এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  প্রবন্ধ

  • ‘আমরা আর তোমরা’র গল্পঃ একটি মিঠেকড়া আলাপন

    Ranjan Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    প্রবন্ধ | ২৯ জানুয়ারি ২০২৪ | ২৯৮৯ বার পঠিত | রেটিং ৪.৬ (৭ জন)
  • ‘আমরা আর তোমরা’র গল্পঃ একটি মিঠেকড়া আলাপন

    ওরা থাকে ওধারে

    আমরা-ওরা এই শব্দযুগলের ধারণাটি অনেক পুরনো। ছোটবেলা থেকেই শিখে ফেলি -- ওরা খারাপ, ওদের সঙ্গে খেলতে যাবি না। হ্যাঁ, বড়রা শিখিয়ে দেয়। এখন বড় হয়ে গিয়েও রেহাই নেই। আমার থেকে আরও বড়রা শেখাচ্ছেনঃ

    ‘আমরা ভাল লক্ষী ছেলে,
    তোমরা ভারি বিশ্রী,
    তোমরা খাবে নিমের পাঁচন,
    আমরা খাব মিশ্রী।

    খেয়াল হয়, বুড়ো হয়েছি। তাই মাথায় নানান চিন্তা।
    বিদেশ থেকে আসা এক ছোটবেলার বন্ধুকে ধরলাম।
    আচ্ছা, আমরা মানে কী? আমরা বলতে ঠিক কাদের বোঝায়?
    -- এটা কোন কথা হল? আমরা মানে আমরা। মানে যারা একইরকম। আর ওরা মানে যারা আমাদের মত নয়, অন্যরকম।
    -- কোন মাপকাঠিতে এক? লম্বায়, গায়ের রঙে? নাকি ভাষায়? অথবা ধর্মে?
    -- সবগুলোই মাপার একক হতে পারে, অবস্থা বুঝে।
    -- বুঝলাম না।
    -- যখন যে মাপকাঠিতে যাদের সঙ্গে মেলে, তারা হবে ‘আমরা’। যেমন, স্বদেশ আর বিদেশ। স্বদেশের লোকজন আমার জন্যে ‘আমরা’। আর বিদেশের লোকজন আমার চোখে ‘ওরা’। বিদেশ যাত্রার জন্যে ইমিগ্রেশন লাইনে দাঁড়ালে যাদের একই দেশের পাসপোর্ট আছে তারা হল ‘আমরা’। যারা ‘আমরা’ নয়, তারা সবাই ‘ওরা’। আবার যাদের আমেরিকান ভিসা আছে , তারা একধরণের ‘আমরা’। আবার যাদের শেনগেন ভিসা, তারা অন্যধরণের ‘আমরা’। যেমন আমেরিকানদের জন্যে সমস্ত আমেরিকান নাগরিক ‘আমরা’ আর বাকি সবাই ‘ওরা’।
    -- তাই? তাহলে ওদের দেশে সাদা মানুষ কালো মানুষ সবাই ওদের জন্যে ‘আমরা’, একই আইন, একই ব্যবহার।
    -- সে আর বলতে!
    -- তাহলে মাঝেমধ্যেই কালোদের প্রতি আমেরিকান পুলিশের ব্যবহার আইন না মেনে বর্বরতার মাত্রা ছাড়ায় কেন? ‘ব্ল্যাক লাইভস্‌ ম্যাটার’ আন্দোলনে লাখে লাখে কালো মানুষদের পথে নামতে হয় কেন?
    -- সেটাই তো কথা। তখন বুঝতে হবে অবস্থা বিশেষে আমেরিকান পুলিশের চোখে সমস্ত সাদা আমেরিকান ‘আমরা’ হয়ে গেছল, আর ‘কালো’রা ‘ওরা’।
    -- তাই বলে কালো আমেরিকানকে অমন করে মেরে ফেলতে হবে? ও যে বারবার বলছিল—শ্বাস নিতে পারছি না!
    -- সেটাই স্বাভাবিক। কারণ, ‘আমাদের’ জন্যে আছে আদর ভালোবাসা প্রাণের টান। আর ‘ওদের’ জন্যে বিরক্তি, তাচ্ছিল্য ও ঘৃণা।
    -- দেখ, রবীন্দ্রনাথ তাঁর বাংলা ব্যাকরণের বইয়ে দুটো প্রত্যয়ের – টি এবং টা—ফারাক বোঝাতে গিয়ে উদাহরণ দিয়েছেন। ধর, দুটো বাচ্চা উঠোনে খেলছে। কিন্তু আমাদের চোখেঃ
    মোদের বাড়ির ছেলেটি,
    নাচে যেন ঠাকুরটি।
    ওদের বাড়ির ছেলেটা,
    লাফায় যেন বাঁদরটা।
    -- বুঝলাম, কিন্তু এই একরকম আমরা ভেঙে অন্যরকম আমরা হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা ঠিক কেমন যেন লাগছে। চীনের বিরুদ্ধে আমেরিকার সব নাগরিক ছিল ‘আমরা’। আবার ঘরের মধ্যে সাদা আমেরিকান ‘আমরা’ থাকল, কিন্তু ‘কালো’ আমেরিকান হঠাৎ ‘ওরা’ হয়ে গেল। আবার গত শতাব্দীর সত্তরের দশকে ভিয়েতনাম যুদ্ধের প্রতিবাদে একই আমেরিকার নাগরিক সমাজের ভেতর ‘আমরা’ ‘ওরা’ গজিয়ে উঠল!
    -- না বোঝার কী আছে। যেমন বোম্বাই বা কর্ণাটকের বিরুদ্ধে রণজি ক্রিকেটে সব বাঙালী এককাট্টা। তখন ‘আমরা বাঙালী’। কিন্তু ডার্বি ম্যাচে বাঙালদের জন্যে ইস্টবেঙ্গল হল ‘আমরা’ আর মোহনবাগান হল ‘ওরা’। আর ঘটিদের জন্যে ‘মোহনবাগান’ হল ‘আমরা’, ইস্টবেঙ্গল ‘ওরা’। নিজেদের ঘরের মধ্যে বাপের বাড়ির লোকজন হল আমরা আর শ্বশুরবাড়ির সবাই ‘ওরা’ বা অপর। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় এতদিন ধরে পাশাপাশি থাকা ভিন্ন সম্প্রদায়ের লোক এক পলকে ‘আমরা’ থেকে ‘ওরা’ হয়ে পরস্পর বিষাক্ত নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করে।
    আরে অন্যে পরে কা কথা, সাম্যবাদের আদর্শে দীক্ষিত নেতাও একসময় "আমরা ওরা"র কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন। বলে ওঠেন, "আমরা ২৩৫, ওরা ৩০"।

    -- বুঝেছি, এই বিভেদের ব্যাপারটা আবহমান কাল থেকে রয়েছে। ঋগবেদের সময়ে বহিরাগত বিজয়ী আর্যরা এদেশের স্থানীয় অধিবাসীদের অনার্য, দাস, দস্যু বলে নাক সিঁটকেছেন। এমনকি পণি বলে তৎকালীন বণিক গোষ্ঠীও এই ঘৃণার আক্রমণ থেকে বাদ পড়েন নি।
    -- সমগ্র খৃষ্টান ইউরোপে ইহুদীরা ব্রাত্য, এবং নির্যাতন ও নির্বাসনের শিকার।
    ওদের বিরুদ্ধে এই জাতক্রোধের কারণ --আরে, ওরাই তো আমাদের যীশুখৃষ্টকে ক্রুশে চড়িয়েছিল—গোছের ভাবনা।

    সে তো কোন যুগে; তার জন্যে দু’হাজার বছর ধরে তাদের প্রায়শ্চিত্ত করে যেতে হবে? এটা কোন কথা হল!
    -- আচ্ছা! এতে আশ্চর্য হওয়ার কী আছে? আমাদের দেশেও কি মুসলমানেরা ‘অপর’ নয়? ওদেরও কি বাইরে থেকে আসা বিদেশি বর্বর আক্রমণকারী বলা হয় না?

    বটেই তো। কয়েকশ’ বছর আগে মোগল পাঠানের দল মন্দির ভেঙেছে, লুঠতরাজ করেছে এবং হত্যা ও ধর্ষণ করেছে বলে আজ সব মুসলমানকে সন্দেহের চোখে দেখা হয় না? ওদের থেকে প্রতিপদে দেশের প্রতি বিশ্বস্ত থাকার প্রমাণ চাওয়া হয় না? কথায় কথায় – ‘মিঞা তুই পাকিস্তানে যা’— বলা হয় না!

    -- কথাটা পুরোপুরি সত্যি নয়। আসলে ওরা ধর্মের ভিত্তিতে দেশ ভাগ করালো এবং যার ফলে প্রচুর মানুষ প্রাণ, সম্মান এবং ভিটেমাটি হারিয়ে পথে নামল। কাজেই সাধু সাবধান!
    এরা যেখানে সংখ্যালঘু সেখানে মাথা নীচু করে থাকে। কিন্তু কোন এলাকায় বা জেলায় ঘেট্টো বানাতে পারলেই ওদের হাবভাব বদলে গিয়ে সিঙ্ঘি অবতার হয়ে ওঠে। ওদের বাড়তে দিলে ফের দেশভাগ হবে, সেটা কি ভাল কথা? তুমি সেকুলার সেকুলার বলে গলা ফাটাও আর এদিকে ধর্মীয় উন্মাদদের দেশ ভাগ করাকে জনগণের ইচ্ছে বলে সমর্থন কর!

    আর এরা কি বহিরাগত? লুটেরা?
    --অবশ্যই। ওরা কি বাইরে থেকে আসেনি? মহম্মদ বিন কাসিম অষ্টম শতাব্দীতে সিন্ধু নদের ওপার থেকে এসে হিন্দু রাজা দাহিরকে পরাজিত করে ভারতে ঢোকেনি? আর পঞ্চদশ শতাব্দীতে বাবর? ও কি উজবেকিস্তানের ফরগণা উপত্যকার লোক নয়?

    তাহলে আমার একটা প্রশ্ন; এই যে তুমি ভারতের আইআইটি থেকে যোগ্যতার সঙ্গে পাশ করে আমেরিকায় গিয়ে সিলিকন ভ্যালিতে ভাল চাকরি করছ, ওদেশে বাড়ি গাড়ি হয়েছে, সম্মানের সংগে সপরিবারে দিব্যি আছ — তুমি কি বহিরাগত লুটেরা?

    কেন নও? তুমি তো আমেরিকার বাইরে থেকে এসে ক্যালিফোর্ণিয়া থেকে ডলার কামিয়ে ভারতের ব্যাংকে পাচার করে আমেরিকার তুলনায় বেশি ইন্টারেস্ট কামাচ্ছ? তোমারও লাভ, ভারতেরও লাভ। এদেশের বিদেশি মুদ্রা ভান্ডার তোমার মত লোকেদের জন্যে ই ফুলে ফেঁপে উঠছে।
    কিন্তু একজন নিম্নবিত্ত আমেরিকানের জায়গা থেকে দেখ। সে দেখছে তুমি তার রোজগারে ভাগ বসিয়েছ। কোম্পানি কম টাকায় তোমাকে আউটসোর্সিং করে একজন পড়াশুনো করা আমেরিকান যুবকের পাতে জল ঢেলে দিয়েছে।

    -- বাজে কথা। আমি এখন ওদেশের নাগরিক, রীতিমত ট্যাক্স দিই। আমার এবং আমাদের মত অনেক প্রবাসী ভারতীয়র টাকায়, সে যত ভগ্নাংশই হোক, ওদেশের রাষ্ট্র পরিচালিত হয়; অনেক সামাজিক কল্যাণের কাজ হয়। আর আমার কারিগরি দক্ষতা আজ আমেরিকার মত দেশের উন্নয়ন এবং সম্পদ বৃদ্ধিতে সহায়ক। আমি কেন লুটেরা হব? লুটেরা হল ওরা যারা একদেশের সম্পদ ছলেবলে কৌশলে, বিশেষ করে রাষ্ট্র ক্ষমতার পেশিবলে, নিজের দেশে নিয়ে যায়।

    তাহলে দুটো কথা।

    এক, তোমার সংজ্ঞা মানলে বলতে হয় -- লুটেরা হল ইংরেজ; মুসলমান বা তুর্কিরা নয়। বাবর হোক বা ইব্রাহিম লোদী, এদেশ থেকে সোনাদানা, ধনসম্পদ, ময়ুর সিংহাসন ইংল্যান্ডেকে নিয়ে গেছে? ক্লাইভের সময় থেকে প্রতি বছর ইংল্যাণ্ডে কর আদায়ের কত বড় হিস্যা ব্রিটেনে গেছে এবং ভারতের হস্তশিল্প ধ্বংস করে ওদেশের শিল্প বিপ্লবে সহায়ক হয়েছে। আর চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে দেশে দুর্ভিক্ষ ও প্রাণহানির খতিয়ান?
    -- থামো, থামো। গজনীর সুলতানের সতেরোবার সোমনাথ আক্রমণ এবং সোনাদানা লুঠ করে নিজের দেশে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা ভুলে গেলে?

    দেখ, মহম্মদ ঘোরী নিশ্চয়ই লুঠেরা, ও তো এদেশের ক্ষমতা দখল বা সাম্রাজ্য বিস্তার করতে আসেনি। কিন্তু কয়েকশ’ বছর ধরে যে সুলতানি এবং মোগল শাসন — তারা এদেশেই রয়েছে। সম্পদ নিয়ে উজবেকিস্তান বা তুর্কমেনিস্তান চলে যায় নি তো!
    ওরা বরং এদেশের সম্পদ বৃদ্ধি করেছে। ভারতে মুঘল শাসনকালে (১৫২৬-১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দ) বিদেশি বাণিজ্য, কৃষির ও কর ব্যবস্থার উন্নতির ফলে দেশের জিডিপি বা গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট ছিল বিশ্বের অর্থনীতির ২৫.১%। সুবে বাংলা ছিল সাম্রাজ্যের উন্নত কৃষি, জাহাজ নির্মাণ, রপ্তানি বাণিজ্যের সমন্বয়ে সবচেয়ে সমৃদ্ধ রাজ্য।[1] আর মুঘলেরা আকবরের সময় থেকে কৃষির উপর ফসলের প্রায় ৫০% কর ধার্য করে এবং বাণিজ্যের জন্যে ব্যাপক যাতায়াত ব্যবস্থা, দেশজুড়ে বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে একই রৌপ্যমুদ্রার প্রচলন করে। তৎকালীন ভারতের পেশোয়ার থেকে কলকাতা অবধি বিস্তৃত গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড দিল্লির মুসলিম শাসনের সময়ই ভাল ভাবে সংস্কার করা হয়। [2]
    কিন্তু বৃটিশ সাম্রাজ্যের সময় ঔপনিবেশিক লুঠের ফলে ভারতে শিল্পের ভ্রুণ অবস্থা মার খায় এবং ওরা দেশের অর্থনীতিকে এমন ছিবড়ে করে দেয় যে ১৯৫২ নাগাদ বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ভারতের জিডিপি ৩% হয়ে যায়। এই বিষয়ে অর্থনীতির কেম্ব্রিজ ইতিহাসবিদ অ্যাঙ্গাস ম্যাডিসনের গবেষণার সঙ্গে মনমোহন সিং সহমত। [3]

    -- আরে জিডিপি বেড়েছিল তো কি হয়েছে, ভারতের কৃষকদের অবস্থা কি ভাল হয়েছিল? ফসলের ৫০% খাজনা দিয়ে চাষির হাতে কী থাকে? মোগল সম্রাটরা বিলাসব্যসনে দিন কাটাতেন, স্মৃতিসৌধ, প্রাসাদ বানাতেন। তাজমহল বা লালকেল্লা দেখে কেউ তখনকার কৃষকদের অবস্থা বুঝতে পারবে?

    তাহলে ফের দুটো কথা বলতে হচ্ছে।

    এক, তখন চাষ করতে খরচ খুব কম হত, পরিশ্রমটাই ছিল আসল। কোন কেমিক্যাল সার বা পোকা মারার ওষুধ দেয়া হত না। বীজধান কিনতে হত না। তাই ৫০% খাজনা দিয়েও যা থাকত সেটা খুব কম নয়। আজকের সঙ্গে তুলনা কর।

    এখন চাষের উপর আয়কর নেই। কিন্তু সমস্ত ইনপুট -- উচ্চফলনশীল বীজ, কেমিক্যাল সার, কীটনাশক কিনতে গেলে অপ্রত্যক্ষ কর বা জিএসটি, সেচ কর, মজুরি, বাজারে বিক্রি করতে গাড়িভাড়া সব জুড়ে দেখলে চাষির মাঝে মধ্যে আত্মহত্যা করা ছাড়া উপায় নেই। তাই প্রতি বছর ন্যায্য মূল্য নির্ধারণের দাবিতে বিভিন্ন রাজ্যের চাষিরা পথে নামে, একবছর ধরে পঞ্জাব, পশ্চিম উত্তর প্রদেশ ও রাজস্থানের চাষিরা রাজপথে ধর্নায় বসে।

    চাষির আয় দ্বিগুণ হওয়ার প্রতিশ্রুতি এখন আরেকটি জুমলা হয়ে গেছে।

    দুই, মানছি সম্রাটদের বিলাসব্যসন বা উঁচু মিনার দেখে চাষিদের অবস্থা বোঝা যাবে না। কিন্তু দিল্লীশ্বরদের ব্যাপারটাই ওই রকম -- স্মৃতিস্তম্ভ বানাবেই।
    এখন যে ১৮২ মিটার উঁচু স্ট্যাচু অফ ইউনিটি এবং নতুন সংসদ ভবনের সেন্ট্রাল ভিস্তা তৈরি হয়েছে তা দেখে কি কেউ আন্দাজ করতে পারবে যে আমাদের দেশের গত এক দশকে (২০১২-২১) তৈরি সম্পদের ৪০% মাত্র ১% লোকের কুক্ষিগত, ৫% ভারতীয়ের হাতে দেশের ৬০% সম্পদ; আর সম্পদের মাত্র ৩% চুঁইয়ে চুঁইয়ে তলার ৫০% জনতার কাছে পৌঁছয়?[4]

    -- বেশ, তুমি বলতে চাইছ যে আমাদের পুরনো দুর্দশার জন্যে দায়ী বৃটিশ, আমাদের রাগ মোগলদের ছেড়ে ওদের উপরই বেশি হওয়া উচিত।

    ঠিক তাই। অথচ, তোমাদের সাদা চামড়ার সায়েবদের নিয়ে কোন কথা নেই। কবে মোগল শাসন শেষ হয়ে গেছে। তারপর দুশো বছরের বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসন। যাতে ভালোর চেয়ে খারাপ বেশি হয়েছে। কিন্তু তোমরা ইতিহাসের চাকা পেছনে ঘুরিয়ে খামোখা প্রলাপ বকছ।

    --- আমরা তো জিডিপি নিয়েই খুশি। বলতে থাকি – ভারতের জিডিপি ৩ ট্রিলিয়ন হয়ে গেছে। শীগগিরই বিশ্বে চার নম্বর থেকে তিন নম্বর (জিডিপির হিসেবে) স্থান দখল করবে!

    হ্যাঁ, তোমরা এখন গত এক দশকে ভারতের জিডিপি বৈশ্বিক জিডিপি’র ৮.৭% হয়ে গেছে বলে খুশিতে ডগমগ, যদিও চিনের ও আমেরিকার অনুপাত ১৮.২% এবং ১২.৪%। [5]

    কিন্তু যে কথাগুলো এড়িয়ে যাও তা হল -- এত দশক পরেও আমাদের দেশের বেকারত্বের সূচক 7.33% [6] আর বিশ্ব ব্যাংকের রিপোর্ট বলছে গত এক দশক ধরে গড় সূচক হচ্ছে 7.83% ; অর্থাৎ কর্মক্ষম এবং কাজ করতে ইচ্ছুক জনসংখ্যার প্রায় সাড়ে সাত প্রতিশত লোক কাজের অভাবে বসে রয়েছে।

    শুধু এই নয়, গরীবের জন্যে এত ভাল ভাল কথা এত সব যোজনা সত্ত্বেও ২২.৯ কোটি গরীব মানুষ আজ ভারতে বাস করে। এই একটা ব্যাপারে আমরা এগিয়ে। বিশ্বের কোন দেশে এত বেশি গরীব থাকে না। কোভিড মহামারীর প্রকোপ কমার পরও একবছর ৮০ কোটি মানুষকে বিনে পয়সায় র‍্যাশন দেওয়া হয়েছে। মানে সরকার মেনে নিয়েছে যে ১৪০ কোটির ভারতবর্ষে ৫৬% লোক নিজের জন্যে দু’বেলা পেটভরে খাওয়ার জোগাড় করতে অক্ষম!

    এসব নিয়ে কোন চিন্তা নেই, খালি একে পাকিস্তান পাঠাও, তাকে পাকিস্তান পাঠাও! আর দেশের এই অবস্থার জন্যে নেহেরুকে দায়ী করা, ইংরেজকে নয়।

    -- কিছুই বোঝ নি। ইংরেজ তো চলে গেছে। ওদের সঙ্গে ঝগড়া করতে কি ইংল্যাণ্ডে দৌড়তে থাকব? কিন্তু মুসলমানরা রয়ে গেছে। একশ’ ঊনচল্লিশ কোটি লোকের দেশে ১৯.৭ কোটি মুসলিম, জনসংখ্যার ১৪.২% [7] , ভাবা যায়!

    এটা আমার মুখের কথা নয়, সংসদে শ্রীমতী স্মৃতি ইরানী, অল্পসংখ্যক বিষয়ের ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী একটি প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছেন।

    তাতে কী হল? ওদের এদেশের নাগরিক বলে মেনে নিতে বাধা কোথায়? তুমি যদি আজ আমেরিকায় গিয়ে গ্রীন কার্ড, পরে নাগরিকত্ব পেয়ে যেতে পার, তাহলে যারা দুই প্রজন্ম ধরে এই দেশে আছে, ভোট দিচ্ছে, চাকরি করছে, ব্যবসা করছে — ওদের মন থেকে স্বীকার করতে পারছ না কেন?

    -- মূল প্রশ্নে ফিরে এস। আমরা এবং ওরা। ধর্মের ভিত্তিতে একটু চোখ খুলে দেখ। আমাদের ভারত তিন টুকরো হল — দুপাশে দুই পাকিস্তান, মাঝখানে ভারত। ওদের ধর্ম আরবের মরুভূমির। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আলাদা। আমাদের সিন্ধু -গঙ্গা-যমুনার তীরে গড়ে ওঠা সভ্যতা। তেলে-জলে মিশ খায় না।

    উঃ এত বাজে বকতেও পারে। তোমার সিন্ধু নদ ও তার অববাহিকার বেশির ভাগটাই এখন পাকিস্তানের অংশ। মহাভারতের গান্ধার এখন কান্দাহার, পুরুষপুর আজ পেশোয়ার। এমনকি মহেঞ্জোদারো-হরপ্পা-কালিবংগান ভারতে নয়, পাকিস্তানে।
    তাহলে সেই ঐতিহ্যরক্ষার খাতিরে মিলেমিশে থাকা যায় না? মারামারি করতেই হবে?

    -- তাই তো বলছি। যদি ধর্মের ভিত্তিতে দেশ ভাগ হয়ে ভারত-পাকিস্তান হল তাহলে এপারের বৃহৎ অংশের নাম হিন্দুস্থান হবে না কেন? আশি প্রতিশত বড়, নাকি ১৪% ? বহুসংখ্যকের মত গুরুত্ব পাবে না – এটা কেমন গণতন্ত্র?

    উফ, এবার একটু আমার কথাটা শোন।

    বর্তমানের পাকিস্তান, অর্থাৎ পশ্চিম পাকিস্তানের মুসলিম জনসংখ্যা ১৯৪৭ সালে ছিল ৩.২৫ কোটি আর ২০০৬-০৭ সালে সেটা হয়েছে ১৫.৭ কোটি। আর ২০১৭ সালে ২০ কোটি (৯৬.৫%) এবং হিন্দু ৪৪ লক্ষ (২.১৪%)। (সূত্রঃ উইকিপিডিয়া)

    ভারতে মুসলিম জনসংখ্যা ১৯৫১ সালের জনগণনা অনুয়ায়ী ছিল ৩.৫৪ কোটি (১০%), ২০১১ সালে ১৭.২ কোটি, এখন ২০২৩ সালে অনুমানিত ১৯.৭ কোটি (১৪%)।

    মানে যে মুসলমানেরা ভারতে রয়ে গেল তারা পশ্চিম পাকিস্তানের মুসলিম জনতার চেয়ে সংখ্যায় কম ছিল না। আর এখনও প্রায় সমান সমান।

    অর্থাৎ যারা স্বেচ্ছায় দাঙ্গার আতংকের মাঝেও সাহস করে ভারতে রয়ে গেলেন, তারা জিন্নার দ্বিজাতিতত্ত্বকে অস্বীকার করলেন এবং এই দেশের মাটিকে ভালবাসার প্রমাণ দিলেন। এঁদের একাংশ বিজ্ঞান সাহিত্য সঙ্গীত ও শিল্পকলার চর্চায় ভারতের মুখোজ্বল করলেন। ক্রিকেট, ফুটবল, হকির কথা ছেড়েই দিলাম। তারপরেও অবিশ্বাস?

    যে মেষপালক কারগিল এলাকায় পাকিস্তানি অনুপ্রবেশের খবর দিল তার ধর্মীয় পরিচয় কী ছিল? ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে পাকিস্তানের প্যাটন ট্যাংকের ঢাকনা খুলে ভেতরে গ্রেনেড ফেলে আত্মঘাতী প্রতিরোধে রুখে যে সৈনিক রুখে দাঁড়ালেন তার নাম হামিদ।

    -- দূর! ওসব বিচ্ছিন্ন ব্যতিক্রমী উদাহরণ দিয়ে কোন লাভ নেই। ‘ওরা’ ওরাই থাকবে, ‘আমরা’ হবে না। আমরা পূবমুখো, সুর্য তো পূবে ওঠে, ওরা নামাজ পড়ে পশ্চিমে মুখ করে। আমরা কীভাবে হাত ধুই আর ওরা কীভাবে ‘ওজু’ করার সময় হাত ধোয় দেখেছ? একেবারে উলটো।
    মাইকেল ঠিক বুঝেছিলেন। তাই ‘বুড় শালিকের ঘাড়ে রোঁ’ নাটকে ভক্তপ্রসাদের মুখ দিয়ে বলিয়েছেন — তেঁতুল নয় মিষ্টি, নেড়ে নয় ইষ্টি!
    তাই বলছি, যদি জনসংখ্যা অদলাবদলি হত, তাহলে সব মুসলমান ওপারে, সব হিন্দু এপারে। ব্যস, কোন দাঙ্গা হত না। কেমন? ঠিক বলেছি না?

    দেখছি, তোমার মাথাটা একেবারে গেছে। যদি ধরেও নেই যে ওদের সঙ্গে আমাদের ফারাকটা খুব বেশি তাহলেও কি পাশাপাশি থাকা যায় না? ওরা ওদের মত করে থাকবে আর আমরা আমাদের মত?
    অনেকক্ষেত্রেই তো আমরা আজকাল ফ্ল্যাট বাড়িতে একে অন্যের ঘরে উঁকি মারি না, অনেক ক্ষেত্রে নাম পরিচয়ও জানি না।
    না হয় ওদের ঘরে ঈদের দিন বিরিয়ানি বা ফিরনি খেতে গেলাম না, কোলাকুলি করলাম না। ওরাও বিজয়াদশমীর দিন বা দোলের দিন আমাদের বাড়ি এল না। তাতেও পাশাপাশি বা এক পাড়ায় কেন থাকা যাবে না? ওদের বাড়ি ভাড়া দেওয়া যাবে না? ওদের দোকান থেকে জিনিসপত্তর কেনা চলবে না? ড্রাইভার বা কাজের মাসি রাখার সময় তার ধর্ম পরিচয় বড় হয়ে উঠবে!

    -- উপায় নেই। একটু গৈরিক রাষ্ট্রবাদ বোঝার চেষ্টা কর। ভারতে শিক্ষার অভাব এবং আর্থিক পশ্চাদপদতার বিচারে সমাজের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায় কোনটি সে নিয়ে কারও সন্দেহ নেই। সবচেয়ে বেশি বেকার সবচেয়ে বেশি গরীব কোন সম্প্রদায়ে? সাচ্চার কমিটির রিপোর্ট যথেষ্ট সোচ্চার। তাই তারা যদি এদেশ ছেড়ে চলে যায় তাহলে এক ঝটকায় আমাদের দেশ দারিদ্র্যের সূচকে বেশ কিছুটা ওপরে উঠবে এবং আমাদের মাথা পিছু জিডিপির হারও অনেক বেশি হয়ে যাবে। তারপর ভারত নিজে নিজেই হিন্দুরাষ্ট্র হয়ে যাবে। প্রায় হয়েই গেছে, তোমাদের মতন কয়েকজনকে বোঝানো বাকি, আর হাতে গোণা ক’জন না বুঝলেও কিছু আসে যায় না।
    আর মানছি, সব মুসলমান টেররিস্ট নয়, কিন্তু গোটা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি টেররিস্ট কোন ধর্মের লোক? বোকো-হারাম এবং আইসিস কাদের সংগঠন? কাজেই যে কাজটা অসমাপ্ত রয়ে গেছে, সেটা আমাদের পুরো করতে হবে।

    সেই কাজটা কী?
    -- “আর্য সনাতন বঙ্গভূমিতে রাখিব না আর যবন চিহ্ন”।

    তাই বাবরি মসসজিদের পর ভারতে আরও পাঁচশ মসজিদ ভাঙা হয়েছে? [8] এত ঘৃণা কেন?
    -- মানুষ যুক্তি মেনে বিশ্লেষণ করে কাজ করে না। সে প্রেরণা পায় তার মানস জগতে মৌলিক আবেগের (basic emotion) তাড়নায়। যেমন, প্রেম, ভয়, আনন্দ, ঘৃণা এইসব।
    তোমরা ঘৃণার শক্তি চেন না। প্রেম-ভালবাসা নয়, ঘৃণাই মানুষকে শক্তি যোগায় লড়াইয়ের ময়দানে শত্রুর মাথাটা ধড় থেকে এক কোপে নামিয়ে দিতে। সামনের লোকটাকে তুমি যদি মানুষ ভাব, তাহলে মারতে পারবে না, হাত কাঁপবে। আর যদি ওকে ইঁদুর, আরশোলা, কেঁচো বা সাপ ভাবতে পার তবে অনায়াসে মারবে। নিজের বাঁচার তাগিদে অপরকে মেরে ফেলবে।

    হ্যাঁ, বোকো-হারাম, আইসিস বা তালিবানের মত সংগঠনের মানস জগতেও ঘৃণা স্বরাট। ঠিকই বলেছ, তীব্র ঘৃণা মস্তিষ্কের কোষে কোষে শরীরের প্রতিটি রক্তকণায় দৌড়ে না বেড়ালে কোন বানু’র তিন বছরের বাচ্চাকে আছড়ে মেরে ফেলা যায় না, সেই গর্ভবতী নারীর সামনে তার পরিবারের অধিকাংশকে হত্যা করে তাকে গণধর্ষণ করা যায় না। ঠিক বললাম?
    তা’ তোমার কল্পনার হিন্দুরাষ্ট্রে মুসলমানের জায়গা হবে না?

    -- মুসলমানেরা থাকতে পারে, যদি তারা পোশাকে আশাকে চলা ফেরায়, খাওয়াদাওয়ায় আচরণে বেশি মুসলমানপনা না দেখায়। অর্থাৎ ওদের মুসলমান বলে সহজে চেনা না যায়। ওরা থাকবে আমাদের দয়া ও শুভেচ্ছার ভরসায়।

    বুঝতে পেরেছি, কানহাইয়া কুমারেরা জামিন পেয়ে নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবে, কিন্তু উমর খালিদেরা বিনা বিচারে জেলের ভেতর থাকবে। মায়া কোদনানি, বাবু বজরঙ্গী, বিট্টু বজরঙ্গীরা প্রথমে জামিন তারপর প্রমাণের অভাবে ছাড়া পেয়ে যাবে, কিন্তু ৮৩ বছরের ফাদার স্ট্যান স্বামী জেলের ভেতর মারা পড়বে।
    কিন্তু এখনও বুঝলাম না এত বছর পরেও ভারতে ‘হিন্দু বিপন্ন’ শ্লোগানের মানে কী?

    -- দুটো মানে। ভেতরের সত্যি হল ‘আমরা’ যদি ‘বিপন্ন’ না হই, তাহলে ‘ওরা’ আমাদের শত্রু ভাবব কেন? ওদের ঘৃণা করব কী করে?

    আর আপাতদৃষ্টিতে ওরা জনসংখ্যায় আমাদের ছাড়িয়ে গিয়ে একদিন আমাদের ‘অপর’ করে দিতে পারে এই আশংকা কী নেই? এবার তোমাদের মত মানুষজনকেও বেছে নিতে হবে তুমি কাদের সঙ্গে, কী বল।

    --একটাই কথা। ঘৃণা শেষ কথা নয়, কিন্তু দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে অ্যাসিডের মত, নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। তোমরা ঘৃণা দিয়ে শুরু করেছ, কিন্তু শেষ অন্য কেউ করবে -- এখনও মণিপুর জ্বলছে।

    [1] Sanjay Subrahmanyam (1998). Money and the Market in India, 1100–1700. Oxford University Press. এবং Roy, Tirthankar (2012). "Consumption of Cotton Cloth in India, 1795–1940". Australian Economic History Review. 52 (1)
    [2] Roy, Tirthankar (2012). "Consumption of Cotton Cloth in India, 1795–1940". Australian Economic History Review. 52 (1): 61–84.
    [3] Manmohan Singh, Of Oxford, economics, empire, and freedom, The Hindu, July 2005.
    [4] The Indian Express, 7 April, 2023.
    [5] https://www.worldeconomics.com London.
    [6] Global Economy.com
    [7] ইকনমিক টাইমস্‌, ২১ জুলাই, ২০২৩।
    [8] The Siasat Daily, 6 December, 2020

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • প্রবন্ধ | ২৯ জানুয়ারি ২০২৪ | ২৯৮৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Arindam Basu | ২৯ জানুয়ারি ২০২৪ ১১:৪৪528009
  • বড় ভাল লিখলেন রঞ্জনবাবু। 
    এই আমরা ওরার দ্বৈত বোধ টির একটি দারুণ অ্যান্টিডোট ভিয়েতনামের থিক নাট হান দিয়ে গেছেন, "interbeing", ওনার লেখা একটি ভারি সুন্দর কবিতা এখানে লিখে রাখলাম,
     
    Interbeing
     
    The sun has entered me.
    The sun has entered me together with the cloud and the river.
    I myself have entered the river,
    and I have entered the sun
    with the cloud and the river.
    There has not been a moment
    when we do not interpenetrate.
    But before the sun entered me,
    the sun was in me—
    also the cloud and the river.
    Before I entered the river,
    I was already in it.
    There has not been a moment
    when we have not inter-been.
    Therefore you know
    that as long as you continue to breathe,
    I continue to be in you
  • Kishore Ghosal | ২৯ জানুয়ারি ২০২৪ ১১:৪৯528010
  • সময়োপযোগী অত্যন্ত মূল্যবান লেখা। 
     
    তবু, একটা কথা না বলে পারছি না - "গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড দিল্লির মুসলিম শাসনের সময়ই তৈরি হয়[2" এই কথাটা কোনমতেই গ্রহণযোগ্য নয়। 
    কারণ এই রাস্তাটির মুসলিম শাসনের বহু বছর আগে থেকেই অস্তিত্ব ছিল। 
    সম্রাট অশোক এই রাস্তাটির বিস্তর উন্নতি সাধন করেছিলেন, পথের দুপাশে অজস্র গাছ লাগিয়েছিলেন এবং প্রচুর পান্থশালা নির্মাণ করিয়েছিলেন - বিশেষতঃ বণিকদের স্থলবাণিজ্যের সুবিধার্থে এবং বিশাল সাম্রাজ্যের সংবাদ ও সৈন্য পরিবহণের জন্য। এই পথের বিস্তার ছিল পশ্চিমের পুষ্কলাবতী (পুরুষপুর - পেশোয়ার) থেকে পূর্বের তাম্রলিপ্তি বন্দর পর্যন্ত। 
      
    শেরশাহকে কৃতিত্ব দেওয়া হয় - এই রাস্তা নির্মাণের জন্য - কিন্তু তিনি এই রাস্তাটির কিছু কিছু সংস্কার করেছিলেন  মাত্র - তার বেশি কিছু নয়। উদ্দেশ্য বাণিজ্য এবং দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে সৈন্যবাহিনীর যাতায়াতের সুবিধা। 
    এরপর থেকে মোগল এবং বৃটিশরাও একই উদ্দেশে এই রাস্তাটির উন্নতিসাধন করেছে...। এই রাস্তা ভারতের সভ্যতার প্রাচীনতম নিদর্শন বলাই যায়। 
  • Ranjan Roy | ২৯ জানুয়ারি ২০২৪ ১৩:০৬528012
  • অরিনদা,
       বড় সুন্দর কবিতা, প্রায় স্তোত্রের মত।
     
    কিশোরবাবু ,
        এই ভুলের জন্য আমি লজ্জিত।  আপনার বক্তব্য সঠিক।  ওই লাইনটি শুধরে নিচ্ছি।
  • :|: | 174.25.***.*** | ২৯ জানুয়ারি ২০২৪ ১৩:২৩528013
  • লেখার শুরুতে বেশ কিছু আমরা-ওরা উদাহরণ দিয়েছেন। ইতিহাসে ঢুকে যাওয়া ক্লাসিক "আমরা ২৩৫ ওরা ৩০"-টা আবারও শুনতে মঞ্চাইছিলো। :)
  • Ranjan Roy | ২৯ জানুয়ারি ২০২৪ ১৩:৩১528015
  • কিশোরবাবু
      শুধরে দিয়েছি।
     
    চতুর্ভুজ,
       একদম ঠিক।
     ঠোঁট এবং কীবোর্ডে আঙুল নিশপিশ করছিল। কিন্তু  শেষ মুহুর্তে মনে হল  ওটা এতবার এতজনে কোট করেছে (আমিও)  যে ক্লিশে হয়ে গেছে। এখন মনে হচ্ছে করলে হত।
    ধরুন, "ক্ষমতার অলিন্দে দাঁড়িয়ে শাসকের দম্ভ ( আমরা ২৩৫ তোমরা ৩০)" এমন একটা লাইন জুড়ে দেওয়া যেতেই পারে।
      আপনি খালি সংখ্যাটা একবার কনফার্ম করে  দিন, ওটাও ঢুকিয়ে দেব।
  • Arindam Basu | ২৯ জানুয়ারি ২০২৪ ১৪:৪৩528016
  • এটাও থাক, 
  • Ranjan Roy | ২৯ জানুয়ারি ২০২৪ ১৫:১৮528018
  • বহোত খুব! বহোত খুব!
  • সমরেশ মুখার্জী | ২৯ জানুয়ারি ২০২৪ ১৭:৪৯528019
  • “এখন বড় হয়ে গিয়েও রেহাই নেই। আমার থেকে আরও বড়রা শেখাচ্ছেনঃ” 

    এটা‌ও মোক্ষম সত্য। যত‌ই বড় হ‌ও না কেন -  শেখাতে, দাবাতে বা তাচ্ছিল‍্য করতে বহুরূপে সর্বত্র ছড়িয়ে আছেন তেনারা। করুণাময়ী ব‍্যান্ডের চ‍্যালাচামুণ্ডা, ধেয়ে আসা দামোদর বা গুরুর অদৃশ‍্য রক্তবীজের ঝাড়। wink
  • dc | 2401:4900:6349:baa1:259c:bfb4:7325:***:*** | ২৯ জানুয়ারি ২০২৪ ১৯:১১528022
  • ভালো লেখা, আমারও লেখার শুরুতেই আমরা ২৩৫ ওরা ৩৫ এর কথা মনে হয়েছিল  :-)
     
    আমার প্রিয় একটা গানের লাইন মনে পড়ে গেলঃ 
     
    I am human and I need to be loved
    Just like everybody else does
     
    গানের নাম হাউ সুন ইজ নাউ, ব্যান্ডের নাম দ্য স্মিথস, গানটা লিখেছিলেন লিড সিঙ্গার মরিসি আর গিটারিস্ট জনি মার। 
  • :|: | 174.25.***.*** | ৩০ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:১৬528035
  • ১৩:৩১-এর প্রেক্ষিতে: সংখ্যা ঠিকঠাক। "ক্ষমতার অলিন্দে দাঁড়িয়ে শাসকের দম্ভ (আমরা ২৩৫ তোমরা ওরা ৩০)"- ভালো আইডিয়া। 
    অথবা এভাবেও ভাবা যায় -- সাম্যবাদের আদর্শে দীক্ষিত নেতাও একসময় "আমরা ওরা"র কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন।বলে ওঠেন, "আমরা ২৩৫, ওরা ৩০।"
  • Kishore Ghosal | ৩০ জানুয়ারি ২০২৪ ১১:৪৬528038
  • সাম্যবাদ সব সময়েই  "আমরা" "ওরা"-য় বিশ্বাসী। প্রলেতারিয়েত-এর প্রলেপ চোখে লাগিয়ে তারা সবসময়ই "আমরা" ছিল আর "বুর্জোয়া", "সাম্রাজ্যবাদী, "ধনতান্ত্রিক"রা ছিল ওরা। কাঁটা তারের বেড়া, কংক্রিটের পাঁচিল - তাদের সেই বিভেদ-ভাবনার প্রত্যক্ষ নিদর্শন। 
  • Ranjan Roy | ৩০ জানুয়ারি ২০২৪ ১৭:৫৫528044
  • চতুর্ভুজ
       আপনার সাজেস্টেড লাইনটি যোগ করে দিয়েছি। 
     
    কিশোরবাবু
      অবশ্যই সাম্যবাদী দর্শন দ্বৈতবাদী।  আপনার সঙ্গে সহমত। 
  • সৃষ্টিছাড়া | 59.9.***.*** | ৩০ জানুয়ারি ২০২৪ ১৮:৪৩528046
  • বাংলাদেশে, পাকিস্তানে, আফগানিস্তান, মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কুয়েত, ইরাক, ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরসাহী, জর্ডন, সিরিয়া, মিশর কোথায় ধর্মের ভিত্তিতে সংখ্যালঘুরা মাথা নিচু করে থাকে না? ব্যতিক্রম কেবল ওমান যেখানে আমার থাকাকালীন ধর্মীয় সমানাধিকার সুরক্ষিত ছিল, সালটা ১৯৮২। 
    আঁতলামি করে কোনো ইসলাম ধর্মের মানুষকে আমি শূকর মাংস ভক্ষণ করতে দেখিনি, এমন কি খানসামা এদেশীয় মুসলিম রান্না করতে রাজি হতেন না, তাই নর মাংস ব্যতীত সর্বভুক এই সৃষ্টিছাড়া কে নিজের খাদ্য নিজেকেই পাক করতে হতো।
    মুসলিম বা আপনারা যাদের হিন্দু বলেন কেউ সৃষ্টিছাড়া র রন্ধন করেন নি।
    ধর্মও বুজরুকি সুড়সুড়ি সবাই দেয়, সৃষ্টিছাড়া পিতা মাতার মুখাগ্নি শ্রাদ্ধ, অশৌচ পালন করে নি, তবে সেবাদাস বা নার্স না রেখে জীবিত কালীন পিতা মাতার শুশ্রূষা করেছে এমন কি, হাসপাতালে গিয়েও।
  • Ranjan Roy | ৩০ জানুয়ারি ২০২৪ ১৯:৫১528048
  • সৃষ্টিছাড়াকে নমস্কার।
      আমারও একই কথা। 'আপ রুচি খানা'।
    আমি বাঙালী হয়েও মাছ খেতে পারি না, গন্ধ লাগে। ধনেপাতায় গন্ধ লাগে। কিন্তু বাকি সব কাঁকড়া মাকড়া খেয়ে ফেলি।
      খাবার নিয়ে জোরাজুরি নাপসন্দ।
    আমিও মায়ের শ্রাদ্ধ করি নি। তবে  আমি ও আমার স্ত্রী শেষ মুহুর্ত পর্য্যন্ত সেবা করেছি। মায় স্নান করিয়ে দেওয়াও।
  • পলিটিশিয়ান | 2603:8001:b102:14fa:eb39:e9a0:336d:***:*** | ৩০ জানুয়ারি ২০২৪ ২০:১৪528049
  • সাম্যবাদ আর অদ্বৈতবাদ যে এক নয় সেটা খেয়াল করিয়ে দেবার জন্য কিশোরবাবুকে ধন্যবাদ। সাম্যবাদ কথাটাও গোলমেলে। কমিউনিজমকে ওই শব্দে বঙ্গানুবাদ করাটা ভুল।
     
    মুসলমান শুকরমাংস খায়না সেটাও ভুল কথা। কেউ শুকরভোজী মুসলমান তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় নাই দেখে থাকতে পারেন। আমি আবার শুকরভোজী ও মদ্যপায়ী বেশ কয়েকজন মুসলমানের সাথে পরিচিত। কিন্তু তাতে কিই বা এলো গেলো? আমিও তো কুকুর খাব না। অপরিচয়ের কারণেই। আবার ঘোড়া পেলে খাব। সেখানে অপরিচয় বাধা হবেনা।
  • Ranjan Roy | ৩০ জানুয়ারি ২০২৪ ২১:৩৯528052
  • কিন্তু ডায়লেক্টিক্যাল মেটিরিয়ালিজম কি "অদ্বৈত বস্তুবাদ" নয়?
    বেদান্ত যেমন অদ্বৈত ভাববাদ।
    কারণ মার্ক্সবাদ বস্তু  এবং চেতনার প্রশ্নে বস্তুকে প্রাথমিকতা দেয়। চেতনাকে একদিকে অরগানিক ম্যাটারের বৈশিষ্ট্য এবং মানব চেতনাকে নির্দিষ্ট কালে নির্দিষ্ট সমাজের উপজ মনে করে। 
    বস্তু এবং চেতনাকে সমান গুরুত্ব দেয় দ্বৈতবাদী্রা।
     
    আমি ভাট বকলে ধরিয়ে দেবেন, প্লীজ। 
  • পলিটিশিয়ান | 2603:8001:b102:14fa:eb39:e9a0:336d:***:*** | ৩০ জানুয়ারি ২০২৪ ২১:৫৪528053
  • একটু ব্যাখ্যা করে বলুন কিভাবে ডায়ালেকটিকাল মেটিরিয়ালিজম দুই শ্রেনীর মধ্যে অদ্বৈতবাদ দেখায়। মূল পোস্টে আমরা ওরার বিভাগ তো বস্তু আর চেতনার বিভাগের কথা ছিলোনা।
     
     
  • যোষিতা | ৩১ জানুয়ারি ২০২৪ ০৩:২০528060
  • বস্তুমূলক দ্বন্দ্ববাদ
    একটু মুলো একটু পাদ
  • Ranjan Roy | ৩১ জানুয়ারি ২০২৪ ০৪:১০528063
  • @ পলিটিশিয়ান,
    আরে না না। আমরা- ওরা লেখাতে ওটা বলা হয়নি।
    বস্তু ও চেতনার প্রশ্নে মার্ক্সবাদ অদ্বৈতবাদী, যেহেতু চেতনার স্বতন্ত্র অস্তিত্ব স্বীকার করা হয় না।
    কিন্তু বস্তুর অস্তিত্বের প্রকৃতি হল দ্বন্দ্বমূলক। নিজের ভেতরেই দুইয়ের ঐক্য এবং সংঘর্ষ। 
    যেমন পুঁজি ও শ্রমের ঐক্য ছাড়া পুঁজিবাদী উৎপাদন সম্ভব নয়।  আবার উভয়ের বিকাশের জন্য সংঘর্ষ এবং একটির ধ্বংস অবশ্যম্ভাবী।
    মানব সমাজে এর প্রয়োগ ঐতিহাসিক বস্তুবাদ। 
    তাই কমিউনিষ্ট ম্যানিফেস্টোর গোড়া থেকেই দুই শ্রেণীর সংঘর্ষ এবং শ্রেণীসংগ্রামের কথা।
     
    এটাকেই কিশোর বামপন্থীদের আমরা-ওরা বলেছেন।  আর আমি হালকা চালে বামপন্থীদের দ্বৈতবাদ বলেছি।আপনার খারাপ লাগলে দুঃখিত।
  • পলিটিশিয়ান | 2603:8001:b102:14fa:eb39:e9a0:336d:***:*** | ৩১ জানুয়ারি ২০২৪ ০৬:৩১528067
  • রঞ্জনবাবু, আপনার কথা বুঝতে ভুল হবার জন্য দুঃখিত।
  • Ranjan Roy | ৩১ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:১২528069
  • আরে আমরা তো বন্ধু!
  • Kishore Ghosal | ৩১ জানুয়ারি ২০২৪ ১১:৪৭528072
  • @ যোষিতা - উঁঃ (৩৪ বছর নাক চিপে থাকতে হয়েছে।)
     
    @ রঞ্জনদা, দ্বৈত ও অদ্বৈতবাদের কপিরাইট ভারতীয় দর্শনের।   আর দ্বন্দ্ববাদে মার্ক্সসায়েব পেয়েছেন ফুল মার্কস। 
     
    সাধারণভাবে বলাই যায় পৃথিবীতে যত তন্ত্র  - সে গণতন্ত্র, সাম্রাজ্যতন্ত্র, ধনতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র, রাজতন্ত্র  - আরও যা কিছু আছে, সবকিছুই ক্ষমতাতন্ত্রে গিয়ে থেমে যায়।   ক্ষমতাতন্ত্র  মানে যদি পাওয়ারবাদ (Powerism) হয় - তাহলে  যোষিতাদেবীর ছড়াটি নিখুঁত  - মূলে যাই থাক আসলে পাদ বা পাওয়ারবাদ। smiley  
  • Kishore Ghosal | ৩১ জানুয়ারি ২০২৪ ১১:৫২528073
  • @ রঞ্জনদা, কিশোরবাবু বলতে কি আমাকে বুঝিয়েছেন? কিন্তু আমি তো "সর্বহারা" (চির) কিশোর এবং বুর্জোয়া "বাবু" নই। 
  • Ranjan Roy | ৩১ জানুয়ারি ২০২৪ ১৩:৪০528074
  • পাশ্চাত্য দর্শনে দ্বৈত অদ্বৈত  শব্দ বলা হয়না বটে, তার জায়গাতে আছে dualism,  non- dualism বা monisom.
     
  • যোষিতা | ৩১ জানুয়ারি ২০২৪ ১৬:৪১528075
  • কিশোরদা,
    ওটা আমার নয়, নবারুণের @পুরন্দর ভাট।
  • পলিটিশিয়ান | 2603:8001:b102:14fa:87bd:8ecb:96a7:***:*** | ৩১ জানুয়ারি ২০২৪ ১৭:১৫528076
  • সবকিছুই যে আসলে ক্ষমতা সেটা নিয়ে মার্কসবাদীদের কোন আপত্তি নেই। তারা সেটা খুবই বলে। লেনিনের স্টেট বইটা মনে করুন। রাষ্ট্র হল শ্রেণী নিপীড়নের যন্ত্র।
     
    এখন শ্রেণী যদি কখনো না থাকে তো রাষ্ট্র ও ক্ষমতা তন্ত্রও থাকবে না। কিন্তু তার আগে অনেক রাস্তা।
  • জিজ্ঞাসু | ৩১ জানুয়ারি ২০২৪ ১৮:০২528078
  • "এখন শ্রেণী যদি কখনো না থাকে তো রাষ্ট্র ও ক্ষমতা তন্ত্রও থাকবে না।" 
     
    তখন রাষ্ট্রযন্ত্র  সমগ্ৰ শ্রেণী‌হীন সমাজকেই নিপীড়ন করতে পারে না?
  • পলিটিশিয়ান | 2603:8001:b102:14fa:e04a:dab2:439c:***:*** | ৩১ জানুয়ারি ২০২৪ ২০:২২528079
  • কি হতে পারে সেটা আমিও জানিনা, আপনিও না। মার্কসবাদীদের মতে শ্রেণী না থাকলে শ্রেণী নিপীড়ন করে হবে? আর শ্রেণী নিপীড়নের যন্ত্র, অর্থাৎ রাষ্ট্রও তখন থাকবে না।
  • পলিটিশিয়ান | 2603:8001:b102:14fa:e04a:dab2:439c:***:*** | ৩১ জানুয়ারি ২০২৪ ২০:২৩528080
  • কি করে হবে?
  • হীরেন সিংহরায় | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১১:০৭528102
  • রঞ্জন

     মিঠেয়  কড়ায় মোক্ষম! হয়তো সকলে জানেন তবু ইউরোপের কিছু কাহিনি উঠে আসে এই প্রসঙ্গে বেলজিয়ামে রাস্তার এপারে আমরা ওয়ালুন (ফরাসি ) ওপারে  ওরা ফ্লানডারণ ( ফ্লেমিশ )  ওরা এ পাড়ায় ঘর ভাড়া পাবে না । সারায়েভো শহরে মুসলিম বসনিয়াক আমরা, সারবিয়ান ওরা – দেশ পতাকা এক , পাড়া আলাদা মস্তারে সেতুর ওপারে ওরা , ক্রোয়েশিয়ান ক্যাথলিক আমরা বসনিয়াক – স্কুল এক , ক্লাসরুম আলাদা প্রবেশ পথ আলাদা হাঙ্গেরিতে রোমানিয়ানরা ওরা , রোমানিয়াতে হাঙ্গেরিয়ানরা ‘ওরা’
    খেলার মাঠে এটা আবার অন্য চেহারা নেয় ।

    আমাদের ঘটি মোহনবাগান বনাম বাঙ্গাল ইস্ট বেঙ্গলের মতন চলচিত্র অন্তহীন – ব্যাভেরিয়ানদের কাছে বাকি জার্মানি হল ‘ওরা ‘ বায়ার্ন মিউনিকের একমাত্র  কর্তব্য লিগ চ্যাম্পিয়ন বনে বাকি জার্মান বা প্রাশিয়ানদের মুখে নিয়মিত ঝামা ঘষে দেওয়া।  বার্সেলোনা টিম শুধু  ফুটবল খেলে না – তাদের লোগো ‘ একটা দলের চেয়ে বেশি ‘- মাস কে ঊন ক্লুব – এটা কাতালুনিয়া বনাম স্পেনের লড়াই । বিশ্ব কাপের সময়ে ‘আমরা’ ‘ওরা’  শিকেয় তোলা থাকে দু  সপ্তাহের জন্য । আমাদের দেশের মতন বসনিয়াক  মুসলিম ক্যাথলিক ক্রোআট, অর্থোডক্স সার্ব একই জার্সি পরে ওয়ার্ল্ড কাপ খেলে । তবে এটা জটিলতর  আকার ধারণ করে আয়ারল্যান্ডে- আইরিশের কাছে  রাগবি অত্যন্ত গর্বের ব্যাপার । কিন্তু আয়ারল্যান্ড যখন আন্তর্জাতিক রাগবি ম্যাচ খেলে সেখানে উত্তর আয়ারল্যান্ড ( ইউ কে ) এবং বাকি আয়ারল্যান্ড একত্র মাঠে নামে অর্থাৎ ব্রিটিশ পাসপোর্ট ধারি বেলফাস্টের লোগান ইংল্যান্ড টিমের ফ্রেজারকে বেধড়ক পেটায় । এই আমরা ওরা ব্যাপারটা এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে আন্তর্জাতিক ম্যাচে আইরিশ জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয় না , সেটা ‘ওদের ‘ গান । খেলার মাঠের বোধহয় একমাত্র উদাহরণ যেখানে একটি নিরপেক্ষ গান গাওয়া হয় স্কটিশ মারে যখন টেনিস ম্যাচ যেতে তখন সে আমাদেরই লোক বলে ইউ কে উচ্ছ্বসিত হয়, হেরে গেলে সে ‘ওরা’ ওই স্কটিশ ।

    ওরা ওই ইনভেডাররা যখন করের টাকায় মহল বা  কেল্লা বানিয়েছেন , তার আর্কিটেক্ট  হয়তো   ছিলেন পারসিয়ান কিন্তু বাকিটা একেবারে দেশি – চিন থেকে মূর্তি আমদানি করা হয় নি , প্রচুর কর্ম সংস্থান হয়েছে । ইনভেডারদের সুইস ব্যাঙ্ক অ্যাকাউনট ছিল না , শ্রেষ্ঠীরা এ দেশের লোক! কলাম্বাস ভাস্ক দা গামা সোনার ভারতের সন্ধানে পাল তুলেছিলেন, ইংরেজ সেটিকে ছিবড়ে করে গেল ।  

     
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে প্রতিক্রিয়া দিন