ দেশে আজ পর্যন্ত ধর্মীয় নাশকতার সবচেয়ে বড় ঘটনা বলে যদি কোনও বিশেষ ঘটনাকে ধরতেই হয়, তো সেটা সম্ভবত উনিশশো চুরাশি সালে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধিকে হত্যা করার ঘটনা। সেটা মুসলমানেরা ঘটায়নি, ঘটিয়েছিল শিখ মৌলবাদীরা।

    ধর্মের সমালোচনা যে আধুনিক পৃথিবীর অন্যতম প্রধান কাজ, তাতে সন্দেহ নেই। সমালোচনা মানে সব ধর্মেরই সমালোচনা, ইসলামেরও।  কিন্তু, ইসলাম ধর্মের সমালোচনায় একটি ভুল আমরা প্রায়শই করে থাকি। আমরা বলি, ইসলাম ধর্ম (এবং সেইহেতু ওই ধর্মাবলম্বীরাও) তো হিংস্র হবারই কথা, কারণ, ইসলামীয় ধর্মশাস্ত্রে হিংসার উপাদান খুব বেশি আছে। হয়ত সত্যিই আছে, কিন্তু যুক্তিটা তা সত্ত্বেও ভুল, এবং দুটো দিক থেকেই ভুল। কারণ, প্রথমত, সব ধর্মশাস্ত্রেই হিংসার উপাদান কমবেশি আছে। এবং দ্বিতীয়ত, যে ধর্মের শাস্ত্রে হিংসার উপাদান কিছু কম আছে সে ধর্মগোষ্ঠীর মানুষের আচরণে হিংসা কম থাকবেই --- এ প্রত্যাশার ভিত্তিটাও বোধহয় খুব পোক্ত নয়।
     
    হিংস্রতার বর্ণনা ও তার নৈতিক সমর্থন হিন্দু শাস্ত্রগুলোতে কোরানের চেয়ে কিছু কম নেই। কম নেই বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টেও, যদিও, হয়ত বা সত্যিই কিছু কম আছে নিউ টেস্টামেন্টে।  আবার, শাস্ত্রগ্রন্থে হিংস্রতার বর্ণনা কম থাকলেই যে ধার্মিকেরা কিছু কম হিংস্র হবেন, এমন নিশ্চয়তাও পাওয়া কঠিন। যুদ্ধলিপ্সা, হত্যা এবং হিংস্রতায় যিনি প্রবাদপ্রতিম, সেই চেঙ্গিস খান কিন্তু মোটেই মুসলমান ছিলেন না, 'খান' পদবী দেখে যা-ই মনে হোক।  খ্রিস্টানরা ষোড়শ-সপ্তদশ শতক জুড়ে আমেরিকাতে স্থানীয় অধিবাসীদের বিরুদ্ধে যেভাবে হত্যালীলা চালিয়েছে নিউ টেস্টামেন্টের যাবতীয় ক্ষমার বাণী সত্ত্বেও, তা ইতিহাসে বিরল। মধ্যযুগের শেষে এবং আধুনিক যুগের গোড়ায় 'ক্ষমাশীল' খ্রিস্টানদের ডাইনি পোড়ানোর হিড়িক দেখে আতঙ্কে শিউরে ওঠেন না, এমন কেউই কি আছেন এ যুগে? 'ইসলামিক স্টেট' তার ঘোষিত 'বিধর্মীদের' হত্যা করে হত্যার উদ্দেশ্যেই, বা প্রতিশোধের উদ্দেশ্যে, এবং সেটা সারা জগতের লোককে ডেকে দেখানোর জন্যেও বটে। দেখ হে, আমরা কত ভয়ঙ্কর, কত বড় বীর, এই রকম একটা ভাব। কিন্তু মধ্যযুগের খ্রিস্টানরা ডাইনি মারত ভয়ঙ্কর যন্ত্রণা দিয়ে, এবং যন্ত্রণা দেওয়াটাই সেখানে মূল উদ্দেশ্য, যাতে অকথ্য অত্যাচার করে তার মুখ থেকে অন্য আরেক ‘ডাইনি’-র নাম বার করে আনা যায়। এই কাজটির জন্য তারা বিচিত্র ও বীভৎস সব কলা-কৌশল ও যন্ত্রপাতি আবিষ্কার করেছিল। কাজেই, বিশেষ একটি ধর্মীয় গোষ্ঠীর ধর্মান্ধতা ও ধর্মীয় হিংস্রতার সঙ্গে তার শাস্ত্রীয় অনুমোদনের একটা সহজ সরল সম্পর্ক ধরে নেওয়াটা বোধহয় সব সময় খুব নিরাপদ নয়।

    মুসলমানদের হিংস্রতার মতই আরেকটি বাজে গল্প আছে মুসলমানদের জনসংখ্যাবৃদ্ধি নিয়ে। মুসলমানদের হুহু করে বংশবৃদ্ধি হচ্ছে, এবং দ্রুত তারা হিন্দুদেরকে ছাপিয়ে গিয়ে গোটা দেশটাকে দখল করে ফেলবে, এই মিথ্যে আতঙ্কটা হচ্ছে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির প্রচারের অন্যতম প্রধান বিষয়বস্তু, বহু মানুষই যা সরলমনে বিশ্বাস করেন। এখানে বলে নেওয়া দরকার, মুসলিম জনসংখ্যা যে বাড়ছে এবং তার হার যে হিন্দুদের চেয়ে এখন পর্যন্ত কিছু বেশিই বটে, এটা কিন্তু মিথ্যে নয়। মিথ্যে হল এই প্রচারটা যে, এইভাবে বাড়তে বাড়তে হিন্দুদের চেয়ে তাদের সংখ্যা নাকি বেশি হয়ে যাবে, এবং তারাই দেশটাকে গ্রাস করে ফেলবে। আসলে ঘটনা হল, সব ধর্মের জনসংখ্যাই বাড়ছে, এবং সংখ্যালঘুদের জনসংখ্যাবৃদ্ধির হার সব দেশেই সংখ্যাগুরুদের চেয়ে সামান্য একটু বেশি হয়, যদি সেখানে সংখ্যালঘু নিধন না চলে, এবং বিশেষত যদি সে সংখ্যালঘুরা অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া হয়। জনসংখ্যাবৃদ্ধির আসল যোগটা ধর্মের সঙ্গে নয়, অর্থনীতির সঙ্গে। হিন্দু জনগোষ্ঠীর মধ্যেও গরিবদের জনসংখ্যাবৃদ্ধি যদি আলাদা করে হিসেব করা হয় তো দেখা যাবে যে তা সচ্ছল হিন্দুদের চেয়ে অনেক বেশি। সম্পন্নরা ভাল রোজগার করতে চায়, ভালভাবে থাকতে চায়, এবং সন্তানের জীবনযাপনও যাতে সে রকমই হয়, সে ব্যবস্থা করতে চায়। তারা জানে যে সেটা করতে গেলে সন্তানকে উচ্চমানের শিক্ষাদীক্ষা দেওয়া দরকার, তার পেছনে ভাল করে যত্ন ও খরচাপাতি করা দরকার, এবং সেটা করার ক্ষমতাও তাদের আছে। ছেলেপুলে বেশি হলে তা সম্ভব নয়, এবং তাতে করে বাচ্চার মায়ের স্বাস্থ্যের বারোটা বাজবে, মা ঘরের বাইরে গিয়ে পেশাগত কাজকর্ম করে অর্থ উপার্জনও করতে পারবে না। ফলে, তারা বেশি সন্তান একদমই চায় না। উল্টোদিকে, গরিবরা এত কথা জানেও না আর তাদের সে ক্ষমতাও নেই। ফলে তারা যত বেশি সম্ভব সন্তান চায়, সেটা মায়ের স্বাস্থ্যহানি ও মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে হলেও। গরিবরা জানে তাদের সন্তান দুধেভাতে থাকবে না, এবং শেষপর্যন্ত কোনও শ্রমসাধ্য কাজেই যোগ দেবে যাতে শিক্ষা বা 'স্কিল' সেভাবে লাগে না। ফলে, সন্তানের সংখ্যা বেশি হলে দুরবস্থা আর অযত্নের মধ্যেও হয়ত রোগভোগ মৃত্যু এড়িয়ে কেউ কেউ টিঁকে যাবে, আর পরিশ্রম করে পরিবারের আয় বাড়াতে পারবে, যৎসামান্য হলেও। অথচ এদেরই যখন অর্থনৈতিক উন্নতি হবে, তখন এরা মেয়েদেরকে পড়াশোনা শেখাতে চাইবে, ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে সন্তানকে কেরানি-আমলা-ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার-উকিল এইসব বানাতে চাইবে, ফলে স্বল্পসংখ্যক সন্তান চাইবে, এবং মায়ের জীবন ও স্বাস্থ্যকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করবে। একটু ভাল করে খোঁজখবর করলেই জানা যাবে, অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ঘটছে কিন্তু আসলে ঠিক তাইই, হিন্দু ও মুসলমান উভয়ের ক্ষেত্রেই। এবং, মুসলমানরা পিছিয়ে আছে বলেই তাদের অগ্রগতিও দ্রুততর। তাদের জন্মহারের বৃদ্ধি কমছে কিছু বেশি দ্রুতলয়ে। এভাবে চললে আর দেড় দুই দশক পরেই হয়ত হিন্দু-মুসলমানের জনসংখ্যাবৃদ্ধির হার সমান হয়ে যাবে, এবং মুসলমানদের ভারত দখলের কুৎসিত অশিক্ষিত গল্পতেও তখন আর কেউই পাত্তা দেবে না। ইতিহাসের স্বাভাবিক গতি এই দিকেই।
     
    এখানে 'অগ্রগতি' বলতে জনসংখ্যাবৃদ্ধির হার কমিয়ে আনার কথা বুঝিয়েছি। মুসলমানদের ক্ষেত্রে এই কমিয়ে আনাটা হিন্দুদের চেয়ে বেশি হারে ঘটছে (বৃদ্ধির হার কমে যাওয়া মানে জনসংখ্যা কমে যাওয়া নয় কিন্তু, এ হার কমতে কমতে শূন্যের নিচে নামলে তবেই জনসংখ্যা কমতে শুরু করবে)। এই কমে আসাটা উন্নয়নের পরোক্ষ সূচক। এভাবে চলতে থাকলে কিছুদিন বাদে যে হিন্দু-মুসলমানের জনসংখ্যাবৃদ্ধির হার সমান হয়ে যাবে তাতে সন্দেহ নেই।  পিছিয়ে আছে বলেই অগ্রগতি বেশি তাড়াতাড়ি হচ্ছে --- এ কথাটা হয়ত অনেককে বিস্মিত করতে পারে, কিন্তু কথাটা বলার কারণ আছে। নিশ্চয়ই জানেন, ভারত চিন ব্রাজিলের মত একটু এগিয়ে থাকা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার ইউরোপ আমেরিকার উন্নত দেশগুলোর থেকে বেশি। এর কারণ হচ্ছে, একবার উন্নত হয়ে গেলে একই গতিতে আরও আরও উন্নত হতে থাকাটা ক্রমশই আরও বেশি বেশি করে কঠিন হয়ে ওঠে, তাই উন্নয়নের প্রথম দিকে বৃদ্ধির যে গতি থাকে পরের দিকে আর তত গতি থাকে না। মুসলমানদের জনসংখ্যার ক্ষেত্রেও তাইই ঘটছে, এবং আরও ঘটবে (ও দুটোকে খুব নিখুঁতভাবে মেলানোর দরকার নেই, যদিও)।

    আমরা যারা এই বিষয়গুলোকে এইভাবে ভাবার চেষ্টা করি, তাদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আসে প্রায়শই, ফেসবুকে সে গর্জন রোজই শোনা যায়। এখন, এটা তো সত্যি কথাই যে, পশ্চিমবাংলার যুক্তিবাদীদের লেখালিখিতে, এবং যথারীতি আমার নিজের লেখাতেও, হিন্দু মৌলবাদের সমালোচনাই বেশি আসে, মুসলমান মৌলবাদের কথা বাস্তবিকই আসে অনেক কম। ঠিক এই অভিযোগটি সেক্যুলারদের প্রতি হিন্দু মৌলবাদীরা করে থাকেন নিয়মিতই (বস্তুত, প্রত্যেক ধর্মের মৌলবাদীরাই তাদের নিজস্ব গোষ্ঠী বা সমাজের সেক্যুলারদের প্রতি এই একই অভিযোগ করে থাকে)। কিন্তু একটু ভাবলে বুঝবেন, এটাই প্রত্যাশিত ও স্বাভাবিক। এবং, অন্যরকম কিছু হলেই বরং অত্যন্ত অস্বাভাবিক ও অসঙ্গত হত, এমন কি অন্যায়ও হত। কেন, তার একাধিক কারণ আছে। প্রথমত, এ দেশের রাষ্ট্র ও সমাজ যে মৌলবাদী হুমকিটির মুখোমুখি, সেটা তো হিন্দু মৌলবাদই, অন্য কোনও মৌলবাদ নয়। শিক্ষা-প্রশাসন-বিচারব্যবস্থার ধর্মীয়করণ, সংবিধানকে পাল্টে দেবার পরিকল্পনা, ভিন-ধর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন, ধর্মের জিগির তুলে তার আড়ালে সরকারি সম্পত্তি পাচার --- এ সব তো মুসলমানরা করছে না, হিন্দুত্ববাদীরাই করছে। অতএব, তাদের মুখোশ খোলাটাই এখানে সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক। মুসলমান জঙ্গিরা নাশকতা ঘটালে তার মোকাবিলার জন্য পুলিশ-মিলিটারি আছে, কিন্তু নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসা মৌলবাদীদের রোখবার দায়িত্ব তো আর পুলিশ-মিলিটারি নেবে না, সেটা সাধারণ ভারতীয় নাগরিকের কাজ। আমি যে দেশে এবং যে ধর্মীয় সমাজের মধ্যে বাস করি, সেখানে যারা অন্ধত্ব ও হিংস্রতা ছড়াচ্ছে, ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্রকে বিনাশ করছে, তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোটাই তো আমার পক্ষে স্বাভাবিক, তাই না? বাংলাদেশি মুক্তমনারা যদি মুসলমান ধর্ম ছেড়ে হিন্দুদেরকে গালি দিতে থাকতেন, বা বার্ট্র্যান্ড রাসেল যদি 'হোয়াই আই অ্যাম নট আ ক্রিশ্চান' না লিখে 'হোয়াই আই অ্যাম নট আ হিন্দু' লিখে বসতেন, তাহলে যেমন উদ্ভট অসঙ্গত কাজ হত, এখানে আমরা হিন্দু ধর্ম ছেড়ে মুসলমান নিয়ে পড়লেও ঠিকই একই ব্যাপার হবে (যদিও বাংলাদেশি মুক্তমনারা ঠিক যা বলেন এবং যেভাবে বলেন, তার অনেক কিছুর সঙ্গেই আমার দ্বিমত আছে, তবে সেটা এখানে প্রাসঙ্গিক না)। দ্বিতীয়ত, আমরা পশ্চিমবঙ্গের বেশির ভাগ মুক্তমনা যুক্তিবাদী নাস্তিকেরা হিন্দু সমাজে জন্মেছি বলেই সে সমাজ ও তার ধর্ম শাস্ত্র রীতিনীতি আচার বিচার এইসব অনেক বেশি জানি, ফলে সে ব্যাপারে আমাদের সমালোচনা অনেক বেশি নিরেট, নির্ভুল এবং অর্থবহ হয়, যা ভিনধর্মী সমাজে যারা জন্মেছে তারা পারবেনা। ঠিক একই কারণে, মুসলমান সমাজ ও ধর্ম সম্পর্কে মুসলমান সমাজে জন্মানো যুক্তিবাদীদের সমালোচনা অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য ও ফলপ্রসূ হয়। যদিও, এর মানে মোটেই এই নয় যে এক ধর্মে জন্মানো লোক অন্য ধর্মের সমালোচনা করতেই পারবেনা --- যে কোনও মানুষের যে কোনও ধর্মের সমালোচনা করার অধিকার আছে, এবং করা উচিত। তবে কিনা, নিজের সমাজের অন্ধত্ব অযুক্তি অন্যায়ের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথমে সোচ্চার হওয়াটা যে কোনও মানুষেরই ‘স্বাভাবিক’ অধিকার, কর্তব্যও বটে।
     
    আচ্ছা, তা সে যা-ই হোক, মোদ্দা কথাটা তাহলে কী দাঁড়াল --- মুসলমানেরা ধর্মান্ধতায় অন্যদের চেয়ে এগিয়ে, না পিছিয়ে? এসব ঠিকঠাক বলতে গেলে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মানুষের ধর্মবিশ্বাস নিয়ে পৃথিবীজোড়া সমীক্ষার নির্ভরযোগ্য ফলাফল চাই, না হলে সবটাই চায়ের দোকানের আড্ডা হয়ে যাবে। আপাতত আছে কি সে সব, আমাদের হাতে? সুখের বিষয়, সে সব আছে। এই কিছুদিন মাত্র আগেও সেভাবে ছিল না, কিন্তু এই একুশ শতকে বেশ ভালভাবেই আছে। বেশ কয়েকটি বিখ্যাত সংস্থা এখন মানুষের জীবনের নানা দিক নিয়ে প্রামাণ্য সমীক্ষা করে থাকে, তার মধ্যে ধর্মবিশ্বাসও পড়ে। এইসব সমীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে বড় বড় বিশেষজ্ঞরা নানা গভীর গবেষণাও করে থাকেন, এবং তাতে তেমন চমকপ্রদ কোনও ফলাফল পাওয়া গেলে সারা পৃথিবীর গণমাধ্যমে সে নিয়ে আলোড়ন উঠে যায়। এই রকমই একটি সংস্থা হল ‘উইন গ্যালাপ’। তারা সারা পৃথিবী জুড়ে মানুষের ধর্মবিশ্বাস নিয়ে এক বিখ্যাত সমীক্ষা চালিয়েছিল ২০১২ সালে, তাতে বিভিন্ন ধর্মগোষ্ঠীর মধ্যে ধর্মবিশ্বাসের প্রাবল্য, ধর্মবিশ্বাস ছেড়ে বেরিয়ে আসা মানুষের সংখ্যা, এইসবের হিসেব ছিল। তাতে কি দেখা গেল? নিচে দেখে নিন ২০১২ সালের পৃথিবীজোড়া সমীক্ষার ফলাফল, সুন্দর করে সারণিতে সাজানো। এখানে পরিষ্কারভাবেই দেখা যাচ্ছে, নিজেকে বিশ্বাসী বলে দাবি করেন অথচ ধার্মিক বলে দাবি করেন না --- এমন মানুষের অনুপাত মুসলমানদের মধ্যেই সবচেয়ে বেশি। কারা কবে সমীক্ষাটি করেছে, এবং তা কোন নথিতে প্রকাশিত, সব তথ্যই পাবেন এখানে।
     
     
    এবার একটি ইসলামীয় দেশকে নিয়ে ভাবা যাক, যেখানে প্রায় সর্বাত্মক মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবং ইসলামীয় রাষ্ট্র আছে। ধরুন, ইরান। এই  দেশটা সম্পর্কে আপনি কী জানেন? জানি, এ প্রশ্নের উত্তরে প্রায় সকলেই একই কথা বলবেন। ছিয়ানব্বই দশমিক পাঁচ শতাংশ (সরকারি সেন্সাসের তথ্য অনুযায়ী) মুসলমান অধ্যুষিত একটি ধর্মান্ধ দেশ, যার মধ্যে আবার বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা শিয়া মুসলমানদের। কট্টর মৌলবাদীরা সেখানে দেশ চালায়, প্রশ্ন করলেই কোতল হতে হয়, মুক্তচিন্তা কল্পনাতীত। সম্প্রতি সেখানে হুলুস্থুলু ঘটে গিয়েছে, সে সব খবরাখবর আপনারা দেখেছেন। একটি মেয়েকে ইসলাম-সম্মত পোশাক না পরার অপরাধে সেখানে হত্যা করা হয়েছে, তাই নিয়ে প্রবল আন্দোলন হলে রাষ্ট্রের তরফে নেমে এসেছে দমন-পীড়ন, এবং সদ্য-সমাপ্ত ফুটবল বিশ্বকাপে সারা পৃথিবীর সামনে তার প্রতিবাদ করায় সে দেশের জাতীয় দলের এক খেলোয়াড়কে দেওয়া হয়েছে মৃত্যুদণ্ড। এখানে মৌলবাদের দাপটের ছবিটা একদমই স্পষ্ট, আবার গণমানুষের আপত্তিটাও খুব আবছা নয়।

    আসলে, এখানে ধর্মীয় রাষ্ট্রের দোর্দণ্ডপ্রতাপের তলাতেই লুকিয়ে আছে অন্য এক বাস্তবতা। নেদারল্যান্ডের একটি গবেষণা সংস্থা (GAMAAN), ইরানই যাদের অনুসন্ধানের বিষয়বস্তু, তারা ২০২০ সালে  ইরানে সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছে। সে সমীক্ষার ফলাফল যদি বিশ্বাস করতে হয়, তো সেখানে সাঁইত্রিশ শতাংশ মত লোক নিজেদের মুসলমান বলে দাবি করেন (শিয়া-সুন্নি মিলিয়ে), যাঁরা কোনও ধর্মীয় পরিচয় দিতে রাজি নন তাঁরা বাইশ শতাংশ, যাঁরা পরিষ্কারভাবে নিজেকে নাস্তিক-অজ্ঞাবাদী-মানবতাবাদী এইসব বলে পরিচয় দেন তাঁরা সব মিলিয়ে প্রায় সতেরো শতাংশ, যাঁরা নিজেকে শুধুই 'স্পিরিচুয়াল' বলেন তাঁরা প্রায় সাত শতাংশ, এবং বাকিরা আরও নানা বিচিত্র ধর্মের মানুষ। নিচের ছবি দুটোয় সমীক্ষার ফলাফল এক নজরে পাওয়া যাবে। হ্যাঁ বন্ধু, একুশ শতকে পৃথিবী বদলাচ্ছে, এবং হয়ত বিশ শতকের চেয়েও দ্রুত গতিতে! এবং, ইসলামীয় দেশগুলো কোনওভাবেই এ প্রবণতার বাইরে নয়। নিচে সে সমীক্ষার ফলাফল দেখুন, চিত্রাকারে।
     
     
    ধর্ম, ঈশ্বর, স্বর্গ, নরক, মৃত্যু-পরবর্তী জীবন, অবতার ইত্যাদি ধ্যানধারণা বিষয়ে ইরান-বাসীদের বিশ্বাস (বা অবিশ্বাস) ঠিক কী রকম, সে চিত্রও উঠে এসেছে সমীক্ষা থেকে। নিচে দেখুন।
     
     
     
    তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি, মুসলমানদের ধর্মপ্রীতি নিয়ে আমাদের অধিকাংশের মধ্যে যেসব জনপ্রিয় ধ্যানধারণা আছে, তার সমর্থন এইসব সমীক্ষার ফলাফল থেকে মিলছে না মোটেই। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যে ইঙ্গিত এখান থেকে আমরা পাচ্ছি, সেটা সামগ্রিক বৈশ্বিক প্রবণতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ, নাকি একটা সম্পূর্ণ আলাদা উল্টোপাল্টা কিছু। সেটা বুঝতে গেলে বর্তমান শতকের বিগত কয়েকটি দশকে গোটা পৃথিবীর ধর্মবিশ্বাসের গতিপ্রকৃতি এক নজরে দেখে নেওয়া দরকার। এমনিতে সেটা একটু মুশকিল, কারণ, তার জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংস্থার করা অনেকগুলো সমীক্ষা-কর্ম খুঁটিয়ে দেখে সেগুলোর প্রাসঙ্গিক ফলাফলটুকু বেছে নিয়ে তুলনা করতে হবে। সেইজন্যে, আমি যতটা পেরেছি সেগুলোকে সাজিয়ে একটা মাত্র সারণিতে নিয়ে এসেছি, তাতে পাঠিকের কিছু সুবিধে হবার কথা। সেটা নিচে দিলাম, দেখুন। সারণির কোন সংখ্যাটি কোন সংস্থার করা কবেকার সমীক্ষায় পাওয়া গেছে, সেটা ওখানেই দেওয়া আছে। প্রথম সংখ্যাটি অবশ্য কোনও সংস্থার তরফে দেওয়া নয়। এটি দিয়েছিলেন সমাজতত্ত্ববিদ ফিলিপ জুকারম্যান, তখন পর্যন্ত প্রাপ্য সমস্ত টুকরো টুকরো সমীক্ষার ফলাফল এক জায়গায় করে।
     
     
     
     
    এবার নিশ্চয়ই বোঝা যাচ্ছে, মুসলমানদের ধর্মবিশ্বাসের গতিপ্রকৃতি অন্য ধর্মাবলম্বীদের থেকে খুব বেশি আলাদা নয়। আসলে, এই একুশ শতকে দাঁড়িয়ে, সব ধর্মগোষ্ঠীর মধ্যেই ধর্মবিশ্বাস ছেড়ে বেরিয়ে আসার যে প্রবণতা রয়েছে, মুসলমানরা কোনও মতেই সে প্রবণতার বাইরে নয় (অবশ্যই, এ হিসেব সামগ্রিক ও বৈশ্বিক, এবং অঞ্চল ও অন্যান্য পরিস্থিতি-ভেদে মুসলমানদের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য আছে)।

    কেন এই জগৎজোড়া প্রবণতা? আমাদের স্বাভাবিক বুদ্ধি বলবে, সবই যুগের হাওয়া। মানে, বিজ্ঞান-প্রযুক্তির অগ্রগতি এবং গণতন্ত্র-মানবতাবাদ-যুক্তিবাদ এইসবের প্রভাবই এর কারণ। কথাটা সত্যি, কিন্তু সমাজবিদেরা এর চেয়েও বড় কারণ আবিষ্কার করেছেন। তাঁরা আজ সুপ্রচুর তথ্য-যুক্তি দিয়ে দেখিয়েছেন, মানব সমাজের উন্নতির সঙ্গে ধর্মের সম্পর্ক বিপ্রতীপ। দেশের মাথাপিছু আয় বাড়লে, সমাজকল্যাণে সরকার বেশি বেশি খরচা করলে, অর্থনৈতিক অসাম্য কমলে এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের হাল ভাল হলে ধর্মের রমরমা কমতে থাকে (এখানে আর বিস্তারে যাব না, যদিও আগে এ নিয়ে আলোচনা করেছি এবং পরেও করব)। সমাজ-বিকাশের এই সাধারণ নিয়ম মুসলমান সমাজের ওপরে প্রযোজ্য হবে না, এমনটা  ভেবে নেওয়ার কোনও যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। ইরানে যা ঘটছে, সেটা সমাজ-বিকাশের এই সাধারণ নিয়মের চাপেই। নেটে একটু খোঁজাখুঁজি করলেই দেখতে পাবেন, ইরানের মাথাপিছু উৎপাদন ভারতের প্রায় আটগুণ, বাজেটের শতাংশ হিসেবে স্বাস্থ্যখাতে সরকারি খরচ প্রায় সাতগুণ এবং শিক্ষাখাতে তা দেড়গুণেরও বেশি, এবং নারী ও পুরুষ উভয়েরই আয়ু আমাদের থেকে ভাল (গণতন্ত্র আর মানবাধিকারের দশা শোচনীয়, যদিও)। কাজেই, ইরানে মৌলবাদী রাজনীতি ও প্রশাসনের ওপর কেন গণ-অসন্তোষের চাপ আছে এবং পাকিস্তান আর আফগানিস্তানে কেন তা ততটা নেই --- এইটা বুঝতে পারা খুব কঠিন না।

    বলা প্রয়োজন, সমাজ-বিকাশজাত এই চাপের খেলা সুস্পষ্টভাবে দৃশ্যমান উন্নত পশ্চিমী দেশগুলোতেও, বিশেষত এই একুশ শতকে। এই সেদিন পর্যন্ত আমেরিকা আর আয়ার্ল্যান্ডে ধর্মবিশ্বাসের প্রাবল্য ছিল অন্যান্য উন্নত দেশের চেয়ে অনেক বেশি। ধার্মিক সমাজবিদেরা তাই দেখিয়ে বলতেন, অর্থনৈতিক উন্নতি হলেই ধর্মের রমরমা কমবে, এটা হচ্ছে গিয়ে প্রগতিবাদীদের বানানো একটা মিথ্যে কথা। কিন্তু সময় যতই গড়াচ্ছে ততই বিষয়টা জলের মত স্বচ্ছ হয়ে আসছে, এবং আপত্তি তোলবার পরিসর হয়ে আসছে অতিশয় সঙ্কুচিত। মার্কিন সমাজে ধর্মবিশ্বাসের পরিবর্তনটা দেখতে পাবেন এক নজরেই, নিচের লেখচিত্রে। লক্ষ করে দেখুন, ১৯৫০ সাল থেকে ২০২০ পর্যন্ত আমেরিকাতে যখন খ্রিস্টানরা এসে ঠেকেছে ৮৫ শতাংশ থেকে ৬৯-এ, এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা যখন মোটের ওপর একই আছে, তখন ধর্মহীনদের শতকরা অনুপাত গিয়ে ঠেকেছে শূন্য থেকে একুশে (অন্য কিছু সমীক্ষায় এটি প্রায় তিরিশ বলে দেখানো হয়েছে, যদিও)।
     
     
     
    আর, এই শতকের প্রথম দশকে আয়ার্ল্যান্ড-বাসীর ধর্মবিশ্বাসে যা ঘটেছে, সেটা দেখে নিন নিচের সারণিতে। আয়ার্ল্যান্ড হল গোঁড়া ক্যাথোলিক অধ্যুষিত একটি দেশ। একটা উন্নত পশ্চিমী দেশের পক্ষে অবিশ্বাস্যভাবে, এই সেদিন পর্যন্তও এই দেশটিতে গর্ভপাত নিষিদ্ধ ছিল, এবং গর্ভপাতের দরকার পড়লে আইরিশ নারীদেরকে পার্শ্ববর্তী ব্রিটেনে গিয়ে হাজির হতে হত। তারপর উন্নত আধুনিক অর্থনীতির সঙ্গে রক্ষণশীল ধর্ম-সংস্কৃতির দীর্ঘ সংঘর্ষের ফলাফল তখনই সারা বিশ্বের নজরে এল, যখন দু হাজার আঠেরো সালে গর্ভপাত আইনসিদ্ধ হয়ে গেল (আয়ার্ল্যান্ড নিয়ে আমার আলাদা একটি লেখা ‘গুরুচণ্ডালি’-তে পাবেন)।
     
     
    বলা বাহুল্য, মোটের ওপর এই একই ঘটনা ঘটবার কথা মুসলমান-সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতেও, এবং ঘটছেও তাইই। বেশ কয়েকটি ধর্ম-শাসিত রক্ষণশীল দেশে কমছে কঠোর ধর্মীয় বাধানিষেধ, বাড়ছে ধর্মহীনতা, এবং সাধারণ্যে কমছে ধর্মের প্রতি আনুগত্য, যদিও অনেক ক্ষেত্রেই তা  এখনও স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান নয়। বিষয়টাকে যদি খুঁটিয়ে নজর করা হয়, তাহলে এমন অনেক কিছুই হয়ত জানা যাবে, যে ব্যাপারে আমরা আগে সচেতন ছিলাম না। যেমন, ইরান-ইরাক-আফগানিস্তান যেভাবে ধর্মনিরপেক্ষ থেকে ধর্মীয় রাষ্ট্র হয়ে গেল, এবং যেভাবে তুর্কি দেশটিতে ক্রমেই শক্ত হচ্ছে মৌলবাদের মুঠি আর টলমল করছে ধর্মনিরপেক্ষতার আসন, সে নিয়ে আমরা প্রায়শই দুশ্চিন্তিত হই। ঠিকই করি। কিন্তু, আমরা কখনই খেয়াল করে দেখিনা যে, এই ধরাধামে একান্নটি মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের মধ্যে একুশটিতে কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষ সরকারই চলছে (সে ধর্মনিরপেক্ষতার দশা প্রায়শই আমাদের চেয়ে খুব একটা ভাল নয় যদিও, তবে সেটা তো অন্য চর্চা)। এবং, ধর্মনিরপেক্ষীকরণের প্রক্রিয়া এখনও চালু, সে তালিকায় এই সেদিনও যুক্ত হয়েছে সুদান।

    তবুও প্রশ্ন আসতেই পারে, এবং আসবেও, জানা কথা। ওপরে উদ্ধৃত আমার তরুণ বন্ধুর ভাষায়, সে প্রশ্নটা এ রকম --- “আর কোন ধর্মে আইসিস, তালিবান, বোকোহারামের মত সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আছে?”। সত্যিই তো, প্রশ্ন হতেই পারে। ওপরে ব্যাখ্যা করেছি (এবং পূর্ববর্তী পর্বগুলোতেও), মৌলবাদী উত্থান সব ধর্মেই হয়েছে, শুধু ইসলামে নয়। এবং, জঙ্গি ক্রিয়াকলাপও কম বেশি হয়েছে সব ধর্মের তরফেই। সেই সত্যে ভর করে আমি হয়ত তর্ক করতে পারতাম, অন্যান্য ধর্মের মৌলবাদের সঙ্গে ইসলামের তফাতটা তাহলে গুণগত নয়, নিছকই পরিমাণগত। এরা কম, ওরা কিছু বেশি, এটুকুই মাত্র। কিন্তু, এ তর্ক শেষতক দাঁড়াবে না। পাথরের নুড়ির সঙ্গে পাথরের টিলার গুণগত পার্থক্যকে স্রেফ পরিমাণের দোহাই দিয়ে নস্যাৎ করাটা বোধহয় খুব একটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। ইসলামীয় জঙ্গিপনার নিবিড়তা, ঘনত্ব, প্রচণ্ডতা এবং আন্তর্জাতিকতা, এ সবকে নিছক কম-বেশির ব্যাপার বলে উড়িয়ে দেওয়া অসম্ভব। যদি বলি, মধ্যপ্রাচ্যে একাধিক আধুনিক রাষ্ট্র থেকে খামচে নিয়ে একটা গোটা এবং আনকোরা নতুন ধর্মীয় রাষ্ট্র বানিয়ে তোলা, অনেকগুলো দেশে ধর্মনিরপেক্ষ সরকার উল্টে দিয়ে মৌলবাদী রাজত্ব কায়েম করা, প্রায় সবকটি মহাদেশে বড়সড় নাশকতা চালানোর মত সংগঠন তৈরি করতে পারা --- এত সব শুধুই জঙ্গিপনার কম-বেশির ব্যাপার, তার মধ্যে আলাদা করে বলার মত গুরুত্বপূর্ণ গুণগত বৈশিষ্ট্য কিছুই নেই --- তাহলে অবশ্যই বোকামি হবে, বাস্তবকে অস্বীকার করার বোকামি। কাজেই, জঙ্গিপনার এই ভয়ঙ্কর নিবিড়তা আর ব্যাপকতাকে ইসলামীয় মৌলবাদের একটি স্বতন্ত্র গুণগত বৈশিষ্ট্য বলে স্বীকার করে নেওয়াই ভাল। কিন্তু মুশকিলটা হচ্ছে, সেটা মেনে নিলেও আসল সমস্যাটা রয়েই যায়। সব মুসলমানই তো আর মৌলবাদী জঙ্গি নন, তার এক অতি ক্ষুদ্র অংশই কেবল মৌলবাদী জঙ্গি। কাজেই, এই জঙ্গিপনাকে ইসলামীয় মৌলবাদের একটি স্বতন্ত্র গুণগত বৈশিষ্ট্য বলে মেনে নিলেও প্রশ্ন থাকে, ‘ইসলাম’ নামক ধর্মটির কোনও মৌল উপাদান থেকেই কি এই বৈশিষ্ট্যটি উৎসারিত হচ্ছে, নাকি, মুসলমান অধ্যুষিত সমাজ তথা রাষ্ট্রগুলোর  কোনও বিশেষ ঐতিহাসিক পরিস্থিতিই এ বৈশিষ্ট্যের নির্মাতা?
     
    কেউ কেউ এ প্রশ্নের উত্তর খুব দ্রুত দিয়ে ফেলতে ভালবাসেন। তাঁরা বলেন, এ বৈশিষ্ট্য অবশ্যই ‘ইসলাম’ নামক ধর্মটিরই মৌল উপাদান থেকে নিঃসৃত, কারণ, ইসলামীয় ধর্মশাস্ত্রে হিংসার অনুমোদন আছে। এ যুক্তিটি যে ভুল, সে আলোচনা ওপরে করেছি। কিন্তু কথা হচ্ছে, এ প্রশ্নের উত্তর তবে কীভাবে খোঁজা যায়? আজকের দিনে বিজ্ঞানে, বিশেষত সমাজবিজ্ঞান ও চিকিৎসাবিজ্ঞানে, এ ধরনের প্রশ্নের সমাধানের জন্য যা করা হয় তাকে বলে ‘কন্ট্রোল্‌ড্‌ এক্সপেরিমেন্ট’। সমাজের ওপর তো আর পরীক্ষা চলবে না, অতএব সেখানে দরকার ‘কন্ট্রোল্‌ড্‌ অবজার্ভেশন’ বা সুনিয়ন্ত্রিত পর্যবেক্ষণ। অর্থাৎ, পুরোপুরি একই রকম করে তৈরি (বা সংগ্রহ) করে রাখা দুটি ক্ষেত্রের মধ্যে একটিতে একটি সুনির্দিষ্ট নির্ধারক উপাদান যোগ করে (বা একটি সুনির্দিষ্ট নির্ধারক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে), এবং অপরটিতে তা না করে, শুধুমাত্র প্রথম ক্ষেত্রটিতে কোনও এক নির্দিষ্ট প্রত্যাশিত ফলাফল এলো কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা, যাতে ওই নির্দিষ্ট উপাদানটির (বা প্রক্রিয়াটির) সঙ্গে ওই ফলাফলটির কার্যকারণ সম্পর্ক সন্দেহাতীতভাবে প্রতিষ্ঠা করা যায়। কোনও ওষুধের কার্যকারিতা প্রমাণের জন্য যেমন একই ধরনের দু দল রুগির মধ্যে একদলকে সে ওষুধ দিয়ে এবং অন্যদলকে তা না দিয়ে পরীক্ষা করা হয় যে দ্বিতীয় দলের তুলনায় প্রথম দলের কিছু বেশি উপকার হল কিনা, এও তেমনি। মনে করুন প্রশ্ন উঠল যে, মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামের যে মৌলবাদী উত্থান দেখা গেল, ইরাকের খনিজ তেল এবং আফগানিস্তানের ভৌগোলিক অবস্থানগত সামরিক গুরুত্ব না থাকলেও কি তা ঘটতে পারত, শুধুমাত্র ইসলামীয় শাস্ত্র, সমাজ ও সংস্কৃতির একান্ত নিজস্ব আভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্যের কারণেই? এ প্রশ্নের বিজ্ঞানসম্মত ও বস্তুনিষ্ঠ উত্তর বেরিয়ে আসতে পারে একমাত্র সেই ধরনের পদ্ধতিতেই, অর্থাৎ, ‘কন্ট্রোল্‌ড্‌ অবজার্ভেশন’ বা সুনিয়ন্ত্রিত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে। যেখানে ইসলামের প্রবল প্রভাব আছে অথচ কোনও বড়সড় অর্থনৈতিক বা সামরিক লাভালাভের পরিস্থিতি নেই, সে রকম সমস্ত জায়গাতেও কি মৌলবাদী জঙ্গিপনার উদ্ভব ঘটেছে? আবার, যেখানে ওই ধরনের পরিস্থিতি আছে অথচ ইসলাম নেই, সে রকম কোনও জায়গাতেই কি জঙ্গি আন্দোলনের উদ্ভব ঘটেনি? এই ধরনের অনুসন্ধান হয়ত আমাদেরকে এ ধরনের প্রশ্নের বস্তুনিষ্ঠ উত্তরের কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারত। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এ প্রসঙ্গে এ রকম গবেষণার কথা আমাদের জানা নেই।
     
    এই যে মুসলমান মৌলবাদের অস্তিত্বের কারণ হিসেবে ইসলামের আভ্যন্তরীণ কারণকে পুরোপুরিই দায়ী করা, ওপরের দুই অনুচ্ছেদে যার কথা বললাম, এর ঠিক উল্টো প্রবণতাটা হচ্ছে এর পেছনে ‘মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ’ (বা আরও সাধারণভাবে ‘পশ্চিমী চক্রান্ত’) বা ওই জাতীয় ইসলাম-বহির্ভূত কোনও কিছুকে পুরোপুরি দায়ী করা (এবং সেইহেতু ইসলামীয় সমাজ ও সংস্কৃতির আভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্যগুলোকে এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক বলে সাব্যস্ত করা)। মুসলিম মৌলবাদের উত্থানের পেছনে পাশ্চাত্য শক্তি, বিশেষত আমেরিকার ভুমিকা অবশ্যই অত্যন্ত গুরুত্বের সাথেই আলোচনা করা উচিত। কিন্তু, বিশ শতকের পৃথিবীর ইতিহাসের সমস্ত ঘটনাই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের অঙ্গুলিহেলনে ঘটছে, চোখ বুজে এইটা বলে দিলে আপাতদৃষ্টিতে হয়ত তাকে নিন্দা করা হয়, কিন্তু আসলে শেষ বিচারে তার ক্ষমতাকে অনেকখানি বাড়িয়ে দেখা হয়। আমেরিকা (বা সাধারণভাবে ‘পশ্চিম’) মুসলমান দেশগুলোর আভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিল, শুধু এটুকু বললে প্রায় কিছুই বলা হয় না --- আসল প্রশ্ন হচ্ছে তারা তা পারল কী করে --- পৃথিবীর সব জায়গাতেই যে তারা যা চেয়েছে তাইই পেরেছে এমন তো আর নয়। মুসলমান সমাজ ও দেশগুলোর সুনির্দিষ্ট বিন্যাস ও ঐতিহাসিক পরিস্থিতি, বিকাশের সুনির্দিষ্ট অবস্থা, তাদের সামাজিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা, অন্তর্দ্বন্দ্ব, তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সংশ্লিষ্ট সমাজ ও রাষ্ট্রের কর্তাদের তরফে নানা মতাদর্শ ও গোষ্ঠী-পরিচিতি নির্মাণের খেলা, এবং কখন ঠিক কোন তাড়নায় তারা কোন বৃহৎ শক্তির সঙ্গে বন্ধুত্ব বা শত্রুতার সম্পর্কে আবদ্ধ হচ্ছে, আর কোন বৃহৎ শক্তিই বা তাদেরকে সামলানো বা ব্যবহার করার জন্য ঠিক কী চাল চালছে --- এই সবের ভাল বিশ্লেষণ ছাড়া বিষয়টা ঠিকভাবে বোঝাই যাবে না। তাছাড়া, এই দেশগুলোতে 'সেক্যুলার' শাসন প্রতিষ্ঠিত হবার পরেও প্রায়শই শাসকরা স্বৈরাচারি এবং দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে কেন, এবং, কেনই বা মৌলবাদীরা বারবার তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে জনগণের পাশে থাকার ভাণ করতে পারে, এটাও এ প্রসঙ্গে গভীরভাবে বোঝার বিষয়।  

    বলা বাহুল্য, এ সব প্রশ্নে যথার্থ ও যথেষ্ট বিশ্লেষণ এবং নিষ্পত্তিমূলক উত্তর এখনও আসেনি সমাজবিজ্ঞানীদের তরফ থেকে। যতদিন তা না আসে, ততদিন আমরা কী করতে পারি? ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে পারি, বিষয়টি সম্পর্কে ইতিমধ্যে যা জানা গেছে সে সব জানার চেষ্টা করতে পারি, যুক্তিসম্মত ও বস্তুনিষ্ঠ চিন্তার অভ্যাস করতে পারি …………… আর কিছু পারি কি?

    হ্যাঁ, পারি বোধহয়। মন থেকে অকারণ সন্দেহ ঘৃণা হিংসা বিদ্বেষ এইসব চিহ্নিত করে তা বর্জন করার অনুশীলনটা চালিয়ে যেতে পারি।

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৫ ডিসেম্বর ২০২২ | ৬০৪০৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • &/ | 107.77.***.*** | ২৬ জানুয়ারি ২০২৩ ১৬:৪৪515910
  • এদের নাম পাকমনপেয়ারু ,যেখানে পারে 'আহাগো প্রাণের পাকিস্তান গো বাংলাদেশ হারালো গো' করে কেঁদে বেড়ায় .
  • guru | 103.165.***.*** | ২৬ জানুয়ারি ২০২৩ ১৮:২৯515912
  • @ডিসি 
     
              আমি পুরো ব্যাপারটা সোভিয়েত ইউনিয়নের তরফ থেকে দেখছি যেটি রাধার কানাইয়ের আসল প্রশ্ন ছিল | আমি দেখছি যে ১৯৭১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৬৫ সালের মতো নিরপেক্ষ থাকলে হয়তো বাংলাদেশ যুদ্ধটাই হতোনা কোনো শান্তিপূর্ণ সমাধান হতো | তার ফলে সোভিয়েত ইউনিয়নের দীর্ঘমেয়াদি লাভ আফগানিস্তানের প্রসঙ্গে হতো | ইরান ও কোরিয়ার ভুল সোভিয়েত নীতির ব্যাপারে যে আমি ঠিক সেটা ইতিহাস প্রমান করেছে | এই ইউক্রেইন যুদ্ধে এখন পর্যন্ত পুতিন সাহেবের সবচেয়ে বেশি সামরিক সাহায্য এসেছে ইরানের ও উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকেই |
     
              আমি পুরো ব্যাপারটি সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূ রাজনীতি পার্সপেক্টিভ থেকে দেখছি | ভূ রাজনীতিতে কোনো আবেগ থাকেনা স্বার্থ থাকে শুধু |
  • guru | 103.165.***.*** | ২৬ জানুয়ারি ২০২৩ ১৮:৩৯515913
  • @ডিসি 
     
              আমি এইখানে সম্পূর্ণভাবে আমাদের প্রধানমন্ত্রী মোদির উদাহরণ দেব | ইউক্রেইন যুদ্ধে মোদীজি কিন্তু পুরোপুরি নিরপেক্ষ ও স্বার্থপর ভারসাম্যের কূটনীতি মেনে চলেছেন বিডেন ও পুতিনের মধ্যে | যার সুফল ভারত পেয়েছে উভয় দেশের কাছ থেকে সুসম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যমে | ঠিক এইধরণের নীতি ১৯৭১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন নিলে হয়তো আফগানিস্তানের তথা বিশ্বের ইতিহাস অন্যরকম হতো |
  • dc | 2401:4900:1cd0:b56f:5540:16bd:a4dc:***:*** | ২৬ জানুয়ারি ২০২৩ ১৯:১৯515914
  • গুরু, আমি আপনাকে কোন প্রশ্ন করিনি, কাজেই বারবার আমার নাম করে পোস্ট করবেন না। ব্যাপারটা বিরক্তিকর। 
  • রাধার কানাই | 115.187.***.*** | ২৬ জানুয়ারি ২০২৩ ২০:৪১515915
  • @দেবাশিস দাদা 
     
    একটা প্রশ্ন সবাইকেই করছি। বিশেষ করে দেবাশিসদাকে। 
    অনীশ দেব , অদ্রীশ বর্ধন এর অভিজ্ঞান রায়চৌধুরী -এই তিনজনের কল্পবিজ্ঞান সাহিত্য নিয়ে আপনাদের মতামত কী ?
  • আধুনিকতার খোঁজে | 113.2.***.*** | ২৬ জানুয়ারি ২০২৩ ২৩:৪৯515918
  • @aranya 
     
    এই যে চিঠির ইংরেজি ভার্সান। অবশেষে জোগাড় করেছি। :-)
     
    Dear Digvijay Singhji, 
    We, the people of Jalsindhi village... district Jhabua, are writing this letter to you, the Chief Minister of Madhya Pradesh. We are people of the river bank; we live on the banks of the great Narmada. This year (1994), our village Jalsindhi will be the first village in Madhya Pradesh to be submerged by the Sardar Sarovar dam. Along with us, four or five other villages - Sakarja, Kakarsila, Akadia and others - will also be drowned.... When the water comes into our village, when our homes and fields are flooded, we will also drown - this is our firm resolve. We are writing this letter to let you know why the adivasi (tribal) peasants of Jalsindhi who are coming under submergence, are preparing to drown themselves. You, and all those who live in cities, think that we who live in the hills are poor and backward, like apes. “Go to the plains of Gujarat. Your condition will improve. You will develop” - this is what you advise us. But we have been fighting for eight years - we have borne lathi blows, been to jail several times, in Anjanvara village the police even came and fired on us and destroyed our homes.... If it is true that our situation will improve in Gujarat, then why aren't all of us even now ready to go there? 
    To you officials and people of the town, our land looks hilly and inhospitable, but we are very satisfied with living in this area on the bank of the Narmada with our lands and forests. We have lived here for generations. On this land our ancestors cleared the forest, worshipped gods, improved the soil, domesticated animals and settled villages. It is that very land that we till. You think we are poor. We are not poor. We have constructed our own houses where we live. We are farmers. Our agriculture prospers here. We earn by tilling the earth. Even with only the rains, we live by what we grow. Mother corn feeds us. We have some tilled land in the village and some in the forest area. On that we grow bajra, jowar, maize, boadi, bate, saunvi, kadri, chana, moth, urdi, sesame and groundnut. We have many different kinds of crops. We keep varying them and eating. 
    What grows in Gujarat? Wheat, jowar, tuvar, red gram and some cotton. Less to eat, more to sell. We cultivate in order to eat; we sell only the excess for buying clothes etc. Whether the price in the market be high or low, we get food to eat. We grow so many different kinds of food, but all from our own effort. We have no use for money. We use our own seeds,
    manure from our own livestock - from that we get good crops. Where will we get so much money? Who will know us there? Which moneylender will give us money? If we don't get a good crop and don't have any money, then we will have to mortgage our land. Here we bring water to our fields by making channels from streams .... If we had electricity, then we could also pump up water from the Narmada and get a winter crop. But even though forty-fifty years have passed since independence, there is no electricity in the villages along the river, nor is there river irrigation. .... We have flowing water and good fodder in the forest. We don't live as much by farming as we do by our livestock. We keep hens, goats, cows and buffaloes. Some have 2-4 buffaloes, some have 8-10. Almost everyone has ten -twenty-forty goats.... From Gujarat people come to our hills to graze their cattle. Our fodder and water is so plentiful. .... 
    .... The forest is our moneylender and banker. In hard times we go to the forest. We build our houses from its wood - from teak and bamboo. From ningodi and hiyali (types of bamboo) splints we weave screens. From the forests we make baskets and cots, ploughs and hoes.... We also eat leaves from the forest, hegva, mahia, amli, goindi, bhanjan - all these leaves we eat. If there is a famine we survive by eating roots and tubers. When we fall sick, our medicinemen bring us back to health by giving us leaves, roots, bark from the forest.... We know the name of each and every tree, shrub and herb; we know its uses. If we were made to live in a land without forests, then all this learning that we have cherished over the generations will be useless and slowly we will forget it all. .... We worship our gods by singing the gayana - the song of the river. We sing the gayana during the naval and divasa festivals, describing how the world was made, how humans were born, from where the great river came.... We eat fish often. Fish is our stand by when we have unexpected guests. The river brings us silt from upstream which is deposited on the banks... Our children play on the river's banks, swim and bathe there. Our cattle drink there all through the year for the big river never dries up. In the belly of the river, we live contented lives. We have lived here for generation after generation; do we have a right to the mighty river Narmada and to our forests or don't we? Do you government people recognise that right or not?  
    You city people live in separate houses. You ignore each others' joys and sadness. We live with our clan, our relatives, our kin. All of us pool together our labour and construct a house in a single day, weed our fields, and perform any small or big task as it comes along. In Gujarat who will come to lend us a hand and make our work lighter? Will the big farmers come to weed our fields or to construct our houses? 
    Here in our villages, from our villagers, why do we get so much support? It is because we are all alike here; we share a common understanding. Only a few are tenants; everybody owns land. No one has a lot of land, but everyone has a little bit. When we go to Gujarat, the big landowners will crush us. As early as forty-fifty years ago, they took away the land of the adivasis who used to live there. Even now they are doing this. And we strangers - we don't know the language or the customs; it is their rule. If we can't do the kind of farming that needs a lot of money, then we'd have to mortgage our land to them, and slowly they would take it over. If they took away the land of the adivasis who lived there, then why won't they take away ours? Then who will give us other land? This is the land of our forefathers. We have a right to it. If this is lost, then we will only get spades and pickaxes, nothing else.... Our village gods are all here. Our ancestors' memorial stones are all here. We worship Kalo Rano, Raja Panto, Indi Raja. We also worship Aai Khada and Khedu Bai. Our great devi is Rani Kajol. Her’s and Kumbai and Kundu Rano's mountain is in Mathvad. If we leave all of them, then where will we get new gods from? People come from all over to celebrate our festivals - indal, divasa and divali. For bhangoria, all of us go to the market where our youth choose their own spouses. Who will come to us in Gujarat? The land in Gujarat is not acceptable to us. Your compensation is not acceptable to us. We were born from the belly of the Narmada, we are not afraid to die in her lap. 
    We will drown but we will not move! 
    Bava Mahaliya 
  • বুমবুম | 115.187.***.*** | ২৬ জানুয়ারি ২০২৩ ২৩:৫৮515921
  • ডিসি ,
     
    কে কাকে মেনশন করবে আপনি ঠিক করে দেবেন নাকি মশায়?সামান্য ব্যাপারে আপনার "বিরক্তি " লাগলে আলোচনা থেকে বিদায় নিন 
  • অভিজ্ঞান | 193.189.***.*** | ২৭ জানুয়ারি ২০২৩ ০০:০৭515922
  • রায়চৌধুরী আবার কোন পেলু? মরাচৌর বংশের নাকি
  • Debasis Bhattacharya | ২৭ জানুয়ারি ২০২৩ ০৪:২১515924
  • তাহলে, এ আলোচনার ‘বিজ্ঞান-দর্শন’ সংক্রান্ত অংশটুকু যে প্রশ্নগুলোতে নামিয়ে আনলাম (কেউ ভিন্নমত হতেই পারেন), সেগুলো এই রকম ---

    (১) ‘বিজ্ঞান’ জিনিসটাকে কি ‘প্রাচীন’, ‘মধ্যযুগীয়’, ‘আধুনিক’ --- এভাবে ভাগ করা যায়, মানে, স্রেফ কালিক অর্থটুকু ছাড়া অন্য কোনও দার্শনিক/পদ্ধতিগত অর্থে? 

    (২) ‘আধুনিক বিজ্ঞান’ জিনিসটার মধ্যে বস্তুনিষ্ঠ ও সর্বজনীন সত্য আছে, নাকি হিংসা ও আধিপত্যের মতাদর্শ ও অভিপ্রায় আছে? 

    (৩) প্রাগাধুনিক বিজ্ঞান কি আধুনিক বিজ্ঞানের চেয়ে বেশি ‘এম্পিরিক্যাল’ বা অভিজ্ঞতাসঞ্জাত ছিল? 

    এক এক করে এগুলোকে ধরি তবে, আমি নিজে যেভাবে বুঝেছি সেভাবে। 

    (১) আমি মনে করিনা যে, আধুনিক বিজ্ঞানের মধ্যে কোনও রকম হিংসা বা আধিপত্যকামিতা লুকিয়ে আছে। কিন্তু স্বীকার করা উচিত, ‘বিজ্ঞান’ জিনিসটাকে প্রাচীন-মধ্যযুগীয়-আধুনিক এইসব ভাগে ভাগ করা যায়, এবং করা হয়েও থাকে। বিজ্ঞানের ইতিহাসে (এবং অন্যত্রও) প্রায়শই আমরা ‘এনশিয়েন্ট/ক্লাসিক্যাল সায়েন্স’, ‘মেডিয়াভেল সায়েন্স’, ‘মডার্ন সায়েন্স’ এইসব কথাগুলোর মুখোমুখি হয়ে থাকি, এবং সেটা কিন্তু নিছক কালিক অর্থে নয়। মানে, আড়াই হাজার বছর আগে ছিলেন বলে আর্কিমিডিস প্রাচীন, আটশো বছর আগে ছিলেন বলে ফিবোনাচ্চি মধ্যযুগীয়, আর চারশো বছর আগে ছিলেন বলে গ্যালিলিও আধুনিক --- স্রেফ এইটুকু মাত্র নয়। এর মধ্যে নানা রকমের ‘কনসেপচুয়াল’ বা ধারণাগত নকশা আছে। যেমন, ‘এনশিয়েন্ট/ক্লাসিক্যাল সায়েন্স’ মানেই শুধুমাত্র সহজ পর্যবেক্ষণের ওপরে দাঁড়িয়ে বিনা পরীক্ষা-নিরীক্ষায় এবং যৎসামান্য গণিতবিদ্যা মাত্র সম্বল করে অতি উচ্চাঙ্গের দার্শনিক চর্চা। ‘মেডিয়াভেল সায়েন্স’ মানেই ‘এনশিয়েন্ট/ক্লাসিক্যাল সায়েন্স’-এর ধ্বংসাবশেষ এবং খ্রিস্টীয় প্রণোদনার ওপরে দাঁড়িয়ে সবিস্তার দার্শনিক নির্মাণ এবং তার মধ্যে থেকেই যৌক্তিক পদ্ধতির খোঁজ ও ছোট ছোট ও ধীর কিন্তু ধারাবাহিক প্রাযুক্তিক বিকাশ। ‘মডার্ন সায়েন্স’ বা আধুনিক বিজ্ঞান মানে সুনির্দিষ্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষা, দীর্ঘদিনের জমে ওঠা পর্যবেক্ষণজাত তথ্য, উন্নত গণিত, বিজ্ঞানের পেছনে অনেক বেশি লোকবল ও অর্থবল, ‘এক্সপোনেনশিয়াল’ বা সূচকীয় বৃদ্ধি, প্রাযুক্তিক বিকাশে প্রবল ও সরাসরি মদত, উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরাসরি জুড়ে যাওয়া, সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক বিশ্বদৃষ্টির উদ্ভব, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ও দর্শনের খোঁজ, প্রাক্‌ধারণার দ্বারা অদূষিত নিরপেক্ষ ও নৈর্ব্যক্তিক সত্যের ধারণা ও আদর্শ, ধর্ম ও ঐতিহ্যকে চ্যালেঞ্জ, এবং আরও অনেক কিছুই। প্রাগাধুনিকের সঙ্গে আধুনিক বিজ্ঞানের আর একটা গুরুত্বপূর্ণ তফাত হচ্ছে, ‘বিজ্ঞান’ জিনিসটার বিশেষায়ন এবং তার এক অতি স্বতন্ত্র আত্মপরিচয়ের নির্মাণ। এর সঙ্গে প্রাগাধুনিকের এক অভ্রান্তিসম্ভব পার্থক্য হচ্ছে, সেখানে বিজ্ঞান থাকলেও তার ‘বিজ্ঞান’ এই আত্মপরিচয়টা আদৌ ছিল না। আমরা আজ ‘বিজ্ঞান’ জিনিসটাকে আলাদা করে চিনি বলেই ইতিহাসে বিজ্ঞানকে আলাদা করে খুঁজতে পারি, এবং প্রাচীন ও মধ্যযুগে তার শিকড় আবিষ্কার করে উল্লসিত ও বিস্মিত হতে পারি, আধুনিক চেতনা আছে বলেই পারি। কিন্তু সেইসব সময়কালে যাঁদের চিন্তা ও কর্মে আমরা ‘বিজ্ঞান’-কে চিহ্নিত করি, তাঁরা সেটাকে স্রেফ অবিশেষায়িত ও অভাজ্য জ্ঞানের চর্চা বলেই জানতেন (এমন কি ধর্মতত্ত্ব বলেও মনে করতেন), কিন্তু ‘বিজ্ঞান’ নামক একটা বিশেষ জিনিস করছেন বলে মোটেই মনে করতেন না। বস্তুত, স্বয়ং বিজ্ঞান ভীষণভাবে বিশেষায়িত হয়ে যাবার পরেও দীর্ঘকাল পর্যন্ত এর স্বতন্ত্র ও বিশেষায়িত রূপটি সেভাবে নজরে আসেনি। খোদ নিউটন তাঁর বিখ্যাত বইটির নাম রেখেছিলেন, ‘ফিজিক্স’ তো নয়ই, এমন কি ‘বিজ্ঞান’-ও নয় --- প্রিনখিপিয়া ম্যাথমেটিকা ফিলোজফিয়া নাচুরালিস --- অর্থাৎ, ‘প্রকৃতির দর্শনের গাণিতিক নিয়মনীতি’! 

    এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এখানে যাঁরা তর্ক করছেন তাঁরা কি এসব কথা জানেন না? আমার ধারণা, উভয় পক্ষই তা কমবেশি জানেন। তাহলে, কেন এই মতপার্থক্য?  আমার মতে, তার কারণ হচ্ছে, তর্কের সময়ে ‘বিজ্ঞান’ জিনিসটার স্বরূপ বিষয়ে আলাদা আলাদা ধারণা মাথায় নিয়ে তাঁরা কথা বলছেন। যাঁরা বলছেন বিজ্ঞান মানে বিজ্ঞান, তার প্রাচীন-মধ্য-আধুনিক এইসব হয়না, তাঁরা বিজ্ঞান বলতে মূলত বুঝছেন এক নির্দিষ্ট ধরনের সর্বজনীন ও নৈর্ব্যক্তিক অনুসন্ধান পদ্ধতি এবং তার প্রয়োগে আহৃত জ্ঞানভাণ্ডার (এবং, বিজ্ঞানে আর যা যা আছে সবই এ থেকে প্রাপ্ত)। আর, যাঁরা বলছেন আধুনিক বিজ্ঞানে হিংসা আছে এবং প্রাগাধুনিকে নেই, তাঁরা বিজ্ঞান বলতে মূলত বুঝছেন কৃষি ও শিল্পোৎপাদন ব্যবস্থা, সরকারি ও বেসরকারি বিজ্ঞান-প্রতিষ্ঠান ও তাদের কাজ-কর্ম এবং অভিপ্রায়, বিজ্ঞানচর্চার সরকারি ও বেসরকারি নকশা, ঘোষিত ও অঘোষিত নীতি, যুদ্ধ-বিগ্রহ এবং তার কলাকৌশল ও নীতি, এইসব (এবং, বিজ্ঞানে ‘পদ্ধতি’ বলে যা বলা হয় সে সবই এইসব উদ্দেশ্য-সাধনের জন্য নিবেদিত)।
     
    আমার মতে, দুটোই বিজ্ঞানে গুরুত্বপূর্ণ, এবং একটা ছাড়া অন্যটার কোনও মানে নেই। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি যদি সত্য আবিষ্কার করতে না পারে তাহলে তা দিয়ে কৃষি শিল্পোৎপাদন যুদ্ধ এসব কিছুই হবেনা। আর, প্রয়োগ না থাকলে বিশুদ্ধ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ও তার দর্শনের সঙ্গে ধর্মতাত্ত্বিক কচকচির তফাত হবে যৎসামান্য। সাধারণত ‘ফিলজফি অফ সায়েন্স’-এর চর্চায় থাকে শুধুই প্রথমটা, আর বিজ্ঞানের সমাজতাত্ত্বিক সমালোচনায় স্থান পায় শুধুই দ্বিতীয়টা। তবে, কেউ কেউ দুটোরই গুরুত্ব একসাথে স্বীকার করেছেন। যেমন, জে ডি বার্নাল তাঁর ‘সায়েন্স ইন হিস্ট্রি’-তে বিজ্ঞানের পাঁচটি রূপের কথা বলেছেন ---

    (ক) প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিজ্ঞান, (খ) অনুসন্ধান-পদ্ধতি হিসেবে বিজ্ঞান, (গ) ক্রমসঞ্চীয়মান জ্ঞানভাণ্ডার হিসেবে বিজ্ঞান, (ঘ) উৎপাদনের উপায় হিসেবে বিজ্ঞান, এবং, (ঙ) বিশ্ববীক্ষা হিসেবে বিজ্ঞান।  

    ফলত, আলোচনার সময়ে বিজ্ঞানের এই নানা রূপ ও দিক খেয়াল না রাখলে, বিজ্ঞানকে তার সমগ্রতায় না দেখলে, সত্য থেকে বিচ্যুত হয়ে আমাদের অবস্থান একপেশে হয়ে যেতে পারে। 

    (২) যদি বলেন আধুনিক বিজ্ঞানের মধ্যে মতাদর্শ আর অভিপ্রায় আছে কিনা, তা হলে বলব, অবশ্যই আছে — মতাদর্শ আর অভিপ্রায় ছাড়া মানুষ কোনও কাজ বা চিন্তাই করতে পারেনা। এমন কি, 'প্রকৃত সত্য' বলে কিছু একটা আছে, তাকে অবিকৃতভাবে জানতে হবে, এবং তাকে আমাদের মনের ভেতরকার কোনও বাসনা বা পক্ষপাতের দ্বারা কলুষিত হতে দেওয়া যাবেনা — এটা নিজেও একটা ইডিওলজি। এ রকম বিস্তর ভাল-মন্দ ইডিওলজি বা মতাদর্শ আমাদের সব কর্ম ও চিন্তার পেছনেই থাকে, [আধুনিক] বিজ্ঞানেও আছে, অবিকৃত সত্যকে খুঁজে বার করার হাজারো আকুতি সত্ত্বেও। তা যদি না হত, তো বেকনীয় 'ইন্ডাকটিভিজম' বা আরোহবাদ দিয়ে বিজ্ঞানের সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা কবেই হয়ে যেত, বিজ্ঞানের দর্শনে এত সব বিতর্কের কোনও পরিসরই থাকত না, এবং বৈজ্ঞানিক সৃজনশীলতাকে সহজে প্রোগ্রামিং-ও করে ফেলা যেত। বলা বাহুল্য, এত সব কিছু মোটেই ঘটেনি। এটা আজ জলের মত স্পষ্ট যে, 'প্রকৃতিকে দেখলাম, তা থেকে তথ্য সংগ্রহ করলাম, এবং সে তথ্যগুলোকে সাজিয়ে প্রকৃতির ভেতরকার নিয়ম-কে টেনে বার করে ফেললাম' — বিজ্ঞান এত সহজ নয়। উনিশ শতকে জন স্টুয়ার্ট মিল এবং বিংশ শতকে লজিক্যাল পজিটিভিস্ট গোষ্ঠী বেকনীয় পদ্ধতির দারুণ উন্নতি ঘটানো সত্ত্বেও তা বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান-পদ্ধতির সম্পূর্ণ চিত্র হাজির করতে পারেনি। নিছক তথ্যগুচ্ছ এবং তাকে সাজিয়ে সত্যে পৌঁছোবার যৌক্তিক ও গাণিতিক হাতিয়ার — বিজ্ঞান শুধু এইটুকু মাত্র নয় — এ কথা বিশ শতকীয় বিজ্ঞান-দার্শনিকরা প্রায় সকলেই বলেছেন। তথ্য ও যুক্তির ফাঁকের মধ্যে টমাস কুন আবিষ্কার করেছেন 'প্যারাডাইম' বা পরিবর্তনশীল চিন্তা কাঠামো, জেরাল্ড হোল্টন আবিষ্কার করেছেন 'থিমাটা' বা আদিকল্প, আর কার্ল পপার তো ইন্ডাকশন ব্যাপারটাই বাতিল করে দিয়ে 'ফলসিফিকেশন'-এর ধারণায় চলে গেছেন। 

    এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তবে কি 'আধুনিকতার খোঁজে' যেমনটি বলছিলেন — আধুনিক বিজ্ঞান হল আসলে হিংসা ও আধিপত্যের মতাদর্শ মাত্র, সেটাই ঠিক, এবং বিজ্ঞান বস্তুনিষ্ঠ ও সর্বজনীন এ দাবিটা মিথ্যে? না, মোটেই না। কারণ, প্রথমত, কোথাও মতাদর্শ ও প্রাক্-ধারণা কিছু থাকলেই তার মধ্যে বস্তুনিষ্ঠ সত্য কিছুতেই থাকতে পারবে না, এ বাইনারি ঠিক না। মতাদর্শ, প্রাক্-ধারণা ও অভিপ্রায় আদৌ না থাকলে কোনও জ্ঞানই সম্ভব না। মানুষ এগুলোর ভেতর দিয়েই সত্যকে জানে, আবার এক সময় এগুলো নিয়ে প্রশ্ন তোলে, এই সাময়িক সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে, এবং আরও সর্বজনীন বৃহত্তর সত্যে উপনীত হয়‌। আবার তার মধ্যেও এক সময় সীমাবদ্ধতা ও একপেশেমির অভিযোগ ওঠে, এবং একই প্রক্রিয়ার পুনরাবৃত্তি ঘটে। ফলত, বিজ্ঞানের মধ্যে মতাদর্শ ও একপেশেমির খেলা সব সময়েই থাকে, কিন্তু সব সময়েই তা আগের তুলনায় কম। আমি যা ভাবছি তার মধ্যে কোনও একপেশেমি রয়ে যাচ্ছে না তো — এ উদ্বেগ আধুনিকতারই অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, প্রাচীনত্বের নয়। এ সংশয় তাই সব সময়েই স্বাগতম। কিন্তু, তার নিরসনের জন্য সামনে না তাকিয়ে পেছন ফিরলেই সব মাটি। 

    [আধুনিক] বিজ্ঞানের অভ্যন্তরে হিংসা ও আধিপত্যের খোঁজ পাওয়াটা তাই এক অলীক দুঃস্বপ্ন মাত্র, যার মূলে রয়েছে বিজ্ঞান সম্পর্কে ভুল ধারণা এবং অযৌক্তিক ভীতি। দেকার্তে জটিল বাস্তবতাকে ছোট করে নিয়ে ভেঙে ভেঙে বিশ্লেষণ করে দেখার পরামর্শ দিলে সেটা যদি হিংস্রতার প্রমাণ হয়, তবে গোটা জগৎকে মাত্র পাঁচটি মৌলের সমাহার (পঞ্চভূত) বলে দাবি করার মধ্যে, বা যে কোনও রোগকে বায়ু-পিত্ত-কফ উপাদান-ত্রয়ের কমবেশি বলে দাবি করার মধ্যে কী ভয়ঙ্কর হিংস্রতা থাকতে পারে ভাবুন!

    আসলে 'রিডাকশনিজম', অর্থাৎ বৃহৎ জটিল ব্যাপারকে তার সরলতর উপাদানের গুণাগুণ দিয়ে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা, শুধু আধুনিকতার বা বিজ্ঞানের ব্যাপার না। বড় ও জটিল ব্যাপারকে ছোট ও সরলতর ব্যাপার দিয়ে ব্যাখ্যা করাটা চিরন্তন মানবীয় প্রবণতা, ওটা না থাকলে তো জ্ঞানচর্চার কোনও মানেই হয়না! যে আদিম মানুষটি 'প্রাণ'-এর মত এক অতিশয় সূক্ষ্ম ও জটিল প্রক্রিয়া-ব্যবস্থাকে এক অদৃশ্য 'বায়ু' গোছের কিছু একটা বলে মনে করত (বা এখনও করে), সে কিন্তু আসলে আধুনিক মানুষের চেয়ে অনেক বেশি 'রিডাকশনিস্ট'!

    আধুনিক বিজ্ঞানের সমালোচক যদি আকুল হয়ে বেচারা বেকন ও দেকার্তের মধ্যে হিংসা খুঁজতে থাকেন, এবং খুঁজে পানও, সেটা খুব বড় সমস্যা না। আসল সমস্যাটা হচ্ছে, সে হিংসাটা তাঁর ঠিক কতটা ভয়ঙ্কর মনে হল, এবং কার তুলনায়। রামায়ণ-মহাভারত এবং ইলিয়াড-ওডিসির যুদ্ধবৃত্তান্তের তুলনায়? বিধর্মীদের চাবুক মারা এবং মুণ্ডচ্ছেদের বিধানের তুলনায়? আজটেকদের গুচ্ছ গুচ্ছ নরবলির তুলনায়? জানতে হবে আমাদের।

    আধুনিক জবাইখানায় শুয়োরদের যান্ত্রিক জবাই-প্রক্রিয়াকে যিনি আধুনিক নিষ্ঠুরতার প্রতীক ও প্রমাণ বলে মনে করেন, তিনি উন্মত্ত পূজারির দ্বারা হাড়িকাঠে চড়ানো বিপন্ন-চিৎকৃত মহিষের ঠ্যাং ধরে টেনে রাখা অবস্থায় খাঁড়া চালিয়ে মুণ্ডচ্ছেদের প্রক্রিয়াকে আদিম নিষ্ঠুরতার প্রমাণ বলে মনে করেন না কেন? এ সবই আমাদেরকে জানতে হবে। 

    স্বয়ং বিজ্ঞান-সমালোচককেও কি জানতে হবে না?

    (৩) প্রাগাধুনিক বিজ্ঞান অবশ্যই 'এম্পিরিক্যাল' বা অভিজ্ঞতা-সঞ্জাত, এবং সরলও বটে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, স্রেফ অভিজ্ঞতা ও সারল্য দিয়ে সত্য জানা যায়না, কারণ, সত্য প্রায়শই ভয়ঙ্কর জটিল। কোনও এক নারী এক অজানা বৃক্ষের ফল খাবার পরের দিনেই যদি গর্ভবতী হয়ে পড়ে তাতে এটা দাঁড়ায় না যে, ওই ফল ভক্ষণই গর্ভসঞ্চারের কারণ। কোনও এক নারীর ঋতুকাল যদি বারবার চন্দ্রের এক বিশেষ কলার সাথে ঘুরে ঘুরে আসে, তার মানে এই না যে, চন্দ্রের প্রভাবেই তা ঘটছে। শামানের মন্ত্রোচ্চারণের পরেই যদি শিশুর জ্বর সেরে যায়, তার মানে এই না যে মন্ত্রশক্তির রোগারোগ্য-ক্ষমতা আছে। 

    অভিজ্ঞতা থেকে যাতে আমরা এ ধরনের ভুয়ো সিদ্ধান্তে পৌঁছে না যাই, সেজন্য আধুনিক বিজ্ঞানে পদ্ধতিগত ব্যবস্থা থাকে। ফলত, আধুনিক বিজ্ঞানের 'এম্পিরিক্যাল কন্টেন্ট' বা অভিজ্ঞতাজাত সঞ্চয় অনেক বেশি, এবং অভিজ্ঞতা থেকে সত্যে পৌঁছোবার রাস্তাটাও অনেক বেশি নিরাপদ। 

    হ্যাঁ, এর পরেও আধুনিক বিজ্ঞানে ভ্রান্তি থাকে, সীমাবদ্ধতা থাকে, একপেশেমি থাকে, অহং এবং স্বার্থবুদ্ধিও থাকে। কিন্তু, সে সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠা এবং তা অতিক্রম করার প্রক্রিয়াও চালু থাকে ধারাবাহিক ভাবেই। 

    মুক্তি তাই আধুনিক যুক্তিতেই, পশ্চাৎমুখী রোমান্টিকতায় নয়। এবং, সত্য আছে আমাদের সামনেই, পেছনে না। 

     
  • &/ | 151.14.***.*** | ২৭ জানুয়ারি ২০২৩ ০৬:০৪515925
  • এইটিই স্বতন্ত্র প্রবন্ধ হবার দাবী রাখে, এতটাই চমৎকার স্পষ্ট করে বুঝিয়ে সবিস্তারে লেখা। আমাদের আলোকিত করার জন্য ধন্যবাদ।
    ( এই থ্রেড থেকে প্রাসঙ্গিক ও সুলিখিত জিনিসগুলো একত্রিত করে রাখা দরকার সাইটে কোথাও। যাতে সহজে পরে একসঙ্গে পাওয়া যায়। নাহলে সব খিচুড়ি অবস্থায় মাখামাখি হয়ে যাচ্ছে, কাঁটা বাছতে বাছতে জান যাবে। )
  • dc | 2401:4900:1cd1:553a:b11d:a5b4:44a5:***:*** | ২৭ জানুয়ারি ২০২৩ ০৭:৪৬515926
  • দেবাশীষবাবুর প্রশ্নোত্তর পোস্টটা চমতকার হয়েছে। এর সাথে আপাতত অল্প একটু অ্যাড করতে পারি।
     
    "আধুনিক" বিজ্ঞানের ভিত্তি যে scientific rigor, ফিলোজফি অফ সায়েন্স এর দিক থেকে দেখলে তার সূচনা মোটামুটি ১৬০০ থেকে ১৭০০ সালের মধ্যে হয়েছে বলে মনে করা হয়। এই সময়েই রবার্ট বয়েল কেমিস্ট্রির গোড়াপত্তন করেন, "আধুনিক" বায়োলজিরও সূচনা এই সময়েই হয়েছিল। এ ছাড়াও নিউটনের কাজ এই সময়ের - বিজ্ঞানকে একটা শক্তপোক্ত ম্যাথামেটিকাল ফ্রেমওয়ার্কে নিয়ে আসার কাজে ওনার একটা বড়ো অবদান এই সময়েই হয়েছিল। এছাড়াও লাইবনিজ আর অয়েলার এর হাত ধরে "আধুনিক" ক্যালকুলাসের সূচনাও এই সময়েই বা আরেকটু পরে। এনাদের তৈরি করা ইনফিনিটেসিমাল কাঠামো না পেলে "আধুনিক" বিজ্ঞান কতোটুকু এগোতে পারতো বলা শক্ত। সায়েন্সের ফিলোজফিতে প্রায় একই রকম গুরুত্ত্বপূর্ণ কাজ বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকেও হয়েছে, বিশেষ করে বলা যেতে পারে পপারের ফলসিফায়েবিলিটি আর গোডেলের ইনকমপ্লিটনেস থিওরেম ছাড়া আজকের বিজ্ঞান বা বিজ্ঞানের ফিলোজফি কল্পনাই করা যায় না। কাজেই, ইতিহাসের দিকে থেকে বিজ্ঞানকে "প্রাচীন", "মধ্যযুগীয়", "আধুনিক" ইত্যাদি ভাগে ভাগ করা হলেও, বিজ্ঞানের আভ্যন্তরীন কাঠামোর দিকে থেকে দেখলে এই ভাগাভাগি আরও অনেক বেশী ফ্লুইড।
     
    "মুক্তি তাই আধুনিক যুক্তিতেই, পশ্চাৎমুখী রোমান্টিকতায় নয়। এবং, সত্য আছে আমাদের সামনেই, পেছনে না" - সম্পূর্ণ একমত।     
  • dc | 2401:4900:1cd1:553a:b11d:a5b4:44a5:***:*** | ২৭ জানুয়ারি ২০২৩ ০৭:৪৭515927
  • *এনাদের তৈরি করা ইনফিনিটেসিমাল ম্যাথামেটিকসের কাঠামো না পেলে "আধুনিক" বিজ্ঞান কতোটুকু এগোতে পারতো বলা শক্ত
  • Debasis Bhattacharya | ২৭ জানুয়ারি ২০২৩ ১১:২৬515928
  • dc,
     
    ভাল সংযোজন করেছেন। তবে, লাইবনিৎস-এর সঙ্গে বোধহয় নিউটন সায়েবের নাম উচ্চারিত হওয়া উচিত ছিল। অয়লার তো এক-দেড় শতক পরের লোক!
  • Debasis Bhattacharya | ২৭ জানুয়ারি ২০২৩ ১২:০৬515929
  • রাধার কানাই,
     
    আজকাল তো গল্পটল্প আর সেভাবে পড়া হয়না, পুরোনো যা পড়েছি তার মধ্যে যা মনে আছে সেখান থেকে বলি।
     
    অনীশ দেব ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, কাজেই বিজ্ঞানটা জানেন, প্রফেসর শঙ্কুর মত বিজ্ঞানের দফারফা করেননি। তবে, সাহিত্যিক ক্র্যাফটসম্যানশিপ সত্যজিৎ বা শীর্ষেন্দুর মত উচ্চাঙ্গের নয়। 
     
    অদ্রীশ বর্ধন এক অর্থে বাংলা কল্পবিজ্ঞানের পিতা। তিনি তার শৈশবাবস্থায় তাকে লালন-পালন করেছেন, যদিও সাবালক করে যেতে পারেননি। তবু, পিতার স্বীকৃতি ও মর্যাদাটা তো পাবেনই!
     
    অভিজ্ঞান রায়চৌধুরী একেবারেই হালের লেখক, ফলে খুব অল্প পড়েছি। এখন আর পড়া হয়না তেমন, ওপরে বলেছি।তবু যেটুকু পড়েছি, তাতে আলোচনা করার মত 'কিছু একটা বটে' বলে মনে হয়নি।
  • আধুনিকতার খোঁজে | 2402:3a80:1cd0:b3b6:1110:1da5:e5f4:***:*** | ২৭ জানুয়ারি ২০২৩ ১৩:০২515930
  • দেবাশিসবাবু 
    প্রাঞ্জল ভাষায় দারুন বুঝিয়েছেন। ফলে বুঝতে খুবই সুবিধে হয়েছে। হয়তো বিশ্বাসযোগ্য হবে না ,  অনেক জায়গাতেই আমার বিশেষ মতানৈক্য নেই। আমি আমার ভাবনাগুলোকে এরই ওপর আরেকটু যাতে রাখতে পারি সেই সুযোগ চাই। কাল থেকে প্রায় রাস্তাতেই কাটছে। :)) একটু সময় করেই লিখছি। 
     
  • guru | 115.187.***.*** | ২৭ জানুয়ারি ২০২৩ ১৩:০৯515931
  • @রাধার কানাই 
     
                             অনীশ দেবের কল্পবিজ্ঞান গল্প দেখতে গেলে দুটি ছোট গল্প "বুদ্ধি যদি বৃদ্ধি পায়" ও "হারিয়ে যাওয়া" আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে | তবে আমার মনে হয় লেখক হিসেবে ওনার কল্পবিজ্ঞানের থেকে অনেক বেশি ইম্প্রেসিভ ভূত বিশেষজ্ঞ ভূতনাথের উপরে লেখা গল্পগুলো "দেখা যায় না শোনা যায় " এবং "ভয়পাতাল" এই দুটো উপন্যাস |  আপনি যদি গল্প পড়ার আনন্দে গল্প পড়েন অসম্ভব একটা শিহরণ অনুভব করবেন অন্তত: এই দুটো গল্প পড়লে |
     
                          অদ্রীশ বর্ধন "প্রোফেসর নাট বল্টু চক্র সমগ্র " অনেকটাই ইন্টারেষ্টিং গল্প তবে শঙ্কু বা মিসির আলীর মতো ওনার লেখার বাঁধুনি অতটা নয় | তবে আমার ওনার অনুবাদগুলো আরো ভালো লাগে বিশেষ করে HP LOVECRAFT এর "এ কেস বুক অফ চার্লস ডেক্সটার ওয়ার্ড " এই উপন্যাসটি | 
     
                         অভিজ্ঞান রায়চৌধুরীর সৃষ্টি "অনিলিখা " আমার খুবই প্রিয় | যেমন ছোটবেলাতে ব্রাম স্টোকারের মিনা কে ভালো লাগতো তেমনি অনিলিখা চরিত্রটি আমার কাছে স্বপ্নে দেখা নায়িকার মতো লাগে | তবে অনিলিখা নিয়ে ওনার শেষের দিকের বিশেষ করে গত বছর পুজোবার্ষিকী কিশোর ভারতীর গল্পটি অতটাও ভালো লাগেনি  | অনেকটাই হিন্দি সিনেমার স্টিরিওটিপিক্যাল থ্রিলার গল্পের মতো লেগেছিলো আমার |
     
                           
     
     
  • Debasis Bhattacharya | ২৭ জানুয়ারি ২০২৩ ১৪:১৬515932
  • guru,
     
    আপনি সত্যিই গুরু। অনিলিখার সঙ্গে স্বপ্নিল রোমান্সের বয়েস তো আর নেই ভাই, আপনার বোধহয় আছে। যদি তাইই হয়, তো এ দুনিয়ার বিস্তর সম্ভাবনা এখনও আপনার জন্য বেঁচে আছে। শুভেচ্ছা!!! 
     
    অনিলিখা আমিও পড়িচি দু-এক পিস। মন্দ না, তবে বেশি ব্যাখ্যায় না যাওয়াই ভাল। 
     
    অন্য আরেকটি উপন্যাস পুজোর সংখ্যার আনন্দমেলায় পড়েছিলাম, সেটা অবশ্য অনিলিখার গল্প না। সমুদ্রের গভীরে 'টাইম অ্যান্ড স্পেস'-এর ঘূর্ণিপাকে পড়েছে এক জাহাজ। এই ধরাধামের সমুদ্রে তা কীভাবে সম্ভব, সেটা সম্ভবত শুধু উন্মত্ত জাহাজিরাই জানে। যাইহোক, শেষকালটায় যা হল, তার জবাব নেইকো। একটা অলিভ রিডলে কচ্ছপের পেছন পেছন গিয়ে জাহাজটা সেই 'টাইম অ্যান্ড স্পেস'-এর ঘূর্ণিপাক থেকে নিরাপদে বেরিয়ে এলো!  
     
    পুজোর সংখ্যার আনন্দমেলা আর কিশোর ভারতী কিনে পড়ার অভ্যেস এই সেদিন পর্যন্তও ছিল, এই বয়েসেও। এইসব বস্তুর মুখোমুখি হতে হবে, এই আশঙ্কায় সে অভ্যেস ত্যাগ করতে হয়েছে সম্প্রতি। 
  • রাধার কানাই | 115.187.***.*** | ২৭ জানুয়ারি ২০২৩ ১৪:২৭515933
  • @দেবাশিসদা 
    আপাতত আপনার আর আধুনিকতার খোঁজে বাবুর বিজ্ঞান দর্শন আলোচনা ফলো করছি , কোনো প্রশ্ন থাকলে বলব। 
    মতামতের জন্য অনেক ধন্যবাদ দাদা , কিন্তু একটা কথা অনীশ দেব ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ার নন সম্ভবত উনি ফলিত পদার্থবিদ্যার প্রফেসর। 
     
    আর অভিজ্ঞান রায়চৌধুরীর কথা বললাম কারণ , উনি বিভিন্ন আধুনিক টেকনোলজিগুলোকে , যেমন সাইবার সিকিউরিটি , সাইবার ক্রাইম - এগুলোকে বাংলা সাহিত্যে এনেছেন। 
  • রাধার কানাই | 115.187.***.*** | ২৭ জানুয়ারি ২০২৩ ১৪:৩২515934
  • @দেবাশিসদা 
     
    অনিলিখা আমিও পড়িচি দু-এক পিস। মন্দ না, তবে বেশি ব্যাখ্যায় না যাওয়াই ভাল। এটা 
    কি আপনি নেতিবাচক অর্থে বললেন ?মানে , আপনি যে উদাহরণটা দিলেন , অধিকাংশ গল্পই ঐরকম বিজ্ঞানবিরোধী , এরকম বলতে চাইলেন কি ?
  • Debasis Bhattacharya | ২৭ জানুয়ারি ২০২৩ ১৪:৩৩515935
  • রাধার কানাই,
     
    আমি অনীশ দেব সম্পর্কে তেমনটাই শুনেছিলাম। হতে পারে, ভুল তথ্য পেয়েছি। তবে, তাতে আমার বক্তব্য বদলাচ্ছে না। উনি বিজ্ঞানটা জানেন, তাঁর গল্পে বিজ্ঞানের দফারফা করেন নি, সাধারণত। 
     
    অভিজ্ঞান রায়চৌধুরী বেশি পড়িনি, বলেছি। 
  • রাধার কানাই | 115.187.***.*** | ২৭ জানুয়ারি ২০২৩ ১৪:৩৮515936
  • আর একটা কথা সাহস করে বলে ফেলি , হয়তো ছোট মুখে বড় কথা হয়ে যাবে। বাংলা কল্পবিজ্ঞানগুলোও অধিকাংশ ওই টাইম ট্রাভেল , ভিনগ্রহী , বা অন্য গ্রহে মানুষের ভ্রমণ - এই তিন চারটে বিষয়ের মধ্যে ঘুরপাক খায়। ১৯২২ এ হলে ঠিক আছে ২০২২এ একই বিষয়ে ঘুরপাক বড় বেমানান।  তার সঙ্গে বিজ্ঞানকে দফারফা করা তো আছেই , যেমনটা আপনি বলে থাকেন। 
  • রাধার কানাই | 115.187.***.*** | ২৭ জানুয়ারি ২০২৩ ১৪:৪১515937
  • @গুরু
    মতামতের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আমার অনীশ দেব বা অদ্রীশ বর্ধনের অনুবাদগুলো দারুন লাগে ওদের মৌলিক গল্পগুলোর থেকেও। 
  • প্রবীর ঘোষের চ্যালা | 115.187.***.*** | ২৭ জানুয়ারি ২০২৩ ১৫:২০515938
  • একটা ভালো সায়েন্স ফিকশন 
  • Debasis Bhattacharya | ২৭ জানুয়ারি ২০২৩ ১৫:২২515939
  • আধুনিকতার খোঁজে,
     
    আপনার সঙ্গে কমিউনিকেট করতে পেরেছি জেনে পরমানন্দ আছি। আপনি রাস্তা থেকে বাড়ি ফিরুন। আপনার মন্তব্যের অপেক্ষায় থাকব, তাড়াহুড়ো নেই। 
  • Debasis Bhattacharya | ২৭ জানুয়ারি ২০২৩ ১৫:২৬515940
  • 'পরমানন্দে আছি'। সরি। 
  • guru | 115.187.***.*** | ২৭ জানুয়ারি ২০২৩ ১৫:৫৩515942
  • @রাধার কানাই 
    ও 
    @দেবাশিসবাবু 
       
                            আপনারা বাংলাতে কল্পবিজ্ঞানের থিমের খুব একটা ভ্যারাইটি না থাকা নিয়ে যা লিখেছেন সেটি নিয়ে আমি একমত | তবে অনেকদিন আগে ক্লোন নিয়ে একটি গল্প পড়েছিলাম লেখকের নাম এখন ঠিক মনে পড়ছেনা | তবে গল্পটি এইরকম ছিল যে দুজন ছেলে তারা মাধ্যমিকে একে অন্যের সঙ্গে compete করছে বেশি নম্বর পাবে বলে এবং দুজনেই েএকে অন্যের বিরুদ্ধে নিজেদের ক্লোনকে ব্যবহার করছে |
     
                          অনীশ দেবের ডিস্টোপিয়া "তেইশ ঘন্টা ৬০ মিনিট" যথেষ্ট ইন্টারেস্টিঙ লেগেছে আমার | ডিস্টোপিয়া নিয়ে মনে হয় বাংলা সাহিত্যে ওনার এই উপন্যাসটির মতো এতো ভালো কাজ আর কেউই করেননি | আপনাদের কেমন লাগলো ? অদ্রীশ বর্ধনের "বিদ্রুপ ব্রহ্মের ব্রহ্মান্ড " আমার কাছে অন্যতম একটি ভালো কাজ ওনার | আপনারা কেউ পড়েছেন কি ?
     
                          আরেকটা কথা আপনারা কেউ হুমায়ুন আহমেদের মিসির আলীর "নিষাদ" বা "অন্য ভুবন" পড়েছেন ? "নিষাদ" গল্পটিতে প্যারালাল ইউনিভার্সের একটি কনসেপ্ট আছে যেটি প্রথম বার পড়ে আমার মনে হয়েছিল যে হয়তো এটি বাংলা সাহিত্যে একেবারেই নতুন একটি ফিক্শন কনসেপ্ট | এইধরণের গল্প হুমায়ুন আহমেদের পরে আর কেউ সেইরকম লিখলেননা এটা একটি দুর্ভাগ্য বাংলা সাহিত্যের ক্ষেত্রে |                  
  • guru | 115.187.***.*** | ২৭ জানুয়ারি ২০২৩ ১৫:৫৯515943
  • @দীপাঞ্জনবাবু 
     
                            হুমায়ুন আহমেদের মিসির আলীর "নিষাদ" বা "অন্য ভুবন" এই দুটো উপন্যাস আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে | "নিষাদ" গল্পটিতে প্যারালাল ইউনিভার্সের একটি কনসেপ্ট আছে যেটি প্রথম বার পড়ে আমার মনে হয়েছিল যে হয়তো এটি বাংলা সাহিত্যে একেবারেই নতুন একটি ফিক্শন কনসেপ্ট | এইধরণের গল্প হুমায়ুন আহমেদের পরে আর কেউ সেইরকম লিখলেননা এটা একটি দুর্ভাগ্য বাংলা সাহিত্যের ক্ষেত্রে |  এছাড়া ছোট গল্পের মধ্যে আহক গল্পটিও খুবই ভালো লেগেছে কল্পনাশক্তির জন্য |
     
                          ওনার ভাই জাফর ইকবালও যথেষ্ট ভালো কল্পবিজ্ঞান লিখেছেন | "নিয়ান" বলে নিয়ানডার্থাল মানব নিয়ে ওনার সাম্প্রতিক উপন্যাস আমার খুবই ভালো লেগেছে |
     
                                             
  • দীপাঞ্জন মুখোপাধ্যায় | ২৭ জানুয়ারি ২০২৩ ১৬:১২515944
  • মিসির আলীর অন্য ভুবন ছাড়াও তোমাদের জন্য ভালোবাসা , অনন্ত নক্ষত্রবীথি , ইমা , ওমেগা পয়েন্ট , ফিহা সমীকরণ এরকম অনেক লেখা আছে। ওনার কল্পবিজ্ঞান সমগ্রের খন্ডগুলো আলাদাভাবে প্রকাশিত হয়েছে , অনলাইনেও আছে। এপার বাংলায় হুমায়ুন আহমেদের মত প্রাপ্তমনস্ক কল্পবিজ্ঞান লেখার সঙ্গে তুলনীয় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের 'অমৃতের পুত্রকন্যা'। 
  • PM | 202.74.***.*** | ২৭ জানুয়ারি ২০২৩ ১৬:২২515945
  • বাংলা কল্পবিজ্ঞানের আলোচনা কি করে জাফর ইকবাল কে বাদ দিয়ে হয় কি করে ? ইনিও বিজ্ঞান টা জানেন  . "He achieved his PhD from University of Washington. After working 18 years as a scientist at California Institute of Technology and Bell Communications Research, he returned to Bangladesh and joined Shahjalal University of Science and Technology as a professor of Computer Science and ইঞ্জিনিয়ারিং  "
     
    লেখার শৈলী ও বেশ ভালো ​​​​​​​।হুমায়ুন ​​​​​​​আহমেদ ​​​​​​​এর ​​​​​​​ভাই ​​​​​​​বলে ​​​​​​​কথা :) :) .
     
    অদ্রীশ ​​​​​​​বর্ধনে ​​​​​​​"সময় ​​​​​​​গাড়ি "  বই ​​​​​​​টা ​​​​​​​কেউ ​​​​​​​পড়েছেন ?
     
     
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই প্রতিক্রিয়া দিন