ছোটনা ছিল আমার খেলার মাঠের বন্ধু। খেলার মাঠের বাইরে ছোটনার সঙ্গে আমার একবার ছাড়া আর কখনো দেখা হয়নি।
আমার ছিল রোগাটে চেহারা কিন্তু স্পিডে দৌড়োতে পারতাম। পায়ে কাজ ছিল। উইংয়ে খেলতাম তাই। বাঁ পা ছিল না বলে রাইট উইং খেলতাম। পরে রোনাল্ডো ম্যান ইউয়ে লেফট উইং খেলায় বাঁদিকে চলে গেছিলাম। মস্কোর সেই বৃষ্টিভেজা রাত আজও মনে আছে।
ছোটনা স্ট্রাইকারের একটু পেছন থেকে খেলতো। ধাক্কাধাক্কি এড়ানোর জন্যই বোধহয়। ওরও ল্যাগব্যাগে চেহারা। পা দুটো কেমন যেন বাঁকা বাঁকা, একটা কাকামার্কা সাইকেল চালিয়ে মাঠে আসতো। পায়ে শট ছিল না সেরকম। গায়েগতরে খেলা তো দূরের কথা। তবু গোলটা চিনতো। বক্সে বল পেলেই পায়ের ডগা দিয়ে টুক করে গোলে ঢুকিয়ে দিতো। মানস থাকলে বলতেন - সুযোগসন্ধানী স্ট্রাইকার। পল্লব থাকলে বলতেন - পরিভাষায় যাকে বলে, ফক্স ইন দ্য বক্স।
গলায় বাঁশি ঝুলিয়ে পাড়ার এক ক্ষয়িষ্ণু কাকু মাঝেমধ্যে কোচ কাম রেফারিং করতে আসতেন। ওনাকে পেয়ে আমরা চূড়ান্ত প্যাশনেট হয়ে খেলতাম। এক বন্ধু একবার বল ট্র্যাপ করতে পারেনি বলে মা-বোন তুলে খিস্তি মেরেছিলাম। কাকু এসে বলেছিলেন এসব করলে পরদিন থেকে মাঠে ঢুকতে দেওয়া হবে না।
ছোটনাও আমাকে খিস্তি মারতো প্রচুর। আমার অভ্যেস ছিল বল ধরে রাখার। কাটাতে ভালো লাগতো তাই বল ছাড়তে খুব দেরি করতাম। ফরোয়ার্ডের রাগ হওয়া স্বাভাবিক। থ্রু খেলা যায়, এমন জায়গায় গোলে মেরে দিতাম। মাইনাস করলে ভালো হয়, এমন জায়গা থেকে আউটসাইড করে সেকেন্ড পোস্টের টপ কর্নারে রাখার চেষ্টা করতাম। রোনাল্ডোর মতন। ছোটনা হেবি ক্ষেপে যেতো, ভালোবেসে বলতো - হারামির বাচ্চা।
একদিন খেলা শেষে বাড়ি ফিরে একটা বিয়ের নেমন্তন্ন খেতে গেছি। বেবি নানের রিপিট এসেছে। নেবো কি নেবো না ভাবছি। বয় উসখুশ করে বললো - স্যার, আরেকটা বেবি নান?
মুখ তুলে দেখি - ছোটনা! সাদা জামা কালো প্যান্টে গুঁজে পড়েছে। কালো মুখে চকচকে সাদা দাঁত। সেকি অপরূপ রূপ। আমি মুগ্ধ হয়ে দেখতে লাগলাম। ছোটনা আবার বললো - স্যার?
এ ঘটনার পর থেকে আমার খেলা রাতারাতি শুধরে গেল। মানস থাকলে বলতেন - ছেলেটা কাঁটাকম্পাস দিয়ে মাপা ক্রস কিংবা ডিফেন্স-চেরা থ্রু, সবেতেই সিদ্ধহস্ত হয়ে উঠেছে।
নিশ্চয়ই তাই, কারণ এ ঘটনার পর থেকে ছোটনা আর আমায় খিস্তি মারতো না।
বেশ ভাল।