দুঃখিত, লেখাটি আগে চোখে পড়েনি। কলকাতায় সদ্য অনুষ্ঠিত নাস্তিক সভার প্রেক্ষিতে আপনার এই ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ার জন্য ধন্যবাদ, সেই সভার সঙ্গে কোনও একভাবে জড়িত এক ব্যক্তি-নাস্তিক হিসেবে, এবং কলকাতার নাস্তিকতাবাদী আন্দোলনের এক ক্ষুদ্র অংশীদার হিসেবেও।
তবে, লেখাটিতে একটা হতাশা এবং সংশয়ের সুর আছে। পৃথিবী জুড়ে চলছে অন্ধত্ব ও অযুক্তির রমরমা, যুক্তিবাদিতা ও নাস্তিকতার পরিসর ক্রমশ সঙ্কুচিত হচ্ছে, তার মধ্যে এ ধরনের একটি সভা কাম্য বটে, কিন্তু তাতে আর পরিস্থিতি কতটুকুই বা বদলাবে --- এই রকম একটা হতাশা এবং সংশয়। সেটা অস্বাভাবিক না, যদিও। বরং, বর্তমানে ভারত সহ গোটা উপমহাদেশে সমাজ সংস্কৃতি রাষ্ট্র প্রশাসনের যা দশা, তার প্রেক্ষিতে অতিমাত্রায় স্বাভাবিক। তবু তা সত্ত্বেও, কিম্বা হয়ত তার জন্যই আরও বেশি করে, কয়েকটি কথা আছে।
প্রথমত, পৃথিবী জুড়ে গণমাধ্যমে প্রবলভাবে দৃশ্যমান মৌলবাদী দাপাদাপির মধ্যেই, এবং তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে রাজনীতি ও নির্বাচনগুলোতে সংরক্ষণশীল দক্ষিণপন্থীদের আধিপত্যের মধ্যেই, প্রতিটি ধর্মীয় গোষ্ঠী থেকে এক বিপুল সংখ্যক মানুষ নিঃশব্দে ধর্মহীন হয়ে যাচ্ছেন। এ নিয়ে মিডিয়াতে তেমন হইচই হয়না বলে আমরা বেশি কিছু জানতে পারিনা, কিন্তু বিভিন্ন প্রামাণ্য সংস্থার বহুসংখ্যক সমীক্ষায় বিষয়টি আজ সন্দেহাতীতভাবে প্রতিষ্ঠিত, এবং সমাজতাত্ত্বিকরা এ নিয়ে দারুণভাবে বিশ্লেষণ ও চর্চা করে চলেছেন। এই ধর্মমুক্তরা বিভিন্ন সমাজ রাষ্ট্র ধর্ম ভাষাগোষ্ঠীর মধ্যে আলাদা আলাদাভাবে রয়েছেন বলে তাঁদের সোচ্চার গোষ্ঠীগত অস্তিত্ব টের পাওয়া যায় না, কিন্তু আসলে তাঁদের সংখ্যা বিপুল। এই মুহূর্তে সংখ্যায় সবচেয়ে বেশি খ্রিস্টানরা, তার পরে মুসলমানরা, এবং তার পরেই তৃতীয় স্থানে আছে ধর্মমুক্তেরা --- হিন্দুরা চতুর্থ স্থানে।
এইসব সমীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণে আরও যা প্রমাণিত তা হচ্ছে এই যে, কোনও নির্দিষ্ট দেশ/সমাজ/রাষ্ট্রে মাথাপিছু আয় যত বেশি হয়, অর্থনৈতিক অসাম্য যত কমে, শিক্ষা স্বাস্থ্য আইনশৃঙ্খলার দশা যত মজবুত হয়, ততই বেশি বেশি করে সেখানে মানুষ ধর্ম ছেড়ে বেরোতে থাকে। তার সঙ্গে আরও একটি জিনিস অত্যন্ত স্পষ্ট --- রাষ্ট্র যদি ধর্মকে মদত দেওয়া বন্ধ করে দেয়, তাহলে মাত্র দু-তিন প্রজন্মেই ধর্ম শুকিয়ে এতটুকু হয়ে যায়।
আর, এরই উল্টোপিঠে থাকছে এই সত্যিটা যে, অর্থনীতি আইন স্বাস্থ্য শিক্ষার হাঁড়ির হাল হলে এবং অসাম্য বেড়ে উঠলে ধর্ম কুসংস্কার অন্ধত্ব অযুক্তি বিভেদ বিদ্বেষ বেড়ে উঠবে, এই উপমহাদেশে যা আমরা এই মুহূর্তে স্বচক্ষেই দেখছি।
ফলত, আমাদের তরফে সচেতনতা সক্রিয়তা সতর্কতা যতটা জরুরি, হতাশাটি বোধহয় ততটা নয়।