এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  শিক্ষা

  • সরকারি শিক্ষাব্যবস্থার অন্তর্জলি যাত্রা

    সীমান্ত গুহঠাকুরতা
    আলোচনা | শিক্ষা | ০৫ এপ্রিল ২০২৫ | ১৩০০ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)


  • ১.

    ‘তুমি যুদ্ধার্থ উত্থিত হও; শত্রু জয় করিয়া যশঃ লাভ কর, নিষ্কন্টক রাজ্য ভোগ কর । হে অর্জুন, আমি ইহাদিগকে পূর্বেই নিহত করিয়াছি; তুমি এখন নিমিত্ত-মাত্র হও।'
    --- শ্রীমদ্ভাগবতগীতা, একাদশ অধ্যায়



    বলুন দেখি, পশ্চিমবঙ্গে এই মুহূর্তে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা দুটো কী কী? দেখুন, সেই বিরানব্বুই সালে মনমোহন সিংজী লাইসেন্স রাজের অবসান ঘটিয়ে সর্বত্র দেশী-বিদেশী বিনিয়োগের দরজা খুলে দিয়েছিলেন। তারপর ভাগীরথির বুক দিয়ে কত জল বয়ে গেল, দেশী-বিদেশী শিল্পপতিরা কত চেষ্টাই করলেন, কিন্তু এ পোড়া রাজ্যে একটাও বড় মাপের কারখানা বানানো গেল না। বুদ্ধবাবুও পারেননি, মমতা ব্যানার্জীও পারলেন না। প্রতি বছর প্রচুর ঢাক-ঢোল পিটিয়ে শিল্প-সম্মেলন হয়, হাজার-কোটি লক্ষ-কোটি বিনিয়োগের গল্প শোনা যায়, তারপর সময়কালে দেখা যায় সব ঢুঁ ঢুঁ। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের তো বসে থাকলে চলে না। নাই বা হল শিল্প, বিরাট একটা বাজার তো রয়েছে এ রাজ্যে। মোটামুটি সম্পন্ন একটা মধ্যবিত্ত শ্রেণির সংখ্যা সব সময়ই এ রাজ্যে বিপুল। এরা মূলত চাকুরিজীবী, জেনেটিক্যালি অসম্ভব ভীতু, আর্থিক এবং সামাজিক নিরাপত্তা প্রত্যাশী, কোনোরকম ঝুঁকি নিতে চান না এবং খুব বেশী ভোগবাদী জীবনেও অভ্যস্থ নন। এই বাজারে যদি বিনিয়োগের জন্য সমীক্ষা চালানো হয়, যেকোনো সময় দেখা যাবে দুটি পণ্য এখানে সর্বাধিক পরিমাণ বিক্রির সম্ভাবনা --- – শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য।

    যেকোনো ‘প্রোডাক্ট’ বিক্রি করার তিনটে মূল কৌশল হল – কৃত্রিমভাবে চাহিদা তৈরি করা, বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্রেতাকে প্রলুব্ধ করা এবং লাস্ট বাট নট দ্য লিস্ট --- বড় কোনো প্রতিযোগী ইতিমধ্যেই বাজারে থাকলে ছলে-বলে-কৌশলে তাকে সরিয়ে দেওয়া। ওহো, বলতে ভুলেছি আরেকটা জরুরি কথা – বড় বা ছোট যেকোনো ব্যবসাই হোক না কেন, শিল্পপতিদের সবার আগে চুক্তি করতে হয় শাসকের সঙ্গে। শাসক -- তা সে লাল, হলুদ, সবুজ যে রঙেরই হোক না কেন --- বণিকের বাণিজ্যে সহায়তা না করলে কোনোদিন গদিতে টিকতে পারেননি। পারেন না। মীরজাফর তো নিমিত্তমাত্র, জেনে রাখুন, ইংরেজরা যদি উমিচাঁদ বা জগৎ শেঠকে সময়মত হাতে না আনতে পারত, বাংলার সিংহাসন থেকে সিরাজকে কোনোদিনই সরানো যেত না। উল্টোদিকে এটাও সত্য যে সিরাজ তাঁদের যথেষ্ট ব্যবসার সুযোগ দিতে পারছিলে না বলেই তাঁরা ‘বিরোধীপক্ষে’ যোগ দিয়েছিলেন।



    ২.

    একটা-দুটো সহজ কথা
    বলব ভাবি চোখের আড়ে
    জৌলুসে তা ঝলসে ওঠে
    বিজ্ঞাপনে রংবাহারে
    --- মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে (শঙ্খ ঘোষ)



    থিওরি ক্লাস শেষ, এবার প্রাকটিক্যাল শুরু। শেষ কৌশলটা দিয়েই শুরু করি। বলুন দেখি, শিক্ষা বা স্বাস্থ্যে বিনিয়োগকারীর এ রাজ্যে সবথেকে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী কে বা কারা? খেয়াল করে দেখেছেন কি, মোটামুটি বিগত মোটামুটি দশ বছর ধরে এ রাজ্যে বারবার কোন দুটো ক্ষেত্র খবরের শিরোনামে আসছে? আজ্ঞে হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য। ধর্মটাও আসে, তবে সেটা গৌণ, স্টপ গ্যাপে ক্লাসে আসা শিক্ষকের মত। পরপর মনে করুন -- শিক্ষামন্ত্রী গ্রেপ্তার ও তার বাড়িতে নোটের বাণ্ডিল উদ্ধার, হাইকোর্টের নির্দেশে ছাব্বিশ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিল, সেটা থিতোতেই আর জি কর কাণ্ড, সেটা একটু সামলাতে না সামলাতেই মেদিনীপুর মেডিক্যালে স্যালাইন কেলেঙ্কারি, আবার তার পরপরই সুপ্রীম কোর্টে রায়। এর ফাঁকে ফাঁকে আসছে দীর্ঘ দুমাস করে গরমের ছুটি, মাধ্যমিকের প্রশ্নপ্ত্র ফাঁস, উৎসশ্রীর কল্যাণে গ্রামের স্কুলগুলোতে শিক্ষকের হাহাকার নিয়ে চর্চা, গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রসূতির মৃত্যু, সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলায় রোগীর মৃত্যু এবং ভাঙচুর, জাল ও মেয়াদ ফুরনো ওষুধের চক্র…শিক্ষা-স্বাস্থ্য-শিক্ষা-স্বাস্থ্য-শিক্ষা-স্বাস্থ্য…।

    এ হল সেই প্রতিদ্বন্দ্বীর মাজা ভেঙে দেবার নীতি। এ রাজ্যে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের বাজার ধরার সবচেয়ে বড় দুই বাধা হল সরকারী স্কুল এবং সরকারী হাসপাতাল। এখনও এখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ ছাত্রছাত্রী পড়তে যায় সরকারী স্কুলে এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ চিকিৎসা পাবার জন্য নির্ভর করে সরকারী হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ওপর। ভাল ব্যাটসম্যান যেমন পরপর চার-ছয় মেরে বোলারের কাঁধ ঝুলিয়ে দেয়, তার আত্মবিশ্বাসের ভিত ধ্বসিয়ে দেয়, ঠিক তেমনিভাবে এই দুটি ক্ষেত্রে একেবারে চালিয়ে খেলার নীতি নিয়েছে এই লাইনের ‘বেওসাদার’রা। আর দোসর সুগ্রীব, থুড়ি শাসক তো আছেই। তাদের লাভ দ্বিবিধ --- এক. শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের বোঝাটা মাথার ওপর থেকে যতটা সম্ভব হালকা করা এবং দুই. ব্যবসাদারদের লাভের বখরা।

    খেয়াল করে দেখেছেন কি, এই ডামাডোলের বাজারে, সুপ্রীম কোর্টের রায় নিয়ে এরকম একটা চরম উত্তপ্ত পরিস্থিতে সাংবাদিক সম্মেলন করতে বসেও মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী টুক করে গরমের ছুটি বাড়িয়ে দেবার ঘোষণাটি করে দিতে ভোলেন না। এখনও সেরকম গরম আদৌ পড়েনি এবং দুদিন আগেই মধ্যশিক্ষা পর্ষদের চেয়ারম্যান এ বছর অতিরিক্ত গরমের ছুটি দেবার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন। তাতে কী? শাসককে ব্যবহার করেই শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে অন্তর্ঘাতটা চালিয়ে যেতেই হবে। ঠিক যেমন কোভিড পর্বে সবচেয়ে বেশিদিন স্কুল বন্ধ ছিল আমাদের রাজ্যে, ঠিক যেমন স্বাস্থ্যসাথী বিমার ব্যবস্থা করে অন্তত এক তৃতীয়াংশ রুগীকে বেসরকারী হাসপাতালে ঠেলে দেওয়া গেছে। কমে গেছে পরিকাঠামো ও আনুষাঙ্গিক অনেক খরচ। লাভ বেড়েছে বেসরকারী হাসপাতালের।

    খাস কলকাতার শিক্ষার বাজারটা মোটামুটি বাম আমলেই চলে গিয়েছিল এই সব বিনিয়োগকারীদের হাতে। তৃণমূল আমলে তা আড়ে-বহরে বেড়েছে অনেক। ধরে নিয়েছে মফস্বলের ছোট-বড় শহরগুলোকেও। দুর্গাপুর, বহরমপুর বা জলপাইগুড়ির মত বড় শহর ছেড়ে এখন তা বারাকপুর, আমতা, উলুবেড়িয়া, মগরা বা আলিপুরদুয়ারের মত ছোট টাউনেও জাল ছড়াচ্ছে। একটু নজর করলেই দেখা যাবে, আজকাল এসব জায়গাতেও অজস্র সেন্ট নামধারী, ওয়ার্ল্ড স্কুল নামধারী, পাবলিক স্কুল নামধারী অজস্র স্কুল গজিয়ে উঠছে। আর তৈরি হচ্ছে অসংখ্য বেসরকারী ইঞ্জিনিয়ারিং আর মেডিকেল কলেজ।

    কিন্তু শুধু কারখানা বানালেই তো চলবে না, উৎপন্ন দ্রব্যটিকে তো মানুষের হাতে গছাতে হবে। তার জন্য চাই বিজ্ঞাপন। না, এসব স্কুল-কলেজের বিজ্ঞাপন সেভাবে খবরের কাগজে বা টিভিতে দেওয়া হয় না। এদের বিজ্ঞাপন-কৌশল কিঞ্চিৎ অন্যরকম – আপনার চোখের সামনে দিয়ে এই সবপড়ুয়ারা দামী ও সুদৃশ্য ইউনিফর্ম পরে, গলায় টাই আর আইডেন্টটিটি কার্ড ঝুলিয়ে, ঝাঁ চকচকে হলুদ রঙের বাসের চেপে স্কুলে যায়। দেখে, ক্ষমতাহীনের চোখ টনটন করে ওঠে। তাঁরাও মরিয়া হয়ে ওঠেন নিজের সন্তানকে এরকম কোনো স্কুলে পড়ানোর জন্য। এদের পাশে বিবর্ণ মলিন পোশাক আর জুতোর বদলে হাওয়াই চটি পরা সরকারী স্কুলের বাচ্চাদের রাস্তার ধার দিয়ে হেটে যাবার ছবি সেই সে বাসনাকে আরও উদ্গ্র করে তোলে। এই তো সেই বিজ্ঞাপনের মহিমা, যা আপনাকে লেবুর জল ছেড়ে ঠাণ্ডা-পানীয় কিনতে বাধ্য করে।

    এ প্রসঙ্গেই একটা মজার গল্প না বলে পারছি না। লোকাল ট্রেনের সহযাত্রী একদল প্রাইমারি স্কুলের মাস্টারমশাই আর দিদিমণির মুখে শুনছিলাম, ইদানীং প্রতিবছরই নাকি ছাত্রসংখ্যা মোটামুটি দশ শতাংশ করে কমে যাচ্চে। ওঁরা যেসব স্কুলে পড়ান, সেগুলো প্রায় সবই অনেকটা ভিতরের দিকে, একেবারেই প্রত্যন্ত গ্রামে। সেখানে তো বেসরকারী স্কুলের প্রতাপ নেই বলেই জানতাম। তাহলে? প্রশ্ন শুনে ওঁরা হাসলেন, বড়ই ম্লান, বড়ই বিষন্ন সে হাসি। বললেন, সেদিন আর নেই দাদা। যত প্রত্যন্ত গ্রামই হোক না কেন, সর্বত্রই এখন ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠছে অজস্র নার্সারী আর প্রাইমারি স্কুল। আর এদের ব্যবসার প্রধান ভরসা কী জানেন? ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা আসে সরাসরি মায়েদের হাতে, আরে মেয়েদের সাংসারিক বুদ্ধি যে পুরুষের থেকে অনেক বেশি তা ইতিমধ্যেই একাধিক নোবেলজয়ী গবেষণায় প্রমাণিত। কাজেই এতে আশ্চর্যের কিছুই নেই যে, মহিলারা ওই টাকার একটা অংশ ছেলে বা মেয়ের পড়াশুনার জন্য ব্যয় করতে চাইবেন। এটা তাদের কাছে খুব বড় একটা স্বপ্নকে সফল করার জন্য জীবনপণ লড়াই। সচরাচর এই সব ছোট ছোট স্কুলগুলোর বেতন হয় মাসে তিন-চারশো টাকার মত। বছরের শুরুতে ভর্তি আর বইপত্র বাবদ হাজার দুয়েক টাকা নেওয়া হয়। ব্যস। এটুকু মহিলারা ইদানীং স্বচ্ছন্দেই দিতে পারছেন। খোঁজ নিলে দেখবেন, এসব স্কুলে কিন্তু শিক্ষার পরিকাঠামো বলতে প্রায় কিছুই থাকে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্কুলবাড়িটিও কোনো গৃহস্থবাড়ি ভাড়া নিয়ে তৈরি হয়। পর্যাপ্ত আলো হাওয়া, উপযুক্ত শিখন সামগ্রী বা সঠিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক – কিছুই এদের থাকে না। কিন্তু সেই অভাবগুলো এরা ঢেকে দেয় ঝকঝকে ইউনিফর্ম, ইংরেজি বোলচাল ইত্যাদি বহিরঙ্গের জাঁকজমক দিয়ে। গ্রামগঞ্জের অশিক্ষিত বা স্বল্পশিক্ষিত অভিভাবকেরা তাতেই বেজায় খুশি। এটা আলাদা কথা যে আমার সেই সহযাত্রীরা যে সরকারী স্কুলগুলোতে পড়ান, সেখানে ওইরকম চাকচিক্য বা পরিকাঠামো কিছুই থাকে না। এ রাজ্যের সরকারী স্কুলগুলোকে এক অদ্ভুত ‘নেই-রাজ্য’ বানিয়ে রাখা হয়েছে অনেকদিন ধরেই। ইদানীং তো কম্পোজিট গ্রান্টের টাকাটুকুও প্রায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

    এবার বোঝা যাচ্ছে, কত শাসক-বানিয়ার যৌথ উদ্যোগে বিচিত্র পদ্ধতিতে ধ্বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে সরকারী শিক্ষাব্যবস্থাকে?

    পূর্বোক্ত বিভিন্ন শিল্পপতি গোষ্ঠীর সেন্ট বা পাবলিক নামধারী বড় বড় স্কুলগুলো যদি হয় বৃহৎ শিল্প, তবে ওইসব ছোটছোট নার্সারী স্কুলগুলোকে বলা যেতে পারে অনুসারী শিল্প। ঠিক যেমনটা দেখা যায় স্বাস্থ্যেও। আপনার এলাকায় সম্প্রতি তৈরি হওয়া ছোটখাটো নার্সিং হোম আর প্যাথোলজি ল্যাবগুলোর কথা মনে করুন, দিব্য ব্যাপারটা বুঝতে পারবেন।



    ৩.

    আমি জানি এই ধ্বংসের দায়ভাগে
    আমরা দুজনে সমান অংশীদার
    অপরে পাওনা আদায় করেছে আগে
    আমাদের পরে দেনা শোধবার ভার
    ---- উটপাখি (সুধীন্দ্রনাথ দত্ত)



    মজার ব্যাপার হল, এই বিরাট বাণিজ্যচক্রে সবার লভ্যাংশ আছে। সব্বার।

    যত স্ক্যাম, যত দুর্নীতি, শাসকের তত পকেট ভারি। সেই শাসক কখনো ‘বর্তমানের’, কখনো বা ‘ভবিষ্যতের’’। কারণ ব্যবসাদারদের সবার আগে যুগের হাওয়া বুঝতে হয় এবং সেই মত গদীয়ান সরকারপক্ষকে ছেড়ে সম্ভাবনাময় বিরোধী পক্ষের হাত ধরে নিতে হয়। এটুকু দূরদৃষ্টি ছাড়া ব্যবসা হয় না। অন্যদিকে বিরোধী পক্ষ সব সময় চায় গরম গরম ইস্যু। একটা আর জি কর কাণ্ড অথবা আদালতের এই রকম একটা ভয়ঙ্কর রায় মানেই সরকার ফেলে দেওয়ার এক-একটা সুবর্ণ সুযোগ। ছাব্বিশ হাজার শিক্ষকের এই পুরো প্যানেলটাই বাতিল হোক – এটা এ রাজ্যের যে দুজন লোক সবচেয়ে আন্তরিকভাবে চেয়েছিলেন এবং সেই মর্মে ক্রমাগত আদালত এবং আদালতের বাইরে সওয়াল করে গেছেন তারা হলেন বিকাশ ভট্টাচার্য এবং শুভেন্দু অধিকারী।

    তবে কিনা, ওই দুজনও পলিটিক্যাল ডিভিডেন্টের ছোটখাটো অংশীদার। সবার আড়ালে এ রাজ্যের শাসনক্ষমতা দখলের জন্য সেই ব্যবসাদারদেরই দেওয়া টাকার থলি নিয়ে বসে আছেন কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। তার জন্য – রামমন্দির সাক্ষী -- প্রয়োজনমত একটা-দুটো আদালতের রায় নিজের পক্ষে টেনে নিতে তাদের খুব একটা বিবেকে বাঁধে না। বিচারবিভাগও আমাদের গঙ্গাজলে ধোয়া তুলসীপাতা নেই আর। সুপ্রীম কোর্টের মহামান্য বিচারপতিদের বাড়ি থেকেও আজকাল বান্ডিল বান্ডিল নোট পাওয়া যাচ্ছে, দুমদাম চাকরি ছেড়ে দিয়ে তাঁরা লোকসভার ভোটে দাঁড়িয়ে পড়ছেন, জিতেও যাচ্ছেন পটাপট। অবসরের পর তাদের অনেকেই আবার রাজ্যসভার সদস্যপদও পেয়ে যাচ্চেন। তেমন তেমন একটা-দুটো ‘রায়দানের’ পর তাদের অনেককেই কোটি টাকা দামের বিদেশী গাড়ি চড়ে ঘুরে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে। তাই সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে লঙ্ঘন করে এমন রায়-টায়ও আজকাল হামেশাই বেরিয়ে যাচ্ছে তাঁদের কলমের ডগা দিয়ে। অন্যদিকে মিডিয়াও এ খেলার বাইরে নেই। লাভের গুড়ের একটা বড় অংশ যাচ্ছে তাদের ঘরেও। এরকম এক-একটা ‘ব্রেকিং নিউজ’ মানেই টি আর পি-র গ্রাফ উর্ধ্বগামী। মানে ব্যবসাদারদের আরও বিজ্ঞাপন দেবার সুযোগ, আরও লাভ। ওই যে বলে না, প্রবলেম ইজ দ্য সলিউশন, সলিউশন ইজ দ্য প্রবলেম – এ হল সেই কেস।

    অলস অকর্মণ্য সারাদিন ঘাড় গুঁজে মোবাইলে আঙুল চালানো নিধিরাম সর্দারদের দলও ভারি খুশি, বেশ কয়েকদিন ধরে রগড়াবার মত ইস্যু তারা পেয়ে গেছেন। তারা ওটুকুতেই খুশি। বড় বড় ন্যারেটিভ নামাবার মত ‘বিতর্কিত বিষয়’ ছাড়া তাদের আর কিছুই চাই না। পরোক্ষভাবে লভ্যাংশ পান সরকারী স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও। মুখে যাই বলুন, তাদের বেশিরভাগই অবচেতনে চান ছাত্রসংখ্যা কমুক, চাপ কমুক কাজের। যত কম খেটে যত বেশি মাইনে পাওয়া যায় ততই মঙ্গল। (দাঁড়ান দাঁড়ান, আগেই চেঁচাবেন না স্যর, একবারটি ফেসবুকে শিক্ষকদের পেজগুলোতে ঘুরে আসুন। দেখবেন ইতিমধ্যেই গরমের ছুটির দাবিতে কী রকম হাউমাউ শুরু করেছেন আমাদের কর্মবীর শিক্ষক সমাজ।) ঠিক এভাবেই ভিতরের লোকগুলোকে ফাঁকিবাজির নাড়ু খাইয়ে কিছুদিন আগেই লাটে তুলে দেওয়া হয়েছিল সরকারী টেলিকম সংস্থাটিকে, মনে পড়ে সেকথা? পশ্চিমবঙ্গের সরকারী শিক্ষকসমাজ হল সেই কালিদাসের দল, যারা নিজেদের জীবিকার গোড়ায় নিজেরাই প্রতিনিয়ত কোপ মেরে চলেছেন। যেকোনো সরকারী স্কুলের টিচার্স রুমে ঢুকে দেখুন, দেখবেন একদল লোক নিজেদের মধ্যে অনেকগুলো দল বানিয়ে সারাদিন কোন্দল চালাচ্ছেন। এই ডামাডোলে লাভবান ছাত্রসমাজও। যত নামছে সরকারী শিক্ষার মান, তত বাড়ছে পাশের হার, বাড়ছে নাম্বারে ভর্তুকি, বাড়ছে বিলকুল পড়াশুনা না করেও ‘শিক্ষিত’ তকমা পেয়ে যাবার সুযোগ। তাদের আর এর থেকে বেশি চাহিদা কী-ই বা ছিল?
    গতকাল সান্ধ্য আড্ডায় জনৈক বন্ধু বিষণ্ণ মুখে জানতে চাইলেন, ‘হ্যাঁরে, কী মনে হয়, এই ছাব্বিশ হাজার শিক্ষক চাকরি ফিরে পাবেন?’ ম্লান হেসে বললাম, ‘জানি না রে। কিন্তু এটুকু নিশ্চিত জানি যে এর ফলে আমাদের সরকারী শিক্ষা-ব্যবস্থা যে মর্যাদা হারাল, তা আর কোনোদিন ফিরে পাবে না’।

    অতএব হে কলমচি অর্জুন, সংবরণ করো তোমার কলম। আর কাকেই বা আহত করবে তুমি ওই কলমের ঘায়ে? সবাই যে যার তালে আছে, সবাই যে যার লাভটুকু চুপচাপ পকেটস্থ করছে, এই বিরাট খেলায় তুমিও নিমিত্ত মাত্র, যাকে যার মারবার তাকে তিনি মেরেই রেখেছেন। বিগত পনেরো বছরে উক্ত বেওসারদার এবং এ রাজ্যের বর্তমান সরকার পরস্পরকে চিবিয়ে চুষে একেবারে ছিবড়ে করে ফেলেছে। শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের ব্যবসা দুটো প্রায় স্যাচুরেশন লেভেলে পৌঁছে গেছে। এখন অন্য কোনো বড় ব্যবসা বা শিল্প দাঁড় না করালেই নয়। কিন্তু মাননীয়া যতদিন গদিতে আছেন, তা আর হবার নয়, তাও তাঁরা দিব্য্ বুঝে গেছহেন। এ রাজ্যে বিনিয়োগ মানে এখন দাঁড়িয়েছে কিছু হাঁ হয়ে থাকা মুখের গর্তে ক্রমাগত টাকা ঢেলে চলা। শুধু দাও আর দাও। ঘরে ফেরত আসে না প্রায় কিছুই। অতএব এবার গুজরাটি ‘মোটাভাই’-কে একটা সুযোগ দিয়ে দেখা যাক। তাই খেলা ঘুরছে, তাই ফাস্ট ছেড়ে এখন শুরু হয়েছে স্পিন বোলিং। আসন্ন ছাব্বিশে পলাশীর দ্বিতীয় যুদ্ধ।



    ৪.

    আজকে রাতে চামচিকে আর পেঁচারা
    আসবে সবাই মরবে ইঁদুর বেচারা।
    --- হ-য-ব-র-ল (সুকুমার রায়)



    এ রাজ্যের সরকারী স্বাস্থ্য আর শিক্ষা ব্যবস্থার অন্তর্জলী যাত্রা শুরু হয়ে গেছে, এখন শুধু মুখে গঙ্গাজলটুকু পড়ার অপেক্ষা



    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ০৫ এপ্রিল ২০২৫ | ১৩০০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • PRABIRJIT SARKAR | ০৯ এপ্রিল ২০২৫ ১০:৪৫542225
  • সরকারি সাহায্য প্রাপ্ত (এখন সরকার শিক্ষক দের মাইনে পেনশন দেয়) স্কুল স্কুল সার্ভিস কমিশন থেকে শিক্ষক পায়। বাম আমলে স্কুল কলেজ ভিত্তিক নিয়োগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরকম কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগ শুরু হয়। আমি শুনেছি খবরের কাগজে ও পড়েছি নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের লাখ খানেক ডোনেশন দিতে হত। সৎ ম্যানেজমেন্ট হলে এই টাকা স্কুলের বাড়ি বা লাইব্রেরি র উন্নতিতে ব্যয় হত। অন্যথায় প্রভাবশালীর পকেটে যেত। এদের বক্তব্য সরকার মাইনে দিত কিন্তু অন্য উন্নয়ন বাবদ টাকা সহজে দিত না। পড়ুয়াদের ফ্রি পড়তে দিলেও বেশ কিছু টাকা ডেভেলপমেন্ট ফি বাবদ ও এই কারণে আদায় করত।
  • syandi | 2401:4900:88ad:3b68:69e0:c0d8:7325:***:*** | ১০ এপ্রিল ২০২৫ ০১:৫৪542234
  • গভর্নমেন্ট এইডেড স্কুলে SSC চালু হওয়ার আগে ম্যানেজিং কমিটি অনেকক্ষেত্রেই টাকাপয়সা নিত ক্যাণ্ডিডেটের থেকে। আবার অনেকক্ষেত্রে টাকাপয়সার কোন ডিল না হয়ে একটু অন্যরকম ডিল হত। যেরকম ম্যানেজিং কমিটির কোন হনু যিনি আবার তৎকালীন শাসক পার্টির লিডার তাঁর অসুন্দর মেয়ে বা ভাইঝিকে বিয়ে করতে হত।
  • π | ১০ এপ্রিল ২০২৫ ১০:০১542244
  • "কলকাতায় শহরাঞ্চলে,সহজে যাতায়াত করা যায় এইসব জায়গায়,যেখানে ছাত্র সরকারি স্কুলে কম আসে  এবং জীবনযাত্রা লোভপ্রদ,সেখানে এই গড় খুব বেশি ভালো,আর জিলার অভ্যন্তরে,গ্রামাঞ্চলে খুব খারাপ-"
     
    একদম একই জিনিস দেখি স্বাস্থ্যকর্মীদের ক্ষেত্রেও। অন্য রাজ্যের অভিজ্ঞতা বলছি, বাংলাতেও হয়তো তাই।
     
    কিন্তু পড়ুয়া সং্খ্যা বছর বছর কমছে কেন?  কোভিড এফেক্ট?  
  • সোমনাথ | 203.***.*** | ১০ এপ্রিল ২০২৫ ১২:২৫542252
  • ঐ একটা দুটো শোনার কথার ভিত্তিতে সেন্ট্রালাইজড এম সি কিউ চালু করে বৃহত্তর দুর্নীতির রাস্তা খোলা হল- যা প্যারালাইজিং! তদুপরি স্কুল কমিটির হাত থেকে নিয়োগ ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে তাকে প্রাইভেট স্কুলের তুলনায় পিছিয়ে দেওয়া হল।
    মাথাব্যথা যেহেতু হয় তাই মাথাই কাটা হল।
  • PRABIRJIT SARKAR | ১০ এপ্রিল ২০২৫ ১৩:১৮542254
  • স্কুল কলেজ  দুটো ক্ষেত্রেই বাম আমলে ঠিকমত স্কেল দিয়ে কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগ চালু হয়। ভাইভা তে টুকটাক দুর্নীতি ছাড়া ব্যাপক ভাবে স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগ শুরু হয় যেমন সরকারি চাকরিতে হয়। পরিষ্কার বিজ্ঞাপন বেরোবে সব শিক্ষিত লোকেরা চাকরির চেষ্টা করবে। ঠিক মত প্রতিযোগিতার মধ্যে দিয়ে যোগ্য লোক বেছে নেওয়া হবে। তোলামুল ক্ষমতায় এসে একটা এস এস সি পরীক্ষা করল আর কিরকম নোংরামি করল আজ সব পরিষ্কার। এর জন্য আগের সিস্টেম ভাল বলার জায়গা নেই।
  • সোমনাথ | 203.***.*** | ১০ এপ্রিল ২০২৫ ১৩:৩৫542256
  • এম সি কিউএ পারফর্মেন্স কীভাবে ভালো শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা হয় তাও কি প্রশ্নযোগ্য নয়?
  • PRABIRJIT SARKAR | ১০ এপ্রিল ২০২৫ ১৪:২৯542258
  • হাজার হাজার লোককে পড়াতে ডেকে দিনের পর দিন কেমন পড়ায় দেখা কী সম্ভব? তাই সর্বত্র এই এম সি কিউ ধরনের পরীক্ষা নেয়। আমি সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে অধ্যাপনা করতে আবেদন করেছিলাম। প্রথমে মার্ক সিট দেখে শর্ট লিস্ট করল। তারপর পড়াতে ডাকল। যেকোন অনার্স টপিক। তারপর ইন্টারভিউ ডাকল তিন চারজন কে। যাদব পুর অর্থনীতি বিভাগে একজন কে সিলেক্ট করতে ইউজিসি প্রস্তাবিত এপি আই স্কোর কষা হল কে কটা নামি জার্নালে লিখেছে সেমিনারে পেপার পড়েছে এসবের ভিত্তিতে। তারপর 5 জন কে ডাকা হল পড়াতে দেওয়া হল। হাজার হাজার স্কুলে এরকম করা সম্ভব হলে ভাল।
  • PRABIRJIT SARKAR | ১০ এপ্রিল ২০২৫ ১৪:৩৫542259
  • আমেরিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে 5 থেকে সাত বছর দেখে কেমন পড়ায় কেমন গবেষণা করে। পছন্দ না হলে ফুটিয়ে দেয়। তারপর ও অনেক কথা ওঠে। এখানে প্রাইভেট স্কুলে এরকম হায়ার এন্ড ফায়ার আছে। সরকারি স্কুল কলেজে এমন নেই।
  • পাপাঙ্গুল | 150.242.***.*** | ১০ এপ্রিল ২০২৫ ১৭:২৮542263
  • আসল কথা হল, স্বাধীনতার পরে পশ্চিমবঙ্গে নতুন সরকারী স্কুল কমই তৈরী হয়েছে। বেশিরভাগ পুরোদস্তুর সরকারী স্কুলই ব্রিটিশ আমলে বানানো। স্বাধীনতার পর অন্যদের বানানো স্কুলগুলি সরকার পোষিত হয়েছে। এবং যেহেতু সরকার এসব স্কুলে শিক্ষকদের মাইনে দিচ্ছে, সরকার এস এস সি চাপিয়ে দিয়েছে। 
  • Somnath | ১০ এপ্রিল ২০২৫ ১৮:৫২542265
  • হাজার জনকে খামোখা ডেকে দেখার দরকার কী? কয়েকজনকে ডেকে যাকে দিয়ে কাজ হচ্ছে তাকে নিয়োগ করলেই হয়। কাজের থেকে চাকরি পাওয়ানোর উপর বেশি গুরুত্ব দিতে গিয়ে এই সমস্যা বেড়েছে।
     
  • Somnath | ১০ এপ্রিল ২০২৫ ১৮:৫৩542266
  • @পাপাঙ্গুল, আমি নিজে যে দুটি স্কুলে পড়েছি দুটিই বেসরকারি। কিছু মানুষের অলাভজনক সামাজিক উদ্যোগে বানানো। আজকাল এই উদ্যোগগুলোও উঠে গেছে। লোকে সামাজিক কাজে টাকা দান না করে শেয়ারে টাকা রাখে ও খোয়ায়।
  • PRABIRJIT SARKAR | ১০ এপ্রিল ২০২৫ ১৯:০০542267
  • নীতি নির্ধারণ ভাল ভেবে করা। বেশির ভাগ স্কুল কলেজে 'কাল থেকে এসো' ধরণের নিয়োগ হত এক সময়। আমি এক সময় প্রখ্যাত দেবেশ রায়ের সহকর্মী ছিলাম একটা সমাজ বিজ্ঞান কেন্দ্রে। উনি পাড়ার কলেজে এই ভাবে নিয়োগ পেয়েছেন। ওনার অবসরের দিন এই গল্প করেছিলেন। ওই সমাজ বিজ্ঞান কেন্দ্রের আগে আমি বঙ্গবাসী কলেজে চাকরি পেয়েছিলাম। ওখানে গিয়ে দেখি অনেক অধ্যাপক 'কাল থেকে এস' ভাবে নিয়োগ পেয়েছেন। মুখের কথায় মাইনে পেতেন কলেজ ফান্ড থেকে। সরকার থেকে কোন পোস্টের অনুমোদন নেওয়া বা তার রেকর্ড থাকত না। সরকার এদের পেনশন কিসের ভিত্তিতে দেবে? পে স্কেল চালু হয়েছে পেনশন চালু হয়েছে। একই ব্যাপার স্কুলে। পরে অনিলায়ন চালু হয়েছিল কিন্তু অনেক কায়দা করে কমরেড ঢোকাতে হত। পেপার ঠিক থাকত। তাই কেস করে লাভ হত না।।
  • PRABIRJIT SARKAR | ১০ এপ্রিল ২০২৫ ১৯:০৬542268
  • পে স্কেল অনুসারে মাইনে পেনশন দিলে অনেকে চাকরি করতে আসবে। আসছে ও। কাকে ডাকবে আর কাকে ডাকবে না তার অবজেক্টিভ basis না থাকলে কেস হবে। মাইনে সরকারের থেকে আসছে।
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় মতামত দিন