#পুস্তকালোচনা — #দোয়েল_সাঁকো — #স্মরণজিৎ_চক্রবর্তী
বই = দোয়েল সাঁকো
লেখক = স্মরণজিৎ চক্রবর্তী
প্রকাশক = আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড
পৃষ্ঠা সংখ্যা = ১৯৮
মুদ্রিত মূল্য = ২০০ টাকা (২০১৭ সালে প্রকাশিত)
(দেশ — শারদীয়া ১৪২৩ থেকে পড়েছি।)
আমি সাহিত্য-ফাহিত্য অতো বুঝি না, কিন্তু আমার স্মরণজিতের লেখা ভালো লাগে।
ওঁর প্রতিটি গল্পের মতো এই গল্পটিরও plot একদম নতুন। কাহিনীসূত্র এইরকম ———
১) গরিব নায়িকা বয়ঃসন্ধিকাল থেকেই নায়কের জন্য প্রেমে আত্মহারা।
২) গরিব নায়ক তাকে পাত্তা দেয় না।
৩) নায়ক কলকাতা ছেড়ে পালাতে চায় এবং আমেরিকায় বৃত্তি পেয়ে পড়তে যায়।
৪) সেখানে একটি মেয়ের সাথে নায়কের "হঠাৎ করে" প্রথমবার যৌন সম্পর্ক হয়ে যায়।
এই কাহিনী থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে কবি Eminem 1998 খ্রীষ্টাব্দে লিখেছিলেন —
"Wait, what if there's an explanation for this sh!t?
What, she tripped, fell, landed on his d!ck?"
৫) নায়িকার বিয়ে ঠিক হয়ে যায়। যার সাথে বিয়ে ঠিক তার সম্পর্কে প্রায় কোনও খোঁজ-খবর না নিয়েই, শুধু সেই পরিবারের সদস্যদের মুখের কথার উপর ভিত্তি করেই।
স্মরণজিৎ বলেই এটা প্রেমের কাহিনী হয়েছে, কোনো নিম্নমানের লেখক হলে এটা ক্রাইম পেট্রোলের এপিসোডভিত্তিক থ্রিলার হতো।
বাংলা সাহিত্যের থ্রিলার লেখকরা স্মরণজিৎ পড়ুন, অনেক কিছু শিখবেন।
৬) নায়ক বিগত কয়েক বছর ধরে বুঝতে না পারলেও নায়িকার বিয়ের খবর শুনে কিছুদিনের মধ্যেই অনুভব করে যে সেও সেই মেয়েটিকে ভালোবাসে।
৭) নায়ক সেদিনই দেশে ফিরে আসে যেদিন নায়িকার 'পাকা কথা' আছে।
৮) মধুরেণ সমাপয়েৎ।
এর মাঝে আছে —
৯) টাকার জোরে নয় বরং নিজের মেধার জোরে বিদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে "চান্স পেয়ে" দেখিয়েছে বলে নায়ক লজ্জিত হয়।
১০) আর এতে আবার নায়কের "মেল ইগো" বোধহয় টাল খায়।
"ফিমেল ইগো" হলে হয়তো খেতো না।
টাকার সাথে লিঙ্গপরিচয়ের সংযোগ এভাবে স্মরণজিৎই ঘটাতে পারেন।
১১) এদিকে নায়িকার টাকার প্রচণ্ড অভাব, ওদিকে বিনা পারিশ্রমিক বিভিন্ন পোগ্রামে গান গেয়ে চলে।
এমন পরার্থপর নায়িকা বাংলাসাহিত্যের সম্পদ।
১২) নায়ক নায়িকাকে পূজোর সময় সময়ের অপব্যবহার নিয়ে জ্ঞান দিলেই পাড়ায় ঢাক বেজে ওঠে।
আর ঢাক থামার পরে কারোর ঐ কথাগুলো আবার বলার বা শোনার ইচ্ছা হয় না। এটাই লেখকের লেখনীর যাদু!
(এই থেকেই টুকেই বোধকরি "হেরাফেরি" চলচ্চিত্রে মাঝে মাঝে "গোলমাল হ্যায় ভাই সব গোলমাল হ্যায়" গান বাজানো হয়েছে!)
১৩ ও ১৪) নায়িকা নায়কের মত না নিয়েই চুমু খায়। আবার যার সাথে নায়িকার বিয়ের ঠিক হয়েছে সেও নায়িকার মত না নিয়ে তাকে চুমু খায়।
জিজ্ঞেস করতে গেলে বোধহয় সময় নষ্ট হয়!
১৫) নায়ক বিদেশে চেনা দাদার ভরসায় এলেও দরকারে টাকা চায় নিজের বিদেশী ছাত্রীর কাছে। আর সে দিয়েও দেয়।
বিশ্বছাত্রীত্ব একেই বলে!
➡️ এছাড়া শক্তি নিয়ে ছোট একটা টীকা আছে যেটা পদার্থবিদ্যার ভবিষ্যত বদলে দিতে পারে, উচ্চমাধ্যমিক স্তরের পঠনপাঠনে এটা অবশ্যই যোগ করা উচিত (অষ্টম শ্রেণীতেই দিতে বলতাম, কিন্তু এই তত্ত্বের গভীরতা তারা বোধহয় বুঝবে না)।
সব মিলিয়ে এমন কাহিনী বিশ্বসাহিত্য কেন, বাংলাসাহিত্যেও নেই। আশা করি ওর নিন্দুকরা এটা এখনো পড়েননি।
আমি মরণজিতের নাম দেখলেই ছিটকে পালাই। আপনি বেশ ধৈর্য্য ধরে পড়েন তো! :-)))
পয়েন্ট ওয়াইজ দূর্দান্ত। আপনার পাঠ প্রতিক্রিয়া অবশ্যই পাঠককে একটা ধারণা জোগায় তারপর পড়বে না পড়বেনা সেটা তার কথা।.. আমার ভালোলাগে আপনার লেখা।
প্রেমের গল্পগুলি বাদ দিয়ে, সেন অদম্য সেনের কথা যদি ধরেন, তাহলে স্মরণজিত এযুগের স্বপনকুমার। স্বপনকুমারের মত অত কাটতি হয়তো নেই, তাও।
এ যুগের নব্যযুবক বুড়ো হলে স্মরণজিতকে নিয়ে নষ্টলজি করবে, এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না, স্বপন কুমারকে নিয়ে নষ্টলজি হয় যখন। সে হিসেবে স্মরণজিতের কালজয়ী হওয়ার ক্ষীণ সম্ভাবনা আছে (ক্ষীণ কারন প্রতিযোগিতা আছে ভালো রকম), সেরকম হয়ে গেলে কিন্তু ইতিহাস আপনাদের ক্ষমা করবে না।
আর এই দোয়েলসাঁকো নিয়ে তো ফেসবুকের নানান গ্রুপ মাঝে মাঝেই শান্তিপুর ডুবু ডুবু নদে' ভেসে যায়। দেশ পত্রিকায় স্মরণজিতের একটা ধারাবাহিক বেরুতোম সেটা পড়তে শুরু করেছিলাম, ছোটবেলা থেকে আমার দেশ পত্রিকা পড়ার অভ্যাস ঘোঁচাতে ঐ ধারাবাহিক উপন্যাস খুবই সাহায্য করেছিল।
কিন্তু সে যাই হোক এই রিভিউ গুলো চমৎকার, অধিকাংশ সময় আমার ধারনা আসল বইগুলো থেকে ভালো (আসল বইগুলো পড়িনি, তাই নিশ্চিত করে বলতে পারি না)।
না না আমি পড়েছিলাম এটা। বোধহয় কোন পুজোবার্ষিকীতেই বেরিয়েছিল। আর ইলাস্ট্রেশানে একটু আধটু ইয়েও বোধহয় ছিল, সেই সব দেখে শুনে পড়ে ফেলেছিলুম। স্মরণজিৎএর গল্প বা প্লট সাজানো ফোর্টে না, কিন্তু লেখা বেশ ঝরঝরে। মানে পড়তে গিয়ে খুব একটা বোর লাগে না। আবার মনে দাগ কাটার মতও কিছু না। তবে রিভ্যু খানা নিঃসন্দেহে জব্বর হয়েছে। খেটেখুটে পয়েন্ট ওয়াইজ লেখা, মানে একটা লেখা পড়ে কতখানি জ্বললে সেটাকে আবার যত্ন করে ধরে ধরে খিল্লি করেছেন। কুদোস!
ঐটা বোধহয় ক্রিসক্রশ। তখন আইটিতে নব্য কুলি অবতার, ওদিকে দেখি নায়কের কোড পেনড্রাইভে ব্যাক আপ নিয়ে নায়কের টিম লিড অল্টার করে দিচ্ছে, নায়ক সারা উইকেন্ড পড়ে থেকে সেই বাগ ফিক্স করতে হিম্সিম খেয়ে যাচ্ছে। ডিটো মনে নেই, তবে এই রকম কিছু একটা ইনসিডেন্ট। ভরপুর মজা নিয়েছি সেই সময়।
পরে এই মেটিরিয়াল নিয়ে নাকি সিন্মাও হয়েছে।
তবে আমার 'দেশ' ছাড়ার পেছনে রায় ও মার্টিন সম্পাদিত 'আমাদের বাবুর কথা' র অবদান সত্যিই অনস্বীকার্য।
আরে নাম শুনে ঘাবড়ে গেছিলাম। ভেবেছিলাম হয়তো দোয়েল পাখি টাখি আছে। ঃ-)