দেবাশীষবাবুর ও সাগ্নিকবাবুর বক্তব্য ও সংখ্যাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ থেকে আমার মত গোলা লোক কী বুঝল?
ফ্যাক্ট= বামের ভোট বিপুল ভাবে কমেছে (২০১৬- থেকে ১৯শে)। এতটাই যে বামদল বা কংগ্রেস একটাও সীট পায়নি।
কমে গেছে কোথায়?
দেবাশীষবাবু= বেশিরভাগটাই বিজেপিতে যায়নি। বেশ, তাহলে সিদ্ধান্ত ? তিনোতে গেছে? নইলে আর কোথায়?
সাগ্নিকবাবু= এভাবে বলা যায় না। ২০১৯ সালেরটা খেয়াল করলে হিউরিস্টিক সিদ্ধান্ত হোল বেশির ভাগ বিজেপিতে গেছে, কিছুটা তিনো।
আমার মনে হয় পিনাকীই ঠিক। সীট ধরে বিচার করলে বেটার অ্যানালিসিস হবে।
আপাতত; দেবাশীষবাবুর কথা মেনে নিলাম। বামের ভোট রামে যাওয়ার অপবাদ খারিজ করলাম। কিন্তু বাম সমর্থকরা কি খুশি হবেন যে ইস্টবেঙ্গল -মোহনবাগানের মত 'চিরশত্রু' দলে গেছে আমাদের সমর্থকদের ভোট? বহোত না-ইন্সাফি!
অর্জুনদা,
উত্তর দিতে দেরি হওয়ায় দুঃখিত। তোমার আলঙ্কারিকতা আর উড়ো রসিকতা --- দুটোই আমার বড্ড প্রিয়। এই যেমন ধর, এই যে বলেছ, 'ভোট কারো বাবার নয়' --- একে আমি দুই বগল উর্ধ্বে তুলে সমর্থন জানাতে প্রস্তুত। ভোট কারো বাবার নয় তো বটেই, এমন কি, দিদিরও নয়।
তুমি যা লিখেছ তার সঙ্গে নির্দিষ্ট যুক্তিতর্ক করা কঠিন, কারণ, তুমি তো আর যুক্তি-তথ্য দিয়ে আমার প্রতিপাদ্য বিষয়কে খণ্ডন করার চেষ্টা করনি, বরং আমার বক্তব্যকে 'পণ্ডশ্রম' প্রতিপন্ন করতে চেয়েছ। অর্থাৎ, সে প্রতিপাদ্যটি সত্যি না মিথ্যে তাতে আদৌ কিছুই যায় আসেনা। এতে আমার এমনিতে হতাশ হবারই কথা, তবে কিনা উল্টোদিকে আবার একটা আবছা তৃপ্তিও আছে --- অন্তত একে তুমি মিথ্যে বলনি। আমার মূল প্রতিপাদ্য ছিল --- পূর্বতন বামফ্রন্ট বিশেষত সিপিএম-এর ভোট বেশিটাই বিজেপিতে গেছে (এবং সেইহেতু বিজেপির ভোট বৃদ্ধির দায়টা মুলত তাদেরই), এবং দুর্নীতি ও ঔদ্ধত্য সংক্রান্ত বিস্তর অভিযোগ সত্ত্বেও তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোটারদের আদৌ কোনও ক্ষোভ তৈরি হয়নি (অর্থাৎ অ্যান্টি ইনকাম্বেন্সি ফ্যাক্টর এবার অনুপস্থিত ছিল) --- এই দুটো বক্তব্যই ভুল। কষ্ট করে এগুলোকে ভুল প্রমাণ করতে নেমে পড়েছিলাম, কারণ, তথাকথিত 'বিশুদ্ধ বাম' এবং লিবারেল মহলে সম্প্রতি কথাদুটো বড্ড বেশি শুনেছি। এবং, ফেসবুকে মূলত এঁরাই আমার চারপাশ ঘিরে আছেন বলেই সম্ভবত, একটু বেশি জোরে শুনেছি।
এই দুটো কথা কেন ভুল সে তো মূল লেখায় সবিস্তারে লিখেইছি, আর তুমিও তার বিরোধিতা করনি, অতএব সে নিয়ে আর কথা বলছি না। আপাতত এইটা বোঝাবার চেষ্টা করি, কেন এটা পণ্ডশ্রম বলে আমার মোটেই মনে হয়নি। সেটা করতে গেলে আগে এটা উল্লেখ করা দরকার, কেন তোমার কাছে এটা পণ্ডশ্রম মনে হয়েছে। যদ্দুর বুঝলাম, তোমার কাছে তার একমেবাদ্বিতীয়ম কারণ হল, সিপিএম তথা বামফ্রন্ট যেহেতু আদৌ 'বাম' নয়, অতএব 'বামভোট' কোথায় গেল এ প্রশ্ন অবান্তর --- পশ্চিমবঙ্গে বামভোট বলে কিছু নেই।
সিপিএম তথা বামফ্রন্ট কেন আদৌ 'বাম' নয় সে ব্যাপারে তোমার ব্যাখ্যা, বাম মানে প্রতিষ্ঠান-বিরোধী, আর সিপিএম তথা বামফ্রন্ট সাড়ে তিন দশক সরকারে থেকে ক্ষমতার অংশ হয়ে গেছে, পুলিশ দিয়ে কৃষক-শ্রমিক পিটিয়েছে, অতএব তারা বাম নয়। ক্ষমতার অংশ হয়ে যাওয়া এবং দীর্ঘদিন সে অবস্থায় থাকা বাম অবস্থানে চাপ সৃষ্টি করে তো বটেই, কিন্তু ওভাবে বললে তো যে কোনও বাম দল নির্বাচনে বেশি বেশি জিতলেই ডান হয়ে যাবে। তুমি অবশ্য বলতে পারো, ঠিক তাইই হবে এবং হয়ে থাকে, কিন্তু আমি যদ্দুর জানি, অ্যাকাডেমিক সমাজবিজ্ঞান চর্চায় বামের সংজ্ঞা ওভাবে দেওয়া হয়না। বাম বলা হয় তাদেরকেই যারা সামাজিক উচ্চনিচকে (সোশাল হায়ারার্কি --- গরিব-বড়লোক, উঁচুজাত-নিচুজাত, নারী-পুরুষ) প্রশ্ন করে এবং পরিবর্তনীয় মনে করে, আর ডান বলা হয় তাদেরকেই যারা সে উচ্চনিচকে ন্যায়সঙ্গত ও অপরিবর্তনীয় মনে করে। সেভাবে ভাবলে, বাম আর ডান বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য থাকা-না-থাকার ভিত্তিতে তৈরি দুটো স্থির বাইনারি বিন্দুমাত্র নয়, বরং এক রকমের সোশিও-পোলিটিক্যাল স্কেল-এর দুই প্রান্ত, যার মধ্যে বিভিন্ন দল বিভিন্ন বিন্দুতে পড়বে, প্রত্যেককেই অপরের সাপেক্ষে বেশি (বা কম) বাম (বা ডান) বলে সাব্যস্ত করা যাবে। কারুকে কারুকে মধ্যপন্থীও বলা চলবে বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতিতে।
কাজেই, সিপিএম বাম কি ডান --- আমার কাছে এটা আদৌ কোনও বৈধ সমাজবৈজ্ঞানিক প্রশ্নই নয়। আমার কাছে বৈধ প্রশ্নটা হচ্ছে, সিপিএম আর কংগ্রেস আর তৃণমূল আর বিজেপি কে কার তুলনায় বাম বা ডান।
কাজেই, 'বাম' আইডেন্টিটি সম্পর্কে তোমার ধারণা আমি প্রথমেই খারিজ করছি।
বাকি কথা পরে বলছি, এখন কমপিউটার থেকে উঠতে হবে। গোটা উত্তরটাই দেব, আপাতত তত্ত্বের গোড়াটা বেঁধে রাখলাম।
Ranjan Roy,
আপনার প্রশ্ন ও মন্তব্যগুলো বেশ 'নো ননসেন্স' টাইপের হয় বলে আমার বেশ ভাল লাগে। নজর রাখবেন, প্লিজ, কথা শেষ হয়নি।
খেলা হবে !!!
আমার তো চমৎকার লেগেছে এই বিশ্লেষণ। এতটা কাঙ্ক্ষিত নৈর্ব্যক্তিকতা নিয়ে সমাজ মাধ্যমের লেখায় কাউকে চট করে লিখতে দেখি না। সবাই প্রায়,চটজলদি সিদ্ধান্ত টানা,কাউকে ভিলেন সাজানো, এতেই ব্যতিব্যস্ত। সেখানে আপনি কাউকে এগজনারেট করলেন বলে নয় রাজনৈতিক বিশ্লেষণের নামে নিজেদের পলিটিকাল ভিসনের প্রোজেকশন চালানো, এই প্র্যাকটিসটাকেই চ্যালেঞ্জ জানালেন। কুর্ণিশ ও ধন্যবাদ।
সন্দীপন,
অনেক ধন্যবাদ। আরও আসছে, দেরি হলেও। একটু নজর রাখবেন প্লিজ।
অর্জুনদার প্রতি আমার আরও যা যা বলবার, সেগুলো বাকি আছে, ইতিমধ্যে সাইটে আসতে পারিনি। কিন্তু সেগুলো বলার আগে আর একটা ছোট্ট প্রসঙ্গ সেরে নিই। এই সাইটে এবং ফেসবুকে আমাকে অনেকেই বলেছেন, শুধুই ২০১৬ আর ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল তুলনা করলে আপাতদৃষ্টিতে যা মনে হয় তা ভুল, এবং ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল বিবেচনা করলেই নাকি তা খারিজ হয়ে গিয়ে প্রকৃত সত্যিটা বেরিয়ে পড়বে। ব্যাপারটা আমার খুব একটা সম্ভাব্য বলে মনে হয়নি, তবু মনটা খচখচ করছিল বলে সে তথ্যগুলোও একটু ঘেঁটে দেখলাম। কী পেলাম, এখানে বলি। প্রথমে দেখুন ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে ভোট শতাংশ বণ্টনের এক সামগ্রিক চিত্র। ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গে ফলাফলের তফাতগুলো কী রকম, সেটাও এখানে বলা আছে।
খেয়াল করে দেখুন, নিছক ভোট শতাংশের বিচারে ২০২১ সালের সঙ্গে এর মোটেই খুব বেশি তফাত নেই। সামান্য যেটুকু তফাত আছে, সেটুকু থাকাটাই স্বাভাবিক, কারণ, লোকসভা আর বিধানসভা নির্বাচনে ভোটারদের উদ্দেশ্য ও আচরণ পুরোপুরি এক রকম হবার কথা না। নিচের সারণিতে ২০১৯ আর ২০২১ পাশাপাশি পাবেন, এক নজরে।
দেখে বোঝা যাচ্ছে, তফাত উনিশ বিশ --- বিজেপির ভাগ বরং সামান্য কমেছে। অর্থাৎ, একাধিক স্তরের বিভিন্ন বিগত নির্বাচনগুলোতে তৃণমূল ও বিজেপির সমস্ত পরিসর দখল করে ফেলা এবং বামেদের অবিশ্বাস্য দ্রুতগতিতে প্রান্তিকীভবন --- এ প্রক্রিয়া হয়ত অবশেষে এক ভারসাম্যাবস্থার মুখোমুখি এসে দাঁড়াচ্ছে।
এবার তাহলে ভেবে দেখুন, ২০২১-এর ভোট ভাগাভাগি নিয়ে যে সমস্ত যুক্তি-বিশ্লেষণ উঠে এসেছিল, তার সবই ২০১৯-এর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হচ্ছে। অর্থাৎ, ঠিক ২০২১-এর মতই এখানে ভোট-শতাংশের মোদ্দা বণ্টন দেখে প্রাথমিকভাবে মনে হতে পারে, তৃণমূল যখন ভোট হারায়নি বরং সামান্য বাড়িয়েছে, তখন বিজেপি-র ভোটের অভাবনীয় বৃদ্ধিটুকু নিশ্চয়ই বামেদের হারানো ভোট থেকেই এসেছে। কিন্তু, ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের আসনগুলো আগে কোনটা কার দখলে ছিল সে তথ্য বিশ্লেষণ করে মূল লেখায় আমি দেখিয়েছিলাম, ঘটনা তা নয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের আসনগুলোর বণ্টন-ইতিহাস ঠিক একইভাবে বিশ্লেষণ করলে কোন সত্য বেরিয়ে আসবে? সেটা জানতে গেলে ২০১৯-এ বিজেপির জিতে নেওয়া ১৮-টি লোকসভা আসনের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাসটা এক নজরে দেখতে পাওয়া দরকার, সারণির আকারে। নিচে দেখুন।
একই সঙ্গে এক নজরে দেখে নিন, ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে সিপিএম যে দুটি আসন জিতেছিল, ২০১৯ সালে তাদের গতি কি দাঁড়াল। যদিও সংখ্যার স্বল্পতার জন্য এ থেকে টানা সিদ্ধান্ত খুব জোরাল হবে না, তবু আবছা ইঙ্গিত কিছু তো অন্তত পাওয়া যেতেই পারে।
তাহলে, বিজেপি ২০১৯-এ যে ১৮-টি আসন জিতেছে সেগুলো কোন কোন দলের কাছ থেকে তাদের হাতে এসেছে, তার বণ্টনটা এবার দেখা যাক এক নজরে। পরম-সংখ্যাগুলোর পাশেই ব্র্যাকেটে থাকছে শতাংশ-হিসেব।
দেখুন, এর মধ্যে দুটি (এগারো শতাংশ) আগে থেকেই বিজেপির হাতে ছিল। বাকি প্রায় চুরাশি শতাংশই এসেছে অ-বাম দল থেকে, সাড়ে পাঁচ শতাংশ বাম দল থেকে। অর্থাৎ, এবারে বিজেপির নতুন করে 'গেইন' বা লাভ হয়েছে ১৮-২=১৬ টি আসন। যদি শতাংশগুলো তার সাপেক্ষে কষা যায়, হিসেবটা তবে ঠিক কী রকম দাঁড়াবে? সেটা রইল নিচের সারণিতে।
অর্থাৎ, ২০১৯-এ বিজেপি যা নতুন করে লাভ করছে, তার ৯৪ (৮৮+৬) শতাংশ দায় অ-বাম দলের, আর বামেদের মাত্রই ৬ শতাংশ!
তার মানে হচ্ছে, ২০২১-এ যে সিদ্ধান্ত যে যে কারণে প্রযোজ্য, ২০১৯-এও ঠিক সেই একই সিদ্ধান্তগুলো ঠিক সেই সেই কারণেই প্রযোজ্য।
কী বুঝলেন, মাননীয় বন্ধুগণ?
যা বুঝলাম, তা হল সিপিএমের দুটি সিট ছিল ২০১৪তে, ২০১৯এ তার ৫০% বিজেপিতে চলে যায়। তৃণমূলের ২০১৪-র ৩৪টার মধ্যে ২০১৯-এ ১৪টা (৪১%) বিজেপিতে যায়।
সংখ্যাতত্ত্বের খেলার মজা এটাই। ধরা যাক আগে একটা সিটে তৃণমূল ৪০, বাম ২৫ ও রাম ১৭ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। পরেরবার তৃণমূল ৪০-ই পেল, বাম আর রাম মিলে গেল। তাহলেও দেখা যাবে তৃণমূলের সিট বিজেপিতে গেল। সুতরাং সিটের হিসেব অনুযায়ী বাম-রাম মিলের তত্ত্ব ভুল দেখিয়ে দেওয়া যাবে।
না, সংখ্যাতত্ত্ব নিয়ে যা খুশি খেলা করা যায় না, গেলে ওটার আর কোনও মানেই থাকত না। সিপিএম-এর ৫০% আর তৃণমূলের ৪১% --- মোট সংখ্যার স্বল্পতার জন্য এখানে এ দুটোর তফাত খুব তাৎপর্যপূর্ণ নয়। তৃণমূলের আসন আর দু-তিনটে বেশি বিজেপিতে গেলেই শতাংশ ৫০% হয়ে যেত, আর সিপিএম-এর ক্ষেত্রে মাত্র একটা ইধার-উধার হলেই শতাংশ হয় ১০০% হয়ে যেত না হয় পরম শূন্যে নেমে আসত। কাজেই, এখানে ও দুটোর অর্থ প্রায় সমান সমান। তাতে তো এটাই প্রমাণ হয় যে, প্রবল সাম্প্রদায়িক ঝড়ে সব কিসিমের ভোটই কমবেশি গেরুয়া শিবিরে উড়ে গিয়ে পড়েছে, 'বাম ভোট রাম' হবার তত্ত্বের আলাদা কোনও বিশেষ তাৎপর্য নেই। বরং এটাই পরিষ্কার যে, যেহেতু ভোটের সিংভাগই তৃণমূলের আর সিপিএম ইতিমধ্যেই প্রান্তিক, অতএব ওই ৫০% অনুপাতের অর্থ হচ্ছে, বিজেপির বঙ্গজয় মূলত সম্ভব হয়েছে তৃণমূল সমর্থকদের ভোটেই।
প্রত্যেক আসনের ভেতরকার ভোট-বণ্টনের বিস্তারিত হিসেবটা সরাসরি হাজির করতে পারলে যে আরও সুনিশ্চিত সিদ্ধান্তে আসা যেত তাতে সন্দেহ নেই। তার জন্য শুধু বিজয়ী আর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীর ভোটটুকু জানলে হবে না, তৃতীয় চতুর্থ এদের ভোটগুলোও জানা দরকার। যদি কেউ সে পরিশ্রমসাধ্য কাজটি করতে পারেন, করুন না। তাতে সকলেরই জ্ঞানবৃদ্ধি হবে। কিন্তু এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে যদি বলেন, বিজেপির ষোলখানি নতুন আসনের মধ্যে পনেরোটিই অ-বাম উৎস থেকে আসার তথ্য থেকে কোনও ইঙ্গিতই মিলছে না, একমত হওয়া কঠিন।
অর্জুনদার বক্তব্যের উত্তর দেওয়া বাকি আছে, ওটুকু আজ বা কাল। ওটা ছাড়া আর বিশেষ কোনও কথা বলব না, যদি একান্ত দরকার না পড়ে। অন্যদের মতামত সুস্বাগতম।
ঠিকই, সিটের হিসেব দিয়ে ভোট শতাংশের পাল্লাবদল মাপতে যাওয়ার মানে নেই। যেহেতু তৃণমূলের ভোট শতাংশ কমেনি, বিজেপির বাড়তি ভোটটা আসতে হবে যাদের ভোট কমেছে তাদের দিক থেকেই। এটাকে সিটের হিসেব দিয়ে ধামাচাপা দেওয়া যাবে না। যাদের দুটি আসন,তারা কোনভাবেই দুটির বেশি আসন বিজেপিকে উপহার দিতে পারবে না কাজেই সিটের হিসেব দিয়ে বাকি সব আসনের দায় অন্যদের ঘাড়ে চাপানো সহজ। ২০১৯ এ যে বাড়তি ২২ শতাংশ ভোট বিজেপিতে এল, সেটা তৃণমূল থেকে এসেছে আর বাম-কং-এর ২১% প্লাস আরো কিছু ভোট তৃণমূলে চলে গেছে এই ডিফেন্স যুক্তিহীন।অন্ততঃ তার সমর্থনে কোন তথ্য এখানে পেশ করা হয়নি।
দেবাশিসবাবুর কাছে একটা সিট ধরে বুঝতে চাই। বাঁকুড়াতে ২০১৪তে তৃণমূল জিতেছিল, ২০১৯ বিজেপি। বিজেপির ভোট বেড়েছিল প্রায় ২৯%, তৃণমূলের কমেছিল আড়াই পার্সেন্ট। সিপিএম আর কংগ্রেস দুদলেরই কমেছিল ২৪% করে। আপনার হিসেবমত সিটটা তৃণমূল থেকে বিজেপিতে গেছে মানে তৃণমূলের ভোট বিজেপিতে চলে গেছে। এখানে কি মনে হয় তৃণমূলের ২৯% ভোট বিজেপিতে গেছে আর সিপিএম কংগ্রেস থেকে ২৬-২৭% ভোট তৃণমূলে এসেছে?
বা ধরুন মেদিনীপুর। ২০১৪-২০১৯এ তৃণমূলের ভোট কমেছে ৪%, বিজেপির বেড়েছে ৩৪%, সিপিএমের কমেছে ২৭%, কংগ্রেসের ২%। এখানেও কি তৃণমূলের ৩৪% ভোট বিজেপিতে গেছে আর কং-সিপিএমের ভোটগুলো তৃণমূলে চলে এসেছে?
এগজ্যাক্টলি এই কথাটাই প্রথমদিন বলার চেষ্টা করেছিলাম। এরকম গাদা গাদা সীট দেখতে পাওয়া যাবে, যেখানে ২০-৩০% বাম/কংগ্রেস ভোট কমেছে (২০১৯এ) এবং ঠিক সম পরিমাণ % বেড়েছে বিজেপির। তৃণমূলের প্রায় হরে দরে এক আছে বা ২-৩% এদিকওদিক। এটা যদি কেবল মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় ঘটত, তাহলে এই ব্যাখ্যাটা খাটত যে মুসলিম ভোট বাম/কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে গেছে আর তৃণমূলের হিন্দু ভোট বিজেপিতে গেছে। কিন্তু বহু হিন্দুপ্রধান সীটেও এরকম বাল্ক ট্রান্সফার ঘটেছে, যেটা আদৌ কাকতালীয় নয়, হতে পারে না। সময় পাচ্ছি না বলে সীট ধরে ধরে এই হিসেবটা দেখাতে পারছি না। বিশ্লেষক নিজেই এটা দেখে নিতে পারেন। সবই পাবলিকলি এভেলেবল। ২০১৯ এর লোকসভাকে বিধানসভা ধরে ম্যাপ করতে হবে শুধু।