এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  সমাজ

  • ধর্মের ধাক্কা-উৎসবের জের,পরিসর কমছে নিরীশ্বরবাদের।।সমীর ঘোষ  

    Samir Ghosh লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | সমাজ | ০২ অক্টোবর ২০২২ | ২০৪৫ বার পঠিত | রেটিং ৫ (৩ জন)
  •  
    কথা হচ্ছে নাস্তিকদের নিয়ে। মানে যাদের দেব-দ্বিজে ভক্তি নেই। জগতে ঈশ্বর বলে কিছু আছে তা তারা মানে না। সবকিছুতেই যুক্তি খুঁজতে চায়। মানুষ এক সময় যখন কোনও ঘটনার ব্যাখ্যা পেত না  তখন তা কোনও দেব বা অতিপ্রাকৃত কিছুর ওপর চাপিয়ে দিত। এই থেকেই অতি প্রাচীনকালে উৎপত্তি হয়েছিল দেবতা, ভূত ও ভগবানের। তাদের তুষ্ট করতে শুরু হয়েছিল পুজো, বলিদান, উৎসর্গ উপাচারের মতো রীতি পালনের। সৃষ্টি হয়েছিল ধর্মের। তৈরি হয়েছিল জাত-পাত। প্রাচীন ভারতে এসব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন চার্বাকরা। যাঁরা এইসব অযৌক্তিক, ব্যাখ্যাহীন, অজ্ঞানতায় মোড়া, কুসংস্কার সর্বস্ব কাণ্ডকারখানায় মজে থাকতেন তাদের জ্ঞানের অপর্যাপ্ততা আছে বলে মনে করতেন চার্বাকরা। ভাবা হয়েছিল যত সময় এগোবে, শিক্ষার প্রসার হবে, জ্ঞানের বিকাশ হবে এই সব কুসংস্কার,অলৌকিকতা থেকে মুক্ত হবে মানুষ। কিন্তু পৃথিবীর ইতিহাস সে পথে হাঁটেনি। খোলামকুচির মত উড়ে গেছে চার্বাকদের তত্ত্ব। জ্ঞান-বিজ্ঞানের সৃষ্টি করা আধুনিক উপকরণ কে গ্রহণ করলেও তার আলোকে ঈশ্বর তত্ত্ব থেকে মুক্ত হতে পারেনি মানুষ। নিজের কাজ দিয়ে, আবিষ্কার দিয়ে এক ধাক্কায় জ্ঞানের জগৎ-কে এগিয়ে নিয়ে গেছেন এমন বহু মানুষ ছিলেন নাস্তিক। কিন্তু তাতে কার কি ? ধর্মান্ধ ও কুসংস্কারগ্রস্থ, স্থবির সমাজ, রাষ্ট্র বা গোষ্ঠী তাকে হয় নির্বাসনে পাঠিয়েছে না হয় হত্যা করেছে। যত দিন যাচ্ছে ততই আরও ধর্মোন্মাদ, কুসংস্কারমুখী হয়ে পড়ছে মানুষ। তৈরি হচ্ছে এক অদ্ভুত মনুষ্যমন যেখানে অন্য ধর্মের, অন্য মতের মানুষের কোনও ঠাঁই নেই। তাই উপাসনালয় বানিয়ে পুজোপাঠের শেষ নেই। অন্ত নেই তার ধুমধাম আর জাঁকজমকের। পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র ভারতের ভোটবাজার এখন নির্ভর করে ধর্মের মেরুকরণের উপরই। তাই মন্দির না মসজিদ, সেটাই আগামী ভারতের সবচেয়ে বড় ভাবনা।

    পৃথিবীজুড়ে আস্তিকদের ধর্মচর্চা, ঈশ্বরচর্চার পাশাপাশি চিরকালই বিপরীত স্রোত হিসেবে থেকেছে অবিশ্বাস এবং যুক্তির উপর প্রতিষ্ঠিত নাস্তিক্যবাদ । এক সময় পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে পড়া কমিউনিজম-এর প্রভাবে নাস্তিকদের সংখ্যা বাড়লেও বর্তমানে তা নিম্নমুখী । কলেজ স্ট্রিটের কানাগলি থেকে প্রকাশিত ‘বিজ্ঞান ও নাস্তিকতা’ নামে অতি চটি একটি পত্রিকায় লেখক ভবানীপ্রসাদ সাহু বিভিন্ন তথ্য ঘেঁটে  নাস্তিকদের একটা সংখ্যাতত্ত্ব  প্রকাশ করেছিলেন ২০০৫ সালে । এতে বলা হয়েছে ১৯৯২ সাল নাগাদ বিশ্বের জনসংখ্যার ২০.৪ শতাংশ ছিল নাস্তিক বা ঘোষিত নিরীশ্বরবাদী । ১৯৯৬ সালে সেই সংখ্যা হয় ১৯ শতাংশ এবং ২০০২ সালে তা পৌঁছোয়  ১৫ শতাংশে। এই মুহূর্তে উইকিপিডিয়া খুলে উইন-গ্যালপ ইন্টারন্যাশনালের  করা সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে ২০১২ সালে নাস্তিকের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ শতাংশে, ২০১৫ সালে  ১১ শতাংশে এবং ২০১৭ সালে ৯ শতাংশে। 

    ‘সব কিছুতে খুঁজবো কারণ অন্ধ আমি মানবো না’ - এমন মতের মানুষের সংখ্যা ক্রমশ কমে পৃথিবীজুড়ে বেড়ে চলেছে ধর্মান্ধ, মৌলবাদী, জাত্যাভিমানী, স্বার্থপর মানুষের সংখ্যা। একের পর এক  যুক্তিবাদী ব্লগার ও তার সহযোগীদের খুন করছে এরাই । ভারতে এদের হাতেই নিহত হচ্ছেন হাতে প্রমিথিউসের মশাল তুলে নেওয়া মানুষেরা । বিষয়টি যে যথেষ্ট উদ্বেগের তাতে কোন সন্দেহ নেই। কারণ ধর্মাচরণ জাতপাত এসবের উপরই তো দাঁড়িয়ে আছে ভারতের রাজনীতি ও অর্থনীতি । কেন্দ্রে শাসক দলের নেতা যদি এক মন্দিরে পুজো দেন তো বিরোধী দলনেতাকে   আরও নামী মন্দিরে ছুটতে হয় সাচ্চা ভক্ত হিসেবে নিজেকে প্রমাণ দিতে। রাজ্যের বিরোধী দল যদি রাম আর হনুমান ভক্তি দেখাতে সাইকেল র‍্যালি করে তখন  শাসক দলকে বেরোতে হয় কয়েক হাজার বাইক নিয়ে। হিসেব করলে এখন বারোমাসে ২৪ পার্বণ । ভক্তকুলের বছরভর হুল্লোড় । সবার ফেসবুকে উপছে পড়া ভক্তি, সবার হোয়াটসঅ্যাপে ধর্মের ডিজিটাল বাণী। এর মধ্যেখানেই বকচ্ছপ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে নাস্তিকতার পাঠ নিয়ে বসা মানুষটা। বন্ধু-বান্ধব আত্মীয় স্বজন মায় পরিবারের মধ্যেও সে একা। সে অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখে এক সময় ইতু পুজো, নানা রকমের ষষ্ঠী, সন্তোষী মার ভক্ত পরিবার কিভাবে যেন জড়িয়ে পড়েছে গোপাল ঠাকুরের পুজোয়। পাড়ার মোড়ে দিব্যি জমে গেছে গোপালের সিংহাসন, মুকুট, পোশাক, বিছানা, মশারি বিক্রির দোকান। সেক্টর ফাইভে সফটওয়্যার নিয়ে কাজ করা জিন্স আর টপ পরা মেয়েটা হাতে দিব্যি বেঁধে রেখেছে লাল বিপত্তারিনীর ধাগা। বাবার বার বলে সোমবার উপোষ করছে ১৯-২০র ছেলেরা। অথচ এই বঙ্গেই এক সময় ভূত-ভগবান-শয়তান-এর বিরুদ্ধে কোমর কষে লড়াইয়ে নেমেছিলেন গণ বিজ্ঞান আন্দোলনের মানুষজন। এক সময় ঠাকুর দেবতায় বিশ্বাস না করা মানুষ দেখলেই লোকে বলত – আপনি বুঝি   ‘সিপিএম’। এখন সেই রাজাও নেই,সে রাজত্বও নেই। অবশ্য ৩৪ বছরের বাম শাসনে এ বিষয়ে লাভের লাভ কিছুই হয়নি। কয়েকজন বাম নেতা ঈশ্বর আরাধনা থেকে শত হাত দূরে থাকলেও তাদের ক্যাডারবাহিনীতে বা রাজ্যের জনমানসে তার খুব একটা প্রভাব পড়েনি। কোনও কোনও রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে এই সব পুজো- উৎসব ইত্যাদি জনপ্রিয় জনসংযোগের  পথগুলো এড়িয়ে যাওয়াটাই কাল হয়েছে বামেদের। আসলে মানুষ কিন্তু জিরাফে নেই, সে ধর্মেই আছে। তাইতো রাজনৈতিক, তাত্ত্বিক কচকচি নয়, তারকেশ্বর বা ফুরফুরা শরিফ-এর তীর্থযাত্রীদের জন্য সেবাকেন্দ্র খুলেই কেল্লাফতে করছেন আজকের রাজনৈতিক নেতারা।  

    বাংলার আকাশে বাতাসে এখন বড় বেশি উৎসবের গন্ধ। আশি ও নব্বইয়ের দশকে গণবিজ্ঞান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছিলেন বহু মানুষ। ঈশ্বর তত্ত্বের পাশাপাশি জ্যোতিষ, তন্ত্র-মন্ত্র, ধাপ্পাবাজির বিরুদ্ধে ঘরে বাইরে সরব ছিলেন তারা। দুর্গাপুজোর মত চার-পাঁচ দিনের ধর্মের গন্ধ মেশা জগঝম্প আয়োজনে হয় বইয়ের স্টল না হয় সম মনভাবাপন্ন মানুষজনের সঙ্গে আড্ডা মেরে সময়  কাটিয়ে দিতেন ওরা। পুজোর বাজারেই এই নাস্তিকদের জন্য তৈরি হয়ে যেত আর একটা স্পেস। আজকের দিনে সেই জায়গাটাই গিয়েছে হারিয়ে। গণবিজ্ঞান আন্দোলন স্তিমিত হয়ে যাওয়ায় এই সব মানুষেরাও আজ একা। কিছুটা বিচ্ছিন্ন। এরা অনেকেই সুজন। ঘরে-বাইরে ব্যক্তি স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। ফলে নিজে নাস্তিক মনের হলেও পরিবারের মানুষজনের দেব-দেবী আরাধনায় তাঁর তরফে কোনও প্রতিবাদ নেই,বাধা নেই। নিউক্লিয়ার পরিবারের কখনও কখনও অসুস্থ স্ত্রীর গোপাল ঠাকুর-এর জন্য ফুলমালা কিনে আনা বা সন্তানের সরস্বতী  পুজোর জোরালো দাবি মেনে নিয়ে আয়োজনের অনেকটা হয়ত করে দিতে হয় তাঁকেই।  দুর্গোৎসবের দিনে সর্বদা মুখে হাসি ঝুলিয়ে রেখে পাড়াশুদ্ধু পংক্তিভোজন থেকে হয়ত কায়দা করে কেটে পড়েছেন ঠিকই কিন্তু রাতে বাড়ি ফিরে মালসা করে রাখা ভোগের ফুল-তুলসী সরিয়ে খিঁচুড়ি ভেবে খেতে বাধ্য হয়েছেন। কারণ তার যুক্তিবাদী মন বলছে যা দিনকাল তাতে খাবার ফেলে দেওয়া ঠিক নয়। তিনি সপ্রেমে ভেবেছেন আজ এই উপলক্ষে হয়তো রান্নার গুরুভারটি থেকে ছুটি মিলেছ গৃহিণীর। এ ক্ষেত্রে আদর্শ নাস্তিক কি করবেন সে প্রশ্ন আলাদা।  মোটকথা আত্মীয়- স্বজন, সমাজ-সংসারের দাবি সামলাতে গিয়ে ব্যক্তিগত মতামত, স্বাধীনতার পরিসর কমেই যাচ্ছে নাস্তিক কুলের। কারণ তার জন্য কোনও স্বস্তির জায়গা নেই।  কালিপুজোর সময় শব্দবাজির অত্যাচার থেকে মুক্তি পেতে ঠিক কোথায় গেলে শান্তি মিলবে তা যেমন সারমেয়রা বুঝতে পারে না এ অবস্থা অনেকটা যেন তাই। গোটা পৃথিবী জুড়ে, গোটা দেশ, এ পাড়া- সে পাড়া এমনকি ঘরের ভেতর যেভাবে অতিভক্তির আধিক্য বাড়ছে তাতে নাস্তিকরা বিপন্ন বই-কি। এ বিপন্নতা যাঁরা একটু অন্যভাবে বাঁচতে চান তাদেরও।

    [লেখাটি ইতিপূর্বে ‘লোকায়ত মাল্টিডাইমেনশনাল রিসার্চ সোসাইটি’র ‘আইডেন্টিটি’ সংখ্যায়,২০১৯ প্রকাশিত। এখানে সামান্য পরিমার্জিত]    

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ০২ অক্টোবর ২০২২ | ২০৪৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Subhadeep Ghosh | ০২ অক্টোবর ২০২২ ১৩:৪৫512483
  • দারুন ভালো লেখা। বিজ্ঞান , যুক্তিবাদ নিরীশ্বরবাদী তৈরি করে ঠিকই, কিন্তু ঈশ্বর ব্যাপারটা এত প্রাচীন যে কালে কালে এটা কৌমচেতনাজাত হয়ে গেছে। ফলে ঈশ্বর চেতনাটাই স্বাভাবিক এই বোধ মানুষ না চাইলেও সামাজিকভাবে পেয়ে যায়। এটাই মুশকিল। collective unconceious-র কবল থেকে বাঁচিয়ে নিজেকে ক্রমাগত যুক্তিনিষ্ঠ করে রাখা এটা একটা প্র্যাকটিস ও নিজের সঙ্গে নিজের আমৃত্যু লড়াই। খুব কম লোকই পারেন এই লড়াইটা চালিয়ে যেতে।
  • guru | 103.15.***.*** | ০২ অক্টোবর ২০২২ ১৮:২১512486
  • খুবই ভালো লেখাটি হয়েছে | আমি নিজে মনে করি যে অর্থ সব কিছুরই সমাধান করে দেয় | দেখুন বাঙালি সমাজে বিপ্লব এনেছিলেন প্রিন্স দ্বারকানাথ যিনি একজন ধনকুবের ছিলেন | ধনকুবের ব্যক্তি নিজের অর্থ ব্যয় করে নিজের জন্য একটি নিখুঁত নিজের দুনিয়া তৈরী করেই নিতে পারেন সেখানে তাকে সমাজের রক্তচক্ষুর খুব একটি প্রয়োজন থাকবেনা |
     
    ধনকুবের ব্যক্তি নিজের মতো করে একটি সমাজ তৈরী করে থাকতেই পারেন নিজের অর্থ ব্যয় করে যেখানে তার সমাজের পরোয়া করার কিছুই নেই | এর সবচেয়ে বড়ো উদাহরণ নাস্তিক ধনকুবের হারারি বাবু যিনি নিজের ইচ্ছে মতো নিজের একটি দ্বীপ কিনে বাস করেন ও নিজের মতামত নিজের ইচ্ছে মতো প্রচার করেন |
     
    দরিদ্র ব্যক্তির কোনো কিছুরই নিজস্ব করার অধিকার নেই অন্তত সমাজ তাকে সেই অধিকার দেয়না |  আমাদের বাঙালী সমাজের সবচেয়ে বড়ো সমস্যা হলো যে আমরা ছোটবেলা থেকে সন্তানকে অর্থ উপার্জন করতে শেখাইনা ও অর্থ উপার্জনকে খুব একটা সম্মান করতেও শেখাইনা | আমার তো মনে হয় ছোটবেলা থেকেই নীতি শাস্ত্র ও বিজ্ঞান শেখানোর বদলে অর্থ উপার্জন ও বিনিয়োগ শেখালে আমাদের বাঙালী সমাজ আরো অনেক ধনী নাস্তিক তৈরী করতে পারতো |
     
     
  • r | 2405:8100:8000:5ca1::107:***:*** | ০২ অক্টোবর ২০২২ ২০:০৭512487
  • আমি গানবাজনা পছন্দ করি না। অথচ রেডিও টিভি সোসাল মিডিয়া সর্বত্র গানভক্তদের উৎপাত। উৎসবের সময় তো কথাই নেই, চোঙা লাগিয়ে রবীন্দ্রসঙ্গীত ফোঁকা শুরু। কবে যে বন্ধ হবে এসব।
  • kk | 2601:448:c400:9fe0:8470:62a0:8b29:***:*** | ০২ অক্টোবর ২০২২ ২২:০৬512488
  • লেখাটা ভালো লাগলো। সহমত হলাম। অনেকদিন ধরেই এই কথাগুলো মনের মধ্যে ঘোরাফেরা করে। এই নিয়ে লেখা হয়েছে দেখে খুশি হলাম। দু চার জায়গায় বানান একটু চোখে লাগলো। তবে সেটা নিটপিকিং ছাড়া কিছু নয়।
  • স্বাতী রায় | 115.242.***.*** | ০২ অক্টোবর ২০২২ ২২:২২512491
  • সহমত। এবং শুধু ধর্ম বলে না, যে কোন উৎসবের পিছনে আসলে অনেক সময়ই থাকে একটা না একটা শোষণের গল্প। আমি কি আশ্চর্য ভাবে সেদিকে চোখ বুজে থাকি। 
  • নাস্তিক  | 118.179.***.*** | ০৩ অক্টোবর ২০২২ ১১:৩৪512500
  • একটা অন্য্ ধরনের নাস্তিক আন্দোলন শুরু হয়েছে সোসিয়াল মিডিয়ার কল্যানে .  ভারত পাকিস্তান আর তার বাইরেও। শুরুতে এটা এক্স মুসলিম এথেয়িস্ট আন্দোলন ছিল . এখন তাতে হিন্দুরাও যোগ দিচ্ছে বহুল ভাবে ।দক্ষিণ পন্থী হিন্দুরা এটা হাইজ্যাক করার সাধ্যমত চেষ্টা করেছে   ভারতে  সঞ্জয় দীক্ষিত এর মত লোকেদের মাধ্যমে   ।কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভারতিয় এক্সমুসলিম দের প্রটেকশান দেবার আছিলায় কিছু সাফল্য ও পেয়েছে কারণ কিছু  মৌলবি  এদের আইডেন্টিটি প্রকাশকারে দিয়েছিলো  পাবলিক ফোরামএ  . কিন্তু ভারতের বাইরেও এই আন্দোলন যেভাবে ছড়াচ্ছে আমি আশা দেখছি ।..তারা মুসলিমদের সাথে  হিন্দুদের ও  জায়গা দিচ্ছে ।  
     
    চোখ  রাখুন -
     
    পাকিস্তানী মুলহিদ (mulhid=naastik) :
     
    গালিব কামাল ( এক্স পাকিস্তানি ক্রিশ্চান )
     
     
    ভারতে এক্সঃ মুসলিম সাহিল 
     
    এদের ফোরামএ যাতায়াত করে আমার মনে হয়েছে প্রচুর উত্তর ভারতীয় হিন্দু তিতি বিরক্ত ।কিন্তু খাপ খুলতে পারছে না . দেশে উপযুক্ত পরিবেশ পেলে ভোকাল হবে। এক্স হিন্দু আন্দোলন ভারতে শুরু হওয়া শুধু সময় এর অপেক্ষা .
     
    হতাশ হবেন না 
     
     
     
  • guru | 146.196.***.*** | ০৩ অক্টোবর ২০২২ ১৫:০৮512504
  • @নাস্তিক 
     
    সবটাই নির্ভর করছে পশ্চিমী দুনিয়াতে নাস্তিকদের আরো বেশি করে আর্থিক ক্ষমতা বাড়ানো নিয়ে | উপমহাদেশে পশ্চিমি প্রভাব এখন খুবই বেশী | পাশ্চাত্য দুনিয়াতে যদি ইহুদি বা ক্রিশ্চিয়ান নাস্তিকরা সংখ্যাতে ও পপুলার কালচারাল ইনফ্লুয়েন্সে বাড়ে তাহলে উপমহাদেশে নাস্তিকদের প্রভাব আরো বাড়বে |
     
    আপনি যদি উত্তর ভারতীয় দক্ষিণ পন্থী হিন্দুদের কথা বলেন এদের উপর আম্রিকা ও ইসরায়েল এই দুটি দেশের প্রভাব খুবই বেশী | এইসব জায়গাতে নাস্তিকদের বিশেষ করে পপুলার কালচারে প্রভাবে কেমন ? বেশ বড়োলোক ধনকুবের ইহুদি বা জিওনিস্ট নাস্তিক কি আছে ?
    যদি থাকে তাহলে উত্তর ভারতে দক্ষিণ পন্থী হিন্দুদের প্রভাব বাড়বে | 
     
    আপনার মতামতের অপেক্ষাতে রইলাম |
  • guru | 146.196.***.*** | ০৩ অক্টোবর ২০২২ ১৫:৪০512505
  • @সমীর বাবু 
     
                     আচ্ছা পাশ্চাত্যে নাস্তিক্যের হার কেমন ? বাড়ছে না কমছে ? আমার মনে হয় পাশ্চাত্যে নাস্তিক্য থাকতে পারে যেহেতু এটি একটি শিল্পোন্নত রাষ্ট্র | আপনি কি বলেন ?
  • kk | 2601:448:c400:9fe0:ac40:28b5:f498:***:*** | ০৩ অক্টোবর ২০২২ ২০:০২512518
  • হিন্দু নাস্তিক, ইহুদি নাস্তিক, ক্রিশ্চান নাস্তিক এই কথ্হ গুলো অক্সিমোরন হয়ে যাচ্ছেনা? অথেন্টিক রেপ্লিকা'র মত?
  • Debasis Bhattacharya | ০৫ অক্টোবর ২০২২ ০২:২২512551
  • সমীরঘোষ,
     
    পৃথিবী জুড়ে নাস্তিকতা যুক্তিবাদ বিজ্ঞানমনস্কতা এইসব ক্রমেই ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে এমন একটি চিত্র আপনি তুলে ধরেছেন, এবং তার সপক্ষে কিছু সমীক্ষাজাত ফলাফল হাজির করেছেন। সে সব সমীক্ষার নির্দিষ্ট তথ্যসুত্র দিতে পারেন? ভবানীপ্রসাদ সাহুর পুস্তিকাটির ব্যাপারে আমার বিশেষ কিছু জানা নেই, কিন্তু আমি নিশ্চিত যে তিনি নিজে এ নিয়ে পৃথিবী জুড়ে সমীক্ষা চালান নি, সম্ভবত অন্য কোনও ব্যক্তি/সংস্থার সমীক্ষার ফলাফল উল্লেখ করেছেন। মূল সমীক্ষাগুলোর উৎস নির্দেশ করতে পারেন কি? 
     
    এছাড়া, আপনি উইনি-গ্যালাপ সংস্থার কিছু সমীক্ষার উল্লেখ করেছেন। সংস্থাটি এ ব্যাপারে খ্যাতিমান, কিন্তু তাদের অসংখ্য সমীক্ষার অসংখ্য ফলাফল আছে। আপনি ঠিক কোন সমীক্ষাগুলোর কথা বলছেন? অনুগ্রহ করে নির্দিষ্ট সূত্র উল্লেখ করবেন। 
     
  • একক | ০৫ অক্টোবর ২০২২ ০৩:১৭512554
  • দাবি টা কী?  নাস্তিকদের একটা আলাদা চার্চ দরকার নিরাপদে নাস্তিক্য চর্চার জন্যে??  
     
    যুক্তি ছাড়া কিছু মানব না ইত্যাদি ভীষণ ইউটোপিয়ান।  সব মানুষ,  আস্তিক - নাস্তিক নির্বিশেষে স্ক্রিপচারপন্থী।  কারণ সবকিছু যুক্তি দিয়ে বোঝালেও বোঝার মত জ্ঞান বা সময় সবার নেই। যিনি ইলেকট্রনিকস যুক্তি দিয়ে বোঝেন তিনিই আবার এন্টিবায়োটিক স্ক্রিপচার মেনে খান,  যুক্তি দিয়ে বুঝে নয়। এর কারণ " বিশ্বাস " জিনিসটা একটা অপ্টিমালিটির টুল। খুব গোদা পাব্লিক হলে লো লেভেলেই অপ্টিমাল --- গ্রহনের পেছনে রাহুর প্রকোপ খুঁজবে,  আর একটু তুলনামূলক সুক্ষ জনতা,  দুলালের ছবি ও সই দেখে নেবে। পেপার ঘাঁটবে। 
     
     
    যুক্তি একটা জার্নি,  সেই স্ট্রাকচার টা শিখতে ও চর্চা করতে হলে স্কুল লেভেল থেকে লজিক - ফিলোজফি এসব সিলেবাসে রাখতে হয়। শুধুই মিস্ত্রি বা কেরানি তইরির "কেজো" শিক্ষা দিয়ে হয়না। যুক্তিবাদী সমিতির সঙ্গে সভা করেও হয়না। বামেরা ক্ষমতায় ছিল তাও কেন এই অবস্থা, এ হাহুতাশ করার সময় খেয়াল রাখা কর্তব্য যে স্কুল সিলেবাস হাতে থাকার পরেও পিওর লজিক চর্চা তার অংশ হয়নি কেন। নাকি ভয় ছিল যে "প্রতিক্রিয়াশীলতা" মাথা চারা দেবে??  তাচ্চে, বহিরঙ্গে সমিতি টমিতি মাচ সেফ। 
  • Samir Ghosh | ০৯ অক্টোবর ২০২২ ২৩:৩৫512667
  • @গুরু  @ নাস্তিক
    উৎসবের এমন হইহই সময়ে কিছু মানুষ নাস্তিকতার পরিসর নিয়ে নানাভাবে চর্চা করে চলেছেন এটা একটা দারুণ ব্যাপার বলে মনে হয়েছে। এসব ‘গুরুচন্ডালী’তেই সম্ভব।অন্য কাজে ব্যস্ত থাকায় এসব আলোচনায় যোগ দিতে না পারায় দুঃখিত। যাই হোক আমার মনে হয় আর্থিক সঙ্গতি,ভাল পরিবেশে বেড়ে ওঠা,শিক্ষা লাভ এসবের একটা ভাল দিক যে আছে তা সকলেরই জানা।শিক্ষার আলো না পাওয়া গরীব দুনিয়ার মানুষেরাই যে বেশী বেশী করে ঈশ্বর,অতিপ্রাকৃত শক্তি,ভূত-প্রেত-তন্ত্র-মন্ত্রে বিশ্বাস রাখে তাও প্রমাণিত।কারণ তাদের কাছে এসব যুক্তি খোঁজা বিলাসিতার সামিল।তবে আর্থিক সঙ্গতি আর শিক্ষার পাঁচতারা বন্দোবস্তো থাকলেই যে মানুষজন সুমহান যুক্তিবাদী হয়ে উঠবে এমন ভাবনা যে শক্তপোক্ত আকার নেয় না তার উদাহরণ আমাদের চারপাশে তাকালেই বোঝা যাবে।বৈভব আর সব পেয়েছির দেশ হিসেবে প্রচারিত আমেরিকা,ইউরোপে নাস্তিকতার পাঠ কেমন সে বিষয়ে খুব একটা ভাল ধারণা আমার নেই।দু-চারটে এদিক সেদিক যা ইন্টারনেট বা বিভিন্ন সংকলনে সংকলিত  তাতেই শান দিতে হয় মাঝেমধ্যে।               
     
  • Samir Ghosh | ১০ অক্টোবর ২০২২ ২৩:৫৮512696
  • Debasis Bhattacharya
    বড় দেরি করে উত্তর দেওয়ার জন্য দুঃখিত। উৎস মানুষের মত পত্রিকার নিয়মিত প্রকাশ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর গণ বিজ্ঞান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত মানুষজনের কাছে তথ্য জানা, আলোচনা, মত বিনিময়ের ক্ষেত্রে একটা শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছিল।এরই মধ্যে অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে বা সম্মিলিত ভাবে কুসংস্কার বিরোধী গণবিজ্ঞান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন।২০০৪-২০০৫ সাল নাগাদ কলেজ স্ট্রিট এলাকার সীতারাম ঘোষ স্ট্রিট-এর এক বইয়ের ঠেক –এ কয়েকজন মিলে ‘একটা কুসংস্কার বিরোধী ম্যাগাজিন করলে কেমন হয়’ জাতীয় ভাবনা শুরু হয়।এর মূল উদ্যোগ নেন লেখক ভবানীপ্রসাদ সাহু।প্রকাশ পায় ‘বিজ্ঞান ও নাস্তিকতা’।তবে নানা অসুবিধের কারণে এ পত্রিকা জন্মলগ্নেই মুখ থুবড়ে পড়ে।আমার যতদূর জানা আছে এর তিনটে সংখ্যা প্রকাশ পেয়েছিল।এর প্রথম সংখ্যাতেই বেরিয়েছিল ভবানীপ্রসাদ সাহুর লেখাটি।চটি সংখ্যাটি পত্র-পত্রিকার কোনও এক খাঁজে চুপিসারে বসে থাকায় তা সামনে আনা গেল না( খোঁজ মিললেই তার ছবি এখানে দিয়ে দিয়ে দেব),তবে ২য় সংখ্যাটির খোঁজ মেলায় তা ছবি আকারে তুলে দিলাম।

    আর ভবানীবাবুর পক্ষে পৃথিবী জুড়ে সমীক্ষা চালানো যে সম্ভব নয় তা আপনি নিজেই বলেছেন।আমার লেখাতেই বলা আছে যে -  কলেজ স্ট্রিটের কানাগলি থেকে প্রকাশিত ‘বিজ্ঞান ও নাস্তিকতা’ নামে অতি চটি একটি পত্রিকায় লেখক ভবানীপ্রসাদ সাহু বিভিন্ন তথ্য ঘেঁটে  নাস্তিকদের একটা সংখ্যাতত্ত্ব  প্রকাশ করেছিলেন ২০০৫ সালে ।
    ভবানীপ্রসাদ সাহু কোথা থেকে এসব তথ্য পেয়েছিলেন তা আমার পক্ষে জানা সম্ভব নয়।যদি ম্যাগাজিনটি খুঁজে পাই আর তাতে যদি তথ্য দেওয়া থাকে তবে তা জানানো যাবে।
    আর উইন-গ্যালাপ সংস্থার সমীক্ষার  যে তথ্যের উল্লেখ আমি করেছি তা যখন লেখাটি লেখা হয়েছিল তখন ‘নাস্তিক’ শব্দে  উইকিপিডিয়া সার্চ করেই পাওয়া গিয়েছিল।আপনি এখন সার্চ করলেও তা পেয়ে যেতে পারেন।  
     
  • Samir Ghosh | ১১ অক্টোবর ২০২২ ০০:০৮512697
  • @ একক 
    আপনার মতামতের জন্য ধন্যবাদ।বড় দেরি করে উত্তর দেওয়ায় দুঃখিত। তবে এই নিরীহ লেখাটি ‘নাস্তিকদের একটা আলাদা চার্চ দরকার’  সেরকম কোনও ইউটোপিয়ান দাবি করে না।এখানে একটা পরিসরের কথা বলা হয়েছে।সবসময় যুক্তির ধ্বজা উড়িয়ে কট্টরপন্থী হওয়ার কথা বলা হয় নি।আপনার কথাতেই ধরি - যুক্তি একটা জার্নি। স্কুল লেভেল থেকে সিলেবাসে থাকা লজিক ফিলোজফি গিলে সেই স্ট্রাকচারটা  শিখে আপনি বড় হয়ে দেখলেন জীবনের এক বাঁকে তা আর কাজ করছে না।তখন কি আপনি সিলেবাসে শেখা লজিক আঁকড়ে কট্টর হয়ে উঠবেন নাকি একটা পরিসরের খোঁজ করবেন? তবে আপনি যে স্কুল সিলেবাসের কথা বললেন সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।তবে সমস্যা কিন্তু সেখানেও। স্কুলে অভিকর্ষ বল আর মাধ্যাকর্ষনের প্রশ্নে সেরা নম্বর তোলা ছাত্রটি যখন ফিজিক্সের অধ্যাপক হয়ে শূন্যে ভেসে থাকা সাধুবাবার ধাপ্পায় ধরাশায়ী হয়ে যান তাতেই হয় বিপত্তি।এখানেই কাজ গণবিজ্ঞান সমিতির।            

     
  • Debasis Bhattacharya | ১২ অক্টোবর ২০২২ ১৫:৩২512759
  • সমীর ঘোষ,
     
    উত্তরের জন্য ধন্যবাদ। ভবানীপ্রসাদ সাহু ও তাঁর লেখালিখি ও পত্রিকা বিষয়ে আমার কিছু ধারণা আছে, আমি শুধু তথ্যসূত্রগুলো চেয়েছিলাম। কেন চেয়েছিলাম, সেটা হয়ত পরিষ্কার হয়নি, তাই ব্যাখ্যা করে বলি একটু। আপনি যেভাবে বছর ধরে ধরে নাস্তিকতার পরিসংখ্যান হাজির করেছেন, তা যদি সত্যি হয়, তবে তাতে একটা দীর্ঘমেয়াদি চিত্র পাওয়া যাচ্ছে, যা যুক্তিবাদী নাস্তিকের কাছে বাস্তবিকই হতাশাজনক। সংক্ষেপে তা এই রকম --- ১৯৯২ সাল নাগাদ বিশ্বের মোট  জনসংখ্যার ২০.৪ শতাংশ, ১৯৯৬ সালে ১৯ শতাংশ, ২০০২ সালে ১৫ শতাংশ, ২০১২ সালে ১৩ শতাংশ, ২০১৫ সালে  ১১ শতাংশ এবং ২০১৭ সালে ৯ শতাংশ। পরিসংখ্যানটি ধারাবাহিক, এবং বার্তাটি তদনুযায়ীই দ্ব্যর্থহীন, সন্দেহ নেই। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, বার্তাটি সত্য কি? প্রশ্নটা কেন জাগছে, সেই কথাটা জানাবার জন্যেই এ মন্তব্য। 
     
    এখানে ছয়টি বছরের তথ্য আছে, যার প্রথম তিনটি আপনি পেয়েছেন একটি পুস্তিকা থেকে (যা আমার হাতে নেই), এবং পরের তিনটি আপনি সংগ্রহ করেছেন উইকিপিডিয়া থেকে। দুটোর কথা আলাদা করে বলা যাক।
     
    পুস্তিকাটি যেহেতু এই মুহূর্তে আপনার হাতেও নেই, অতএব তার তথ্যের উৎস যাচাই করার সুযোগ নেই, তাই এ ব্যাপারে আমি যা জেনেছি সেইটা বরং ব্যক্ত করি। আমার ধারণা, বিশ শতকের শেষের দিক থেকে উন্নত দেশে ধর্মবিশ্বাসের সমীক্ষা সংক্রান্ত উচ্চমানের প্রামাণ্য কাজকর্ম শুরু হয়ে গেলেও, একুশ শতকের আগে সারা পৃথিবী জুড়ে এ ধরনের গণনার অস্তিত্বই ছিল না আদৌ। ২০০৭ সালে মার্কিন ধর্ম-সমাজতত্ত্ববিদ ফিলিপ জুকারম্যান তখন পর্যন্ত প্রাপ্য সমস্ত টুকরো টাকরা ছোটোখাটো কাজের ফলাফলগুলোকে এক জায়গায় করে প্রথম বৈশ্বিক স্তরে একটি মোদ্দা পরিসংখ্যান খাড়া করার চেষ্টা করেন। তাতে দেখা গিয়েছিল, গোটা পৃথিবীতে অবিশ্বাসী মানুষের অনুপাত মোটামুটি সাড়ে সাত (৭.৫) থেকে সাড়ে এগারো (১১.৫) শতাংশের মধ্যে হতে পারে। ফলত, ২০০২ এবং তার আগের হিসেবগুলো নিয়ে কিছু প্রশ্ন থাকছে। 
     
    পরবর্তী তিন বছরের তথ্য যে উইকিপিডিয়াতে পেয়েছেন, এ কথা আপনি আপনার মূল লেখায় বলেছেন, তবুও তথ্যের উৎস চেয়েছিলাম। তার কারণ হচ্ছে, উইকিপিডিয়াতে বহু জায়গায় নাস্তিকতা ও তার সমীক্ষার কথা উঠেছে, তার মধ্যে ঠিক কোনটার কথা আপনি বলছেন, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে চেয়েছিলাম। যাই হোক, আমার মনে হচ্ছে, আপনি সম্ভবত উইকি-র 'ডেমোগ্রাফিক্স অফ অ্যাথেইজম' শীর্ষক প্রবন্ধটির প্রথমাংশের কথাই বলতে চাইছিলেন। যদি তাইই হয়, তাহলে বলব, ওই প্রবন্ধের ওই প্রাসঙ্গিক বাক্যটিতে যে তিনটি সূত্র দেওয়া আছে সেগুলো একটু ভাল করে পড়ে নিলে আপনার হতাশা ও আশঙ্কা হয়ত কিছু কম হতে পারত। কেন, একটু বলি। আসলে, বিভিন্ন সমীক্ষায় অনুসন্ধানের বিষয়বস্তু এবং স্থান-কাল-পাত্রে কিছু না কিছু সূক্ষ্ম তফাত হয়ই, ফলে অপ্রত্যাশিত ওঠানামা চলে আসে ফলাফলেও। যেমন, কেউ নাস্তিক কিনা বোঝার জন্য কোন কোন প্রশ্ন করা হচ্ছে তাতে হয়ত ফলাফল কিছু আলাদা হয়ে যেতে পারে, বা ভারত বা চিন-এর মত বেশি লোকসংখ্যাওয়ালা একটি বা দুটি দেশ সমীক্ষায় যুক্ত হলে বা বাদ পড়লেই  মোদ্দা ফলাফলে অনেকটা তফাত হয়ে যেতে পারে। সেইজন্যে, 'অ্যাথেইস্ট' বা 'নাস্তিক' বর্গটির চেয়েও আজকাল বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে 'নন রিলিজিয়াস' বা 'ধর্মমুক্ত' বর্গটি। কঠোর নাস্তিক, অজ্ঞেয়বাদী, সংশয়বাদী, যিনি নিজেকে নাস্তিক বলেন না কিন্তু কোনও ধর্মীয় ক্রিয়াকর্মে যোগও দেন না এই ধরনের লোকজন --- এদের সকলকে মিলিয়ে তৈরি এক বৃহত্তর বর্গ এই 'নন রিলিজিয়াস'। এই বর্গটির মধ্যে দিয়ে ধর্মবিশ্বাসের গতিপ্রকৃতি অনেক বেশি প্রকাশ পায়, এটা আজ অনেকে মনে করেন। এভাবে যদি দেখেন, তাহলে এই একই সমীক্ষাগুলোর অর্থ সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে যেতে পারে। যেমন ধরুন, সেক্ষেত্রে ২০১২ সালের হিসেব দাঁড়াবে ৩৬ (২৩+১৩), ২০১৫ সালের হিসেব দাঁড়াবে ৩৩ (২২+১১), এবং ২০১৭ সালের হিসেব দাঁড়াবে ৩৪ (২৫+৯)। পাঁচ বছরের মধ্যে ধর্মবিশ্বাসে বিরাট কিছু তফাত হবার কথা ছিল না, এবং হয়ওনি, কিন্তু ২০০৭ সালের সঙ্গে তফাতটা খুব পরিষ্কারভাবেই দৃশ্যমান (ওপরে দেখুন)। এখানে আরও বলে রাখি, উইন গ্যালাপ-এর মত নির্ভরযোগ্য সমীক্ষা-উদ্যোগ আরও আছে, যেমন 'পিউ ফোরাম', 'ডব্লু ভি এস' (ওয়ার্ল্ড ভ্যালু সার্ভে) --- এবং এদের করা সমীক্ষাগুলোর ফলাফলও উইন-গ্যালাপ-এর ফলাফলের চেয়ে খুব বেশি আলাদা নয়। এমন কি, ২০১৭ সালের পরেও আরও সম্প্রতি একাধিক সমীক্ষা হয়েছে, এবং সেখানেও ফলাফল পুরোপুরি সঙ্গতিপূর্ণ। 
     
    সবশেষে বলি, এখানে ভুল বোঝাবুঝির কোনও সুযোগ রাখতে চাইনা। পরিষ্কার করে বলা প্রয়োজন, আপনার লেখাটি যুক্তিবাদ নাস্তিকতা এবং বিজ্ঞানমনস্কতার পক্ষে বলেই মনে করি, এবং আমি নিজে এ অবস্থানের আন্তরিক সমর্থকও। আমার বক্তব্য শুধু এই যে, মৌলবাদী তাণ্ডবের আড়ালে ঐতিহাসিক প্রগতির মোদ্দা শক্তিগুলো বোধহয় মোটের ওপর প্রত্যাশামতই কাজ করছে, এবং হতাশাগ্রস্ত হবার কারণ নেই আমাদের। 
     
    অবশ্য তার মানে এও নয় যে, দুশ্চিন্তা করার মত কিছুই নেই। সারা পৃথিবীতেই গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ও সমাজের ওপর মৌলবাদী আক্রমণ যেভাবে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে, তাতে নিশ্চিন্ত হয়ে থাকা কঠিন তো বটেই। বিশেষত, মধ্যপ্রাচ্য ও ভারতসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অবস্থা যে খুবই খারাপ, তাতে সন্দেহ নেই। 
     
    শেষতক আমার মোদ্দা কথাটা এই যে, মৌলবাদী জঙ্গিপনা ও ধর্মান্ধ হিংস্রতার যে চিত্র আমরা আজ দেখতে পাচ্ছি তা অবশ্যই বাস্তব এবং গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু তা এক আংশিক ও স্বল্পমেয়াদি প্রবণতা। এ প্রবণতা সম্ভবত আমাদের বৈশ্বিক  ইতিহাসের কোনও সামগ্রিক, দীর্ঘমেয়াদি ও নিষ্পত্তিমূলক গতিপ্রকৃতির প্রতিনিধিত্ব করেনা। 
     
     
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে প্রতিক্রিয়া দিন