আমি, বলাই বাহুল্য, কবিতার ভালো পাঠক নই। কবিতা লেখা তো দূরস্থান। কোনো কবিসভায়, কবিতাপাঠের আসরে আমার যাতায়ত নেই। শঙ্খ ঘোষের বাড়িতে কোনোদিন যাই নি। শুনেছিলাম অবারিত দুয়ার। তবু যাইনি। ভদ্রলোককে চাক্ষুষ কখনো দেখি নি। না, ভুল বললাম - একবার দেখেছিলাম। কিন্তু আমার বয়সী, কিম্বা আমার থেকে বেশি এবং কমবয়সী অনেক বাঙালীর মতই, কবিতার হ্যাংলা প্রেমিকের মতই একদা ওঁর খপ্পরে পড়েছিলাম। এবং অনেকেই জানেন, সে খপ্পর থেকে বেরিয়ে আসা কত কঠিন। প্লুটো যেমন। সূর্যের থেকে বহুদূরে থাকা একটি বেঁটেবামন শীতল গ্রহ। অথবা গ্রহ নয়। সূর্যের কথা সে কানাঘুষোয় শোনে। তবু তার টান ছাড়িয়ে বেরিয়ে আসার সাধ্য তার নেই।
কুড়ি বছর বয়স। এন আর এস মেডিক্যাল কলেজে প্রথম বর্ষ। আমার মত মফস্বলী ডেস্কলাররা দল বেঁধে ঘুরি, কিঞ্চিত ভয়ে ভয়ে - যদি র্যাগিং করে ! জীবনদা'র ক্যান্টিন এড়িয়ে এড়িয়ে চলি। কিন্তু সে আর কদ্দিন! এস এফ আইয়ের ছেলেদের হাতে পড়তেই হবে এক সময় না এক সময়। এবং তারা অনেকে বেশ ভদ্র, র্যাগিংট্যাগিং করে না। অন্তত প্রথম সাক্ষাতে না। কার কী পছন্দ জেনে নিয়ে সেইমত জাল ফেলে। তো আমার টোপ ছিল কবিতা; মানে আমিই বলেছিলাম-্নইলে আর জানবে কী করে ! এস এফ আইয়ের কবিতাবিভাগ ছিল কাজলদা'র হাতে। কবিতাও লিখত, কাজলদা। আমাকে কাজলদার হাতে ছেড়ে দেওয়া হল।
-'তো, কার কার কবিতা পড়িস তুই?'
সি পি এম বাড়ি। সেই সুবাদে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, সুকান্ত। সুভাষ মুখোপাধ্যায় আদ্যোপান্ত। খুচখাচ সুনীল-শক্তি। জীবনানন্দ, টুকটাক। এবং, কী আশ্চর্য, নাজিম হিকমত - সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের অনুবাদে। অরুণ মিত্র-র ফরাসি কবিদের অনুবাদ। একখানি চটি বই। সন্দীপ দিয়েছিল। ওর দিদির প্রেমিক দিদিকে গিফ্ট করেছিল, আর দিদি কবিতাটবিতা বিশেষ পড়ে না, তাই।
-'সে কি রে? তুই শঙ্খ ঘোষ পড়িস নি?'
আমি, নতস্কন্ধ মফঃসলী, নীরবে অপরাধ স্বীকার করি। আর শিগগিরই কিনে ফেলি শঙ্খ ঘোষের শ্রেষ্ঠ কবিতা। দেজ পাবলিশিং। সবুজ রংয়ের মলাট, কালো ব্লকের মধ্যে পাতার ছবি দেওয়া, গোলাপী ব্লকে বইয়ের নাম। প্রচ্ছদ করেছিলেন পূর্ণেন্দু পত্রী। কবেকার বই। ১৯৯০ সালে কেনা। এই লেখা লিখতে লিখতে আলমারি থেকে বইটা বের করে আনলাম। হার্ড বাউন্ড বইয়ের মলাট ছিঁড়ে গেছে। পাতাগুলো হলদে হয়ে এসেছে, দেজ খুব দামী কাগজ ব্যবহার করত না। বইটার গায়ে হাত বোলাই। তিনটি দশক বয়ে গেছে বইটার ওপর দিয়ে। তিন দশক। কত সঙ্ঘ ভেঙ্গে যায়। ভালোবাসা-রাগ-দুঃখ-মন খারাপ। থাকে, থাকেও না। পালক অথবা পাহাড়ের মত।
এই লেখা, এতক্ষণে আশা করি বুঝতে পেরে গেছেন, আসলে শঙ্খ ঘোষকে নিয়ে নয়। এ এক ব্যক্তিগত যাত্রা - কাব্য করে বলতে গেলে। আসলে আটভাট বকা। শঙ্খ ঘোষকে নিয়ে অজানা কোনো তথ্য লিখে ফেলতে পারবো না, তাঁর কবিতার কিম্বা গদ্যের বিষয়ে কিছু বলবার মত ক্ষমতা নেই আমার, গবেষক শঙ্খ ঘোষকে নিয়ে জানি না তেমন কিছু, আর নতুন কোনো অ্যানেকডোট আমার ঝুলিতে নাইরে নাই - বললাম যে, কোনোদিন কথাই হয় নি ওনার সাথে! ওসব কিছুই না, একটা লোক তরুণ থেকে প্রৌঢ় হচ্ছে, জীবন তার কাছ থেকে নানাবিধ জরিমানা নিচ্ছে, কখনো কখনো মায়ায় পড়ে কিছু দিচ্ছে-থুচ্ছেও - তাই নিয়ে চাট্টি হাবিজাবি কথা। সেসব তেমন বড় কথা নয়। বড় কথা হল, অনেক দূরের একটি নক্ষত্র, যার আলো আর তাপ সে একদা খুব ভালোবাসতো, আর এখনো সে শীত বুঝলে সেই আলো আর তাপের কাছে ফিরে ফিরে যায়, যদিও অনেক কাল খুব একটা দেখাশোনা নেই। এইমাত্র সেই নক্ষত্রপতনের শব্দ হল। লোকটার মন খারাপ লাগছে। তার বেঁচে থাকার টুকরোটাকরা দিয়ে তাই সে লিখে ফেলছে আবোলতাবোল। সেই সব দিনগুলি-রাতগুলির কথা, যাদের মধ্যে একদা সেই নক্ষত্রের আলো, আগুন আর জলের ছাপ পড়েছিল।
মেডিক্যাল কলেজে পড়বার সময় একরকম ধারণা ছিল, কবিতাপ্রেমী, জামাকাপড়ে উদাসীন ছেলেদের প্রতি মেয়েদের একটা পক্ষপাত থাকে। কী করে যে সেই ভুল ধারণা মাথার মধ্যে গেঁথে গিয়েছিল, কে জানে। বই পড়েই হবে নিশ্চই (যে সব লেখক এই ধারণা তৈরি হতে সাহায্য করেছিলেন, আমি তাঁদের অভিসম্পাত করি)। যথারীতি, মেয়েরা কেউ ফিরেও তাকায় নি আমার দিকে। তো, নিজে নিজেই আমি ভয়াবহভাবে একটি মেয়ের প্রেমে পড়ে গেলাম। তার আগে, ছোট্ট বন্ধুবৃত্তে প্রায় টেবিল চাপড়ে কবিতা পড়ে এবং আবৃত্তি করেও শঙ্খ ঘোষ শোনাতাম। এবং মেয়েটি মুগ্ধ হয়ে শুনতো। 'যমুনাবতী সরস্বতী' কিংবা 'মেয়েদের পাড়ায় পাড়ায়', 'সে ছিল একদিন আমাদের যৌবনে কলকাতা', 'বাবুদের লজ্জা হল' অথবা সেই আইকনিক কবিতা 'মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে'। জীবনদা'র ক্যান্টিনে, অ্যানাটমি ডিসেকশন হলে, ফিজিওলজি ল্যাবে, এমন কি লাইব্রেরির ফিসফাসেও ছেয়ে থাকত শঙ্খ ঘোষের কবিতার লাইন।
কাজেই কবিতা যে ভালোবাসে, সে নিশ্চই বুঝবে - এই ভেবে তাকে চিঠি লেখা।
কাজলদা বলল - করেছিস কি! এই দুদিন হল, অমুক ওকে প্রোপোজ করেছে; ও 'হ্যাঁ ' বলে দিয়েছে।
আমি, প্রেমে প্রত্যাখ্যাত আমি, সেদিন অনেক, অনেক বৃষ্টিতে ভিজে বাড়ি ফিরেছিলাম। ইচ্ছে করে তারপর থেকে আর কোনোদিন বৃষ্টিতে ভিজি নি।
কাজলদা বলেছিল - শ্রেষ্ঠ কবিতার ১১১ নম্বর পাতার কবিতাটা পড়িস- 'মনকে বলো 'না'।
তারপর থেকে বহুদিন লাইনগুলি আমার সঙ্গে সঙ্গে ফিরেছে।
'এবার তবে খুলে দেওয়া, সব বাঁধনই আলগা করে নেওয়া।
যখন বলি, কেমন আছো? ভালো?
'ভালো' বলেই মুখ ফিরিয়ে নেবার মতন মরুভূমি
এবার তবে ছিন্ন করে যাওয়া।
বন্ধ ছিল সদর, তোমার চোখ ছিল যে পাথর
সেসব কথা আজ ভাবি না আর
যাওয়ার পরে যাওয়া কেবল যাওয়া এবং যাওয়ায়
আকাশ গন্ধরাজ ।
শিরায় শিরায় অভিমানের ঝর্ণা ভেঙে নামে
দুই চোখই চায় গঙ্গাযমুনা
মন কি আজও লালন চায়? মনকে বলো 'না '
মনকে বলো 'না ', বলো 'না '।
কবিতার মতই একদা রাজনীতিতে মাথা মুড়োনো । আসলে কবিতার সঙ্গে সঙ্গেই। অতি বাম রাজনীতি। লিবারেশনের রাজনীতি। লিবারেশন তখন গোপন পার্টি থেকে, আই পি এফের ছত্রছায়া থেকে বেরিয়ে এসে প্রকাশ্য রাজনীতিতে ঢুকছে। শহীদ মিনারে লিবারেশনের বড় সভা হল। আমি আর দীপাংশু এনআরএসের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে দেখছি বিশাল লম্বা মিছিল চলছে লাল পতাকা হাতে মানুষের। গরীবগুর্বো মানুষেরা, তারা সব বিহার থেকে এসেছে, জেহানাবাদ-আরা-ভোজপুর থেকে। সেই জেহানাবাদ! আরওয়াল-কানসারা! গান্ধি ময়দানের গুলিচালনা, আরো পরে হবে বাথানিটোলা, লছমনপুর-বাথে। আমাদের মনে পড়ে -
'তিনদিকে তিন দেয়াল ঘেরা সাতান্ন রাউন্ড গান্ধীমাঠে
ভিজল মাটি ভিজল মাটি ভিজুক মাটি রক্তপাতে'
দোদুল্যমান আমরা পার্টির দিকে যাই। পার্থদা বলেন - বিপ্লবটা আমরাই করবো। কী কনভিকশন! আমরা ঘোরে পড়ে যাই। ভাবি, এমবিবিএস-্টা শেষ হোক, হোলটাইমার হয়ে যাবো। আর শঙ্খবাবুই তো লিখছেন - 'আমি এই শতাব্দীর শেষ ভূমিহার কথা বলি', বা 'শোনাও আমায় শোনাও আমায় শেষের সেদিন হে সঞ্জয়' - এর মত লাইন। হোলটাইমারই হবো।
হায়, ভাগ্যদেবতার তেতো হাসি যদি সেদিন দেখতে পেতাম। যদি জানতাম, কবিতাসর্বস্ব এরকম অতিসংবেদী মন, সাংগঠনিক রাজনীতির সাথে তার বিয়ে হওয়া কতটা অসম্ভব।
অবশ্য, জানলেই বা কী হত! কী আর এমন তফাত হত যা হয়েছে, তার থেকে !
কিন্তু সেসময় আমরা কেবল পার্টি অফিস আর যাদবপুর। সেসময় আমরা পোস্টার লিখি-পুলিশ কখনো কোনো অন্যায় করে না তারা যতক্ষণ আমার পুলিশ। পড়ি' - 'চরিত্রই নেই যার, তার আবার ধর্ষণ কোথায়?' বা, - 'রঞ্জনেরা খুন হলে তুমি বলো, 'মরে নি ও, আমার ভিতরে বেঁচে আছে / কাজের ভিতরে আছে, ধুলোর ভিতরে, পায়ে পায়ে।' সফদর হাসমি সদ্য খুন হয়েছেন। তার তিন দিন বাদে স্ত্রী মলয়শ্রী হাসমি, মালা, সেই একই স্পটে গিয়ে করে এসেছেন একই নাটক - হাল্লা বোল । আমরা পড়ছি - 'দেখেনি কি/ সমস্ত ভারত আজ রক্তকরবীর ফুলে ভরে দেয় মালা বা পুনম?'
সেই রকমই কোনো এক দিনে, বা তার কিছু আগে-পরে যাদবপুর ফেস্টে প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের গান শুনতে পাই, সেই প্রথম। শুভ্রদীপ জানিয়েছিল, তাই। না, কোনো মঞ্চে গাইছিলেন না তিনি। হাট- মিটিংয়ে, গেট-মিটিংয়ে গান গেয়ে অভ্যস্ত প্রতুলবাবু গান গাইছিলেন যাদবপুরের কোনো এক ডিপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ের সামনে দাঁড়িয়ে, কোন বিল্ডিং তা এতকাল পরে আর মনে নেই। তাঁকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আমরা জনা-পঞ্চাশ ছেলেমেয়ে। গানের পর গান, একটার পর একটা আব্দার। বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'পাথরে পাথরে নাচ আগুন' শুনে লোম খাড়া হয়ে উঠেছে। বিকেল গড়িয়ে সন্ধে নামছে তখন। প্রতুলবাবু-প্রতুলদা'ই বলি - বললেন - 'না, আর নয়। এই শেষ গান গাইছি (একটু থেমে) - তোরা তো সন্তানের মতই আমার, তোদের জন্য গাইছি - তোরা সব সুখে থাক, শান্তিতে থাক, আনন্দে থাক।
বলে-সেই আশ্চর্য খালি গলায় শুরু করলেন : এই তো জানু পেতে বসেছি, পশ্চিম
আজ বসন্তের শূন্য হাত...
গান শেষ হয়ে গেছে অনেকক্ষণ। নড়তে পারছি না অনেকে। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমেছে । ডিপার্টমেন্টের আলোগুলো জ্বলে উঠছে একে একে। মাথার মধ্যে বাজছে - ধ্বংস করে দাও আমাকে ইশ্বর / আমার সন্ততি স্বপ্নে থাক।
আর দূরে, অনেক দূরে কোথাও যেন বাজছে আজানের সুর। মনের ভুল নিশ্চয়।
রাজনীতির কর্মকাণ্ড থেকে অনেক দূরে এখন। বন্ধুরা কেউ এখনো জড়িয়ে, কেউ আমারই মত ফেলে এসেছে অল্প কদিনের মিটিং-মিছিলের পালা। কেউ দূরে চলে গেছে, দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে। বিয়ে হয়েছে, সন্তানাদি কারো হয়েছে, কারো বা হয় নি। দুপুর পেরিয়ে বিকেল হয়ে আসছে আমাদেরও। যাদবপুরের সেই শেষ বিকেলের কথা মনে পড়ে। নারীর প্রতি প্রেম, রাজনীতিতে প্রবল আগ্রহ, লেখালিখির ইচ্ছে মরে এসেছে। এখন শুধু জীবন জুড়ে আছে সন্তান। সে অসুস্থ থাকলে কোনো কাজে মন লাগে না। এই যেমন কিছুদিন আগেই হল। খুব, খুব অসুস্থ সে। কাউকে সে কথা বলা যায় না, বুঝবে না কেউই। ঠিক যেমন বহু বছর আগে লিখেছিলেন শঙ্খ ঘোষ -
"শেষ হয়ে আসছে ১৯৭৪।
বড় মেয়েটি বেশ অসুস্থ তখন, ডাক্তারেরা ভালো ধরতে পারছেন না রোগটা ঠিক কোথায়। শুয়ে আছে অনেকদিন, মুখের লাবণ্য যাচ্ছে মিলিয়ে। অথচ তখন তার ফুটে উঠবার বয়স।"
১৯৭৪ এর সেই শেষদিকেই লেখা হল 'বাবরের প্রার্থনা'।
আর আজ, এই ২০২০-২১ -এ আর এক জন পিতা, কাতর ও ব্যথিত, লেখে - 'সে ছুটি চায়। ঘুমোতে চায়। মানুষের পৃথিবীতে জেগে থাকার জটিল ধাঁধা সে বুঝতে পারে না। কুকুর আর বেড়াল আর পাখি আর কাঠবেড়ালীদের ফেলে সে মানুষদের কাছে আসতেও চায় না। অনেক উঁচুতে আকাশে লুব্ধক-কালপুরুষ আর লিওনিড তারাপুঞ্জের মধ্যে সে একদিন তার জানোয়ার বন্ধুদের নিয়ে হৈহৈ করে খেলে বেড়াবে। পৃথিবীর কোনো পরীক্ষা, কোনো কষ্ট- কাঁটা তখন আর তাকে ছুঁতে পারবে না।
আর আমরা তাকে শক্ত করে বুকের মধ্যে চেপে রাখি। রাখতে চাই। অত উঁচুর আকাশে আমাদের ভয় করে।
সে আমাদের বলে, স্বার্থপর।'
এইসব লেখে, আর মনের কান দিয়ে সে শুনতে পায় বহুদিন আগে যাদবপুরের সেই বিকেল-্সন্ধ্যার মিলনকালের গান - পাথর করে দাও আমাকে নিশ্চল / আমার সন্ততি স্বপ্নে থাক।
তাই বলে কি শুধুই বিষাদের গান? আনন্দের কথাও হোক একটু-আধটু! কেননা গায়ক বলেছেন - সুসময়ে ভালোবাসা হবে। আর আমাদের সুসময় বলতে বেড়াতে যাওয়া পাহাড়ে-জঙ্গলে, কদাচিত সমুদ্রে। শবরী-সুমনদের সাথেই মুখ্যত। আর ভালোবাসা বলতে শবরীর গান। আর শঙ্খ ঘোষ। আমি না চাইলেও শঙ্খ ঘোষ। কেননা শবরীর প্রিয় কবি তিনি। দেবেশ রায়ের সঙ্গে শবরীর নিকট চেনাজানা, গানের সুবাদে - রবীন্দ্রনাথের গান। আর দেবেশকাকু-শবরী ঐ নামেই ডাকত - শঙ্খ ঘোষকে নিয়ে কত কথা প্রায়ই বলেন শবরীকে। কোনো একবার অনেক কবি-সাহিত্যিক মিলে শঙ্খবাবুকে বড় করে সম্বর্ধনা দেবেন ঠিক করেছিলেন - দেবেশ রায়ই ছিলেন মূল উদ্যোক্তা। ঠিক হয়েছিল উপহারের মধ্যে একটি সোনার কলম থাকবে। তো, শঙ্খ ঘোষ কিছুতেই রাজী হলেন না। সভা-সমিতিতেও তো কী মিতবাক থাকতেন। কোন এক সভায় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে বলেছিলেন - আজকেও নীরবই রইব। তাই শুনে সুনীল হেসে বলেছিলেন - হৃদয়ে থাকলেই হবে। রবীন্দ্রনাথের গানের এইরকম ব্যবহার, রবীন্দ্রপ্রেমিক ছাড়া আর কারো পক্ষে কি সম্ভবে - শঙ্খ লিখেছিলেন। খুশি হয়েছিলেন নিশ্চয় খুব।
তো সে যা হোক, বেড়াতে যাওয়ার আগে শবরী অবধারিতভাবে বলবে - ইন্দ্রনীল, বই নিয়েছিস? বই বলতে শঙ্খ ঘোষের কবিতার বই। আর মণীন্দ্র গুপ্ত। কত যে পাহাড়ী আর জঙ্গুলে সন্ধ্যা, সামুদ্রিক আর বেঘো রাত্তির জেনারেটর কিম্বা মোমবাতির আলোয় আমাদের শঙ্খ ঘোষ পড়ে আর শুনে কেটে যেত! সেই মনে আছে, বিনসর ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারির মধ্যে রিসর্টে মোমবাতির কাঁপা কাঁপা আলোয় পড়ছি গান্ধর্ব কবিতাগুচ্ছ -
'পরাগ, পায়ের কাছে রাশি রাশি উন্মুখ পরাগ !
রজনীগন্ধায় নয়, ঝড় হয়ে গেছে পাইনবনে
কাল খুব ঘোর রাতে, আজ ভোরে নিঃশব্দ পথের
সমস্ত বিন্দুতে দেখি ছেয়ে আছে হলুদ পরাগ।'
আর আসার পথে সত্যি খুব ঝড় হয়ে গেছে বিনসরের জঙ্গলে। সূচের মত হিমেল হাওয়া বইছে এখনো। জঙ্গলের পাহাড়ী রাস্তা ছেয়ে রয়েছে লাল কার্পেটের মত রডোডেনড্রনের ঝরা পাপড়িতে। সন্ধ্যা নেমেছে দ্রুত। গাড়ির আওয়াজে হয়তো বা দ্রুতপায়ে সরে গেছে কালিজ ফিজ্যান্ট। অথবা কোনো শিকারী লেপার্ড।
খবরের কাগজ পড়বার বয়স যখন থেকে হয়েছে, তখন থেকে মনে আছে, যে কোনো নির্বাচনের আগে 'বামফ্রন্টকে ভোট দিন' জাতীয় একটি আবেদন বেরোতো বুদ্ধিজীবীদের স্বাক্ষরসমেত - আর তাতে অবধারিত ভাবে থাকতো শঙ্খ ঘোষের নাম। তখন কে-ই বা আর কংগ্রেসকে ভোট দিতে বলতো, বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে? আরো পিছিয়ে গিয়ে জরুরী অবস্থার সময় সরকারবিরোধী অবস্থানের কথা জানতে পারি শঙ্খ ঘোষের - সেসব তাঁরই লেখার মধ্য দিয়ে - 'রাধাচূড়া আর শান্তিকল্যাণ, দুটি কবিতাই ফিরে এল 'নট টু বি প্রিন্টেড' এই সরকারি শিলমোহর নিয়ে।.... শরৎকাল চলছে, এখানে-ওখানে চারদিকেই পত্রিকাপ্রকাশের মরশুম, অনেক তরুণ-্প্রবীণ সম্পাদক ছোটো বড়ো নানা কাগজের জন্য লেখা চান, তাঁদের বলি আমার শর্তের কথা। শর্ত : রাইটার্সে পাঠানো চলবে না কবিতা, এবং যে - লেখা দেব তা ছাপবার ঝুঁকি নিতে হবে নিজেরই কাঁধে।' আরো জানতে পারি গৌরকিশোর ঘোষের অনুযোগ শঙ্খ ঘোষের প্রতি - এই ইতর সময়, এখনো কি লেখা হবে শুধুই কবিতা? সময় কি হয় নি প্রতিবাদী, প্রতিরোধী গদ্যে সরকারকে বিদ্ধ করবার? শঙ্খ ঘোষের প্রত্যুত্তর আমি জানতে পারি নি কখনো, আন্দাজও করতে পারি না, কী উত্তর ভাবতে পেরেছিলেন তিনি। কিন্তু জানতে পারি 'দেশমনস্ক দীপ্ত এক তরুণী' র কথা, যিনি লেখা চাইতে আসতেন শঙ্খ ঘোষের কাছে। শঙ্খ ঘোষের গদ্যের বক্তব্য যাঁর পছন্দ হয় নি ততটা। বলেছিলেন - 'খোলা গলায় আপনারা ডাক দিচ্ছেন না কেন সবাইকে? সবকিছু ছেড়ে বিপ্লবের কাজে এগিয়ে আসবার ডাক, কাজের ডাক? ...এখনও কি সময় হয় নি ?'' হয়তো হয়েছে, কিন্তু আমি তত নিশ্চিত নই এখনও।' - বলেছিলেন শঙ্খ ঘোষ। সেই মেয়েটি, তাঁকে নিয়ে পরে লিখবেন তিনি -
'সেই মেয়েটি আমাকে বলেছিল :
সঙ্গে এসো, বেরিয়ে এসো, পথে।
আমার পায়ে ছিল দ্বিধার টান
মুহূর্তে সে বুঝেছে অপমান
জেনেছে এই অধীর সংকটে
পাবে না কারো সহায় একতিলও -
সেই মেয়েটি অশথমূলে বটে
বিদায় নিয়ে গাইতে গেল গান। '
তো সেই শঙ্খ ঘোষ, বামপন্থায় বিশ্বাসী কবি, প্রতিবাদী কিন্তু প্রতিবাদে উচ্চকিত নন ততটা, বামফ্রন্টের প্রতি নীরব সমর্থন থেকে সরে আসতে শুরু করলেন। 'ধূম লেগেছে হৃৎকমলে'র শেষদিকের কবিতা থেকে শুরু সেই সরে আসা, 'লাইনেই ছিলাম বাবা' নামের চটি বইটি থেকে পরিষ্কার সেই বিচ্ছেদের গাঢ়তা। সেই বই প্রকাশ পায় ১৯৯৩ সালে। তার আগেই ১৯৯০ সালে আদবানি-র ঝোড়ো রথযাত্রার সামনে কলকাতার রাস্তায় কালো পতাকা হাতে দাঁড়িয়েছেন শঙ্খ ঘোষ, সাথে অল্প কিছু সহমর্মী।
তারপর আসবে সিঙ্গুর, আসবে নন্দীগ্রাম। সরকারবিরোধী প্রতিবাদে মুখর হবেন বেশ কিছু কবি-সাহিত্যিক-শিল্পী। যাঁদের এতদিন মাথায় তুলে রাখা হত, তাঁদের চোখা চোখা বাক্যবাণে বিদ্ধ করবেন সিপিএম নেতা-কর্মীরা। পার্টির পতাকাহীন বিশাল মিছিল নেমে আসবে কলকাতার রাস্তায়। তৃণমূলনেত্রী সেই মিছিলে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলে শঙ্খ ঘোষ জানাবেন, সে ক্ষেত্রে তিনি মিছিলে আসবেন না। বেগতিক দেখে এবং কৌশলগত কারণেও নেত্রী মিছিল থেকে দূরে থাকবেন।
তারও পরে আসবে 'পরিবর্তন'। সি পি এম নেতা-কর্মীরা নিত্যদিন শাপ-শাপান্ত করবেন বুদ্ধিজীবীদের। ততদিনে তাঁদের নাম পালটে হয়েছে 'বিদ্বজ্জন'; অথবা 'সুশীল সমাজ'। সত্যি সত্যি অর্পিতা-ব্রাত্য-শুভাপ্রসন্নর মত শিল্পীরা সরকারী তকমা জুটিয়ে ফেলবেন। বিপরীতে শঙ্খ ঘোষ আভরণহীন একলাই বসে থাকবেন তাঁর বইয়ে ঠাসা ঘরটিতে। লিখবেন 'রাস্তা জুড়ে খড়্গ হাতে দাঁড়িয়ে আছে উন্নয়ন।’ এক সময় সিপিএম-এর দালাল, পরবর্তীতে তৃণমূলের দালাল আবার সিপিএমের দালাল হিসেবে পরিচিত হবেন। অনুব্রত মণ্ডল বলবেন - 'তুমি কী ধরণের কবি? নাম তোমার শঙ্খ রাখাটা ভুল হয়েছে। শঙ্খের অপমান করা হয়।'
শঙ্খ ঘোষ কি খবরের কাগজে, টিভির পর্দায় সেদিন প্রতিবাদ করেছিলেন কিছু? কুৎসিত এই কথার উত্তরে মেতেছিলেন কোনো তরজায়? না। নোংরা কথা, গালাগালিতে কি তাঁর কিছু আসত - যেত না? তাঁকে প্রত্যক্ষ চিনি না, তাঁর কোনো নিকটজনের সাথে আলাপ নেই, তাই জানি না। অনুমান করতে পারি, আহত হতেন নিশ্চই। যে মানুষ লেখেন - 'এত যদি ব্যূহ চক্র তীর তীরন্দাজ তবে কেন/ শরীর দিয়েছ শুধু বর্মখানি ভুলে গেছ দিতে' তিনি ব্যথা পেতেন না, এ বিশ্বাস হয় না। হয়তো ব্যথা হজম করবার কোনো উপায় তিনি আয়ত্ত করেছিলেন। তাই প্রতিরাত্রে এক লক্ষ ক্ষত মুখে নিয়ে ফিরে এসেও পরের দিন জেগে উঠতে পারতেন জীবনকে - এই তেতো, ভাঁড়ামোয় ভরা, অশ্লীল জীবনকে মোকাবিলা করবার মত সাহস আর বিশ্বাস নিয়ে।
বিজেপি-র দক্ষিণপন্থার আপোসহীন বিরোধী ছিলেন শঙ্খ ঘোষ। লেখায় লেখায়, কথায় আর কাজে বিজেপি বিরোধিতা করে গেছেন তিনি, যতদিন শরীর দিয়েছে। আর আমরা সকলেই জানি নিন্দায় আর কুৎসায় কতখানি নিচে নামাতে পারে আইটি সেল আর বিজেপি নেতারা। সেই ভয়ে থেমে যান নি তিনি, কিন্তু 'এক ঘন্টা সঙ্গে সুমন' - জাতীয় তরজায় মুখ দেখিয়ে গলা ফাটান নি কদাচ। শঙ্খ ঘোষের এই অনুচ্চ অথচ স্থির প্রতিবাদ আজকের দিনে কী অলৌকিক মনে হয় না, যখন চারানা-আটানা'র শিল্পী-সাহিত্যিকরা পদের লোভে - পয়সার লোভে - ভয়েভক্তিতে লাফিয়ে বেড়ান এ ডাল থেকে ও ডাল, ও ডাল থেকে সে ডাল!
দল করেন নি কোনোদিন শঙ্খ ঘোষ। সুভাষ মুখোপাধ্যায় একদা তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন একান্তে - তুমি কি পার্টি মেম্বারশিপ নিয়েছ? না-বাচক উত্তর শুনে আশ্বস্ত হয়েছিলেন সুভাষ, যিনি নিজেই তখন সর্বক্ষণের পার্টিকর্মী ।
দল করেন নি কোনোদিন। কিন্তু তাই বলে কি বিশ্বাস বদলেছিলেন এবেলা-ওবেলা কাপড় বদলানোর মত? না তো ! হয়তো ভাবতেন তাঁর কবিতার ভিখারির মতই - 'সত্য থেকে সঙ্ঘ হতে পারে / সঙ্ঘ তবু পাবে না সত্যকে'। সঙ্ঘ নয়, সত্য-কেই হয়তো ধরে রাখতে চেয়েছিলেন তিনি, এই 'অবিমৃষ্য ঝড়ে'।
আর তাই, আমার ব্যক্তিগত শঙ্খের কথা লিখতে গিয়ে এত শত সার্বজনীন কথা বলা। কেননা-আবার ক্লিশে - ধ্রুবতারা বলতে সেই শঙ্খ ঘোষ। ইমানুল হক যাঁকে বলেছেন - বাংলার বিবেক।
'কবিতার কলকাতা' নামের একটি ছোট্ট বই একদা সম্পাদনা করেছিলেন অরুণ সেন। ১৯৮৬ সালে বের হওয়া বইটির ভূমিকায় তিনি লিখেছিলেন - 'পৃথিবীর সব বড় শহরেরই বোধ হয় সবচেয়ে বড় প্রেমিক তার কবিরা।' আর বলেছিলেন - 'যতদূর মনে পড়ে কার্ল ম্যানহাইমের লেখাতেই পড়েছিলাম-অকপটে স্বীকার করেছিলে, একটা দেশের সমাজের ছবি সমাজবিজ্ঞানের বিপুল দলিলদস্তাবেজে বা দীর্ঘ আলোচনায় যত না ফুটে ওঠে, তার চেয়ে স্বচ্ছতরভাবে প্রকাশ পায় কোনো লেখক বা শিল্পীর সৃজনকর্মে - একটি ছবিতে বা উপন্যাসে বা একটি কবিতায়। ...জেমস জয়েস সম্পর্কে তো বলাই হয়েছে, ডাবলিন শহর ধ্বংস হয়ে গেলেও তা হুবহু গড়ে তোলা যায় তাঁর গল্প -উপন্যাস থেকে।' শঙ্খ ঘোষের লেখা সম্পর্কে এ রকম দাবি করা যাবে কি না, তা তাঁর কবিতার মগ্ন পাঠকেরা বলতে পারবেন। সে যাক না যাক, এ কথা তো স্বচ্ছন্দে বলা যায় -পঞ্চাশের দশক থেকে কবিতা লিখছেন এই কবি, এই দীর্ঘ সাত দশকের কলকাতা তাঁর কবিতায় ছায়া ফেলে গেছে অবিরাম। এর শেষের তিনটি দশক, আমি একজন তুচ্ছ সহনাগরিক তাঁর সাথে সাথে এই কলকাতা শহরে থাকতাম। একই সাথে ভাগ করে নিয়েছি এর ইতরামো-ক্লেদবৃষ্টি-হাসি আর গান। আমাদের সাথে তাঁর ছিল মিথোজীবীতার সম্পর্ক। আমি-আমরা-ছায়া ফেলে গেছি তাঁর কবিতার ভুবনে। আর পরিবর্তে ভাগ করে নিয়েছি তাঁর কবিতার আলো আর ওম। কত দূরেই থাকতাম অথচ। সূর্যের থেকে যত দূরে থাকে প্লুটো। একটি শীতল বামন গ্রহ। অথবা গ্রহাণু। এইমাত্র নক্ষত্রপতনের শব্দ পেল যে।
কতদিন পরে ইন্দোদাদা...!
প্রতুল মুখোপাধ্যায় এর গলায় যাদবপুরে "বাবরের প্রার্থনা" র কথা আগে পড়েছি। এখনও কবিতাটার সামনে এলে ওই দৃশ্যটা (তোমার চোখেই) ফিরে আসে।
ডাক্তারের কলম।
বড়ো চেনা অনুভূতি। সেই সময় , যাদবপুর ক্যাম্পাস , কলকাতা শহর, মিত্র বাবুমশাই , যমুনাবতী.... আজ আমরা যারা প্রৌঢ়ত্বের দোরগোড়ায় , তাদের এইভাবেই বেড়ে ওঠা ,গড়ে ওঠা।আপনার স্মৃতি তর্পণে নিঃশব্দে অংশ নিলাম।
কান্না পেল ঝুপঝুপিয়ে।
মনে পড়ে 'কবিতার মুহূর্ত' - বড় প্রিয় বই। কবি-র নিজের কলমে , কবিতার জন্মকথা।
যমুনাবতী সরস্বতী, কার্জন পার্ক-প্রবীরের মৃত্যু-দেবতাদের অভিমান - চরাচর ছেয়ে যায় ভস্মে, বাবরের প্রার্থনা, আরও কত কিছু
আরও লেখো - ইন্দো ডাক্তার
আহ !
ভীষণ ভালো লাগলো। ধন্যবাদ।
এই লোকটাকে কতদিন পরে দেখলাম!! ভালো লাগলো লেখাটা। লেখার স্টাইল একটু বদলে গেছে। তা হোক, বদলই নিত্যকার ব্যপার তো। ভালো লাগলো।
অসাধারণ, অনবদ্য, অভূতপূর্ব। কাকতলীয় ভাবে এত মিল খুঁজে পাবো, ভাবিনি। অনুভূতিতে, এমনকি কয়েকটি নামে।আমার জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে, রাজনৈতিক যাত্রাপথে সর্বত্রই যেন খুঁজে পেলাম নিজেকে। শঙ্খ ঘোষকে নিয়েও যে ভাবনা, তার কবিতা নিিয়ে যে অনুভূতি, সবই যেন আমার। সবচেয়ে বড়ো কথা ,লেেখকর নাামের সঙ্গে ও অদ্ভূত মিল।
কী অসাধারণ লেখা। মন ভরে গেলো।
ইন্দো দা, আভূমি কুর্ণিশ।
কী অসাধারণ লেখা। মন ভরে গেলো।
ইন্দো দা, আভূমি কুর্ণিশ।
অনেকদিন পর ইন্দোদার লেখা পড়লাম, মারাত্মক ভালো লাগল।
ইন্দোডাক্তার অনেকদিন বাদে , অমোঘ মায়া নেই , থাকার কথাও নয় , এ তো নিজের সাথে কথোপকথন , ডাক্তার নিজেই লিখলেন সে কথা
তবু ভাল লাগে
এভাবেই মাঝে মাঝে এসে যেও ডাক্তার। এভাবেই খবর দিও, খবর নিও। আর এরকম এক একটি লেখায় শুনিয়ে যেও সন্ধ্যার আজাদর স্বর। অন্ধকার নামছে যে!
আজানের স্বর।
সুন্দর বাংলা আবার অনেকদিন পরে লেখার জন্য, ইন্দ্রনীল ঘোষ দস্তিদার কে বাঙালি কেঁদো বাঘদের পক্ষ থেকে চুমু দেওয়া হল।
যাদব্পুরের বিকেলটা চোখের সামনে ভেসে উঠ্ল। সেটা ১৯৯৪। গান্ধী ভবনের সামনে এক চিলতে উঠোনে টেবিল পেতে প্রতুলদা গাইছেন আর আমরা ঘিরে বসে শুন্ছি। প্রতিটা মুহুর্ত মনে আছে।
খুব ভালো লাগল পড়তে।ইন্দ্রনীল এতো ভালো লেখেন জেনে ভাল লাগল।
খুব ভালো লাগল পড়তে।ইন্দ্রনীল এতো ভালো লেখেন জেনে ভাল লাগল।
খুব ভালো লাগল পড়তে।ইন্দ্রনীল এতো ভালো লেখেন জেনে ভাল লাগল।
প্রতিটি ছত্র পড়ে আপ্লুত হলাম - এখন শুধু সেই অনুভূতিতে মজে থাকা....
ভালো লাগলো।
সুন্দর স্মৃতি-উদযাপন শঙ্খীয় কবিতায়।
আমি এই লেখকের আগে কোন লেখা পড়িনি। অসাধারণ। ডাক্তাররা এত ভাল লেখেন কি করে।
বহুদিন পরে এলে। নিয়মিত লিখো।
অনেকদিনের পরে-
খুব ভলো লাগলো!
অসাধারণ লাগলো, মনে হচ্ছিল আপনি বলছেন আর পিছনে শঙ্খ বাবু একটা খাটে হেলান দিয়ে যেন আমাদের কথোপকথন শুনছেন।
বাহ। খুব ভালো লাগলো।
কেমন কান্না পেলো