এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • হারিয়ে যাওয়া শিল্পীরা

    প্রবুদ্ধ বাগচী লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৮ মার্চ ২০২২ | ১২৪৩ বার পঠিত
  • হারিয়ে যাওয়া শিল্পীরা
    প্রবুদ্ধ বাগচী 
     
    বাংলায় লেখালিখির ক্ষেত্রে, চিরকাল না হলেও, একটা সময়ের পরে প্রকাশের দুটো সমান্তরাল স্রোত বয়ে চলেছে। একদল লেখক গোড়া থেকেই বাণিজ্যিক প্রকাশনা গোষ্ঠীর বড় পত্রিকায় লেখার সুযোগ পেয়ে এসেছেন। অন্য একদল শুরু করেছেন ছোট ছোট পত্রিকায় লিখে হাত পাকানোর, পরে একটা সময়ে বড় কাগজে লেখার সুযোগ পেয়েছেন, নাম করেছেন। এর বাইরে আরেকটা ছোট গোষ্ঠী আছে যারা মূলত ছোট পত্রিকারই লেখক। বড় পত্রিকায় যে তাঁরা একদম লেখেননি এমন নয়, তবে তাঁদের যে পরিচয় লেখালিখির জগতে সেটা ছোট পত্রিকার লেখক হিসেবেই।এখন বড় কাগজ বলতে কী বুঝব, ছোট পত্রিকা বলতেই বা কী বোঝানো হবে- এইসব নিয়ে ঝড়ো বিতর্ক আছে। তার মধ্যে ঢুকে লাভ নেই। আর এই আলোচনায় ওই বিতর্কের কোনও পরিসর নেই। আমাদের প্রসঙ্গ ভিন্ন। 
    এই দুই সমান্তরাল স্রোতের ফলে যেটা হয়, একদল লেখককে মানুষ সব সময় তাঁদের চোখের ওপর প্রকাশিত হতে দেখতেই থাকেন। তাঁদের লেখা নিয়ত প্রকাশ হতে থাকে বেশি প্রচারিত পত্রিকায়, এমনকি, প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলিতেও তাঁদের বই প্রকাশ হতে থাকে তাঁদের প্রয়াণের পরেও। সন্দেহ নেই, তাঁদের লেখার কৌলীন্য অনেক বেশি। কিন্তু তার মানে এই নয় যে এর বাইরে যারা, তাঁরা গুণে মানে সকলেই কমতি। উদয়ন ঘোষের মতো গল্পকার মূলত ছোট কাগজেই লিখেছেন, তার একটি মাত্র সংকলন ‘প্রতিক্ষণ’ প্রকাশ করেছিল, সেটি আজ অমিল। রতন ভট্টাচার্য গল্প লিখেছেন ছোট-বড় সব কাগজেই কিন্তু তাঁর লেখা আজ কোথাও খুঁজে পাওয়ার উপায় নেই। এইরকম আরেকটা উদাহরণ গুণময় মান্না, যার লেখা প্রায় হারিয়ে গেছে। উদাহরণ বাড়িয়ে যাওয়া যেতেই পারে, তাতে বেদনা গাঢ় হওয়ার সম্ভাবনাই ষোলোআনা।
    আমাদের মনে আছে, কবীর সুমন তাঁর অতিখ্যাত ‘আমাদের জন্য’ গানে লিখেছিলেন, ‘সুনীল গাঙ্গুলির দিস্তে দিস্তে লেখা/ কত কবি মরে গেল চুপি চুপি একা একা’- এই উচ্চারণে একরকমের স্বীকৃতি ছিল ওই চুপি চুপি হারিয়ে যাওয়া কবি বা আরেকটু বড় অর্থে ধরলে লেখকদের। কিন্তু বাংলা সাহিত্যের ক্ষেত্রে যেটা সত্যি, তার আর্থ-সামাজিক কারণ প্রকাশনার দুই সমান্তরাল উচ্চাবচ ধারা। বাংলা গানের ক্ষেত্রে এমন কোনও সমান্তরাল ধারার অস্তিত্ব কোনওদিন ছিল না, অন্তত যতদিন না ক্যাসেট তৈরির প্রযুক্তি এসেছে। বিশেষ করে রবীন্দ্রনাথের গান গাইতে ও প্রকাশিত হতে গেলে বেশ আঁটোসাটো একটা পদ্ধতির মধ্যে দিয়েই যেতে হত। হয় আকাশবাণীর অডিশনে পাশ করে গ্রেড পাওয়া দরকার, নয় নামী সঙ্গীত প্রযোজকের চোখে পড়া প্রয়োজন, নয়তো বা বিশ্বভারতীর ঝকঝকে প্রশিক্ষণে প্রোজ্জ্বলিত হওয়া দরকার। অবশ্য পরে বিশ্বভারতী সংগীত ভবনের বাইরেও কলকাতায় অনেক নামী সংগীত শিক্ষাসত্র তৈরি হয়, সেখানকার ছাত্র-ছাত্রীরাও আস্তে আস্তে গ্রামোফোন রেকর্ডে গান প্রকাশ করার সুযোগ পেতে থাকেন। 
    মুদ্রণ শিল্পের সঙ্গে গ্রামোফোন রেকর্ডের প্রযুক্তির কোনও তুলনাই হয় না। কয়েকজন বন্ধু মিলে চাঁদা তুলে একটা ছোটখাটো বা মাঝারি পত্রিকা প্রকাশ করা যদি বা সম্ভব, ওরকমভাবে কোনও রেকর্ড প্রকাশ করা ছিল অসম্ভব। ফলে, নামী প্রতিষ্ঠান গ্রামোফোন কোম্পানি বা মেগাফোন, হিন্দুস্থান, ইনরেকো, কলম্বিয়া এইসব জায়গা থেকেই একমাত্র রেকর্ড প্রকাশ করা যেত, তাঁদের ছিল নিপুণ বিপণন কাঠামো ও নিবিড় পুঁজি।ইতিহাসের ফ্রেমে ধরলে গত শতকের গোড়ার দিকে বছর দশেক বাদ দিলে আশির দশক অবধি এই প্রায় সাড়ে সাত দশক রেকর্ড কোম্পানিগুলিই রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পীদের প্রচারিত করে এসেছে, এর পাশাপাশি ছিল আকাশবাণীর প্রচার। সবাক ফিল্ম ও প্লে ব্যাক চালু হওয়ার পরে আরেকটি মাধ্যম হিসেবে ফিল্ম এলেও সেখানে সাধারণভাবে রবীন্দ্রনাথের গানের বদলে গল্পের উপযোগী ফিল্মের গান ব্যবহার হয়েছে বেশি, তুলনায় রবীন্দ্রনাথের গান কম। আর ব্যবহার হলেও তাতে সুযোগ পেয়েছেন রেকর্ডে গান গেয়ে খ্যাত হওয়া শিল্পীরাই। এখন এই সত্তর/ পচাত্তর বছরের গ্রামোফোন রেকর্ডের ইতিহাসে বিভিন্ন নামী সংস্থায় গান রেকর্ড করেছেন এমন শিল্পীর সংখ্যা বড় কম নয়। কারণ, বাণিজ্যের স্বার্থেই কোম্পানিগুলির প্রয়োজন ছিল নানা ধরনের কন্ঠ, সেই কণ্ঠের মালিক (বা মালিকানী)’কে কোম্পানিগুলি নিজেদের মতো করে খুঁজে নিয়ে এসে রেকর্ড করিয়েছেন, বাণিজ্য সফল হয়েছে। মনে থাকতে পারে, পঙ্কজ কুমার মল্লিক একদিন এমনভাবেই রেকর্ড করার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছিলেন অনুজ হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে, আর বন্ধুকে নানাভাবে উস্কিয়ে তাঁকে আকাশবাণীর দোরগোড়ায় নিয়ে এসেছিলেন হেমন্ত’র অকৃত্রিম সুহৃদ সুভাষ মুখোপাধ্যায়।
    ক্যাসেট যুগে এই ঘরানা আর রইল না। কারণ, গ্রামোফোন রেকর্ড ছাপার থেকে ক্যাসেট প্রকাশ অনেক কম খরচে নিতান্ত ব্যক্তিগত উদ্যোগে করে ফেলা সম্ভব হল। আর রবীন্দ্রনাথের গানের কপিরাইট উঠে যাওয়ার পরে প্রকাশককে নিজে টাকা দিয়ে নিজের কবিতার বই ছাপানোর মতো নিজের বিনিয়োগে ক্যাসেট কোম্পানি থেকে নিজের গানের ক্যাসেট বের করে বন্ধুবৃত্তে তা বিতরণ বা বিক্রি পুরো ব্যবস্থাটাকেই ওলটপালট করে দেয়। সেটা একটা অন্য গল্প।
    কিন্তু রেকর্ডের যুগে যারা রবীন্দ্রনাথের গান রেকর্ড করেছিলেন তাঁদের সবাইকে কি আজ আমরা শুনছি? শোনার সুযোগ পাচ্ছি? বাংলার সাহিত্য জগৎ ছোট বড় মাঝারি সবরকম প্রকাশনা নিয়ে এখনও প্রবলভাবে টিকে আছে। তাই সেই পুরনো ছোট পত্রিকা, বড় পত্রিকা ইত্যাদির আধারে বিভিন্ন লেখকের প্রকাশ এখনও সমানভাবে সক্রিয়। কিন্তু গানের ইন্ডাস্ট্রি আজ এক ধূসর অতীত। ক্যাসেট পেরিয়ে সিডি যুগ এসেছিল, তাও আজ অস্তমিত। সমস্ত গান বিপণি আজ বন্ধ। স্মার্ট ফোন আর ইন্টারনেট বাহিত ইউটিউব বা অন্যান্য গান শোনার ব্যবস্থা গানের বিনিময় মূল্যটাকেই আজ শূন্যে নিয়ে এসেছে। চাইলেই আমরা বিনি পয়সায়, কেবলমাত্র কিছুটা ডাটা খরচ করে গান শুনে নিতে পারি। যখন যা চাই, যা ইচ্ছে।
    কিন্তু সত্যিই কি যা চাই তাই শুনতে পাই? এই জিজ্ঞাসার সামনে আমাদের আজ দাঁড়াতেই হবে, অন্তত আমি রবীন্দ্রনাথের গানের ক্ষেত্রটাই বিবেচনা করছি। হিমঘ্ন রায়চৌধুরী নামক কোনও যশস্বী রবীন্দ্রনাথের গানের শিল্পীকে আমরা কি চাইলেই শুনতে পাই আজ, যেমন ইচ্ছে করলেও রমেন্দ্রকুমার আচার্য চৌধুরীর কবিতাও কি পড়তে পারি? একটু ঝুঁকি নিয়েও বলি, রমেন্দ্রকুমারের কবিতা তবু খুঁজে পাওয়া সম্ভব, তার এক-আধটা বই কষ্ট করে জোগাড় করা যায় হয়তো- কিন্তু ইচ্ছে করলেই শোনা যাবে না রীতা ঘোষ বা শ্যামাশ্রী দাশগুপ্তের রবীন্দ্রগান, অথচ এই দুজন এককালে যথেষ্ট পরিচিতা ছিলেন, সেই রেকর্ড যুগের তালিকায়। আমরা ভুলতে বসেছি, তন্ময় চট্টোপাধ্যায় বা রিনি চৌধুরীর মতো দুজন সুগায়ক সুগায়িকার কথা। রবীন্দ্রগানের প্রশিক্ষক হিসেবে সুবিনয় রায়কে আমরা সকলে জানি, কিন্তু আরও দুই খ্যাত প্রশিক্ষক ও শিল্পী তড়িৎ চৌধুরী ও অরবিন্দ বিশ্বাস, এক নিঃশ্বাসে নাম করা যাবে প্রসাদ সেন ও শৈলেন দাসের- এদের মধ্যে শৈলেন দাস যুক্ত ছিলেন বাম রাজনীতির সঙ্গে, একটা সময় দক্ষিণ দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান পদে ছিলেন তিনি। দুর্ভাগ্য, স্থানীয় প্রোমোটার বাহিনীর বিরাগভাজন হয়ে সেই বাম আমলেই তিনি প্রকাশ্যে খুন হন। শৈলেন দাসের অল্প কিছু গান তবু ইউটিউবে পাওয়া যায় কিন্তু কলকাতা দূরদর্শনের একদা নিয়মিত শিল্পী (শুক্রবার সাতটায় রবীন্দ্রনাথের গানের অনুষ্ঠান) কবীর মজুমদার বা সুশীল চট্টোপাধ্যায়ের গানের কোনও অস্তিত্ব আজ আর কোথাও নেই। এক সময়ের প্রতিভাশালী পারফর্মার বনানী ঘোষ, যাকে কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুসারী বলে বিবেচিত করা হত, তিনি একটি গ্রামোফোন রেকর্ডে ‘তুমি ছেড়ে ছিলে ভুলে ছিলে বলে’ কী অসীম মমতায় রেকর্ড করেছিলেন- হায়, সেই গান আজ আর আমাদের শোনার কোনও উপায় নেই। আরেক সম্ভাবনাময় গৌতম মিত্র যাকে হেমন্তের উত্তরসূরি ভাবা হত এবং এক সময় প্রচুর জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন তিনি আজ আমাদের স্মৃতি থেকে উধাও। 
    আজকের প্রজন্মের সামনে আবছায়া হয়ে গেছেন প্রতিমা মুখোপাধ্যায়, সুধা মুখোপাধ্যায়, মঞ্জু গুপ্ত, সুপ্রীতি ঘোষ, গীতা সেন, সুনীল রায়, সাবিত্রী দেবী কৃষ্ণাণ, রেণুকা দাশগুপ্ত প্রমুখ। গীতা সেন ‘তাসের দেশ’এর গান প্রথম সংস্করণ অনুযায়ী ‘তোমার মন বলে চাই চাই চাই গো’ রেকর্ড করেছিলেন যা পরে আর কেউ করেননি। রেণুকা দাশগুপ্ত তাঁর গুরু শৈলজারঞ্জন মজুমদারের করা ‘বসন্তে বসন্তে তোমার কবিরে দাও ডাক’এর স্বরলিপি মেনে ওই গান রেকর্ড করেছিলেন যা প্রচলিত গানের সুরের থেকে কিছু আলাদা (প্রচলিত স্বরলিপি অনাদি কুমার দস্তিদারের করা)। হতাশার কথা, এইসব সুর সুরান্তর কিছুই আর আজ শোনার অবস্থা নেই।
    ভাবলে অবাক লাগে, একসময় শ্যামল মিত্র ও সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় কিছু রবীন্দ্রনাথের গান রেকর্ড করেছিলেন যাঁদের পরিচিতি ছিল একেবারে আলাদা জগতে। কিন্তু সেই গায়ন ছিল এতটাই জোরালো, শোনা যায়, তৎকালীন শুধু রবীন্দ্রগানের এক শিল্পী নাকি শ্যামল মিত্রকে অনুরোধ করেন তিনি যেন আর রবীন্দ্রনাথের গান রেকর্ড না করেন, নচেৎ বাকিদের ভাতে মরতে হবে। শ্যামল কথা রেখেছিলেন। কিন্তু এইসব কাহিনিকে আস্বাদ করতে গেলে সেইসব দৃষ্টান্ত কানের কাছে থাকা দরকার। পরিস্থিতির চাপে ও বিপর্যয়ে তা আজ অসম্ভব।
    হারিয়ে যাওয়া এই বিপুল সম্পদের কথা ভেবে একটা চিন্তা উঠে আসে- তাহলে কি গানের ইন্ডাস্ট্রিতে আমরা এক ধরনের আধিপত্যবাদের শিকার হলাম? মুদ্রণ সাহিত্যের জগতে সেইভাবে সংগঠিত বিনিয়োগ খুব কম, তাই তার মঞ্চটা যেন অনেক খোলামেলা- তাতে উত্তম অধম মধ্যম সব একসাথে সহাবস্থান করতে পারে। কিন্তু মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি গোড়া থেকেই পুঁজি নিবিড়, তার পরিণতিতে আমরা যা পেলাম তা একরকমের হেজিমনি- আমরা গান শুনতে পাই কিন্তু কী শুনব কতটা শুনব তার ওপর আমাদের আর কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই! তাই সবাই আমরা রবীন্দ্রনাথের গান শুনছি ঠিকই- তবু কত শিল্পী চুপি চুপি একা একা হারিয়ে গেলেন বিস্মৃতির প্রান্তরে তার খবর কে রাখে?
     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৮ মার্চ ২০২২ | ১২৪৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • প্রত্যয় ভুক্ত | ১৮ মার্চ ২০২২ ১৯:৩৮504961
  • আরো সংযোজন হবে এই তালিকায়,শ্রীলা সেনের নাম নেই দেখে একটু আশ্চর্য হলাম,এছাড়াও শৈল দেবী,সত্যজিৎ জায়া বিজয়া রায় -এনাদের নাম‌ও আজ বিস্মৃতির অতলে।আরো বিস্তৃত আলোচনা প্রয়োজন এ বিষয়ে।
     
    আর হ্যাঁ, আরেকটা কথা,দেবব্রত বিশ্বাস বা জর্জ বিশ্বাস(হ্যাঁ, আমি নাম করেই বলছি) কিন্ত শ্যামল মিত্র কে রবীন্দ্রসংগীত নিজেদের ভাত মারা যাবার ভয়ে গাইতে বারণ করেননি,শ্যামল মিত্র র কন্ঠ ,দুঃখজনক হলেও সত্যি,রবীন্দ্র সংগীতের উপযোগী ছিল না,যে কথা সন্ধ্যা,মান্না দে এঁদের ক্ষেত্রেও সমান প্রযোজ্য।এঁদের রবীন্দ্র সংগীত কে জনমানস‌ও গ্রহণ করেনি।
    একটু ইউটিউবে শুনে দেখতে পারেন,শ্যামল মিত্রের একক ও কণিকা ও অন্যন্য শিল্পীদের সাথে যুগ্ম রবীন্দ্র সংগীত পরিবেশনা,ভীষণ‌ই মৃদু,ভীরু (ম্যাড়ম্যাড়ে পড়লে দোষ নেই) পরিবেশনা ,যা হেমন্ত,অর্ঘ্য সেন,দেবব্রত,,সাগর সেন দের গায়কির সামনে ম্রিয়মাণ।আবার সন্ধ্যার অতিরিক্ত কারুকাজসম্পন্ন রিনরিনে (ক্ষেত্রবিশেষে কিরকিরে)কন্ঠ,মান্না দের কারুকাজভারনত কন্ঠ -রবীন্দ্র সংগীতের সংহতির যে শক্তি 'brevity is the soul of width'/'less is more' এই মূলমন্ত্রের মর্যাদা রাখতে পারেনি,যা আবার আরতি ,হেমন্তরা অক্লেশে করে দেখিয়েছেন।এই সমস্তটাই আমার ব্যাক্তিগত মতামত,সুস্থ রুচিশীল প্রতিযুক্তিসম্পন্ন সমালোচনা স্বাগত,otherwise I don't give a f to random slurs by 'les vaches' hiding under nicknames.
  • ইন্দ্রাণী | ১৯ মার্চ ২০২২ ০৩:০২504977
  • ব্যক্তিগতভাবে স্বল্পখ্যাতদের গান পছন্দ করতাম। রবীন্দ্রসঙ্গীতের কথাই বলছি। কবিপক্ষে রবীন্দ্রসদনে এবং আকাশবাণীর ৭ঃ৪০ ক বা ৬ঃ২৫ খ এ এঁদের গান শোনা যেত। অনেকের গান তখন রেকর্ড করে রেখেছি। হারিয়েও ফেলেছি অনেক।
    শিবাংশুবাবুর একটি সিরিজে ওঁর সঙ্গে কথোপকথনে তাঁদের কয়েকজনের কথা এসেছিল , এইখানে তার লিংক রইলঃ
    https://www.guruchandali.com/comment.php?topic=13460

    আপনি যাঁদের নাম করলেন, তাঁর বাইরে আরো অনেকে রয়েছেন, অবশ্যই, তবে নামের তালিকা দিয়ে যাওয়া আপনার এ লেখার উদ্দেশ্য নয় বুঝে কোনো নাম সংযোজন করছি না।

    যে জন্য লিখতে এলাম মূলতঃ
    ১। রতন ভট্টাচার্যর গল্প সংকলন আনন্দ থেকেই প্রকাশিত। এছাড়া পরম্পরা থেকে ২৫ টি গল্পের সংকলন বেরিয়েছে বহুদিন হল। লিরিক্যাল থেকেও একটি বই বেরিয়েছে।
    ২।রীতা ঘোষ আমার একজন প্রিয় শিল্পী ছিলেন,; ঐ ৭ঃ ৪০, রবীন্দ্রসদনে ওঁর গান শুনেছি। বেণু ও বীণা ক্যাসেট বেরিয়েছিল অশোকতরু বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। ওঁর গান ইউ টিউবে খুঁজে পেয়েছিলাম, একটি গান নিচে দিলাম Jaa ekasamay bhoote paaoyaar mata shunechhi:

    রীতা ঘোষ (মিত্র)র নিজস্ব চ্যানেলঃ
    https://www.youtube.com/channel/UCza96bzjAPECIt6DEHvSCsg/featured
    ৩। বনানী ঘোষের অজস্র গান ইউ টিউবেই পাবেন। সিডিও পাওয়া যাবে। ইউ টিউব থেকে দুটি গান দিলামঃ



    ৪। সুশীল চট্টোপাধ্যায়ের কিছু অতুলপ্রসাদী কিছু রবীন্দ্রসঙ্গীত ইউটিউবে পাবেন। ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।খুঁজলে সিডি পাওয়া যাবে।
    একটি অতুলপ্রসাদী নিচে দিলামঃ



    আপনার লেখা অনেক পড়েছি গুরুতে এবং তার অনেক আগেই অন্যত্র। নমস্কার জানবেন।
     
  • সে | 2001:1711:fa42:f421:357e:239:bbba:***:*** | ১৯ মার্চ ২০২২ ০৩:০৯504978
  • সুন্দর প্রতিবেদন। অনেক কিছুই জানতাম না।
  • ইন্দ্রাণী | ১৯ মার্চ ২০২২ ০৪:১৪504980
  • আরো কিছু লেখার ছিলঃ
    বনানী ঘোষের তুমি ছেড়ে ছিলে ভুলেছিলে ইউ টিউবেই পাবেনঃ


    আর আমার মন বলে চাই তড়িত চৌধুরীও রেকর্ড করেছেন।

    পরবর্তীতে আরো অনেকে। গানটি স্বল্পশ্রুত সন্দেহ নাই।মৃণাল সেনের আকাশকুসুম ছবিতে ব্যবহৃত হয়েছিল গানটি।
     
  • ইন্দ্রাণী | ১৯ মার্চ ২০২২ ০৫:৫৪504982
  • একটানা লিখতে পারছি না, কাজের ফাঁকে ফাঁকে বলে যাচ্ছি।

    তন্ময় চট্টোপাধ্যায় ( সকালবেলার আলোয় বাজে, ওলো রেখে দে, সখি রেখে দে , তার অন্ত নাই গো যে আনন্দে ইত্যাদি), শ্যামাশ্রী দাশগুপ্তর কিছু গান ইউটিউবে রয়েছে। দুটি গান দিচ্ছি উদাহরণ হিসেবে।

    তন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের তার অন্ত নাই গোঃ


    শ্যামাশ্রীর একটি গানঃ


    যেইটা আমার বলার তা হল- হারায় না। থেকে যায়। কোথাও না কোথাও। মনে তো বটেই।
     
  • Santosh Banerjee | 223.19.***.*** | ০৯ জুলাই ২০২২ ১১:৪৮509726
  • এই হারিয়ে যাওয়া, ভুলে যাওয়া বা ইচ্ছাকৃত বিস্মৃত হওয়া,,,,,, এর পেছনে যতটা না আমাদের অর্থাৎ শ্রোতা দের দায় দায়িত্ত্ব আছে , ততটাই মনে হয় সামাজিক অবক্ষয়, উত্থান পতন, রেকর্ড কোম্পানি গুলোর ধান্দাবাজি দায়ী। এরা ব্যবসা দেখেছে । দেখতে গিয়ে শ্যামল, হেমন্ত, মান্না, ভূপেন ,,,, ইত্যাদি শিল্পী দের ( অস্বীকার করছি না ,এনারা গুণী শিল্পী ) বাজার টা ধরতে গিয়ে অনেক অনেক প্রতিভবান শিল্পী , গায়ক , লেখক দের ব্যবসায়িক অবহেলা করে অতীতের অন্ধকূপে ঠেলে দিয়েছে! কে মনে রাখছে গীরীন চক্রবর্তী কে ?? সত্য চৌধুরী, মোহিনী চৌধুরী এরা কি কম ছিল ? বড়ো মাছ ছোট মাছ কে গিলে ফেলেছে আর কি !! আমাদের দেশে এটা একটা অভিশাপ !! You tube ba অন্তর্জাল মারফৎ কিছু হারিয়ে যাওয়া , ভুলে যাওয়া গান, লেখা, সিনেমা তবু যাহোক পাওয়া যাচ্ছে।কিন্তু চেষ্টা করা উচিত ! গ্রাম বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে আছে এই অপূর্ব সম্ভার ( সঙ্গীতের কথা বলছি ) । অধুনা বাংলাদেশ আমাদের অনেক ভুলে যাওয়া , হারিয়ে যাওয়া গান, নৃত্য you tube মারফৎ দেখানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে।আমরাও কি পারিনা রবি সঙ্গীত, লালন গীতি, লোক নৃত্য এগুলোকে নতুন করে জীবিত করতে? পারি বোধহয়!! 
  • একজন আর্কাইভিস্ট | 223.29.***.*** | ০৯ জুলাই ২০২২ ১৮:৪৪509735
  • আজকের দিনে এই গণবিস্মৃতির প্রতিকার জনতার হাতেই। ডিজিটাইজেশন আপনার অস্ত্র, আপামর সবার জন্যেই। যেখানে যাঁর সংগ্রহে আপাত-বিস্মৃতি-সম্ভব যা কিছু শক্তিশালী টেক্সট, অডিও ও ভিডিও আছে সেগুলোকে ডিজিটাইজ করুন। আর্কাইভ-এ তুলুন। প্রয়োজনে সেগুলো সাজিয়ে গুছিয়ে পরিবেশন করার জন্য, লিস্টিং এর জন্য ব্লগ ব্যবহার করুন। একদা ক্ষমতা ছিল বাণিজ্যিক সংস্থার হাতে, বাজারের হাতে, কিন্তু আজ কোনো সত্যিকারের ভালো শিল্প বা শিল্পীকে আপামর জনসাধারণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আপনার আর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মধ্যে কোনো বাধা নেই। 
    যাদবপুর ইউনিভার্সিটির স্কুল অব কালচারাল টেকস্ট অ্যান্ড রেকর্ডস এই কাজের জন্য গাদা কোটি ডলার অনুদান পাচ্ছে বিদেশী ইউনিভার্সিটি / ব্রিটিশ কাউন্সিল এর থেকে। North Indian Classical Music তারা আর্কাইভ করেছে। 
    এবার টাকা না পেলে কাজ করব না - এই মানসিকতা না থাকলে ভলান্টারি এফর্টে মাঠে নেমে পড়ুন। রেকর্ড ক্যাসেট সংগ্রাহক কলকাতায় বা রাজ্যে প্রচুর আছেন। যাদের কনভিন্স করতে পারেন তাদের নিয়েই কাজ শুরু করুন। 
    রাজীব চক্রবর্তী একজন, যিনি মোটামুটি নিয়মিতভাবে নিজের সংগ্রহ ডিজিটাইজ করে চলেছেন। একখানি যন্ত্র ছাড়া অস্ত্র আর কিছুই লাগবে না। ফান্ডিং এর জন্য আশা করা যায় হাত জুটে যাবে প্রবাসী বাঙালীদের যাঁদের পক্ষে এগুলি শোনার উপায় আর নেই এইরকম আর্কাইভ গড়ে তোলা ছাড়া। পাশাপাশি IFA বা বিবিধ ইউনিভার্সিটিকে যদি অ্যাপ্রোচ করে যেতে পারেন, কোনো একটি অন্তত সৎ উদ্দেশ্যে সাড়া দেবেই।
  • একজন আর্কাইভিস্ট | 223.29.***.*** | ০৯ জুলাই ২০২২ ১৯:০৩509736
  • https://eap.bl.uk/project/EAP132
     
    এবার ইন্সটিটিউশনাল সমস্যা কিছু তো থাকেই, সেসব গুনছি না। যেমন, এসব ডিজিটাইজড কপি আম জনতা কীভাবে শুনতে পারবেন সে সব জানি না। ডিপার্টমেন্টে কথা বলে জানতে হবে। ফেসবুকে দেখছি ইউটিউবে কিছু কিছু আসছে https://www.facebook.com/ANICM.SCTR.JU
     
    প্ল্যাটফর্মটা আপনাকেই ঠিক করতে হবে। ইউটিউব গানা স্পটিফাই ইত্যাদি পপুলার প্ল্যাটফর্ম নাকি আর্কাইভ ডট অর্গ বা গুগুল ড্রাইভ ইত্যাদি। ব্লগিং কিন্তু খুবই সহজ, ব্লগার বা ওয়ার্ডপ্রেস বা গুরুর ব্লগ যেকোনোটাই। মোটকথা সম্পাদনার ক্ষেত্রে সেলফ পাবলিশিং এর জগতে আপনাকে আটকানোর কোনো জায়গা নেই কপিরাইটের প্রশ্নে আপত্তি জানানোর মত যদি কেউ না থাকে।
     
     
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খেলতে খেলতে প্রতিক্রিয়া দিন